ঔপনিবেশিকতা নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে দেখলাম বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথের বই দ্য ওয়েলথ অব নেশনশে (১৭৭৬) ঔপনিবেশিকতা ও তার অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা আছে। অ্যাডাম স্মিথের লেখা বইটিকে আধুনিক অর্থনীতির জনক বলা যায়। বইতে কলো্নী সংক্রান্ত অর্থনীতি নিয়ে আলোচনার সময় মাথায় রাখা দরকার যে অ্যাডাম স্মিথ ঔপনিবেশিকতার তীব্র বিরোধী ছিলেন। কিন্তু তার বিরোধিতা মানবিকতা বা অধিকারের প্রশ্নে নয়, নিতান্তই অর্থনীতির প্রশ্নে। যদিও তার বইতে তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীকে বরাবর দায়ী করেছেন বাংলার দুরবস্থার জন্য, কিন্তু তার অর্থনীতির ফোকাস থেকে সরে যান নি। তিনি বইতে দেখানোর চেষ্টা করেছেন ঔপনিবেশিকের জন্যও কলোনী-ব্যবস্থা লাভজনক নয় ও দীর্ঘমেয়াদে যে দেশগুলো ঔপনিবেশিক হবে না, তারা অন্যেদের থেকে অর্থনৈতিকভাবে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে।
উপনিবেশের সাথে ইউরোপের ব্যবসা দু’ভাবে দেখছেন স্মিথ। প্রথমটা শুধুমাত্র ব্যবসার সম্পর্ক - যাতে ইউরোপীয়রা লাভ করছে। বর্তমান উপনিবেশেরা কেউই খুব একটা শিল্পোন্নত নয়, তাই সেই দেশগুলো থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করা ও শিল্পজাত পণ্য বিক্রি করার কাজটা ইউরোপীয়রা ভাল-ভাবেই করছে। এই ব্যবসায় লাভ এতটাই হচ্ছে যে তার ফলে মুদ্রার অপর পিঠ দেখা হচ্ছে না। মুদ্রার অপর পিঠ ক্ষতিকর - সেটা হল একচেটিয়া বাণিজ্য। একচেটিয়া বাণিজ্য ঔপনিবেশিকের জন্য ক্ষতিকর। কারণ কি?
স্মিথের মতে ঔপনিবেশিকেরা একে অপরের সাথে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই একচেটিয়া বাণিজ্যের সুবিধাটুকু হারিয়ে ফেলে। ইংল্যন্ডের পক্ষে তুলো আনা সহজ বলে ইংল্যান্ড টেক্সটাইলের ক্ষেত্রে বেশী দাম চাইতে যেমন পারে, তেমন ইন্দোনেশিয়ার মালিক ডাচেরা মশলার জন্য বেশী দাম চাইছে। উভয়ের কারও সকল সম্পত্তির ওপর যেহেতু অধিকার নেই, তাই স্থানীয় ভোগের ক্ষেত্রে ছাড়া ইউরোপে রপ্তানীর ক্ষেত্রে লাভ-লোকসান মোটের ওপর শূন্যে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এ তো গেল প্রথম সমস্যা। এর পরের সমস্যা হল শিফট অব ক্যাপিটাল বা মূলধনের সরণ। স্মিথের মতে মূলধনের স্বভাবই হল কম লাভজনক ব্যবসা থেকে সরে বেশী লাভজনক ব্যবসায় চলে যাওয়া। ঔপনিবেশিকের ঘরোয়া বাজারের মূলধন ইউরোপীয় বাণিজ্য থেকে সরে কলোনী বাণিজ্যে চলে যাবে - যা দীর্ঘমেয়াদে দেশকে ইউরোপীয় বাণিজ্যে দুর্বল করে দেবে। যদি ভবিষ্যতে কখনো কলোনী-বাণিজ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তাহলে ঔপনিবেশিকের অনেক পরিশ্রম করে গড়ে তোলা কলোনী বাণিজ্য থেকে মূলধন আবার সরিয়ে আনা শক্ত হবে। এই একচেটিয়া বাণিজ্য বিষয়ে স্মিথের একটা পর্যবেক্ষণ ও একটা ভবিষ্যতবাণীর উল্লেখ না করে পারছি না। স্মিথের মতে ইউরোপে নৌশক্তি ও ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে অগ্রণী ছিল স্পেন ও পর্তুগাল। সেইমত তারাই প্রথম কলোনী-বাণিজ্যে নামে। কিন্তু স্মিথের মতে, দক্ষিণ আমেরিকাকে কলোনী বানাবার পরে এই দুই দেশের বাণিজ্য এদের উপনিবেশের পথ ধরে মূলত কৃষিভিত্তিক হয়ে পড়ে। তাই ধীরে ধীরে তাদের ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প মার খাবে ও ফলশ্রুতিতে নৌশক্তিও দুর্বল হয়ে পড়বে। অন্যদিকে গরিব ডেনমার্ক (তৎকালীন ডেনমার্ক ও নরওয়ে) বা সুইডেন (বর্তমানের সুইডেন ও ফিনল্যান্ড) - যাদের অর্থনীতি বাকিদের তুলনায় দুর্বল বা জার্মানী - যার নৌশক্তি সীমিত - তারা তাদের মূলধনের সর্বোত্তম ব্যবহারে (ইউরোপমুখী বাণিজ্য) মনোযোগ দেবে ও কখনও কলোনী বাণিজ্য বিপন্ন হলে এরা ঔপনিবেশিকদের তুলনায় অনেক দ্রুত উন্নতি করবে।
আমি ১৮৭০ সালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মাথাপিছু গড় আয়ের সাথে বর্তমানের বিভিন্ন দেশের গড় আয়ের একটা তুলনা দিলাম। তালিকা (ব্র্যাকেটে র্যাঙ্ক) থেকে স্পষ্ট, স্পেন ও পর্তুগাল তাদের প্রাথমিক ঔপনিবেশিক সুবিধা হারিয়েছে সেই উনিশ শতকের গোড়ায় লাতিন আমেরিকার ওপর থেকে দখল উঠে যাওয়ায়। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও হল্যান্ড আছে মাঝে আর ওপরে আছে সুইডেন, নরওয়ে ও ডেনমার্ক - ঠিক যেমনটা বলেছিলেন স্মিথ। জার্মানীর ক্ষেত্রে বিষয়টা ততটা খাটে নি, হয়ত পূর্ব-জার্মানীর কারণে। ১৭৭৬ সালে বসে উপনিবেশ-উত্তর পৃথিবীর অর্থনীতি সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করার মত একটা শক্ত পরীক্ষায় স্মিথ উত্তীর্ণ। আগের লেখায় আমি দেখিয়েছিলাম উপনিবেশ-উত্তর যুগে উপনিবেশগুলোর তুলনায় ঔপনিবেশিকেরা অনেক দ্রুত উন্নতি করেছে। আসলে, যারা উপনিবেশ-ব্যবসায় নামে নি অথচ মুক্ত-বাণিজ্যে নাম লিখিয়েছে, তারা আরও তাড়াতাড়ি উন্নতি করেছে।
ব্রিটেন - ৩১৯০(১), ৩৭৭৮০(৭)
স্পেন - ১২০৭(৭), ৩০৯০০(৮)
পর্তুগাল - ৯৭৫(৯), ২১২৫০(৯)
ডেনমার্ক - ২০০৩(৩), ৬০৩৯০(২)
নরওয়ে - ১৩৬০(৬), ৮৮৮৯০(১)
সুইডেন - ১৬৬২(৫), ৫৩২৩০(৩)
নেদারল্যান্ডস - ২৭৫৭(২), ৪৯৭৩০(৪)
ফিনল্যান্ড - ১১৪০(৮), ৪৮৪২০(৫)
জার্মানী - ১৮৩৯(৪), ৪৩৯৮০(৬)
তবে এ সব সত্ত্বেও স্মিথ বলেছেন, একচেটিয়া বাণিজ্যের ফলে আপেক্ষিক ক্ষতির তুলনায় হয়ত বর্তমান কলোনী-বাণিজ্য বস্তুটা বেশী লাভজনক। কিন্তু আসল লোকসান অন্যখানে। এই একচেটিয়া বাণিজ্য চালিয়ে যেতে গেলে যে সামরিক শক্তিতে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হয় সেই খরচা একচেটিয়া বাণিজ্য থেকে আসা লাভের তুলনায় অনেক বেশী। ১৭৩৯ সালে শুরু হওয়া ইঙ্গ-স্প্যানিশ যুদ্ধের উদাহরণ টেনে বলেছেন - এটা যেন গুপ্তধনের সন্ধান পাওয়া দুইদল দস্যুর লড়াই। লড়াই শেষে উভয়েই ভাগ-বাঁটোয়ারায় সম্মত হল বটে - কিন্তু ততক্ষণে তাদের অনেক শক্তিক্ষয় হয়েই গেছে। মুক্ত-বাণিজ্যের পরিবর্তে একচেটিয়া বাণিজ্যে যে বাড়তি লাভ হচ্ছে তার থেকে অনেক বেশীই ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে সাম্রাজ্য বজায় রাখতে। এরপরে উপনিবেশগুলো চিরকাল ঔপনিবেশিক শাসন মেনে নেবে এমনটা ভাবারও কোনো কারণ নেই, তাদের স্বাধীনতা ঘোষণার সাথেই ঔপনিবেশিকদের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হবে। শুধু এখানেই শেষ না, এই বাড়তি সামরিক শক্তি ও সাম্রাজ্য বজায় রাখতে যে দক্ষ মানব-সম্পদ ব্যবহার হচ্ছে তারা অন্য কোনো অধিকতর উৎপাদনশীল খাতে (স্মিথের মতে ম্যানুফ্যাকচারিং) সময় বিনিয়োগ করতে পারত। সবশেষে, একচেটিয়া বাণিজ্য ও তার নিমিত্ত সামরিক শক্তি - এই দুই খাতে বেশী মনোযোগী হওয়ায় সরকারের পক্ষে নাগরিকদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দিকে নজর দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। লবি অব শপ-কিপার্স কার্যত সরকার চালাচ্ছে - দেশের অন্যান্য শ্রেণীর মানুষ সমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ঔপনিবেশিকতার ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরার পরেও স্মিথের ব্যাখ্যা থেমে থাকে নি। ইংল্যান্ড কি তাহলে উপনিবেশগুলোকে স্বাধীন করে দেবে? স্মিথ বলেছেন - ব্যাপারটা অত সহজ না। কার্যত এটাই আদর্শ হলেও ইতিহাসে কোনো দেশই স্বেচ্ছায় কোনো দেশই সূচ্যাগ্র মেদিনীও ছেড়ে দেয় নি, তার জন্য যত ক্ষতি বা কষ্টই স্বীকার করতে হোক না কেন। কারণ এই বিষয়টা দেশের গৌরবের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছে, আর সাধারণ মানুষ চাইলেও দেশের শাসক শ্রেণীর কাছে দেশের গৌরব বিষয়টার মূল্য অপরিসীম। আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধিতেও বুঝেছি যে সাম্রাজ্যবাদের মূলকথা আসলে এইখানেই। নিজের অধীনস্থ মানুষ বা অঞ্চলের পরিমাপের মাধ্যমে মানুষের শূন্য আত্মগৌরবের জন্ম, যা বিবর্তনীয় ইতিহাসের পথে অন্যান্য জীবের মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। এর সন্ধানেই সাম্রাজ্যবাদের পেছনে ছোটে দেশ, শাসক বা রাষ্ট্র - তাতে দেশের লাভ হতে পারে, লোকসানও হতে পারে।
মুক্তবাণিজ্যের সমর্থক স্মিথ এরপরে বর্ণনা দিয়েছেন কি ভাবে উপনিবেশের সাথে সুসম্পর্ক রেখে শুধু মুক্ত-বাণিজ্য চালানোই দেশের লক্ষ্য হওয়া উচিত। ট্যাক্স-অনুপাতে ভোটাধিকার দিয়ে একটা আন্তর্জাতিক পার্লামেন্ট তৈরীর প্রস্তাবও আছে। সবেমিলে, স্মিথের লেখায় আমি এমন অনেক সামগ্রী পেলাম যা ১৭৭৬ সালে লেখা কোনো বইতে পাব বলে ভেবে দেখিনি। আগ্রহী পাঠকেরা বইটার ফ্রি-পিডিএফ ভার্সান, সংক্ষেপিত যে কোনো ভার্সান বা ওই সংক্রান্ত আর্টিকেল পড়ে দেখতে পারেন। অর্থনীতি নিয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ থাকলে বলেই দিতে পারি - হতাশ হবেন না।
পড়ে দেখতে পারেন -
১) বইটার পিডিএফ
২) সাম্রাজ্যবাদ দিয়ে লেখার সংক্ষেপ।
৩) ইউরোপের কিছু দেশের মাথাপিছু আয়ের গুগল-চার্ট।
মন্তব্য
গুরুত্বপূর্ণ লেখা। অ্যাডাম স্মিথ সত্যিই বিস্ময়কর।
এখানে যেটা বুঝতে পারছি, ঔপনিবেশিক উপনিবেশ না করে শুধু মুক্ত বাণিজ্যে নাম লেখালে বেটার অফ থাকতো। আবার উপনিবেশের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কিন্তু পার্থক্য হলো এখানে চয়েজটা ঔপনিবেশিকের, উপনিবেশের নয়।
উপনিবেশ তৈরিতে শর্টটার্মে শাসক ও ধনিক শ্রেণীর একটা একতরফা লাভ আছে। সেটা (সিম্পলিফাইড ভার্শনে) অনেকটা এরকম যে - শাসক শ্রেণী নিজের দেশের জনগণের থেকে তার নানা চিরায়ত উপায়ে (রাজস্ব, টাকা ছাপানো, ইত্যাদি উপায়ে) টাকা লুটে নিলো। তারপর সেই টাকায় যুদ্ধে গেলো। উপনিবেশ দখল করলো। তার পোষা একচেটিয়া ব্যবসায়ীদের পাঠালো। তারপর সেই ব্যবসার লাভ শাসক ও ধনিক শ্রেণী উভয়ে ভোগ করলো। এতে স্ট্রিক্ট ক্ষতি তার নিজের দেশের জনগণ আর উপনিবেশের। লাভ ঔপনিবেশিক শাসক, ধনিক শ্রেণী ও তার উপনিবেশের দোসরদের। এখানেও অবশ্য আর্গু করা যায় যে লং টার্মে উপনিবেশ রক্ষা করতে গিয়ে তার ক্ষতিই বেশি হবে। কিন্তু কথা হচ্ছে সেই লং টার্ম কতো বড়? মোটের উপর লোলুপরা তো তাদের জীবদ্দশাতেই শর্টটার্ম লাভ কুড়িয়ে মরে যাচ্ছে। ফলে লং টার্ম ক্ষতি এড়ানোর তার ইন্সেন্টিভটা কোথায়? এটা নিয়ে একটু চিন্তা করতে পারেন।
বর্তমানে ভিন্ন শক্তির অর্থনীতির মাঝে মুক্ত বাণিজ্য মাত্রই যে নব্য-ঔপনিবেশিকতা খোঁজা হয়, সেটা নিয়ে আপনার মত কী?
যুদ্ধ যে অর্থনীতির জন্যে ক্ষতিকর সেটা একজন অ্যাভারেজ অর্থনীতিবিদ মাত্রেই বোঝেন বলে মনে করতাম। অ্যাডাম স্মিথ বুঝতেন। বাস্তিয়ে তো "যুদ্ধ অর্থনীতির জন্যে ভালো" এমন ভ্রান্ত ধ্যান ধারণার একটা নামও দিয়েছেন - "ব্রোকেন উয়িন্ডো ফ্যালাসি"। সে জায়গায় "লিবারেল", কেইনিজিয়ান অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান সম্পর্কে কী বলবেন, যে কিনা এখানে সেখানে বলে বেড়ান যে আমেরিকা আরেকটা যুদ্ধে গেলেই নাকি রিসেশান থেকে উঠে দাঁড়াবে? দুটো বিরাট যুদ্ধের পর রিসেশান খাওয়া ঔপনিবেশিকদের পক্ষে নোবেল দেওয়ার জন্যে এর চেয়ে উত্তম আর কে ছিলো?
আমি ওনার আর্গুমেন্টটা বিস্ময়ে দুই তিনবার পড়েছি। ১৭৭৬ সালে জন্মানো কেউ একজন এইভাবে লিখতে পারে আমার চিন্তায় আসেনি। স্মিথ গুরুদেব মানুষ।
জনগণের সচেতন হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমেরিকা ইরাকের যুদ্ধের কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে যা লোকসান করেছে ইরাকের তেলের প্রতি বিন্দু বেচেও তা শোধ করা সম্ভব না। ভারত তার সেনাবাহিনী কাশ্মীরে মোতায়েন রাখতে যা খরচা করেছে তা দিয়ে ভারতের দারিদ্র্য হেসেখেলে ১০-১৫% কমিয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু ওই যে - জনগণ সচেতন হতে শেখে নি এখনও।
- এইটা একটু ডিটেইলস টপিক। এটা নিয়ে আলাদা লিখব বরং। আসলে দুর্বল অর্থনীতির কাছে দুটো চয়েস থাকে - একটা শক্তি বাড়ানো অবধি বাণিজ্য না করা, আরেকটা বাণিজ্য করে উপনিবেশ-গোছের বনে যাওয়া ও দীর্ঘমেয়াদে দাবার চাল উল্টানোর আশা করা। দুটোরই কিছু কিছু সফল ও বিফল প্রয়োগ আছে।
"যুদ্ধ অর্থনীতির জন্যে ভালো" - এই ব্যাপারটা কোন কোন অর্থনীতিবিদ কোথায় কোথায় বলেছেন তার একটা লিস্টিং বানাচ্ছি, আপনি ক্রুগম্যানের রেফারেন্সটা দিন - তাতে যোগ করব।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
চমৎকার উদ্যোগ।
"Roundtable: Where are the Jobs?" (ভিডিও, ~৫:১০)
যেকোনো কেইনজিয়ান অর্থনীতিবিদকে ঝাড়া দিলে চান্স আছে তার পকেট থেকে এসব থিওরি বের হবে।
পল ক্রুগম্যানের থলিতেও আরো আছে। ৯/১১ অর্থনীতির জন্যে ভালো। জাপানের নিউক্লিয়ার ক্রাইসিস অর্থনীতির জন্যে ভালো। এলিয়েন আক্রমণের গুজব অর্থনীতির জন্যে ভালো।
৯/১১ এর লিংকটা আজকেই কেনো গায়েব হবার দরকার ছিলো বুঝলাম না। এই লেখায় উনি কী বলেছিলেন উদ্ধৃত করা আছে।
এবিসি নিউজের ভিডিওটাতে বলেছেন -
নিউক্লিয়ার ক্রাইসিস নিয়ে বলেছেন -
এলিয়েন আক্রমণের গুজব নিয়ে বলেছেন -
এখানে মূল সুর এরকম, সরকার যদি আজকে কিছু লোক জোগাড় করে একটা পার্কে খাল কেটে তারপর সেটা আবার ভরে দেয়, বা বুলডজার দিয়ে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর গুঁড়ো করে দিয়ে আবার বানায়, সেটা নাকি তা না করার চেয়ে অর্থনীতির জন্যে ভালো। সেই যুক্তিতে যুদ্ধও অর্থনীতির জন্যে ভালো। উপনিবেশেও খালি লাভই লাভই। অ্যাডাম স্মিথ আর বাস্তিয়েকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে।
এইগুলো পুরোই আমার ধারণার বিপরীতে। ৯/১১, ভিনগ্রহীদের আক্রমণ বা নিউক্লিয়ার ক্রাইসিসে অর্থনীতি স্বল্পমেয়াদে চাঙ্গা হবে বটে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে রিসোর্স বেশী টেনে নেবে কিছু সেক্টর (ডিফেন্স বিশেষত) যাদের সাথে মানব-সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের বিশেষ সম্পর্ক নেই। এইটা অনেকটা ঋণের শর্ত শিথিল করে হাউসিং বাবল বানানোর মতই হবে, বাবল যখন ফাটবে সবাই মিলে ডুববে।
গুজবের পরে ভিনগ্রহীরা আদৌ দেখা না দিলে একটা সময় র-এডজাস্টমেন্ট হয়ে সেই গ্রোথ দূরে পালাবে। দেখা দিলে তাদের সাথে মোকাবিলায় অতিরিক্ত শক্তিক্ষয় হবে। দুইদিকেই লোকসান।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
- ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ভারত?
- ১৯৭৫ সাল পরবর্তী বাংলাদেশ?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
প্রথমটা সত্যি। দ্বিতীয়টা সম্পর্কে আমার ধারণা কম। তবে প্রথমটার উদাহরণ একা ভারতের দিলে আপনি একতরফা একটা চিত্র পাবেন। আপনাকে জাপানের টয়োটা বা কোরিয়ার উদাহরণও আনতে হবে। আমি একটা লেখা শুরু করেছিলাম এখানে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আপনি দেখে নিতে পারেন, আগাগোড়া ১৭৫০ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত ব্রিটিশদের মাথাপিছু আয় কখনই পশ্চিম ইউরোপের গড়ের তুলনায় কিছু মাত্রাতিরিক্ত ওপরে ওঠে নি। শুধু তাই না, আধা পৃথিবীর মালিক হয়ে ব্রিটিশ অর্থনীতি যে জায়গায়, তার অনেক কম অঞ্চলের দখল নিয়ে ডাচ অর্থনীতি তার থেকে অনেক ভাল জায়গায় আছে, আর কোনো কলোনী না বানিয়েও ইউরোপের যথেষ্ট সংখ্যক দেশ ভালই করেছে। সুতরাং লং টার্মে না, উপনিবেশ রক্ষা করার খরচা সদা-বিদ্যমান। কিন্তু ওই যে স্মিথ বলেছেন, দখল করা জায়গা কেউ ছেড়ে দেয় না
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
এডামস্মিথের কোটেশন মুখস্ত করতে হত বলে অনেক রাগ লাগত এই লোকটার উপর। তবে লেখার বিষয়বস্তু ইন্টারেস্টিং লাগলো।
ক্যাপিটালিজমের আধুনিক চেহারাটা দেখতে চাইলে ম্যানুয়াল কাস্ল এর দা রাইজ অফ দা নেটওয়ার্ক সোসাইটি অথবা ডেভিড হার্ভের দা কন্ডিশন অফ পোস্টমডার্নিটি বইদুটো পড়ে দেখতে পারেন। আমার দারুন লেগেছে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
নির্দ্বিধায় পাঁচ তারা।
-এই পোস্টে এটা নিয়ে আলাপ করতে চাই না। বরং আপনার এই উপলদ্ধি নিয়ে আরেকটু বিস্তারিতভাবে ভিন্ন পোস্ট লিখুন - সেখানে এটা নিয়ে আলাপ করবো।
অন্য বিষয়ে পরে বলছি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এইটা ছিল অ্যাডাম স্মিথের কোট -
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ভাল্লাগলো পোস্টটা, অ্যাডাম স্মিথ পড়েছিলাম বহু আগে, আপনার ব্যাখ্যা চমৎকার লাগলো।
পোস্ট টা পড়ে ভালো লাগলো। অ্যাডা স্মিথ এত আগে শুধু অর্থনীতির জায়গা থেকে উপনিবেশবাদের বিরোধীতা করেছেন। কৌতুহল জাগলো।
স্বয়ম
ঠিক এই ব্যাপারটা আমাকেও খুব অবাক করেছে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ডেভিড গ্রেবারের 'ডেট' পড়া শুরু করেছি, ইনি দেখলাম অ্যাডাম স্মিথকে মোটামুটি তুলা ধুনলেন। "বার্টার-ভিত্তিক কাল্পনিক সমাজ"-এর অবতারণা করে টাকার উদ্ভব ব্যাখ্যা এবং টাকাব্যবস্থায় রাষ্ট্র বা সরকারের ভূমিকাকে আড়াল করা নিয়ে একেবারে সেরকম ধোলাই। খুবই আগ্রহোদ্দীপক বই, সময় পেলে পড়ে দেখবেন।
নতুন মন্তব্য করুন