দেশ থেকে বাইরে কাটিয়ে দিলাম দীর্ঘ সাড়ে চার বছর। মাঝে দেশে গেছি বার-দুয়েক। দেশেও উন্নতি হচ্ছে, বড় বড় বিল্ডিং হচ্ছে, চাকরি হচ্ছে রাস্তাঘাট হচ্ছে - দিনে দিনে দিন-বদলের ছোঁয়া দেখা যায়। ধানক্ষেত জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে হাউসিং ডেভেলপমেন্ট জোনের জন্য। কিছু পরিবর্তন আমেরিকাতেও হচ্ছে। মন্দার পরবর্তী রাস্তাঘাট মেরামতের কাজ এখন কমে আসছে, যত মন্দা কাটছে ততই বোঝা যাচ্ছে মন্দার পরবর্তী রিকভারি হয়ত তত চাকরি আনবে না বাজারে। হাউসিং বাবল বার্স্ট করার পরে দাম আবার বাড়া শুরু হয়েছে বটে কিন্তু বাবলের সময়ের দামের কাছাকাছি পর্যায়ে যেতেও এখনও অন্তত বছর পাঁচেক বাকি। তাও তফাৎ চোখে পড়ে। প্রথম বিশ্ব আর তৃতীয় বিশ্ব নামগুলো ঠিক কে কিভাবে দিয়েছিল জানি না, দেশে গেলেই দুই বিশ্বের তফাতের কথা ভালভাবে বোঝা যায়। একটা বছর তিনেকের শিশু দুয়েক দিনেই হয়ত বুঝে যায় পার্থক্যটা।
ছোটবেলায় ইতিহাস-সাহিত্য বা সমাজ-বিজ্ঞানের ক্লাসে একটা ব্যাপার আমাদের মাথায় খুব ভালভাবে গেঁথে দেবার একটা চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের, মানে যারা একদা উপনিবেশ ছিলাম, সেই দেশগুলোর স্বাধীনতার সময় থেকেই এই বিষয়ে সকলে একমত - অন্যের উপনিবেশে পরিণত না হলে হয়ত আমরাও এমন উন্নত দেশই হতাম। ইতিহাসে পড়েছি, ইউরোপিয়ান ঔপনিবেশিকদের আসার আগে আমরা যথেষ্ট ধনীই ছিলাম - ইউরোপীয়রা দেশে আসার জন্য ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পার হত। শ'-দুয়েক বছরের ঔপনিবেশিক ইতিহাস সব বদলে দিয়ে গেছে। উপনিবেশকালে আমাদের দেশগুলো থেকে কাঁচামাল নিয়ে গিয়ে ইউরোপে শিল্প-কারখানায় ব্যবহার করা হত, আমাদের ন্যায্য মূল্য দেওয়া হত না। আমাদের গর্বের ক্ষুদ্র-কুটীর শিল্প ধ্বংস হয়ে গেছে উপনিবেশ অবস্থায়, দেশের বাজার ছেয়ে গেছে বিদেশী পণ্য-সামগ্রীতে। ঔপনিবেশিক প্রভুদের কৃষি বা কৃষকের বিষয়ে গুরুত্ব ছিল না - তাই আমাদের একের পর এক দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে স্বাধীনতার পরে আমরা দ্রুত উন্নতি করা শুরু করি। খাদ্য-বিষয়ক নিরাপত্তা এসেছে, স্বাস্থ্য-শিক্ষা সবকিছুতেই ভুরিভুরি উন্নয়নের নিদর্শন আসে স্বাধীনতার পরে। আসলে জাতি হিসাবে আমরা উন্নতই, পুরোনো ট্র্যাকে ফিরে যেতে কিছু সময় লাগছে আর কি। এমনকি অমর্ত্য সেনের লেখা পড়েও সেইরকম মনে হয়।
ইতিহাস মিথ্যা বলে। ইতিহাস বইতে ইচ্ছামত লিখে পাবলিশ করে দেওয়া যায়। কিন্তু পরিসংখ্যান মিথ্যা বলে না। তাই আমি পরিসংখ্যান দিয়েই দেখার চেষ্টা করলাম সত্যি কি ঘটেছে উপনিবেশ আর ঔপনিবেশিকদের মধ্যে। সহজ সূত্রে যদি ধরেই নেওয়া যায় যে উপনিবেশের কাঁচামালের পয়সায় ঔপনিবেশিকদের এত রমরমা, তাহলে ধরেই নেওয়া যায় যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যখন উপনিবেশগুলো এক-ধাক্কায় স্বাধীনতা পেয়ে গেল, তখন ঔপনিবেশিকদের সর্বনাশ আর উপনিবেশদের রমরমা।
কিন্তু এই গ্রাফ থেকে দেখি পুরো তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে। মাথাপিছু গড় আয় - যা কিনা ব্যবহারিক জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের অন্যতম নির্ণায়ক, তা ঔপনিবেশিক দেশগুলোতে ঊর্ধ্বমুখী। ক্রমাগত মাটি ঘেঁষে চলার পরে এই শতকের পরে উপনিবেশগুলোতে কিছুটা হলেও গড় আয়ে কিছুটা উন্নতি দেখা যায়। দুইয়ের মধ্যে ব্যবধান বেড়েই চলেছে - এমনকি গত দশকেও এই ব্যবধান প্রায় দেড়গুণ বেড়েছে। যদিও আমরা অনেক আন্দোলনের মাধ্যমে ঔপনিবেশিকদের কাছ থেকে স্বাধীনতা আদায় করেছি, কিন্তু ব্যর্থতার গ্রাফ দেখে মনে হয় ওদেরই আমাদের স্বাধীনতা যেচে দিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।
তাহলে এবার আসা যাক আসল প্রশ্নটাতে। কেন এই গ্যাপ? কেন বছরের পর বছর এই গ্যাপ বেড়েই চলেছে। প্রথম বিশ্ব কেন প্রথম থেকে যাচ্ছে আর তৃতীয় কেন আরো বেশী করে তৃতীয় থেকে যাচ্ছে? কবে থেকে এই তফাৎ কমবে? আমার কাছে কিছু কিছু ভাসা ভাসা উত্তর আছে - কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই। কিছু ধারণা করা যায় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী প্রথম বিশ্বের রাজনৈতিক পটভূমিকা থেকে। ইউরোপীয়দের কাছে আর উপনিবেশ নেই, তাই গত কয়েক দশকের উপনিবেশ নিয়ে যুদ্ধের বাতাবরণও নেই। জার্মানী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে দ্রুত উন্নতি করে, কিন্তু এবারে আর তা নিয়ে বাকি দেশগুলোর সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হয় নি। সার্বিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর প্রথম বিশ্বে দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কের বহুল উন্নতি ঘটে, আগের অর্ধশতকের বৈরিতার ইতিহাস মাথায় রাখলে তা অভাবনীয় ধরে নেওয়া যায়। এর কিছুটা কারণ ঠান্ডা যুদ্ধ - অন্যটা পুঁজীর বিকাশ। সম্পর্কোন্নয়ন যদি প্রথম কারণ হয়ে থাকে, দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই অর্থনীতির ধারা। কাঁচামালের ওপর নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ায় প্রথম বিশ্বের অর্থনীতি আরো বেশী করে টার্শিয়ারী খাতে (সার্ভিস, ব্যাঙ্কিং, অটোমেশন, গাড়ি - ইত্যাদি সেক্টর) নির্ভর করতে থাকে, যার ভিত্তি হিসাবে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা আর উদ্ভাবনী ক্ষমতার কথা মাথায় আসে।
অন্যদিকে প্রাক্তন উপনিবেশগুলোতে শক্তিশালী জাতীয়তাবাদের যে ধাক্কায় স্বাধীনতা এসেছিল, তার হাত ধরে দেশগুলো ব্যবসা-অবান্ধব হয়ে ওঠে। সময়ের উপযোগি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জায়গায় কৃষি বা ক্ষুদ্রশিল্পের পেছনে বিনিয়োগ করা হয় রাষ্ট্রিয় সম্পদ। বিদেশী বিনিয়োগ থেকে দক্ষতা - অনেক কিছুই বর্জন করা হয়। এর ওপর তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর নিজেরদের মধ্যেও সম্পর্কও ভাল ছিল না। সবের ফলে সার্বিকভাবেই পিছিয়ে পড়তে থাকে তৃতীয় বিশ্ব - এবার আর পরাধীনতার কারণে নয়, নিজেদের ব্যর্থতায়। তবে সামাজিক পরিকাঠামোর উন্নয়নের ফলে ও বিজ্ঞানের সার্বিক অগ্রগতির কারণে স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মানে উন্নতি ঘটে - যার কিছুটা হলেও ফল উন্নয়নশীল দেশগুলো ভোগ করছে শেষ দশকে।
ইতিহাসে ফিরে গেলে কি মনে হয় আরো আগে স্বাধীনতা পেলে বা একেবারেই পরাধীন না হলে কি আমরা আরো ভাল থাকতাম? আমি এ নিয়ে সংশয়বাদী। আজ থেকে প্রায় শ’দেড়েক বছর আগে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকে ফিরে তাকালে দেখি ভারতীয়রা তখন মুঘল বা মারাঠা রাজাদের পুনরায় মসনদে বসানোর জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এর পেছনে কোনও আধুনিক রাষ্ট্র-প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নেই। মুঘল বাদশা’র ফরমান বা নানাসাহেবের বক্তব্যে যতটা ইংরেজ বিতাড়নের চেষ্টা আছে তার সিকিভাগও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বা সংবিধান লেখার প্রচেষ্টা নেই। এর সাথে প্রায় আট দশক আগের আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণা দেখলে মনে হয় ১৮৫৭ সালেও ভারত বা ভারতীয়রা প্রস্তরযুগেই পড়ে ছিল। ওই সমসামিয়িক মার্কিণ কোর্ট তখন পেটেন্টের নন-অবভিয়াসনেস নিয়ে আলোচনা করছে। চার্লস ডারউইন বিবর্তন নিয়ে মানব-সমাজের গঠনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। আরও পিছিয়ে ভারতীয় ঐতিহাসিকদের প্রিয় মুঘল বাদশা আকবরের আমলে যদি ফিরে যাই তাহলে দেখা যায় বাদশা কিছুটা হলেও সমাজ-সংষ্কারের প্রচেষ্টা করেছেন বটে, কিন্তু সমসাময়িক ইউরোপের তুলনায় তা যথারীতি প্রস্তরযুগের। তার সমসাময়িক ইউরোপে গ্যালিলিও বা কেপলার গবেষণা করছেন অথচ আকবরের আমলে কোনও বিজ্ঞান-চর্চায় উৎসাহ দেবার লক্ষণ দেখা যায় না। শিল্প ও বাণিজ্য সম্পর্কে বাদশাহদের জ্ঞানও কোন অংশে বাড়তি পরে না। ব্রিটিশদের মুক্ত-বাণিজ্যের অধিকার দেবার সময় তারা কতটুকু লাভ-লোকসানের হিসাব করেছিলেন তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আকবরের এক শতক আগেই ষষ্ঠ হেনরী ইংল্যান্ডে ২০ বছরের পেটেন্ট-ব্যবস্থা চালু করেছিলেন যা আজও চালু আছে। মেধা - তার আবার সত্ত্ব ও তার সংরক্ষণ - এই ব্যাপারটা এখনও দেশের অধিকাংশ মানুষ বোঝে বলে মনে হয় না। খোদ বাদশা আকবরের হাল দেখে মনে হয় ভারতের কোনও দেশীয় শাসক আধুনিক রাষ্ট্রের চিন্তা মাথায় আনতে সক্ষম ছিলেন না।
সংক্ষেপে বললে, আমাদের যা প্রাপ্য ছিল সেটাই আমরা হয়ত ভোগ করছি। ঔপনিবেশিকতা (যা আমার স্বাভাবিক ঘটনা বলেই মনে হয়) বলে কোনও বস্তু আদৌ না থাকলেও কি আমরা সত্যি উন্নত জীবন-যাপণ করতাম? তিনটের জায়গায় হয়ত গোটা কুড়ি দেশ থাকত উপমহাদেশে, যাদের কিছু কিছু তুলনামূলক-ভাবে ভাল হত অন্যের তুলনায়। এর বেশী খুব কিছু আশাবাদী হওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখি না। মুঘল-মারাঠা রাজা বা তাদের অধীনের সামন্তবর্গ আমাদের এর থেকে উন্নত জীবনযাত্রা এনে নিতে পারত বলে মনে হয় না।
ভবিষ্যতে কি এর আমূল পরিবর্তন হতে পারে? আমি খুব একটা আশাবাদী নই। ঔপনিবেশিকদের মধ্যে সবথেকে খারাপ পারফর্মার হল পর্তুগাল। আর আমাদের উন্নয়নশীল বিশ্বে স্টার পারফর্মার হল মালয়েশিয়া। দুয়ের মধ্যে তুলনা করলে দেখি মালয়েশিয়ার সাথে ১৯৬০-এর দশকে পর্তুগালের মাথাপিছু আয়ের পার্থক্য ছিল মাত্র ১১০ ডলারের। তা এখন বেড়ে ১২,০০০ ডলারে চলে গেছে। অর্থাৎ ব্যবধান দশগুণ বেড়েছে। যেখানে আমাদের স্টার পারফর্মারের এই হাল, সেখানে আমরাই বা কিভাবে আশা রাখতে পারি?
তথ্য সূত্র - গুগলের তথ্যভাণ্ডার যা বিশ্বব্যাঙ্কের থেকে নেওয়া। এখানে আমি ডলার-জিডিপি দিয়ে মেপেছি যা কিছুটা বিতর্কিত। তবে আন্তর্দেশীয় তুলনার জন্য আমার ওটাই বেশী নিখুঁত বলে মনে হয়েছে।
মন্তব্য
ভালো বিষয়। তৃতীয় বিশ্বের ব্যবসা অবান্ধব হয়ে পড়াটা, নিজেদের মধ্যে বিনিময়ের গুরুত্ব বুঝতে না পারা, পারস্পরিক বৈরিতা, এগুলো প্রভাব ফেলেছে। তবে ঔপনিবেশিকতা আমাদের অতোটুকুও উন্নয়ন দিয়েছে, যা ওরা না আসলে হতো না, এই যুক্তি ১) দুর্বল ২) অপ্রয়োজনীয় - দুইটাই। এই তর্কের আসলে দরকার নেই। অবশ্যই ঔপনিবেশিকতা না থাকলে আরো খারাপ হতে পারতো। আবার ইংল্যান্ড আর ফ্রান্স নিজেদের মধ্যে যেভাবে বিনিময় করে এসেছে, ইয়োরোপ আর ভারত সেটাও তো করতে পারতো।
যা হোক। একটা ব্যাপার খেয়াল করবেন। উন্নয়নের যেকোনো কার্ভ সময়ের সাথে এক্সপোনেনশাল। তো সেই বিচারে উন্নতদেশগুলোর হারটা বরং কিছুটা স্তিমিত। তাদের সাথে উন্নয়নশীল দেশের পার্থক্য বাড়লেও, রেশিও হিসাব করেন নি। সেটা আন্দাজ করছি কমেছে।
অট: লগ স্কেলে প্লট করে দেখতে পারেন কেমন দেখায়।
রেশিও দিয়ে ব্যবধান কমে না, পার্থক্য ঘোচে না। পর্তুগাল আর মাল্যেশিয়ার ক্ষেত্রে রেশিও দেখছি পর্তুগালের পক্ষেই কথা বলছে।
ঔপনিবেশিকতা আমাদের উন্নয়ন দিয়েছে এরকম আমি যুক্তিতে বিশ্বাসী নই। তবে উপনিবেশ না হলেও আমরা এর থেকে আলাদা কিছু হতাম না সেটাই আমার বক্তব্য।
ইংল্যান্ড আর ফ্রান্স নিজেদের মধ্যে বিনিময় করেছে প্রতিযোগিতার খাতিরে (এক হিসাবে ইংল্যান্ড ফ্রান্সের "উপনিবেশ" যদিও), এই প্রতিযোগিতার মানসিকতা আমাদের মধ্যে তৈরীই হয়নি সেই সময়ে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পর্তুগাল মালয়েশিয়া বাদ দেন। অন্যটা দেখতে পারেন।
অন্যগুলোর রেশিওতে উন্নতি হয়েছে ।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ঔপনিবেশিকতা নিয়ে আপনার বক্তব্য একটু বুঝতে পেরেছি।
ঔপনিবেশিকতা নৈতিকভাবে সম্পূর্ণ দোষণীয়। কিন্তু কেবল নৈতিকতা অর্থনৈতিকতার অভাবকে পূরণ করতে পারে না। প্রতিযোগিতার মানসিকতা সেই অর্থনৈতিকতারই অভাব।
Bastiat দেখিয়েছিলেন, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের বিনিময় তাদের উভয়ের জন্যে লাভজনক। অর্থাৎ প্রতিযোগিতার চেয়েও এখানে বিনিময়ের ইনসেনটিভটা আরো বেশি ছিলো এই পারস্পরিক লাভ সংক্রান্ত। তবে যথারীতি, উভয় দেশেই এই বিনিময়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ প্রতিরোধও ছিলো। বিদেশি পণ্যে ছেয়ে গেলো। দেশের বাজার দখল হয়ে গেলো। দেশের ব্যবসায়ীরা না খেয়ে মরলো। ফলে প্রটেকশনিজম, প্রতিযোগিতা আর লাভের একটা কমপ্লেক্স পারসেপশন এই বিনিময়ে তৈরি হয়েছে। সময়ের সাথে দুই দেশই বিনিময়ের পারস্পরিক লাভের ব্যাপারটা উপলব্ধি করেছে। সে জায়গায় ভারতবর্ষে লাভ আর প্রতিযোগিতার পারসেপশন তখনও তৈরিই হয় নি।
- এইটা নিয়ে আমার কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু আমরা উপনিবেশ ছিলাম বলেই আজকে গরিব - এটাই আমার আপত্তির মূল কথা।
ইংল্যান্ড আর ফ্রান্সের যে প্রতিযোগিতার কথা বাস্তিয়ে দেখিয়েছিলেন, সেটা ভারতে তৎকালীন ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে হতেই পারত। কিন্তু সেই পথে কেউ হাঁটেইনি। দক্ষিণ-ভারতে এই সময়ে ত্রিবাঙ্কুর, মহীশূর, কাঞ্চি আর নিজামের হায়দ্রাবাদ ছিল। কোনো উৎকর্ষের প্রতিযোগিতা ছিল কি?
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
এক্সপোনেনশাল কার্ভের ক্ষেত্রে পার্থক্য বাড়াটাই ইনাফ না। পার্থক্যটাও এক্সপোনেনশাল হারে বাড়তে হবে। লগ স্কেলে পার্থক্যটা সাবলিনিয়ার হলে বুঝতে হবে ঘাপলা আছে। রেশিওর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। লগ স্কেলে রেশিও সাবলিনিয়ার হলে সমস্যা। এগুলো সব প্রথম গ্রাফের জন্যে বলছি।
সেটা যে এক্সপোনেনশিয়াল কার্ভ সেটা কিভাবে জানা যাচ্ছে? এখনও অবধি লিনিয়ার বলেই মনে হচ্ছে। সে ভবিষ্যতে যদি আমরা এটাকে এক্সপোনেনশিয়াল দেখিয়ে ব্যবধান কমিয়ে আনতে পারি, তাহলে আমাদের সাফল্য।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
সৌদি আরবের দিকে একটু তাকাই। জ্ঞানবিজ্ঞানে বেদুইনদের তেমন নামডাক শুনিনি, আজকের দিনেও সৌদি লোক যে ব্যাপক শিক্ষিত তাও নয়। কিন্তু দেশটায় দেশবিদেশের প্রথমসারির ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার প্রফেশনালরা কেমন হুমড়ি খেয়ে পড়তেসে দেখেন তো! কারণ এদের পকেটে পয়সা আছে। সৌদি আরবের ঝকমকে রাস্তাঘাট বাজারহাট থাকলেও তা তৈরীর টেকনোলজি তাদের কখনোই জানা ছিলনা। তাতে কিছু যায় আসেনি, পয়সা দিয়ে তারা কিনে নিয়েছে।
মোগল আমলে দেশ মূর্খদের শাসনে ছিল ঠিকই, কিন্তু পয়সা মণিমুক্তা এলাকার বাইরে যায়নি। থিওরেটিক্যালি, ধরেন গত তিনশ বছরে আমাদের জ্ঞানবিজ্ঞানে সাহিত্যে সঙ্গীতে কোন অর্জন নাই আরবদের মত। আজকে হঠাত ২০১২ সালে আমেরিকা ইয়োরোপ জাপান যদি দেখে আমাদের পয়সা আছে, তবে তাদের সকল টেকনোলজি নিয়ে আমাদের কাছে আসত পয়সার গন্ধে আর দেশটা ধাঁই করে এগিয়ে যেত। আমরা গরীব কারণ আমাদের বুদ্ধি নাই তা নয়, আমরা গরীব কারণ আমাদের পয়সা নাই। যে ছেলেটি অলিম্পিকে সোনা জয় করার মত সাইক্লিং এ দক্ষ সে আজকে হয়তো সাইকেলে পেপারে হকারি করছে। মুদি দোকানে চাল মাপছে যে ছেলেটি সে ই হয়তো ফিদে গ্র্যান্ডমাস্টার হতে পারতো। পয়সা থাকলে আমরা এদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করতে পারতাম।
আমার ভুলও হতে পারে, তবে আমার মনে হয় ইংরেজ না এলে আমাদের পয়সা আমাদের পকেটেই থাকলে আজকে অনেক সমস্যা পয়সা দিয়ে মিটিয়ে ফেলতে পারতাম আমরা। তবে ইংরেজ না এলে ফরাসী যে আসতো না তারই বা কি গ্যারান্টি?
..................................................................
#Banshibir.
সৌদি আরবও একটা দেশ। আর ওদের তেলের খনি পাওয়া তো আধুনিক ঘটনা। এরকম বদ্ধ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে খুব উচ্চাশার কারণ দেখি না।
আর পয়সা ব্যাপারটা বুঝলাম না। সম্পদকে উৎপাদন আর বিনিময়ের মাধ্যমে বর্ধন না করলে, সেটা পড়ে থাকলে সেটার ধ্বংস সাধন তো কোনো ব্যাপার না। সেটার জন্যে ঔপনিবেশিকের আসা লাগে না। পয়সা থাকলেই উন্নয়ন হয়ে যেতো সেই গ্যারান্টি দেওয়া যায় না। উৎপাদন ও বিনিময়, তথা ব্যবসার মাধ্যমে অর্থনীতিকে চালু রাখার মানসিকতা না থাকলে আজকের পয়সা কালকে অবসলিট হওয়াটা সময়ের ব্যাপার। আমাদের মধ্যে পয়সা ধরে রাখার ও বর্ধনের কৌশলের অভাব আছে বলতে পারেন। এই অভাবকে পয়সা থাকাটা পূরণ করতে পারে না।
থিওরেটিক্যালি তুলনা করার জন্য বলদ ধনী দেশ দরকার ছিল, তাই সৌদি আরব
খালি পয়সা থাকা লং টার্ম সমাধান নয় ঠিকই, কিন্তু সেইটা একটা স্টার্ট। একেবারে পয়সা না থাকা থেকে সেই স্টার্ট ভালো মনে হয়। ধরেন পয়সা ধরে রাখার ও বর্ধনের কৌশলজানা ব্যক্তি আমাদের নাই, কিন্তু সেইরকম মাথা কিন্তু পয়সা দিয়ে কেনা যায়।
..................................................................
#Banshibir.
আসলে হয়তো সেইরকম মাথা কিনার মাথা সঠিক সময়ে আমাদের ছিলো না।
পয়সা দিয়ে কিনবেন? দুদিন পরে সেই সব কন্ট্রোল নিয়ে নেবে
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আপনি যেটা বলেছেন সেটা হল প্রাকৃতিক সম্পদ। আমি ওটাকে হিসাবের বাইরে ধরেছি। প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে কোনো দেশ লাভবান হতে পারে খুব সীমিত সময়ের (অপারচুনিটি উইন্ডো) জন্য - যাকে অন্যান্য খাতে কাজে লাগিয়ে দ্রুত উন্নয়ন (লিপফ্রগ) করা সম্ভব। সেটা ওই সময়কালে শাসক-গোষ্ঠীর দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। মানবসম্পদে উন্নয়ন না করতে পারলে দীর্ঘমেয়াদে উন্নয়ন সম্ভব না। আমার বক্তব্যের স্বপক্ষে তিনটে দেশ থেকে তুলনা করে আমি চার্ট দিচ্ছি। প্রথমটা সৌদি - তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, কিন্তু মানব-সম্পদ নেই। প্রতিবেশী দেশ ইজরায়েল - তাদের মানব-সম্পদ আছে কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদ নেই। আর তৃতীয়টা নরওয়ে - তাদের দুটোই আছে। এবার গ্রাফ দেখুন -
সৌদির মাথা-পিছু আয় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের সাথে খুব ওঠানামা করে, মাঝে তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় মাথাপিছু আয়ও ধপাস হয়ে গেছিল। ইজরায়েলের গ্রাফ স্টেডি ওপরে উঠে গেছে। নরওয়ের দুটোই আছে। তাই তাদেরটা আকাশ-ছুঁয়েছে। ২০০০-২০০৮ যেই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম উঠল - তার প্রভাব দেখুন সৌদি আর নরওয়ের তুলনায়। সৌদির তেল রপ্তানী নরওয়ের তুলনায় অনেক বেশী কিন্তু লাভটা মনে হয় নরওয়েই বেশী ভাল কাজে লাগিয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে উন্নয়নের সফল প্রয়োগ শক্ত। সেটা অনেক বিস্তারে আলোচনা করতে পারি। তবে আলোচনায় সৌদি-নরওয়ে-ইসরায়েল কেউই সঠিক অর্থে ঔপনিবেশিক বা উপনিবেশ নয়।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আমাদের পয়সা নাই নাকি আমাদের পয়সার কোন যথাযথ ব্যবহার নাই?
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
পয়সা নাই। দেশের পুলিশ ঘুষ খায় কারণ এরা লোক খারাপ তা না, কারণ এদের বেতন দেওয়া হয়না ভালো। পুলিশকে আর্মির মত বেতন দেন সুযোগ সুবিধা দেন দেখেন ঘুষখোর কমে গেসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। পয়সা একটা ভালো স্টার্ট যেকোন ক্ষেত্রেই। সবকিছুই কেনা যায়।
..................................................................
#Banshibir.
পয়সা না থাকা অবধি বোঝার উপায় নাই যে পয়সা থাকলে কি করতাম
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
মন্ত্রীরাও তো ঘুষ খায়, তাদের বেতন স্কেল তো সর্বোচ্চ! প্রথম শ্রেনীর সরকারী কর্মকর্তারাও ঘুষ খায় তাদের বেতন স্কেল মন্ত্রীদের পরেরটা। তাহলে?
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আমার কেন যেন মনে হয় মুসলমান দের মধ্যে যেমন "সব কিছু ইহুদি-নাসারাদের ষড়যন্ত্র" - এই মিথ টা প্রচলিত তেমনি আমাদের মধ্যেও "আমাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দৈন্যতার জন্য ইংরেজ উপনিবেশিকতা দায়ী" - এই মিথ টা প্রচলিত।
যাই হোক ইংরেজ দের জয় গান গাওয়া আর নিজেদের দুর্নাম করা আমার উদ্দেস্য না। কেবল মাত্র আশা করি অন্যদের দোষ না দিয়ে নিজেরা নিজেদের প্রগতি (বস্তুগত উন্নতির চেয়ে প্রগতি বেশি জরুরি) অর্জন করবো।
এই পিথিমির জ্ঞানসমুদ্রে মাঝেমাঝে কিছু আচ্চর্য লিটমাসনুড়ি পেয়ে যাই। কে কী কয় হুনতে বইলাম। দারুণ পোস্ট। পাঁচ তারা।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আপনি লিটমাসনুড়ি হাতে কে কী বলে শুনতে বসলেন জেনে ভালো লাগলো।
এরপরের 'ডর'বাদী স্টেইজ হইল পাত্থর মারা। নুড়িটুড়ি খ্রাপ জিনিস, নুড়ি হইতে পাত্থরে যাইতে সুমায় লাগবে না বেশি। তাই ব্যক্তির হাতে কর্তৃত্ববাদীরা নুড়িও তুইলা দিতে চায় না। এদিকে ধনগণতান্ত্রিকরাও নুড়িঅলা পুলাপাইনরে ডরায়।
যাই হোক, পর্তুগাল আর মালয়শিয়ার গ্রাফটা বেশ ইরূটীক লাগতেছে। কলনাইজার আর কলোনাইজডের সম্পর্ক নাকি এমনই, নিন্দুকেরা কয়।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
হা হা। লিটমাসনুড়ি দেখি ডরের গল্পও কয়। দারুণ, দারুণ!
হাঃ হাঃ, কিন্তু কলোনাইজার কলোনিকে স্বাধীন করে ছেড়ে দিলেও কেন সেই একই ট্রেন্ড ধরে রাখে?
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
সময়ের স্কেল ধরে ভাবলে আপনার তুলনাটা যথার্থ হচ্ছে না। পর্তুগাল কয়েকশত বছর ধরে ঔপনিবেশিক শক্তি। তার উদ্বৃত্ত সম্পদ সে জ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্প আর মানবসম্পদের পেছনে ব্যয় করার জন্য কয়েকশো বছর সময় পেয়েছে। পক্ষান্তরে মালয়েশিয়াকে স্বাধীনতার পর উপনিবেশ কাঠামোর ত্রুটিকে অতিক্রম করে (যা আমরা আজও পারিনি) এগোতে হয়েছে। আপনার তুলনাটা অনেকটা আপনার আর আপনার ছেলের মধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতার মতো। আপনি বলতে পারেন, আমার ছেলেও দৌড়াতে শিখেছে আমিও দৌড়াতে শিখেছি, রাস্তায় ছেড়ে দিলে ও ক্যান আমার পিছে পড়ে থাকে?
উত্তরটা কিছুটা আপনার লেখার মধ্যে আছে। এই যে আপনি ধরে নিচ্ছেন মালয়েশিয়ার শুরুটা স্বাধীনতার পরে আর পর্তুগালের শুরুটা তার অনেক আগেই - যখন সে কলোনী বানানো শুরু করল - তখনই। যখন পর্তুগাল "শুরু" করেছিল আধুনিক রাষ্ট্রের কাঠামো তখন মালয়েশিয়ার কোনও শুরুই হয়নি। এটা তো গেল পুরোনো কথা। কিন্তু এ সত্ত্বেও ১৯৬২ সালে এদের পার্থক্য খুব একটা ছিল না। বাংলাদেশের সাথে মালয়েশিয়ার বর্তমানে যে পার্থক্য, তার থেকেও কম। মূল পার্থক্যটা তৈরী হয়েছে ১৯৬২ সালের পরে। আরো ভালভাবে বললে ১৯৮৪ সালেরও পরে । অন্তুত গ্রাফ তেমনই বলে।
মানব-সম্পদের কথাটা আরো ভালভাবে বোঝা যায় যদি মালয়েশিয়ার সাথে সিঙ্গাপুরের তুলনা করেন। প্রায় একই জনগোষ্ঠী - প্রতিবেশী দেশ। পর্তুগালের থেকে সিঙ্গাপুর এখন অনেক উন্নতি করেছে। সুতরাং মালয়েশিয়ার পক্ষেও করা সম্ভব ছিল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
১৯৬২ সালে পর্তুগালের অবস্থা খারাপ ছিলো হয়তো। আপনি ১৮৬২ সালে পর্তুগালের পার ক্যাপিটা জিএনআই কেমন ছিলো দেখতে পারেন। বা ১৭৬২ সালে। বা ১৬৬২ সালে।
১৯৬২ শুধু না, ১৯৮৫ অবধি পার্থক্য খুব একটা ছিল না। আপনি দেখতে পারেন অনেক লেখা আছে যে গত দুই দশকে ধনী-গরিব রাষ্ট্রে তফাৎ অনেক বেড়ে গেছে। তবে আমি উপাত্ত আরো সংগ্রহ করার চেষ্টায় আছি। তবে ১৮৬২ সালে মালয়েসিয়ার পার ক্যাপিটা জি এন আই কোথাও পাব বলে মনে হয় না।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
কারণ মালয়েশিয়া বলে তখন কিছু ছিল না।
আমার পয়েন্টটা হচ্ছে, যে কলোনি রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো এই শতকে, তার সাথে কয়েক শতক পুরোনো প্রতিষ্ঠিত কলোনাইজারের তুলনা করা যায় কি না।
আমি আমাদের পিছিয়ে থাকার পেছনে শুধু ঔপনিবেশিকদের দায়ী করি না, কিন্তু তাদের দায় নেই, আমরাই জংলী ছিলাম, এই চিন্তাকেও এন্টারটেইন করি না। আমাদের দেশে জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা ছিলো না, আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা ছিলো না, এ ধরনের আফসোস আমি করি না কারণ দেশটাই আমরা পেয়েছি ১৯৭১ সালে। তার আগ পর্যন্ত আমরা কলোনি ছিলাম। পরাধীন দেশে জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা বা আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার ফুরসত খুব বেশি থাকে না। আপনি ১৭৭৬ এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞান বা রাষ্ট্রচিন্তার দৌড় দেখতে পারেন।
১৯৭১ সালে নাহয় কলোনী ছিল, কিন্তু ১৭৫৭ সালের আগে কি ছিল? তখন তো কলোনী ছিল না। ১৭৭৬ সালে মার্কিণ রাষ্ট্রচিন্তার ঝলক পাওয়া যাবে আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণায় - যেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা স্পষ্টই লেখা আছে। আমেরিকা বস্তুত এখনও সেই ১৭৭৬ সালের সংবিধানেই চলছে, কিছু এমেন্ডমেন্ট আছে যা প্রথম কিছু দশকের মধ্যেই হয়ে গেছে।
সিরাজ-উদ্দৌল্লার জন্ম ১৭৩৩ সালে। জর্জ ওয়াশিংটনের জন্ম ১৭৩২ সালে। প্রথম জন স্বাধীন দেশে জন্ম নিয়েছেন, দ্বিতীয়জন কলোনীতে। চিন্তা-ভাবনার ফারাকটা আকাশ-পাতাল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
এ কী বললেন? ১৭৫৭ সালের আগে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা মোগলের কলোনি ছিলো। বাংলায় স্বাধীন শাসন ছিলো হোসেনশাহীদের সময়।
১৭৭৬ সালে মার্কিন রাষ্ট্রচিন্তা করেছে যারা, তারা ইয়োরোপীয়দের পূর্বতন সংস্কৃতি, জ্ঞান ও চিন্তাধারার সরাসরি বাহক। তারা কলোনাইজারদেরই একাংশ, যারা সাম্রাজ্যের বিপরীতে বিদ্রোহ করেছিলো। আপনি তাদের সঙ্গে বাংলার মানুষের তুলনা করছেন কেন? কোনো নাভাহো ইন্ডিয়ান আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণা লিখলে আপনার যুক্তি মেনে নিতাম।
আমি নিচে যাচ্ছি উত্তর দিতে। এইখানে পুরো লেখা পড়তে অসুবিধা হচ্ছে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
অনেক দিন পর একটা মনে লাগার মতো ভালো পোস্ট পড়তে পেলাম। এই মুহূর্তে আলোচনায় যোগ দিতে পারছিনা, তবে শীঘ্রই যোগ দেবার আশা রাখি। শুধু একটা তথ্য দিয়ে যাই গুরচরণ দাসের 'ইন্ডিয়া আনবাউন্ড' বইটাতে একটা অধ্যায় আছে 'যদি আমরা অতীতে ধনী হয়ে থাকি তাহলে এখনো আমরা দরিদ্র কেন?' এমন শিরোনামে। সেখানকার বিশ্লেষণেও দেখেছি ঐতিহাসিকদের পরিসংখ্যানগত মিথ্যাচার ও ভুল বিশ্লেষণ কীভাবে আমাদেরকে ভুল সিদ্ধান্তে নিয়ে গেছে।
দেশে সম্পদ থাকা আর দেশের মানুষের সম্পদ থাকা এক কথা নয়। মুঘলদের খাজাঞ্চীখানায় যখন দেড় বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ছিল তখন দেশের বহু জায়গায় মওসুমে মওসুমে মানুষ দুর্ভিক্ষে না খেয়ে মরেছে। তাতে কী আমরা বলবো দেশ তখন ধনী ছিল, সমৃদ্ধ ছিল? প্রতিদিন গড়ে এক লাখ টাকা করে লুঠ করা শায়েস্তা খাঁ ফৌজী নির্যাতন চালিয়ে বাজারে টাকায় আট মণ চাল বিক্রি করলে কি বলবো যে দেশ সস্তাগণ্ডার ছিল? বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে কোন উন্নতি না করা, গবেষণা খাতকে আজও উপেক্ষা করা, যান্ত্রিকিকরণের পরিবর্তে শ্রমঘন শিল্প দিয়ে বাইরের বাজারে প্রতিযোগীতা করার চেষ্টা করা, গণতন্ত্রে উত্তরণের চেষ্টা না করা এগুলোকে বিবেচনায় না নিয়ে কেবল ঔপনিবেশিকতাকে দোষ দিলে তো হবে না। ঔপনিবেশিকতা অভিশাপ তাতে সন্দেহ নেই, তবে তার ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে মনে মনে শান্তি পেলে সমস্যাগুলো সমস্যাই থেকে যাবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
- একদম খাঁটি কথা। ঔপনিবেশিকতার যুগের শেষে সব দোষ ঔপনিবেশিকতার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে দেশের পলিসি বানানো হল এমন ভাবে যাতে বিদেশীরা ব্যবসাই না করতে পারে দেশে। উপনিবেশ যেমন ক্ষতি করেছে, তার জুজু তার থেকেও বেশী ক্ষতি করে দিয়ে গেছে আমাদের। নিজেদের সমস্যাগুলোর মূল-সমাধান করিনি।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
facebook
দুর্দান্ত লেখা।
কখনো উপনিবেশ ছিলোনা, কিন্তু বেহাল দশায় আছে। আর উপনিবেশ-টুপনিবেশ না করেও ব্যাপক উন্নতি করেছে এমন কিছু উদাহরণ আলোচনায় আসা দরকার।
আপনার দেখানো উপাত্ত থেকে উপনিবেশ হওয়া আর করার সাথে উন্নয়নের একটা কোরিলেশন দেখছি। পিছনের কারণটা তাহলে কি? এটা কি এই কারণে যে যেসব জাতি উপনিবেশে পরিণত হয়েছে, তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সংস্কৃতিই অনুপস্থিত বা নাজুক অবস্থায় ছিলো?
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ভূটান আর ফিনল্যান্ড?
ফিনল্যান্ড প্রথমে সুইডেনের আর পরে রাশিয়ার উপনিবেশ ছিল। ফিনিশ ডিক্লারেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স এখানে পাবেন। তবে মাথাপিছু আয়ে রাশিয়া এখনও ফিনল্যান্ডের অনেক তলায় পড়ে আছে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
থাইল্যান্ড?
এই সম্পর্ক স্থাপন খুব সরল নয় মনে হয়। উপনিবেশ হওয়া সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া ব্যাপক উন্নতি করেছে। অস্ট্রেলিয়ার আদি অধিবাসীরা বৃটিশদের হাতে ভয়ংকরভাবে নিগৃহীত হয়েছে। তারপরও ওদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পিছনে ঔপনিবেশিক শক্তির অবদানই বেশি বলতে হবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে একসময় ইংল্যান্ডের সব দাগী অপরাধীদের অস্ট্রেলিয়া প্রায় নির্বাসনে পাঠানো হত। ইউরোপের সবথেকে অপরাধী লোকগুলো তাদের ভয়ংকর মানসিকতা নিয়েও ধীরে ধীরে একটি দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে পেরেছে।
আবার কোরিয়ানদের কথা ভেবে দেখা যেতে পারে। ১৯৪৮ সালে একই দিনে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত এই দুটি দেশের ভৌগলিক অবস্থান, খনিজ সম্পদ, সর্বোপরি বাসিন্দাদের ধর্ম, রুচি, জাতি প্রায় নিকটবর্তী। অথচ স্বাধীনতার ৬০ বছর পর দক্ষিণ কোরিয়ার নমিনাল জিডিপি পৃথিবীতে ১৫ তম। দক্ষিণ কোরিয়ার মাথাপিছু আয় ২২৫২৪ ডলার। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার মাত্র ১৮০০ ডলার।
এই একই সূত্রে বার্লিন দেয়াল পতনের আগে পর্যন্ত ৪৫ বছরে পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানির অর্থনৈতিক ব্যবধানের উদাহরণ টানা যেতে পারে।
এর অনেক কারণ ব্যাখ্যা করা যায়।
তবে আমি এক কথায় বলব- রাজনৈতিক নেতৃত্ব তথা সুশাসন এই ব্যবধানগুলো তৈরি করে। অন্য কোন প্রপঞ্চ এত অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয়।
সমৃদ্ধ বাংলার বিষয়ে বহু বিদেশী পর্যটক অজস্র ইতিবাচক বর্ননা দিয়ে গেছেন, তাদের সবাই গণ হারে মিথ্যাচার করে গেছেন এ কথা মানতে পারছি না।
ব্রিটিশদের আগমনের সময়ে ভারতের অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থা জাপান কিংবা চীনের চেয়ে ভাল ছিল বলেই তো মনে হয়। জাপান পরাধীন হয় নি, চীনও পরাধীন হয় নি বললেই চলে। তা সত্বেও দেশ দুটির অভাবনীয় উন্নতি একটা বিষয় সুনিশ্চিত করে, তা হলো উপনিবেশে পরিণত না হলেও উন্নতি লাভ করা সম্ভব, কিংবা ঔপনিবেশিক যাঁতাকলে পিষ্ট না হলে কাঙ্খিত উন্নতি লাভ সহজতর হয়।
নিদ্রিষ্ট করে বাংলার কথা যদি বলি, ইউরোপীয়দের আগমনের সময়ে এদেশের শাসনভার যাদের হাতে ছিল তারাও ছিল আগন্তক, তাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল লুন্ঠন। তবুও দেশীয় শিল্প, দেশীয় বানিজ্য যথেষ্টই বিকশিত ছিল, বিকাশমান ছিল। এ দেশ থেকে বহু ধরনের পন্য রপ্তানী হতো বিশ্বের নানা দেশে। এই আড়াইশ বছর সেই অর্থনীতি তার স্বাধীন স্বত্বা বজায় রাখতে পারলে তার উন্নতি কি রকম হতো তা অনুমান করার জন্য আবার আমরা জাপান চীনের দিকে তাকাতে পারি। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত ভাবে আমরা পিছিয়ে ছিলাম, কিন্তু জাপান বা চীনও তো আরও পিছিয়ে ছিল।
আমার গ্রাফের মধ্যে চীনও আছে। চীন ও জাপানকে আপনি কি হিসাবে এক কাতারে ফেলছেন সেটা আমার বোধগম্য না।
"সমৃদ্ধ বাংলার" - বিষয়ে আমার বক্তব্য আছে। কৃষিভিত্তিক সমাজের সমৃদ্ধি আর টার্শিয়ারী-শিল্প-সেবা-ভিত্তিক সমাজের সমৃদ্ধি এক বিষয় না। সমৃদ্ধ বাংলা ছিল কারণ সবাই খেতে পেত। এর মানে এই না বাঙালীরা নতুন জিনিস আবিষ্কার করত। নতুন শিল্প গড়ে তুলত। সেটাই করে গেছে রেনেসাঁ-পরবর্তী ইউরোপ।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
সমৃদ্ধ বাংলায় সবাই খেতে পেতনা মনে হয়। খাবার ছিল ঠিকই, কিন্তু অধিকাংশের ক্রয়ক্ষমতা ছিলনা। দুর্ভিক্ষ লেগেই ছিল ঐ সময়ের পৃথিবীর সবচাইতে ধনী দেশগুলোর একটি ভারতবর্ষে।
..................................................................
#Banshibir.
ঠিক কথা। আমি শুধু তুলনার কথা বলছি।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পীর সাহেব, বর্তমান দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ট দেশ আমেরিকায়ও প্রতিদিন বহু মানুষ অনাহারে থাকে, বহু মানুষ পার্কে ঘুমায়, শুধুমাত্র এই তথ্য থেকে কি সার্বিক বিষয় বোঝা যায়? যাই হোক, তখনকার বাংলায় দুর্ভিক্ষের কারন ছিল ভিন্নতর, সম্পূর্ন প্রাকৃতিক কারন। গ্রামীন সমাজ নির্ভর তখনকার বাংলায় প্রতিটি গ্রাম ছিল স্বয়ংসম্পূর্ন, ধান চাল বিদেশ থেকে কিংবা অন্য রাজ্য থেকে আনতে হতো না। কোন কারনে এক বছর ফসলহানী ঘটলে গ্রামগুলোতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিত বৈকি, তবে তা কখনই প্রানঘাতী হয়ে উঠতো না, যেমনটি হয়েছিল বৃটিশ আমলে দুবার অত্যন্ত প্রকটভাবে, আর কমবেশী মাত্রায় অন্যান্য সকল বছরে। সমৃদ্ধ বাংলার কথা আমরা আমাদের নিজেদের জবানীতে জেনেছি খুব সামান্যই, প্রায় সকলটাই জেনেছি যুগে যুগে বাংলায় আগত অগনিত বিদেশীর জবানীতে। তারা সকলেই অজ্ঞাত কোন কারনে খামাখা মিথ্যাচার করে গেছেন, এমন হাস্যকর কথা নিশ্চয়ই বলতে চান না।
আমি কোথায় বললাম অগণিত বিদেশী মিথ্যাচার করে গেছে? আমি বলেছি সাধারন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ছিলনা। টাকায় আট মণ চাল দিয়ে লাভ কি যদি টাকাই না থাকে?
মোগল ব্রিটিশ সব আমলেই দুর্ভিক্ষ "প্রাণঘাতী" ছিল।
..................................................................
#Banshibir.
ইতিহাস যেমন সকল সময় সঠিক চিত্র তুলে ধরে না, গ্রাফও তেমনি। এই যেমন আপনার গ্রাফ অনুযায়ী চীনের চেয়ে পর্তুগাল অনেক অনেক সমৃদ্ধ দেশ, অথচ বাস্তবতা হলো এক কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত পর্তুগালের অর্থনীতি এতটাই রুগ্ন যে তারা নিজেদের দেউলিয়া ঘোষনা করেছে, আর একশ পঁয়ত্রিশ কোটি জনসংখ্যার দেশ চীনের কাছে অর্থনৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব হারানোর ভয়ে আমেরিকা থরহরিকম্প। জাপান আর চীনকে এক কাতারে ফেলেছি, কারন দুটি দেশই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত ভাবে প্রভূত উন্নতি করেছে, আপনার পর্তুগাল তো বটেই, ইউরোপের প্রায় সকল দেশের চেয়েই এ ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে। দুটি দেশেরই রয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিপুল প্রভাব বিস্তারকারী ভূমিকা। অথচ ১৭৫৭ সালে এ দুটি দেশ কোন ক্ষেত্রেই ভারতের চেয়ে অগ্রগামী ছিল না। কিন্তু একটি বিষয়ে বরাবর তারা ভারতের চেয়ে তারা অনুকূল অবস্থায় ছিল, তাদের উপর কখনো ঔপনিবেশিকতা চেপে বসে নি। ইউরোপের বাইরে যে দুটি দেশ সবচেয়ে উন্নত, এমনকি অনেক ইউরোপীয় দেশের চেয়েও উন্নত, তারা কখনো পরাধীন ছিল না। এই কারনেই একটি প্রশ্ন খুব সহজেই চলে আসে, আমরাও যদি পরাধীন না হতাম?
বাংলা শুধুই কৃষিতে সমৃদ্ধ ছিল, তা বলছেন কেন? বস্ত্র ছাড়াও আরো বেশ কিছু শিল্পদ্রব্য, যেমন লবন, লৌহজাত সামগ্রী, রং, এমনকি সমুদ্রগামী জাহাজ খোদ ইউরোপেই রপ্তানী হতো। আপনি হয়তো বলবেন সে সবই ছিল কুটির শিল্পজাত, উন্নত আধুনিক শিল্প কারখানা এখানে ছিল না। তো আধুনিক শিল্প কারখানা তো ১৭৫৭ সালে জাপানেও ছিল না, চীনেও ছিল না, তাতে কি? অনেক অগ্রগামী অবস্থানে থেকে এই আড়াইশো বছরে তারা যতটুকু করেছে, আমরা তার চেয়ে কম কিছু করতাম ভাবছেন কেন?
উপরে সিরাজদ্দৌলা আর ওয়াশিংটনের প্রসংগ এনেছেন। তো ১৭৩১ সালে জাপানেই বা কোন মহান প্রেসিডেন্টের আগমন ঘটেছিল, চীনেও সে সময় কোন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়কের আবির্ভাব ঘটেছিল বলে জানা যায় না। কিন্তু তবুও এখন তারা জ্ঞান বিজ্ঞান অর্থ সম্পদে উন্নতির শিখরে অবস্থান করছে, তার কারন হয়তো এই যে তারা আমাদের মতো ঔপনিবেশিক আগ্রাসনের শিকার হয় নি।
ইউরূপিয়ান ইউনিয়নের আর্থিত ছাতার নীচে।
চীনের কাছে আমেরিকার ঋণ ৭০০ বিলিয়ন ডলার। আমেরিকার অর্থনৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের এই নমুনা!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
এইটা চীনের দুর্বলতার লক্ষণ। ওই টাকা দেশের উন্নয়নে ব্যয় না করে মার্কিণ বাজার ধরার প্রচেষ্টায় তারা এক্সচেঞ্জ রেট ঠিক করার কাজে ব্যয় করেছে। আমার ধারণা চীন নিজেদের ভুলটা বুঝতে পেরেছে ও আগামী বছরে আমেরিকাকে ধার দেওয়া কমিয়ে দেবে ধীরে ধীরে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আচ্ছা পর্তুগালের "সরকার" দেউলিয়া হবার অবস্থায়, জনগণ না। আমেরিকায় বহু লোকেই হাউসিং বাবলের পরে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে এখনও দিব্যি আছে।
জাপানের মেইজি রিস্টোরেশন হয়েছে অনেক পরে কিন্তু জাপানকে উপনিবেশ বানানোর প্রথম প্রচেষ্টার প্রতিক্রিয়াতেই জাপান সরাসরি মানব-সম্পদ-উন্নয়নে নেমে পড়ে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
মালয়েশিয়া কি হতে পারত তার একটা উদাহরণ দিচ্ছি নিচে। যারা জানেন না, তাদের জন্য সংক্ষেপে সিঙ্গাপুরের ইতিহাস দিচ্ছি। সিঙ্গাপুর ষাটের দশকে গণভোটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যোগ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু মালয়েশিয়া রাজী হয়নি। পরবর্তী কয়েক দশকের গল্পটা দেখতে পারেন এই গ্রাফে। মালয়েশিয়ার তুলনায় সিঙ্গাপুরের সুবিধা ছিল যে তারা মানব-সম্পদে অনেক বেশী গুরুত্ব দিয়েছিল, আর সিঙ্গাপুর রাষ্ট্র হিসাবে এতই ছোট যে সেখান থেকে কাঁচামাল তুলে নিয়ে ঔপনিবেশিকরা বড়লোক হয়েছে - এরকম বক্তব্য দেবার কোনও স্কোপ তাদের ছিল না।
১৯৬৫ সালে মাথাপিছু আয় - সিঙ্গাপুর ৫৪০, পর্তুগাল ৫২০, মালয়েশিয়া ৩৩০। ২০১১ সালে ৪২০০০, ২১০০০ আর ৮০০০।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
দূর্দান্ত একটা লেখা এবং কমেন্টগুলো। অনেকদিন পর সচলায়তনে এরকম লেখা এল।ঔপনিবেশিকতাপূর্ব ভারতবর্ষের সাথে বানিজ্যের সম্পর্ক তো ছিল কিছু দেশের সাথে।ওরকমটাই তো জানতাম। বিশেষ করে মসলা, কাপড় ইত্যাদির। তার মানে ভারতবর্ষে সামন্তদের পাশাপাশি একটা ধনশালী বণিক সম্প্রদায়ও ক্ষুদ্রাকারে হলেও টিকে ছিল। তবে ভারতবর্ষ যে সময়ে জাত-পাত-সতীদাহ আর হিন্দু-মুসলিম বিরোধ নিয়ে ব্যস্ত ছিল ইউরোপীয়রা তখন মন দিয়ে রেখেছিল বিজ্ঞানের উৎকর্ষের চর্চায়। সেই খ্রিস্টপূর্বেই তারা গনতন্ত্র ব্যাপারটা নিয়ে নাড়া-চাড়া শুরু করেছে, রাজতন্ত্রের দোর্দণ্ড প্রতাপের সময়ে রাজা জনকে দিয়ে ম্যাগনা কার্টায় সই করিয়েছে, যাজক মার্টিন লুথার বাইবেলকে অনুবাদ করেছেন, শিল্প-বিপ্লব, ফরাসী বিপ্লব করে ধীরে ধীরে পার্লামেন্ট স্থাপণের দিকে এগিয়েছে; আর উল্টোদিকে আমরা আমাদের সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কী কী করেছি দেখতে গেলে চোখে তেমন কিছুই পড়েনা। হিন্দু ধর্মের রিফর্মেশনও রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগররা করতে পারতেন কিনা সন্দেহ যদি লর্ড বেন্টিঙ্করা না থাকত। ইসলাম ধর্মের রিফর্মেশন আজও এদিকে হয়নি। ঔপনিবেশিকতা নিষ্ঠুর ছিল সন্দেহ নেই, কিন্তু তার ধাক্কাতেই আমাদের ভাবোদয় হয়েছিল সন্দেহ নেই তাতে।সারা দুনিয়ার দরজাটা আমাদের চোখের সামনে খুলে দিয়েছিল ঔপনিবেশিকতাই।ঔপনিবেশিকতা না এলে এদিকে এখনও দুনিয়া সম্পর্কে কোন জ্ঞান না রাখা অথর্ব, যৌনলিপ্সু, ধর্মান্ধ রাজা, বাদশাহ, সুলতান, সামন্তদের হাতেই ঘুরত আমাদের ভাগ্যের চাকা।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
বাংলায় যে বাণিজ্যিক পুঁজি ছিলো, সেটাকে ইংরেজরা খুব কৌশলে নষ্ট করেছে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে বাংলার বস্ত্রশিল্পের পুঁজি যাদের হাতে ছিলো, তাদের ঠেলে দেয়া হয়েছিলো জমিদারির দিকে। মসলিন তাঁতিদের বুড়ো আঙুল কাটার ব্যাপারে আমি কম জানি, কিন্তু যা রটে তার কিছু তো বটে? বাংলায় একটা ফাংশনিং বস্ত্রশিল্প ছিলো, সেটার কোমর ভেঙে দিয়ে ইংরেজ প্রতিযোগীকে নিজের কাস্টোমার বানিয়ে ফেললো। ইংরেজ না এলে কী হতো, সেটা নিয়ে আমরা অনেক তর্ক করতে পারি, কিন্তু ইংরেজ না এলে ইংরেজ নিজে কী হতো সেটাও ভেবে দেখতে হবে আপনাকে। আর ইয়োরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞানকে বহুলাংশে ইম্পেটাস যুগিয়েছে যুদ্ধ। নিজেদের মধ্যে মারামারি শেষে তারা যখন কলোনি দখলের যুদ্ধে লিপ্ত, তখন সেই যুদ্ধের ঠেলায় বিজ্ঞান এগিয়ে গেছে। ভারতবর্ষে কলোনাইজেশনের প্রক্রিয়াটা ছিলো অন্তর্বর্তী, যে কারণে ইনোভেশনের গতি ছিলো মন্থর।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মূল অংশের (জমিদারী) প্রবর্তন কিন্তু আকবরের আমলে, এমনকি আকবরের আগেও সামন্ত বা জমিদারেরা বহাত তবিয়তেই ছিল। ব্রিটিশরা সেটাকে শুধুমাত্র "চিরস্থায়ী" করেছিল। বাকি লিখছি।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ছোট বেলায় শুনতাম ইংরেজ রা নাকি মসলিন কারিগর দের আঙ্গুল কেটে দিত। বাংলাপিডিয়া পড়ে জানলাম এই তথ্যের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নাই।
প্রতিযোগিতায় মসলিনের পক্ষে কখনোই টিঁকে থাকা সম্ভব ছিল না, যদি না সেই কাপড় মিলে তৈরী করা যেত। এটা শুধু মসলিনের জন্য না, পৃথিবীর কোনও প্রান্তের কোনও হস্তশিল্পই শিল্প-বিপ্লবের পরে টিঁকে নেই, থাকলেও সরকারী সাহায্যে ধুঁকে ধুঁকে চলছে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
_____________________
Give Her Freedom!
১৭৫৭ সালের আগে বাংলা মোগল কলোনী ছিল এই চিন্তাটা ইন্টারেস্টিং। কারণ আধুনিক অর্থে উপনিবেশিকতা - যেটার ওপর দেশের পশ্চাদপদতার দায় চাপানো হয় সেটা অনেকটা এরকম - "এক দেশ (কলোনাইজার) অন্য দেশের (কলোনী) রাজ-ক্ষমতা দখল করে সেই দেশ থেকে কাঁচামাল নিয়ে যাবে আর উৎপন্ন দ্রব্য বিক্রি করার বাজারে পরিণত করবে"।
আপনার ধারণার সাথে চলতে গেলে এইটাকে রি-ডিফাইন করতে হয়। কারণ দিল্লী শুধু ট্যাক্স আদায় করত , বিনিময়ে ইনফ্রাস্ট্রাকচার দিত। তাই, আমি এটার সাথে সহমত নই। এই অর্থে এখনও ঢাকা বাংলাদেশের কলোনাইজার বা দিল্লী ভারতের কলোনাইজার বলা যায়। অন্যভাবে দক্ষিণ ভারতের অনেক স্থানই স্বায়ত্তশাসনে ছিল বলে তারা স্বাধীন ছিল ধরে নিতে হয় (তার ফলে তাদের অবস্থার কোনও উল্লেখযোগ্য তফাত হয় না)।
একই ভাবে চিনের অধিকাংশ স্থান ১৮৯৯ সাল অবধি স্বাধীন ছিল, কলোনী হয় নি।
ওয়াশিংটনের আমলে ওয়াশিংটনের সাথে সিরাজের পার্থক্যটা দেখছি আমি সেটাকেই আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পশ্চাদপদতার কারণ হিসাবে ধরছি। এর পরের কাঁচামাল নিয়ে সম্পদ বানানোটা সে তুলনায় কিছুই না।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
দিল্লীর "ইনফ্রাস্ট্রাকচার দেয়া" নিয়ে বাংলার মানুষের কোনো দাবি তোলার বা দর কষাকষির সুযোগ কি ছিলো ? আপনার সংজ্ঞা মেনে নিলে সিঙ্গাপুরও তো কখনো কলোনি ছিলো না। এমনকি আরবও কখনো অটোমান কলোনি ছিলো না।
বাংলার মানুষের দর-কষাকষি বা দাবী তোলার সুযোগের অভাবের কারণ গণ-প্রতিনিধিত্বের অভাব (বা রাজতন্ত্রের অস্তিত্ত্ব) যা হুসেনশাহী আমলেও কিছু আলাদা ছিল না। সেই অর্থে সমসাময়িক ইউরোপেও রাজতন্ত্র ছিল - কিন্তু অনেক বেশী গণপ্রতিনিধিত্ব ছিল তার সাথে। গণ-প্রতিনিধিত্বের রাজ্য আর রাজার ইচ্ছায় চলা রাজ্যের মধ্যে প্রথমটা এগিয়ে যাবে এটা স্বাভাবিক। উপনিবেশ হবার আগেও আমাদের দেশে গণ-প্রতিনিধিত্বের রাজ্য তৈরী করার কোনো প্রচেষ্টা চোখে পড়ে নি আমার।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
১৭৯৩ সালে ১৬০ জন লোক ইংল্যান্ডের হাউস অব কমন্সের ৩০৬ জন সভ্য নির্বাচিত করেছিল। এইটাকে কি গনপ্রতিনিধিত্ব বলা যায়?
এই বাংলায় ৭৫০ সালে ভূস্বামীদের ভোটে তাদের ভেতর থেকে একজন শাসক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাকে গোপাল বা জনগণের রক্ষক উপাধি দিয়ে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল।
এইখানে তফাৎটা হল ব্রিটেনে এখনও হাউস অব কমন্স বসে, অর্থাৎ তারা ওই অভ্যাসটা টানা চালিয়ে গেছে। বাংলার গোপাল নির্বাচিত হয়ে পাল-বংশের গোড়াপত্তন করে গেছে, অর্থাৎ সেই বংশানুক্রমিক। এখন যেমন স্বাধীন হবার পরেও আমরা ভোট দিয়ে সেই আগের প্রধানমন্ত্রীর বৌ, ছেলে, মেয়ে তাদের নির্বাচন করি - সেইরকম ।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
হিমু ভাই, আপনার পর্যবেক্ষণের সাথে কোন দ্বিমত নেই আমার। যুদ্ধের কারণে সাবান ফ্যাক্টরিও যুদ্ধাস্ত্র তৈরীর কারখানায় পরিনত হয়েছিল। আমি আসলে বলতে চেয়েছি আমাদের বিজ্ঞানবিমুখ, পশ্চাদাভিমুখী সমাজটাতে পরিবর্তনের হাওয়াটা এসেছিল ঔপনিবেশিকতার হাত ধরেই।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
আপনার বক্তব্যের গলদটা হিমু তার কমেন্টে বলেছে। আমি সেটা আরেকটু বিস্তৃত করার চেষ্টা করছি।
আমেরিকায় জবের ক্ষেত্রে ইকুয়াল অপরচুনিটি বা এফারমেটিভ একশন আইন আছে। ব্যাপারটা হলো যদি চাকরির ইন্টারভিউতে একজন সাদা এবং একজন কালো প্রার্থী থাকে, তবে অবশ্যই কালো প্রার্থীটিকে নিতে হবে যদি তার কোন ক্রিমিনাল বা অফেন্সিভ কোন ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকে। এই আইন সাদারা অনেকে পছন্দ করে না কারণ তাদের মতে যোগ্য প্রার্থীরই শুধু চাকরি পাওয়া উচিত। কিন্তু ব্যাপারটা এখানে অনেকটা দৌড় প্রতিযোগিতার মতো। আমেরিকায় কালোরা দীর্ঘদিন নিষ্পেষিত ছিলো। সুযোগ-সুবিধার দৌড়ে ছিলো শুধু সাদারা। এখন কালোরা সুযোগ পাচ্ছে মানে এই নয় যে তারা দৌড়ে সাদাদের সমকক্ষ হয়ে গেছে, তাদের দৌড় কেবল শুরু হয়েছে এবং যতদিন না তারা সাদাদের সমকক্ষ হবে, সাদারা দৌড় শুরু করে এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে পৌঁছাতে পারবে- ততদিন পর্যন্ত এই ইকুয়াল অপরচুনিটি তাদের অধিকার।
উদাহরণটা দিলাম এইজন্য যে, ঔপনিবেশকরা তাদের মানব-সম্পদ উন্নয়ন ইত্যাদিতে দৌড় শুরু করেছে অনেক আগে। বিভিন্ন উপনিবেশ থেকে তারা যে সম্পদ লুন্ঠন করেছে তা তারা তাদের মানব–সম্পদ উন্নয়ন এবং নানাবিধ উন্নয়নে কাজে লাগিয়েছে। আর উপনিবেশ দেশগুলো দৌড় শুরু করেছে কেবল এবং অনেক দেশ এখনো ঠিকমতো দৌড়ও শুরু করতে পারেনি কারণ তাদের শিকড়-বাকড় এখনো ‘কলোনিয়াল মানসিকতায়’ আবদ্ধ। এই জট খুলতেও সময় লাগে। তাই আমরা দেখি এইসব দেশে গণতন্ত্রও এখনো ঠিকমতো দাঁড়ায় নি। বাংলাদেশ তার একটা অন্যতম উদাহরণ। প্রাক্তন ‘কলোনি’ আর ‘কলোনাইজার’দের মধ্যে উন্নয়নের এই তুলনা তাই যথার্থ নয়।
কলোনি না হয়ে আগের শাসন-ব্যবস্থা চলতে থাকলে কি এই দেশগুলো তবে উন্নত হতো? উত্তর দেয়া কঠিন- হয়তো হ্যাঁ, হয়তো না, একেক দেশের ক্ষেত্রে উত্তর একেক রকম হবে। ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে ইংরেজ শাসনের আগে ‘অখন্ড’ ভারতের কনসেপ্টই ছিলো না। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এখানকার বিভিন্ন রাজ্য এবং জাতিগোষ্ঠীকে এক হয়ে ওঠার সুযোগ দিয়েছে। কলোনি না থাকলে হয়ত মোগলদের ফিউডালতন্ত্র একসময় শেষ হয়ে ছোট ছোট রাজ্য হিসেবে উন্নতি করার সুযোগ ছিলো। অন্তত যে দীর্ঘ সময় ও শ্রম তারা ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হবার জন্য দিয়েছে এবং যে সম্পদ ও অর্থকরি এখান থেকে লুট হয়ে গেছে তা মানব-সম্পদ উন্নয়নে ব্যয় হতে পারত। এই অর্থ ও সম্পদ কলোনাইজাররা দীর্ঘ-দিন তাদের নিজেদের দেশে মানব-সম্পদ উন্নয়নে ব্যয় করেছে, সেটাই তাদের এখনকার উন্নতির চাবিকাঠি।
পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
- এইটা সমযোগ্যতামানের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমেরিকায় সিলিকন ভ্যালীতে গিয়ে দেখবেন ওখানে কালোর থেকে বাদামী চামড়ার লোক বেশী। বর্তমানে যে ভাবে চলছে সেভাবে চললে অসীম-কাল ধরেও কালোরা সাদাদের সমকক্ষ হবে না।
- এই কস-এফেক্ট সম্পর্কটা আমার কাছে ঠিক উলটো। তারা মানব-সম্পদে উন্নয়ন করেছে বলেই সম্পদ কাজে লাগাতে পারেছে, আমরা পারিনি। শুধু তাই না, "সম্পদ লুন্ঠন" শেষ হবার পরেও একই কারণে তারা তাদের অগ্রগতি জারী রেখেছে। মানব-সম্পদে উন্নয়ন দেশের সার্বিক উন্নয়নের "কি-কম্পোনেন্ট"।
শুধু এখানেই শেষ না। আমরা এখন জানি ফর্মুলাটা। মানব-সম্পদে বিনিয়োগ করলেই উন্নয়ন। সেটাও ইউরোপে জানা ছিল না পঞ্চদশ বা ষোড়শ শতকে। আমরা ফর্মুলা জেনেও সেটা ইমপ্লিমেন্ট বা রেপ্লিকেট করতে পারছি না।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
সম্পদ লুণ্ঠনের ব্যাপারটা শেষ হয়নি, শুধু কায়দাটা বদলেছে। যেমন ধরুন, ইয়োরোপীয়রা আমাদের গ্যাস ঘরে এসে লুট করে না, কিন্তু খুব সস্তায় আমাদের কাছ থেকে কাপড় কেনে। সেই কাপড়ের জন্য আমাদের দেশের সরকার পানির মতো সস্তা দামে গ্যাস দেয় শিল্পমালিকদের। আবার যখন ঘরে এসে লুট করতে চায়, তখন একটা ব্লক সহজ শর্তে বরাদ্দ নিয়ে নেয়। আমার তো মনে হয়, উপনিবেশনের প্রক্রিয়া থেকে তারা প্রশাসনিক কর্তৃত্বের হাঙ্গামাটাই শুধু ছেঁটে দিয়েছে। শোষণ করতে এসে তাদের শাসন করার হ্যাপা পোহাতে হচ্ছিলো, যেটা কস্ট এফেক্টিভ হচ্ছিলো না। ইট অলসো ফিটস ইওর বিল। কলোনিকে ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলে এরা নীড়টি ত্যাজিয়া ক্ষীরটি খেয়ে যাচ্ছে।
এই এতক্ষণে আপনি মনের কথাটা বলে দিয়েছেন , উপনিবেশ ছিল একটা প্রশাসনিক বার্ডেন মাত্র। "সম্পদের লুন্ঠন" বলে কিছু থেকে থাকে সেটা এখনও চলছে। এবং দেশে মানব-সম্পদের উন্নয়ন না হলে ভবিষ্যতেও চলবে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
এবারে আপনাকে একটা উদাহরণ দিই। ভারতে আকরিক লোহা ইংরেজ আমলে ব্রিটিশরা নিয়ে যেত। আমরা গোঁসা করে দেশেও বানালাম কারখানা। তো দেশ স্বাধীন হবার পরে ইংরেজদের মালিকানা তুলে দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্তকরণ করা হল। এবার আমরাই খনির মালিক। এবার এল জাপান। তখন জাপানই এশিয়ার একমাত্র শিল্পোন্নত দেশ। জাপান ভারত থেকে লোহা নিয়ে যায়, তাদের দেশে এক চিলতে লোহা পাওয়া যায় না। লোহা নিয়ে গিয়ে ইস্পাত বানায়, গাড়ি বানায় - গাড়ি বানিয়ে সারা পৃথিবীতে গাড়ি বিক্রি করে। আবার সেই গাড়ি বিক্রি করে আমাদের দেশেই, ইস্পাতও বেচে আমাদের। সবথেকে মজার হল জাপানী ইস্পাত দামে কম টেকসই বেশী, ভারতীয় ইস্পাতের উলটো। জাপানের সাথে অনেক দরাদরি করে প্রযুক্তিগত সাহায্যের পথ ধরে তৈরী করা হল মারুতি-সুজুকি। ওদিকে এর পরে ইন্ডাস্ট্রিলাইজড হল চিন। এখন চিন ভারত থেকে আকরিক লোহা কিনে নিয়ে যায় আর ইস্পাত রপ্তানী করে।
তইলে ব্রিটিশ যা করছিল, তাই করে যাচ্ছে জাপান আর এখন চিন? এটা কি আমাদের ব্যর্থতা নয়? নাকি ব্রিটেন-জাপান-চিন সস্তায় নিয়ে যাচ্ছে বলে ওদের দোষ দেব?
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
জাপান এশিয়ার একমাত্র শিল্পোন্নত দেশ, এখানেই কিন্তু একটা শুভঙ্করের ফাঁকি রয়ে গেছে । জাপান সেইসাথে এশিয়ার একমাত্র ঔপনিবেশিক শক্তি, এবং ইতিহাসে কখনও উপনিবিষ্ট না হওয়া দেশ। ইস্পাত বানানোর সক্ষমতায় তারা এগিয়ে ছিলো বলেই লোহা কিনে ইস্পাত বেচতে পারছে তারা। সেই সামুরাই আমল থেকেই তো জাপানি স্টিল বিখ্যাত। ভারত ইস্পাত বানানোর দৌড় জাপানের সঙ্গে শুরু করলে একটা কথা ছিলো।
আমি বলবো না এই ব্যর্থতার জন্যে ভারতের কোনো গুণের অভাব দায়ী। এটা একটা দৌড়ের মতো, যেখানে জাপানের হেডস্টার্ট আছে।
প্যাচ লাগায়া দিলেন তো .
তাইলে প্রশ্ন হইলো কোনটা cause আর কোনটা ইফেক্ট. একটা দেশ শিল্পোন্নত হলে পরে ঔপনিবেশবাদী হয় নাকি ঔপনিবেশবাদী হলে শিল্পোন্নত হয়. কেননা জাপান এর ঔপনিবেশবাদী (চায়না ও কোরিয়া তে) হওয়াটা বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে যখন তারা massive হারে শিল্পায়নের মধ্য দিয়ে গেসে.
একটা দেশ উপনিবেশ স্থাপন করে যখন তার উদ্বৃত্ত সামরিক শক্তি থাকে।
কিন্তু কেবল মাত্র উদ্বৃত্ত সামরিক শক্তি দিয়ে উপনিবেশ sustain করা যায় কি? কতখানি সঠিক উদাহরণ হবে জানিনা, আফগানিস্থান ও ভিয়েতনামে কিন্তু যায়নাই।
উদ্বৃত্ত সামরিক শক্তি ছাড়া উপনিবেশ সাসটেইন করা যায় না, এটা বলতে পারি।
নেসেসারি আর সাফিসিয়েন্ট এর মধ্যে সামরিক শক্তি নেসেসারি তো বটেই, সামরিক শক্তি ব্যবহার করে টেরিটরিয়াল পজেশন - এটা উপনিবেশ বানানোর প্রথম ধাপ। ইরাক আর আফগানদের পকেটস্থ করতে সামরিক শক্তি ব্যবহৃত হয়েছে সেটা স্পষ্ট।
আরো ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল উপনিবেশগুলো যখন সবে স্বাধীন হল তখন তাদেরও খেয়াল হল যে সামরিক শক্তি ব্যবহার করে আশেপাশে কিছুটা করে জায়গাজমি দখল করে ফেলা যেতে পারে, বাকিরাও দরাজ হস্তে তা মেনে নেয়নি। তাই নিয়ে মারামারি - ভারত-পাকিস্তান, ভারত-চীন, মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া, চীন-ভিয়েতনাম - সবাই একে একে নিজেদ্র মধ্যে যুদ্ধ করেছে। আরো বড় ব্যাপার হল এই যুদ্ধের দায়টা অনেকেই নিজ-নিজ ঔপনিবেশিক প্রভুদের ওপর দরাজ হস্তে চাপিয়ে দেয় - যুদ্ধ বা যুদ্ধ-মুখীতা যে অর্থনীতির জন্য বিরাট ক্ষতিকর আর তার ভারটা যে দেশের জনগণকেই বইতে হয় সে নিয়ে হিসাব হয় না।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
জাপান ছাড়াও ঘরের পাশে থাইল্যান্ড উপনিবিষ্ট হয় নি - অবশ্য তাতে থাই-দের সুবিধা হয়েছে বলে আমার মনে হয়নি। জাপানের স্টিলের উদাহরণটা আপনি একেবারে সঠিক ধরেছেন। এই যে হেডস্টার্টের কথাটা বলেছেন এখানে - এটাই ইউরোপকে রেনেসাঁ দিয়ে গেছে। জাপান যেমন ভারতের সাথে ফেয়ার ট্রেড করেই লোহা কিনে ইস্পাত আর পরে গাড়ি শিল্প বানিয়েছে, সেরকম ফেয়ার ট্রেড হলেও এখনকার উপনিবেশগুলো কাঁচামালের যোগানই দিয়ে যেত। এখন যেমন চিনের শিল্পের জন্য কাঁচামাল আসছে শিল্প-অনুন্নত আফ্রিকা থেকে। তবে আদি-ইতিহাস দেখলে স্টিলের হেডস্টার্ট ভারতের কাছে আসে। কার্বন-এলয় বানানোর কৌশল একটা সময়ে ভারতের কাছ থেকেই সবাই শিখেছে।
জাপান উপনিবেশ বানিয়েছিল বটে, কিন্তু তার থেকে কতটা লাভ পেয়েছে আমি নিশ্চিত না। লাভ পেয়ে থাকলেও দখলদারী নিয়ে যুদ্ধের কারণে লোকসানও (পরমাণু বোমা) কম গুণতে হয়নি। তাতে কিছুই আসে যায় নি। ব্রিটেন ও জাপান দুটো প্রায় সমান আকারের দ্বীপ-রাষ্ট্র কিভাবে প্রায় একই গ্রোথ-পাথে এসে গেছে সেটা নিচের কার্ভে দেখে নিন।
দেখুন ১৮৫০ অবধি জাপানের কোনো পাত্তা নেই। এই পর্যায়ে জাপানের অবস্থা এশিয়ার বাকি দেশগুলোর মতই হতে পারত। কিন্তু ১৮৬৭ সালের মেইজি রিস্টোরেশনের সময়ে (আমাদের দেশের সিপাহী বিদ্রোহের সমসাময়িক) জাপান ঘুরে দাঁড়ায় কারণ জাপানে মেইজি রাজা ইউরোপীয়দের সাথে পাল্লা দেবার জন্য মানব-সম্পদে বিনিয়োগ শুরু করেন। তার ফল কার্ভে দেখতে পাচ্ছেন। ১৯০৫ সালে রাশিয়ার পূর্ব-প্রদেশ হল জাপানের প্রথম উপনিবেশ, ১৯১০ সালের কোরিয়া দ্বিতীয়। এর অনেক পরে আসে মাঞ্চুরিয়া আর তাইওয়ান। সুতরাং কাঁচামাল নিয়ে পণ্য রপ্তানীর সুযোগ ছিল খুবই সীমিত। জাপানের "পার্টনার ইন ক্রাইম" জার্মানীর ঔপনিবেশিক ইতিহাস আরও দুর্বল। যাহোক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে জাপানের মাথাপিছু আয় চলে যায় ঐ উপনিবেশ বানানোর আগের পর্যায়ে। কিন্তু জাপানের মানবসম্পদের বিনিয়োগ ফল ফলাতে শুরু করে এরপরে, যার কল্যাণে জাপান ব্রিটিশদের মাথাপিছু আয়ে ধরে ফেলে।
আপনার জন্য একটা নেগেটিভ টেস্ট কেস দিলাম নিচে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
মানবসম্পদে বিনিয়োগ করলে যে তার ফল মিলবে, এ ব্যাপারে তো আমার কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু আপনি উপনিবেশক আর উপনিবিষ্টের মধ্যে মানবসম্পদে বিনিয়োগের তুলনা করলে সেটা ফেয়ার হয় না, সেটাই আমি বলছি।
হ্যাঁ এবং আমারও বক্তব্য হল যে মানসম্পদে বিনিয়োগটাই মূল কথা। উপনিবেশ বিষয়ে আমার বক্তব্য যে আমরা তার আগে ও পরেও অনেক সময় পেয়েছি মানবসম্পদে বিনিয়োগ করার (আমার লেখাটাও সেই সময়কাল নিয়েই) - কিন্তু সেরকম কোনও প্রচেষ্টা দেখি নি। বাংলার ক্ষেত্রে ১৭৫৭-১৯৪৭ (বাংলাদেশ ১৯৭১), মারাঠাদের ক্ষেত্রে ১৮১৮-১৯৪৭, পঞ্জাবের ক্ষেত্রে ১৮৩৯-১৯৪৭ কলোনিয়াল রুল ধরা হয়। তার আগেও যে রাজারা শাসন করে গেছেন তারাও যে ভাল চালাতেন তাও নয়, আবার আমরা রাজসভায় গণ-প্রতিনিধিত্বের দাবী জানিয়েছি তেমনও নিদর্শন নেই। সব মিলিয়ে পশ্চাদপদতার সব লক্ষণ আগেই ছিল, পরেও আছে। ঔপনিবেশিকতা হয়ত কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দিয়ে গেছে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আমরা সময় পেয়েছি অবশ্যই, কিন্তু আপনাকে পাশাপাশি এ-ও চিন্তা করতে হবে, শুধু সময়ই মানবসম্পদ উন্নয়নের একমাত্র প্রয়োজনীয় রিসোর্স নয়। উপনিবেশকের ফেলে যাওয়া কলোনি-চালানোর-কলের ভার সরিয়ে নতুন করে শুরু করার জন্যে আরো অনেক কিছু দরকার হয়। পরিত্যক্ত বা বিজিত কলোনি একটা মাইনফিল্ডের মতো। শুধু সময় সেই মাইনফিল্ডে ভূট্টা ফলাতে পারে না।
"আমার তো মনে হয়, উপনিবেশনের প্রক্রিয়া থেকে তারা প্রশাসনিক কর্তৃত্বের হাঙ্গামাটাই শুধু ছেঁটে দিয়েছে। শোষণ করতে এসে তাদের শাসন করার হ্যাপা পোহাতে হচ্ছিলো, যেটা কস্ট এফেক্টিভ হচ্ছিলো না।"
গুন্নার মিরদাল এর "Asian Drama: An Inquiry into the Poverty of Nations" - এ এমন দাবি করা হইসে।
আপনার কাছে কি বইটার ইলেকট্রনিক সংস্করণ আছে?
দুঃক্ষিত, আমার কাছে ইলেকট্রনিক ভার্সান নেই।
BUET লাইব্রেরি থেকে নিয়ে পড়সিলাম। প্রথম ভলিউম পড়ে আর ধৈর্য রাখতে পারি নাই......
আমি এই আইডিয়াটা পেয়েছি আমাদের ইতিহাস স্যারের বক্তব্য থেকে। উনি বিসমার্কের সম্পর্কে পড়াতে গিয়ে এইটা বলেছিলেন। এখন দেখি বিসমার্ক সম্পর্কে উইকিতেও একইরকম লেখা আছে। আমি আরেকটু খুঁজে সোর্স বের করব। লেখাটা উদ্ধৃত করছি -
সূত্র - "Domestic Origins of Germany's Colonial Expansion under Bismarck." Past & Present (Feb 1969), Issue 42, pp 140–159
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
..................................................................
#Banshibir.
অজ্ঞাতবাস
পোস্টের জন্য ধন্যবাদ। তবে মনে হলো পড়তে গিয়ে হঠাৎ শেষ হয়ে গেল, আমি আরো কিছু বিশ্লেষণ আর তুলনা দেখবো বলে ভেবেছিলাম।
আমার দেখা মতে আমাদের উন্নতিটা কিছু নির্দিষ্ট জায়গা এবং শ্রেণীতে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়েনি ঠিকই কিন্তুআর্থ-সামাজিক অবস্থানে ধনীরা আরও ধনী হয়েছে আর গরিবেরা গরিব এবং এই পার্থক্য দিনে দিনে বাড়ছে। সামগ্রিকভাবে হয়তো মাথাপিছু আয় বাড়ছে না কিন্তু সমাজের একটি নির্দিষ্ট শ্রেনীর মানুষের আয় কিন্তু আকাশ ছুয়েছে। এই যেমন আমি যখন ঢাকার রাস্তায় চলি আমার বাসা থেকে খুব বেশি দুরে যেতে হয়না দামি ব্র্যান্ডের একদম নতুন মডেলের গাড়ি দেখার জন্য, মতিঝিলেই প্রচুর দেখতে পাওয়া যায়। একই সাথে যেখানে পায়ে হাঁটা আর ভিড় বাসে চলা মানুষের ভিড় সেখানে সম্পদের এহেন প্রাচুর্য্য অস্বাভাবিক। উপনিবেশের সময়েও এই পার্থক্য ছিলো, এর আগেও জমিদার কিংবা নবাবদের সময়ে ছিলো এখনও এই পার্থক্য আছে। সামগ্রিক উন্নতি হয়নি, শ্রেণী উন্নতি হয়েছে। এরমাঝে আবার অনেকেই অনুন্নত শ্রেণী থেকে উপরে উঠে এসেছেন কিন্তু সেই সংখ্যা কম।
জ্ঞান-বিজ্ঞান এর ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য অধিকাংশ উন্নত দেশ কেন্দ্রিক। মেধা বাইরে চলে যায়। যাবেই, কারণ দেশে অবকাঠামো নেই। সেই বিষয়ে উন্নত শ্রেনীর কোন চিন্তা আছে বলেও মনে হয়না। কারণ উন্নত বিশ্বের সুবিধা তাদের কাছে সহজলভ্য। অসুবিধা অনুন্নত শ্রেনীর লোকেদের।
একটা প্রবন্ধে দেখছিলাম, যেসব দেশে ব্যক্তিগত যানবাহনের থেকে সরকারী যানবাহন বেশি সেসব দেশে ট্রাফিক জ্যাম এবং আরও অন্যান্য অসুবিধা অনেক কম। কিন্তু যেসব দেশে ব্যক্তিগত যানবাহন বেশি সেসব দেশে এর ঠিক উল্টো। আমাদের দেশের রাস্তার তুলনায় গাড়ি বেশি। অবকাঠামোগত উন্নয়ন অনেক ধীর, কিন্তু তাই বলে কিন্তু ব্যক্তিগত যানবাহন কেনা থেমে নেই। আমাদের দেশে গাড়ি কেনার মতো মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুনে। কিন্তু তাতে জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে কি? আমার মনে হয়না। তার কারণ, আমরা অর্থের প্রয়োগ সম্পর্কে সচেতন নই। আমাদের অর্থ থাকতে পারে কিন্তু তার প্রয়োগ সঠিক নয়।
কোন একটা খবরের কাগজে একটা লেখা নজরে এসেছিলো, বিদেশী কোন সাংবাদিক একবার বলেছিলেন, স্বাধীনতার পরে এদেশে যে পরিমান অর্থসাহায্য এসেছে তার শতকরা ১০ ভাগ কাজে লাগানো গেলে দেশটা সোনা দিয়ে মুড়ে দেয়া যেত। কিন্তু এখনও দেশের এই হাল! এর পেছনে কিন্তু সরকারই শুধু দায়ী নয়, দায়ী আমরাও। আমাদের নিজেদের মাঝে উন্নত হওয়ার ইচ্ছা কতটুকু সেটা দেখার বিষয়।
আমরা অধিকাংশ বিষয়েই অপরকে দোষ দিয়ে অভ্যস্ত। এই যেমন রাস্তায় দুর্ঘটনা হলে আমরা প্রতিবাদ করি, কঠিন আইনের কথা বলি কিন্তু প্রচলিত আইনের ফাঁক গলে বের হওয়ার জন্য এই আমরাই কিন্তু ট্রাফিক সার্জেন্টকে ঘুষ দেই। এই দৃশ্য আমি প্রতিদিন চলার পথে দেখি। আমরাই কিন্তু মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে দৌড়ে উঠি আবার লাফ দিয়ে নামি রাস্তার মাঝখানেই। আমাদের দেশের জনগণ একে অন্যকে নিজের দুরবস্থার জন্য দোষ দিয়ে অভ্যস্ত কিন্তু নিজেকে বদলানোর জন্য কেউ কাজ করে না। তাই আমার মনে হয় আমাদের দেশের উন্নতি হতে এখনও অনেক দেরি, আদৌ হবে কিনা সেটা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
- এইটা নিশ্চিতরূপেই একটা মিথ। বাংলাদেশ মনে হয়না খুব একটা অর্থসাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
কথাটা অবশ্যই রূপক, কিন্তু যে পরিমান অর্থসাহায্য এসেছে দেশে তা নেহাৎই কম নয়। তার সঠিক প্রয়োগ হলে পরিবর্তন আসত বলেই মনে করি। বাংলাদেশ এখন খুব একটা দাতাগোষ্ঠীর উপরে নির্ভরশীল নয় কথাটা ঘুরিয়ে এভাবেও বলা যায় যে দাতাগোষ্ঠী আর বাংলাদেশকে অর্থসাহায্য দিতে আগ্রহী নয়, কারণ পূর্বের দেয়া সাহয্যের কোন সঠিক বাস্তবায়ন এদেশে হয়েছে কিনা এই বিষয়ে সন্দেহ আছে।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
দাতাগোষ্ঠী যে সাহায্য দেয় তার পেছনে একখান লেজ তারা সব সময় দিয়া যায়। খালি নিজেগো আমলাগো আর লোকদের দোষ দিয়া লাভ নাই।
গোসল করার আলাদা জায়গা নাই, তাও বাথটাব লাগাইয়া দিলে সেইটার সঠিক ব্যবহার (বাস্তবায়ন) পসিবল না।
অলস সময়
শর্ত ছাড়া সাহায্য আসবেনা তা জানা কথা, কিন্তু যে সাহায্য আসছে বা পূর্বে এসেছে তার সঠিক ব্যবহার হয়েছে কিনা কিংবা নিদেনপক্ষে যথাযথ প্রয়োগ হয়েছে কিনা সেই বিষয়ে প্রশ্ন। দেশে তা কখনো হয়েছে বলে মনে পড়েনা।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
বিদেশী অর্থসাহায্য দিয়ে কিছু হবার নয়। ওটা বাইরের রাষ্ট্রের ইচ্ছাপূরণ। আর এখানে বিশাল ট্র্যাজেডি অব কমনস জড়িত। এভাবে টেকসই অর্থনীতি কিংবা উন্নয়ন তৈরি হবার নজির ইতিহাসে আছে কিনা সন্দেহ।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
১৯৭২ সাল থেকে এপর্যন্ত প্রায় ৪ লক্ষ কোটি টাকা বৈদেশিক সাহায্য পাওয়া গেছে। এর ভেতর প্রায় সোয়া দুই লক্ষ কোটি টাকা ঋণ। বাকিটা অনুদান।
খেয়াল রাখা দরকার- ১৯৭২ সালে আমাদের বাজেট ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার। বৈদেশিক সাহায্য ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারলে উন্নয়ন হত সন্দেহ নেই। কিন্তু ভেবে দেখুন- সংসারের যে ছেলেটি নিজের আয় রোজগার ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারে না- সে কি লটারি বা অন্য কোন দানে পাওয়া অর্থ কাজে লাগাতে পারবে?
"আমাদের অর্থ থাকতে পারে কিন্তু তার প্রয়োগ সঠিক নয়।"
বস্তুগত উন্নতির চেয়ে প্রগতি বেশি জরুরি।
ব্রিটিশ ইকোনোমিস্ট অ্যাঙ্গাস ম্যাডিসনের একটা পেপার পাইলাম। সেইখানে ইন্টার্ন্যাশনাল ডলার বেস করে রিজিওনাল হিস্টরিক জিডিপি চার্ট আসে, টেবিল ১ দ্রষ্টব্য। সেই চার্টের উপর বেস করে গ্রাফ করি পশ্চিম আর ভারতবর্ষেরঃ
ম্যাডিসন ১৮২০ সালের দিকে পশ্চিমের ধাঁই ধাঁই জিডিপি উন্নতির কারন বলছেন ৫টাঃ
১) ফাইন্যানশিয়াল সিস্টেমের প্রসার। একাদশ দ্বাদশ শতাব্দীতে প্রপার্টি রাইট স্বায়ত্বশাসন আসার ফলে সম্পত্তি কেনাবেচা উদ্যোক্তার জন্য লাভজনক হয়ে ওঠে। ক্রেডিট আর ইনশিওরেন্স চাঙ্গা হয় বিশেষত ইউকে আর নেদার্ল্যান্ডে।
২) পঞ্চদশ শতাব্দীতে ছাপা বইয়ের প্রসার। ইউনিভার্সিটি ইত্যাদির গড়ে ওঠা।
৩) চার্চের বিবাহের উপর জোর দেয়া। ডিভোর্স বহুগামীতা ইত্যাদিতে কঠোর নিরুৎসাহ প্রদান। চীন ভারতে তখন গণহারে বউবাচ্চা বিদ্যমান।
৪) নৌ টেকনোলজিতে অকল্পনীয় উন্নতি। সারাবিশ্বের ভূগোলের উপর পশ্চিমাদের দখল থাকায় ট্রেডিং সেটলিং বা রুলিং যেটা সুবিধা সেটা করে ধনার্জনের নতুন উপায় হয় পশ্চিমাদের।
৫) ছোট ছোট শক্তিশালী জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব। এরা একে অপরের সাথে কম্পিটিশন লাগিয়ে দেয় ব্যবসা বাণিজ্যে যুদ্ধবিগ্রহে আবিষ্কারে আর বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাডভেঞ্চারে।
ম্যাডিসনের মতে এই পাঁচটা বৈশিষ্ট্যের অনুপস্থিতি পশ্চিমের মুনাফার সাথে বাকি বিশ্বের পার্থক্য গড়ে দেয়।
(বাসায় গিয়ে রাতে আরেকটু ঘেঁটে দেখব, ম্যাডিসনের পক্ষ-বিপক্ষ কোনটাই নিচ্ছিনা। শুধু বলে গেলাম তিনি কি বলেছেন। উপরের পাঁচটা পয়েন্টের প্রতিটা নিয়েই আরেকটু ঘাঁটাঘাঁটি প্রয়োজন)।
..................................................................
#Banshibir.
আমার কাছে ১) নম্বরটা গুরুত্বপূর্ণ লাগছে। আর যেটা এখানে নেই সেটা হল মেধাসত্ত্বের সংরক্ষণ। এই ব্যাপারটা আমাদের দেশে এখনও ইউরোপের অষ্টাদশ শতকের সাথে তুলনীয় না।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
মেধাসত্ত্ব বলতে ঠিক কী বোঝাচ্ছেন, এবং এর সংরক্ষণে কী করেছে পশ্চিম?
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
মেধাসত্ত্ব-সংরক্ষণ হল সোজা কথায় আবিষ্কার বা মৌলিক চিন্তা-ভাবনা থেকে অর্থ বানানোর উপায়। মেধাসত্ত্বের দুটো ফর্ম হল কপিরাইট আর পেটেন্ট। দুটোতেই আপনার মৌলিক চিন্তা-ভাবনার ভিত্তিতে আপনাকে সীমিত সময়ের জন্য একটা মনোপলি দেওয়া হয়, যে সময়ে ওই চিন্তা-ভাবনা প্রয়োগ করে যে আয় বা লাভ হবে তার লভ্যাংশ আপনি পাবেন।
মেধাসত্ত্ব-সংরক্ষণ মানব-সম্পদ উন্নয়নের একটা বড় ধাপ, কারণ মেধার সত্ত্ব সংরক্ষণ হবে জানলে তবেই মানুষ মেধার পেছনে বিনিয়োগ করে। আমরা যে পড়াশোনা করে চাকরি করি সেটাও একটা বেসিক মেধাসত্ত্ব, যার জন্য আমি বিনিয়োগ করি আর পরে ফল পাই। ওপরে মসলিন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সমসাময়িক কালে যদি মেধা-সত্ত্ব সংরক্ষণ আইন থাকত তবে কেউ না কেউ মসলিন বানানোর কল বানিয়ে তা থেকে মসলিন বানানোর চেষ্টা করত, কারণ তার একটা রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট থাকত।
মেধা-সও্ব সংরক্ষণের জন্য রেনেসাঁ পরবর্তী ইউরোপ আইন করে উৎসাহিত করেছে। উদাহরণ হিসাবে আমি ধরছি ইংলন্ডের স্টাচু অব মনোপলিজ। এবার এই আইনের প্রয়োগ দেখুন। জেমস ওয়াট প্রথম স্টিম ইঞ্জিনের পেটেন্ট বের করার পরে অনেকেই ভিন্ন-ভিন্ন ফর্মে তার ব্যবহার শুরু করে। জেমস ওয়াট তাদের কোর্টে সু করে প্রাপ্য আদায় করলেন। এই সব ঘটনা ঘটছে ১৭৯০-১৭৯৫ সালে। পেটেন্ট আইনের স্কোপ ও তার প্রয়োগ বিতর্কিত - কিন্তু মেধা-সত্ত্ব সংরক্ষণের যে প্রচেষ্টা আইনীভাবে করা হয়েছিল তার কারণে ইউরোপে অনেকে মৌলিক গবেষণার দিকে ঝুঁকেছিলেন। সমসাময়িক ভারতের আইন সম্পর্কে ভেবে দেখুন, সেই কারণে ভারতে গবেষণার চেষ্টাও হয়নি।
মেধাসত্ত্ব ব্যাপারটা মানব-সভ্যতার একটা লিপফ্রগ। এর আগে পর্যন্ত আপনাকে কেউ ভার্চুইয়াল কিছু বিক্রি করে পয়সা নিত না। পেটেন্ট বা কপিরাইটের ক্ষেত্রে নেয়। আপেল কম্পিউটারস একটা কিছু ফিসিকালি তৈরী না করেই আজকে এত পয়সা কামাচ্ছে যার কারণ তাদের মেধাসত্ত্ব।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
বুঝলাম। কিন্তু মেধাসত্ত্ব দেওয়া হবে সেটা ভেবে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিস্কার হয়েছে, সেটা আপনিও বিশ্বাস করবেন না। আগে আবিস্কারটা, তারপর তার সংরক্ষণের চিন্তা। কোন আইন দিয়ে সেটা উৎসাহিত করা বা নিরুৎসাহিত করা যায় বলে আমার মনে হয়না। আমার মনে হয় টাকা পাবে বা নোবেল পাবে বলে আলফ্রেড বারুদ আবিস্কার করেনি। করেছে তার প্রয়োজনে। বাকীটা পেয়েছে তার নামে সেই আবিস্কার সংরক্ষণের পরে। রাবারের আবিস্কারক গুড ইয়ার তো আবিস্কার করতে গিয়ে জেল খেটেছেন চার বারে ষোল বছর। তিনি নিশ্চিৎ ছিলেন তার সাফল্যের ব্যপারে। সংসার চালিয়েছেন ব্যংক থেকে সূদে টাকা নিয়ে। সময় মতো আবিস্কার হয়নি। তিনি টাকাও ফেরৎ দিতে পারেন নি। জেল খেটেছেন। এত পাগল ছিলেন, জেল থেকে বের হয়ে আবার রাবারের আবিস্কারেই নেমেছেন। শেষবার রাবারের গুড়ো গরম চুলোয়া পরে গলে যায়। ঠাণ্ডা হওয়ার পরে সেটা টেনে তুলতে গিয়ে দেখেন; লম্বা হয়ে যাচ্ছে, ছেড়ে দিলে আবার আগের মতো হয়ে গেল! আমরা রাবার পেয়ে গেলাম। পৃথিবীর সব বৈপ্লবিক আবিস্কার তো এমন ভাবেই একেকজন পাগলের একক প্রচেষ্টায় হয়েছে। তার পরে এসেছে পাগলের সেই মেধা সত্ত্ব সংরক্ষণের ব্যাপার।
এমন কিছু লুইপাস্তর দুনিয়াতে সব খানেই আছে বা ছিল। তারা সুরকার বা কবির মতো। উৎসাহ বা পুরস্কার বা মেধাসত্ত্ব সংরক্ষণের লোভ দিয়ে তাদেরকে দিয়ে হয়তো একটা বৈদ্যুতিক বাল্ব তৈরী করানো সম্ভব হতো না। যাদের মেধায় একটা সমাজ দেশ রাষ্ট্র এগিয়ে গেছে অন্তত তাদের কেউই মেধা সত্ত্ব রক্ষিত হবে কী হবে না এই ভয়ে আবিস্কার থেকে বিরত থাকেন নি।
আমার জানামতে আমাদের দেশেও সংরক্ষণের অভাবে বিরাট কোন আবিস্কার বিলিন হয়ে যায় নি। তা হলে একটা জাতির বা দেশের উন্নয়নে মেধা অবশ্যই একটা বিরাট ফ্যাক্টর। কিন্তু আজকের দুনিয়ায় আর্থিকভাবে সফল কয়টা দেশের মৌলিক কোন আবিস্কার আছে।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
এইটা কোনোভাবেই একমত হচ্ছি না। মেধা সত্ত্ব সংরক্ষণ না হলে ব্যক্তিকেন্দ্রিক কিছু আবিষ্কার হয় বটে কিন্তু আবিষ্কারের জন্য গণহারে ইনভেস্টমেন্ট হয় না। জেমস ওয়াটের ক্ষেত্রে অন্তত মুনাফার কথা ভেবেই স্টিম ইঞ্জিনের পেটেন্ট নেওয়া হয়েছিল, উনি ওয়াট অ্যান্ড বোলটন নামে কোম্পানীও খুলেছিলেন। আলফ্রেড নোবেল সব আবিষ্কারের পেটেন্ট ছিল ও তিনি তার রয়ালটির আয় পেতেন। মেধাকে উৎসাহ দিতে গেলে মেধার সত্ত্ব সংরক্ষণ ছাড়া সরাসরি কোনও পথ নেই। তবে মেধা উৎসাহ পেলে তার যে সিস্টেম তৈরী হয় (কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়) তা থেকে অনেকেই বেরিয়ে আবিষ্কার করে পয়সার কথা না ভেবেই। কিন্তু সামগ্রিক সিস্টেমটাই তৈরী হয় না মেধার গুরুত্ব না বুঝলে।
আইজ্যাক নিউটন কেম্ব্রিজের ছাত্র, তার সমসাময়িক ভারতে বিজ্ঞানচর্চার জন্য আদৌ কোনও বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। কেরলের গণিত স্কুল একমাত্র টিমটিম করে জ্বলা প্রদীপ।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
"মেধা সত্ত্ব সংরক্ষণ না হলে ব্যক্তিকেন্দ্রিক কিছু আবিষ্কার হয় বটে কিন্তু আবিষ্কারের জন্য গণহারে ইনভেস্টমেন্ট হয় না।"
ঘর-বাড়ি তৈরীর কোম্পনীগুলো কিন্তু বিশেষ কোন মেধা খাঁটিয়ে হয়নি। কিন্তু ইনভেষ্টমেন্ট সেই রকম গণহারে। অবশ্য অল্প মেধার পেছনে বেশী ইনভেষ্টমেন্ট ছিল বলেই ভেঙ্গে পরেছে তাসের ঘরের মতো।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
"............ ব্যক্তিকেন্দ্রিক কিছু আবিষ্কার হয় বটে......"
দেখুন, কিছু লোক সব সময়েই থাকবে যারা কোনো বস্তুবাদী চিন্তা ছাড়াই আবিষ্কার করবে. কিন্তু জ্ঞানের/প্রযুক্তির বিকাশের জন্য আপনি কেবল সেইটার উপর ভরসা রাখলে কাজ হবেনা. আপনাকে একটা incentive দিতেই হবে. এই ব্যাপারটা তাত্ত্বিক জ্ঞানের জন্য ৯০% প্রযোজ্য হলেও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের জন্য ১০০% সত্য. কেননা প্রযুক্তির বিকাশে বিপুল ইনিশিয়াল বিনিয়োগ এর প্রয়োজন হয়.
"ঘর-বাড়ি তৈরীর কোম্পনীগুলো কিন্তু বিশেষ কোন মেধা খাঁটিয়ে হয়নি। কিন্তু ইনভেষ্টমেন্ট সেই রকম গণহারে। "
আমিও তো তাই বলছি. ঘর-বাড়ি তৈরির কোম্পানিগুলো মুনাফা করার জন্যই গণহারে বিনিয়োগ করে. মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি বলে বিবেচিত "বাসস্থান" এর চাহিদা পূরণ তাদের মূল উদ্দেস্য না.
মেধা-সত্ত্বের সংরক্ষণ না হলে মেধায় বিনিয়োগ হয়না, এর অর্থ এই না যে মেধা লাগে না এমন কিছুতে বিনিয়োগ বন্ধ থাকে। চাষবাস, খনি, বাসস্থান নির্মাণ বা প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ - এ সবে মানুষ আদি যুগ থেকেই বিনিয়োগ করে আসছে। কিন্তু ঐ টার্শিয়ারী সেক্টর তৈরী হবার জন্য মেধায় বিনিয়োগ লাগে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
মনে হচ্ছে আমি স্পষ্ট করে বোঝাতে পারি নি। আমি পেটেন্ট দেওয়ার বিপক্ষে নই। কেউ কিছু আবিস্কার করলে নিশ্চই তা থেকে লাভ বা স্বকৃতী তার প্রপ্য। আমার বক্তব্য ছিল " প্যাটেন্ট আইনে তাদের আবিস্কার নিবন্ধিত হবে এবং তা থেকে তারা লাভবান হবেন" এই চিন্তা বা নিশ্চয়তা পেয়ে তারা আবিস্কারে নামেন নি। নেমেছেন একটা সমস্যা সমাধানের জন্য। এবং পরে তাদের সেই সমাধান বা আবিস্কার তাদের নামে নিবন্ধনের ব্যবস্থা হয়েছে। আগে ছিল আবিস্কার তারপর তা সংরক্ষণের প্রশ্ন। সেটাই বলতে চেয়েছি। আমাদের তো এমন আবিস্কার নেই, যা নিবন্ধনের কারণে হারিয়ে গেছে।
যদিও আজকে ষ্টিম ইঞ্জিনের ব্যাবহার তেমন নেই, কিন্তু ষ্টিম ইঞ্জিনই তো আধুনিক সভ্যতার প্রথম ভেহিকেল। রাবারের কথাই ধরুণ; আজকের দুনিয়া রাবার ছাড়া ভাবা যায়! তো তারা এর পরের লাভের আশায় আবিস্কারে নামেনি, নেমেছিল তাদের সামনে একটা সমস্যা ছিল যার সমাধান প্রয়োজন।
এখন বাংলাদেশে শিক্ষার যে পরিবেশ, বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আবিস্কারক জেমস ওয়াটের তখনকার ইংল্যাণ্ডে এর চেয়ে ভাল পরিবেশ ছিল বলে আমার মনে হয় না। কৈ আমাদের ভুয়েটের হাজার হাজার মেধাবী ছাত্রদের কেউই তো এমন কোন আবিস্কার করে তা পেটেন্টের জন্য জমাদিয়ে ব্যর্থ হয়েছে বলে শুনিনি।
কিন্তু চিকিৎসা শাস্ত্রের ছাত্র প্রগ্রামিং বা কম্পিউটার সাইন্স না পড়েও অভ্র তৈরী করেছে, সেটা ব্যবহার করে লিখছি, তাও আবার বিনে পয়সায়। বিজয়ের মালিককে কিন্তু প্যাটেন্ট দেওয়া আছে। তার পরেও ডাক্তার সাহেব অভ্র বানিয়েছে।
কোন একটা সমস্যা সমাধানের জন্য মেধাসত্ত্বের নিশ্চয়তা বা অনিশ্চয়তা বিরাট অনুঘটক নয়। যে সেটা করতে চাইবে, সে করবেই। তা না হলে আমাদের দেশ স্বাধীন হত কীনা সন্দেহ আছে আমার।
কিন্তু মেধা আকাশ থেকে পরে না, সেটাও সত্যি। মেধা তৈরী করতে হয়। এই পথে আমাদের বড় বাঁধা এখন আমরা নিজেরাই। আমার মনে হয়, এখন থেকে প্রতিটি শিশু লিখতে পড়তে শিখবে, এমন নিশ্চয়তা দেয়; এই ধরণের একটা পদ্ধতি আবিস্কার ভীষণ জরুরী। এই মূহুর্তে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কোন কাজ আমাদের সামনে থাকা উচিৎ নয়।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
ভারতে বা বাংলাদেশে এখনও পেটেন্ট সিস্টেম কার্যকরী নয়, সিস্টেম অর্থে এটা স্টিম ইঞ্জিনের যুগের থেকেও পিছিয়ে। নামেই আছে, কাজে নেই।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
স্থপতি রশিদ আহমেদ তিহার কারাগারে বন্দী ছিলেন। ৮ বছর পর তিনি গত ২৬ তারিখ মুক্তি পেয়েছেন। এই ভদ্রলোকের জীবনের ৮ টি বছরের ক্ষতিকে ঠিক কোন উপায়ে পুষিয়ে দেয়া যায়, আমার জানা নেই।
একটি পরাধীন দেশকে আমার স্থপতি রশিদ আহমেদ-এর মতন মনে হচ্ছে, যে কিনা তিহার কারাগারে বন্দী হয়ে আছে। এই বন্দিত্ব কেবল শারীরিক নয়। তার সকল সম্ভাবনা, মানসিক উন্নতি, সামাজিকতা, শিক্ষা- সব- সবকিছু তিহার কারাগার এক কৃষ্ণ গহ্বরে নিপতিত করেছে।
লেখাটির ব্যপ্তি অনেক। সকলের (উৎকৃষ্ট) মন্তব্যে আলোচনা আরো প্রসারিত হয়েছে। আলোচনার সুবিধায় আমি কেবল সহজেই দৃশ্যমান করে তোলা যেতে পারে, এমন কিছু উদাহরণ টানতে চাইছি।
১৭৫৭ সালে সুবে বাংলার রাজস্ব ছিল ৬ লক্ষ টাকার মত। ১৯৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ২৬ লক্ষ টাকায় দিল্লির সুলতানের কাছ থেকে বাংলার দেওয়ানী লাভ করেছিল(আগে পরের পার্থক্যটি লক্ষ্য করুন)। এই টাকা কোম্পানি দিল্লির সুলতানকে দিত। এর বাইরে যা আয় হত, তা ছিল কোম্পানির রোজগার। এই রোজগারটি অনুমান করে নেয়া যেতে পারে। বলে রাখা ভাল- ৫৭ সালের যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ক্লাইভসহ অন্যান্য অমাত্যগণ প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা মুর্শিদাবাদের কোষাগার থেকে তুলে নিয়েছিলেন। তাদের বেতনভাতা বাবদ কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয় হত। এর পরে লাভের হিসাব। সেই লাভটি যেত ইংল্যান্ডে।
অতিরিক্ত করের বোঝা বয়ে বাংলার ঐ চাষি ডোবার ধারে পায়খানা করে কলেরা, আমাশয়ে মরত। আর বেতন বোনাস নিয়ে কোম্পানির নোকররা East India College বানাত। সেই কলেজে পড়াশোনা করে ওদের উত্তরাধিকারী আজ কলার উঁচু করে বলতে পারে- আমাদের ৭ প্রজন্ম শিক্ষিত!!
১৭৭০ সালের মন্বন্তরের সময় প্রতি ৩ জনে একজন লোক মারা যায় বলে ধারনা করা হয়। এই সময়ে কোম্পানির রাজস্ব আয় ১০% থেকে ৫০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এদেশে যোহান্সবার্গের মতন সোনার খনি ছিল না কোনকালেই। তাই অতিরিক্ত করের বোঝা আজন্ম চাষি বাঙ্গালীকে ধান পাট ফলিয়ে বসুমতির বুক চিরেই বের করতে হত। এইভাবে দশসনা, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তর হাত ঘুরে চাষীর দায় বেড়েছে কেবল। একটা করে যুদ্ধ হত ইংরেজদের সাথে- সেই সুযোগে কোম্পানি অতিরিক্ত একটা করের বোঝা চাপিয়ে দিত। এই বোঝা বইতে গিয়ে পরবর্তী চল্লিশ বছরে ছোটবড় অন্তত ১০টি দুর্ভিক্ষ হয়েছে। এই ক্ষতিটা কিন্তু আমাদেরই থেকে গেছে কেবল।
এবার একটু ইউরোপের দিকে নজর করা যাক। কথাগুলো সবারই জানা। তবুও বলছি।
ইউরোপের লোকেরা হঠাৎ নিজেদের দেশ ছেড়ে জাহাজ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল কেন? ১৬০৩ সালে রানী এলিজাবেথ মারা যাবার সময় ইংল্যান্ড ইউরোপে খুব গুরুত্বপুর্ণ কোন দেশ ছিল না। জওহরলাল নেহেরু বরং সেই সময়ের ইংল্যান্ড অপেক্ষা আমাদের সমসাময়িক আকবর বাদশাহকে অনেক উজ্জ্বল শাসক আখ্যায়িত করেছেন। আয়ারল্যান্ডের সাথে ইংল্যান্ডের বিরোধ তখন তুঙ্গে। ফ্রান্স আর স্পেনের সাথেও প্রায়ই খিটিমিটি লেগে যেত। অন্যদিকে ক্যথলিক আর প্রটেস্ট্যান্টদের চরম দ্বন্দ্বে পুরো ইউরোপ জুড়ে তখন অস্থিরতা। এই সময় ইউরোপবাসী ভ্যাগ্যান্বেষণে বেরুল। তাদেরই একটি দল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কেপ অব গুড হোপের পূর্ব এলাকায় একচ্ছত্র বাণিজ্যের অধিকার পেল। পলাশীর যুদ্ধের সময় রবার্ট ক্লাইভ হয়ত চিন্তাও করতে পারেননি পুরো ভারতবর্ষের শাসন আর শোষণের ঠিকাদারি পেয়ে গেছেন। এই বিষয়টি ধরা পড়ল আরও পরে।
স্টিম ইঞ্জিন আর স্পিনিং জেনি আবিস্কারের পর ইংল্যান্ডে বয়ন, লৌহ আর কয়লা শিল্পের অভুতপূর্ব বিকাশ ঘটল। এই সময় অধিক উৎপাদনের ঠেলায় আর তাগিদে ওদের মনে চিন্তার উদ্রেক হল- ‘’এই যন্ত্র লইয়া আমরা কি করিব?’’ উপায় খুব শীঘ্রই আবিস্কৃত হল। বয়ন শিল্পের জন্য প্রচুর তুলা আর নীল দরকার। ওদের মনে পড়ল, এই কাঁচামাল যোগানের অফুরন্ত একটা উৎস আছে- ভারতবর্ষ।
এবার একটু পরিসংখ্যান দেখা যাক। ''ভারত থেকে ব্রিটেনে ১৮১৩ তে ৯ মিলিয়ন পাউণ্ডের সুতো রপ্তানি হত। ১৮৩৩এ তার পরিমান বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ মিলিয়ন আর ১৮৪৪ সালে সেই রপ্তানির পরিমান দাঁড়ায় ৮৮ মিলিয়ন পাউণ্ড। সনাতন ভারতের কারখানাগুলোর শ্মশান যাত্রা শুরু হয়, গ্রামীণ বাজার ধংস হয়। ভারতের বাজার ব্রিটিশ উত্পাদনে ছেয়ে যায়। ব্রিটিশ সভ্যতার অসীম অত্যাচার সয়েও ভারতীয় শিল্প যতটুকু উত্পাদন করছিল তার অধিকাংশ বন্ধ হয়ে যেতে থাকে গ্রামে গ্রামে সমাজে সমাজে। এই সময় থেকেই ব্রিটেনের জিডিপি দুই অংকের ওপরে উঠতে শুরু করে(এ প্রসঙ্গে ১৯১৩কে ভিত্তিবর্ষ ধরে ব্রিটেনের ঐ সময়ের জিডিপির ইতিবৃত্ত – ১৭২০-২১ – ২.১, ১৭৬০-৬১ – ২.৬, ১৭৭০-৭১ – ৩.৩,, ১৭৮০-৮১ – ৩.৫, ১৭৯০-৯১ – ৪.৬, ১৮০০-০১ – ৫.৭, ১৮১০-১১ – ৭.১, ১৮২০-২১ – ৯.৭, ১৮৩০-৩১ – ১৮.৩, ১৮৪০-৪১ – ১৯.৬। লক্ষ্য করুন ১৮০০র পর থেকে জিডিপি ৫এর উর্ধমুখী আর ৩০এর পর লাফিয়ে দুই অংক ছাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে কুড়ির ঘরে প্রবেশ করেছে)। শিল্পবিপ্লবের বেশকিছু হাতিয়ার যেমন স্পিনিংজেনি - স্বচলমাকু, ৭০ বছর আগে আবিষ্কার হলেও, পড়েছিল ঠাণ্ডাঘরে। তাকে চালানোর জন্য ভর্তুকির অর্থনীতির বাজারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল একটু একটু করে- সাম্রাজ্যের পাখির চোখ ছিল ভারতীয় বাজারেই দিকেই।'' (উদ্ধৃত)
আমাদের দেশের কাঁচামাল বিলাত গিয়ে পাকা হয়ে আবার আমাদের দেশেই ফেরত এল ব্যাপক মূল্য সংযোজিত হয়ে। এদিকে দেশের তাঁতি হাতে তাঁত বুনে সেই খরচ হিসেব করে বিলাতের মেশিনে বোনা সস্তা কাপড়ের সাথে টিকতেই পারল না। এইভাবে একদিকে আমাদের খাদি, বেনারসি, মসলিন ধ্বংস হল। অন্যদিকে কৃষকের ফসলের বৈচিত্র্যকে নষ্ট করা হল। আজকে শ্রমঘন শিল্প হবার কারণে বিলাতের বস্রশিল্প পরিত্যাক্ত প্রায়। সেই শিল্পের হাল ধরেছি আমরা। অথচ ২০০ বছর আগে এইরকম কয়েকটি শিল্পর উপর ভর করে ইউরোপ পৃথিবী শাসন করেছে।
এইতো গেল কেবল এক বস্রশিল্প আর ভূমি করের অল্প বিস্তর বর্ণনা। আর্থিক ব্যবধান থেকে অন্য অনেক ব্যবধান সূচিত হয়। ৮০র দশকে সিংগাপুরের স্থপতি লি কুয়ান ইউ তার এক ভাষণে অধিক শিক্ষিত মেয়েদের বিয়ে করার কথা বলে তুমুল বিতর্কে পড়েছিলেন। পড়ে অবশ্য তার দল তথ্য দিয়ে প্রমান করেছিল যে অধিক শিক্ষিত (প্রকারান্তরে মেধাবী) মা অধিক মেধাবী সন্তানের জন্ম দেয়। মেধাবী সন্তান বাড়ানোর জন্য আমরা কি করতে পেরেছি? আমাদের টাকায় বিলাতে ২০০ বছর আগে কলেজ হয়েছে। এখন এই যে ব্যবধানটি তৈরি হয়েছে ২০০ বছর ধরে, সেটি কি সহজে মিটবে? আর এখন কি সেই শাসক এবং শাসিতকে একটা রেসে দাড় করিয়ে দৌড়ুতে বলা জায়েজ হবে?
অন্য প্রসঙ্গে পরে সুযোগ হলে আসছি—
এইটা মনে হয় ১৭৬৫ সাল হবে।
কোন এক অদ্ভুত কারণে আমার কোন মন্তব্যই এতক্ষণ দেখতে পাচ্ছিলাম না। দুঃখিত।
এটি ১৭৬৫ সালই হবে। ধন্যবাদ।
সনটা ১৭৬৫ হবে, তাই না?
আপনার লেখাটার আলাদা উত্তর দিই নি, কারণ আপনার অন্যান্য উত্তরগুলো থেকেই উত্তর পেয়ে যাওয়ার কথা। আপনার টেক্সটাইল শিল্পের কথায় থাকা যাক। ভারত থেকে ব্রিটেনে সুতো যেত আর ফিরত জামা-কাপড় হয়ে। ঠিক কথা, কিন্তু তখন কি ভারতীয়রা ওই মূল্য সংযোজন প্রক্রিয়া জানত? এইখানে আপনি বলতে পারেন ভারতীয়রা স্বাধীন থাকলে সেরকম কিছু একটা চেষ্টা করে দেখত বা ব্রিটেন থেকে যন্ত্র আমদানী করে দেশীয় শিল্প গড়ে তোলার চেষ্টা করত। কিন্তু সমসাময়িক ভারতে এই প্রচেষ্টা আমি দেখি নি। এমনকি ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের সময়েও কোনও এজেন্ডায় দেখি না যে বিদেশী বাণিজ্য০ঘাটতি কমানোর প্রচেষ্টার কথা। এই মূল্য-সংযোজনের ফলে দেশের সার্বিক ক্ষতির বোধটা এসেছে অনেক পরে, ১৯০০ সালেরও পরে এবং সেই প্রতিক্রিয়াতে দেশে কিছু কিছু শিল্প স্থাপনের চেষ্টাও হয়েছিল। এছাড়া জাপানের উদাহরণ দিয়েছি, স্বাধীনতার পরেও কি ভাবে একই পদ্ধতিতে কাঁচামাল গিয়ে ফিনিশড গুড আসার প্রবণতা বন্ধ হয়নি, যাকে কোনও ভাবেই ঔপনিবেশিকতার ফল হিসাবে দাঁড় করানো যাচ্ছে না।
আপনার লেখা থেকে মনে হয় কাঁচামাল যার, সিঙ্ঘ-ভাগ লভ্যাংশ তার ঘরেই যাওয়া উচিত ছিল। আপনার কথা সত্যি হলে সিঙ্গাপুরের মত দেশের তো কিছুই আয় হওয়ার কথা নয়। তাদের দেশে তো কাঁচামাল কিছুই পাওয়া যায় না।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
তিনটা পিরিয়ড নিয়ে চিন্তা করা যেতে পারে। উপনিবেশ শুরুর আগ পর্যন্ত, উপনিবেশের সময় আর উপনিবেশ শেষ হওয়ার পরের সময়। পৃথিবীর নানা জায়গায় সভ্যতার উন্নয়ন হয়েছে নানা গতিতে।
১। প্রথম পিরিয়ডে ইউরোপিয়ান জাতিরা অন্যদের থেকে এগিয়ে গিয়েছিল। তাই তারা কলোনিয়ালাইজার, আফ্রিকা, এশিয়া, নতুন পৃথিবী উপনিবেশ। অর্থাৎ এ পিরিয়ডের শেষে যে গ্যাপটা, সেটা ন্যাচারাল।
২।দ্বিতীয় পিরিয়ডে যেহেতু কলোনিয়ালাইজেশন চলেছে, সম্পদের স্থানান্তর এবং নানা বিধিনিষেধের কারণে, কলোনির সক্ষমতা এবং উন্নতির হার কমেছে, আর কলোনিয়ালাইজারের সক্ষমতা এবং উন্নতির হার বেড়েছে।
৩। তৃতীয় পিরিয়ডে, দ্বিতীয় পিরিয়ডের ঠিক করে দেয়া সক্ষমতার কারণে এখন মুক্ত অবস্থায়, দুই দেশের উন্নতির হারের মাঝে গ্যাপটা অনেক চওড়া। সেটা এত চওড়া হত না, যদি মাঝের পিরিয়ডটা না ঘটত।
একটা গাণিতিক মডেল দাড় করানো যেতে পারে এ নিয়ে।
প্রথম পিরিয়ড নিয়ে আরেকটা কনসার্ন। পশ্চিমা সভ্যতার সূতিকাগার হচ্ছে গ্রিস, প্রায় একই সময়ে ভারতও কিন্তু অন্তত গণিত এবং জ্যোতির্বিদ্যায় বেশ অগ্রসর ছিল। মাঝে একটা সময় গ্রেকো-রোমান সভ্যতা স্থবির হয়ে পড়েছিল, সেই সময় আরবরা জ্ঞানচর্চা (এবং স্থানান্তর) ধরে রেখেছিল। তারপর রেনেসার পর ইউরোপিয়ানরা এগিয়ে গেলো। তাইলে দেখা যাচ্ছে, একই ঘটনা ভারতেও ঘটতে পারত, ইউরোপিয়ান রেনেসার মত, যেহেতু একটা পর্যায়ে গ্রীস আর ভারত সমানই ছিল। হয়ত ষোল শতাব্দীতে না, হয়ত উনিশ শতাব্দীতে, যদি মাঝের দুইশটা বছর এরকম নষ্ট না হত। উপনিবেশবাদের বাজে ইফেক্টতো আছেই, এবং সেটা কম গুরুত্বপূর্ণও না।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
দারুণ একটা গেমও হয় কিন্তু সজল ভাই। স্ট্র্যাটেজি গেম। ডেমোক্রেসি বলে একটা গেম খেলসিলাম যেখানে কয়েকটা কান্ট্রির প্রেসিডেন্টের অপশন দেয়া হয়। একেক দেশের একেক সমস্যা, কোনটা গরীব কোনটার প্রতিবেশী বদমাইস কোনটা ওভারপপুলেটেড কোনটা আন্ডার। ট্যাক্স বাড়ালে ইনকাম বাড়ে কিন্তু পাবলিক ক্ষেপে যায়, আর্মি ট্যাঙ্ক না কিনে দিলে রাগ করে আর কিনে দিলে পরিবেশবাদীরা হাউকাউ লাগায়। খুব ইন্টারেস্টিং। দিগন্তদার এই পোস্ট নিয়েও এরকম হিস্টরিক স্ট্র্যাটেজি গেম বানানো সম্ভব।
..................................................................
#Banshibir.
"ইতিহাস মিথ্যা বলে। ইতিহাস বইতে ইচ্ছামত লিখে পাবলিশ করে দেওয়া যায়। কিন্তু পরিসংখ্যান মিথ্যা বলে না।"
অমর্ত্য সেনও বলেছেন--- "The story of British rule in India is of more than historical interest."
"এমনকি অমর্ত্য সেনের লেখা পড়েও সেইরকম মনে হয়।" কথাটা একটু রিস্কি হয়ে গেল--
"Yet it is hard to doubt that India had fallen well behind the modernization that was occurring in Europe by the eighteenth century. In some insightful essays on India that Karl Marx published in the New York Daily Tribune in 1853, he discussed the constructive effects of British rule in India, on the ground that India needed some serious shaking in its stagnant pause at the time of the British conquest. Without disputing Marx's thesis about the need for substantial change in eighteenth-century India (a thesis that is, I think, basically correct), one could question his further assumption that the British conquest was the only window to the modern world that could have opened for India. What was needed at the time was more global involvement--but that is not the same thing as imperialism."
--Sen, Imperial Illusions.
-সাইফুজ জামান
গ্লোবাল ইনভলভমেন্টের দরকার ছিল ভারতের (কথা যেটাতে আন্ডারলাইন করা আছে) - সেটা সঠিক। কিন্তু ভারতের সমসাময়িক রাজা/নেতা/জনগণের মধ্যে আমি কারও মধ্যে গ্লোবাল ইনভলভমেন্টের কোনো প্রচেষ্টা পাই না। ব্রিটিশরা এসে আমাদের ভাল করে দিয়ে গেছে - এরকম কোনো তত্ত্বে আমি বিশ্বাসী না, সেই দিকে আমি অমর্ত্য সেনের সাথে একমত। কিন্তু অমর্ত্য সেন যেভাবে বলেছেন যে ব্রিটিশরা আসার আগেও ভারতীয়রা ভালই ছিল শুধু একটু "গ্লোবাল ইনভল্ভমেন্টের" আর "মডার্নাইজেশনের" দরকার ছিল - সেইটা আমার অতিরঞ্জন মনে হয়েছে। অমর্ত্য সেন আকবরের প্রশংসা করে গেছেন কিন্তু মহামতি আকবর যে বিজ্ঞানের পেছেন কিঞ্চিত কানাকড়িও ঢালেন নি, সেইটা উনি দেখছেন না। ওই সময়ে ইউরোপীয়দের সাথে আমাদের পার্থক্য এতটাই গভীর ও বিশাল ছিল যে কোনো অর্থেই তা পূরণ হবার ছিল না।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
মোঘল এবং অটোমান দের (কিছুটা হয়ত রোমান রাও) মধ্যে এই মিল টা আছে. এরা সবাই শাসন ব্যবস্থার দিক থেকে মোটামুটি উদার ছিল. সাধারণ মানুষের সাথে ক্ষেত্র বিশেষে ক্ষমতা ভাগাভাগি করেছে, বিজিত মানুষের হাতে কিছু ক্ষমতা দিসে. কিন্তু এরা কেউই জ্ঞান/বিজ্ঞানের প্রসারে কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে নাই. যদিও রোমান রা হয়ত কিছুটা এগিয়ে থাকবে অন্য দুইজনের চেয়ে.
সেই অর্থে ভারতে ইংরেজরাও বিজিতদের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করেছে। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে ইংরেজ বাহিনীতে ৮০% দেশী লোকেই ছিল, তাও সেটা সিপাহী বিদ্রোহ বলে। এর পরেও দেশে কেরাণী থেকে বিজ্ঞানী কিছু কিছু তৈরী হয়েছে ঔপনিবেশিক আমলে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
লেখাটা এবং আলোচনা খুবই উপভোগ করছি। ধন্যবাদ দিগন্তদা।
ধন্যবাদ। আশা করি পরেও আরও কিছু এরকম লেখা দিতে পারব।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
এইবারে আরেকটা দেশ দেখব যারা অনেকগুলো দেশকে উপনিবেশ বানিয়ে ফেলেছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও খুব কিছু লাভ করতে পারে নি। এইটা হল তুরস্ক। অটোমান আমলের উপনিবেশগুলো ছিল বটে কিন্তু মানব-সম্পদে কোনো বিনিয়োগ ছিল না। সুতরাং থিয়োরী মেনেই উপনিবেশ আর ঔপনিবেশিকের হালত এখন একই পর্যায়ে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
একটা দুর্ধর্ষ আলোচনা। পোস্ট এবং মন্তব্য.....
অনেক ধন্যবাদ।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
দুর্দান্ত- লেখা ও মন্তব্য...
পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ভিন্ন মাত্রার ও ধারার আলোচনার জন্য আপনার বা রূপম ভাইয়ের জুড়ি নেই। প্রচলিত ধারনাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করার মাধ্যমে এই লেখাটি অনেক চিন্তার খোরাক যুগিয়েছে।
আকবর আলী খানের 'পরার্থপরতার অর্থনীতি' বইতে 'সোনার বাংলা'র প্রচলিত মিথকে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। ওখানে দেখান হয়েছে, বাংলার অবস্থা কখনোই গোলা ভরা ধান বা গোয়াল ভরা গরু টাইপের ছিল না।
এখানে সামান্য দ্বিমত আছে, দিগন্ত ভাই। সময়ের উপযোগী বিনিয়োগ বলতে আসলে কি বোঝাচ্ছে? ইউরোপের জন্য যেটা সময়োপযোগী বিনিয়োগ, আমাদের জন্য তেমনটা হওয়া কি বাধ্যতামূলক? আর কৃষি প্রধান দেশের কৃষি-বিনিয়োগকে আপনার কাছে গুরুত্বহীন মনে হল কেন?
একমত। কিন্তু এই ব্যর্থতার পেছনে উপনিবেশবাদের কিছু দায় আছে বোধহয়। উপনিবেশবাদ যে বিভাজন রেখে গিয়েছিল, বা যে পেয়াদা টাইপের সরকারী কর্মচারী তৈরি করে গিয়েছিল, তাদেরও কিছু দায়ভার নিতে হবে বৈকি!
আমি এটা সর্বান্তকরণে মানি। আমরা সবসময় আমাদের নেতাদের দোষ দিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের নেতারা কি আমাদেরই প্রতিনিধিত্ব করছে না? একবার এ নিয়ে রূপম ভাইয়ের সাথে বিতর্ক হয়েছিল, কিন্তু তখন উনি মানতে চাননি।
- দেশের ৯০% মানুষ কৃষিজীবী হলে আপনার হাতে দুরকম বিনিয়োগের রাস্তা থাকে। এক, কৃষিতে আরো বিনিয়োগ করে ওই ৯০% কে খুশী রাখা ও তারা যেন কৃষিজীবী হিসাবে ভাল খেতে পরতে পায় সেই ব্যবস্থা করা। দুই, জোর করে ঠেলে তাদের শিল্পে পাঠানো। দ্বিতীয়টা করার খুব একটা চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে হয়না। হয়ে থাকলেও কিভাবে শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব তা নিয়ে খুব একটা সঠিক পথে কেউ এগিয়েছে বলে দেখছি না।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
নতুন মন্তব্য করুন