(লেখাটা টিম হারফোর্ডের The Undercover Economist বইএর একটা অধ্যায় থেকে সার সংক্ষেপিত। অনলাইনে পড়তে হলে এখানে দেখতে পারেন। লেখকের অভিমতের সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত নই, তাও সারসংক্ষেপ করে বাংলায় অনুবাদের লোভ সামলাতে পারলাম না।)
আগেকার দিনে অর্থনীতিবিদেরা ভাবতেন সমৃদ্ধি হল মূলত তিনটি সম্পদের মিলিত ফসল - মানবসম্পদ (কাজ করার ক্ষমতা ও দক্ষতা), পরিকাঠামোগত সম্পদ (রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা বা শিক্ষাব্যবস্থা) আর প্রযুক্তিগত (যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতিগত দক্ষতা) সম্পদ। কারণ, তখনকার দিনে গরিব দেশগুলো বড়লোক হত তাদের উন্নত প্রযুক্তি আর মানবসম্পদের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার করে আর সেই লাভের টাকা আবার প্রযুক্তি আর মানবসম্পদে বিনিয়োগ করে। আজকেও আমরা দেখি উন্নত দেশগুলোতে এই তিন সম্পদের ছড়াছড়ি আর উল্টোদিকে গরিবদেশগুলোতে এদের বড়ই অভাব। তাহলে, এই চিন্তায় গলদ কোথায়?
এই তত্ত্বে গলদ বুঝতে গেলে একটা জিনিস বোঝা দরকার - যাকে বলে ডিমিনিসিং রিটার্নের তত্ত্ব। ধরা যাক আমার কাছে ১০০ কোটি টাকা আছে যা দিয়ে আমি ৫০০ কিলোমিটার রাস্তা বানাতে পারি। এখন সেই রাস্তা যদি আমি আমেরিকায় বানাই তাহলে সেই নতুন রাস্তা বড়জোর আরো একটা রাস্তার সমান্তরাল হবে, কারণ আমেরিকায় ইতিমধ্যেই প্রায় সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। তাই আমার বানানো নতুন রাস্তা ব্যবসার হিসাবে আমেরিকায় খুব একটা অবদান রাখবে না। কিন্তু আমি যদি সেই একই রাস্তা কোনো দুর্গম এলাকায় (যেমন নেপাল) বানাই, তাহলে সেই সমগ্র অঞ্চলের অর্থনীতির ওপর ধনাত্বক প্রভাব ফেলবে। সহজ হিসাবে, ১০০ কোটি টাকা দিয়ে আমেরিকায় রাস্তা বানালে যা লাভ হবার সম্ভাবনা, তার চেয়ে অনেক বেশীগুণ লাভ হবার সম্ভাবনা নেপালে। একই ভাবে নেপালে নতুন মোবাইল ফোন এলে দুর্গম অনেক এলাকায় মানুষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হয়, সেখানে আমেরিকায় মোবাইল ফোন শুধু তারযুক্ত ফোন-ব্যবস্থাকে পরিবর্তিত রূপ দেয়। আর যদি সেটাই ঘটে, তাহলে গরিব দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির হার ধনী দেশগুলোর থেকে অনেক বেশী হওয়া উচিত, কারণ একই বিনিয়োগে গরিব দেশের ক্ষেত্রে লাভ বেশী হয় - নতুন প্রযুক্তি থেকে গরিব দেশ বেশী লাভ পায়। এই মডেল অনুসারে গরিব দেশগুলো ধীরে ধীরে ধনী হয়ে ওঠার কথা - ব্যবধান কমে আসার কথা।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় অসংখ্য গরিব দেশ আছে যারা আদপে ধনী দেশগুলোর থেকেও কম হারে সমৃদ্ধ হয়। আফ্রিকায় জিম্বাবোয়ে বা ক্যামেরুন হল তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। শুধু তাই নয়, পৃথিবীতে সামগ্রিকভাবে আয়ের অসাম্য দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। এসব দেখে, কিছু অর্থনীতিবিদ অন্য আরেকরকমের তত্ত্ব খাড়া করলেন। এই তত্ত্ব অনুসারে নতুন বিনিয়োগের সুবিধা আসলে ধনী দেশরাই পেয়ে থাকে। যেমন, নতুন রাস্তা বানালে লাভ সেখানেই হয় যেখানে যথেষ্ট-সংখ্যক গাড়ি আছে, নতুন ফোন নিলে তখনই মানুষ লাভ পাবে যখন আরো কিছু লোকের ফোন আছে এমনকি, নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করাও সহজ হয় যদি ইতিমধ্যে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি হয়ে থাকে। এই মডেল অনুসারে, সামগ্রিক উন্নয়ন হলেও গরিব দেশেরা ধনী দেশদের তুলনায় চিরকালই গরিব থেকে যাবে যদি না এক ধাক্কায় অনেকটা এগিয়ে দেওয়া যায় দেশকে। মানে একসাথে কোনো ব্যতিক্রমি উপায়ে রাস্তাঘাট, গাড়ি, বিদ্যুত, বন্দর আর নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি করে ফেলতে পারলে সেখানে একধাক্কায় শিল্প-বাণিজ্যে উন্নতি হওয়া সম্ভব।
দ্বিতীয় তত্ত্বটা থেকে হয়ত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় কেন ধনী রাষ্ট্র ধনী থেকে যায় আর গরিব দেশগুলো গরিব, কিন্তু গত কয়েক দশকে কি ভাবে চিন, কোরিয়া বা তাইওয়ান (বা তার সাথে বটসোয়ানা, চিলি, থাইল্যান্ড, মালয়েসিয়া, ভারত বা সিঙ্গাপুর) দ্রুত উন্নতি করে ফেলে - সেই ব্যাখ্যা কোনোভাবেই পাওয়া যায় না। পঞ্চাশ বছর আগে এই দেশগুলোতে পরিকাঠামো বা প্রযুক্তি তো প্রায় ছিলই না, অনেক দেশে ঠিকঠাক প্রাকৃতিক সম্পদেরও যথেষ্ট অভাব ছিল। তা সত্ত্বেও ধনী দেশগুলোর থেকে গড় প্রবৃদ্ধির হার এদের অনেক বেশী। অনেকেরই প্রতি দশ-পনের বছরে মোট জাতীয় সম্পদ দ্বিগুণিত হয়েছে - তাও কোনো উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদের আবিষ্কার ছাড়াই। দক্ষিণ কোরিয়ার কথাই ধরা যাক। দক্ষিণ কোরিয়া একসময়ে বিদেশী কোম্পানীগুলোকে দেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী করেছে। তার ফলে তার ক্ষতিও হয়েছে - বছর বছর এই কোম্পানীগুলো নিজের দেশে বড় লভ্যাংশ ফেরত নিয়ে গেছে। কিন্তু এর ফলে দেশে দক্ষ শ্রমিক তৈরী হয়েছে, যার ফলে পরে দেশীয় কোম্পানীরাও সহজেই বিদেশী কোম্পানীদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পেরেছে। তাহলে দক্ষিণ কোরিয়া যেটা পেরেছে সেটা কেন ক্যামেরুন পারে নি?
উত্তর খুঁজতে চোখ ফেরানো যাক কিছু তথ্যের ওপর। ক্যামেরুনের যে কজন আমেরিকায় মাইগ্রেট করেন, তাদের সাথে তাদের নিকটাত্মীয়দের তুলনা করে দেখা গেছে ক্যামেরুনের শিক্ষাব্যবস্থা, পরিকাঠামো আর কলকারখানার অভাব থেকে এই দুই দেশের সমৃদ্ধির ফারাক ব্যাখ্যা করা যায় না। পরিকাঠামোর অভাব ক্যামেরুন দ্বিগুণ গরিব হয়, আরো দ্বিগুণ গরিব হয় শিক্ষাব্যবস্থার গাফিলতিতে। কিন্তু বাস্তবে তো ক্যামেরুন আমেরিকার থেকে পঞ্চাশ গুণ গরিব। শুধু তাই নয়, সাথে সাথে এই প্রশ্নও আসে - কেন ক্যামেরুন-বাসিন্দারা এ নিয়ে কিছু করেন না? তারা কেন নিজেদের স্কুলগুলোর সংষ্কার করেন না? কেনই বা ব্যবসায়ীরা দেশে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করে দ্রব্য উৎপাদন শুরু করেন না? তারা কি বোঝেন না যে এই সাধারণ উদ্যোগে তাদের কতটা লাভ হতে পারে?
অর্থনীতিবিদ ওলসনের তত্ত্ব এই প্রশ্নগুলোর আংশিক হলেও সঠিক উত্তর দিতে পারে। তার বক্তব্যমতে, শিক্ষা বা পরিকাঠামো নয় - রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিই গরিব দেশের ক্রমবর্ধমান গরিবির জন্য দায়ী। কিন্তু একটা গরিব দেশের শাসক নিজে যদি দুর্নীতি করেন, তাহলে তার তো নিজের স্বার্থেই দেশের সম্পদ বাড়ানো উচিত, যাতে দুর্নীতি থেকে তার আয় বাড়তে পারে। ঘটনাক্রমে দেখা গেছে শাসকের দুর্নীতি ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানের প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে কারণ শাসক নিজের শাসনকালের সীমা সম্পর্কে সচেতন থাকেন আর যাতে সেই অন্যেরাও তাকে ক্ষমতায় থাকতে সাহায্য করে তাই তাদেরও চৌর্যবৃত্তিতে সাহায্য করে চলেন। তার ফলে কি অবস্থা দাঁড়ায়? দেশে বিনিয়োগ করে লাভ নেই কারণ লভ্যাংশ থেকে ঘুষ দিতে হয় শাসক ও আমলাদের - সরকার তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে না (বরং বিনিয়োগকারীকেও চুরি করতে উৎসাহ দেবে)। ফোন বিল দেবার কোনো প্রয়োজন নেই কারণ বিল না দিলেও কেউ তোমাকে কোর্টে নিয়ে যেতে পারবে না - একই কারণে ফোন কোম্পানী চালানোও লাভজনক হবে না (যদি চুরি না করা হয়)। স্কুলে পড়াশোনা করেও লাভ নেই কারণ মেধার ভিত্তিতে চাকরি দেওয়া হবে না, চাকরি হবে ঘুষের ভিত্তিতে। আমদানী-রপ্তানী বাণিজ্য লোকসানে চলবে কারণ দেশের কাস্টমস অফিসারেরাই লাভের গুড় খেয়ে যাবে (আর তার ফলে ব্যবসাও কমবে - কাস্টমস আরো বেশী করে ঘুষ খুঁজবে)।
সবে মিলে গরিব দেশ গরিবই থেকে যাবে ... কারণ সে দেশে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি দেশকে কিছুতেই এগোতে দেবে না। এই পার্থক্যেই কিছু গরিব দেশ গত পঞ্চাশ বছরে অনেক উন্নতি করে ফেলেছে আর বাকিরা যেই তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে গেছে।
মন্তব্য
একমত।
এমন কোন তত্ত্ব কি আছে যেখানে এর সহজ সমাধান বলা আছে? সমাধান তো একটা আছে। দুর্নীতি বন্ধ কর, উন্নতি আসবে। কিন্তু দেশের নেতারা তাদের দুর্নীতিবাজ চরিত্র বজায় রাখলে সাধারণ জনগোষ্ঠীর জন্য কোন সূত্র আছে কি? দেশের উন্নতির জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে যে সূত্র অনুসরণ করা সম্ভব? একটা থিওরি হতে পারে "decimate the corrupt and make way for development." কিন্তু ওটা আবার chaotic থিওরি। তাহলে যাব কোন পথে?
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
ইন্টারেস্টিং!
হাঁটুপানির জলদস্যু
পোস্টটি ইন্টারেস্টিং । যদিও দূর্ণীতিকেই একমাত্র দায়ী করতে রাজি নই আমি ।
দূর্ণীতি কিন্তু সব দেশেই হয় , আমেরিকাতেও হয় , মালয়েশিয়াতেও হয় ।
আসলে গরীব দেশ গরীব থেকে যায় , কারন আল্লাহ তার ঈমানদার বান্দাদেরকে পরীক্ষা করেন ।
দুর্নীতিকে গরিবির একমাত্র কারণ বলা হয় নি, বলা হয়েছে গরিবি ক্রমবর্ধমান হবার মূল কারণ দুর্নীতি।
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
গরীব দেশ গরীব থাকার প্রধাণ যে কারন গুলি আপনি দেখালেন তার সবই তো আমাদের দেশে বর্তমান। এমনকি দু একটাতে তো আমরাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।
এখন বলুনতো কিভাবে বাংলাদেশে এসব মোকাবিলা করা যায়?
লেখক এ নিয়েও আলোচনা করেছেন - এটা ধীরে ধীরে লিখব ভাবছি।
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ইন্টারেস্টিং লাগল!
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
কোথায় যেন পড়েছিলাম- ‘গুড গভর্নমেন্ট মানে হল লেস গভর্নমেন্ট, বাট মোর গভর্নেন্স (Governance)’। দুর্নীতি পৃথিবীর সব দেশেই কম-বেশি আছে। কিন্তু উন্নত দেশগুলোর সাথে গরীব দেশগুলোর পার্থক্য মনে হয় এটাই। উন্নত দেশে গভর্নেন্স বেশি, সব বিষয়ে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ কম (তাই দুর্নীতির সু্যোগও কম)। যেসব দেশ গরীব অবস্থা থেকে আজ উন্নত হয়েছে যেমন- সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ইত্যাদি, তারাও সব জায়গায় আগে এই গভর্নেন্সই প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে হয় উল্টোটা- মোর গভর্নমেন্ট, লেস গভর্নেন্স; গভর্নেন্সের কোন বালাই নেই, সরকার মহাশয় অহনির্শ এখানে শুধু চেহারা আর ডান্ডা দেখিয়ে বেড়ান।
= = = = = = = = = = =
ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা
চোখে আজ স্বপ্নের নেই নীল মদ্য
কাঠ ফাটা রোদ সেঁকে চামড়া
- সেটা আবার সরকারি বা রাষ্ট্রের শোষণেরই নামান্তর।
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আমাদের দেশে সরকার ঠিক জায়গাটায় খবরদারি করতে পারেন না, বা চান না। এর ফলে সমন্বয়হীনতার কারণে অবকাঠামো গড়ে ওঠে পরিকল্পনা ছাড়াই। পরে সেটাকে সাইজ করতে গিয়ে প্রকৃত ব্যয় বাড়ে।
একটা উদাহরণ দেই। ঢাকা শহর এবং এর আশেপাশে অসংখ্য গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি আছে। এগুলির জন্যে প্রয়োজন বিদ্যুৎ, পানি, কখনো কখনো গ্যাস, সড়কসেবা এবং বিপত্তারণপরিষেবা। গার্মেন্টস উদ্যোক্তারা খবরদারির সুবিধার কথা ভেবে শহরেই এই উদ্যোগ প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমি যতদূর জানি, বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যের শতভাগই চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর হয়ে যায়। উদ্যোক্তারা যদি বন্দরের অপেক্ষাকৃত কাছে কোন শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার জন্যে সরকারকে চাপ দিতেন, তাহলে একটি পরিকল্পিত স্বদেশী উদ্যোগ গড়ে উঠতো, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের চালানখরচ বেঁচে যেতো। গার্মেন্টস কর্মীরাও শিল্পাঞ্চল ঘিরে একটি পরিকল্পিত আবাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার আশা করতে পারতেন। তা না করে পুরো শহরটিকেই গার্মেন্টস কারখানা বানিয়ে ফেলা হয়েছে। সরকার যে কোন কারণেই হোক, হস্তক্ষেপ করেনি। ইদানীং মনে হয়, মাদ্রাসার ছাত্র ছাড়া আর কারো কথাই সরকার শুনতে চায় না। তাঁদের লবিইস্ট হিসেবে নিয়োগ করলে যে কেউ সুফল পাবেন।
হাঁটুপানির জলদস্যু
ভদ্রলোকের লেখার পরের পয়েন্টটা ছিল পরিকল্পনার অভাব বা দূরদর্শিতার অভাব। আপনি একধাপ এগিয়ে সেটা লিখে দিয়েছেন দেখে ভাল লাগল। তবে উনি কেস স্টাডি হিসাবে নিয়েছেন নেপালকে। আমার মনে হয় দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশগুলোই পরিকল্পনার অভাবে একে অন্যের সাথে টক্কর দেয়।
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
দিগুভাই হাতে সময় থাকলে লেইখা যান বাকি পয়েন্টগুলি নিয়া। থামবেন না।
হাঁটুপানির জলদস্যু
আসলেই তাই মনে হয়। এদের লবিইস্ট হিসেবে নিয়োগ করার জোর দাবী জানাই।
দিগন্ত, লেখাটা খুব প্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। পড়ে ভাল লাগল।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
ভালো লাগলো তবে মনে হয় আপনি আরো কিছু পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করতে পারতেন-- যেমন প্রাকৃতিক সম্পদের সুব্যবহার, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ন নিয়ন্ত্রণ (যা আবার অবকাঠামোর উন্নয়নের সাথে জড়িত) সর্বোপরি সদিচ্ছা। সদিচ্ছা থাকলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা উতরেও আমাদের দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস। প্রয়োজন সৎ ও প্রকৃত দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের (সৎ লোকের শাসন নয় কিন্তু!)।
এমনিতে উন্নয়ন তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে গেলে অসংখ্য পাতা লিখে ফেলা যায়। আমি খুব সাধারণ ভাবে লেখকের পয়েন্টটা তুলে ধরেছি।
- অবশ্যই এবং বাংলাদেশ যথেষ্টই উন্নতি করেছে। এটা অনেকেই অস্বীকার করে থাকলেও সত্যি ... ১৯৭১-এ পাকিস্তানের থেকে আলাদা হবার সময় পাকিস্তানের সাথে মাথাপিছু আয়ের যা পার্থক্য ছিল আজ তা অনেক কম।
খুবই জটিল হিসাব। আসলে সবাই নিজ নিজ স্বার্থে কাজ করে এরকম ধরে নিয়েই অর্থনীতির সূত্র কাজ করে। এখন কেউ যদি নিস্বার্থভাবে দেশের জন্য কাজ করেন তাহলে পাশার গুটি উলটে দেওয়া বাস্তবেই সম্ভব।
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
গরিব দেশগুলোর চিরকাল গরিব রয়ে যাওয়ার পেছনে উন্নত দেশগুলোরও হাত আছে। গরিব দেশগুলো অনেক সময় চাইলেও পারে না। কোন 'পলিসি' যে দেশের ব্যবসায়িক সেক্টরে ধ্বস নামিয়ে দিতে পারে তা আগে বুঝিনি। এখন দেখছি উন্নত বিশ্বের প্রাইভেট কোম্পানিগুলো ফুসলিয়া-ফাসলিয়ে অনুন্নত দেশের সরকারকে দিয়ে ক্ষতিকর পলিসি করিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশে উন্মুক্ত 'ভিওআইপি' যেভাবে আসলো অনেকটা সেভাবে।
লেখকের পয়েন্টগুলোও সঠিক মনে হয়েছে।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
- মোটেও না। গরিব দেশগুলোর হর্তাকর্তাদের টাকা খাইয়ে এরকম পলিসি বানানো হয় ... সেই ব্যাপারটার মূল কারণ ঘুরেফিরে সেই দুর্নীতি। আদর্শ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চলে যদি সবাই নিজ-নিজ স্বার্থ মেনে চলে। কিন্তু এখানে বাংলাদেশ রাস্ট্রের স্বার্থরক্ষাকারীরা নিজ স্বার্থ রক্ষা করছে - দেশের স্বার্থ রক্ষা না করে। অপরদিকে বিদেশী বহুজাতিকের প্রতিনিধি কিন্তু তার কোম্পানীর স্বার্থ রক্ষা করছে। একবারও ভেবে দেখেছেন কেন ব্যাপারটা উলটো হয় না? মানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিনিধি কেন বহুজাতিকের প্রতিনিধিকে ফুসলিয়ে/ঘুষ দিয়ে দেশের পক্ষে মঙ্গলজনক কোনো চুক্তিতে সই করিয়ে নিতে পারেন না?
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ঠিক বলেছেন। ঘুরেফিরে সেই দুর্নীতিতেই ঠেকে। বাংলাদেশে ILDTS (International Long Distance Telecommunication Services) অনুমোদনের মাধ্যমে VoIP-কে যেভাবে প্রাইভেট সেক্টরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে তাতে সরকারী সংস্থা বিটিটিবি গোল্লায় যেতে বসেছে। বিটিটিবি-র কর্মকর্তারা বলছেন আগামী দুই বছরের মধ্যে বিটিটিবি (বিটিসিএল) তে ধ্বস নামবে। তাই পলিসিটার মধ্যে আসলেই দুর্নীতির গন্ধ পাচ্ছি।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
ভালোই... ইন্টেরেস্টিং লাগ্লো...
_________________________________
| সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরনঃ উড়াধুড়া ব্লগ পড়া বিপজ্জনক। | বাংলা ব্লগস্ফিয়ার
_______________
::সহজ উবুন্টু শিক্ষা::
যে ভদ্রলোকই গবেষণাটা করুক, আসল জায়গাতে একদম আলো ফেলতে পারেনি অথবা চায়নি ,,, শিক্ষানবীশের কথাটাই ,,, উন্নত দেশগুলোর নোংরা পলিসি , বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের মাতুব্বরি -- এসবও অনেক বড় কারণ গরীব দেশগুলোর গরীব থাকার ,,, সেগুলোর দিকে নজর দেয়াটা বেশী জরুরী এসব স্টাডিতে, কারণ শুরুটা সেখান থেকেই করতে হবে
এর সবচেয়ে ভালো একটা উদাহরণ পাবেন আপনি এখানকার ব্লগার যুবরাজের লাইবেরিয়ার ডায়েরী পড়লে ....
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
সবাই নিজের স্বার্থে চলে, সুতরাং উন্নত দেশগুলোর নিজ স্বার্থে শোষণ করে। অনুন্নত দেশগুলো নিজের স্বার্থে চললে দিব্যি উন্নতি করতে পারবে। ব্যতিক্রম নিশ্চয় আছে, কিন্তু সংখ্যাটা কম। যাহোক এ নিয়ে আরো লিখব।
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
প্রতিবেশি ভাল থাকলে যে নিজে ভাল থাকা যায় (ঝগড়া শুনতে হয় না, ঘরে চুরির ভয় নাই ইত্যাদি) ... এই বিষয়টা মাথায় ঢুকিয়ে দেয়ার মত প্রাথমিক শিক্ষা দরকার মনে হচ্ছে।
পরবর্তী অংশগুলোর জন্য সাগ্রহে অপেক্ষায়।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
ওহ! কি পড়লাম। দারুণ!!
নতুন মন্তব্য করুন