ভারতীয় মিডিয়াতে এমনিতে বাংলাদেশ খুব একটা গুরুত্ব পায় না। কিন্তু সম্প্রতি, নির্বাচনের কল্যাণে মিডিয়াতে বাংলাদেশ সংক্রান্ত যথেষ্ট সংখ্যক খবর আসছে। ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশের নির্বাচন মোটামুটি দুটো ধারায় আসছে। একটা বাঙালী মিডিয়াতে, আরেকটা সর্বভারতীয় মিডিয়াতে। মজার কথা (হয়ত স্বাভাবিকভাবেই) দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার প্রতিবেদন।
নির্বাচনের সবথেকে ভাল প্রতিবেদন দিচ্ছে আনন্দবাজার। তাদের "ওপার বাংলায় ভোট"-শীর্ষক প্রতিবেদনে রোজই একটা করে বড়সড় খবর থাকছে, ব্যাকগ্রাউন্ডে আছে বড় করে ভাষা শহিদ মিনারের ছবি। আনন্দবাজারের প্রতিবেদক অনিন্দ্য জানা একদিন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওপর, একবার সুরক্ষা-ব্যবস্থার ওপর, একদিন এরশাদের ওপর আর একদিন হাসিনা-খালেদা বৈরীতার ওপর ভাল প্রতিবেদন দিয়েছেন। আমার সব প্রতিবেদনই ভাল লেগেছে। আন্তরিক, সাবলীল লেখা - পড়ে মনে হয় আমাদের পাশের একটা জায়গারই কথা পড়ছি। বর্তমান বা আজকাল আমি খুব একটা পড়িনা, তাও দেখলাম ওখানেও আজকের কাগজে দুটো প্রতিবেদন আছে নির্বাচন নিয়ে।
সর্বভারতীয় মিডিয়া এমনিতেই খুব দেশকেন্দ্রিক। তাই, বাংলাদেশ নিয়ে বেশীরভাগ লেখা হয় ভারতের সাথে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে, নাহয় সন্ত্রাস নিয়ে - মাঝে কিছুদিন ইউনুসকে নিয়ে অনেক লেখালিখি হল, এখন তাও নেই। ভোটের কল্যাণে তাদের হাত থেকেও কিছু "অন্যরকম" লেখা উপহার পাচ্ছি। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের চিন্তাভাবনার কিছু অংশ তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে।
তবে একটা ব্যাপার আমার চোখে খুব পরিষ্কার হয়েছে। বাংলাদেশের একশ্রেণীর ব্লগার যেভাবে ভারতের হাসিনাপ্রীতি প্রচার করে বেড়ায়, ভারতীয় মিডিয়াতে তার কোনো প্রতিফলন চোখে পড়ল না। একমাত্র ব্যতিক্রম ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকায় - এখানে মনে হল হাসিনার পক্ষ নিয়ে ও হিন্দু ভোটারদের কথা অনেক বেশী আকারে লেখা হয়েছে।
আজকালের প্রতিবেদনে দেখলাম কবরী চৌধুরীর প্রার্থী হবার কথা লেখা হয়েছে। ইনি কোলকাতায় এককালে মুক্তিযুদ্ধের জন্য অনেক প্রচার চালিয়েছিলেন ও চাঁদা সংগ্রহ করতেন। বর্তমানের প্রতিবেদনে খালেদা জিয়ার জলপাইগুড়ির বাড়ির কথা লেখা হয়েছে।
"কল্লোলবাবুর বাড়িতেই জন্ম হয় খালেদার। কয়েক বছর পর তাঁর বোনেরও জন্ম হয়। নয়াবস্তির বাড়িতে খালেদার প্রতিবেশী ছিলেন বিজনবালা মণ্ডল। তিনি বললেন, খালেদার নাম ছিল ফুল ও বোনের নাম ছিল রেণু। দু’জনেই জলপাইগুড়ির সুনীতিবালা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পড়তেন। তখন নাম ছিল জলপাইগুড়ি সদর গার্লস। অফিস থেকে ফেরার পথে দুই বোনকে সাইকেলে নিয়ে আসতেন ইসকিন্দার সাহেব।"
"ইতিহাস বলে, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী উত্তাল সময়ে ‘মেয়ে’ ডেকে নিজের বাড়িতে বিপন্ন খালেদাকে ঠাই দিয়েছিলেন শেখ মুজিব। তখন কাছাকাছি বয়সের দুই মেয়ের বন্ধুত্বও হয়েছিল। ... সত্যিই কি তারা পরস্পরের এতটা শত্রু? নাকি ক্ষমতার রাজনীতিই তাদের ঠেলে দিয়েছে বাধ্যতামূলক দূরত্বে?... দুই শিবিরের নেতারা বলছিলেন, ‘‘ওঁরা এক সঙ্গে বসলে দলের কর্মীরা বলবে কী? তারা নিচুতলায় মারামারি-কাটাকাটি করবে আর নেত্রীরা হেসে হেসে কথা বলবেন!’’"
আনন্দবাজারের ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। সন্ত্রাস-দমনে কড়া নিরাপত্তা-ব্যবস্থার প্রশংসা করেছে। যে দেওয়াল লিখন বন্ধ করতে পশ্চিমবঙ্গ ডাহা ফেল করে গেছে, সদিচ্ছা দিয়ে তা করে দেখিয়েছেন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। শুধু তাই নয়, নির্বাচনী নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলার প্রশংসাও করা হয়েছে। লেখা শেষ হয়েছে এই বলে -
"মাত্রই ৩৫ বছরের গণতন্ত্র। এখনও যথেষ্ট নড়বড়ে। দু’বার সামরিক শাসন। গণ হরতাল। বন্ধ। বিস্ফোরণ। জঙ্গি হামলা। অর্থনীতির দফারফা। তার মধ্যেও বাংলাদেশ দেখাল, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে হয়। এর মধ্যেও হয়।যে পরিণতি বোধ, লিখতে খারাপই লাগছে, এখনও দেখাতে পারে না মাত্র চল্লিশ মিনিট উড়ান-দূরত্বর দীর্ঘ গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের ধ্বজাধারী আপাত-গর্বিত জমি। এটাও বাংলা। ওটাও। কিন্তু মানসিকতার কী যোজন দূরত্ব!
পূর্ব থেকে কিছু শিখতে পারে না পশ্চিম? "
[আনন্দবাজার পড়তে অসুবিধা হলে এই লিঙ্কের শেষে আনন্দবাজারের লিঙ্ক লাগিয়ে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। সুবিধার জন্য আমি ইউনিকোডের লিঙ্কগুলো দিয়ে দিলাম।
নির্বাচন কমিশন
এরশাদ
হাসিনা-খালেদা
সুরক্ষা-ব্যবস্থা]
মন্তব্য
"আজকালের প্রতিবেদনে দেখলাম করবী চৌধুরীর প্রার্থী হবার কথা লেখা হয়েছে। ইনি কোলকাতায় এককালে মুক্তিযুদ্ধের জন্য অনেক প্রচার চালিয়েছিলেন ও চাঁদা সংগ্রহ করতেন।"
কোন করবী চৌধুরী?
"ইতিহাস বলে, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী উত্তাল সময়ে ‘মেয়ে’ ডেকে নিজের বাড়িতে বিপন্ন খালেদাকে ঠাই দিয়েছিলেন শেখ মুজিব। তখন কাছাকাছি বয়সের দুই মেয়ের বন্ধুত্বও হয়েছিল।"
এ কথাতো জানা ছিলোন।
ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
কপি-পেস্ট সমস্যা ... করবী নয় কবরী হবে ...
বাকি খবর (বিশেষত বন্ধুত্বের) আমারও জানা ছিল না - সত্যতা সম্পর্কে আপনারাই ভাল জানবেন।
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ধন্যবাদ ওপার বাংলার খবর জানানোর জন্যে। ব্লগ পড়তে পড়তে মূলধারার খবর পড়া হয় কম। কবে যে সব বাংলা পত্রিকাগুলোকে ইউনিকোডে গুগল নিউজের মত কিছু দিয়ে সার্চ করে পড়ব!
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
খুব ভালো লাগলো। কোন দেশের কোন মিডিয়া কী সংবাদ দিচ্ছে সেটা দেখাও জরুরী। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সুন্দর আলোকপাত। ধন্যবাদ।
অনেক সময় নিজের চেহারাটা ভালো মতো দেখতে ঘরের বাইরের লোকজনের মূল্যায়ন দেখাটা জরুরী হয়ে পড়ে। আপনার লেখায় এতোগুলো লিংক পেয়ে ভালো লাগলো খুব। আরো ভালো লাগলো এই জেনে যে, আমরা আস্তে আস্তে ভালো করছি! আমাদের ইলেকশন কমিশন ভালো করছে, স্মরণকালের স্বচ্চ নির্বাচন হতে চলেছে বাংলাদেশে! এই কথা আমাদের অনেকেই না বলে থাকলেও বাইরের অনেক লোক আজ একথা বলছে, 'বাংলাদেশ ভালো করছে'। বাংলাদেশের ইলেকশন কমিশন কতো স্বচ্চতার সাথে কাজ করলে কমিশনের ওয়েব সাইটে এতো র্যাডিক্যাল পরিবর্তন আসে! এমন কি চট্টগ্রাম পোর্টে বিশাল অঙ্কের কালো টাকার লেনদেন বন্ধ করতেও বেশ ভালো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
উনি এককালের সারা জানানো অভিনেত্রী কবরী, এখন অবশ্য কবরী সারওয়ার নামে পরিচিত। আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশ পেয়েছেন, আসলেই মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে উনার ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংশনীয়!
কথা সত্য। খেয়াল করবেন হাসিনা সেনা নিবাসের অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের উত্তরে হাসতে হাসতে বলছিলেন, 'আপনারা কি মনে করেন আমরা একে অন্যের সাথে কথা বলিনা? জেলে থাকার সময় আমি উনার (খালেদা) জন্য খাওয়া পাঠিয়েছি, আশা করি তিনি তা খেয়েছেনও'। সুতরাং বুঝতেই পারছেন রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কারণে তিনারা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব বজায় রাখেন!
শেষে আপনাকে এই পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে কিছু লিংক দিয়ে দিচ্ছি। বাংলাদেশের নির্বাচনটি পুরোপুরি শংকা মুক্ত করতে ও বিভিন্ন জরুরী তথ্য দিয়ে দেশটাকে প্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যে কেউ নিজের নিজের দ্বায়িত্বটুকু পালন করতে পারেন।
http://www.rab.gov.bd/criminals.php
http://www.police.gov.bd/index5.php?category=92
http://www.police.gov.bd/index5.php?category=93
এসব ক্রিমিনালকে নির্বাচনের সময় দেখামাত্র এসব লিংকে গিয়ে যথাযত কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেন। এমন কি দেশের বাইরে তাদের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের তথ্যও জানাতে পারেন।
পড়ে ভালো লাগলো।
রেজওয়ান এর কথার সাথেও আমি একমত। আহা! যদি সব নিউজ একসাথে পেয়ে যেতাম!
খুব ভাল একটা পোস্ট দিয়েছেন। ধন্যবাদ।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
ভালো লাগলো। কলকাতার পত্রিকাগুলো যদি আমাদের নামগুলো ঠিক করে লিখতো তাহলে আরো ভালো লাগতো।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
কলকাতার পত্রিকাগুলো যদি আমাদের নামগুলো ঠিক করে লিখতো তাহলে আরো ভালো লাগতো।
শুধু আপনাদেরই নয়, আরো অনেকের নামেরই একই অবস্থা হয়। শচিন -> সচিন, শেওবাগ -> সহবাগ, আলুওয়ালিয়া -> অহলুয়ালিয়া, নিস্তেলরয় -> নিস্তেল্গুঁই।
তাছাড়া সবকিছুর সংস্কৃত নাম বানানোর চেষ্টা তো আছেই।
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পড়ে খুব ভাল লাগল। ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রশংসা শুনে সবচেয়ে ভাল লেগেছে। তার মানে আমরা আসলেই উন্নতি করতে শুরু করেছি?!
নির্বাচনের পূর্বের সময়টা কমিশন যেভাবে সামলিয়েছে পরের সবকিছুও যেন সেভাবে চলে। এবার যেন নির্বাচনের পর হেরে যাওয়া দল কাঁদা ছোড়া শুরু না করে। এখন এটাই কেবল চাই।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
ইন্ডিয়া টাইম্সের এই খবরটা দেখেন। এর অর্থই বুঝি নাই। বিজয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে তিন সেনা কর্মকর্তা কলকাতায় গিয়েছিলেন। এই খবরের সাথে নিচের লাইনগুলো জুড়ে দিয়েছিল "ইন্ডিয়া টাইম্স"। ভারতের কাছে কি সাহায্য চাইতে যাবে সেটা বুঝিনি। সাহায্য করারই বা কি আছে আর কেনই বা সাহায্য চাইতে যাবে?
মূল খবর: Bangladesh officers to join Vijay Diwas celebrations
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
যখন "Political observers believe" বলা হয়েছে, তার মানে এর পরের অংশটুকু ওদের ডেস্কে বসে বানানো। সুতরাং, চিন্তা বৃথা ...
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
এই রাজাকারগুলোকে 'না' বলুন ।
নন্দিনী
পোস্টের জন্য ধন্যবাদ, দিগন্ত!
চমৎকার পোস্ট।
নতুন মন্তব্য করুন