কালকেই এখানে দেখছিলাম এখানে চিনের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়া নিয়ে টিভিতে তীব্র বিবাদ। বিবাদ তো হবারই জন্য, চিনের সাথে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি ২৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আশা করা হচ্ছে ওটা কিছুদিনের মধ্যেই ওটা লাফিয়ে ৫০০ বিলিয়ন ডলার হয়ে দাঁড়াবে। এমনিতেই সত্তরের দশক থেকে আমেরিকার শ্রমনির্ভর চাকরী কমতে শুরু করেছে, গত দশ বছরে তার সাথে যোগ দিয়েছে পরিষেবা আর সফটওয়ার ব্যবসাও। প্রথম আমেরিকা থেকে চাকরি বের করে নিয়ে গেছে জাপান। মেহনতি জাপানীদের তৈরী জাপানের শক্তিশালী মোটরগাড়ি-শিল্প (যা কিনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে যারা যুদ্ধাস্ত্র বানাত তাদেরই তৈরী) আমেরিকার বাজারে দেশীয় গাড়ি শিল্পকে বাজারছাড়া করল। এখন টয়োটা বিশ্বে সবথেকে বড় গাড়ি নির্মাণ সংস্থা। এর পরে আছে টিভি আর ইলেক্ট্রনিক্স - যা আমেরিকা বন্ধক রেখেছে তাইওয়ান, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো চিন আর কোরিয়ার কাছে। কিন্তু এই দুয়ের মধ্যে একটা বড় তফাৎ আছে।
জাপানী গাড়ি জাপানে প্ল্যান, ডিজাইন থেকে আরম্ভ করে যন্ত্রাংশ অ্যাসেম্বলিং অবধি হয়। মানে লাভটা সরাসরি জাপানী কোম্পানীর পকেটজাত হয়। কিন্তু ইলেক্ট্রনিক্স দ্রব্যের ক্ষেত্রে ডিজাইন অধিকাংশই হয় আমেরিকায়। আবার বিক্রিও হয় আমেরিকা সহ প্রথম বিশ্বের দেশগুলোতে। তাহলে লাভ কার হয়? লাখ টাকার প্রশ্ন।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এই লাভের বাঁটোয়ারা নিয়ে একটা গবেষণা করেছিল কিছুদিন আগে। আমার পড়ে বেশ ভাল লেগেছিল। একটা যেকোনো ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর পেছনে বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে লোকজনে মাথা খাটান বা শ্রম দেন। তার ফলে সামগ্রী তৈরী হয়। বিভিন্ন স্তরে বিভিন্নভাবে এর মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি হয়। সবশেষে একটা নির্দিষ্ট মূল্যে এই সামগ্রী তুলে দেওয়া হয় খরিদ্দারের কাছে। ফলশ্রুতিতে লাভ করে বিভিন্ন কোম্পানী। এখানে ছবিতে দেখলে এরকম দাঁড়ায় ধাপগুলো -
ডিজাইন => কাঁচামাল + শ্রম + প্রযুক্তি => (ফ্যাক্টরি) => যন্ত্র => (ব্র্যান্ড নেম, মার্কেটিং) => পাইকারী বিক্রেতা => খুচরো বিক্রেতা => খরিদ্দার
এদের প্রত্যেক ধাপে কিছু কিছু লাভ রেখে পরের ধাপে জিনিস দেওয়া হয়। আর সাথে আছে মুল কাঁচামাল। এই সব মিলে যে দাম ঠিক হয় তা আসে খরিদ্দারের কাছ থেকে।
গবেষণার বিষয় ছিল কতটা লাভ কার ঘরে যায়। প্রথমে একটা সামগ্রীকে বেছে নেওয়া হল হিসাব করার জন্য - অ্যাপেল আইপডের নতুন একটা সংস্করণ (৩০গিগাবাইট স্টোরেজের ভিডিও আইপড)। দেখা গেল বাজারে এর দাম ২৯৯ ডলার। এর মধ্যে অ্যাপেলের পাইকারী মূল্য হল ২২৪ ডলার - মানে বাজারের বিক্রেতা লাভ রাখছে ৭৫ ডলার। বাজার যে দেশে বিক্রি হয় সাধারণত তারই হয় - দেশীয় রিটেল কোম্পানীর। অ্যাপেলের নিজের স্টোর থেকে বা অনলাইন কিনলে অ্যাপেল নিজেই ওই ৭৫ ডলার লাভও ভক্ষণ করে।
এবার হিসাব করে দেখা গেল আইপডটা তৈরী করতে মোট খরচা পড়ে ১৪৪ ডলার মত। মানে বাকি ৮০ ডলার লাভ সরাসরি অ্যাপেল পেয়ে যায়। এই ১৪৪ ডলারের মধ্যে ৭৩ ডলার উৎপাদন-মূল্যের ৩০ গিগাবাইটের হার্ডড্রাইভ আছে - যেটা বানায় জাপানী কোম্পানী তোশিবা। তোশিবার হিসাব থেকে জানা যায় তাদের এই ব্যবসায় মোটের ওপর ২৫% মত লাভ হয় - মানে ধরা যাক সংখ্যাটা ২০ ডলার। এই হার্ড-ড্রাইভ জাপানী কোম্পানীর তৈরী হলেও আদপে চিনা ফ্যাক্টরিতে তৈরী হয়। একইভাবে তোশিবার ডিসপ্লে (জাপান), পোর্টালপ্লেয়ারের প্রসেসর (আমেরিকা + তাইওয়ান), স্যামমসাং এর র্যাম (কোরিয়া) ব্যবহার হয়ে গোটা জিনিসটা দাঁড়ায়।
সবমিলে যা দেখা যাচ্ছে সেটা হল অ্যাপেলের লাভ হল ন্যূনতম ৮০ ডলার (পাইকারী দামের ৩৬%), যা কিনা গোটা সামগ্রীর যে কোনো যন্ত্রাংশের চেয়ে বেশী। যদি অ্যাপেলের নিজের দোকান থেকে বিক্রিটা হয় তাহলে এই শতকরা লাভ ৫০% ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এইভাবে ভেঙে নিলে দেখা যায় আমেরিকায় বিক্রি হওয়া ২৯৯ ডলারের আইপডের ওপর থেকে যে ১৯০ ডলার লাভ আসে আর বাকি হল শ্রমিক আর কাঁচামালের খরচা। এই ১৯০ ডলারের মধ্যে আমেরিকার খাতায় যায় ১৬৩ ডলার। জাপানের ঘরে যায় পরোক্ষে ২৬ ডলার (যা থেকে আবার কিছু চলে যায় চিনে - ধরা যাক সেটা ৫-১০ ডলার) আর কোরিয়ায় ১ ডলার। আর বিদেশে বিক্রি হওয়া আইপডেও কিন্তু এই অ্যাপেলের ৮০ ডলার মার যায় না।
সবথেকে মজার কথা হল, এই ১৪৪ ডলার মূল্যের একটা "ফিনিশড" অ্যাপেল আইপড যখন আমেরিকার মাটিতে চিনের ফ্যাক্টরি থেকে এসে পৌঁছয় তখন মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি এই ১৪৪ ডলার বেড়ে যায়। অথচ চিনাদের পকেটে আসে বড়জোড় ১০ ডলার। অর্জিত টাকার অনেকটা চিনে রি-ইনভেস্ট হয় - মানে চিনে আরো কারখানা বানাতে ব্যবহার হয়। বাকিটা লাভের গুড় বড় বহুজাতিকের পকেটে।
খুব পরিষ্কার কয়েকটা সত্য কথা বেরিয়ে আসে এই বিশ্লেষণ থেকে। বাজার যেখানে তাদের লাভ বেশী, সেটা খুচরো বিক্রির কারণেও যেমন, ডিজাইন করার ক্ষেত্রেও তেমন। অ্যাপেলের একটা বড় সুবিধা হল তারা একরকম আইপড আবিষ্কার করেছে। আইপড তৈরীর জন্য যা যা লাগে তা সবই বাজারে আগে থেকেই মজুদ ছিল। কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক জিনিস বাজারে ছেড়ে কোম্পানী লাভের গুড় খেয়ে যাচ্ছে। এরজন্য তাদের মার্কেট রিসার্চ করতে হয়েছে, অনেক প্রোফেশনাল ধরে প্ল্যান বানাতে হয়েছে। আর তার ঝুঁকিও ছিল বেশী। কারণ, বাজারে আইপড না চললে সব চেষ্টাই বৃথা যেত। সবথেকে নির্মম সত্য বোঝা যায় প্রথম বিশ্ব প্রথম আর কেন তৃতীয় বিশ্ব তৃতীয়। কারণ সামগ্রীর পেছনে মাথা আসে প্রথম বিশ্ব থেকে আর শ্রম তৃতীয় বিশ্ব থেকে। গ্লোবালাইজেশনের ফলে শ্রমিক মালিক ব্যবধানও বেড়েছে। আগে শ্রমিক-বিক্ষোভ নিয়ে মালিক চিন্তা করত। এখন সে প্রয়োজনীয়তাও ফুরিয়েছে। তাও তৃতীয় বিশ্বের কিছু দেশ পিরামিডের তলায় গেলেও জায়গা পাচ্ছে। বাকিরা তাহলে কোথায় যাবে?
মন্তব্য
ভাল্লাগলো লেখাটা।
তবে এশিয়ানদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার দিন বোধহয় শেষ। আজকে নিউইয়র্ক টাইমসে একটা লেখা এসেছে।
"রান্নাঘরে" খরচ বাড়লে সেটার রেশ তো বসে বসে খাওয়া বাড়ির অন্যান্য সদস্যদেরই বইতে হবে।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
বইতে হচ্ছে বইকি, কিন্তু সাথে সাথে এর ফলে আমেরিকায় অনেক চাকরি তৈরী হচ্ছে। কারণ আমেরিকায় যারা ভাবছিলেন কিছু চাকরি কালাপানি পার করাবেন তারা আপাতত থমকে গেছেন ...
---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
তবে এশিয়ানদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার নতুন কতো পথ বের করবে এরা আবার!
আমার তো রীতিমতো হতাশ লাগে।
আপনার লেখাটির জন্যে ধন্যবাদ দিগন্ত!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আমি ব্যক্তিগতভাবে গ্লোবাল ভিলেজ ধারণায় বিশ্বাসী। কিন্তু বিশ্বায়নের অনেক ক্ষতিকর দিক এড়িয়ে যেতে পারলেই এ থেকে সুফল পাওয়া ডেতে পারে। সবার আগে দরকার এমন কিছু করার, যাতে পৃথিবীর সবাই একভাবে চিন্তা করার মত যোগ্যতা অর্জন করে।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
এটা বড় আইডিয়ালিসমের কথা বলছেন। আপনি কি মনে করেন এই বর্তমান সিস্টেমে চললে চিনা শ্রমিকেরা ভবিষ্যতে ডিজাইনার হতে পারবে?
---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ভাল লাগলো লেখাটা। ১০ ডলার আয় বনাম ১৪৪ ডলার বাণিজ্য ঘাটতির ব্যাপারে আরেকটু আলোকপাত করলে ভাল হত। কৌতূহল জাগালো। এবার গুগুলাই গিয়ে।
ব্যাপারটা হল এই চিনা ফ্যাক্টরিকে যে ১৪৪ ডলার দেওয়া হচ্ছে তা জমা হচ্ছে অ্যাপেল (চিন) এর ঘরে। সে টাকা থেকে তারা দিচ্ছে তোশিবাকে, যে অ্যাসেম্বল করে তাকে ইত্যাদি ইত্যাদি। মানে সোজা কথায় সেগুলো বাণিজ্য ঘাটতির মধ্যে আর আসে না।
এবার যদি টিভি, ফ্রিজের কথায় আসেন, তাতে আর ডিজাইন কস্ট এত বেশী নয় কারণ প্রোডাক্টগুলো জেনেরিক। তাতে চিনা/জাপানীদের লাভ বেশী হয় ...
---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
-সুন্দর পোস্ট ।
----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।
দারূণ। বাংলাদেশের তৈরী পোষাকের ক্ষেত্রেও একই বিশ্লেষণ খাটে। বিংশ শতাব্দীর কলোনাইজেশনের আরেক নাম হচ্ছে, ''বৈদেশিক বিনিয়োগ"।
* শুরুর দিকে "বাজারের বিক্রেতা লাভ রাখছে ৫৫ ডলার"-- এখানে ৭৫ হবে।
ধন্যবাদ। আমি ঠিক করে নিচ্ছি।
আর যে কোনো গ্লোবাল্কাইজড প্রোডাক্টের ক্ষেত্রেই এটা খাটে ...
---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
খুবই চমত্কার একটি লেখা। ম্যানুফ্যাকচারারেরা যে কত কম লাভ পায়, তা নিয়ে একবার কোথায় যেন একটা লেখা পড়েছিলাম। আমেরিকার ওয়াশিংটন স্টেটে ভাল আপেল জন্মায়। এই আপেলের বাজারদাম যদি হয় পয়ত্রিশ সেন্ট, তার মধ্যে মাত্র ৪-৫ সেন্ট যায় চাষীর ঘরে। বাদবাকী টা মিডলম্যানেরা পকেটস্থ করে।
_______________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
বিশ্বায়ন ব্যাপারটা হৈল, যেইটা হৈলে খুব ভালো হৈতো, কিন্তু কিছুতেই হৈল না।
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
সেটাই বিশ্বায়ন গরীবকে গরীব আর ধনীকে আরও ধনী বানিয়ে যাচ্ছে।
পৃথিবীর সবাই যদি একই ভাবে চিন্তা করতে পারত!অনেক ভালো লাগল।
-নিরিবিলি
সুশান্ত বর্মন
আমার কাছে বিষযটা স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। কারণ যার ঘটে বুদ্ধি আছে সেই অন্যের (যাদের বুদ্ধি কম) তাদের মাথায় কাঠাল ভেঙে খাবে। এটাই পুজিবাদ। এশিয়ানরা যদি আমেরিকার কাছ থেকে প্রতারিত হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে আমেরিকার মত বুদ্ধিবৃত্তিক সৌকর্য তাদের নেই। এই যে কিছুদিন আগে ভুমধ্যসাগরে সাবমেরিন কেবল কাটা পড়ল। শোনা যায় ভারত ও মিসরের কলসেন্টারগুলোর দুর্ণাম করে দিয়ে ইউরোপের ছোট দেশগুলোতে ব্যবসাটা নিয়ে যাবার পরিকল্পনা থেকে এটা করা হয়েছে। না হলে যে তার মাটির সাত ফুট নীচে থাকার কথা তা নোঙর এর আঘাতে কেটে যায় কি করে। ভারত বা মিসরের নিজেদের যদি ইন্টারনেট ব্যবস্থা থাকত তাহলে কি এমনটা ঘটত? আমরাই যদি আইপড আবিষ্কার করতে পারতাম তাহলে কি ব্যবসাটা আমরাই করতাম না?
বাংলাদেশ বা ভারতের কাঠামোগত অবস্হান এমন শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত না । এটাই সবচেয়ে বড় কারন ।
আইপড আবিষ্কার করাটা শক্ত আমাদের কাছে, কারণ আমরা আমেরিকার মার্কেট ও তার চাহিদা ভাল বুঝিনা। বাজারে যে রোজ বাজার করে সে তো জানবেই বাজারে কোন জিনিসের চাহিদা বেশী ...
---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ধন্যবাদ গুছিয়ে লেখার জন্য ,,,
তবে আমি আসলে বুঝতে পারছিনা এখানে সমস্যাটা কোথায়? ,,,
আপাতঃদৃষ্টিতে মনে হলো ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাদলটি এইরকম একটা প্রলেপ দিতে চেয়েছেন যে আমেরিকা এশিয়ানদের ঠকায় ,,,
বলি, এশিয়া কি করে? ,,, তোশিবা যখন ৩৯৯ ডলারে ১৬ গিগার পোর্টেবল এমপিথ্রি বিক্রী করে, একই ঘটনা কি ঘটেনা? ,,, অথবা অন্যান্য যেকোন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের বেলায়?
মূল সত্যটার হিন্টস অবশ্য দিয়েছেন আপনি ,,,,আমি মনে করি সেটাই এই রিসার্চে ফোকাস হওয়া উচিত ছিল ,,,
দেখুন, রিস্কটা কিন্তু পুরোটাই নিচ্ছে এ্যাসেম্বলার কোম্পানী এ্যাপল ,,, যেমন ধরুন, এ্যাপল যখন তোশিবার সাথে ৭৩ ডলারে ৩০ গিগা হার্ডড্রাইভের চুক্তি করে, তখন সংখ্যাটা এমন না যে দশ-বিশ হাজার এইচডি কিনবে ,,, সাধারণতঃ মিলিয়ন অর্ডারে কেনে বলেই এত কমদামে দেয়া যায় ,,,অথবা প্রসেসরগুলোও ,,,,
এখন দেখুন, এ্যাপল কিন্তু ইনভেস্ট করা ১৪৪ ডলারের পুরোটাই এই মিলিয়ন সংখ্যক প্রোডাক্টের পেছনে বরাদ্দ করে ফেলেছে ,,, কাজেই প্রোডাক্ট বিক্রী হোক বা না হোক, ঐ ১৪৪ ডলার পার প্রোডাক্ট তাদের দিতেই হবে, সেখান থেকে তোশিবা, রেনেসাস সহ বাকীরা নিজ নিজ লাভের গুড়টা ঠিকই খেয়ে নেবে ,,,,লসটা হবে এ্যাপেলের ,,,,
ধরুন এমন সিনারিও যদি দেখা যেত যে আইপড বিক্রী হচ্ছেনা, তখন এ্যাপল কি করত? হয়ত, ১৫০ ডলারে বিক্রী করত, মিনিমাম লাভটা রেখে ,,, তখন কিন্তু বড় লাভের গুড়টা খায় তোশিবা
কাজেই, মূল কথাটা হলো যে রিস্ক বেশী নেবে, প্রডাক্ট হিট হলে লাভ সে বেশী করবে ,,, প্রডাক্ট ফ্লপ করলে ধরাটাও সেই খাবে
ব্যাপারটা যেকোন ব্যবাসার বেলায়ই খাটে ,,,ব্যবসায় লস হলেও কর্মচারীকে বেতনটা দেয়া হয় ,,,, লাভ হলে গুড়টা খায় রিস্কগ্রহনকারী মালিক
আমার তো ধারনা, এই লাভের গুড়ের হিসেব করতে গিয়েই কার্ল মার্কসের সমাজতন্ত্রের আবির্ভাব
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
আমি আপনার সাথে দ্বিমত নই ... কিন্তু রিস্ক নেবার জন্য আপনাকে মার্কেট জানতে হবে। তাই মার্কেট যে দেশে গুড়ও সে দেশেই বেশী করে ঢুকবে। তার মানে গরিব গরিবই থেকে যাবে ... অথবা তাকে মাইগ্রেট করে উন্নত বিশ্বে আসতে হবে।
---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
হুমমম ...কোন সন্দেহ নেই ...তবে মার্কেট কোন দেশে তৈরী হয়ে থাকেনা ...ধনীদেশ যেহেতু এ্যাডভান্টেজটা পাচ্ছেই, গরীবকে তাই একটু বেশী খাটতে হবে, বেশী মাথাও খাটাতে হবে ...পূর্বএশিয়াকেই দেখুননা, একসময় সস্তাশ;রমের আখড়া ছিল, আর এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় মার্কেট ... ভারতও সেপথে এগুচ্ছে ,,, ভারতের মধ্যবিত্তের সংখ্যাবৃদ্ধির হারটা ভীষন আশাব্যঞ্জক
আমাদের বাঙালীদের সমস্যাটা হলো আমরা লাফ দিতে চাই ,,,একলাফে মগডালে উঠতে চাই ,,, একটা জিনিস নিয়ে আঁকড়ে পড়ে থাকতে পারিনা ,,,
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
ঠিকই বলেছেন হয়ত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে এখনও ইনোভেশন আসে নি কিন্তু জাপান থেকে এসেছে। এটা আমার ঠিক বোধগম্য নয়।
---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
হ্যাঁ, জাপানের মতো হয়ত আসা শুরু করেনি এখনও, তবে বেশ কিছু ইনোভেশন কিন্তু চলে এসেছে ,,, কারণটা সম্ভবতঃ এসব দেশে প্রক্রিয়াটা শুরু করেছে দেরীতে ,,,তবে সবাই রাইট ট্র্যাকেই আছে ,,, বায়োমেট্রিক টেকনোলজীর এখন সবচেয়ে হট টপিক ভেইনপ্যাটার্ণ ম্যাচিং জিনিসটা এসেছে কোরিয়া থেকে ,,, পূর্ব এশিয়ার সব দেশ আর কোম্পানীই এখন রিসার্চের পেছনে অনেক খরচ করছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
নতুন মন্তব্য করুন