আমি বিশ্বকাপ দেখছি ১৯৮৬ সাল থেকে, মানে এখন হতে চলল ২৪ বছর। প্রতি বিশ্বকাপই সমান উত্তেজনা নিয়ে আবেগ নিয়ে দেখে এসেছি, তবে বয়স বাড়ছে যখন আবেগের বোঝাও কিছুটা করে কমে আসছে। আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে কোনটা তোমার দেখা সেরা বিশ্বকাপ - আমি অবশ্যই বলব ১৯৮৬ সালেরটা। ফ্যাক্টর অনেকগুলো - খেলায় আক্রমণ-প্রতিআক্রমণের সংখ্যাধিক্য, পুরো ফর্মের মারাদোনা (না, এর পরের দুটো বিশ্বকাপে এরকম মারাদোনাকে পাওয়া যায় নি) আর দুর্দান্ত কিছু শিল্পী প্লেয়ার - তবে সবাইকে ছাপিয়ে আমার নিজের আবেগ।
এখন আর তেমন আবেগ নিজে থেকে আসেনা, তাই বিল্ড-আপ করতে হয় - মানে বিশ্বকাপ জ্বরটা নিজে থেকে আসেনা, খবরের কাগজ নিয়মিত পড়ে, ফ্রেন্ডলি খেলা দেখে জ্বরটা তৈরী করতে হয়। এর ওপর আমি ঠিকঠাক কোনো দলকে সমর্থন করতে পারি না - তাই গোদের ওপর বিষফোঁড়া - চট করে সমর্থকদের সাথে মিশেও আবেগ আসে না।
আমি ভালবাসি অঘটন দেখতে। মানে ধরা যাক কোনো তৃতীয় বিশ্বের দেশ সবাইকে চমকে দিয়ে উঠে গেল কোয়ার্টার ফাইনালে - মানে আমি সে দলের নীরব সমর্থক। অথবা, পিছিয়ে পড়ে একাধিকবার সমতা ফেরাচ্ছে যারা - আমি খেলা দেখতে দেখতে অচিরেই তাদের সমর্থক হয়ে যাই। কিন্তু তেমনভাবে কোনো দলকে সমর্থন করি না। আমার প্রাক-বিশ্বকাপ সমর্থনের ইতিহাস এরকম - ফ্রান্স (১৯৮৬), ইটালী (১৯৯০), ব্রাজিল (১৯৯৪), হল্যান্ড (১৯৯৮), ব্রাজিল (২০০২, ২০০৬)। অঘটনের কথা বলতে হলে আমার মনে পড়ে অনেকগুলো ম্যাচের কথা - ১৯৮৬ সালে বেলজিয়ামের উঠে আসা মনে পড়ে। ১৯৯০ সালে আর্জেন্টিনা ক্যামেরুনের সিংহের কাছে ০-১ হার বা রোমানিয়ার ওই একই দলের কাছে ১-২ হার খুব মনে পড়ে। একইভাবে খেলা শেষের দশ মিনিট আগে অবধি ১-২ এগিয়ে থেকেও ইংল্যান্ডের কাছে ২-৩ হার আমার পছন্দ হয়নি। ১৯৯৪ সালের আয়ারল্যান্ডের ইটালীকে ১-০ হারানোও আমার পছন্দের তালিকায়। একিভাবে দুঃখ পেয়েছিলাম নাইজেরিয়া ইটালীর কাছে শেষ মুহূর্ত অবধি এগিয়ে থেকেও ১-২ হেরে যাওয়ায়। ইটালীর ডিফেন্ডার মালদিনি পরিষ্কার বার-দুয়েক লাল-কার্ড দেখতে পারত ম্যাচটাতে। বুলগেরিয়ার কাছে জার্মানীর পরাজয় দারুণ এনজয় করেছিলাম। ১৯৯৮ সালে তুলনামূলক অঘটন-বিবর্জিত বিশ্বকাপ, কেবলমাত্র যুদ্ধবিধ্বস্ত ও সদ্যোজাত ক্রোয়েশিয়ার সেমিফাইনালে যাওয়া ছাড়া বিশেষ চমক নেই। ২০০২ সালে আবার চমকের পরে চমক। দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকা, সেনেগাল আর তুরস্ক - চার দলই মাতিয়ে দিল অঘটনের টুর্নামেন্ট। সবথেকে ভাল ব্যাপারটা হল, এই সব দলই খুব দৃষ্টিনন্দন ও গতিময় ফুটবল খেলেছিল যা দেখে আনন্দ পেয়চছিলাম। তবে প্রতি ম্যাচে রেফারির বদান্যতা-পুষ্ট দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায় বাকি দুটি দলই আমার সমর্থন বেশী করে পেয়েছিল। ইটালী ও স্পেনের বিরুদ্ধে রেফারীর একাধিক সিদ্ধান্ত যেভাবে কোরিয়ার পক্ষে গিয়েছিল তা কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে প্রায় কল্পনাতীত। ২০০৬ সালে আবার প্রায় অঘটন-শূন্য বিশ্বকাপ - কেবলমাত্র ক্ষীণ আলো ঘানার দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া।
আমার লেখাগুলো মেপে মেপে পড়লে বোঝা যায় যে বছর ইউরোপে বিশ্বকাপ হয় তখন অঘটনের সংখ্যা রীতিমত কমে যায় (৯০,৯৮,০৬), তুলনায় বেশী অঘটন হয় বাইরের বিশ্বকাপে। আর নতুন ভেন্যু (২০০২) থাকলে তো অঘটনের ছড়াছড়ি। বিশেষজ্ঞদের মতে হোম-ম্যাচ সিনড্রোম এর সাথে সরাসরি যুক্ত। ইউরোপে যে দেশেই খেলা হোক না কেন, সব ইউরোপীয় দেশেরই কিছু না কিছু প্লেয়ার সেই দেশের লিগে খেলার সুবাদে মাঠগুলোর সাথে পরিচিত থাকে। তাই তারা যথেষ্ট এগিয়ে থাকে - ফলে অঘটন কম। বাইরে খেলা হলে সেই সুবিধা থাকে না। এবারের বিশ্বকাপে নতুন ভেন্যুর সুবিধা নিয়ে আফ্রিকার দলগুলো কি কিছু করে দেখাতে পারবে? সময়ই বলে দেবে।
তবে, আর যাই হোক অঘটনের সমর্থকেরা একটা কথা ভেবে বেশ হতাশ হোন যে বিশ্বকাপের মালিক মাত্র সাতটা দেশের মধ্যেই ঘোরাফেরা করে - ফাইনালিস্টদের ধরলে সংখ্যা হয় মাত্র এগারো। এদের মধ্যে আবার উরুগুয়ে প্রাচীন আমলের শক্তি (ফাইনালিস্টদের মধ্যে হাঙ্গেরী কমলে থাকে দশ দেশ, যেখানে দশ দেশের ক্রিকেট বিশ্বকাপের মালিক হয়েছে পাঁচ দেশ) - তাদের লিস্টিং থেকে বের করে দিলে ইতিহাসবিদেরা জোর দিয়েই বলতে পারবেন যে বাকি ছ'টির মধ্যেই কেউ না কেউ বিশ্বকাপ জিতবে। পাড়ায় পাড়ায় সমর্থনের জোয়ারও মোটামুটি এই জোয়ারেই গা-ভাসিয়ে দেবে। তবে, এবারে বিশ্বকাপ যদি হল্যান্ড বা স্পেন জেতে তাহলে কি সেটা অঘটন হবে? ইতিহাসবিদেরা বলবেন হ্যাঁ - জনগণ বলবে না।
যারা বলেন ফুটবল এই ছয় দেশেই খেলা হয় বাকিরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখে, তারাও সমর্থন পাচ্ছেন না। তাহলে কি কারণে এরাই বারবার জেতে বিশ্বকাপে? আমিও জানি না - তবে আশা রাখি, তাড়াতাড়িই এই মিথ কেটে যাবে আর বিশ্বকাপ সত্যিই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।
লেখার শেষে বিশ্বকাপে আমার দেখা সেরা ম্যাচগুলোর একটা ছোটো লিস্টিং দিলাম। এখানে অবশ্য আমি দেখেছি এমন ম্যাচগুলোই শুধু আছে। একটা তালিকাও করার চেষ্টা করলাম।
১) ফ্রান্স বনাম ব্রাজিল , ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল
প্রথমার্ধ, দ্বিতীয়ার্ধ, অতিরিক্ত সময় ও টাইব্রেকার,
ফাইনালে আর্জেন্টিনা বনাম জার্মানী
২) হল্যান্ড বনাম জার্মানী - দ্বিতীয় রাউন্ড ১৯৯০।
৩) রোমানিয়া বনাম সুইডেন ১৯৯৪ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল।
৪) ইংল্যান্ড বনাম আর্জেন্টিনা, হল্যান্ড বনাম আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল বনাম হল্যান্ড - ১৯৯৮ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড, কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনাল।
৫) ব্রাজিল-ইংল্যান্ড কোয়ার্টার ফাইনাল ২০০২
৬) জার্মানী বনাম ইতালী - ২০০৬ সেমিফাইনাল।
মন্তব্য
৯০এ ইউগোস্লাভিয়া আর আর্জেন্টিনার কোয়ার্টার ফাইন্যালটা কেমন লাগে?
ম্যাচটা নির্ধারিত সময়ে ০-০ তে শেষ হয়েছিল। সুতরাং, লিস্টে আসবে না ...
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
দারুণ লাগলো আপনার আলোচনা/বিশ্লেষণ। আমারো প্রথম বিশ্বকাপ ৮৬তে দেখা এবং আজ অবধি আমার দেখা সেটাই সেরা বিশ্বকাপ সেটাই। তবে আপনার সেরা ম্যাচের লিস্টে ৮৬'র আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড কোয়ার্টার ফাইনাল না দেখে অবাক হলাম। এই খেলাটা আমি বোধহয় শতবারের মতো দেখেছি।
ম্যাচটা একটু বিতর্কিত বলে বাদ রেখেছি। একই কারণে ২০০২ সালের দক্ষিণ কোরিয়া-ইটালী ম্যাচটাও নেই। বিতর্কটা কেন বলে দিতে হবে না নিশ্চয়।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আমি এমনিতে মনে মনে চাই এবার স্পেন বিশ্বকাপ জিতুক। আর প্রতিটা খেলায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলকে সাপোর্ট করি। তবে অবশ্যই ব্ল্যাক লিস্টের তালিকায় থাকা কিছু দেশকে বাদ দিয়ে। যেমন- ইংল্যান্ড।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
আমিও ভালবাসি অঘটন দেখতে।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
'৮৬ তে ব্রাজিল বনাম ফ্রান্সের খেলাটা আমার দেখা অন্যতম সেরা খেলা
...........................
Every Picture Tells a Story
ঘটন বা অঘটন যেটাই হোউক, চাই আনন্দ পেতে খেলা দেখে...
--শফকত মোর্শেদ
বিশ্লেষন ভাল লাগল।
কিন্তু মন্তব্যের ঘরে এসে অবাক হলাম। আর্জেন্টিনা - ইংল্যান্ড ম্যাচ বাদ, কারন এটি বিতর্কিত!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
শুধু প্রথম গোলটার কারনে ম্যাচটি যদি বিতর্কিত হয়, তবে দ্বিতীয় গোলটার কারনে এটি সর্বকালের সেরা একটি ম্যাচ হওয়ার দাবী রাখে। বস্তুত, ফিফা সহ অন্যান্য অনেকের দৃষ্টিতেই দ্বিতীয় গোলটি শতাব্দীর সেরা গোল।
http://www.fifa.com/newscentre/news/newsid=82406.html
http://www.youtube.com/watch?v=-rW-lK9F6TU
সঠিক কথা, কিন্তু আমি খেলাটায় কখনও মনে করিনি ম্যাচটা ইংল্যান্ড জিততে পারে। তাই মনে হয় ...
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
এবারো একটা নয়া মহাদেশে বিশ্বকাপ... মন বলতেসে, নানা রকম অঘটন এবার হবে, তবে কাপ নিবে ঐ ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনা...
_________________________________________
সেরিওজা
আপনার আর আমার চিন্তাটা দারুণভাবে মিলে গেল। আমি নিজেও অঘটন পছন্দ করি। সেটা ক্রিকেট ফুটবল দুই জায়গাতেই। আশা অরি এই বিশ্বকাপেও অঘটন ঘটবে। আর অঘটন ঘটানোর জন্য আমি নাইযেরিয়াকেই
এগিয়ে রাখতে চাই। আর হ্যা ম্যারাডোনা যেইরকম পাগলামী করসে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জেতাটাকেও আমি অঘটনই বলব। আর এই অঘটনটা ঘটুক আমি সেটা মনে প্রানে চাচ্ছি
তার্কিক
এইভাবে বললে তো যে কোনো কারও জেতাই একরকমের অঘটন।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আহা, বিশ্বকাপ! ফ্যান্টাসিতে নাম লিখিয়েছেন তো?
অবশ্যই, তবে টিমটা আবার চেঞ্জ করতে হবে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আমিও টিম বানিয়েছি, কিন্তু আপনাদের লীগে জয়েন করতে পারছি না যে...
কোন অপশনে গিয়ে লীগের কোড দিতে হচ্ছে??
_________________________________________
সেরিওজা
খেলার সাথে কিছু টেলাও হোক। জিদানের ঢুসের মত কিছু 'টেলা' হইলে চার্মডা দুইগুন হইয়া যায়। খেলা আর বিতর্ক-- দুইটা নিয়াই তো বিশ্বকাপ। আগুনে ঘি ঢালনের লিগা কয়ডা বদ রেফারি, কয়ড়া ঘাঢ়-ত্যাড়া প্ল্যায়ার (......ফিফার কূটনামী?) না থাকলে টুর্নামেন্ট মনে হয় ঠিক জমে না। বুড়া মিয়ারে (বন্ধুবর জিদান) খুব মিস্ করুম এইবার . ম্যারাডোনার পর বুইড়াই আমার দেখা সেরা প্ল্যায়ার।
লেখা ভাল্লাগছে।
- আসাদ-বাবু
আহ্!
নেট স্পীডের জন্য সব দেখতে পারছি না ;(
নতুন মন্তব্য করুন