মুক্তমনায় বিপ্লব পাল নামে এক ভদ্রলোকের "ঠিকাদারতন্ত্র" শিরোনামে একটি প্রবন্ধ দেখলাম। সেখানে তিনি জানাচ্ছেন, "অসামিরক ভারত-আমেরিকা নিউক্লিয়ার চুক্তির অন্ধ বিরোধিতা একধরেনর রাজৈনিতক আত্মহত্যা"। ভারতের বামপন্থীরা এই চুক্তির বিরোধিতা করায় তিনি মহাখাপ্পা, জানাচ্ছেন- বামপন্থীদের বিশ্বাসযোগ্যতা ও বুদ্ধি শুণ্যের কিছু নীচে। এই বিপ্লব পাল কিন্তু নিজেকে একজন ফ্রি থিংকার মনে করেন, বিজ্ঞান আন্দোলনের সাথে নিজেকে জড়িত রেখেছেন এবং মুক্তমনায় তিনি একজন নিয়মিত লেখক (মডারেটর কিনা জানি না)। প্রবন্ধটির অন্যান্য বিষয় নিয়ে তারই আরেকটি ব্লগ পোস্টে কথা বলেছি, সেখানে আরো আলোচনার আগ্রহ রয়েছে- এখানে এই বিষয়টিতে (অসামিরক ভারত-আমেরিকা নিউক্লিয়ার চুক্তি) আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি:
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সিভিলিয়ান নিউক্লিয়ার ডিলকে আসলে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে না দেখলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে না। যুক্তরাষ্ট্র কেন ভারতের সাথে উত্তরোত্তর সামরিক মিত্রতা বাড়াতে চায়, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ কি, ভারত কেন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এত ঘনিষ্ঠ হতে চায়- ভারতের স্বার্থ কি, এসমস্ত ভালো ভাবে বুঝা দরকার।
মধ্য প্রাচ্যে যেমন ইসরায়েল- দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তেমনি ভারতের অবস্থান হতে যাচ্ছে কি-না এটা আজ বড় প্রশ্ন। তবে এশিয়ার এ অংশকে নিয়ন্ত্রণ, সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়ায় দ্রত আধিপত্যশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাওয়া চীন, মাওদের নেপাল- এমনকি তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যকে নিয়ন্ত্রণ সবদিক থেকেই ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্ত বন্ধু হোক- এটাই পেন্টাগন-হোয়াইট হাউস চেয়েছে।
২০০২ সালে "Indo-US Military Relations: Expectations and Perceptions" শিরোনামে পেন্টাগন কর্তৃক প্রকাশিত এক পেপারে আমরা সেরকম এক আশাবাদই দেখিঃ
"The Indians will laud the relationship as a success if they obtain the technology that they want from the United States. We [the US military] will view the relationship as a success if we are able to build a constructive military cooperation programme that enables us to jointly operate with the Indians in the future."
মান্থলি রিভিউ পত্রিকায় তাই এই চুক্তিকে এভাবেই দেখেছে:
"This deal is a part of an ongoing project to absorb India into the U.S. imperial sphere of influence as a "strategic" junior partner".
"The crux of the announcement [of the initial U.S.-Indian nuclear negotiations] is what it tells us of the U.S. grand strategy, and that behind whatever else is going on here the U.S. is preparing for a grand conflict with China and constructing an anti-China coalition. . . . In that scenario, India is even more valuable as a nuclear power, rather than as a non-nuclear country" (The Christian Science Monitor, July 20, 2005).
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ মহড়া এখন ডালভাত হয়ে গেছে। গতবছরের শেষের দিকে ভারতের চেন্নাই পোর্টে পারমাণবিক যুদ্ধবিমান Nimitz এর অবতরণকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা হলেও আসলে তা নয়। কেননা তারপরেই আমরা বঙ্গোপসাগরে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ নৌ-মহড়াও দেখতে পাই। এসমস্ত ঘটনাকে মিলিয়ে দেখার আহবান জানাই। সেই সাথে আরেকটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করবো, সেটা হচ্ছে- ভারত কিন্তু Non-Proliferation চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি (পাকিস্তান ও ইসরায়েলও করেনি)।
ভারতের স্বার্থ কি? বড় মোড়লের সাথে থাকলে ছোট মোড়লদের শক্তি-সাহস সবসময়ই কিছুটা বৃদ্ধি পায় বৈকি। ভারত আজ একটি সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র। এশিয়ায়- বিশেষ করে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ায় এ মুহুর্তে তার প্রধানতম প্রতিদ্বন্দ্বী চীন, এই চীন আবার স্ট্রাটেজিক দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রেরও অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিত্রতা ভারতকে এই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভূরাজনৈতিক প্রতিপত্তি বাড়াতে সহায়তা করবে বলেই ভারত মনে করে।
সেই সাথে এটিও দেখার বিষয় যে, যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু এই ডিলটিতে তার নিজস্ব অবস্থান ঠিকই ধরে রেখেছে- মানে ভারতের সাথে যে মিত্রতা গড়ে তুলছে- সেটা যে দুই সম পর্যায়ের বন্ধুর মিত্রতা নয়- তা এই চুক্তির ধারাগুলোতেই পরিষ্কার। অর্থাৎ এই চুক্তির মাধ্যমে ভারতকে সাথে নিয়ে অন্যদের মোকাবেলাও যেমন তার জন্য সহজ হলো- তেমনি এই চুক্তি ভারতকেও নিয়ন্ত্রণের পথ খুলে দিল। তার মানে আসলে যুক্তরাষ্ট্র এর মধ্য দিয়ে এক ঢিলে বেশ কয়টি পাখি মারলো। চুক্তির বিভিন্ন ধারায় আছে: নিউক্লিয়ার জ্বালানি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেই কিনতে পারবে ভারত, কোন কারণে যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানী সরবরাহে ব্যর্থ হলে অন্য দেশ (ইউকে, রাশিয়া ও ফ্রান্স) থেকে কেনার জন্য বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে; এমনকি যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোন সময়ে জ্বালানী সরবরাহ বন্ধ করতে এবং আগের সরবরাহকৃত জ্বালানী ফিরিয়ে নিতে পারবে। এই অংশটুকুই ভারতের উপর যুক্তরাষ্ট্রের খবরদারি চালানোর নিশ্চয়তা দেয়। মান্থলি রিভিউ এভাবে বিষয়টিকে তুলে ধরেছে:
"Let us be clear then as to what this agreement entails: the U.S. openly gains the power to threaten to deny ongoing fuel supplies (and even the forcible removal of supplies previously given) in order to control future Indian policy. Is this a remote speculation? We must recall that in the 1970s the U.S. unilaterally cut off all fuel supply to Tarapur, in material violation of the previous "123" agreement between the U.S. and India of 1963. "
"It is an unequal colonial treaty that openly subjects a potentially significant share of India's energy generating potential to future U.S. blackmail"
৩ আগস্ট, ২০০৭ এ "ভারত-যুক্তরাষ্ট্র নিউক্লিয়ার সমঝোতা" নামে সমঝোতা পত্র প্রকাশিত হয়। তখন থেকে ভারতীয় মিডিয়া এটিকে বেসামরিক নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি "বাণিজ্য", "সরবরাহ" বা "প্রবাহ" এসব হিসাবে দেখিয়ে এর পক্ষে জনমত প্রতিষ্ঠায় রত। বাকি ছিল মার্কিন কংগ্রেসে এটি পাশ হওয়ার। তাও এ বছরে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সিনেটে এটি ৮৬-১৩ ভোটে পাশ হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে, পক্ষে ভোট দিয়েছেন যেমন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ম্যাককেইন, রিচার্ড লুগার; তৎকালীন ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী (বর্তমানে প্রেসিডেন্ট) বারাক ওবামা, তার রানিং মেট জো বিডেন সকলেই পক্ষে ভোট প্রদান করেন। অবশেষে গত সেপ্টম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক চাপ ও ভারতীয় লবির তীব্র প্রচারণায়- Nuclear Supplier Group (NSG) ভারতকে বিশেষ "ছাড়" দিতে রাজী হয়, (১৯৭৪ সালে পারমাণবিক এক্সপ্লোশন ঘটানোর জন্য ভারতের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এই NSG নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি-জ্বালানী সরবরাহ ও বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল)- এই ছাড়ের ফলে ভারত NSG দেশ সমূহের সাথে নিউক্লিয়ার বাণিজ্যের অধিকার লাভ করে।
ভারতীয় বুর্জোয়া মিডিয়া বা বিপ্লব পালেরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের যুক্তিকেই সামনে আনছে; জানানো হচ্ছে যে, ভারতের ২২ টি নিউক্লিয়ার পাওয়ার স্টেশন তার তার ক্যাপাসিটির ৪০% এ চলছে এবং এগুলো প্রকটভাবেই ইউরেনিয়াম সংকটে ভুগছে। এসব ঠিক আছে- ইউরেনিয়াম পেলে, নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কিছু বাড়বে ঠিকই- সাথে এটাও ঠিক যে- এই ইউরেনিয়াম ও নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি ভারতের নিউক্লিয়ার পাওয়ারকে আরো শক্তিশালী করবে।
এই বিষয়টি বিপ্লব পালেরা না বুঝলে (বা বুঝতে না চাইলে) কি হবে, এশিয়ার অন্য দেশসমূহ ঠিকই বুঝতে পারছে। বিশ্লেষকগণ মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের এই সামরিক ঘনিষ্ঠতা এশিয়ায় সামরিক প্রতিদ্দবন্দ্বিতাকেই বৃদ্ধি করবে এবং এশিয়াকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।
চীন প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করে এসেছে। শেষ পর্যন্ত সেপ্টেম্বরে যখন ডিলটি NSG এর সামনে এলো- তখন চীন এর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। এক পর্যায়ে ভারত-চীন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায়, কিন্তু এ মুহুর্তে অতিমাত্রায় ভারত বিরোধিতা ভারতকে আরো যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ করতে পারে এ বিবেচনায় শেষ অবধি চীন পিছু হটে। তার মানে এই নয় যে, সে থেমে আছে। "মায়ানমারের সাফ্রোন বিপ্লব" নিয়ে লেখাটিতে চীনের কিছু উদ্যোগের কথা লিখেছি (যারা পড়েননি আশা করি পড়বেন)।
ওদিকে ভারত-প্রতিবেশী পাকিস্তান শুরু থেকে এই চুক্তির বিরোধিতা করে এসেছে। পাকিস্তান বারবার জানিয়েছে, ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের এই নিউক্লিয়ার ডিল উপমহাদেশে শক্তির ভারসাম্য ক্ষুণ্ণ করবে এবং এটা এ অঞ্চলে সামরিক/অস্ত্র প্রতিযোগিতাকেই তীব্র করবে। অবশেষে যখন এই চুক্তিকে ঠেকানো গেলো না তখন পাকিস্তানের অন্য সুর দেখা গেলোঃ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা জিলানী ঘোষণা করলেন,
"Now Pakistan also has the right to demand a civilian nuclear agreement with America. We want there to be no discrimination. Pakistan will also strive for a nuclear deal and we think they will have to accommodate us."
মন্তব্য
প্রিয় দিনমজুর, কিছু মনে করবেন না। মুক্তমনায় কে কী লিখলো, তার প্রতিক্রিয়া কি মুক্তমনায় দেওয়া সম্ভব নয়? এর আগে একদিন দেখলাম অভিজিৎদাও সেখানে কার লেখা পড়ে দারুণ একচোট হাসাহাসি করেছিলেন এখানে। সমস্যাটা কোথায়?
পাঠক হিসেবে তর্কের এই পাত্রান্তরে আমি বিরক্ত। সচলায়তনে মুক্তমনার লেখার প্রতিক্রিয়া হিসেবে নয়, সচলায়তনের জন্যেই লিখুন না কেন?
হাঁটুপানির জলদস্যু
প্রিয় হিমু,
আপনার বিরক্তি উৎপাদনের জন্য দুঃখিত। কিন্তু আমি আসলেই এতে সমস্যা দেখিনি - এখনো দেখছি না।
এবং আমি এটাতো সচলায়তনের জন্যই লিখেছি। যেকোন জায়গার যেকোন মতের ব্যাপারে আমার মতামত- (দ্বিমত হোক আর একমত হোক না কেন) জানাতে অসুবিধা কি? বিপ্লব পালের যে চিন্তা- সেটা কিন্তু একা বিপ্লব পালের চিন্তা নয়। এ চিন্তা অনেকেই বিশেষত ভারতের প্রচার মাধ্যমের কল্যাণে ভারতের শিক্ষিত মিডল ক্লাসের একটা বড় অংশই সে চিন্তা ধারণ করে। ফলে- সেরকম চিন্তা তুলে ধরলে এবং ঐ চিন্তার বিপরীতে আমার অবস্থান তুলে ধরলে- কোন সমস্যা আছে বলে আমার মনে হয় না। এটা সচলায়তনের পাঠকদের জন্য অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে হয় না, বা এমন তো নয় যে- বিষয়টি বিপ্লব পালের সাথে মতবিরোধের বিষয়- (তাহলে তো শুধু বিপ্লব পালের সাথে পত্রালাপ করলেই হতো!), আমি মনে করি- এ বিষয়টিতে সচলায়তনের পাঠকদের জন্যও চিন্তার খোরাক আছে। এমনকি অভিজিতের ঐ পোস্ট এখানে থাকাতেও সমস্যা দেখিনি। বাস্তবে সেটি সচলায়তনে না থাকলে আমার চোখে পড়তো না; এবং আমি সে পোস্ট পড়তে পারতাম না বলেই মনে হয়। এর আগেও আমার আরেকটি পোস্টেও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা "একতা"র একটি প্রবন্ধের কিছু বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া ছিল, সেটাও কি এখানে দেয়া ভুল হয়েছে? প্রথম আলোতে সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদের একটি প্রবন্ধের প্রতিক্রিয়ায় আমি আরেকটি লেখা লিখেছিলাম (এখানে দেয়া হয়নি- কেননা অন্য ব্লগে আগে দিয়ে ফেলেছিলাম)- এখন এমন প্রতিক্রিয়া পোস্ট যদি ব্লগগুলো দিতে না দেয়, তবে লিখবো কোথায়? (আমার একটা বড় অংশ লেখা তো এরকম বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ায় লেখা!!)
তবে- আমার মনে করায় তো কিছু যায় আসে না; এমন প্রতিক্রিয়া পোস্ট দেয়া যদি আপনাদের নীতিমালাবিরোধী হয়ে থাকে, জানাবেন- এমন পোস্ট আর কখনো আপনাদের সচলায়তনে প্রকাশ করবো না, কেমন? আর বেশী সমস্যা তৈরী হলে বা বেশী বিরক্তি তৈরী করলে প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে ফেলুন।
(দুঃখিত, আমার মন্তব্যটি কিছুটা কর্কশ হয়ে গেলো! আমি আসলেই দুঃখিত। আপনি শুরু করেছেন "কিছু মনে করবেন না" বলে। কিন্তু মনে না করে থাকতে পারিনি। "সচলায়তনের জন্য লিখুন"- এটা বলায় কষ্টই তৈরী হয়েছে; কেননা আমি সচলায়তনের পাঠকদের এ লেখা পড়ার জন্যই দিয়েছিলাম।)
নীতিমালাবিরোধী কিছু হয়নি। তবে বিপ্লব পালের বৃত্তান্ত ছাড়া লেখাটা পড়তে পেলে আপনাকে এই মন্তব্য দিতে হতো না। যেভাবে অভিজিৎদার লাইসেঙ্কোয়িজমেও ইমরান হাবিব রুমনের বৃত্তান্ত অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছে। আর মূলধারার খবরের প্রতিক্রিয়ার সাথে এই অনলাইন লেখকসমাবেশ এর লেখার প্রতিক্রিয়ার পার্থক্য তো রয়েছেই। আমি মনে করি মুক্তমনায় বিপ্লব পাল বা রুমন বা আদ্যানাথের মেসোর বক্তব্যের প্রত্যুত্তর সেখানে দেয়া সম্ভব এবং শোভন। যদি আপনি সেই বক্তব্যে প্রত্যুত্তর হিসেবে লেখাটা না সাজান, তার রেফারেন্স না দিলেও তো চলতো, তাই না?
আপনার মন্তব্য থেকে যা অনুমেয়, তা হচ্ছে আপনি পাঠক হিসেবে আমার প্রতিক্রিয়াকে মডারেটর হিসেবে আমার বক্তব্য ধরে নিয়েছেন। সেজন্যেই বাংলা হরফে পরিষ্কার করেছিলাম ব্যাপারটা। আমি সচলের একজন সাধারণ সদস্য এবং পাঠকও বটি, এবং সেই ভূমিকাতেই স্বনামে সময় কাটাই দুয়েকটা ব্যতিক্রম ছাড়া। সেভাবে আমার ফিডব্যাক নিলে উপকৃত হই।
হাঁটুপানির জলদস্যু
আমেরিকা যার বন্ধু তার আর অন্য কোন শত্রুর দরকার হয় না।
উক্তিটা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর না ?
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
না। উক্তিটা রেজা খান পাহলভীর। তিনি ভাবছিলেন ১৯৭৯'র বিপ্লবের থিকা এম্রিকা তারে বাঁচাইবো...
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
- হিমুর কথায় সমর্থন। সচলায়তন তো দৈনিক পত্রিকা নারে ভাই, যে দিলাম একটা ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া পাঠিয়ে। আপনার লেখার ইস্যুটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু পাঠক হিসেবে আশা করতেই পারি যে আপনার লেখাটা অন্য কোনো সাইটের লেখার প্রতিক্রিয়ায় না হয়ে কেবলই আপনার ভাবনা প্রতিফলনকারী একটা লেখা হয়ে উঠিক সচলায়তনে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমি এটা বিপ্লব পালের লেখার প্রতিক্রিয়া হিসাবে নয়, আপনার স্বতন্ত্র লেখা হিসাবেই ধরছি। সেইমত আলোচনা চালানো যাক।
সুতরাং আপনার কয়েকটা তথ্যের সূত্র আগে জেনে নিই -
প্রথমে আপনি এর সূত্র দিন -
দ্বিতীয় তথ্য হিসাবে বলব, চিনের অন্তত এই বিষয়ে আপত্তি জানানোর কিছু নেই, কারণ চিনের সাথে আমেরিকার একইরকম সিভিল-নিউক্লিয়ার চুক্তি (চুক্তির লিঙ্ক, চুক্তির আলোচনা, চুক্তির ডিক্লারেশন) আছে। সেই শর্তগুলো আরেকবার ঝালিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এবং আমার ধারণা, তখন (জুলাই ১৯৮৫) চিনের সাথে এই চুক্তি করার উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েতদের দমিয়ে রাখা, আজকে যে কারণে ভারতের সাথে চুক্তি হচ্ছে। কিন্তু চিনের তাতে লাভই হয়েছে, ভারতেরও এতে লাভই হবে। (রাশিয়ার সাথেও সম্প্রতি সিভিল-নিউক্লিয়ার চুক্তি হয়েছে আমেরিকার)
তৃতীয় তথ্য হল যে এই চুক্তির সাথে সাম্রাজ্যবাদের কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে আমি বাম-দলের সমর্থনে আছি। কিন্তু তার জন্য এই চুক্তি দায়ী নয়, দায়ী দেশের কিছু রাজনীতিবিদের মস্তিষ্ক-বিকৃতি। যে নিয়ে আমি আলাদা আলোচনা করতে পারি কিন্তু সেগুলো এর সাথে সম্পর্কিত নয়। সিভিল-নিউক্লিয়ার চুক্তি শুধুমাত্র জ্বালানী চুক্তি। এই চুক্তি করায় চিনও আমেরিকার গোলাম হয়ে যায় নি (১৯৮৫ থেকে ২০০৮-এ গোলাম হয়ে যায়নি যখন, আগামী কিছু বছরেও হবেনা আশা রাখি), ভারতও হবে না।
সবশেষে আসি দুমুখো নীতির কথায়। আমার তো মনে হয় সবথেকে বড় দুমুখো নীতি হল NPT আর CTBT. উভয়েই কিছু দেশকে নিউক্লিয়ার পাওয়ার বলে স্বীকৃতি দিয়ে দেয় আর বাকিদের দেয় না। কি কারণে? কোনো কারণ নেই। যদি কোনো নীতি বানাতেই হয়, তাহলে আগে এই দুটো চুক্তি বাতিল করে গ্লোবাল নিউক্লিয়ার ডিস-আর্মামেন্ট এর সূচনা করা হোক। অস্ত্র-প্রতিযোগিতা বন্ধে এটাই একমাত্র পদক্ষেপ হতে পারে।
(আগে থেকেই বলে রাখছি, ব্যক্তিগত আক্রমণ না করে আলোচনা করলে আমি আলোচনা চালাতে রাজি)
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
সহমত জ্ঞাপন করলাম
দিগন্তের তোলা প্রসংগুলো নিয়ে লেখকের মন্তব্য জানতে ইচ্ছুক।
দিগন্ত,
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
১।
১৪ নং আর্টিকেল (TERMINATION AND CESSATION OF COOPERATION) এর ১ নং ধারায় আছে "Either Party shall have the right to terminate this Agreement prior to its expiration on one year's written notice to the other Party". অর্থাৎ "চুক্তি অনুসারে ভারতও জ্বালানী কেনা বন্ধ করতে পারে বা আমেরিকাও পাঠানো বন্ধ করতে পারে"। কিন্তু বুঝতে হবে, ভারতের জ্বালানী-প্রযুক্তি কেনা বন্ধ করা আর যুক্তরাষ্ট্রের বিক্রয় বন্ধ করা এক বিষয় নয়; যেহেতু জ্বালানী কিনছে ভারত- সুতরাং ভারতই জ্বালানীর জন্য নির্ভরশীল। যাহোক- এগ্রিমেন্টের মেয়াদকাল যেহেতু একবছর- সেহেতু এক বছর পরে এগ্রিমেন্ট টার্মিনেশের এখতিয়ার উভয়ের হাতেই রাখা হয়েছে, এটাই স্বাভাবিক।
আমি জানিয়েছিলাম: "এমনকি যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোন সময়ে জ্বালানী সরবরাহ বন্ধ করতে এবং আগের সরবরাহকৃত জ্বালানী ফিরিয়ে নিতে পারবে"। এটার সূত্র আপনি এগ্রিমেন্টটির একই(১৪ নং) আর্টিকেলের ৪ নং ধারাটি দেখতে পারেনঃ
এখানে on or before অংশটুকু দেখুন। একবছরের এগ্রিমেন্টের মেয়াদ শেষে অথবা তার আগেই এরকম 'রিটার্ণ' এর অধিকার দেয়া হয়েছে। বলতে পারেন, এই অধিকার উভয় পার্টির (দেশের) জন্যই প্রযোজ্য। কিন্তু সেক্ষেত্রে আবার বলতে হবে, নিউক্লিয়ার ম্যাটেরিয়াল- ইকুয়েপমেন্ট- টেকনোলজি এসব আসলে ভারতে সরবরাহ করবে যুক্তরাষ্ট্র; ভারত যুক্তরাষ্ট্রে করবে না। ফলে- এই অংশটুকু ভারতকে চাপে (ব্ল্যাকমেইল করার জন্য!!) রাখার জন্য যথেস্ট।
এছাড়া আমি এটাও বলেছিলাম: "নিউক্লিয়ার জ্বালানি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেই কিনতে পারবে ভারত, কোন কারণে যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানী সরবরাহে ব্যর্থ হলে অন্য দেশ (ইউকে, রাশিয়া ও ফ্রান্স) থেকে কেনার জন্য বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে"।
এটির তথ্যসূত্রও আপনি এগ্রিমেন্টেই পাবেন। আর্টিকেল ৫ (TRANSFER OF NUCLEAR MATERIAL, NON-NUCLEAR MATERIAL, EQUIPMENT, COMPONENTS AND RELATED TECHNOLOGY) এর ৬ নং ধারার খ (৪) নং উপধারায় আছে:
আপনাকে এই অংশটুকুর দিকে দৃষ্টি দিতে বলবো: a disruption of fuel supplies to India occurs। এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী ভারতে একমাত্র জ্বালানী-সরবরাহকারী যুক্তরাষ্ট্র। ফলে, ভারতে এই disruption of fuel supplies একমাত্র যুক্তারষ্ট্রের কারণেই ঘটতে পারে। আর তখন কি করা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত যৌথভাবে বন্ধুপ্রতিম সরবরাহকারী রাষ্ট্রসমূহের (রাশিয়া, ফ্রান্স, ইউকে) সাথে বৈঠক আয়োজন করবে!
আশা করি, আমার বক্তব্যের তথ্যসূত্র পেয়েছেন।
২।
এ আলোচনার উদ্দেশ্য পরিষ্কার হলো না। বিষয়টি কি এমন যে, "বাবা তুমি নিজে খাইতে পারো- অন্যে খাইতে চাইলে তাতে কেন বাগড়া দেও? নিজে খাইয়া-দাইয়া আরেকজনের খাওনে বাঁধা দেওন কি নৈতিক?"
দেখুন, এখানে চীনের বাঁধা দেয়ার নৈতিক অধিকার আছে কি না সে নিয়ে আমি মোটেও আলোচনা করছি না। বাস্তবতা হচ্ছে- চীন এই চুক্তির বিরোধিতা করেছে- করছে। সেটা করছে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়া বা এশিয়ায় তথা দুনিয়ায় ভূরাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জন ও বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে, একে অপরের উপর আধিপত্য বিস্তারের লক্ষে। এই কামড়া-কামড়ি তুলে ধরাই তো উদ্দেশ্য ছিল। আর যে কারণে পোস্ট লিখেছি সেটি তো আগেও বলেছি, ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের এই এগ্রিমেন্টকে অনেকে নিছক বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর জায়গা থেকে দেখাচ্ছেন। সেটা যে মস্ত ফাঁকি ও প্রতারণা- তা চীন ও অন্য দেশসমূহের কার্যক্রমেই পরিষ্কার। চীন নিজে যেহেতু এই চুক্তি আগে করেছে- ফলে সে জানে, এটা ভারতের সাথে হলে তার ফল কি হবে?
৩।
চীনের সাথেকার যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তিটি আপনার কথামত একটু ঝালিয়েই নেয়া যাক:
চীন-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির ২ নং আর্টিকেলের (SCOPE OF COOPERATION ) ১ নং ধারায় আছে:
আপনি যদি এই ধারার সাথে ইন্দো-যুক্তরাষ্ট্র এগ্রিমেন্টের ২ নং আর্টিকেল (SCOPE OF COOPERATION) এর ১ নং ধারা মিলিয়ে দেখেন- তবে প্রথমেই যেটি দেখবেন সেটি হলো ভারতের সাথেকার চুক্তিটিতে "The parties recognize, with respect to the observance of this agreement, the principle of international law that provides that a party may not invoke the provisions of its internal law as justification for its failure to perform a treaty" অংশটুকু নেই। এই আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সংগতি থাকার বিষয়টি না থাকায় ভারতের উপর ছড়ি ঘোরানোর বড় ধরণের মওকা লাভ করলো যুক্তরাষ্ট্র। কেননা- national laws, regulations and license এসব নিজের সুবিধামত যেকোন সময় পাল্টিয়ে এগ্রিমেন্ট থেকে সরে আসার অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের থাকলো (ভারতেরও আছে- কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না)। এবং যুক্তরাষ্ট্র এরকম কাজ আগেও করেছে। ফলে- এই চুক্তিটি অবশ্যই হয়েছে একতরফা, চীনের এগ্রিমেন্টকে তাই সেরকম একতরফা বলতে পারবেন না- এবং এ কারণেই এখন পর্যন্ত চীনকে যুক্তরাষ্ট্র তার অনুগত বানাতে পারেনি।
৪।
NPT আর CTBT যে অস্ত্র/সামরিক প্রতিযোগিতা বা যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে না, পারবে না সেটা আজ প্রতিষ্ঠিত সত্য। যেমন করে সবাই জানে যে, জাতিসংঘের পক্ষে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তারপরেও এগুলোকে সামনে আনা হয় একারণে যে, এগুলো দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী মোড়লদের দুই নম্বরী খুব সহজে সকলের সামনে তুলে ধরা যায়। ভূয়া পারমাণবিক অস্ত্র/জীবাণু অস্ত্রের অভিযোগ তুলে ইরাককে ধ্বংস করা হয়- ইরানকে ক্রমাগত যুদ্ধের হুমকি দেয়া হয়; আর উল্টোদিকে NPT ও CTBT তে স্বাক্ষর না করা- NPT ও CTBT এর শর্তবিরোধী পারমানবিক পরীক্ষণ চালানো ভারতের সাথে যে পারমাণবিক আদান-প্রদান চুক্তি করা হয়; তা বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের চুড়ান্তরকমের ভণ্ডামি- সেটিই আমাদের সামনে পরিষ্কার করে দেয়।
আপনি যে গ্লোবাল ডিস-আর্মামেন্ট এর কথা বললেন, সেটিও তো একরকমের ভণ্ডামি। এই কথার ধোয়া তুলেই তো NPT ও CTBT, PTBT, ABM----- ইত্যাদি নানাবিধ ভূমিকা নিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রই এসবে অগ্রগামী ভূমিকা নিয়েছে- যেনবা যুক্তরাষ্ট্র দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কত আন্তরিক- কত দরদী!!
বুঝতে কারোরই কোন সমস্যা হয় না যে, ইতোমধ্যে নিউক্লিয়ার পাওয়ারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রের অন্যদের সাথে নিয়ে নতুন পারমাণবিক পরীক্ষণ না করলে, কিছু অস্ত্র ধ্বংস করলে বরং যুক্তরাষ্ট্রেরই অপ্রতিদ্বন্দ্বী থাকাটাই নিশ্চিত হয়। NPT এর প্রধান তিনটি শর্ত বা ধারা হচ্ছে:
১) nonproliferation,
২) disarmament,
৩) the right to peacefully use nuclear technology।
বোঝাই যায় ৩ নং টি পুরোটাই ধাপ্পাবাজি। একই ভাবে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বা ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের নিউক্লিয়ার এগ্রিমেন্ট প্রভৃতিতে শান্তিপূর্ণ, শান্তি, সিভিলিয়ান প্রভৃতি শব্দগুলো ধাপ্পাবাজি ছাড়া কিছুই নয়। যাহোক যেটা বলছিলাম, এসমস্ত চুক্তি- disarmament সবই দুনিয়ার শান্তিকামী মানুষের সাথে নিয়ত ব্যঙ্গ করেই যাচ্ছে (অনেকটা এমনঃ কোন এক গ্রামে এক মোড়লের গোটা পঞ্চাশেক যাঁতাকল ছিল- যেটির ভয় দেখিয়ে সে গ্রামের লোকের উপর ছড়ি ঘোরাতো। তো আরো কিছু ছোট মোড়লের আবির্ভাব ঘটলো- এবং ছোট মোড়লদের কারো ২টা, কারো ৫ টা যাঁতাকল তৈরী করলো; এখন বড় মোড়ল বড় দরদ দেখিয়ে ঘোষণা করলো- আসুন সবাই মিলে চুক্তি করি- আর কোন নতুন যাঁতাকল তৈরী করা হবে না এবং সবাই নিজেদের অন্তত ৫ টি করে যাঁতাকল ধ্বংস করে ফেলি--- ইত্যাদি)।
নোবেল জয়ী নাট্যকার হ্যারল্ড পিন্টার এর নোবেল বক্তৃতা থেকে তাই বলি:
এক বছরের নোটিশে চুক্তি বন্ধ আর জিনিসপত্র ফিরিয়ে নেবার শর্ত খারাপ কিছু দেখি না। কারণ তাতে বর্তমানের থেকে আলাদা খারাপ কিছু হবে না। ভারতে এমনিতেও ইউরেনিয়াম পাওয়া যায় না। তাই বিদেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতেই হত। আর্টিকেল ১৪-৬ অনুসারে জিনিসপত্র ফিরিয়ে নিতে হলে ক্ষতিপূরণও দিতে হবে - "If either Party exercises its right of return pursuant to paragraph 4 of this Article, it shall, prior to the removal from the territory or from the control of the other Party, compensate promptly that Party for the fair market value thereof and for the costs incurred as a consequence of such removal"
এটা আবার কোত্থেকে এল? আর্টিকেল ১৬-২ দেখুন, মেয়াদ হল ৪০ বছর।
- চুক্তি অনুসারে ভারতে জ্বালানী সরবরাহকারী একমাত্র দেশ আমেরিকা নয়। এটা কোথাও পেলাম না। এমনিতে ভারত সরকারের সাথে ফ্রান্স আর রাশিয়ার চুক্তি হয়ে গেছে জ্বালানী সরবরাহের জন্য। চুক্তির পরবর্তী পদক্ষেপ হিসাবে নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপে চুক্তি পাশ হবার সাথে সাথেই এই সুবিধা পাওয়া গেছে। ফ্রান্স থেকে রিয়াক্টার আনার চুক্তিও হয়ে গেছে।
চিনের সাথে চুক্তিটা আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, ভারতের সাথে চুক্তি তা নয়। ভারতের সাথে চুক্তির পরে আন্তর্জাতিক আইন 'বাইপাস' করে চুক্তিকে আন্তর্জাতিক এটমিক কমিশনে পাস করানো হয়েছে। চুক্তি হয়েছে তার আগে, তাই আন্তর্জাতিক আইনের কথা লেখা থাকার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তা সত্ত্বেও আর্টিকেল ১৬-৪ এ লেখা আছে - " This Agreement shall be implemented in good faith and in accordance with the principles of international law."। তবে আবারও মনে করিয়ে দিই, আন্তর্জাতিক আইন মানার ক্ষেত্রে আমেরিকার রেকর্ড কিন্তু খুব একটা ভাল না। আমেরিকাই একমাত্র দেশ (একমাত্র) যারা গণতান্ত্রিক হয়েও আন্তর্জাতিক আদালতের রায় অমান্য করেছে। সুতরাং, চুক্তির বয়ানে আলাদা কিছু হল না।
বাকি সব ক্ষেত্রে আমি একমত আপনার সাথে। এটা মোড়লগিরি ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু তা বলে এতে ভারতের ক্ষতি হবে বলে আমি আশঙ্কিত নই, দেশের রাজনীতিবিদেরাই দেশের যতটা শত্রু, আমেরিকা ততটা নয়।
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
কথাটি কি আপনে ভেবে বললেন? আপনি নিজে কি দোকানে গিয়ে এই শর্তে কোন পণ্য কিনতে রাজি হবেন যে দোকানদার চাইলে আপনার কাছে বিক্রিত পন্যটি নোটিশ দিয়ে নিয়ে নেবে? সেই সাথে আবার এই এক বছরের নোটিশ দিয়ে একবছর শেষ হবার আগেই জিনিস ফিরায় নেয়ারও বিধান রাখা হয়েছে!! কোন একটি স্বাধীন দেশ আরেকটি দেশের সাথে এরকম কোন চুক্তি করতে পারে? কেননা এর মানে হলো পারমাণিবক জ্বালানী, প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে ভারতকে আমেরিকা জিন্মি করে রাখবে এই হুমকীতে যে --- যদি আমার এই এই দাবী না মান, যদি আমারে এই সুবিধা না দাও তাইলে আমি তোমারে যা দিছিলাম সব নিয়া নিমু! এই ভাবে জিন্মী থাকার চেয়ে তো জ্বালানী অনিশ্চয়তা বরং অনেক ভালো! আপনি ১৪-৬ আর্টিকেলে উল্লেখিত কমপেনসেশনের কথা বলতে পারেন, কিন্তু ভেবে দেখুন- সেই কমপেনসেশন (মার্কেট ভ্যালুতে) কি জ্বালানীর চেয়ে প্রয়োজনীয় হবে?
দুঃখিত, আমি আসলে বুঝাতে চেয়েছি- টার্মিনেশনের জন্য দেয় নোটিশের মেয়াদকাল এক বছর- এবং সেটা উভয় পার্টির হাতেই এখতিয়ার আছে। কিন্তু - এই নোটিশ অনুযায়ী এক বছর শেষ হবার আগেই যন্ত্রপাতি ফিরিয়ে নেবার অধিকারও দেয়া হয়েছে। সেটির দিকেই আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছি।
ভাই আপনে বুঝতে না চাইলে তো জোড় করে বোঝানো বা পাওয়ানোর সামর্থ্য বা ইচ্ছা কোনটাই আমার নাই।আর্টিকেল ৫এর ৬ নং ধারার খ (৪) নং উপধারা যোট আমি উদ্ধৃত করেছি সেটার If despite these arrangements, a disruption of fuel supplies to India occurs এর পর অন্য দেশথেকে জ্বালানী কিনতে গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যৌথ বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেয়ার বাধ্যবাধকতাই তো বিষয়টি স্পস্ট করে দেয়!!!
আপনার সেই একইরকম কথাটির জবাবেই আমি দেথিয়েছি যে তা মোটেই একইরকম নয়...
আন্তর্জাতিক আইন মানা না মানা তো পরের কথা। চুক্তির বয়ানে আন্তর্জাতিক আইন মানার ব্যাপারটি যদি উল্লেখ থাকে তবেই তো মানার প্রশ্ন- চুক্তি ভংগ করলে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার চাওয়ার প্রশ্ন। দুটি অসম শক্তি সম্পন্ন দেশ পরস্পরের সাথে চুক্তি করবে আর তাতে আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যতা থাকবে না--- এটাই তো পরিস্কার করে দেয় ভারতের দুর্বলতার বিষয়টি.. অধীনতার বিষয়ে। সুতরাং চুক্তির বয়ানে আন্তর্জতিক আইন মানার বিষয়টি উল্লেখ থাকা অবশ্যই আলাদা কিছু।
অস্ত্র ধ্বংস হোক, যুদ্ধ বন্ধ হোক- এটা সমস্ত শান্তিকামী মানুষেরই চাওয়া। কিভাবে হবে? অস্ত্রবাজদের দেখানো নিউক্লিয়ার ডিস-আর্মামেন্ট কর্মসূচীর মাধ্যমে? কোনদিনই সম্ভব নয়?
একমাত্র উপায় ও পদক্ষেপ হচ্ছে: দুনিয়াব্যাপী সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা। প্রয়োজন আরেকটি যুদ্ধ, মুক্তিকামী মানুষের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যুদ্ধ।
হিমু ও ধুসর গোধূলির সাথে একমত নই।হিমুর মন্তব্য ---
ইন্টারেস্টিং লেখা।
কিছু বক্তব্যর সাথে দ্বিমত আছে। অন্য ব্লগে লেখা হলেই যে এখানে লেখা যাবেনা, সেটা মনে করিনা। ভালো বিষয়, ভালো, চিন্তাশীল লেখা। পাঁচ দিলাম বিষয়বস্তুর জন্য।
জীবন জীবন্ত হোক, তুচ্ছ অমরতা
ধন্যবাদ।
দ্বিমতের জায়গাগুলো তুলে ধরলে খুশী হতাম।
নতুন মন্তব্য করুন