দামী রেস্তোঁরায়, ভর পেট খেয়ে, তৃপ্তির ঢেকুর তুলে, পাচকের প্রশংসায় জাবর কাঁটতে কাঁটতে, খোলা হাওয়ায় একটু ধুয়াবাজী করতে গিয়ে, বাধা পাই বৃষ্টির ছাঁটে! আধুনিক সভ্যতার যান্ত্রিক সুবিধায় মধ্যযুগের আগুনে আধপোড়া মাংসের, দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা উচ্ছিষ্ট, টুথপিকে গেঁথে, বৈদুৎতিক শক দিয়ে জ্বালাই তামাকের ধোঁয়া। ভুল তাল ও লয়ে, যন্ত্রদানবদের আগ্রাসী মিছিলের, তৈলাক্ত গর্জণে বৃষ্টির রিনিঝিনি সুরের ছন্দ শুনতেই পেলাম না।
ঘাসের ডগায় শিশিরের মত, বৃষ্টির ছিটে-ফোঁটা, সানসেটকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে, মাথার রুক্ষ চুলে দিয়ে যাচ্ছিল নৈর্সগিক মায়া।
ক্ষন কালের বৈদ্যতিক লালবাতির বাধায়, তৈল পিপাসিত যন্ত্র দানবদের হুংকার একটু স্তিমিত হতেই, শুনতে পেলাম কার বেহালার তার থেকে ছড় পিছলে পড়ার ঝংকার!
বড় রাস্তার মুখে, ছোট হয়ে বসে থাকা মানুষটির দিকে এগিয়ে যাই, কৌতূহল বসে! ছিন্ন-মলিন গাটুরীর উপড় বসে সাপের মত শীতল দেয়ালে হেলান দিয়ে বুড়ো বুঝিবা ঘুমিয়ে পড়েছে শোকে! বেহালার মেলে থাকা বাক্সে, ঠাস করে থাপ্পর মাড়ার মত, টুক করে ফেলে দেয়া ধাতব মুদ্রাগুলোর রং দেখেই বোঝা যায়; খাবার মত পয়সা আজ বুড়োর শ্রোতারা তার বাজনায় মুগ্ধ হয়ে দেয়নি! ক্ষুধা আর ক্লান্তিতে ঘাড় ও মাথার ফাঁকে চেপে থাকা, বেহালার তারে, ছড়টি খসে যায় বারে বারে।
বড় মায়া হয়। ভারী কয়েকটা মুদ্রা ফেলে দিই বাক্সে। বুড়ো আড়মোড়া দিয়ে আবার সুর ধরে। বহু বছরের আঙ্গুলী চালনে ব্রীজের কঠিন কাঠ ক্ষয়ে গেছে। চৈত্রের খড়ায়, কুয়ো থেকে শীতল জলের মত, সুরগুলো তুলে আনছে বুড়ো, নৈর্সগিক অভ্যস্থতায়!
এমন নিবিষ্ট চিত্তে আরাধনা করে কী পেয়েছে বুড়ো! বাজনার ফাঁকে অবাক হয়ে শুধাই? মনের মত প্রশ্নের জবাব দিতে বুড়ো এবার সুরের সাথে গলা দিয়ে গায়:
সে যে আমার হোক বা না হোক সই
আমি যে তাহার হইয়াছি।।
মন্তব্য
লেখাটি খুবই ভাল লেগেছে। প্রতিটি দিনকে মাড়িয়ে মাড়িয়ে আমরা যে মানচিত্র একে যাই, স্থান, কাল, আর পাত্রকে পেরিয়ে তারই নির্যাস।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ধন্যবাদ তীরুদা!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
নতুন মন্তব্য করুন