[এটা একটা ই-ম্যাগের জন্য লেখা, তাই কাঠখোট্টা ধরণের হয়ে গেছে। ]
বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি নিয়ে দেশীয় পত্রপত্রিকায় অনেক লেখা হয়। বিশেষত ভারতের ও চিনের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে অনেক লেখাই আসে, একইরকম ভাবে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি নিয়েও কিছু লেখা আসে। আমি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বাণিজ্যের রেকর্ড নিয়ে কিছু পরিসংখ্যান নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলাম। একটা প্যাটার্ন স্পষ্ট চোখে পড়ে। বাংলাদেশ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে ঘাটতি বাণিজ্য চালায়। আবার উল্টোদিকে উন্নত ইউরোপীয় দেশগুলো ও আমেরিকার সাথে বাণিজ্য-উদ্বৃত্ত থাকে। এর সাথে আছে সারা বিশ্ব থেকে পাঠানো শ্রমিকদের রেমিট্যান্স। এই সবে মিলে বাংলাদেশ আয়ের চেয়ে সামান্য কিছু কম ব্যয় করে। এই উদ্বৃত্ত বা কারেন্ট একাউন্ট সারপ্লাস বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল মজবুত করে। এ ছাড়া আছে ক্যাপিটাল একাউন্ট - যেখানে জমা পড়ে বিদেশী বিনিয়োগের টাকা। বৈদেশিক মুদ্রা তহবিল (ক্যাপিটাল একাউন্ট ও কারেন্ট একাউন্ট সারপ্লাস) বাংলাদেশের মুদ্রার (টাকা) বিনিময়মূল্য নির্দিষ্ট রাখতেও সাহায্য করে। মোটের ওপর এভাবেই বাংলাদেশের অর্থনীতি চলছে।
আমি মূলত আলোচনা করব বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে। বাংলাদেশের পত্রিকায় এই বিশেষ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় অনেক। মূল বক্তব্য থাকে দেশ আমদানী-নির্ভর হবার সমস্যা, এর সাথে আসে কিছু রাজনৈতিক আলোচনা। পরিসংখ্যানগতভাবে খুব একটা গভীরে আলোচনা যায় না, তাই আমি কিছু পরিসংখ্যান প্রস্তুত করার চেষ্টা করি। আমি ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ২৫ টি বৃহত্তম এশিয়ান বাণিজ্য পার্টনার নিয়ে কিছু চার্ট তৈরী করলাম। দেখা গেল - এর ২৩টি দেশের সাথেই বাংলাদেশের ঘাটতি বাণিজ্য চলে। উদ্বৃত্ত বাণিজ্য চলে শুধুমাত্র ইরান ও তাজিকিস্তানের সাথে। এর মধ্যে ক্রমাণ্বয়ে চিন, ভারত, সিঙ্গাপুর, জাপান, মালয়েশিয়া, হংকং ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে দুশো মিলিয়ন ডলারেরও বেশী বাণিজ্য ঘাটতি। ভারতের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি ১৭৮৪ মিলিয়ন ইউরো (আমদানী ১৯৭৪ মিলিয়ন , রপ্তানী ১৯০ মিলিয়ন) ও অপর প্রতিবেশী মায়ানমারের সাথে ঘাটতি ৪৫ মিলিয়ন ইউরোর (আমদানী ৫০ মিলিয়ন, রপ্তানী ৫ মিলিয়ন)। চিনের সাথে সর্বোচ্চ ঘাটতি ২৪৫১ মিলিয়ন ইউরোর (আমদানী ২৫২২ মিলিয়ন ও রপ্তানী ৭১ মিলিয়ন)। ১৫টি দেশের একটা চার্ট দিলাম -
তবে এ থেকে পরিষ্কার বোঝা সম্ভব নয় কোন দেশের সাথে বাণিজ্য কতটা একমুখী (অর্থাৎ আমদানী-নির্ভর)। এজন্য আমি এই দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের মোট বাণিজ্য ও তাতে ঘাটতির অনুপাত হিসাব করলাম। এই হিসাবেও দেখা যায় অধিকাংশ এশিয়ান দেশের সাথেই বাংলাদেশের ঘাটতির অনুপাত ৫০% - এরও বেশী - অর্থাৎ ১০০ টাকা বাণিজ্য হলে ৫০ টাকা ঘাটতি। এরকম দেশের মধ্যে শিল্পোন্নত জাপান বা কোরিয়া যেমন আছে, উন্নয়নশীল ভারত-চিন-থাইল্যান্ড আছে তেমন স্বল্পোন্নত মায়ানমার বা নেপালও আছে। এদের সবার ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি অনুপাত ৫০ এরও বেশী, কার্যত নেপাল ছাড়া বাকিদের ক্ষেত্রে এই অনুপাত ৮০-র ও বেশী। আমি আমদানী নির্ভরতার একটা ইনডেক্স বানিয়ে তাতে দেশগুলোকে ক্রমাণ্বয়ে সাজালাম। সবার ওপরে আসে উজবেকিস্তান - যারা বাংলাদেশে ২৬৯ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের রপ্তানী করেছেন, অথচ আমদানী করেছেন মাত্র ২ মিলিয়ন মূল্যের সামগ্রী। এর পরে একে একে আসে যথাক্রমে কুয়েত, চিন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার, তুর্কমেনিস্তান, ভারত, মায়ানমার ও জাপান।
একটু গভীরে আলোচনা করি - তালিকার সবার ওপরে থাকা উজবেকিস্তানকে নিয়েই আলোচনা করা যাক। উজবেকিস্তান থেকে বাংলাদেশ মূলত তুলো কেনে বাংলাদেশের নিজস্ব টেক্সটাইল শিল্প চালানোর জন্য। উজবেকিস্তানে তুলো চাষ অনেক হলেও শ্রমিক তুলনায় কম - যা আছে বাংলাদেশে। তাই উজবেকিস্তান থেকে আমদানী করা কাঁচামাল যদি গারমেন্টস-এর আকারে পশ্চিমে যায় তাহলে দুই দেশেরই লাভ - যাকে বলে উইন-উইন সিচুয়েশন। সেইক্ষেত্রে বাংলাদেশ একতরফা বিশাল বাণিজ্য ঘাটতির সম্মুখীন হলেও এই কাঁচামাল আদপে বাংলাদেশের কাজে আসছে। তাই ঘাটতি বাণিজ্য সবসময় খারাপ নয়, যদি সেই ঘাটতি অন্য কোথাও রপ্তানী উদ্বৃত্তের কাজে আসে।
এই বাণিজ্য ঘাটতি কি চিন্তার বিষয়? আপাতত না। কারণ, মোটের ওপর বাংলাদেশের আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য আছে। কিছু দেশের সাথে ঘাটতি বাড়লেও অন্য দেশের সাথে উদ্বৃত্ত বেড়ে সেই ঘাটতি পুষিয়ে যায়। তাছাড়া উজবেকিস্তানের ক্ষেত্রে যেমন দেখলাম, সেভাবে কাঁচামাল আমদানী বাড়লে সাময়িকভাবে কোনো কোনো দেশের সাথে একতরফা আমদানী-সম্পর্ক তৈরী হতেই পারে। এগুলোতে সমস্যা নেই। সহজভাবে ভাবলে এক ব্যক্তি অফিসে কাজ করে মাইনে পায় যা তার “বাণিজ্য-উদ্বৃত্ত”, আর সে যে যে দোকানে গিয়ে জিনিস কেনে তাদের সাথে তার “বাণিজ্য-ঘাটতি” - মোটের ওপর হিসাব নিয়ন্ত্রণে থাকলে চিন্তার কিছু থাকে না।
কিন্তু ভবিষ্যতের কথা মাথায় রাখলে চিন্তার কিছু কিছু কারণ আছে। প্রথমত, বাংলাদেশের রপ্তানী-বাণিজ্যের ৮০% এরও বেশী শুধুমাত্র টেক্সটাইল ও গারমেন্টস-কেন্দ্রিক। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ইউরোপে প্রতিদ্বন্দীদের তুলনায় কিছুটা শুল্ক-সুবিধা পায় স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে। ভবিষ্যতে এই সুবিধা না থাকলে এই শিল্পের সমস্যা তৈরী হতে পারে। একইভাবে, কাঁচামালের যোগানে সমস্যা সৃষ্টি হলেও রপ্তানী মার খেতে পারে। তবে বিগত কিছু বছরের ট্রেন্ড থেকে মনে হয় না এরকম সমস্যা তৈরী হতে পারে।
দ্বিতীয়ত বিশ্ব-বাণিজ্যের ভরকেন্দ্র যে আস্তে আস্তে এশিয়ার দিকে সরে আসছে তা সব অর্থনীতিবিদেরাই বলছেন। এশিয়ার সাথে বাণিজ্য ঘাটতি কিছু কিছু উদ্বৃত্তে না পরিণত করতে পারলে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে - কারণ পশ্চিমের বাজার এশিয়ার মত অত দ্রুতহারে ক্রমবর্ধমান নয়। সেক্ষেত্রে বাণিজ্য ঘাটতি ক্রমাগত বেড়েই চলবে। এশিয়ার দেশগুলোতে পশ্চিমের মত শস্তাশ্রমের অভাব নেই, তাই শ্রমঘন শিল্প ছাড়াও অন্যান্য দক্ষতাভিত্তিক শিল্পখাতে উন্নতি করতে হবে।
তৃতীয়ত বাংলাদেশে রপ্তানীমুখী শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে। সন্দেহ নেই এটা অত সহজে হবে না, কারণ বাংলাদেশে কাঁচামালের প্রাপ্যতার সমস্যা আছে। তাও পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরে ৩৫ মিলিয়ন ইউরো, মালয়েশিয়ায় ২৫ মিলিয়ন ইউরো থাইল্যান্ডে ২৪ মিলিয়ন ইউরো এবং মায়ানমারে ৫ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের সামগ্রী রপ্তানী করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দূরত্বের নিরিখে এই চারটে দেশই বাংলাদেশের প্রতিবেশী-তুল্য। এবং এদের জিডিপি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণও যথেষ্ট বেশী। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের রপ্তানী-ব্যর্থতা চোখে পড়ার মত। একই ভাবে, সংযুক্ত আরব আমীরশাহী, কুয়েত ও কাতারে বাংলাদেশের রপ্তানীর পরিমাণ যথাক্রমে ৪১, ৫ ও ৪ মিলিয়ন ইউরো। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তেল ও গ্যাস রপ্তানী করে প্রায় বাকি সবই আমদানী করে। আবার এই দেশগুলোতে প্রচুর সংখ্যায় বাংলাদেশী কর্মরত। তাই এখানেও বাংলাদেশের রপ্তানী-ব্যর্থতা চোখে পড়ে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চারটি দেশে ভারতের রপ্তানী যথাক্রমে ৩৬৬৯, ১৭২৫, ১১২৮ ও ১৫০ মিলিয়ন ইউরো। আর মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশে রপ্তানী হল ১৪৭৬২, ৫১৪ ও ৪২৯ মিলিয়ন ইউরো। এশিয়া-মুখী বাণিজ্যে বাংলাদেশকে আরও দ্রুত রপ্তানী বাড়াতে হবে, এটাই বোঝা যায়।
রপ্তানীমুখী শিল্পের বিকাশের জন্য দেশে বিনিয়োগের দরকার। বিশ্বব্যাঙ্কের ঋণ দিয়ে কিছু পরিকাঠামো গড়া যায় বটে কিন্তু বৈদেশিক বিনিয়োগই এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলোকে উন্নতির পথে ঠেলেছে। এখানে সমস্যা হল রাজনৈতিক। বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য বেশী ঝুঁকি নিচ্ছে, তাই তারা বেশী সুযোগসুবিধা চাইবে - যা নিয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরী হয়। অথচ শিল্পায়নে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। দেশের আয়-উদ্বৃত্ত দিয়ে যদি পরিকাঠামো তৈরী হয় তাহলে টাকার বিনিময়মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প অবশ্যই ভাল - কিন্তু কয়েকটি সেক্টর ছাড়া (যেমন মাইনিং, এগ্রো-বেসড) পৃথিবীতে সফল রপ্তানীমুখী রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের উদাহরণ খুবই কম। তাছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প অধিকাংশ সময়েই একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার পায় যার ফলে দ্রুত স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির পীঠস্থান হয়ে ওঠে। এশিয়ার শিল্পোন্নত কিছু দেশ (জাপান, কোরিয়া) থেকে বিনিয়োগ আনতে পারলে ভাল ছাড়া খারাপ কিছু হয় না, বিনিয়োগকারীরা নিজেরাই লবি করে ওইসব দেশে বাংলাদেশের জন্য বাণিজ্য সুবিধা করে দেবে।
শেষের কথায় আসি। রপ্তানীমুখী শিল্পের দরকার আছে ঠিকই, কিন্তু সেখানেও একটা প্রশ্নচিহ্ণ রেখে দেওয়া ভাল। রপ্তানীমুখী শিল্পের মাধ্যমে উন্নয়নের সবথেকে ভাল মডেল হল চিন। কিন্তু দেশে শিল্প গড়তে গিয়ে দেশের মধ্যে যে পরিমাণ দূষণের সম্মুখীন হতে হয় তার উদাহরণও চিন থেকে পাওয়া যায়। একইভাবে ভারতে শিল্প গঠনে জমি অধিগ্রহণের সময় একাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা থেকে বোঝা যায় বাংলাদেশেও শিল্পের বিকাশ অতটা সহজে হবে না। শুধু তাই নয়, চিন যেমন জাতিসংঘে ও বিশ্ব-দরবারে নিজের প্রভাব খাটিয়ে অনুন্নত দেশগুলো থেকে কাঁচামাল আমদানী করে, সেটাও বাংলাদেশের পক্ষে অতটা সহজ না-ও হতে পারে। তাই শিল্প ছাড়াও সেবা বা সার্ভিসেস সেক্টরে জোর দেওয়া দরকার। সেবা-খাতে সুবিধা হল এখানে প্রবৃদ্ধির জন্য মেধা-সম্পদ ছাড়া আর কোনো কাঁচামালের প্রয়োজন পড়ে না, পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনাও অনেক কম (একমাত্র ব্যবহৃত বিদ্যুতের জন্য যতটা)। এর পরে রেমিট্যান্স ও শ্রমিক-রপ্তানী। এই খাতে বাংলাদেশের বর্তমান সাফল্যও চোখে পড়ার মত। তবু, পরিসংখ্যানের কথায় বলি, ২০১০ সালের বাংলাদেশের শ্রমিক-পিছু রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২০৮৪ ডলার যেটা ভারতের ক্ষেত্রে ৪৮৬৭ ডলার। তাই, শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোর কাজে সরকারী উদ্যোগ চাই, যাতে একই সংখ্যক শ্রমিক আরো বেশী রেমিট্যান্স পাঠাতে পারে, সেই সাথে বেশী শ্রমিক পাঠাবার উদ্যোগও জারী রাখতে হবে। বাণিজ্যের ভবিষ্যত হল বিশ্বায়ন ও মুক্তবাণিজ্যের হাত ধরে - মুক্তবাণিজ্যের বিশ্বে সাফল্যের জন্য দক্ষতা ও পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।
মন্তব্য
বিশ্লেষণ ও পরামর্শ দুটোই বেশ ভালো হয়েছে, নির্মোহ হয়েছে। আমি ফুটো পয়সা যোগ করার চেষ্টা করি।
১. অর্থনীতিতে আমরা দুটো প্রাথমিক কৌশল অবলম্বন করতে পারি - রপ্তানীমুখী আর আমদানী প্রতিস্থাপনমূলক। উভয় ক্ষেত্রেই বিশ্বের প্রত্যেকটা দেশকে, বিশেষতঃ যাদের সাথে নিয়মিত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আছে, আলাদা আলাদা কেস হিসাবে বিবেচনা করে সেভাবে কৌশল নির্ধারণ করা দরকার। এই কাজটা সেদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস করতে পারার কথা। কেন পারেনা সে কারণ আমরা জানি, ওটা দূর করার চেষ্টা করলে বাণিজ্যে আরো ভারসাম্য আসা সম্ভব।
২. রপ্তানীর নতুন নতুন ক্ষেত্র, নতুন নতুন দেশ (ক্রেতা) নিয়মিতভাবে আবিষ্কার করা দরকার। ক্ষমতাবানদের বৈদেশিক সফরে আত্মীয়-চামচাদের বিশাল বহর না নিয়ে তার বদলে উদ্যোগী যুবকদের দলকে ঐ বহরে সাবসিডিতে ভ্রমণের সুযোগ দিলে রপ্তানী বাণিজ্যের কিছু সুযোগ তৈরি হতে পারে।
৩. বাংলাদেশ নিয়মিত ভিত্তিতে যেসব জিনিষ আমদানী করে সেগুলো পরীক্ষা করে দেখা দরকার সেগুলোর ভালো বিকল্প বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় কিনা। যদি হয় তাহলে সেসব পণ্যে উচ্চ ট্যারিফ আরোপ করা দরকার। এই কাজটা এখনো যে হয়না তা নয়, তবে সেটা বিশেষ গোষ্ঠীর বিশেষ বিশেষ পণ্যকে একচেটিয়া বাজার করে দেবার জন্য করা হয়।
৪. যেসব পণ্য অল্প মূল্য সংযোজনে বাংলাদেশে বানানো সম্ভব সেগুলো উৎপাদনের শিল্পকে প্রণোদনা দেয়া দরকার। অবশ্য নানা ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ এখনকার বাজেটেও দেখা যায়, তবে সেই টাকাগুলো কোথায় যেন চলে যায়।
৫. সারা দুনিয়ায় এখন প্রায় আশি লাখের মতো প্রবাসী বাংলাদেশী আছেন। এই আশি লাখ মানুষের প্রয়োজনীয় অনেক কিছু বাংলাদেশ থেকে পাঠানো সম্ভব। এখন যে তা হচ্ছেনা তা নয়। তবে এটা আরো বড় আকারে, আরো ব্যাপকভাবে করা সম্ভব। বড় ধরণের চেইন স্টোরগুলোকে এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।
৬. কীভাবে যেন শ্রম রপ্তানী সেক্টরটা একেবারে শুরু থেকেই টাউট-বাটপারদের খপ্পরে পড়েছে। প্রতি বছর যে পরিমাণ যুবক এদের দ্বারা প্রতারিত হন তাদের অর্ধেকও যদি বিদেশে বৈধভাবে চাকুরী নিয়ে যেতে পারতেন তাহলে দেশের আয় আরো বহু পরিমাণে বাড়তো। এই ব্যাপারে সরকারের ভূমিকা আশ্চর্য রকমের দুর্বল।
৭. রিক্রুটিং এজেন্টদের নতজানু মানসিকতা, দুর্বল বার্গেইনিং পাওয়ারের জন্য আমাদের কর্মীরা বিদেশে ভালো বেতন বা সুবিধা পাননা - এমনকি যথেষ্ট দক্ষতা থাকলেও। এই ব্যাপারে এজেন্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. যারা বিদেশে কাজ করতে যেতে চান তাদেরকে সংশ্লিষ্ট দেশের চাহিদা অনুযায়ী কাজের প্রশিক্ষণ ও ভাষা শেখানোর ব্যাপারে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। এধরনের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থানা পর্যায়ে পড়ে তুলতে হবে।
৯. ঋণগ্রহীতাকে একটু নরম থাকতে হয় সত্য, তবে দানগ্রহীতার মতো নতজানু নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে ঋণগ্রহনের ক্ষেত্রে আমাদের আচরণ দানগ্রহীতার মতো। একটি বিশেষ কাজে অর্থায়ণের জন্য একাধিক ঋণদাতার সাথে আলোচনা করে সুবিধাজনক শর্তে ঋণ পাওয়া সম্ভব। তাতে বাংলাদেশ রপ্তানী করে এমন জিনিষ ঐ ঋণচুক্তির আওতায় আমদানী করতে হয়না। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার উল্টোটা কেন ঘটে সেটা আমরা জানি। খামোখাই কি আমরা বছর বছর কীসে যেনো ফার্স্ট হই!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ, আপনি লেখাটা সম্পূর্ণ করেছেন। ৯ নম্বর নিয়ে আমি আরো লিখব, শুধু কিছু তথ্যের অপেক্ষায় আছি।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
চমতকার পোস্ট !
লেখাটি বেশ ভালো লেগেছে। বেশ শ্রমসাধ্য লেখা এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখা। বানিজ্য ঘাটতির বেশ ভালো একটি তুলনামূলক চিত্র উঠে এসেছে। পাণ্ডব'দার মন্তব্যের সাথেও সহমত।
আমার কিছু কথাঃ
১। বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে।
২। আমদানী-রপ্তানী ঘাটতি পূরণ করতে হবে।
৩। বিশ্বের শ্রমবাজারে আরো বেশি শ্রমিক রপ্তানী করা এবং তার জন্য রাষ্ট্রীয়/ব্যক্তি উদ্যোগে শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ট্রেনিংয়ে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। শ্রম বাজার যে শুধু নিম্ন আয়ের শ্রমিকই হতে হবে তা নয়। ইঞ্জিনিয়ার/ডাক্তার/নার্স/কৃষিবিজ্ঞানীর মত যে কোন শ্রমিকই হতে পারে। আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়াররা যেহেতু বিদেশে বেশ সফল এই ক্ষেত্রে আরো ইঞ্জিনিয়ার তৈরী করা যেতে পারে। মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থাকেও বাহিরের লেভেলে উন্নত করা উচিত।
৪। বিদেশে বসবাসরত বাঙ্গালীদের জন্যই আমাদের পণ্যের বাজার তৈরী করা সম্ভব।
৫। সফটওয়ার, কল সেন্টার, আউটসোর্সিং এর খাতকে সরকার একটু সহায়তা করলে এই খাত হতেও অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আসতে পারে।
৬। নুতন নুতন পণ্যের বাজার খুঁজা দরকার।
আপনার সাথেও সহমত কাঁচামাল যদি দেশে না থাকে তবে সেটা একতরফা আমদানী করা হলে সমস্যা নেই। কারণ সেই কাচামাল পণ্য হয়ে বাড়তি মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে।
আমার সমস্যা ইলেক্ট্রনিক্স, গাড়ি, তৈরিজাত খাবার বা যে কোন পণ্য যেগুলো বাহিরে প্রস্তুতকৃত সেগুলো সরাসরি আমদানী করাতে। যদি এই সব পণ্য দেশেই তৈরী হয় (হোক বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশী বিনিয়োগ) তাতে আমার আপত্তি নেই। দেশে তৈরী হলে শ্রম বাজার তৈরী হয়, অবকাঠামো তৈরী হয়, বৈদেশিক মুদ্রা দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়। কিন্তু সরাসরি কোন পণ্য আমদানি হলে বৈদেশিক মুদ্রা দেশের অর্থনীতি হতে চলে যায়। তাই পণ্য আমদানি করার চেয়ে বিদেশি বিনিয়োগকেই অর্থনীতির জন্য ভালো বলে মনে হয়।
দিগন্ত, অর্থনীতি বিষয়টাই কাঠখোট্টা, কাজেই লেখাটা তো একটু হবেই. আপনার মূল বক্তব্যের সাথে একমত. আমি এই বিষয়ে লিখেছিলাম বছর দুই আগে:
http://jrahman.wordpress.com/2008/06/05/on-trade-deficits-and-related-matters/
এর সাথে যোগ করতে চাই যে টেকসই প্রবৃদ্ধি সম্ভব শুধু মাত্র যদি high productivity (এই কথাটার যুতসই বাংলা এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে না, ) কর্ম সংস্থান হয়. আমদানী প্রতিস্থাপনমূলক কৌশলের তুলনায় রপ্তানীমুখী কৌশলে এই ধরনের কর্ম সংস্থানএর সম্ভাবনা বেশি.
নতুন মন্তব্য করুন