রক্তজবা
এক
ফুল ছাড়া পূজা হয়না কেন! এত ফুল থাকতে ঠাকুর কেন টিকিতে জবাটি পরেন! এমন ক্ষণস্থায়ী! নাকী সহজ প্রাপ্য বলে! টাটকা রক্তের মত তার রঙ, ঈশ্বরের রক্ত পিপাসার প্রতীক তো নয়! ফুল, ফল, বীজ। বীজ থেকে আবার ফুল, ফল, বীজ। এর পরম্পরা রক্ষার প্রতীক?
একটা অর্ধ চন্দ্রের মত পাউরুটির পর চার গ্লাস পানি খেয়ে, পেটে আপাতত যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ায়, মিথুন দর্শণের দৈন্যদশা দূর করতে চাইছে। পরের যুদ্ধ বিরতির মাল-মশলা যোগারে ব্যাস্ত হয়ে, আপাততঃ অর্জিত শান্তি নষ্ট করে কোন লাভ নেই। পরিকল্পনা করতে প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকায়, বিশ্বের বেশীর ভাগ মানুষ ক্ষুধা নামক চির শত্রুর সাথে কখনো দীর্ঘ মেয়াদী শান্তি পরিকল্পনায় যোগ দিতে পারেনা। সেটা মিথুন ভাল করে জানে বলেই আপাতঃ শান্তিটুকু নিংড়ে নিচ্ছে।
"ডাস" থেকে কিছু কেনার মত দুঃসাহস ওর কখনো হয়নি। জিন্স, টি-সার্ট পরা ছেলেরা, আড়ং-এর থ্রিপিস পরা মেয়েদের সাথে গল্প করতে করতে "ডাস"-এর চায়ের কাপে ফু দেয়।
টি.এস.সি-র "ডাস"-এর বিপরীত দিকের ফটকের পাশে, আদলা ইটের মত পাউরুটি মিলে (মাত্র!) দু'টাকায়, একটা আধুলিতেই মিনি কাপ চা। জীবনে বহুদূর যাবে বলেই বোধহয় মিথুন একটা ষ্টারফিল্টার ধরিয়ে, টেনে টেনে অর্ধেকে নিয়ে এসেছে। ততক্ষনে তাতালো চায়ের তাপ অনেকটা নেমে ওঁ পর্যায়ে এসেছে। কিন্তু মিথুন আরো ধীরে, আয়েস করে সে চা খাবে। মাঝে মাঝে বইয়ের পাতা থেকে চোখ না সরিয়েই, প্রেয়সীকে চুমো খাওয়ার মত, সিগারেটে টান দিচ্ছে। আদর করে মমতাময়ী মায়ের কপালে ঠোঁট ছোয়ানোর মত, চায়ের কাপটা ঠোঁটে ঠেকাচ্ছে।
গুরু লিখেছেন বটে! "মেয়েটির ভাবনা গুলো চাক ছাড়া মৌমাছির মত উড়তে লাগল, কোথা তারা মধুগন্ধ পেয়ছে।" কবি গুরুর "লিপিকা" টি নীলক্ষেত থেকে কিনে, রিহার্সেল-এ গিয়েছিল মিথুন। বইটা দেখে, ছোট খোকাকে আদর করার মত হাতে নিয়ে, দু'একটা পাতা উল্টে, মিথুনের হাতে ফেরত দিতে দিতে নিশি আপু বলেছিলেন;
খুব ভাল বই। ছোটবেলায় বড়দের ভয়ে, সোফার পিছনে ডুকে, লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তাম।
মিথুন সেদিন একটু অপ্রস্তুত হয়েছিল। কিন্তু এখন খোদ ওয়াহিদুল হক স্যারের প্রশংসায়, নিশি আপুর জন্য করুণাই হচ্ছে। পড়েছ বুঝলাম, বুঝেছ কী!
টি.এস.সিতে মিথুনের তেমন পরিচিত কেউ নেই। একে মিথুন জগাবাবুর পাঠশালায় পড়ে। নাটকের সুবাদে টি.এস.সিতে আসে। ঢা.বির ছাত্র হলে বন্ধু না হোক, হয়ত দু'একজন পরিচিত অন্তত থাকতে পারত।
নাটকের দলে ঢুকে মিথুন বুঝতে পারল যে, তার সব কথা ভুল। অবস্হা এমন যে মুখ খুলতেই সাহস হয়না। অথচ বিদ্যার সাগরে স্নান প্রার্থী। মিথুনের সব উচ্চারণ ভুল। নাট্যদলের পরামর্শে ২৫০ টাকা দিয়ে কন্ঠশীলনে ভর্তি হয়েছে। টাকাটা যোগার করতে খুব বেগ পেতে হয়েছে মিথুনকে। কিন্তু আজ সয়ং ওয়াহিদুল হক স্যারের প্রসংশায় মনে হচ্ছে টাকাটা বৃথা যায়নি। সিদ্ধি গল্পের ভাবটা মিথুনের সামান্য দু'একটা ভুল উচ্চারণেও ওয়াহিদুল হক স্যার সবচেয়ে বেশী পছন্দ করলেন। চাট্টিখানি কথা! মিথুনের জন্য একটা বিরাট পাওয়া। অনেকেই অন্য একটা মেয়ের পক্ষে রায় দিয়েছে। তার উচ্চারণ সাংঘাতিক রকম ভাল। কিন্তু ভাবটা ধরা দেয়নি। মেয়েটি তাতে একটু হতচকিত হয়েছে কিন্তু বিমর্শ হয়নি।
কন্ঠশীলনের প্রায় সবাই বাইরের। দু'একটা ছেলেমেয়ে আছে ঢা.বি-র হলে থাকে। অনেকেই কর্মজীবি। কেউ গান করে, কেউ আবৃত্তি, মিথুন ছাড়া আর দুজন নাটক করে। সকাল আটটায় একটি মাত্র ছুটির দিনে এখানে আসা একটু কষ্টের বৈকী। বারটা পর্যন্ত কালি দাসের মেঘদূত থেকে গগন হরকরার পদ্যে এসে দম নিয়ে আবার চলতে চলতে কবিতার গদ্যকে ছুতে হয়। মাঝখানে বিরতির মত আসে তসলিমা নাসরিনের ঘরগৃহস্হালী। বাংলা ভাষার ইতিহাস আরো কত হাবিজাবি। মিথুন তার ভগ্নাংও বুঝে না। তবু বসে থাকে, আর শোনে।
ছুটির পর যে যার বাড়ি চলে যায়। দু'একজন একটু আড্ডাদিয়ে ধীরে সুস্হে ঘরে ফেরে। এদের সাথে মিথুন কথাই বলতে পারে না। একেকজন নির্ভুল উচ্চারণে অচেনা সব কবির কবিতা আউড়ে যায়! মিথুন এদের নামও শোনেনি। অনেকে আবার ইংরেজী কবিতাও বলে। অবশ্য মিথুনকে এরা ডাকেও না।
কাল মেরাথন ঘুম হয়নি। সকাল সাতটার মধ্যে বের হতে হলে, ছটায় ঘুম থেকে উঠতে হয়। অন্যদিন যাই হোক, শুত্রবারে কন্ঠশীলনে আসার সময় মিথুন যত্নের সাথে খদ্দরের পান্জাবী পরে আসে। কাধে ঝোলানো চটের থলেতে লিপিকা আর ছড়ার স্ক্রিপ্ট। ছুটির দিন বলে বাসে তেমন ভীর থাকে না। পান্জাবীর পাট না ভাঙ্গিয়ে গন্তব্যে পৌঁছা যায়।
চায়ের শেষ চুমুক, সিগারেটের শেষ টানের অনাগত আনন্দের আশায়, মিথুন একটু শিহরিত হল কী? বইটা বন্ধ করে সযত্নে পাশে রেখে, মিথুন চায়ের শেষ বিন্দুটুকু পান করে, সিগারেটে শেষ টান দিল।
দুই
কার পথচলা যেন মিথুনের কাছে এসে শেষ হল। কারো আসার আশায় নয়, নিতান্তই কৌতুহলবসে মিথুন বিশাল আকাশের দিকে চোখমেলে চাইল। চাঁদের স্নিগ্ধ আলোর মত শূন্য গগনে মেয়েটির মুখটা মিথুনের অসীমের পানে প্রসারিত দৃষ্টি যেন গ্রাস করেনিল।
মিথুনকে আরো অবাক করে দিয়ে ময়েটি বলল: কনগ্রাচুলেশন!
কিছু বুঝে উঠার আগেই দ্বিতীয় আক্রমনের মত মেয়টি বলল: একটু বসতে পারি?
মিথুন: বসুন বসুন!
মৃদু হেসে হাতের ব্যাগটা পাশে রেখে মেয়েটি গাছের ছায়ায় মিথুনের মুখমুখি বসল।
মেয়েটির সাথে মিথুনের কোন রোমান্টিক ব্যাপার অসম্ভব জেনেও মিথুন জড়তা মুক্ত হতে পারলনা। হয়ত ভুল উচ্চারনের ভয়েই।
অবস্থাটা অন্যরকম মনে হওয়ায় মেয়েটি বলল: কারো জন্য অপেক্ষা করছ?
মাথা নেড়ে মিথুন বলল: আরে না, কার জন্য অপেক্ষা করব! মানে আমার উচ্চারণ তো ভুল। তাই...
মেয়েটি মিথুনের কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল: আরে ধ্যাৎ! ওটা কোন ব্যাপার হল! স্যার স্বয়ং তোমার কত প্রশংসা করল!
মিথুন: যাই বল, এখানে না এলে জানতেই পারতামনা যে, কত কথা ভুল বলি।
মেয়ে: আনেকে সঠিক উচ্চারণে অনেক কথা ভুল বলে, তা জান!
মিথুন: তুমি কেন কন্ঠশীলনে আস? মানে তোমার উচ্চারণ তো খুব সুন্দর!
মেয়ে: (কপট রাগে) সুন্দর না ছাই! তার পর স্বাভাবিক কন্ঠে বলল: এম্নিই সময় কাটে না। এই তো সপ্তাহে একটা দিন একটু বের হতে পারি। পড়া-লেখা শেষ। মেয়ের কষ্ট হবে ভেবে বাবা চাকুরী করতে দেন না। অথচ বই আর পত্রিকা পড়ে সময় কত আর পার করা যায় বল?
মিথুন: তা বিয়ে টিয়ে করে ফেললেই পার!
মেয়ে: সে কথা সবাই বলে।
মিথুন: সরি, মুখে এসে গেল।
মেয়ে: ঠিকইতো বলেছ, তার জন্য দুঃখিত হবার কারণ নেই। মেয়েটি দীর্ঘ নিঃস্বাশ ছাড়ল।
মিথুন ফাপরে পড়েগেল, সহসা কোন কথা খুঁজে পেলনা।
মেয়েটি জিজ্ঞেস করল: বাড়ি যাবে না?
মিথুন এবার কথা খুঁজেপেল: বাড়ী! সেতো অনেক দূর। নোয়াখালী।
মেয়ে: না, মানে ঢাকায় যেখানে থাক।
মিথুন: সত্যিই, থাকার জায়গাও এই বিশাল শহরে নেই। সদরঘাটে একটা মেসে থাকি। মানুষের কোলাহলে মুখরিত, অন্ধকার গলির অন্ধকুপে গিয়ে এখন কী করব! তার চেয়ে এই এলাকাটা বেশ ভাল লাগে। এখানেই শুয়ে বসে, দিবা স্বপ্ন দেখতে দেখতে সময়টা পার করে দেই।
মেয়েটি একটু অপ্রস্তুত হল। কিন্তু পরের প্রশ্ন সহজেই খুজে পেল: কেন, হলে সিট পাওনি?
মিথুন: দেখ, হলে সিট পেতে হলে কোন দলের হতে হয়। এই নীতিহীন রাজনীতি ভাল লাগে না। কোন দলও করতে পারিনা, আর হলেও সিট পাই না।
মেয়ে: তা যা বলেছ, এসব দলনীতি কার ভাল লাগে!
মিথুন: সে জন্য নাট্যদলে নাম লেখালাম। জীবনের রঙ্গমঞ্চে সবাইতো নিরন্তর অভিনয় করে যাচ্ছে।
মেয়ে: তোমাদের দলের নাম কি?
মিথুন: দেশ নাটক।
মেয়ে: খুব সুন্দর নাম তো! তোমাদের নাটক দেখতে যাব।
মিথুন: একটা মঞ্চনাটকের স্ক্রিপ্ট পড়া হচ্ছে। হয়ত কয়েকদিনের মধ্যে রিহার্সেল শুরু হবে। কিন্তু আমরা মূলতঃ পথ নাটক করি।
মেয়ে: সেটাইতো সত্যিকারের নাটক। নাটককে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। বেশীর ভাগ নাটকে যে সব মানুষের কথা বলা হয়, তাদের ক'জন গাইড হাউস বা মহিলা সমিতির মঞ্চে টিকেট কিনে নাটক দেখতে যেতে পারে?
মিথুন: এই কারণেই গ্রুপটা ভাল লাগে, নাটক করতেও পয়সা লাগবে না, আর দেখতেও পয়সা লাগবে না। কিন্তু গ্রুপের অনেকের ইচ্ছা! মহিলা সমিতিতে শো করতে না পারলে আমরা নাট্যকূলে উঠলাম কি করে! তাই মঞ্চ নাটক করতেই হবে।
মেয়ে: যেখানেই হোক, আমি তোমার নাটক দেখতে যাবই।
মিথুন: আমি হয়তো দু'তিনটে ডায়লগের ছোট-খাট কোন কেরেক্টার পাব।
মেয়ে: তাতে কি! সবাইতো এমন ভাবেই শুরু করেছে। আর যাই বল; তুমি কিন্তু হৃদয় দিয়ে বলতে পার। অনেক বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও তা পারে না।
কথা গুলি মিথুনের খুব ভাল লাগল।
খেয়াল করে কোন দিন কার নামটি শোনেনি মিথুন। কারণ এদের কারো সাথে বন্ধুত্ব হতে পারে এটাই সে ভাবেনি। কিন্তু এখন পরিতাপ হচ্ছে। এত আন্তরিক মেয়েটি! অথচ তার নামটিও মনে রাখেনি। এখন কায়দা করে জিজ্ঞেস করার কৌশলটাও মাথায় আসছে না। তবু সাহস করে নিজের নামটাই আগে বলল।
মেয়ে: আমি জানি। আমাকে সবাই শিল্পী নামেই ডাকে।
শিল্পী: খদ্দরের পান্জাবীতে তোমাকে খুব স্যুট করে। তাছাড়া এই পরিবেশে পান্জাবীটাই শোভন। জিন্স-টিশার্ট নয়। আর তোমাকে একটু কবি কবি লাগে।
মিথুন: পামে ফেটে যাচ্ছি, আর দিতে হবে না। কিন্তু খদ্দর পরি কারণ; মাত্র চল্লিশ টাকায় একটা খদ্দরের পান্জাবী পাওয়া যায়। আর পরতেও ভাল লাগে।
শিল্পী: সেই ভাল লাগাটাইতো আসল। নিজের সংস্কৃতির কোন জিনিসটি আমরা ধরে রাখতে পারলাম বল!
মিথুন: তুমিও খুব মার্জিত কাপড় পর।
শিল্পী: (কপট অভিমানে) আর আমি বুঝি মার্জিত নই!
মিথুন: মোটেই না। মার্জিত মানে ঘষা-মাজা করে কোন জিনিসকে ব্যাবহারের উপযোগী করা। সেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যটা গৌন। কিন্তু তুমি প্রাকৃতিক ভাবেই খুব স্নিগ্ধ।
কিন্তু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে শিল্পীর মুখে চিন্তার ছায়া পড়ল। চারটা বেজে গেল!
শিল্পী: সরি মিথুন আমাকে এখনই উঠতে হবে। বাবা এতক্ষনে বাড়িতে হৈচৈ করে লংকা কান্ড বাধিয়ে ফেলেছেন নিশ্চই। ব্যাস্ত ভাবে উঠে চারিদিক তাকিয়ে একটা রিক্সা দেখতে পেল রেকেয়া হলের গেটে। কিন্তু সেদিক দিয়ে গেলে নীল ক্ষেতের মোড়ে জ্যাম অনিবর্য্য। তাই শাহাবাগের দিকে দ্রুত পা বাড়াল শিল্পী।
মিথুন: চল, একটা রিক্সা পর্যন্ত তোমাকে এগিয়ে দেই।
শিল্পী: না, লাগবে না। তুমি থাক এখানে। আমি ঠিক পেয়ে যাব।
মিথুন শিল্পীর এত ব্যাস্ততার কারণটা ঠিক ধরতে পারল না। কিন্তু পাশাপাশি হাটতে লাগল। আর ভাবল: দিনে দুপুরে একটা মেয়ে এতটুকু সময় বাইরে আছে তাতে এত দুশ্চিন্তার কি হল! মিথুনের ধারণা ছিল, বড় লোকের ছেলে মেয়েরা খুব স্বাধীন!
চারুকলা ইন্সটিটিউটের কাছাকাছি একটা রিক্সায় শিল্পী উঠে গেল। রিক্সায় উঠে শিল্পীর মনে হল! মিথুনকে কিছু না বলেই রিক্সায় উঠে গেলাম! ততক্ষনে ড্রাইবার প্যাডেলে দাড়িয়ে গেছে। রিক্সা চলতে শুরু করেছে।
শিল্পী: নেকষ্ট ফ্রাইডে মিস করনা কিন্তু। না এলে ভাবব; রাগ করেছ।
মিথুন: না না ঠিক আছে।
কিন্তু শিল্পী তা শোনল কিনা কে জানে।
এখন আর টি এস সি তে ফিরে যেতে ইচ্ছে করল না, গুলিস্তান গামী একটা মিনি বাসে ঝুলে পড়ল মিথুন।
তিন
অনেক দিন পরে, কি জানি কি মনে করে, শিল্পীর আজ শাড়ী পরার ইচ্ছে হল। শাড়ী যে শিল্পী অপছন্দ করে, তা কিন্তু নয়। কিন্তু চলাফেরায় খুব সুবিধা হয় না। ছেলেরা যেমন পান্জাবী পরে বাসে উঠতে পারে না, মেয়েরাও তেমন শাড়ী পরে রিক্সায় উঠতে পারে না। আর বেশীর ভাগ সময়তো রিক্সাতেই চলাফেরা করতে হয়। শাড়ী পরার সবচেয়ে বড় মুস্কিল; বাড়ীর কেউ দেখলেই যে করেই হোক ড্রাইভারকে ডেকে গাড়ীতে করে পৌছে দেবে, আবার আসার সময় ড্রাইভার গিয়ে নিয়ে আসবে। বেশীর ভাগ সময় কেউ না কেউ সাথে যাবেই। শিল্পী যেন কিন্ডার গার্টেনে যাচ্ছে। তার পাহাড়ায় কাউকে থাকতেই হবে! গাড়ীতে করে গেলেই অনেকে কেমন যেন একটা পার্থক্য তৈরী করে ফেলে। হয়ত ভাবে শিল্পী খুব বড় লোকের মেয়ে। ওর সাথে আমাদের মিলবে না। হয়তো অন্য কিছু ভাবে। কিন্তু শিল্পী ঠিক ধরতে পারে না, ভাবনাটা কী। হতে পারে ঈর্ষা। কারণ যাই হোক, একটা অলিখিত ব্যাবধান স্মৃষ্টি হয়ে যায়। হতে পারে সেটা শিল্পীর কমপ্লেক্স। হয়তো অন্যরা কিছুই ভাবছে না। সব চেয়ে বড় সমস্যা বাড়ীর লোক গুলো ফেউয়ের মত লেগে থাকে সব সময়। এত কেয়ার, যেন শিল্পীর কোন যোগ্যতাই নেই। নিজে কিছুই করতে পারে না। একটা বই কিনতে চাইলেও, বলা হয়; না তুই পারবি না, দাড়া অমুককে ডাকছি। যেন শিল্পীর দরকারী বইটা কাজের বুয়া শিল্পির চেয়ে ভাল চেনে! অথচ এই পৃথিবীতে কোটি কোটি মেয়ে শিল্পীর চেয়ে অনেক অনেক কঠিন সমস্যার সমাধান করছে! শুধু বই পড়ে পড়ে পাশ করা ছাড়া শিল্পী আর কিছুই পারে না।
কাজের লোকগুলো ছাড়া এখনো কেউ বেডরুমের বাইরে আসেনি। মেস্কি পরে একটু শীত শীত লাগছে। বারান্দার কচি রোদে চুলটা ঝাড়তে ঝাড়তে সাত-পাঁচ ভেবে অন্ততঃ আজকের মত শাড়ী পরার চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলল শিল্পী।
রিক্সায় বসে গত সপ্তাহের বিষয় গুলো একটু মনে করতে চাইল। কিন্তু সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল মিথুনের সাথে আলাপ চারিতা। এভাবে হুটকরে উঠে আসাটা ও কিভাবে নিল কে জানে। এত ব্যাস্ততার কোন প্রয়োজন ছিলনা। আরো ১৫ মিনিট দেরীতে ফিরলেও বাবা এইটুক বকাই দিতেন; আমার কোন কান্ডজ্ঞান নেই! যাই হোক বাড়ীতে এই সুযোগে বলা হয়ে গেল; বেলা ডুবার পরে তোমরা আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা, হাসপাতাল, পুলিশে রিপোর্ট করা এসব নিয়ে ভেব। তার আগে নয়। আর খুব জরুরী দরকার হলে আমি তোমাদের ফোন করব। এই শহরে আমাদের বাড়ী ছাড়া আরো অনেক জায়গায় ফোন আছে। এবং তাঁরাও মানুষকে আপদ-বিপদের সময় অন্ততঃ ফোন করতে দেয়। কথাগুলো বলে শিল্পীর নিজেকে একটু গর্বিতই লাগছিল। এসব ভাবতে ভাবতে রিক্সা কখন বলাকা-র সামনে চলে এসেছে শিল্পী খেয়ালই করেনি। কিন্তু এখন আর কিছু বলে লাভ নেই। তাছাড়া এখন রাস্তা ফাঁকা। দু'একটা গাড়ীর কর্কশ হর্ণ কানে লাগছে বটে। কিন্তু জ্যাম তো দুরের কথা, ভাল করে ভীড়ই হয়নি। কাজেই ব্যাস্ত হবার কিছু নেই। রোকেয়া হলের গেটের স্পীড ব্রেকারে ঝাকুনি খেয়েই স্বোপর্জিত স্বাধীনতা আর ডাসের ফাঁক দিয়ে সার্চলাইটের মত একটু দেখ নিল কেউ কোথাও আছে কিনা! টি এস সি এত ফাঁকা থাকতে পারে, কন্ঠশীলনে না এলে শিল্পী কখনো জানতেই পারতো না। রিক্সাওয়ালারা ইচ্ছে করেই সাথে ভাংতি রাখে না, নাকি সত্যিই এই রিক্সাওয়ার কাছে এই মূহুর্তে ভাংতি নেই সেটা শিল্পীর কখনো জানা হবে না। পাশে অন্য রিক্সাওয়ালাও নেই, যে ভাংতি এনে দেবে। রিক্সাওয়ালাদের অন্য কেউ; যেমন দোকানদার, খুব কমই ভাংতি দেয়। অথচ শিল্পী গেলে প্রায় সবাই তা করে। অবশ্য সব সময় শিল্পী তা করে না। ৫০ বা ১০০ টাকার নোট হলে করে। দশ বিশ টাকার নোটে এতটা হিসেবী না হলেও চলে। রিক্সাওয়ালা গরীব মানুষ, ছেলেমেয়ে আছে। তাই ১২ টাকা ভাড়া, বিশ টাকার নোটটা দিয়ে দিতে শিল্পীর তেমন সমস্যা হয় না।
ভেতরে ঢুকার আগে একটু চারপাশটায় আবার চোখ বুলিয়ে নিল। না তেমন পরিচিত কার চেহারা চোখে ভাসলনা। মিথুন যদি এসময় লেন্সে এসে যায়; হয়তো ভেবে নেবে, লেন্স দিয়ে তাকেই খোঁজা হচ্ছে। সে ভুল ধারণাটা মিথুনের মনে না জাগানোই ভাল। সৎ ভাবে কথা বলা যায়, এমন একটা বন্ধু যদি মিথুন হয়ে যায়, সেটাই অনেক বড় অর্জন। বাংলার নারী কুড়িতেই বুড়ি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে শিল্পী এখন বড়জোড় মিথুনের চাচী হতে পারে। তার বেশী কিছু নয়। সমবয়সী ছেলেমেয়েতে বিয়েই এখনো অনেক জটিল। মিথুনতো স্নাতক প্রার্থী মাত্র। শিল্পী থিসিস জমা দিয়েছে কবে! কাজেই মিথুনকে নিয়ে এত ভাববার কিছু নেই। এটাও শিল্পীর একটা কমপ্লেক্সই মনে করছে শিল্পী। মিথুন হয়তো এদিকে ভাবনার বৈঠাই ঘুড়াচ্ছে না! কিন্তু ক্লাসে ঢুকেও লেন্সটা আপনা থেকেই আবার ঘুরে গেল। শুধু মিথুন সে লেন্সের আওতায় এল না।
বিপ্লব দা কি রবি ঠাকুর হতে চায়! মনে হয় কখনো কামায়নি বলে পাতলা চাপ দাড়ি। কেমন যেন চেংরা ছেলের মত লাগে! হাওয়াই সার্টে কেমন হেংলার মত লাগে! পড়ায় ছড়া। আপদ হিসাবে ঝুটেছে পার্ফমেন্স। বোয়াল মাছের মত হা করে লাল পেড়ে শাদা শাড়ী পারা মেয়েটি কেঁদো কেদোঁ গলায় বিলাপ করছে যেন;
খোকা ঘুমাল পাড়া জুড়াল
পাড়া জুড়াল খোকা ঘুমাল
খোকা ঘুমাল পাড়া জুড়াল
এর ফাঁকে ফাঁকে দু'একজন ক্লাসে ঢুকল, তাদের কেউ মিথুন বা খদ্দর মিথুন নয়। শিল্পীর মনে হল এরা না আসলেও পারত। প্রার্থিত কেউ ছিল বলেই, অপ্রার্থিতের এত অনাদর!
আমি তোদের দাদা ঠাকুর
তামাক সেজে দেরে!
কথাটা শুনে একটু করুনা করেই বোধ হয় শিল্পী ছেলেটার দিকে একটু চোখ মেলে চাইল। কিন্তু উদারার সা থেকে তারার সা ছাড়া আর কিছু শোনতে না পেয়ে স্ক্রিপ্টের দিকে মাথা নোয়াল। পুরো উপস্থাপনটা শিল্পীর কাছে নিছক একটা টেকনিক্যাল কিছু মনে হল।
কুশীলবদের প্রস্থানের পর বিপ্লব বালার প্রশ্নে শিল্পী বলল; জানিনা এর আগে কখনো শুনিনি। তবে মনে হচ্ছে কথা গুলো হৃদয় থেকে আসেনি।
বিপ্লব বালা: হুম! হৃদয় অনুভবের, বলার তো নয়!
একা এসময়ে শিল্পীর চা তেষ্টা পায় না। তবুও মামার কাছে চা চাইল। আদলা ইটের মত পাউরুটি গুলোর দিকে, দোকানে সাজানো বইয়ের মত, একবার চোখ বুলিয়ে চেনা বা প্রয়োজনীয় মনে না হওয়ায়, চায়ের চিনিটা কমাতে একটু বাড়তি লিকার চাইল।
চার
কে জানে কত কিছু মিস করেছে! এমন একটা ভাব নিয়েই মিথুন দাঁতমেজে দোপায়ার ভেতর ঢুকে গায়ে একটা টালের শার্ট চাপিয়ে বাস ষ্ট্যান্ডের দিকে ছুটল। পানি নেই বলে গোসল করতে না পারার আফসোস নেই। সময়ও ছিলনা হাতে।
সময় মতই টিএসসিতে পৌঁছল। এগার নম্বর গাড়ীর সুবিধাই আলাদা। নিজের ইচ্ছেমত গতি কমানো বাড়ানো যায়। জ্যাম, সিগনাল কোন কিছুর বালাই নেই। কিন্তু এখন একটু হাপাচ্ছে। ক্লাসে ঢুকে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে পড়ল। কপাল মন্দ! আজ নরেন বিশ্বাস ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন। ব্যাকরণটা মিথুনের মাথায় একেবারেই ঢুকে না। চর্যাপদ বা গীতি কবিতাও নরেণ বিশ্বাস পড়ান। কিন্তু আজ ব্যাবরণ।
ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাটায়া চলিল
কিচ্ছুক্ষন গিয়া মর্দ দরিশন দিল।।
এমন দু'একটা কথা বলে মাঝে মাঝে পরিবেশটা একটু হাল্কা করতে চেষ্টা করেন নরেণ স্যার। এটাই এই সরল মানুষটির অলংকার। এত জটিল ভাষাটার কত সহজ প্রায়োগিক উদাহরণ দেন। যতটুকুই মাথায় ঢোকে, মন দিয়ে অন্তত শুনে যায় মিথুন।
শুনতে শুনতে এক সময় ছুটি হয়। সবাই উঠে যে যার সেন্ডেল খোঁজে। মিথুনের অত তাড়া নেই। শোনা যায় মসজিদে জুতা চুরি হয়। কিন্তু এখানে এমন কথা এখনো শোনা যায়নি। আর মিথুনের রাবারের চটি হয়তো মসজিদেও কেউ চুরি করবে না।
আর একজনের তেমন তাড়া আছে বলে মনে হয় না। চুপচাপ অনেকের আড়ালে ঘড়ের কোন-এ বসে ছিল বলে মিথুন শিল্পীকে দেখতে পায়নি। অবশ্য দেখতে চেষ্টা করেছে এমনটা মিথুন দাবীও করতে পারে না।
সবার শেষে হয়তঃ সেন্ডেলের সন্ধানে সামনে যেতে যেতে আড় চোখে তাকাতে গিয়ে মিথুনের সাথে শিল্পীর চোখা-চোখি হয়ে যায়। শিল্পীই কিছুটা উদাসীন ভাবে বলে: কেমন ছিলে?
মিথুন যথেষ্ট সাবলীল ভাবেই বলে; খুব খাটুনী গেছে গত কয়েকটা দিন। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মিথুন জিজ্ঞেস করল: ওহ! সেদিন বাড়ীতে কোন সমস্যা হয়নিতো!
খোটার মত শোনাল কথাটা শিল্পীর কানে। চুপ করে রইল একটু।
শিল্পী বলল: সরি। এত তাড়া না করলেও চলত! বোধকরি কিছুটা অভদ্রতাও হয়ে গেছে। কিছু মনে কর না।
আরে না না, মনে করার কী আছে! শুধু একটু অবাক হয়েছিলাম। এই যা। বলতে বলতে মিথুন অভ্যাস মত সবুজ ঘাসের উপড় বসে পড়ল। শিল্পী মিথুনের পাশে বসল।
মিথুন ভাবেনি শিল্পী তার পাশে বসবে। সেদিন যত তাড়া ছিল! আজ যেতে যেতে হয়তঃ বলবে; ভাল থেকো। শুক্রবার দেখা হচ্ছে এই জাতীয় কিছু। তাই একটু অবাক হল! হয়তঃ একটু বিব্রতও। আবার ভাবল: ভদ্রতা করছে?
এর মাঝে সূর্য্য এসে অর্ডারের অপেক্ষা না করেই বলল: মামা চা দুইটা? শিল্পীই জবাব দিল; জ্বী মহারাজ! চা দুইটা।
মিথুন ভাবল খাইছে! শিল্পী চাও খাবে! সকাল থেকে এপর্যন্ত পেটে কোন দানা-পানি পড়ে নাই মিথুনের। পাউরুটি আর আয়েস করে চায়ের আসায় এতক্ষন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ছিল। শিল্পীর সামনে খালি পাউরুটি আর গরুর মত ডক ডক করে চার গ্লাস পানি গেলা যাবে!
সূর্য্য দয়াপরবশ হয়ে এ যাত্রায় শুধু দুটো চা-ই নিয়ে এল। মিথুন হাফ ছেড়ে বাঁচল।
নাও চা নাও! শিল্পীর কথায় মিথুন একটু ধাতস্থ হল। চায়ে চুমুক দিতেই, ছানা কেটে দিতে ক্ষিধেরা হাজির হল। কয়েল জ্বালিয়ে মশা তাড়ানোর মত কিছুটা গরম চা ঢেলে ক্ষিধাদের একটু দূরে রাখতে চাইল মিথুন। এর মধ্যে নিকটিনের আহাজারী শুরু হয়ে গেল।
মিথুনের কিছু একটা অসস্তি আছে সেটা বুঝতে পরল শিল্পী। প্রথম অনুমানটা নিকটিনের বলেই মনে হল। তাই অভয় দিয়ে বলল; আমার বাড়ীতে সব পুরুষ মানুষ স্মোকার, চাইলে তুমি সিগারেট টানতে পার।
জীবনে বহুদূর যাবার স্টার ফিল্টার পকেট থেকে বের করার একটা সংকোচ মিথুনের রয়েই গেল।
শিল্পীর অভয় আর নিকটিনের টানে স্টার ফিল্টারেই অগ্নিসংযোগ হল।
কোন একাডেমিক আলোচনায় না গিয়ে শিল্পী সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হল; পরিক্ষা শেষ হল?
মিথুন ঠিক বুঝতে পারল না! অতর্কিতে আক্রান্ত হবার অস্বস্তিতে পড়ল। শিল্পী দয়াপরবশ হয়ে বলল; পরিক্ষার যন্ত্রনা জীবনে আর পোহাতে হবে না। কত কষ্ট আমি জানি। জান! সব পরিক্ষার শেষে আমার ওজন কমপক্ষে ৩ কিলো কমে যেত।
মিথুন এবার বুঝল। তাই খুব সাধারণ ভাবেই বলল; দূর পাগল! কাহিল হয়েছি পড়ে নয়, কাজ করে। আমার পরিক্ষার আরো অনেক বাকী। এসময় ক্ষেতের ধান পাঁকে। সেটা ঘরে তুলে নতুন ফসল বুনতে হয়। দেশে গিয়েছিলাম বাবাকে কাজে সাহায্য করতে। ঢাকায় থাকলে আর ক্লস মিস করি!
একটু অবাক হল শিল্পী! এ বয়সে পড়ালেখা আর প্রেম করা ছাড়া অন্য কিছু কেউ করে সেটা মাথাই আসেনি! দেশ আর দেশের মানুষ সম্পর্কে শিল্পী কত কম জানে! নিজেকে একটু বোকা বোকা লাগল।
আর বলনা, বছরের এসময়টা পরিক্ষা লেখা-পড়া এসব নিয়েই কটে! অথচ দেশের কৃষকদের এত কাজ এ সময়ে যে, প্রতিটি খড়-কূটো আকড়ে ধরতে পারে এমন হাতগুলিও মা দূর্গার আশীর্বাদী হাতই মনে হয়। মেট্রিক পাস করার আগ পর্যন্ত বাবাকে তেমন হেল্প করতে পারতাম না। তখনই সব ফাইনাল পরিক্ষা। সহজ বলে ডিসেম্বর মাসেই সব পরিক্ষা হতে হবে! অথচ দেখ; তার পর জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারী আর মার্চ তেমন পড়া-লেখা কিছুই হয়না। অথচ গ্রামের মানুষের কৃষি কাজ তখন শেষ! দেশের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়েই তো দেশের মানুষের শিক্ষা ব্যাবস্থা গড়ে উঠা উচিৎ! অনেক ছেলে-মেয়ে ইচ্ছে করলেও, তখন মা-বাবাকে এতটুকু হেল্প করতে পারে না।
কিন্তু এখন পারি। জান আমি সব পারি। একজন পাঁকা কৃষক।
বাবা অবশ্য সব সময় না করেন। কিন্তু বল! পড়ালেখা করি বলে বাবাকে এমন কাজের সময় হেল্প না করে থাকা যায়! অবশ্য তাতে আমার পকেট খরচের টাকাটা একটু বেড়ে যায় প্রতিবারেই। মা বাবাকে বুঝান; কাজের লোকে আমার ছেলের মত এত কাজ করতো! অথচ কত টাকা আপনার খরচ হত! আগের মাসের টাকা থেকে আবার আমার জন্য শাড়ী নিয়ে এসেছে। বাবা একটু বোধ হয় খুশীই হন। বুঝতে পারি অনেক দিতে চান। কিন্তু আমিই নিতে পারি না। একটা টিউশানী করি ম্যাসের ভাড়াটা হয়ে যায়। কিন্তু টান পড়ে গেলে তো চাইতেই হয়!
বলতে বলতে মিথুনের মনে হল; শিল্পীর হয়তো দেরী হয়ে যাচ্ছে। তাই বলল; কত বকবক করেই যাচ্ছি! তোমার বোধ হয় যেতে হবে, তাই না? অবশ্য শিল্পী এখন চলে গেলে মিথুনের ভালই হয়। গোগ্রেসে পাউরুটি গিলে, পেটের তলা থেকে সে পাউরুটি জাগাতে চার গ্লাস পানি ঢালতে পারবে। সময়টা তার উপযোগী।
কিন্তু মন্ত্রমুগ্ধতা ভাংলেও যাওয়ার তাড়া শিল্পী টের পেল না। মিথুনের কথা গুলো এত নতুন! না পড়া কোন কবিতার মত লাগছে।
শিল্পী বলল; তোমার কথা শোনার আগে পর্যন্ত এটা কখনো মাথাই আসেনি। জান আমাদের পাঠ্য পুস্তকে হয়তঃ একটু পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু আমাদের দেশের বেশীর ভাগ মানুষের কথা ভেবে, তাদের প্রয়োজনের দিকে দৃষ্টি রেখে অন্ততঃ প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্ত কোন শিক্ষা ব্যাবস্থাই প্রণীত হয়নি। আমি এখনো পর্যন্ত গ্রামই দেখিনি। অথচ আমি বা আমার মত কেউ একজন টি এন ও বা কৃষি অফিসার হয়ে গ্রামের মানুষকে সরকারী সহযোগীতা করতে যাব। মিথুন আমাকে তোমাদের গ্রামে নিয়ে যাবে? আমার গ্রাম দেখার খুব ইচ্ছে, খুব।
শিল্পীর কথাগুলো মিথুনের খুব ভাল লাগল। যাওয়ার তাড়া শিল্পীর না থাক, কিন্তু ক্ষিধে তো বিদেয় করতে হবে! তাই আপততঃ আর এক কাপ চায়ের কথাই মিথুনের মাথায় এল।
কিন্তু শিল্পী বলল: ক্ষিধে পেয়েছে চল কিছু খাই।
মিথুন পড়ল নতুন ফ্যাসাদে। কী খাবে? পকেট একেবারে মরুভূমি না করে!
পাঁচ
মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতাল
দোলে মন দোলে অকারণ হরষে।।
বার বার ঘুরে ফিরে এই গানটিই শিল্পীর মন বীনায় অবিরাম বেজে চলছে। আর নিজের দৈন্যতা প্রকট হয়ে উঠছে। সত্যিই তথাকথিত শিক্ষিত লোকেরা এদেশটার আশিভাগ মানুষের শিল্প-সাহিত্য কী, তা জানেই না। অথচ মিথুন অনায়াসে রবিন্দ্রনাথ বা নজরুলকে ছাড়াই নিজের আবেগটি প্রকাশ করতে পারে। আবার নজরুর বা রবিন্দ্রনাথের অনেক কবিতা মুখস্ত বলে যেতে পারে!
দূরে বহু দরে স্বপ্নলোকে উজ্বয়িনী পুরে
খুঁজিতে গেছুনু কবে মোর পূর্ব জনমের প্রথমা প্রিয়ারে।
চোঁখ বন্ধ করে বলে যায়, যেন সে প্রেয়সীকে চোখের সামনে দেখছে!
আবার
তোমার হাতে দেখি বীনা বাজে কী নমুনা
কার ঘরণী তুমি কার বা দুলালী তুমি কে গো।।
কি স্বাচ্ছন্দে গেয়ে যায়। অবাক লাগে! অথচ এই আমি কত দেশী -বিদেশী লেখকের লেখা পাড়েছি! কিন্তু নিজের দেশের মানুষের মরমের ব্যাথাটা বুঝিনা, ধরতে পারিনা! "একটি শিশির বিন্দু-ই" আজো দেখা হল না। জীবনে কী চাই, সেটাই জানিনা।
অথচ মিথুন কী করতে চায়, তা খুব ভাল করেই জানে। আর সে চাওয়ার কাঁচামাল অনেক যত্নে সাজিয়ে রাখছে, অভিজ্ঞতার তাকে। মিথুনের একটা বয়স্ক শিক্ষার স্কুল ছিল। নিজে থাকতে পারে না বলে সেটা আপাততঃ বন্ধ আছে। গ্রামের প্রাইমারী স্কুল ঘরটি সন্ধ্যার পরে ব্যাবহারের অনুমতি পায়। হারিকেনের আলোতে পাঠদান। কিন্তু নিজেকে আরো ভালভাবে তার জন্য তৈরী করতে মিথুনকে শহরে আসতে হল। ফিরে গিয়ে খুব ভালভাবে আবার তা চালু করবে। মিথুন বলে; আমাদের শুধু একটা অভাব, সেটা ইচ্ছে। গ্রামের মানুষের যে রকম সাড়া পেয়েছি, তাতে বিশ্বাস করতে পারি না, যে তারা শিখতে চায় না। আর শিক্ষার ব্যাপারটি এগিয়ে গেলে অন্য সমস্যাগুলো আপনা থেকেই কিছুটা হলেও কমতে শুরু করবে। হয়তঃ মিথুনের ধারণা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। কিন্তু ও একটা কাজ নিজের জন্য বেছে নিয়েছে। শিল্পী কেন তা পারে না!
অন্যের সম্পর্কে জানা জ্ঞান,
নিজেকে জানা জোর্তিময়।
শিল্পীর জ্ঞান কার কী কাজে আসবে! অথচ প্রতিদিন কত জ্ঞান আদান প্রদান আর বিকি-কিনি হচ্ছে। বিনিময়ের মাধ্যম কড়ি গুলো থাকলে জ্ঞানী হওয়া যায়! সঞ্চিত জ্ঞান আবার কড়িতে রুপান্তরিত করা যায়।
হয়তঃ পেশাদারীত্ব নেই বলে মাটির পাতিল বাজিয়ে বেল্লার গীত (বেহুলার ভাসান) গাওয়া মানুষগুলো কখনো শিল্পীর মর্যাদা পাবে না। তাই বলে সেগুলি সংস্কৃতির সংরক্ষনের অধিকার থেকেও বঞ্চিত হবে!
লাল চান আর লীল চানের কিচ্ছা, বেল্লার গীত, বয়াতীর সুরের পংতি দোতারার বাদনে, কী অবলিলায় তাৎক্ষনিক ভাবে কথা আর সুর অবিরাম সৃষ্টি করে চলেছে পাল্টা গানের ফকিরেরা! জোৎস্নার আলোয় গোল হয়ে বসা মানুষের ভীড়ে, পরম ভাইয়ের সুরে, রাখালের খন্জিরা, তালেব আলীর বাঁশী, কোরা মতির পাতিল যখন একে অন্যের হয়ে বেজে উঠে; বেল্লার দুঃখে প্রবীণা কৃষানীর চোখ ছল ছল করে।
মাত্র দু'হাজার টাকা হলে মাইক্রোফোন সহ একটা টেপ রেকর্ডার কিনবে মিথুন। তার পর চলবে রেকর্ডিং।
শিল্পীর কাছে দু'দশ হাজার টাকা কোন ব্যাপার না, কিন্তু কার টাকা কাকে দেবে শিল্পী! হাতের ময়লা দিয়ে মহীরুহের অংকুরটা ঢেকে দেবে! না তার শক্তিতেই সে বেড়ে উঠুক প্রকৃতির প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে। এমন স্বপ্নকে শিল্পী কড়ির ঝনঝনানীতে ভাংতে পারে না।
বসন্তের কোকিলেরা, সবুজ শাড়ী পরা, পান খেয়ে মুখ লাল করা বধুর মত কৃষ্ণচূড়ার ফাঁক থেকে ডেকে উঠে, বউ কথা কও। মিথুনের এ সব বর্নণা শুনেই কি আজ লাল জামা আর সবুজ পাজামা পড়েছে শিল্পী! শাহাবাগেই রিক্সা ছেড়ে দিয়ে শিল্পী বাস স্ট্যান্ডে অনেক্ষন দাড়িয়ে রইল। মনে কি এই আশা ছিল যে; মিথুন বাস থেকে নেমেই শিল্পীকে দেখতে পাবে! লাল-সবুজের কৃষ্ণচূড়ায় লুকিয়ে থাকা বউকথা কও পাখিটি খোঁজবে! ৮টা তো বেজেই গেল, মিথুন হয়তো শিল্পীকে দেখেইনি। চলে গেছে। নাকী আজ আসবেই না! হয়তো গ্রামে গেছে, যেতে হয়েছে! কিন্তু যদি ক্লাসে এর মধ্যে চলে গিয়ে থাকে! আর অপেক্ষা করা অশোভন। চঞ্চল মন নিয়ে শিল্পী ত্রস্ত পায়ে টিএসসির দিকে চলল।
ছয়
ক্লাশ শুরু হওয়ার পর একটু চুপি চুপি ঢুকে দরজার কাছটাতেই বসে পড়তে গিয়ে মিথুনের চোখে চোখ পড়ে গেল শিল্পীর। দুজনের চোখেই মেঘে ঢাকা আকাশের ফাঁক দিয়ে আলোর ঝলক খেলে গেলে। গুরুর গুরুগম্ভীর কন্ঠে বৃষ্টির রিণিঝিনি শব্দের মত "সিদ্ধি" গল্পে তপস্বীকে সাধনা পূর্ণ হবার সংবাদ জানালেন ওয়াহিদুল হক স্যার। হা করে সবাই স্যারের দিকে চেয়ে আছে;
: তোমার সাধনা পূর্ণ হয়েছে বৎস। স্বর্গের অধিকার তুমি লাভ করেছ।
তপস্বী: তাহলে স্বর্গের আর প্রয়োজন নেই।
: বল কি চাও?
তপস্বী: বনের কাঠ কুড়োনী মেয়েটিকে।
ক্লাশ থেকে বের হয়ে আজ আর চায়ের মরিচীকায় ক্ষিধাকে হারাতে ইচ্ছে হলনা। মিথুন শুধু আর একবার ভেবে নিল; কোনপথে গেলে সংক্ষেপে সদরঘাট পৌঁছা যাবে। শিল্পীকে নিয়ে বাসে ঝুলে যাওয়া যাবে না। গুলিস্থান পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার সম্ভবনা যাচাই করে দেখল। কিন্তু বাতিল করতে হল। শিল্পী ঠিক বুঝতে পারলনা; মিথুন একটু অন্যমনস্ক নয়তো!
আগবাড়িয়ে শিল্পীই বলল: সোহরোয়ার্দী উদ্যানের ভেতর একটু হাঁটি চল।
মিথুন খুশী হয়ে বলল: চল;
শিল্পী বলল: জানো! তোমার কথাগুলো খুব ভেবেছি। আমার খুব ভাল লেগেছে তোমার ইচ্ছে গুলো।
একটা মালা নেন স্যার!
মিথুন মালাহাতে এগিয়ে আসা ছোট্ট একটি মেয়ের মিনতি ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে, হার মানে।
দুটো টাকা দিয়ে একটা বকুল ফুলের মালা কেনে। মালাটা এত বড় নয় যে গলায় পরাতে পারবে, এত ছোট নয় যে রাখির মত হাতে বেঁধে দেবে! মিথুনকে মাল্যদানের মহাসংকট থেকে মুক্ত করতেই বোধ হয় শিল্পী হাত বাড়িয়ে মিথুনের হাত থেকে মালাটি, নিয়ে নাকের ডগায় লাগিয়ে খুব জোরে শুকে বলল: বাহ্ কি তাজা গন্ধ! খুব বড় হয় বলে বকুল গাছ শহরবাসীরা টবে লাগাতে পারে না। আর এমন সুপ্ত অথচ কত মিষ্টি গন্ধটাও পায় না। মালাটা মিথুনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে: এই নাও তোমার মালা।
মিথুন বলে; আরে এটাতো তোমার জন্য কিনলাম।
শিল্পী জোর করে মিথুনের হাতে মালা ফেরৎ দিতে চেষ্টা করলে, মিথুন শিল্পীর মালা শুদ্ধু হাত শক্তকরে চেপে ধরে।
শিল্পী বলে; আরে, ছাড়ো, ছাড়ো! লাগছেতো!
মিথুনের কঠিন হাতের চাপে মালার ফুলের সৌরভ একটু বের হয়ে গেল! সত্যিই এমন তুলতুলে হাত! মিথুন জীবনে এই প্রথম কোন মেয়ের হাত ধরল। কি যেন অচেনা স্রোত মূহুর্তের জন্য মিথুনকে শিহরীত করে দিল। শিল্পী ততক্ষনে মালাটা খোঁপায় জড়িয়ে নিয়েছে।
দুজনের কথপোকথনে কখন পথ শেষ হয়ে গেল! হাইকোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে মিথুন যাত্রার নব দিগন্ত বের করে ফেলল।
শিল্পী তেমন ক্লান্ত হলনা। ভালইতো লাগল মিথুনের সাথে পথচলা! এবার হয়তো রিক্সা পাওয়া যাবে। গুলিস্থানে জ্যাম থাকে বলে এদিকের রিক্সাগুলো সদরঘাটের দিকে খুব একটা যেতে চায় না।
মিথুন বলল; চল আর একটু হাঁটি ঐ তো প্রেসক্লাব পর্যন্ত। শিল্পী ভাবল প্রেসক্লাব পার হলেই মুক্তাঙ্গন। সেটাও একটা পার্ক। এইতো দেখা যাচ্ছে।
প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাথ দিয়ে মিথুনের পাশে হাঁটতে হাঁটতে শিল্পীর মনে হল; এমন অদ্ভূত আব্দার করে মিথুনকে কোন ঝামেলায় ফেলে দিল নাতো! ছেলে হলে কত সহজে বন্ধুত্ব হয়ে যায়! আর মেয়ে হলে ছেলেগুলো খুব বেশী সিরিয়াস হয়ে যায়! খুব বেশী যত্ন করে। শিল্পীর কাছে ব্যাপারটা একটু বিরক্তিকর লাগে।
মিথুন ভাবছে মুক্তাঙ্গনে পৌঁছে বলবে ঐ তো ওখান থেকে সদরঘাটের রিক্সা সহজে পাওয়া যাবে। রাস্তায় তেমন ভীড় নেই। মিথুন মেসের বুয়াকে বলে এসেছে জুম্মার আজানের সময় যেন সব ঠিক থাকে। রুমমেট বন্ধুটি বাড়ী যেতে চেয়েছিল। মিথুন যেতে দেয়নি। মেহমান আসবে। কমল খুশীই হল, দাওয়াত পেয়ে। বুয়া একা পারতোওনা এত কিছু। ঘরে মেহমান রেখে হাঁটে যাবার মত দেখাবে, শিল্পীকে বসিয়ে রেখে কোক আনতে গেলে! আথচ আগে এনে রাখলে গরম হয়ে যাবে। কমলটা ঠিক সময়মত সব করে রাখবে।
গোলাপ শাহ মাজারের কাছে দাঁড়িয়ে সদরঘাট গুলিস্তান-চলাচলকারী ঘোড়ার গাড়ীর দিকে ইংগিত করে বলল; প্রিন্সেস আপনার গাড়ি ওখানে অপেক্ষা করছে।
শিল্পী খিল খিল হাসিটা কষ্টে চেপে রাখল বটে: কারণ, বায়তুল মোকারমের মুসল্লীরা জামাত শেষে বের হয়ে পড়েছে। কিন্তু মুচকী হাসি দিতেই হল! জীবনে কখনো চিড়িয়াখানা ছাড়া শিল্পী ঘোড়াই দেখেনি। আজ সে অশ্বারহী হয়ে বন্ধুর বাড়ী যাবে! মিথুনের সার্প্রাইজ শিল্পীকে চমৎকৃত ও মুগ্ধ করল।
ইংলিশ রোডের পাশে, মলিন লাল শাড়ী পরা একটা মেয়েকে, তেমনি মলিন সেন্ডো গেন্জী আর লুঙ্গী পরা একটা লোক, তবলায় চাটি মারার মত, সমানে মেরে যাচ্ছে। তামাসা দেখার মত দাড়িয়ে, ভেলকী লাগা চোখে, মানুষগুলো কেবল দেখছে। মিথুন শিল্পীর সংশয়টা ধরতে পেরেই বোধ হয় বলল; এটা ইংলিশ রোড। শিল্পী বলল; তাতো বুঝলাম, কিন্তু মেয়েটাকে মারছে কেন?
একটু ঢোকগিলে মিথুন বলল: এইতো এদের জীবন। মানুষ নিজের মনের পশুকে ছেড়ে দিতে, অন্ধকারে আর একজন ভাগ্যের আলো থেকে বঞ্চিত, মানুষকে আশ্রয় করে। জীবনের অন্ধগলি সব মানুষ কি পাড়ি দিতে পারে! পতিতা বলে এদের সামাজিক সব অধিকার রহিত!
গাড়ী এর মধ্যে ভিক্টোরিয়া পার্ক চলে এসেছে। প্রসঙ্গ পাল্টাতেই বোধ হয়, মিথুন বলল; জান! সিপাহী বিপ্লবে অংশ নেয়া সৈনিকদের, খন্ডিত মৃতদেহ, ইংরেজরা এই পার্কের গাছে ঝুলিয়ে রেখেছিল।
শিল্পীর শরীরটা একটু শিহরিত হল। সরু একটা গলির পাশে খোলা ড্রেন। এখন মনে হয় মালাটা কবরীর চেয়ে হাতেই বেশী সুবিধা দিত শিল্পীকে। গলির শেষ মাথায় ছোট্ট একটা গেটে নক করতেই হাসি মুখে কমল গেট খোলল। কিরে এত দেরী হল কেন? প্রশ্নটা করেই শিল্পীর দিকে বিণীত ভাবে তাকিয়ে, বলল: আসুন।
কথামত সব সাজানো দেখে বন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতায় মিথুনের মনটা ভরে গেল। কিন্তু শিল্পীর এখন সব চেয়ে বড় যে বিষয়টা, তা নিয়ে কেউই ভাবেনি, হয়ত শিল্পী নিজেও না। মানুষকে প্রকৃতির অংশ হিসাবে, প্রকৃতির ডাকে তো সাড়া দিতেই হয়! বিশেষ করে মেয়েরা, যথায় তথায় কাজটি সারতে পারে না। আর এই মরার দেশে এ নিয়ে কেউ মাথাই ঘামায়না। মিথুনদের ব্যাবহারের বথরুমটা ওদের বিবেচনায়, শিল্পীর ব্যাবহার যোগ্য নয়। কিন্তু এই মূহুর্তে শিল্পীর তাতে কিছু যায় আসে না। মিথুন বলল বাড়ীওয়ালার ওখানে নিয়ে যাই। শিল্পী বলল: নাহ্ আমি তোমাদেরটাই ইউজ করব।
আয়োজন দেখে শিল্পী একটু অবাক হল, লজ্জাও পেল বোধ হয়। মিথুন এত কিছু করবে জানলে: শিল্পীর মেস দেখার কৌতুহলই জন্মাতো না। হয়তো মিথুন কি ভাবে থাকে, শিল্পী সেটাই দেখতে চেয়েছিল। ছেলেরা এত বোকা কেন! সেদিন পেট ভরে শাহবাগে শিক কাবাব খেল। পঞ্চাশটা টাকা বিল মিথুন জোর করে একাই দিল! আজকে আবার মুরগী পোলাও, কোক। শিল্পিতো মিষ্টি একবারেই মুখে তোলে না। কোকতো ছুয়েও দেখেনা। কিন্তু এখন না নিলে মিথুনকে অপমান করা হবে। সব চেয়ে ভাল লেগেছে; মিথুনের মায়ের হাতের নাড়িকেলের নাড়ু। চিড়া-মুড়ি এসব নাকী মা সব সময়ই সাথে দিয়ে দেয়। এটাই এদের চা-বিস্কুট। মিথুন কিছু সাথেও দিতে চেয়েছিল।
সাত
মিথুনকে আজও ক্লাসে না দেখে শিল্পী একটু কষ্ট পেল! পর পর তিন দিন ক্লাসে এলোনা, মিথুন হয়তো আর কোন দিনই শিল্পীর মুখ দেখতে চাইবেনা। কি দরকার ছিল, গায়ে পড়ে অমন সরল ছেলেটার সাথে বন্ধুত্ব করার! ধিক্কার এল নিজের প্রতি। গত তিনটি সপ্তাহ শিল্পী অনেক ভেবেছে। আর কোন ব্যাপারে খুব ভাবতে গেলে মুখের ব্রন গুলো, বিষ ফোরার মত, চেহারাটাকে আরো বীভৎস করে দেয়। বাইরে যেতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু মিথুনকে বাবা যে ইচ্ছে করে অপমান করেছে, তার জন্য অন্ততঃ ক্ষমাটুকু চাইতে হবে। সে সুযোগ তো মিথুন দিলনা! কি করবে এখন শিল্পী! তার কি করা উচিৎ!
বাবা বাগানটা খুব যত্ন করেন। গেট দিয়ে ঢুকেই সবুজের ঘোমটা থেকে উঁকি দেওয়া তিন চারটা রক্তজবা দেখে মিথুন থমকে গেল! যেন তাজমহলের রুপে মুগ্ধ! ঘটনাক্রমে গাছটার পেছনেই বাবা দাড়িয়ে ছিলেন। মিথুনের অবাক করা মুখের দিকে তাকিয়ে বাবা বললেন; কি দেখছ অমন হা করে? মিথুন থতমত করে কি একটা বলতে গিয়ে, বাবার গুরুগম্ভীর কন্ঠের অলংঘনিয় বাধায়, বিনা মেঘে বজ্রাহতের মত, পাথর হয়ে গেল। আমাকে পরিচয়টুকু করিয়ে দেবার শালীনতাটুকু পর্যন্ত রক্ষা করতে না দিয়েই বলল;
ঐশ্বর্য, সম্পদ, সৌন্দর্য একদিনে গড়ে উঠেনা। নিরলস পরিশ্রম, ঐকান্তিক চেষ্টা আর অবিরল সাধনা দিয়ে, দিনে দিনে, তাকে তিল তিল করে বড় করতে হয়।
বাবা... আমি বলতে চাইছিলাম, ও আমার বন্ধু। হয়তো সেটা আঁচ করতে পেরেই বললেন;
বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সব বসন্তের কোকিল। তোমার বড়লোক বাবার প্রাচুর্য্যের ছিটে-ফোঁটায় প্রাণ শীতল করতেই এসব হা-ভাতের দল তোমার চারপাশে ফেউয়ের মত লেগে থাকে।
এদের ... বাবার কথা শেষ করতে হল না, মিথুন আমাকে খুব সহজ ভাবেই বলতে পারল; সরি শিল্পী, আমি মনে হয় তোমাকে কোন নতুন ঝামেলায় ফেলে দিলাম। আচ্ছা চলি।
আট
বাড়িতে মিথুন সম্পর্কে অত কিছু বলা ঠিক হয়নি বোধ হয়। রাজকন্যা আর অর্ধেক রাজ্য লাভের আশায় মিথুন কিছুই করেনি। হয়তো মিথুনকে অত মহান করে তোলা, ওরা মিথুনের প্রতি আমার দুর্বলতা ভেবেছে। আছে কি আমার মনে মিথুনের প্রতি কোন দুর্বলতা! শ্রদ্ধা করা যায় এমন ছেলেতো দূরের কথা, কোন পুরুষই শিল্পী আজও দেখেনি! মিথুনের প্রতি এই শ্রদ্ধাটুকুই কি ভালবাসা! আর এ কারণেই মিথুনকে এত ভয়!
টিএসসির গেটে দাঁড়িয়ে এসব ভাবতে ভাবতে শিল্পী কোন কূল-কিনারা পাচ্ছিল না।
ক্রিং ক্রিং করে এতদিন শুধু টেলিফোন বাজতো! এখন দেখি রিক্সার বেল ও ক্রিং করে কানে জ্বালা ধরায়! সাধারতণঃ ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করতে হয়; এই রিক্সা যাবে নাকি?
কিন্তু আজ উল্টো ড্রাইভার জিজ্ঞেস করল; আপা কৈ যাইবেন?
অনাকাংখিত প্রশ্নের তাৎক্ষনিক জবাব শিল্পীর মুখ থেকে কেন যেন; "সদরঘাট" বেরিয়ে গেল।
ড্রাইভার বলল: উঠেন আপা। শিল্পী উঠে পড়ল।
টিনের গেটে নক্ করার শব্দটা কোন নতুন ফরমানের ডঙ্কার মত মনে হল। বিরক্ত মূখে বুয়া বাসন মাজা রেখে গেট খুলে শিল্পীকে দেখে অবাক হয়ে, মিথুনকে ডাকল।
শিল্পীকে দেখে মিথুন কেমন যেন হয়ে গেল! মনে হয় কয়েকদিন দাড়ি কামায়নি। কিন্তু খুব শান্ত ভাবেই বলল; আস।
চৌকির উপর মশারী এখনো ঝুলছে। সেটা খুলতে খুলতে মিথুন জিজ্ঞেস করল; কি খাবে? শিল্পী বলল মায়ের দেয়া নাড়ু, সাথে একটু চা। টিনের থালায় নাড়ু দিয়ে মিথুন নিজেই চা আনতে গেল। গাড়ীর হর্ণ, রিক্সার টুংটাং এসব কিছু ছাড়িয়ে ভর দুপুরে ঘুঘু-র গুঞ্জরণ কানে বাজছে। ঘরটা ভাল করে দেখতে গিয়ে, মিথুনের বাঁশের বই রাখার তাকে, পানি দিয়ে বোতলে রাখা, গন্ধরাজের শাখায় ফোঁটা ফুলটায়, শিল্পীর চোখ আটকে গেল। ফুলটার সুগন্ধেই নালা থেকে আসা দুর্গন্ধটা নাকে লাগছে না। আশ্চর্য! শিল্পীর মন এখন প্রশান্ত মহাসাগরের মত, শান্ত! একটু গরম লাগছে। ওড়নাটা ঘুরিয়ে একটু বাতাস খেয়ে, অপ্রয়োজনীয় জিনিসের মত, সেটা মিথুনের চৌকিতে ফেলে রাখল। চেয়ার থেকে উঠে চৌকিতে বসে, কাটুর কুটুর করে নাড়ু চিবুতে শিল্পীর ভালই লাগছে। ঘরটার একটাই দরজা এবং জানালা। শিয়রের দিকে দুটো চৌকীর মাঝে সেতুর মত টেবিলটা। ওরা মনে হয় চৌকীতে বসেই পড়ে। তাই শুধু একটা চেয়ার। সেটাতে এখন শিল্পীর পা দুখানি ছড়ানো। পরিপাটি বিছানাটি জানালার পাশে। জানালার বিপরীতে মিথুনের বিছানা, অগোছাল আর একটু অন্ধকার। কিন্তু ছোট জানালাটি দিয়ে পাশের বাড়ীর দেয়ালটা টপকে, ভিক্টোরিয়া পার্কের ডালে ডালে, কাকের ঝগড়াটা দেখা যায়।
চায়ের কাপ টেবিলে রেখে মিথুন একটু ইতস্তঃত করছে! কোথায় বসবে? সে সুযোগ না দিয়ে শিল্পী বলল; পানি দেবে একটু? মিথুন গ্লাসটা ধুয়ে শিল্পীকে পানি দেয়। পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে শিল্পী মিথুনকে নিজের পাশে হাত ধরে বসিয়ে বলে; ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে সিংহদের জীবন নিয়ে একটা ফিল্ম দেখেছিলাম।
ডগ ডগ করে সবটুকু পানি গলায় ঢেলে, শিল্পী চায়ের কাপে চুমো দেয়। মিথুন একটা স্টারফিল্টার ধরায়।
শোন! শিল্পী বলতে থাকে;
আফ্রিকার সাফারি পার্কে করা ঐ ডকুমেন্টারীতে বিশেষ করে পুরুষ সিংহদের আচরণ দেখানো হয়। পুরুষ সিংহরা দলের (বা পরিবারের) প্রসবিত ছেলে সিংহগুলো খেয়ে ফেলে। এ জন্য সিংহীরা কাচ্চা-বাচ্চা নিয়ে, সিংহদের রাজ্য ছেড়ে, নিরাপদ অঞ্চলে চলে যায়। কিন্তু সব সময় পুরুষ সিংহদের আক্রমন থেকে, ছেলে বাচ্চাগুলো রক্ষা করা সম্ভব হয় না! সিংহ এবং সিংহী এ কাজটা নিজেদের স্বার্থেই করে। কারণ: বাচ্চাগুলো বড় হয়ে, প্রাণের প্রগতি রক্ষায়, তাদের যৌন সঙ্গী হবে।
মিথুন একটু অস্বস্তি বোধ করছে। খুব উত্তেজীত ভাবে কথা বলে যাচ্ছে শিল্পী। কথা বলার কারণে চা পুরোটা খাওয়া হয়নি। এ দিকে মিথুনের কাপ খালি। মিথুন আর একটা সিগারেট ধরায়। শিল্পী নিজের কাপ থেকে খানিকটা চা মিথুনের কাপে ঢেলে দেয়।
শিল্পীর অনুরোধে মিথুন দরজাটা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু মিথুনকে এখন খুব বিব্রত লাগছে! এখন কি করবে শিল্পী?
শিল্পীর ওড়না বিহীন বক্ষযুগলের, দ্রুপদ লয়ে উঠা নামা, মিথুনের চোখ এড়িয়ে গেল না। মিথুনের দিকে পিঠটা এগিয়ে দিল শিল্পী। মিথুন শিল্পীকে অনায়াসে দুবাহু বন্ধনে জড়াতে পারে। মিথুনের উষ্ণ নিশ্বাস শিল্পী নিজের ঘাড়ে টের পাচ্ছে। শিল্পী খুব স্বাভাবিক কন্ঠে বলল; জামার চেনটা একটু খোল।
মিথুন কিছু ভেবে পাচ্ছে না। মনে হয় গায়ে কোন শক্তি নেই। হাত পা কাঁপছে! শিল্পী আবার বলল; প্লীজ চেনটা খোল।
মিথুন কাঁপা হাতে চেনটা খুলল। কিন্তু ব্রা-র হুক পর্যন্ত।
শিল্পী বলল: ভয় পাচ্ছ! এবার নিজেই কোমর পর্যন্ত পুরোটা চেইন খুলল।
মিথুন মন্ত্রাবিষ্টের মত! কোন ইচ্ছে শক্তি কাজ করছে না!
শিল্পী এবার কামিজের বন্ধন থেকে হাত দুটোও মুক্ত করল। চায়ের রং-এর মত ব্রা টা ছাড়া শিল্পীর আর কোন আব্রু নেই। শিল্পী মিথুনের বা হাতটা নিজের ডান দিকে কোমরের একটু উপড়ে ঠেকাল। কিছু অনুভব করছ? শিল্পী সহজ করেই জিজ্ঞেস করল।
মিথুন একটা, একটু উচু ভাজ টের পেল! কাঁপা গলায় প্রশ্ন করল; কি এটা?
শিল্পী এবার একটু ধরা গলায় বলতে লাগল:
জান! আমার জন্মের কয়েক মাস পর, আমাদের বাড়ীর ঝি কে তাড়িয়ে দেয়া হয়। তার বছর দশেক পরে, আমার তখন স্রাব শুরু হয়েছে কেবল। বাবা মার সাথে প্লেনে করে মাদ্রাজ যাই। আমার ডাক্তারী পরিক্ষার জন্য। হাসপাতালের কেবিনে এই জায়গায়, এখন যেখানে তোমার হাতটি, প্রচন্ড জ্বলছে! ব্যাথাতুর জিজ্ঞাসু নেত্রে মায়ের দিকে তাকাই। মা বলেন: এমন কিছু না। ঠিক হয়ে যাবে। জান, আমার বাবারও ঠিক এখানটায় একটা কাঁটা দাগ আছে!
মনে হয় পশ্চিমা কোন মহা পুরুষ বলে থাকবেন: ষোল আর ষাট র বয়সী সব মহিলা শিকারের উপযোগী! খুব আদুরে একটা হাত, প্রায় প্রতি রাতেই শরীরে টের পেতাম। তুমি যেমন করে আমার দাগটি এখন অনুভব করছ, ঠিক তেমনই, সেই আদুরে মানুষটির হাত বেয়ে আমার হাত, তার শুকিয়ে যাওয়া ক্ষত আবিস্কার করে।
বাড়ির বুড়ো ড্রাভাইরটা আমাকে খুব আদর করে। কেন তা জানিনা। তাকে গাড়ীতে একা পেয়ে, একদিন খুব অনুনয় বিনি নয় শুরু করি।
তিনি বললেন: মা বড় হও, এবাড়ী ছেড়ে যাবার আগে ঋণটি শোধ করে যাব।
ঢা. বি. তে ইংলিশে চান্স পেলাম। চাচাকে তাগাদা দেই। সেই একি জবাব: মা বড় হও।
অনার্স শেষ কলরাম। এখনো ড্রাইভার চাচার একই জবাব: মা বড় হও।
মেজাজ ঠিক রাখতে পারি না। অনেক বকাঝকা করি।
চাচাও কাঁদে, নিজেও কাঁদি।
মাষ্টারস শেষ করলাম। থিসিস লিখছি। চাচা ঘোষনা দিলেন: ডাক্তার বলেছে, এখন আর গাড়ী চালানো ঠিক নয়। তিনি জীবনের বাকী দিনগুলো নিজ গ্রামে কাঁটাতে চান।
আমি সময় বুঝে, গুলশানে জয়ীতাদের বাড়ী যাব বলে; চাচার পাশে গাড়ীতে বসি।
আবার চাচার সাথেই ফিরব। চাচা এখন যেন আর আমাদের ড্রাইভার না। কেমন বিশেষ একজন আত্মীয়। আত্মার সম্পর্ক একেই বলে!
গাড়িটি লেকের পাশে পার্ক করে; চাচা মুখ খুললেন: পারভিন দেখতে তোমার মতই ছিল। এখন তোমার যত বয়স এই টুকু বয়সেই একটু আশ্রয়ের জন্য এ বাড়িতে আসে। সাহেবের শরীর ভাল নয়। ঘন ঘন হাসপাতালে যেতে হয়। বাড়ীতে একজন রান্নাবান্নার মানুষ খুব দরকার। দারোওয়ান পারভিনকে দরজায় দাড় করিয়েই মালকিনকে খবর দিতে গেল। আমি সাহেবকে নিয়ে ফিরছি। গেটে পারভিনকে দেখে সাহেবই চাকরী পাঁকা করে দেন।
তখন তোমাদের ভক্স ওয়াগন টা চলত। বছর খানেক বাদেই, সে গাড়ীতে করেই, পারভিনকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম। তোমাকে নিয়ে, দিন কয়েক পরে ঐ ভক্স ওয়াগনেই বাড়ী ফিরি।
বছর ঘুরতেই, একটা টাকার তোড়া হাতে ধরিয়ে, পথের পারভিনকে, পথেই ছেড়ে দেয়া হল।
বরিশালের টানে কথা বলত। এখন কোথায় আছে কে জানে?
জান! পথের পতিতা থেকে শুরু করে পৃথিবীর সব নারীকেই মায়ের মত লাগে।
পৃথিবীতে তুমি ছাড়া এ কথাগুলো আর কাউকে বলতে পারিনি।
পৃথিবীর সব নারীইতো মা! মিথুন ভাবল; শিল্পী ঠিক বলেছে।
মায়েদের রক্তজবার মত, তির্যক সূর্য্য কিরণ আর প্রবল ঝড় থেকে, বুক দিয়ে আগলে রাখতে হয়।
শিল্পীও কি মা নয়? তার ভেতরেও একটা মাতৃমূর্তি, না ফোটা রক্তজবার কলির মত প্রস্ফুটিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে!
আগামী দিনের এই মা-কে মিথুন কি করে শান্তনা দেবে? এখন কি শিল্পীর বেআব্রু দেহটা দু বাহু দিয়ে বক্ষে চেপে আব্রু দেবে!
মন্তব্য
গল্পটি সাম.ইনে প্রকাশ হয়েছিল। সেখান থেকে প্রত্যাহার করে সচলে দিলাম।
একটু বড় হয়েগেল, দুঃখিত।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
পুতুলরে শাড়িটা একটু দীর্ঘ
তবুও স্মৃতিময়,
বর্ণাঢ্য লয় ...
তবলার টোকায়
তা-থৈ ...
....................................
বনের বেঞ্চিতে ওম শান্তি!
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
কষ্ট করে এত লম্বা লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
নতুন মন্তব্য করুন