শেরালী-তিন (আপন ঘরে)

পুতুল এর ছবি
লিখেছেন পুতুল (তারিখ: শুক্র, ২৩/০৫/২০০৮ - ৮:২০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আপন ঘরে
লন্ডন হইতে চাইয়া দেখে, মহা সিন্দুর পাড়ে।
আরেক জনা আছে বসে, দিল্লিরও শহরে।
খাটে না তার আইনের বিচার,
আসামে কি কুচ বিহারে,
আপনারে, ধন্য বলি তারে আমি, মানুষ বলি তারে।
আপন ঘরে বইসে যে জন চিনতে পারে আপনারে,
ধন্য বলি তারে আমি, মানুষ বলি তারে।।

জয়ধন মুনির মন্ত্র, তার বর পুত্রের কানে বাজল। বর পুত্র আকূল হয়ে বলল:

আপন ঘরে পরবাসী, পিতা হলই স্বর্গবাসী
মাতা গেল দেহ রাখি, ক্ষুধার অন্ন কৈ?

জয়ধন মুনির স্বর্গ থেকে মর্তের মানুষের জন্য করার কিছু নেই, তবু ডাকে সারা দিলেন:

মুনিঃ আমায় ডাকলি মোরে কে জয়ধন মুনিরে
ডাক শুনিয়া আকুল প্রাণে আসি এই খানে।।

বর পুত্রঃ বিদেশী এক অধিকারী, বিলাতে তার আসল বাড়ী
কলিকাতায় হয় কাচারী, (বুড়ি) গঙ্গার ধারে।

মুনিঃ পরথম দর্শণের কথা কইতে প্রাণ যায়
দস্যু গনে জল পথে ভারত মুখে ধায়।

বর পুত্রঃ বানিজ্যাতে আইল তারা বন্দুক লইয়া কাঁধে
রাজা খুশী বানিজ্যতে খাজনা নাহী লাগে।।

মুনিঃ দ্বিতীয় আরজির কথা কইতে প্রাণ যায়
সৈন্য বিনে পন্য লুটে সকল জনতায়।।

বর পুত্রঃ দুর্গ গড়ি কামান দাগে লুটেরা খেদায়
ভারতে করিল ঘাটি রণতরী ধায়।।

মুনিঃ তৃতীয় সন্ধির কথা কইতে প্রাণ যায়।
যাগা বুইজা দস্যু গনে জমিন কিনতে পায়।

বর পুত্রঃ বিনা শুল্কে বানিজ্যেতে রাজা হইতে চায়
এখন দেখি অসি খুলে রাজারে ধমকায়।

মুনিঃ চতুর্থ যুদ্ধের কথা কইতে প্রাণ যায়
মীরজাফরের বেইমানিতে জয়ী হইয়া যায়।

বর পুত্রঃ হস্ত কাটি মসলিনেরে করিল বিদায়
নীলের বিষের দাঁত বিন্ধিল ধরায়।।

মুনিঃ পঞ্চম বিদ্রোহের কথা কইতে প্রাণ যায়
ক্ষুধিরামের ফাঁসি হইল ভারতের দড়ায়।।

বর পুত্রঃ গান্ধি আইল সাথে করি অহিংসার পণ
আমার দেশে আমি রাজা তুমি কোনজন?

মুনিঃ ষষ্ঠম ফান্দের কথা কইতে প্রাণ যায়
জিন্না বলে পাকিস্তানের রাজা হইতে চায়।।

বর পুত্রঃ একদিনেতে কলিকাতায় পাঁচলক্ষ নিধন
এক ভাই আরেক ভাইয়ের কাঁটিল গর্দণ।।

মুনিঃ সপ্তম ভাগের কথা কইতে প্রান যায়
পাকিস্তানের পূব দিকে বাংলা ভাষা চায়।।

বর পুত্রঃ চলে গুলি মুসলমানদের, মুসলিম নিধনে
বাংলা কি আর গুলির ডরে মায়ের ভাষা ছাড়ে!

মুনিঃ এই খানেতে বিদায় নিল জয়ধনমুনি ভবে
পিতা গেলে পিতা পাইবা বেটা লইলে কোলে
মাতা গেলে মাতা পাইবা বেটি কোলে লইলে
মাছের শত্রু চাই আর ভাইয়ের শত্রু ভাই
ভাইয়েরে পাইবানা জনম নতুন একটা লইলে
ভাইয়ের হেফাজত কইর তফিকে থাকিলে।।
স্বপ্ন: মরূ চারিণী
জল্লাদ দড়িতে দুধ কলা মাখাচ্ছে, মাথায় যমটুপি পরাচ্ছে। আমি কিছু দেখতে পাচ্ছিনা। দম বন্ধ হয়ে আসছে। চিৎকার করে বলছি: বাঁচতে চাই। ঘুম ভেঙ্গে গেলে স্বপ্নের যন্ত্রনা শেষ হয় বটে কিন্তু শুরু হয় বাস্তবের নরক যন্ত্রনা। ঘামে ভিজে, গায়ের গেঞ্জী দ্বিতীয় চামড়ার মত, শরীরের সাথে লেপ্ট আছে।
এরই মধ্যে চৌদিক থেকে প্রায় একই সাথে ভেসে আসে আযানের ধ্বনি। মধুর আযান গলিত শিশার মত কর্ণ কুহরে প্রবেশ করিলে, ঘুমাইতে পারে কেবল কুম্ভকর্ণ। অবশ্য অভ্যস্ততারও একটা ব্যাপার আছে। চেষ্টা করলে মানুষ পারেনা পৃথিবীতে এমন কিইবা আছে..
ক্রমশ...


মন্তব্য

তীরন্দাজ এর ছবি

একটি পর একটি বিদ্রোহের বর্ণনায় আমাদের ইতিহাস তুলে ধরছেন সামনে। তারপর ধরবেন আসল কাহিনী বলে মনে হচ্ছে।

ভাল হচ্ছে পুতুল। আপনার লেখার ধাঁচ আলাদা। সুর আলাদা, তাল, লয় আলাদা। এর ভেতরে পাঠক একবার পড়লেই ঘুর্ণিবাকে আসল রস-আস্বাদন শুরু হবে। শুভকামনা।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

পুতুল এর ছবি

এমন করে বলেন! লজ্জা লাগে। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মনে হচ্ছে একটা মহাকাব্যিক উপন্যাসের দিকে গড়াচ্ছে...

০২
আমি কোথাও কোনো ধারাবাহিক উপন্যাস পড়ি না
এটা যে একটা উপন্যাস তা বুঝলে প্রথম কিস্তি পড়তামই না
কিন্তু পড়ে মনে হয় ফেসে গেছি

পুতুল এর ছবি

গুরু অত আস্কারা দিলে মাথায় উঠব তো!
অনেক অনেক ধন্যবাদ, কষ্ট করে পড়ার জন্য।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

শাহীন হাসান এর ছবি

মুনিঃ সপ্তম ভাগের কথা কইতে প্রান যায়
পাকিস্তানের পূব দিকে বাংলা ভাষা চায়।।

বর পুত্রঃ চলে গুলি মুসলমানদের, মুসলিম নিধনে
বাংলা কি আর গুলির ডরে মায়ের ভাষা ছাড়ে!

‌‌ ''এত ক্ষণে''-- অরিন্দম কহিলা বিষাদে --
''জানিনু কেমনে আসি লক্ষ্মণ পশিল
রক্ষ:পুরে! হায়, তাত উচিত্ কি তব
এ কাজ, ....
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ গুরু। তুলনাটা একটু বড় হয়ে গেল না! আমার জন্য।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

স্পর্শ এর ছবি

আসলেই মহাকাব্যিক একটা উপন্যাস হতে যাচ্ছে মনে হয়। শুভকামনা। পাঠক হিসেবে সাথে আছি। হাসি
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

পুতুল এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ, অকুন্ঠ উৎসাহের জন্য।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

মুজিব মেহদী এর ছবি

পুরোটা এই ভাষায় উপন্যাস লিখবেন? কেন? এ ভাষায় তো মধ্যযুগে ম্যালা কাজবাজ হয়ে গেছে। এভাবে উপন্যাস লিখে উত্তীর্ণ হতে গেলে আপনাকে মধ্যযুগের কৃতি খোলোয়াড়দের চাইতেও ভালো খেলতে হবে ; 'মৈমনসিংহ গীতিকা'র ওস্তাদ বয়াতিদের চেয়েও।
পারলে চালিয়ে যান।

................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

পুতুল এর ছবি

মেলা দেরী হয়ে গেল জবাব দিতে!
না বয়াতীদের সাথে পাল্লা দেয়ার মন ও মেধা আমার নেই।
বাংলাকে অনেক প্রতিভাবাবান কবিরা বিদেশী সাহিত্যের স্পর্সে সমৃদ্ধ করে গেছেন।
আমি বাংলার বয়াতীর অমর কীর্তির ছিটে ফোটায় সুধু সিক্ত হতে চাই।
যেখানে প্রয়োজন সেখানে তাদের পদধূলি নেই।
ময়মনসিংহ গীতিকা আমার পড়া নেই। আপনার মতে তাদের সাথে আমার দু একটি কথা মিলে গেলে নিজেকে ধন্যই মনে করব!

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

খেকশিয়াল এর ছবি

অসাধারন হইতাসে ! দেখি দেখি পরের গুলা পড়ি ...

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ শিয়াল পন্ডিত!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।