At the same time, it exposes the cynicism behind the official mantra of “free enterprise.” When it comes to big capital, losses are socialized. Only profits remain private. - By Barry Grey
আন্তর্জাতিক শেয়ার বাজারের পতন ও ফাইনান্সিয়ালাইজেশানের সংকটের(১) হাত থেকে বাঁচতে আজ মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী মোড়লেরা। মার্কিন কংগ্রেসে বিল পাশ হয়েছে, ওবামা-ম্যাককেইন নির্বাচনী দ্বৈরথের সাথে সাথে বুশের সাথে গিয়ে বৈঠক করছেন, জি-৭ এর নেতৃবৃন্দ একত্রে বসছেন, জি-২০ সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ মিলিত হচ্ছেন। আর এসমস্ত কিছুর ফলাফল হিসাবে সেপ্টম্বর থেকে এখন অবধি পত্র-পত্রিকার পাতায় একটি শব্দ বারে বারে আসছে- সেটি হলো "বেইল আউট" (A bailout, in economics and finance, is a fresh injection of liquidity given to a bankrupt or nearly bankrupt entity, such as a corporation or a bank, in order for it to meet its short-term obligations-(২))। গত শতকের ত্রিশের দশকের মত মহামন্দার আশংকায় হাজার বিলিয়ন ডলারেরও বেশী পাবলিক মানির শ্রাদ্ধ করে Freddie Mac, Fannie Mae কিংবা সর্বশেষ American Internatinal Group (AIG) এর মত কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাইভেটাইজেশানের স্বর্গভূমি আমেরিকার সরকার কর্তৃক জাতীয়করণ, যুক্তরাজ্য-ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও অনুরূপ কর্মসূচিকে আজ নানাজনে নানাভাবে বিশ্লেষণ করছেন। কথা উঠেছে, এই জাতীয়করণের (পূর্ণ ও আংশিক) মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্রের পথই না-কি অনুসরিত হচ্ছে। মুক্তমনার বিপ্লব পাল তার প্রবন্ধের শিরোনামই করেছেন এরকম: "মুক্তবাজারের পুরোহিতদের এখন সমাজতন্ত্রে আজান!" (৩) আসলেই কি মুক্তবাজারের পুরোহিতেরা সমাজতন্ত্রে আজান দিতেছেন, মুক্তবাজারের জনকেরা সমাজতন্ত্রের কোলে মুখ লুকাচ্ছেন?
সে প্রবন্ধে বিপ্লব পাল বলছেন: "ফেডারেল গভর্নমেন্ট যখন আমেরিকার বৃহত্তম মর্টগেজ কোম্পানী ফেনি মে আর ফ্রেডী ম্যাক অধিগ্রহন করে, আমি লিখেছিলাম মুক্তবাজারের জনকরা এখন সমাজতন্ত্রের কোলে মুখ লুকাচ্ছে। চোখের নিমেষেই নেমে এল আরো বিপর্যয়-লেহম্যান ব্রাদার্সের দেউলিয়া ঘোষনা-মেরিল লিঞ্চকে ব্যাংক অব আমেরিকার অধিগ্রহন-আর বৃতত্তম ইন্সিউরান্স কোম্পানি এ আই জিতে অধিকাংশ শেয়ার কিনে আমেরিকান সরকার বীমা মার্কেটকে বাঁচিয়ে দিল। ধন্য কলিযুগ! এই আমেরিকার চাপেই গোটা বিশ্ব ‘অর্থনীতি সংস্কার’ করতে বাধ্য হয়েছে-যার মূলমন্ত্র অর্থনীতি বাড়াতে এবং গতি আনতে বেসরকারীকরন। আর আজ অস্তিত্বের সংকটে ইনসিউরান্স, হাউসিং এবং ব্যাংকিং পুরোপুরি রাষ্ট্রায়াত্ত্ব করতে বাধ্য হল আমেরিকা। আসলে সরকারের লাভ ই হল। অন্য সময় হলে যে দামে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব করতে হত-এখন জলের দামে এই বিশ্ববিখ্যাত সংস্থাগুলির মালিক হলেন আমেরিকান সরকার। ট্যাক্স পেয়ার হিসাবে আমি পুলকিত! আরো পুলকিত পুঁজির এই ডিগবাজি দেখে!"
বিপ্লব পালের এই আলোচনা, শুধু তার একার বক্তব্য নয়। আজ অনেকেই একই সুরে কথা বলছেন। এমনকি বামপন্থী শিবিরেও এমন কথা, এমন আলোচনাও আমাদের দৃষ্টিগোচরে এসেছে। বাংলাদেশে সমাজতন্ত্রী হিসাবে মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি'র সাপ্তাহিক একতা'য়(৪) আমরা এ সুরটিই দেখতে পাই: "___ কিন্তু বুশের এই কর্মসূচি পুঁজিবাদের বিপর্যয় কতটুকু ঠেকাতে পারবে -তা নিয়ে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাদী অর্থনীতিবিদেরাও সন্দিহান। আর বিপর্যয় ঠেকাতে বুশ প্রশাসন যে পন্থা বেছে নিয়েছে- তাতে অনেকের মধ্যেই জাত গেলো, জাত গেলো রব উঠেছে। কারণ পুঁজিবাদের ধ্বংস ঠেকাতে বুশরা যে পথে হাঁটছে তা মুক্তবাজার অর্থনীতির কোন সূত্রের মধ্যেই পড়ে না। অনেকেই অবশ্য নিশ্চিত যে, এ ধরণের অবস্থা সামাল দেয়ার মতো কোন দাওয়াই মুক্তবাজারে নেই। তাই বাধ্য হয়েই 'ইতিহাস' হয়ে যাওয়া সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে সমাধান ধার করতে হচ্ছে বুশদের। বড় বড় প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়াত্ব ঠেকাতে সেগুলোকে আংশিক বা সম্পূর্ণ রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে কিনে নেয়া, বাজারের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ, অর্থনীতি সচল রাখতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করা এবং বেসরকারী বা ব্যক্তি খাতের একচ্ছত্র আধিপত্য খর্ব করার মতো পদক্ষেপের মধ্যে আর যাই হোক মুক্তবাজার বা পুঁজিবাদী বিশ্বায়ন নীতির কোন সামঞ্জস্য যে নেই- তা স্বীকার করতে অধিকাংশ অর্থনীতির পণ্ডিতের মধ্যেই কোন দ্বিধা নেই। আর তাই জর্জ বুশের 'বেইল আউট' কর্মসূচিকে 'অর্থনীতির সামাজিকীকরণ', 'আর্থিক ব্যবস্থাপনার সমাজতন্ত্র', 'অ আমেরিকান পদক্ষেপ', 'ঋণের রাষ্ট্রায়ত্তকরণ' সহ নানা অভিধায় ভূষিত করা হচ্ছে..."
আসলেই কি বুশদের এই 'বেইল আউট'- 'অর্থনীতির সামাজিকীকরণ' বা 'আর্থিক ব্যবস্থাপনার সমাজতন্ত্র'? বড় বড় প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়াত্ব ঠেকাতে সেগুলোকে আংশিক বা সম্পূর্ণ রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে কিনে নেয়া, বাজারের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ, অর্থনীতি সচল রাখতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করা প্রভৃতির মতো পদক্ষেপের মধ্যে কাগজে কলমের "বিশুদ্ধ" মুক্তবাজার নীতির কোন সামঞ্জস্য নেই ঠিকই; কিন্তু বর্তমান পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়ার ক্ষেত্রে এসব কি নতুন কিছু?
সে বিষয়ে আলোচনায় আসার আগে সংক্ষেপে সংকট উত্তরণে পুঁজিবাদী মোড়লদের এখন পর্যন্ত নেয়া উদ্যোগগুলোর দিকে এক পলক নজর দেয়া যাক(৫):
# ৭ সেপ্টম্বর যুক্তরাষ্ট্র সরকার গৃহনির্মাণ খাতে ঋণদানকারী সর্ববৃহৎ দুই কোম্পানী Freddie Mac, Fannie Mae কে ২০ হাজার কোটি ডলারের বিনিময়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।
# ১৫ সেপ্টেম্বর বিনিয়োগ ব্যাংক 'লেহম্যান ব্রাদার্স' নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে।
# ১০ অক্টোবর জি ৭ এর বৈঠকে ঋণবাজারের অচলাবস্থা কাটাতে ৫ দফা পরিকল্পনা গ্রহণ।
# ১১ অক্টোবর জি ৭ এর অর্থমন্ত্রীদের সাথে বৈঠকে সংকট মোকাবেলায় আরো বৃহত্তর পরিসরে ( যা জি ২০ নামে পরিচিত) কাজ করার ব্যাপারে বুশের ঘোষণা।
# ১২ অক্টোবর তাদের এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং ধনী ও শক্তিশালী হয়ে ওঠা দেশগুলোর সংস্থা জি-২০।
# একই দিন ইউরো অঞ্চল নামে পরিচিত ইউরোপের ১৫টি দেশ প্যারিসে বৈঠক করে বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে অভিন্ন কৌশল নেওয়ার কথা জানায়। তারা এ সময় জানিয়ে দেয়, আর কোনো ব্যাংককে দেউলিয়া হতে দেওয়া হবে না।ইউরো অঞ্চলের পক্ষে অভিন্ন কৌশলের কথা জানান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাই সারকোজি। গত রোববার প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ১৫টি দেশ বিশেষ বৈঠক করে। বিশেষ আমন্ত্রণে গর্ডন ব্রাউন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ইইউর প্রেসিডেন্সি এখন ফ্রান্সের কাছে। তিনি জানান, আর কোনো ব্যাংকের পতন তাঁরা চান না এবং এ জন্য ২০০৯ সাল পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে অর্থ ঢালা হবে। তবে যেসব ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপকেরা দায়ী, তাঁদের অবশ্যই চলে যেতে হবে।
# ১৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ, ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক, সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জানায়, তারা মুদ্রাবাজারের মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যত প্রয়োজন তত অর্থই দেবে।
ব্রিটেন জানায়, সংকটে থাকা রয়েল ব্যাংক অব স্কটল্যান্ড (আরবিএস), লয়েডস টিএসবি এবং এইচবিওএসকে দেওয়া হবে তিন হাজার ৭০০ কোটি পাউন্ড। এই অর্থের পুরোটাই করদাতাদের অর্থ। একইভাবে জার্মানি ৫০ হাজার কোটি ইউরোর একটি প্যাকেজ পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে। ফ্রান্স ব্যয় করবে ৩৫ হাজার কোটি ইউরো এবং স্পেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা খরচ করবে ১০ হাজার কোটি ইউরো।
অস্ট্রিয়া এ লক্ষ্যে ব্যয় করবে সাড়ে আট কোটি ইউরো। ইতালি কোনো অর্থের হিসাব না দিলেও যত প্রয়োজন তত অর্থই দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
# ১৪ অক্টোবর: ইউরোপের মতো করেই যুক্তরাষ্ট্র ব্যাংক ও আর্থিক খাত বাঁচাতে ২৫ হাজার কোটি ডলারের পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বিভিন্ন ব্যাংকের শেয়ার কিনে নেবে। এ ছাড়া ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃপক্ষ সাময়িক সময়ের জন্য ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা নতুন ঋণের নিশ্চয়তা দেবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, শুরুতে নয়টি বড় ব্যাংকের অগ্রগণ্য (প্রেফারড) শেয়ার কিনে নেওয়া হবে। এর পরেই অন্যান্য ব্যাংকের শেয়ার কেনা হবে। এই পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে সিটিগ্রুপ, ওয়েলস ফার্গো অ্যান্ড কোম্পানি, জেপিমর্গান চেজ, ব্যাংক অব আমেরিকা, মর্গান স্টানলি ইত্যাদি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার সব মিলিয়ে ৭০ হাজার কোটি ডলার পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার অনুমোদন নিয়েছে। এর মধ্যে ২৫ হাজার কোটি ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনার কথা জানানো হলো ১৪ অক্টোবর। এর বাইরে আরও ১০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করা হবে মন্দ ঋণ সংরক্ষণে। বাকি ৩৫ হাজার কোটি ডলার খরচের পরিকল্পনা দেবেন নির্বাচিত পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।
এই হলো সেই 'বেইল আউট' কর্মসূচির এখন পর্যন্ত ঘোষিত পরিকল্পনাসমূহের সারসংক্ষেপ। এর সাথে সাথেই চারদিকে আওয়াজ উঠছে, এভাবে পুঁজিবাদ তার সংকট থেকে উত্তরণে সমাজতন্ত্র থেকে সমাধান ধার করছে!! আমাদের মনে হয়েছে, এ ধরণের প্রচারণা কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যাপক বিভ্রান্তি ছড়ানোর প্রচেস্টা এবং কিছু ক্ষেত্রে সমাজতন্ত্র সম্পর্কে অজ্ঞতার প্রকাশ ছাড়া কিছু নয়।
..... (চলবে)
তথ্যসূত্রঃ
১। http://www.sachalayatan.com/comment/reply/18980/125574
২। http://en.wikipedia.org/wiki/Bailout
৩। http://www.mukto-mona.com/Articles/biplab_pal/USA_crisis.htm
৪। http://www.cpbdhaka.org/admin/Ekota/Ekota 28 September 08.pdf
৫। প্রথম আলো, ১২ অক্টোবর- ১৩ অক্টোবর- ১৪ অক্টোবর ২০০৮ এ প্রকাশিত প্রথম পাতা প্রবন্ধ এবং "লাভ-ক্ষতি" ফিচার পাতার প্রবন্ধসমূহ
মন্তব্য
এত তত্ত্বকথা বুঝি না। পুজিপতিরাই রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করে। কাজেই নিজেদের পশ্চাৎদেশ বাঁচাতে যা করা দরকার সবই করবে ... সেটা ফর্মূলার মধ্যে পড়ুক বা না পড়ুক। জনগণের মলম নিয়ে রেডি থাকাই ভাল হবে।
আমি যতদুর জানি, এই সংকটের মধ্যেও কিছু কিছু পুজিবাদী গোষ্ঠি কিন্তু চরম লাভ করছে (কৃষিভিত্তিক এবং তেলভিত্তিক)। তাদের দিকেও একটু নজর দিয়েন। যথারীতি এসব ক্ষেত্রেও জনগণের, বিশেষত আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বে মলম দরকার পড়ছে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
কান পেতে রই।
এব্যাপারে এই অধমের একটা ছোট লেখা আছে এখানে। সময় হলে দেখে নিতে পারেন।
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন