ভারতের স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ সম্প্রতি CNN-IBN চ্যানেলের হয়ে স্বাধীন ভারতের দশটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তুলে ধরেছেন, যেগুলোকে স্বাধীন ভারতের যাত্রাপথে বিভিন্ন মোড় বলে ভাবা যেতে পারে। কোনো ঘটনা ভাল প্রভাব এনেছে তো কোনোটি খারাপ। তবে ভারতীয় জনমানসে এই ঘটনাগুলোর স্মৃতি বা পরিণতি বহুকাল থাকবে। ঘটনাগুলোর মধ্যে আটটি রাজনৈতিক ও বাকিদুটোকে অরাজনৈতিক বলা চলে।
প্রথমটি শুরু হয় কাশ্মীরের ভারত সংযুক্তি নিয়ে। পাকিস্তান কাশ্মীর আক্রমণ করলে, স্বাধীন জম্মু ও কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ও নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লা ভারতের সাথে প্রতিরক্ষার বিনিময়ে ‘Treaty of Accession’-এ সই করেন। চুক্তিমত ভারত পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করে। এক শান্তিপূর্ণ গণভোটের প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে জাতিসংঘ যুদ্ধ থামালেও পরবর্তীকালে ভারত ও পাকিস্তান কেউই গণভোটে কোনোরকম আগ্রহ না দেখিয়ে কাশ্মীর নিয়ে বারবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়। অপরদিকে, কাশ্মীরের জনগণ তাদের বলপূর্বক ভারতভুক্তির প্রতিবাদে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করে। কাশ্মীর ছাড়াও আরো কিছু রাজতন্ত্রের বলপূর্বক ভারতভুক্তি নিয়ে আজও প্রশ্নচিহ্ণ থেকে গেছে।
দ্বিতীয়টি হল ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারক সংবিধান রচনা। ১৯৪৯ সালে রচিত এই সংবিধান ১৯৫০ সালে কার্যকর হয়। সংবিধানের সাহায্যে ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের পথ চলা শুরু হলেও পরবর্তীকালে বারবার সংবিধান লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে স্বাধীন ভারতে।
তৃতীয় ঘটনা হল ১৯৫২ সালের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন। নির্বাচন চলাকালে লোকজনের উৎসাহ ও উদ্দীপনা ছিল তা আজো দেখা যায় না। ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, কিন্তু ভোটের অঘোষিত নায়ক ছিলেন সুকুমার সেন, ভারতের প্রথম নির্বাচন কমিশনার। তিনি ভোট পরিচালনায় বহু অদ্ভূত পন্থা অবলম্বন করেছিলেন যা সমসাময়িক বিশ্বে নজিরবিহীন। তবে তখনকার মত এখনো ভোটপ্রক্রিয়ায় জনগণের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ণ রয়েই গেছে। তবে, শুরু থেকেই ভোটে সব ভারতীয়র ভোটাধিকার ছিল, যা তৎকালীন বিশ্বে হাতে গোনা কয়েকটি দেশে পাওয়া যেত, ছিলনা আমেরিকা বা সুইজারল্যান্ডেও।
(আমি এবিষয়ে খুঁজে দেখলাম ভারতেও যৌন প্রতিবন্ধীদের(হিজড়ে) ভোটাধিকার দেওয়া হয় নব্বই-এর দশকে - সুতরাং সবার ভোটাধিকার ছিল না। বর্তমানে লোকসভায় একজন প্রতিনিধিও এই গোষ্ঠিভুক্ত।)
চতুর্থ হল পঞ্চাশের দশকের ভাষাভিত্তিক রাজ্য-পুনর্গঠন। ১৯৫২ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামী পট্টি শ্রীরামালু তেলেগুভাষী অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য ৫৮ দিন অনশনের পরে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু এক আন্দোলনের সুচনা করে যার ফলশ্রুতিতে গঠিত হয় সহায়তা কমিশন। কমিশনের বক্তব্য অনুসারে গঠিত হয় কেরল, অন্ধ্র ও কর্নাটক। পরে বাকি রাজ্যগুলোও পুনর্বিন্যস্ত হয় একই প্রক্রিয়ায়। ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের সাথে সাথে সব রাজ্যকে নিজস্ব ভাষায় রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়, যার ফলে আজও হিন্দিকে জাতীয় বা সরকারি ভাষা হিসাবে কেন্দ্র চাপিয়ে দিতে পারেনি।
পঞ্চম ঘটনা হল পোখরাণের পরমাণু বোমা পরীক্ষা। এর মধ্যে নেহেরুর জায়গায় এসে গেছেন ইন্দিরা, নেহেরুর সুযোগ্য কন্যা। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৪ অবধি গবেষণার ফল হিসাবে ভারত ষষ্ঠ দেশ হিসাবে পরমাণু শক্তিধর হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। রামচন্দ্র গুহর মতে, এই ঘটনার পর থেকে গান্ধীবাদী শান্তিকামী বিদেশনীতি ভারত ধীরে ধীরে বর্জন করে আন্তর্জাতিক সুবিধাবাদী বিদেশনীতি গ্রহণ করে।
ষষ্ঠ হল ১৯৭৪-এর কুখ্যাত জরুরী অবস্থা। ঘটনার সূত্রপাত ঘটে এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে যখন ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। ১৯ মাসের এই জরুরী অবস্থায় এই সময়ে সংবিধান ও লোকসভা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ইন্দিরা গান্ধী স্বৈরাচারী শাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। সারাদেশে কংগ্রেস জনপ্রিয়তা হারায় ও ফলশ্রুতিতে ১৯৭৭-এর নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসেন মোরারজি দেশাই। ইন্দিরা গান্ধী নিজে দুটি নির্বাচন কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে দুটিতেই পঞ্চাশ হাজারেরও বেশী ভোটে পরাজিত হন। দেশে কংগ্রেস কেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটে।
সপ্তম হল ১৯৮৯ এর মন্ডল কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করা। প্রধানমন্ত্রী ভিপি সিংহ এই আইন পাশ করিয়ে নিম্নবর্গীয় জাতিদের জন্য অতিরিক্ত ২৭% সংরক্ষণ চালু করেন। এই ঘটনা ভারতের ইতিহাসে অন্যতম বিতর্কিত সিদ্ধান্ত যা আজও বিভিন্ন আকারে আত্মপ্রকাশ করে আসছে। সম্প্রতি আই-আই-টি সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই সংরক্ষণ কার্যকর করার সময় একই বিতর্ক উঠে আসে। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে সংরক্ষণের মাধ্যমে সত্যি কতটা উন্নতি হয় – সেই প্রশ্ন। আর আছে অর্থনৈতিক মাত্রার পরিবর্তে সামাজিক মাত্রায় সংরক্ষণে সমাজের সুস্থিতি নষ্ট হবার সম্ভাবনা।
অষ্টমে আসে ১৯৯২ সালের বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার ঘটনা। এর ফলশ্রুতিতে ভারতে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের অবনতি ঘটে। নেহেরু যে ‘হিন্দু পাকিস্তান’ বর্জন করতে চেয়েছিলেন, ঘুরেফিরে তাই যেন হাতছানি দেয় পরবর্তী নির্বাচনে। এখন অবস্থার উন্নতি হলেও ভারতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে এটাই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
এরপরে অরাজনৈতিক ঘটনাদুটো চলে আসে। আসে ১৯৮৩ সালের ক্রিকেট বিশকাপ জয়। এই জয় আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গণে ভারতের প্রথম বিশ্বজয়। তার থেকেও বড় কথা, এর ফলে ক্রিকেট ভারতের নবতম ফ্যাশনে পরিণত হয়। উঠে আসেন একের পর এক ক্রিকেট আইকন – কপিল দেব, গাভাসকার ও শচিন তেন্ডুলকর। ভারতে আয়োজিত পরবর্তী বিশ্বকাপের সময় সেই উন্মাদনা আরো গভীরে প্রোথিত হয়।
সবশেষে আসে ভারতের অর্থনৈতিক সংষ্কার। ১৯৯১ সালে বেকায়দায় পড়ে সরকার যে উদারীকরণের পথে চলা শুরু করেছিল, তা আজকে ভারতের অর্থনৈতিক উন্নতির শুরু বলে পরিগণিত হয়। একদা সমাজতান্ত্রিক অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংহ যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছিলেন, তার ফলে ভারতের অর্থনীতি যেমন একদিকে বার্ষিক ৬% হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, ভারতীয় কোম্পানিরা যেমন শূন্য থেকে শুরু করে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার বাজারে স্থান করে নিয়েছে, তেমনই ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান দিন গেছে বেড়েই চলেছে। তৈরী হয়ছে পুঁজিহীন বনাম পুঁজিবাদীদের এক অদৃশ্য লড়াই। মোটের ওপর আপাতদৃষ্টিতে অর্থনৈতিক সংষ্কারের ফলাফল ভাল বলে মনে হলেও আরো দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হবে এর সঠিক মূল্যায়নের জন্য।
এছাড়াও আলোচনায় আসে ষাটের দশকে আই-আই-টির পত্তন, একাত্তরের ভারত-পাক যুদ্ধ, পরিবেশবাদী চিপকো আন্দোলন, ইনফোসিসের ন্যাসড্যাকে যোগদান ও টাটার কোরাস কিনে নেবার ঘটনাও।
আমি অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্যের সাথে সহমত হলেও ১৯৮৩-এর বিশ্বকাপ জয়ের পরিবর্তে চিপকো আন্দোলনকে আগে রাখবো। কারণ ভারতের মত গরিব দেশে যে পরিবেশ রক্ষায় গণ-আন্দোলন হতে পারে, সেটাই প্রমাণ করে দেয় সত্তরের দশকের এই আন্দোলন। পরে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। তাছাড়া, বর্তমান শিল্পায়নের যুগে পরিবেশ-রক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
তবে একটা ব্যাপার অনস্বীকার্য যে ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা দিবসে কেউ হলফ করে বলতে পারেনি যে এই দেশ ষাট বছর অটুট থাকবে। পশ্চিমের রাজনীতিবিদরা মনে করেছিলেন বহুভাষা-ধর্মের দেশে অচিরেই ফাটল ধরবে। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেছিলেন ব্রিটিশ পুঁজির প্রস্থান ও প্রযুক্তির অভাবে শিল্পায়ন হবে না। কিন্তু সব সত্ত্বেও ভারতের ষাট বছর পূরণ হল। রামচন্দ্র গুহর মতে এর জন্য সর্বাধিক কৃতিত্ব প্রাপ্য হল ভারতীয় সংবিধানের, তাই শ্রেষ্ঠর শিরোপা যায় সংবিধান প্রণয়নের - স্বাধীন ভারতে এটাই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
অনুষ্ঠানের ভিডিওটি পাবেন এখানে।
মন্তব্য
মাইন্ড করার কি আছে? ভারত দেশ ভেঙ্গে যাওয়াই খুব স্বাভাবিক - একসাথে থাকাই অস্বাভাবিক।
আমার মনে হয় 'দেশ ভাঙ্গার ভয়' ব্যাপারটা আপেক্ষিক। কারো কারো আছে, কারও নেই। বাংলাদেশের চেয়ে বেশী বটে, কারণ সব লোকে সবাইকে জানে না। দেশপ্রেমের জিকিরটা কোথাও কম নেই, চিনে, বাংলাদেশে বা আমেরিকাতেও আছে।
তবে অনেক বছর পরে আমার ধারণা দেশ ব্যাপারটাই উঠে যাবে। পাসপোর্ট-ভিসা থাকবেনা। সবাই ব্যক্তিকেন্দ্রিক জীবনযাপণ করবে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আপনার উদাহরণগুলো ব্যাখ্যা করার একটু চেষ্টা করি। ভারতের অর্থনীতি প্রথম চল্লিশ বছর চলেছিল স্বনির্ভরতার পথে। তার ফলে সমস্ত বিদেশী দ্রব্যের ওপর অসম্ভব রকম শুল্ক চাপিয়ে আমদানী বন্ধ করা হয়েছিল। এরই ফলে গাড়ি আমাদের দেশে তৈরী হয়, আমদানি হয় না। গাড়ি আমদানি করতে এখনো ১০০% এরও বেশী শুল্ক দিতে হয় (১০ লাখের গাড়ি ২০ লাখ)। তাই সাধারণ মানুষ দেশে তৈরি গাড়িই কেনে। আর লিমকা বা থামস আপ এখন কোকাকোলা কিনে নিয়েছে। মারুতিও ৫০% মালিকানা জাপানী সুজুকি কোম্পানির।
মিডিয়ার মধ্যে দেশপ্রেমের আধিক্যের কারণ স্বাভাবিক, সারাদেশে আর কোনো 'কমন ইস্যু' নেই। লোকাল ভাষার চ্যানেলগুলোতে দেখবেন দেশপ্রেমের বালাই নেই।
সনাতন ধর্মের ব্যাপারটা বুঝলাম না। আমি সনাতন ধর্মের ব্যাপারটা খুবই নেগেটিভলি নিই, কারণ জাতপাত বা সতীদাহের মত প্রথা এরই অবদান।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
স্বনির্ভরতার ভাল-খারাপ দুটোই আছে। সবকিছু কন্ট্রোল করতে গেলে দুর্নীতি বেড়ে চলবে। আর ভাল হল শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের দক্ষতা বাড়বে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আমি আমার পোষ্টে, এই প্রতিশ্রুত গনভোটের কথাই বলেছিলাম যা শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়নি । হয়নি কারন শাসক গোষ্ঠী জানে,ফ্লাফল কি দাঁড়াবে ।
ভালো কথা,আমি জানতাম '৭৯এর জরুরী অবস্থা ঘোষনাই ভারতের একমাত্র সংবিধান লংঘনের উদাহরন । আরো ঘটেছে নাকি? আমাদের এদিকে প্রায়শঃ ঘটে ।
দিগন্ত'কে ধন্যবাদ তথ্যগুলো শেয়ার করার জন্য ।
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
হাসানভাই আপনি বলেছিলেন ফলাফল স্থগিত করেছিল। সেটা ঠিক নয়, গণভোট কখনোই হয় নি।
বিশেষত কেন পাকিস্তান গণভোটের ব্যাপারে নব্বইএর দশক পর্যন্ত চাপ দেয় নি সেই ব্যাপারটা আমার একটু অবাকই লাগে। আসলে কাশ্মীরিরা স্বাধীনতা চেয়েছিলেন, পাকিস্তানে যেতে নয়। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাবে স্বাধীনতার কথা কোথাও ছিল না।
পরে ভারত ও পাকিস্তান একে অপরকে দোষারোপ করে সময় কাটিয়ে গেছে, কিন্তু গণভোটের ব্যাপারে কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয় নি। পাকিস্তান বা ভারত কেউই গণভোটের পূর্বশর্ত মেনে কাশ্মীর থেকে সেনা সরায় নি।
কাশ্মীরে গণভোট হলে জেলা বা আরো ছোটো কিছুর মাপে গণভোট হয়ে কাশ্মীরকে ভোটের ভিত্তিতে ২ ভাগ করলেই ভাল। মূল প্রস্তাবের কিছুকাল পরে এরকমই প্রস্তাব এসেছিল। সেক্ষেত্রে, ভৌগোলিকভাবে কাশ্মীরের খুব বড় অংশ ভারতে আসবে, আর জনসংখ্যার বড় অংশ যাবে পাকিস্তানে। আমার ধারণা ভবিষ্যতে এরকম কোনো গণভোট আয়োজন করা দরকার এবং জম্মু ও কাশ্মীরের পার্টিশন করে দেওয়া উচিত। নাহলে এই সমস্যা থেকেই যাবে। সাম্প্রতিককালে ভারত, পাকিস্তান বা আমেরিকা - সবাই দেখছি এর বিরোধিতা করছে - সেক্ষেত্রে গণভোট হওয়া শক্ত।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
হুমম, তথাস্তু।
অঞ্চলভিত্তিক বৈষম্য কিংবা সংস্কৃতির বহুমাত্রিক মিশ্রণের মাঝেও ভারতের অখন্ড রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকার জন্যে কিছু একটা সুপার গ্লু ধরনের আঠা জরুরি, সেইজন্যে মিডিয়ার জাতীয়তাবাদ বিষয়ক প্রচারণা না থাকলেই চলবে না - আমার এরকমটা মনে হতো কৈশোরে; যখন আমি দূরদর্শন নামের রাষ্ট্রীয় চ্যানেলটিতে মগ্ন থাকতাম আর অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে প্রচারিত "মেরা ভারত মহান" ধরনের গানগুলো দেখতাম।
(আকাশ সংস্কৃতি তখনো আসেনি আর তারপরে দেশ ছেড়ে আসায় এখনকার স্ট্রিম বিষয়ে খুব একটা জানা নেই)
নানান সমস্যার মাঝেও ভারত টিকে থাকবে- আমি মনে করি ও প্রত্যাশা করি, কারণ বর্তমান পৃথিবীতে একা থাকার চেয়ে একসাথে থাকাটাই বেশি কার্যকর।
সেজন্যে মিডিয়াই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।
ধর্ম বা ভাষা জিনিষগুলো মানুষের মননে হয়তোবা বড়সড় ফ্যাক্টর হয়ে থাকবে যুগযুগ ধরে, কিন্তু পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই পুঁজিবাদী সভ্যতায় সংঘবদ্ধ হওয়ার পেছনে এসব ফ্যাক্টরের গুরুত্ব অনেক কমে যাচ্ছে, এটা অস্বীকার করবার উপায় নেই।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
এখানে CNN-IBN জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের মতামত নিয়েছে। শ্রীনগরের ৮৭% লোকে স্বাধীনতার কথা বলেছে। জম্মুতে ৯৫% লোক ভারতের সাথে থাকার কথা বলেছে। আমি নিশ্চিত লাদাখেও জম্মুর মতই ভোটের ফলাফল হবে। পাকিস্তানে যাবার ব্যাপারে পাকিস্তান ছাড়া কোথাও ভোট পড়েনি, তবে পাকিস্তানিরা স্বাধীন কাশ্মীরের জন্যও ভোট দিয়েছেন। আর ভারতে ভোট পড়েছে কাশ্মীরের ভারত-ভুক্তির পক্ষে।
বিস্তারিত রিপোর্ট।
যারা কাশ্মীর ও তার ডেমোগ্রাফী সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য এই লিঙ্ক।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
নতুন মন্তব্য করুন