নাইল্যাকাডা ১ম বর্ষ, ২য় সংখ্যা প্রকাশিত

দিনমজুর এর ছবি
লিখেছেন দিনমজুর [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৩/১০/২০০৮ - ৮:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto
নাইল্যাকাডা শব্দটি যেভাবে আমাদের হইল
ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়া ময়মনসিংহ শহরে আসিয়া পৌঁছিলাম। উদ্দেশ্য, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যাইব। তাড়াহুড়া করিয়া একখানা রিকশায় উঠিয়া পড়িলাম। ব্রীজ হইতে সূর্যাস্তের দিকে অনতিদূরেই একখানা চৌরাস্তা, তাহার দক্ষিণমুখী সড়কের পাশেই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ঢালু দিয়া নামিয়া সেই দিকে মোড় নিতেই আমার রিকশাখানা তাহার তিন ঠ্যাং এর একখানা অপর একখানা রিকশার উপর তুলিয়া দিল। আমার মস্তিষ্ক বুঝিবা আগেই কিছু একটা টের পাইয়া গিয়া থাকিবে। আমি, অতএব, নিরাপদেই রাস্তার একপাশে লাফ দিয়া পড়িলাম। কোন দিক হইতেই শেষের কবিতার লাবণ্য না আসিলেও সবদিক হইতে নানা কিসিমের লোকজন আসিয়া উপস্থিত হইল। সবাই আসিয়া আমার রিকশাওয়ালাকে মারিতে লাগিল। রিকশায় উঠিবার সময় আমি তাহাকে ভাল করিয়া দেখিতে পাই নাই, হয়তোবা প্রয়োজনও বোধ করি নাই। মারিবার সময় তাহাকে খুব ভাল করিয়া দেখিলাম তাহার স্বাস্থ্য মোটামুটি, মাঝারি ধরনের উঁচু হইলেও শরীরের গড়নটা বেশ চমৎকার। কিন্তু এতসব থাকিতেও সে নিশ্চল দাঁড়াইয়া রহিল। ইহাতে পাবলিক হয়তোবা আরও মজা পাইয়া থাকিবে। এই সময় ক্ষতিগ্রস্ত অপর রিকশাচালককে বলিতে শুনিলাম - "ঐ হালা নাইল্যাকাডা, পারস্‌না যহন তহন এই ধনডা লইয়া বাইরাসোস্‌ ক্যান ?" আমার রিকশাওয়ালা চুপ করিয়া ছিল, হয়তো সে বুঝিয়াছিল ভুলটা আসলে তাহারই কিংবা সে বেশ ভয় পাইয়াছিল। তাহার হাত দুইটি দিয়া সে কেবল শক্ত করিয়া রিকশাখানা ধরিয়াছিল যেন কেহ উহা তাহার নিকট হইতে ছিনাইয়া নিবার না পারে। লোকটার লাগিয়া আমার দিলে বেশ মায়া জন্মাইয়া যায়। আমি আগাইয়া আসিয়া সবার নিকট তাহার পক্ষ হইতে মাফ চাহিলাম এবং বলিলাম যে আমার কারণেই এই দূর্ঘটনা ঘটিয়াছে, আমি উহাকে দ্রুত চালাইতে বলাতেই সে এই বিপত্তি ঘটাইয়াছে। আমি ঐ রিকশাচালককে কিছু টাকা দিতেই ব্যাপারখানা মিটিয়া গেল। আবার রিকশায় চাপিতেই আমার ঐ অদ্ভূত গালিটির কথা মনে হইল - নাইল্যাকাডা! ময়মনসিংহ অঞ্চলে পাটকে সবাই "নাইল্যা" বলিয়া থাকে, ইহা জানিতাম। তাহাতে দাঁড়ায় - যে নাইল্যা কাটে সেই হইল "নাইল্যাকাডা"। কিন্তু ইহা গালি হইল কিরূপে ?
উপায়ন্তর না দেখিয়া আমি তাহাকে জিজ্ঞাসা করি, "ভাই, ঐ রিকশাওয়ালা যে আপনেরে নাইল্যাকাডা কইল, আপনি কি হাছাই নাইল্যা চাষ করেননি?" লোকটি তখনও চুপ করিয়া রহিল। বোবা নাকি ? গেটে আসিয়া ভাড়া মিটাইবার সময় সে বলিয়া উঠিল, "না, ভাইজান আমি নাইল্যা চাষ করি না । আমার জমি নাই, নাইল্যাও নাই অহন। তয় জমিত্‌ বর্গা খাটি"। "রিকশা চালাইতেছেন ক্যান তাইলে?" আমার এই প্রশ্ন শুনিয়া সে বলে - "কি করুম ভাই, অহন তো কুনু ফসল নাই তাই গেরামে কুনু কামও নাই"। বুঝিলাম ফসলের মওসুম থাকিলেও ক্ষুধার মওসুম নাই। তাই সে শহরে আসে এবং অন্য উপায় না দেখিয়া রিকশার হাতল ধরিয়া নামিয়া পড়ে - বিসমিল্লাহ‌। কাস্তে তাহার কথা শুনিলেও রিকশার হাতল তাহাতে বাধ্য নয়। যাহার দরুণ স্থানে-অস্থানে লাগাইয়া দেওয়াই তাহার নিয়তি, সকল নাইল্যাকাডার নিয়তি। ভাড়া মিটাইয়া আমি হলের দিকে হাঁটিতে থাকি।

পুনশ্চঃ এই ঘটনার অনেক অনেক দিন পরে যখন আমি ঢাকা শহর দখল করিতে আসি তখন বুঝিয়াছিলাম ঐ দিন রিকশাওয়ালা আসলে ভয় পায় নাই, সে আসলে বুঝিয়া গিয়াছিল অথবা জীবন তাহাকে বুঝাইয়া দিয়াছিল এই মূলমন্ত্রঃ

hasta la victoria siempre !.....
( until victory alway........)

সূচিপত্রঃ
১। বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে সেনাপ্রধানের পাঁচালিঃ কৃষির সামরিকীকরণ?
২। আন্তর্জাতিক শেয়ার বাজারের পতন ও ফাইনান্সিয়ালাইজেশনের সংকট
৩। বিরাষ্ট্রীয়করণ ও বিনিয়োগ
৪। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাঃ অনেকের আশার বেলুনই চুপসে যাবে
৫। অথঃ সস্তা সমাচার (২য় কিস্তি)
৬। রপ্তানীমুখী কৃষি অর্থনীতি ও গরিবের খাদ্য সংকট
৭। কিউবার কৃষি অর্থনীতি
৮। অর্থনীতির আলাপ সালাপ
৯। কলসেন্টার কর্মীঃ সেবার নরকে সাইবার কুলি
১০। শিল্পী এস এম সুলতান ও ভিনসেন্ট ভ্যান গঘঃ জীবন কারিগর
১১। বার্ড ফ্লু ও পোল্ট্রি শিল্পঃ মুনাফা-ভাইরাস-মুনাফা চক্র
১২। নেপালে মাওবাদীদের নির্বাচনী বিজয়, বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মিথ এবং কিছু জরুরী ভাবনা
১৩। বেশ্যা
১৪। কিছু মার্কসীয় তত্ত্ব

প্রাপ্তিস্থানঃ

আজিজ সুপার মার্কেট
১। বইপত্র
২। জনান্তিক
৩। শ্রাবণ
৪। প্রথমা (একুশে)
৫। তক্ষশীলা
৬। লিটল ম্যাগ প্রাঙ্গন লোক
৭। বিদিত
৮। পলল
৯।পাঠশালা

মুক্তিভবন (পুরানা পল্টন)
১০। জাতীয় সাহিত্য প্রকাশন

নাইল্যাকাডা----------কার্তিক, ১৪১৫ ---------২০ টাকা

যোগাযোগঃ (মতামত জানাবেন)
nailyakada_bd@yahooডটcom
dinmojur@yahooডটcom
nailyakada@gmailoডটcom


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।