সম্প্রতি একটা লেখায় সঞ্জীব বড়ুয়ার সাক্ষাতকার পড়লাম, তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিচ্ছিন্নতাবাদ-বিরোধী হিসাবে আমার কিছু বক্তব্য রাখলাম
উত্তর পূর্বে যদি একটা দেশ বানাতে হয় তাহলে সেটা হবে আবার আরেকটা রাষ্ট্রভিত্তিক জাতি। কারণ, ওই অঞ্চলে অসংখ্য ভাষা আর উপজাতি আছে। কুইবেক বা বাস্কের সাথে এটা তুলনীয় নয় - কারণ তাতে একটা নির্দিষ্ট অংশের জনগণ নির্দিষ্ট পরিচিতির ভিত্তিতে আলাদা হতে চান।
দুটো উদাহরণ দেওয়া যাক। প্রথম উদাহরণ - আসাম। আসামে অহমিয়া সম্প্রদায় উলফাকে সমর্থন করেছিল, কিন্তু ২o% বাঙালী বা পশ্চিমের ১০% বড়ো উপজাতিরা সমর্থন করেনি। উলটে বড়োরা আরো একটা পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। সেই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের আলাদা স্বশাসিত অঞ্চল দেওয়াও হয়। যদি জাতি-রাষ্ট্র হত, তাহলে বড়োদের আলাদা দেশ দিতে হত, যেটা ওই সংক্ষিপ্ত অঞ্চলে তাদের সমস্যা ছাড়া সমাধান কিছু দিত না।
দ্বিতীয় উদাহরণ, নাগাল্যান্ড। নাগাল্যান্ডে নাগারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কম কিছু নয়। যেমন ধরা যাক কুকি দের কথা, তারা নাগাল্যান্ডের আদি বাসিন্দা। এবার যদি নাগা-পরিচালিত স্বাধীন নাগাল্যান্ড গঠিত হয় তাহলে তারা কোথায় যাবে? এখন যেমন নাগাল্যান্ডের রেডিও থেকে ২৫টি (ভেবে দেখুন) ভাষায় সম্প্রচার করা হয় (উপজাতি ১৫টির আলাদা ভাষা আর সাথে আশেপাশের রাজ্যের ভাষায় সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান), সত্যিকারের জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করতে হলে তাদের সবাইকে আলাদা রাষ্ট্র দিতে হবে, তাই না? এবার দেখুন নাগাল্যান্ড কতটা জায়গা নিয়ে গঠিত। সেখানে কি ৩-৪টি আলাদা রাষ্ট্রও গঠন করা সম্ভব? না কুকিরা ভুলে যেতে পারবে নাগারা কিভাবে তাদের একের পর এক গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে? আর একসাথে নাগা-পরিচালিত দেশে থাকতে পারবে?
উত্তর-পূর্বে যদি সব রাজ্যের মূল ট্রাইব-গুলোর সাথে কথা বলা যায় তাহলে দেখবেন তাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার ভাব আছে। যদি এক লেভেল আগে গিয়ে মাইনরিটিদের সাথে কথা বলেন, তাহলে বুঝবেন তারা এই আলাদা জাতি-রাষ্ট্রকে কতটা ভয় পায়। এত সংক্ষিপ্ত অঞ্চলে যদি এত অসংখ্য ভাষাভাষি মানুষ আর এত উপজাতি থাকে তাদের এই সমস্যা স্বাভাবিক। ভারতের রাজ্যভিত্তিক শাসনব্যাবস্থার কারণে অসুবিধা কিছুটা প্রশমিত হলেও মোটের ওপর সত্যিকারের জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করা উত্তর-পূর্বে সম্ভব নয়। আমরা সবাইকে দেখতে একইরকম বলে বাইরে থেকে মনে করে থাকি তারা যেন একই জাতি-গোষ্ঠীভুক্ত। যে যুক্তিতে ভারতীয় মূল ভুখন্ডের বাসিন্দা হিসাবে আমি মেজরিটি আর উত্তর-পূর্ব মাইনরিটি, সেই একই যুক্তিতে উত্তর-পূর্বে প্রতিটি রাজ্যেও তো মেজরিটি আর মাইনরিটি আলাদা আছে, সেখানেও একই সমস্যা নতুন আকারে জেগে উঠবে।
আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হল সেনা মোতায়েন। ভারতের সব বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের একটা নির্দিষ্ট সিকোয়েন্স আছে। প্রথমে, বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাতে সরকার রাজি হয় না। তখন শুরু হয় সশস্ত্র সংগ্রাম – শুরু হয় অপহরণ, ভয় দেখানো। তখন পাঠানো হয় সেনা। বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সংখ্যালঘুদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে – যার ফলে আন্দোলন বিচ্ছিন্নতাবাদী থেকে সাম্প্রদায়িক রূপ নেয়। সেনা অত্যাচার শুরু করে – শুরু হয় লক-আপে মৃত্যু, গ্রাম থেকে পুরুষদের ধরে নিয়ে যাওয়া। আর সেনা অত্যাচারের মাধ্যমে ব্যাপারটা পাকাপাকিভাবে সমাজে গেঁথে যায়। উদাহরণ, সম্পূর্ণ উত্তর-পূর্ব ভারত ও কাশ্মীর। সেনা মোতায়েন করলে তার উপজাত হিসাবে আসে অত্যাচার, আর না করলে ওই অংশের মাইনরিটি আর অন্য রাজ্য থেকে আগতদের দুর্গতি। দুটোর মধ্যে কোনটা ভালো সেটা আমি অন্তত জানি না। তবে সেনা অত্যাচার আমি কোনোভাবেই সমর্থন করি না, কারণ আমরা আজকে ভারতের অধিবাসী কোনো এক সময়ে এরকমই সেনা অত্যাচারের কারণেই যা পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমনে পশ্চিম-পাকিস্তান চালিয়েছিল। আমার মতে, সেনাদের এ বিষয়ে আরো সচেতন করে তুলতে হবে। হয়ত বলা সহজ, কিন্তু সত্যিকারে কিছু নিরীহ মানুষের মাঝে বন্দুকধারীকে ছেড়ে দিলে তার মানসিকতা আর সংযমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া খুবই শক্ত – শত হোক, সেও মানুষ, মেশিন নয়। বাস্তবে তার কাছ থেকেও সবসময় ‘আদর্শ ব্যবহার’ পাওয়া সম্ভব নয়।
এবার আসা যাক অর্থনৈতিক সমস্যার গভীরে। ভেবে দেখুন ভারতে কাশ্মীর বা উত্তর-পূর্বে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন আছে, কিন্তু তামিলনাডু বা কেরলে নেই। এর মানে কি এই যে এই রাজ্যগুলো দিল্লী-কর্তৃক আনন্দের সাথে শাসিত হয় বা এদের কালচার দিল্লীর কালচারের সাথে খুব মেলে? তা নয়। এদের অর্থনৈতিক ব্যাপারটাকে এরা গুরুত্ব দেয় খুব বেশী। তাই এরা একসাথে দিব্যি আছে। এদের আঞ্চলিক পার্টি আছে, তারাই পর্যায়ক্রমে রাজ্য শাসন করে। দিল্লীর সাথে এদের সম্পর্ক আসে শুধু আক্ষরিক অর্থে দেশের বাইরে গেলে। লেখক বলেছেন পঞ্জাবের বিচ্ছিন্নতাবাদের উদাহরণ। পঞ্জাবের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে। এই আন্দোলন এখন শেষ, কারণ অর্থনৈতিক। পাঞ্জাবীরা বুঝেছে দীর্ঘদিন লড়াই চালালে তাদের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়বে। তাছাড়া, বিভিন্ন শহরে যে শিখেরা থাকে তারা ক্ষতগ্রস্ত হয়েছিল এই আন্দোলনে, যেমন কোলকাতায় শিখ-অধ্যুষিত অঞ্চলের দোকান থেকে লোকে জিনিস কিনতে যেতে ভয় পেত। আর এই আন্দোলনের কারণে আর্মিতে শিখ বা পাঞ্জাবীদের সংখ্যা কমেনি, এখনো সেনাবাহিনীর ১০% শিখ। তারা সব গুরুত্বপূর্ণ পদে আছে ও দেশকে যথেষ্ট ভালবাসে। বাস্তবে ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন মনমোহন সিং, যিনি শিখ ও পাঞ্জাবী। বাস্তবসম্মত চিন্তাই শিখ আন্দোলন শেষ হওয়ার কারণ।
অর্থনৈতিক কারণ একটা বড় কারণ। ভারত মূলত গরীব দেশ, কিন্তু গরীবদের দেশ নয়। শাসনক্ষমতা সবই প্রধানত ধনীদের কুক্ষিগত। আস্তে আস্তে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে বটে, কিন্তু এখনো অনেক দিন লাগবে গরীবের শাসন কায়েম হতে। কিন্তু উত্তর-পূর্বের মানুষের অবস্থার খুব-একটা পরিবর্তন ঘটে নি এতবছরেও। তারা চোখের সামনে দেখছে পাশাপাশি রাজ্য-গুলো উন্নতি করে চলেছে, তারা পারছেনা। একটা কারণ যোগাযোগ-ব্যবস্থার অভাব (কাশ্মীরেও তাই)। অন্যটা গুরুত্বপূর্ণ – লোকসভায় জনপ্রতিনিধির সংখ্যা কম (উত্তর-পূর্বের প্রতিনিধি ২৫ জন, লোকসভার ৫৪২ জনের মধ্যে)। তাই এদের হয়ে লবি করার কেউ নেই। আমার মনে হয় এই ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিয়ে ভেবে অঞ্চলের সিট বাড়ানো উচিত। সেক্ষেত্রে আবার ভারতের ‘লোক-অনুপাতে সিটের’ কন্সেপ্ট ভাঙতে হয়, সেটা তখন সব রাজ্যই দাবী করে বসবে।
তৃতীয় বিশ্বে আরেকটা দেশ এরকম জাতি-ভিত্তিক রাষ্ট্র বনাম রাষ্ট্রভিত্তিক জাতির সমস্যায় ভুগছে – সেটা আরো একটা একইরকম ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন অনে জাতি অধ্যুষিত রাষ্ট্র – ইন্দোনেশিয়া। তাদের অনেক দ্বীপেই নিজস্ব স্বাধীনতা আন্দোলন চলে, যেমন্ সুমাত্রার উত্তরে আকে রাজ্যে, বা সুলেওয়েসিতে চলে আলাদা হবার আন্দোলন। চলত তিমুর দ্বীপে। কেন? একই কারণ – ভারতের মতই।
এবার দেখি উন্নত বিশ্বে। এক-জাতি এক-রাষ্ট্র এই কন্সেপ্ট টা পৃথিবীতে আমদানি করে ইউরোপিয়ানরা। তার আগে ‘জোর-যার-মুলুক-তার’ গোছের দেশ চলত। ইউরোপে বহুজাতিক রাষ্ট্রের ধারণা চলেনি, এই সেদিনও চেক আর শ্লোভাকেরা আলাদা হয়ে গেল। কিন্তু অপরদিকে, একটা শক্তিশালী ইউরোপিয়ান ইউনিয়ানের ধারণাও কিন্তু ইউরোপিয়দেরই। যদিও তা এখনো সদ্যোজাত, কিন্তু তাও ইউরোপ ওই পথেই হাঁটছে – এক ইউরোপিয় পার্লামেন্ট, এক সংবিধান, এক কারেন্সী আর এক পাসপোর্ট। তার সাথে সাথে দেশে নিজস্ব ধারণাকেও সমর্থন জানানো হবে, সংস্কৃতি আলাদা বলেই যে তারা একসাথে থাকবে না, রাষ্ট্রের বেড়া রিজিড হতেই হবে সেটার তো কোনো মানে নেই। পৃথিবী এখন দেশের বেড়াজাল ভেদ করে মানুষে মানুষে সম্পর্ক গঠনে উদ্যোগ নিচ্ছে। ইন্টারনেটে বসে যে আমি এই লেখার মাধ্যমে আপনাদের মতামত জানাচ্ছি – ট্রান্সলেশন টুল দিয়ে চিনা ভাষার সাইট দেখে নিচ্ছি, সবই কিন্তু আস্তে আস্তে মানুষে মানুষে দূরত্ব কমিয়ে দেয়। আবার অপরদিকে ভেবে দেখুন, এই দূরত্ব কমাবার প্রয়াস শুরু করার জন্যও ন্যূনতম অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আর শিক্ষা লাগে, ইস্যুটা আবার ঘুরেফিরে অর্থনীতিতে আর বেসিক এডুকেশনে এসে পড়ে।
রিজিডিটির কথা এলে আমার মিজোরামের কথা মনে পড়ে। মিজোরামের মিজোদের অনেকদিনের আন্দোলন যে তাদের সাথে বর্মার মিজোদের সম্পর্ক রক্ষার জন্য সরকারি সমর্থন চাই। ইতিহাস বলে মিজোরা বর্মা ও ভারতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত। ইংরেজরা কিছুটা অংশ ভারতে আর বাকিটা বর্মাকে দিয়ে যায়। তাতে কি মানুষ কি আর থেমে থাকে? আত্মীয়-স্বজন দুটো আলাদা দেশে ভাগ হয়ে গেলে কে শান্তিতে থাকতে পারে। তার ওপর যোগ হয় বি-এস-এফের উৎপাত, ওপারে যাওয়া যাবে না। ফলশ্রুতি – আন্দোলন, প্রথমে শান্তিপূর্ণ, পরে সশস্ত্র। সমাধান কি? (আমি সমাধান শোনার পরে অবাক হয়ে গেছিলাম) খুবই সহজ। ৮০ কিমি একটা অঞ্চল দেওয়া হয়েছে যেখান দিয়ে মিজোরা দুদেশের মধ্যে যাতায়াত করতে পারবে। তাতেই মিজোরা খুশী। মূল আন্দোলন তাই আজ আর নেই, মিজোরামে এখন দিব্যি ঘুরে-বেড়িয়ে আসা যায়। মিজোরামকে এখন ভারতের ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার’ দ্বার হিসাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। কি সহজ সমাধান – কিন্তু এর জন্য কেন সশশ্ত্র আন্দোলন করতে হল?
গত, তিন চার বছর আমি বিভিন্ন মাধ্যমে সব বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি, সরকার আর সেনাবাহিনীর বক্তব্য পড়েছি। ফলাফলে, আমি আমি সমাধান খুঁজে পাইনি খুব একটা। তবে অর্থনৈতিক ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত, আর লেখকের সাথে ভিন্নমত। আর এও বলতে পারি, যে শিক্ষা আর অর্থনীতির সাথে এই সমস্যাও আস্তে আস্তে দূর হবে। কুইবেকে জনগণ তো ভোট দিয়ে কানাডায় অন্তর্ভুক্তির স্বীকৃতি দিয়েছে। এখন, সত্যি কথা বলতে আমি রাষ্ট্র ব্যাপারটাকেই সমর্থন করতে পারি না। ধর্ম আর ভাষার মত মানুষের ওপর আবার এও এক 'পরিচয়' চাপিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা। মানুষই আসল, রাষ্ট্র, ধর্ম আর ভাষা সবই ভুল, আরোপিত। রাষ্ট্রনীতি গঠনের সময় সেই ব্যাপারটাতে গুরুত্ব দিলে আমার মনে হয় না সমস্যার কিছু আছে। আমি আশা করব ভবিষ্যতে ভারত-সরকার নীতি নির্ধারণের সময় ‘মেজরিটি’ আর ‘মাইনরিটি’র কথা বা ভেবে শুধু মানুষের কথা ভেবেই চিন্তা-ভাবনা চালাবে।
মন্তব্য
মহাত্মা গান্ধির আমলে বলে তো কিছু হয়না। স্বাধীন ভারতে উনি বেঁচেছিলেন মাত্র কয়েক মাস, তাও সংবিধান রচনার আগে। তাও ভুটানকে ভারত স্বাধীনতা দিয়েছে গান্ধীর মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে। গান্ধীর এরকম মতামত থাকলে মনে হয় উত্তর-পূর্বেও স্বাধীনতা দেওয়া হত। কিন্তু প্রশ্ন একই, কাকে দেওয়া হবে? প্রতিটি উপজাতিকে না সামগ্রিক? সামগ্রিক হলে তো একই ব্যাপার হয়ে গেল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আমার ধারণামতে সিকিমে কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবলেম নেই। আপনি কি জানাতে পারেন সিকিমের সমস্যা সম্পর্কে কোথায় ও কিভাবে শুনেছেন? আমার বন্ধুরা মাঝে মাঝেই বেড়াতে যায় সিকিমে, এই মুহূর্তে বন্যা বা ধ্বসের ভয়ে কেউ যাচ্ছেনা।
এমনিতে বিদেশীদের মনে হয় সিকিমে প্রবেশাধিকার সীমিত। তাই গেলে জেনে যাবেন ঠিকঠাক।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
নাগাল্যান্ডের ব্যাপারটা হয়ত ঠিক, কিন্তু দেশ হিসাবে তারা কি সত্যি দাঁড়াতে পারত? আর কুকিরা কি দলে দলে ভারতে (আসামে) চলে আসত না?
সিকিম নিয়ে নিশ্চয় পোস্ট দেব।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
কি ব্যাপার জানেনত, সব সমস্যার মূলে আছে ব্রিটিশদের একটি পলিসি। রাজাদের সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছিল কোন দেশে যুক্ত হবে বা স্বাধীন থাকবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে। অনেকক্ষেত্রেই রাজারা প্রজাদের কোনো মতামত ছাড়াই ইচ্ছামত দেশে যুক্ত হয়েছেন। সমস্যা মনিপুরে, কাশ্মীরে বা বালুচিস্তানে এই একটিই। কিন্তু স্বাধীন থাকলে আরো ভাল থাকত কিনা সে বিষয়ে আমার খুবই সন্দেহ আছে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
অহমিয়ারা কিন্তু 'উপজাতি' নয়, ভাষাগত সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বা। তারা কোনো সম্প্রদায়ও নয়। আর একটি ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা স্বাধীনতার সংগ্রাম (আমি একে কোনোভাবেই 'বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন' বলতে রাজী নই। উলফার সামরিক শাখা প্রধান অনুপ চেটিয়া, ওরফে গোলপ বড়ুয়া বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেফতার হওয়ার পর আদালতে যে জবানবন্দী দিয়েছেন, তাতে তিনি উলফার সশস্ত্র সংগ্রামকে স্বাধীনতার আন্দোলন হিসেবেই উল্লেখ করেছেন।...আপনি নিশ্চয়ই জানেন, তবু মনে করিয়ে দিচ্ছি, ১৯৭১ সালেও পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, তথা মুক্তি বাহিনীর সংগ্রামকে 'বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন' বলে প্রচার করতো। তাই 'বিচ্ছিন্তবাদী আন্দোলন'একটি নেতিবাচক টার্ম; এর মাধ্যমে শাসকগোষ্ঠির দৃষ্টিভঙ্গীরও প্রকাশ পায়।) করে আলাদা দেশ হিসেবে টিকে থাকে কি থাকবে না, তা বোধহয়, তাদেরকেই নির্ধারণ করতে দেওয়া উচিত। আমরা যা করতে পারি, তা হচ্ছে, রাজনৈতিক পূর্বাভাষ মাত্র।
-বিপ্লব রহমান।
এইখানেই আমার আপত্তি। অহমিয়ারা উপজাতি যদি নাও হয়, একই ভৌগোলিক অবস্থানে আরো অনেক উপজাতি আছে। তাদের মতামত নিয়ে পৃথক দেশ গঠন কি সংখ্যাগুরুর মত সংখ্যালঘুর ওপর চাপিয়ে দেওয়া নয়? যেটা বৃহৎ আকারে ভারতে দেখতে পাচ্ছেন, সেটাই তো তখন ক্ষুদ্র আকারে আসামে দেখা যাবে। আরো স্পষ্টভাবে বললে অসমিয়ারা ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা হলেও তারা ভৌগোলিক ভাবে বিচ্ছিন্ন নয়। তাই একমাত্র সব উপজাতির মতে মিললে তবেই সেই জায়গাকে স্বতন্ত্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া যায়। বড়ো আর বাঙালীদের অসমিয়াদের সাথে পাশাপাশি থাকতে হয়, একসাথেই। তাদের মতামত একইরকম গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়না সবাই (অসমিয়া, বড়ো আর বাঙালীদের) একমত এ বিষয়ে - আমি সেটা আমার লেখায় লিখেছি। তাই স্বতন্ত্র দেশগঠন কোনো সমাধান হবে না।
বাংলাদেশের সাথে আসামের তুলনা করা যায় না কারণ বাংলাদেশ জাতি ও ভৌগোলিক ভাবে বিচ্ছিন্ন ছিল। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত ব্যক্তি (মুজিবুর রহমান) সেই আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন - ধাপে ধাপে দাবি পেশ করেছিলেন। আসামে সে নিদর্শন কোথায়?
বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন আর স্বাধীনতাকামী আন্দোলন সম্পর্কে আমি আপনার সাথে একমত। আমার কোনো আপত্তি নেই স্বাধীনতাকামী আন্দোলন বলতে। ঘটনা বা যুক্তি অবশ্য একই থাকে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আসামে উপজাতিদের বিন্যাস দেখুন এখানে।
আর সেন্সাস দেখুন এখানে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
বেশ জমে উঠেছে আলোচনা।
দিগন্ত, আপনি আসামে স্বাধীনতাকামী (আপনার প্রকাশে বিচ্ছিন্নতাবাদী) সশস্ত্র সংগ্রামীদের দাবীগুলোর প্রতি কিছু ঘনীভূত আলোকপাত করতে পারেন কি? তারা কী চাইছে? কীসের প্রেক্ষিতে তারা স্বাধীন বা বিচ্ছিন্ন হতে চাইছে?
পাকিস্তান আমলে (১৯৪৭-১৯৭১) তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যেমন বাঙালিদের ছয় দফা ছিলো মূলত অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধাচরণ। অর্থনৈতিক শোষণের পাশাপাশি ছিলো আহত সাংস্কৃতিক চেতনা। বাঙালিদের প্রতি কেন্দ্রের উদ্ধত ঔপনিবেশিক কর্তৃত্বের প্রতিবাদ দিয়েই ধাপে ধাপে স্বায়ত্ত্বশাসন ও পরে স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন শুরু হয়।
আসামের স্বাধীনতাকামীদের আন্দোলনের পেছনে এই কারণগুলি কী কী? আসাম কি অর্থনৈতিকভাবে শোষিত? তাদের সাংস্কৃতিক চর্চার ওপরে কি কেন্দ্র কোনভাবে বিরূপ কর্তৃত্বারোপ করেছে? মূল ভারতীয় অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রেক্ষিতে কি একজন অহমিয়া বিচ্ছিন্নবোধ করেন? আপনার অহমিয়া বন্ধুরা কিভাবে দেখেন এই আন্দোলনকে?
এ নিয়ে আলোচনা আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক।
হাঁটুপানির জলদস্যু
আসামে আন্দোলনের মূল কারণ হল সত্তরের দশকে আগত বাংলাদেশী আভিবাসীরা। এর ফলে দক্ষিণ আসামে অহমিয়ারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে। এটা সাংস্কৃতিক কারণ বলে যায়, আসামের সংস্কৃতি বিপন্ন - এরকম চিন্তা। এই লেখা আপনি পেয়ে যাবেন সঞ্জীব বড়ুয়ার লেখায়। এটা তখন ছিল বাঙ্গাল খেদাও আন্দোলন, সরকার বাধা দিলে এই আন্দোলনই রূপ নেয় উলফার। তার আগেও, অসমিয়ারা বাঙ্গালীদের সাথে সরকারী চাকরীর জন্য প্রতিযোগিতায় পেরে উঠত না, ফলে অধিকাংশ উচ্চপদ বাংগালীদের দখলে চলে যেত। বাংগালীদের সংখ্যাবৃদ্ধি তারা ভাল চোখে দেখেনি। পরে, আসাম আগে অনেক বড় রাজ্য ছিল, সেটাকে ভেঙ্গে বড়োল্যান্ড (স্বশাসিত অঞ্চল) বা মিজোরামের মত অঞ্চল আলাদা করে দেওয়া হল। তার ফলে আসামের অঞ্চলসীমানা কমে গেল - আহমিয়াদের ক্ষমতাও।
আসাম সম্পর্কে একটি অতিরিক্ত তথ্য হল প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আসাম থেকে গত চার বার নির্বাচিত হন। তিনি আসামে খুবই জনপ্রিয়।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
দুঃখিত,দিগন্তের এ পোষ্ট আমার কাছে সরকারী প্রেসনোটের মতো মনে হচ্ছে যেখানে যুক্তি দিয়ে বোঝানো হচ্ছে কেনো তারা স্বাধীন হবার যোগ্য নয় ।
সমস্যা হলো,শাসকেরা সবসময়ই এরকম যুক্তি দিয়ে প্রমান করে গেছে । বৃটিশ দুশো বছর যুক্তি দিয়েছে কেনো ভারতীয়রা স্বাধীনতার যোগ্য নয় ।পাকিস্তানী যুক্তি দিয়েছে কেনো বাংলাদেশ আলাদা রাষ্ট্র হতে পারেনা । নাটের গুরু কিসিঞ্জার তো তার তলাবিহীন ঝুড়ি তথ্য দিয়ে ঘোষনাই দিয়েছিলেন এ রাষ্ট্র টিকবেনা । টিকে গেলো এবং টিকে আছে কিন্তু ।
'স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে এরা টিকতে পারবেনা সুতরাং এদের ভারতের অংশ হিসাবেই থাকা উচিত' এটা ভাবছেন মেইনল্যান্ড ভারতীয়্রা । কিন্তু যাদেরকে নিয়ে ভাবনা, যারা বিষয়ের কেন্দ্রে তারা কি ভাবছেন?
আমার এ বিষয়ক পোষ্টে অলৌকিক হাসান মন্তব্য করেছিলেন যে, নাগারা নিজেদের ইন্ডিয়ান না বলে নাগা পরিচয় দিয়ে থাকে। দিগন্ত পালটা যুক্তি দিয়েছেন যে এটা হয়তো কারো ব্যক্তিগত অভিমত ।
আমি সবিনয়ে বলতে চাই, এটা কারো ব্যক্তিগত নয় সামগ্রিক ভাবেই উত্তরপুর্বাঞ্চলের মনোভাবই এরকম । দিগন্ত এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে ভালো পড়াশোনা করেছেন,সর্বোপরি এ তার নিজের দেশের বিষয় । আমার চেয়ে ভালো জানার কথা ।
তবে প্রশ্ন উত্থিত হয় তার জানায় বাস্তবতা থেকে তত্বের ভার বেশী বলেই । দিগন্ত নিজে গিয়েছেন কখনো ঐ রাজ্যগুলোতে?
আবারো সবিনয়ে বলি, আমার শিক্ষাজীবনের দু বছর শিলংয়ে কেটেছে । আরেকটু এগিয়ে বলি, সেভেন সিস্টার্সের সাতটি রাজ্যেই যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমার ।
'ভারতীয়'পরিচয় খুবই অজনপ্রিয় ঐ মেঘপাহাড়ী রাজ্যগুলোতে । শিলং,ইটানগর,ইম্ফল,আইজলে গেলে মনে হবেনা আপনি ভারতের কোনো অংশে আছেন । পোষাক আশাকে,চালচলনে,চেহারাছবিতে তারা একেবারেই ভিন্ন । খুব বাধ্য না হলে কেউ হিন্দী বলেনা । সবচেয়ে বড় কথা স্পষ্টভাবেই ঐ সব অঞ্চলের তরুন তরুনীরা নিজেদের ভারতীয় পরিচয় অস্বীকার করে । হিন্দী কিংবা বাংলাভাষী ভারতীয় মাত্রই এদের চোখে শোষক শ্রেনীর ।
আরেকটা তথ্য দিগন্তকে জানাতে চাইঃ- সারা ভারত যখন স্বাধীনতা দিবস পালন করে, ঐ রাজ্যগুলোতে তখন 'বন্ধ' পালিত হয় । বহু বছর থেকেই একমাত্র সেনাছাউনি ছাড়া অন্য কোথাও স্বাধীনতা উৎসব পালিত হয়না কারন ১৫ আগষ্টকে তারা তাদের স্বাধীনতা দিবস মনে করেনা ।
ভারতীয় প্রশাসনের মতো দিগন্ত ও বলতে পারেন এসব আসলে কতিপয় বিদেশী চর ও দুস্কৃতিকারীদের ছড়ানো আতংক মাত্র । সাধারন মানুষ নিজেদের মহান ভারতের অংশ ভেবেই গর্ব অনুভব করে ।
এক্ষেত্রে আবারো স্মরন করিয়ে দিতে চাই-স্বায়ত্বশাসনের প্রশ্নে গনভোটের দাবী বহু পুরনো । কিন্তু ভারত সরকার সে দাবী মানেনা কারন ফলাফল তাদের জানা । কাশ্মীরে গনভোট আয়োজন করে ও সরকার ফলাফল স্থগিত করেছিল ।
আপনার এই অস্পষ্টতা একদিন কাটবে, এই ভরসা করি । সেনা মোতায়েন মানেই বর্বরতা,নৃশংসতা,মানবাধিকার লংঘন- সে আপনার দেশের নাগাল্যান্ডেই হোক আর আমার দেশের পার্বত্য চট্রগ্রামেই হোক ।
কোন যুক্তিতেই,কোন শুভবোধ সম্পন্ন মানুষের সেনা মোতায়েন নামক পাশবিকতা সমর্থনযোগ্য নয় ।
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আমি বরং আপনাকে জিজ্ঞেস করি, আপনি কবে শেষ গেছিলেন? কতগুলো আলাদা ট্রাইবের সাথে কথা বলেছেন?
আমার অহমিয়া বন্ধুও আছে, সাথে আসামী বাঙালী, আসামী মুসলিম বা আসামী বড়ো উপজাতির বন্ধু আছে। অহমিয়া বন্ধুদের যেমন উলফার প্রতি সহানুভূতি আছে, বড়ো বা বাঙালী বন্ধুদের তেমন আছে উলফার প্রতি ঘৃণা। এবার এরা তো একসাথে থাকে, ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে নয়। কিন্তু ভারতীয় সরকারের প্রতি সকলেরই কিছু না কিছু ক্ষোভ আছে, যেমন আমাদেরো আছে। সেটার মানে এই নয় যে তারা সবাই আলাদা অসমিয়া দেশ গঠন করার সমর্থক। সব রাজ্যেই নিজস্ব মেজরিটি ও মাইনরিটি আছে। অনেকটা আপনাদের উর্দুভাষী বিহারীদের মত। বিহারীরা সংখ্যায় কম হলেও কিন্তু এখানে তারা সংখ্যায় অনেক বেশী - প্রতি রাজ্যে গড়ে ২৫-৩৫% (উপজাতি আর বাঙালী মিলে)। রাজ্যের ডমিনান্ট ট্রাইবেরা সবাই আলাদা দেশ সমর্থক, কিন্তু মাইনরিটিরা তাতে অংশগ্রহণ করে না। যেভাবে, জম্মু ও কাশ্মীরে রাজ্যের যে অর্ধেকর বেশী অংশে (ভৌগোলিক ভাবে) হিন্দু, বৌদ্ধ বা শিয়া মুসলিমেরা থাকে তারা কাশ্মীরী আন্দোলনকে সমর্থন করে না, করে উপত্যকার লোকজন। উপত্যকার লোকজন রাজ্যে সংখ্যাগুরু বলে নজরে আসে আমাদের। সেজন্যই আমি আপনাকে ডেমোগ্রাফি দেখতে বললাম লিঙ্ক দিয়ে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আমার ছোটোবেলার একটা গল্প মনে পড়ে অসমিয়াদের কথা বলতে। আমরা থাকতাম একটা মৎস বিভাগের কোয়ার্টারে। সেখানে কিছুদূরে হোস্টেলে ভারতের বিভিন্ন অংশ থেকে ছাত্র বা অফিসাররা ট্রেনিং নিতে আসত, মাস ২-৩ থাকত। সবার সাথেই কোনোমতে বন্ধুত্ব করে ফেলতাম। ১৯৮৭ সাল নাগাদ (আমি ৩ তে পড়ি) এসেছিল অসমিয়া অফিসাররা, ৩ মাস ছিল। আমি অসমিয়া ভাষায় তখন একটা সিনেমা দেখেছিলাম - বেজ বড়ুয়া। তাদের সাথে সেটার গল্প করে বেড়াতাম। তারাও মজা পেত। আরো পরে তাদের কাছে আমি তাস খেলা শিখেছিলাম। তারা অসমিয়া ভাষায় কথা বলত, আমি বাংলায়। বুঝতে পারা যেত সবই।
চলে যাবার আগের দিন তারা একটা পার্টি দিয়েছিল, তাতে অসমিয়া খাবার রান্না করে আমাদের খাইয়েছিল। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে সেদিনই। এক অফিসার আমার বাবা-মা-এর কাছে এসে বলা শুরু করে যে তারা অনেকেই অনেক বন্দুক গুলি ছোরা নিয়ে এসেছিল, কিন্তু সেগুলো কোনো কাজে লাগেনি। আমি সেই প্রথম দেখেছিলাম রাইফেল, রিভলবার আর ড্যাগার। কারণ কি? তখন আসামে বাঙালী খেদাও চলছিল। ওরা মনে করেছিল আমাদের এখানে এলে যদি ওদের আক্রমণ করা হয় - তাই প্রস্তুত হয়েই এসেছিল। বাঙালী সম্পর্কে তাদের ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে, এবং তাদের দাবী তারা ভবিষ্যতে এই ধারণা প্রচারের বিরোধিতা করবে। ভেবে দেখুন কমিউনিকেশনের অভাবই সম্পর্ক খারাপের একমাত্র কারণ কিনা?
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আপনি হয়ত ভাবছেন আমি ভারতীয় বলে এরকম বলছি। কিন্তু আমার মনে হয় আমি আমার পারিবারিক ইতিহাসের কথা ভেবেই বলছি, আমার বাঙালী সত্ত্বা থেকে বলছি। আসামে অসমিয়াদের শাসন হলে বাঙালীরা মারা পড়বে নাহলে তাদের কুকুর-বেড়ালের মত থাকতে হবে। তারা মাইগ্রান্ট হলেও মানুষ, যতটা একটা অসমিয়া মানুষ। আমরা একটা দেশে থেকে মাইনরিটি হিসাবে এদেশে এসেছিলাম, ওদেশে সেনা অত্যাচারে। এখানে এসেও আমরা 'বাঙাল' হিসাবে ছিলাম, আমাদের ভাষা এখানের সাথে মেলে না বলে কটুক্তি কম শুনতে হয় নি। আপনি একবারও কি আসামের বাঙালীদের দিক থেকে ভেবে দেখেছেন তাদের পরিণতি কি হতে পারে?
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আপনি আমি ধর্মের ষাড় হয়ে কামড়াকামড়ি করবো,আপনাকে আমি তাড়িয়ে দেবো এপার থেকে ওপারে,আপনি আমাকে ওপার থেকে এপারে । তারপর স্থান সংকুলান না হলো আপনি, আমি দুজনেই চড়াও হবো দু দিকেই আমাদের চেয়ে সংখ্যায় লঘুতরের উপর ।
আমি দখল করবো পার্বত্য চট্রগ্রাম আপনি আসাম,মেঘালয়,ত্রিপুরা,মনিপুর,মিজোরাম,নাগাল্যান্ড,অরুনাচল ।
ডেমোগ্রাফি'র সত্যের পেছনে ও অন্য সত্য লুকিয়ে থাকে । আজকে যদি আমার দেশের পার্বত্য চট্রগ্রামের ডেমোগ্রাফি দেখেন, সেখানে আদিবাসী-অভিবাসী অনুপাত ৫২:৪৮ । কয়েক দশক আগে ও এটা ছিলো ৮৮:১২ . আরো কয়েক দশক পর এটা দাঁড়াবে হয়তো ৮৮:১২ তে ।
ডেমোগ্রাফি দেখান তো, পাঁচ দশক আগে উত্তর পুর্বাঞ্চলে আদিবাসী,মেইনল্যান্ড ইন্ডিয়ানদের অনুপাত কতো ছিলো? অনুপাতের এতো প্রবল বদলের কারন কি?মেইন ল্যান্ডের মানূষদের প্রজনন ক্ষমতা জ্যামিতিক? নাকি রাজনৈতিক কারনে পরিকল্পিত অভিবাসন?
আমাদের এদিকে ও কিছু জ্ঞানপাপী আছেন যারা যুক্তি দেখান, পুরো দেশই আমার হয় তাহলে দেশের জনসংখ্যার চাপ কমাতে জনবিরল পাহাড়ে অভিবাসন গড়তে সমস্যা কি? সমস্যা যে কি সেটা উপলব্দির বিষয়,যুক্তির নয় ।উপলব্দি করতে হবে প্রাকৃতিক বৈচিত্র,সাংস্কৃতিক ভিন্নতা ।
ত্রিপুরার অবস্থা জানেন তো?
খুব অবাক হতাম যখন শিলংয়ে পড়তে আসা ত্রিপুরার আদিবাসী বন্ধুরা আমাদের কাছে সিরিয়াসলি বাংলা শিখতো । আগরতলা গিয়ে পুরো অবস্থা টের পেলাম । শ্রী মানিক সরকারের তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক আদতে কট্রর বাংগালী জাতীয়তাবাদী রাজ্য সরকার বদলে দিয়েছে পুরো ত্রিপুরা । পাহাড়ী ত্রিপুরা আর পাহাড়ীদের নেই । অফিস আদালত,প্রশাসন এবং রাজ্য পুলিশের পুরোটাই বাংগালী । পাহাড়ীরা বাংগালী খুন করলে বাংগালীকে প্রতিশোধ নেয়ার ঝামেলা পোহাতে হয়না । পুলিশ ই তো আমাদের !
আদিবাসী ছেলেদের রাজ্যসরকারের চাকরী পেতে হলে ভালো বাংলা জানতে হয় ।
মানিক বাবু আদি কুমিল্লার লোক । ভোটার তালিকা থেকে আদিবাসীরা বাদ যায় আর প্রতি বছর কুমিল্লার সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজন ত্রিপুরার ভোটার হয় । বিশ্বাস করুন,ওখানের বাংগালী ভাইয়েরা আমাকে আরেক বাংগাল পেয়ে নির্দ্বিধায় এসব তথ্য জানিয়েছেন, নির্বাচনের সময় কি করে কুমিল্লার কোন কোন সীমান্ত খুলে যায় যাতে মানিক বাবুর লোকের পক্ষে অধিক ভোট পড়ে ।
ডেমোগ্রাফি এইভাবে ও বদলে কিন্তু ।
ওখানে কি বাংগালী কষ্টে নেই? ত্রিপুরার অবস্থা তো অনেক ভালো, মেঘালয়ে বাংগালীরা দেশ বিভাগের ৬০ বছর পর ও প্রায় শরনার্থী ।৬০ বছর আগে সরকারের বানিয়ে দেয়া কলোনীতেই ক্লাস্টার্ড হয়ে থাকে তারা,প্রতিনিয়ত দাংগার আতংক নিয়ে ।
কলকাতা থেকে এইসব বহুদুরের খবর । দিল্লী তো আরো দূরে!
ভুল বুঝবেননা দিগন্ত বাবু, নিজের বাংগালী পরিচয় জাহির করতে আমি ও মুখে ফেনা তুলি । কিন্তু সেটা যদি অন্যের উপর চেপে বসে,তাহলে কিন্তু ভাবতে হয় । ভাবাটা জরুরী ।
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আমার মনে হয়না অনুপাত খুব-একটা পরিবর্তিত হয়েছে। অবশ্য আপনি যদি বাঙালীদের কথা ভাবেন তাহলে পরিবর্তন অনেক।
তবে আমি পঞ্চাশ বছর আগের কথা কেন ভাবব? আমি মানসিকতা আর বৈচিত্র্য সম্মান করি। হয়ত আমি বাঙালীদের প্রতি একটু বায়াসড। কিন্তু কিভাবে বলুন এই মূহূর্তে এর সমাধান পাবো ন্যূনতম রক্তপাতে? পঞ্চাশ বছরের মাইগ্রেশন কি কয়েক বছরে আবার পুরোনো জায়গায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব? মানবিক ভাবে বলুন?
আর অভিবাসন বাস্তব সত্য। কোনোভাবে কি সম্ভব পার্বত্য চট্টগ্রামে অভিবাসন আটকানো? আপনি বাস্তব থেকে বিচার করুন। দার্জিলিং এ স্বশাসিত অঞ্চল গড়ে আমার ধারণা সমস্যার সমাধান হয়েছে। ততক্ষণাত জল্পাইগুড়ি আর কোচবিহারের আদিবাসী লোকজন একই দাবি শুরু করেছে। পরে পুরুলিয়া আর বাঁকুড়াও করবে হয়ত। স্বশাসন তৃণমূল স্তরে না এলে ওপরে স্বশাসনে লাভ কিছু নেই। দার্জিলিং-এ এখন তাই সুবাস ঘিসিং এর শাসন চলে, পরিবর্তন হয় নি মানুষের। এর কোনো বাস্তব সমাধান আছে কি?
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
অনেক আলোচনা হয়েছে, এবার শান্তি। আবার পরে আলোচনা করা যাবে। ততদিনে আমি আরো তথ্য জোগাড় করি।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
জয় গুরু।
-------------------------------------------------
আমি ভালবাসি বিজ্ঞান
আমি ঘৃণা করি জামাত॥
হাসান মোরশেদ,
আপনি যথার্থই বলেছেন। আমারো মনে হচ্ছে, দিগন্তর বক্তব্য সরকারি প্রেসনোটের মতো। তাই সমস্যাটা বোধহয় উপজাতী বা ক্ষুদ্র জাতিস্বত্তা বা অহমিয়া বা বড়ো বা বাঙালির নয়। সমস্যা হচ্ছে, দৃষ্টিভঙ্গীর।
আর শুধু কেতাবী বিদ্যায় সমস্যার গভীরে পৌঁছানো একেবারেই সম্ভব নয়। তাই উলফাদের স্বাধীনতার আন্দোলনের সঙ্গে নিতান্তই অপ্রাসঙ্গীকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের তুলনা টেনে আনা হয়েছে; আসামের অভিবাসন সমস্যার কথা বলতে গিয়েও তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে ভিন্ন প্রেক্ষাপটের শাসক গোষ্ঠির চাপিয়ে দেওয়া অভিবাসনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে।
আপনি আগ্রহী হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আমার লেখা পড়ে দেখতে পারেন একটি এখানে, আরেকটি এখানে
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
-বিপ্লব রহমান।
দৃষ্টিভঙ্গীটাই পরিবর্তন দরকার, আপনি ঠিকই বলেছেন। কিন্তু সেটা পরিবর্তন হতে দীর্ঘসময় লাগে, লাগে যোগাযোগ। উত্তরভারত এখনো দক্ষিণকে ভাবে তারা কিপ্টে আর দক্ষিণ উত্তরকে ভাবে আড়ম্বর-সর্বস্ব। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে যারা থেকে এসেছেন তারা বলতে পারবেন এদের মধ্যে কোনো মিল নেই - আচার-ব্যবহারে, কথা-বার্তায়, ধর্ম-উতসবে বা খাদ্যরীতিতে। যোগাযোগ বাড়লে এক মানুষের সমস্যা অন্যেরা বুঝবে। তবেই হবে সমাধান। আলাদা হয়ে নয় ...
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
নতুন মন্তব্য করুন