শেরালী-সাত (নাম তার নিমাই টাঠু)

পুতুল এর ছবি
লিখেছেন পুতুল (তারিখ: শুক্র, ৩০/০৫/২০০৮ - ৯:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আষ্ট ঠেং ষোল হাটু
নাম তার নিমাই টাঠু
শুকনায় পাতিয়া জাল
মাছ খায় চির কাল।

লাঠিম, ডাংগুটি আর মেয়েদের মত ষোলকৌট্টা খেলতে খেলতে হাত পা জমে গেছে। হয়ত সে কারণেই করিমের প্রস্তাবে আমিও ফজলুর মত খুশীই হলাম। কাঁচা জিংলার (বাঁশের ডালা) ছিপ নিয়ে বড়শী বাইতে যাব। করিমের বাবাও বালির নাওয়ে গেছে। তাই ওদের কোষা নৌকার একছত্র অধিপতি এখন সে একাই। জল স্ফটিকের মত স্বচ্ছ। দু একটা কাটাইরা বা দারকিলা মাছ ছাড়া অন্য মাছের দেখা পাওয়ার সম্ভবনা নেই। তাই কাটাইরা মাছের উপয়োগী বড়শীই সাথে নিলাম।

মাকড়শা একটা পূন্যবান প্রাণী। কথিত আছে যে, দ্বীনের নবী মোস্তফা মক্কা ছেড়ে মদিনায় পালিয়ে যাওয়ার সময় ভোর হয়ে যাওয়াতে একটা গুহায় আশ্রয় নেন। মাকড়শা সে গুহার মুখটায় জাল বোনে। কবুতর সে জালে ডিম পাড়ে। কাফেররা মনে করল এখানে অনেক দিন কোন মানুষ ঢুকেনি। এভাবে মাকড়শা নবীর জীবন রক্ষা করে। তাই এ প্রাণী পূন্যবান এবং অনেক গুনে গুনী। পানির উপর সচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারে। কিন্তু তার একটা বিপদ হল যে, সে পানির উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় খাদ্য হিসাবে কাটাইরা মাছের পেটে চলে যেতে পারে। কাটাইরা মাছগুলো মাকড়শার লোভেই মাছরাঙ্গার ভয়কে উপেক্ষা করে পানির এত উপরে ভেসে বেড়ায়। আমরা ধানের ডগা থেকে মাকড়শা ধরে বড়শীতে গেঁথে পানির উপর ভাসিয়ে রাখি। মাছগুলো জীবিত মাকড়শা মনে করে সেটা গিলে ফেলে। ব্যাস, টান দিয়ে নৌকায়! কিন্তু কাটাইরা মাছের ঠোঁট খুব নরম। তাই খুব আস্তে টান দিতে হয়। আর কাঞ্চা বাঁশের চিকন নরম ছিপ না হলে, ঠোঁট বড়শীতে গেঁথে থাকে মাছ, জলেই সাঁতার কাটে। করিম,ফজলু পটাপট মাছ তুলছে নৌকায়। কিন্তু আমি শুধু ঠোঁটই পাচ্ছি, একটা মাছও ধরতে পারলাম না। ক্রমাগত ব্যার্থতায় অধৈর্য্য হয়ে নৌকা থেকে লাফিয়ে ওদের একটু ক্ষ্যাপালাম আর একটু সাঁতার কাটলাম। জল এখন এত বেশী নয়। তবে ঠিকমত দাঁড়াতে পারিনা। খুব লম্বা হয়ে দাঁড়ালে কোন রকমে নাকটা পানির উপরে থাকে। ওরা আবার মাছ ধরায় মনোযোগ দিল। আমি ধানের ফাঁকে বেড়ে উঠা দু'একটা শালুক পাতা দেখে ডুব দিয়ে শালুক তোলার চেষ্টা করলাম। ভাল করে জলের উপর এখনো সব কটি পাতা জাগেনি। শালুক হবে কিভাবে? একটা মটরশুটির মত শালুক পেলাম। দাঁত দিয়ে ছাল সরিয়ে মুখে পুড়লাম। অসম্ভব তেতো। আষাঢ়ের শেষে কার্তিকের শুরুতে গোল আলুর মত হবে একেকটা শালুক। সিদ্ধ করে খোসা ছাড়ালে মনে হয় সোনার ডিম। মুখে পুড়লে চিনিছাড়া সন্দেশ। জিবে পানি এসে গেল; ভাবতে ভাবতেই। শাপলার কুঁড়িগুলো এখনো পদ্ম পাতায় পরিণত হয়নি। অদ্ভূত ভাবে শাপলা, পাতার সাথেই মূল থেকে অঙ্কূরিত হয়। পানি খুব স্বচ্ছ বলে দেখতে পেলাম। সাবধানে একটা শাপলা মূল থেকে ছিঁড়লাম। খুব কচি বলে খোসা না ছাড়িয়েই মুখে পুড়লাম। এর স্বাদ শাপলার মতই। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার মত সবুজ ধানের পাতা। জলের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে এতদিন পরে একটু স্থির হয়েছে। তাতেই হাল্কা সবুজ কচি রংটা ঘন সবুজে পরিনত হয়েছে। ওৎ পেতে বসে আছে ধনচে গাছের ঘন ঝাপড়িতে কালো বক আর ডাহুক। মাকড়শার লোভে অনেক সময় মাছগুলো পানির উপরে লাফ দেয়। সে মাছ টুক করে গিলে ফেলে ডাহুক না হয় বক।

বড় শান্ত মনে হয় জীবনের ঐ গতিধারা। এ কূল ভেঙ্গে ও কূল গড়তে গিয়ে আপন খেয়ালে প্রকৃতি সৃষ্টি করেছে এই সাত মৌজার বিল। এ দিকটায় চর পড়ে আর ও দিকটা ভাঙ্গে। অনেক ভাঙ্গাগড়ার ফল এ বিল। যদিও এটা আসলে চর কিন্তু লোকে বলে বিল। তাতে চর দখলের রক্তাক্ত অধ্যায় কি আর ঘোচে? এর দখল নিয়ে যত রক্ত ঝরেছে, তাতে এ বিল ভরে যেত। দারোগা, থানা, পুলিশ, কোর্ট ,কাচারি কিছুতেই যখন কারো দখল নিশ্চিৎ করতে পারেনি, তখন সবাই একমত হল। চর সাত মৌজার সব পরিবারে সমান করে ভাগ করে দেওয়া হলো। কিন্তু অনেক মানুষ বলি হওয়ার পরে।

প্রশাখার কান্ডে ঝুলে থাকা তেঁতুল পাতার মত রেল সড়কের দু'ধারে সারি সারি নৌকা বাঁধা। বর্ষার শেষ দিকটা খুব কদাকার। নৌকা পাহারার বেতন, পাতলা মাথায় দুই আনার বুট খেতে খেতে হাত ও ঠোঁট, দুটোই লাল। সে বুটকে আকর্ষনীয় করতে রং মাখা হয়েছে। রতনই প্রথম নৌকায় এলো। কুয়াশার মত বৃষ্টি পরছে। এ অবস্থা বেশ কদিন ধরেই। বাজারের সব রাস্তা পাকা নয়। তাই বেশীর ভাগ রাস্তায়ই খুব কাঁদা। লুঙ্গিটা কাছা দেয়া ছিল আগেই। পানি অনেক কমে গেছে। সদ্য জলমুক্ত জায়গার মাটি এত নরম যে, হাটু পর্যন্তু ঢুকে যায়। রতন সেই প্রস্তুতি নিয়েই চালের বস্তা মাথায় তুলেছে। খুব কৌশল করে বস্তাটা নাওয়ের গলুইয়ে রাখল। যেন কোন শিশুকে কোল থেকে ধরণিতে হামাগুড়ি দিতে নামিয়ে দেয়া হল।

কত নিল মাওলার পুত?
পাশের নৌকায় ব্যর্থ ভাবে খদ্দেরের অপেক্ষায় বসে থাকা মিস্তিরির প্রশ্ন। যদিও আমরা দুজনই মাওলার পুত, তবু প্রশ্ন রতনের উদ্দ্যেশ্যেই। মিস্তিরিরা কাঠের কোষা নৌকা বানিয়ে হাটবারে বিক্রি করে। কিন্তু এখন পানি অনেক কমে যাওয়ায় নৌকা খুব একটা বিক্রি হচ্ছে না।
রতন বলল;
বরিশাইল্লা চাইল, হেই আবার চল্লিশ টেহা দর।
আমরা আমন ধানের চাউল খেয়েই অভ্যস্ত। বরিশালের চাল বোরো ধানের, তাই দাম একটু কম।
একে একে সবাই নৌকায় ফিরে এল। মাল পত্র আর মানুষে নৌকা প্রায় ডুবু ডুবু। এতক্ষন সূর্য্য ছাই রং এর ঘোমটা মাথায় ছিল, এখন রঙ বদলে কালো করে দিল চরাচর। সবাই হাতে বৈঠা নিল। ঝুপ ঝুপ পানি কেটে নাও এগিয়ে চলছে, বৈঠা টানার সাথে সাথে।
বাবা বললো: দিন দিন সব কেমুন অইয়া যাইতাছে। মুন্সীরা এইবার নাও দৌড়ের ব্যবস্থা করলনা!
রেজেক মিয়া বলল: করবে কেইম্তে! মাইনষের মোনে শান্তি নাই। দেশে কি অইব কেডা জানে? শেক সাবেরে বেবাকে ভোট দিল। কিন্তু পাকিস্তানীরা গদি ছাড়ে না। মুন্সীরাতো মুসলিম লীগ আছিল। মাইনষে একটা ভোটও দেয় নাই। হেগো মোনে বড় কষ্ট! নাও দেউরের ব্যবস্থা করব কেইম্তে?
ফানজতালী বলল: বাইজু, রাজা জেইডা মনে লয়, হেইডাই অইক। আমরার, গরীবরার কাম কইরাই খাওন লাগব।

সংসারের রোজগেরে হিসেবে ইলিশ মাছের ডিম বাবা আর রতনই পেল। কাঁঠালের বিঁচি দিয়ে ইলিশের ঝোলও খুব মজা করে খাচ্ছি। তবে আমার প্রিয় হচ্ছে নোনতা ইলিশ। ডিম খাওয়া শেষ করে ঝোল দিয়ে এক নলা মুখে দিয়েই বাবার খিস্তি শুরু হল।

মিডা কইরা ছালন রাছনত তোর কোন বাফের লাগি?
মা বাটা মরিচের খোরার দিকে বাবার দৃষ্টি আর্কষণ করার চেষ্টা করতে করতে বললেন;
আমনে এত ঝাল চান, তয় এত ঝাল দিলে এই লেডা ফেডা গুলান খায় কেম্তে।
বাবা: মাগী তুই আলাদা ছালন রানবার ফারছ না?
মা: নিশি রাইতে বাজার থন আইয়েন, তয় দুই ছালন রান্দুম কত্কন?

কথোপকথন হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে। এমন আশংকা। কিন্তু বাবার অনাগ্রহে এবার তা হলনা। আজকাল খুব অল্পতেই মন বিদ্রোহ করে বসে। ইচ্ছে করে ভাতের সানকি বাবার মুখে ছুড়ে মারি।

বালি তোলার মৌসুম শেষ। রোজগারেও জলের মত ভাটা পরেছে। এখন অঘ্রান মাস আসা অব্দি আয়ের জোয়ার আসবেনা। মাছ মারা পরছে মণে মণে। কিন্তু কেনার লোক নাই। শিশু, কিশোর, ছেলে -বুড়ো এমনকি গৃহবধূরা পর্যন্ত জেলেদের প্রতিযোগী। মাছ সবার ঘরে। তা পয়সা দিয়ে কিনবে কে? শুটকি দেয়ার চেষ্টা চলছে, কিন্তু গাদলায় মাছ না শুকিয়ে পচন শুরু হয়েছে। তার দুর্গন্ধে শ্বাস নেয়া মুশকিল। কাজে লাগছে শুধু ছোট চিংড়ি। মা সেগুলো পাটায় বেটে রুটির মত খোলায় ভেজে শালুক ঘেচুর সাথে খেতে দিচ্ছে।
রুই কাতলা পানি পাঁকার আগেই নদীতে আশ্রয় নিয়েছে। কৈ, শিং, মাগুর দুর্দিনের জন্য কলসীতে জিইয়ে রাখা হচ্ছে। বৈচা বজুরীর দিকে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছেনা। কার্তিকের ঘোলাজল খুব তাড়া করে সমুদ্রের টানে ফিরে যাচ্ছে। জেগে উঠছে জমি। পিচ্ছিল মসৃণ। কাশ ফুলের মত ধানের ডগা চালে পেট ভরে সবুজ হচ্ছে। খাল-বিলের ধারে মাছ মারার হিড়িক। জৈ লেগেছে মাছের। পুটি, পাবদা, চেদুরী, বাইলা, খইয়া, টেংরা ঝাকি জ্বালে আটকে যাচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে। খুব সাবধানে বন্দুর পিচ্ছিল কর্দমাক্ত পথ ভাঙতে হয়। কাঁদা মাটিতে ফেলে দেয়া বজুরি টেংরার কাটা ফুটতে পারে পায়ে। পচা শামুকে পা কাটতে পারে।
আকাশে বাতাস নেই। কুয়াশা শুকোতেই রোদের তেজ শেষ। ঘন নীল গগনে শিমুল তুলার মত সাদা মেঘের দল, পাল তুলছে অজানায়। নীচু জমির আটকে পরা জলের কচুরীপানার ফাঁকে একঠায় দাঁড়িয়ে আছে ধলিবক। চিলের অভ্রান্ত চোখকে ফাঁকি দিয়ে, ধানের নীচে আশ্রয় নিয়েছে ডাহুকের ছানা। কাঁচা মাটিতে ইঁদুরের গর্তে খুঁজছে খোরাক, দু'একটা সাপ। গৃহস্তের পাতি হাঁস খালের ঘোলা জলে ডুব দিয়েছে শামুকের লোভে। পেট থেকে বের করে খাওয়াচ্ছে মাছ, বুড়ি বক তার ছানাদের, অতি উচু বট গাছের ডালে। ঘন সবুজ পাতার মোড়ক থেকে উঁকি দিচ্ছে রক্তের মত লাল কৃষ্ণচূড়ার কলি। ধানি রঙ-এর বোল আকাশে মেলেছে দল। তেঁতুলের গাছে ঝুলছে বাঁকা চাঁদ। সাদা পাপড়ী ঝরিয়ে গাব গাছ ঢেকে দিয়েছে ঊঠোন। শ্যাওড়ার ফাঁকে মুখ ভেংচি দিচ্ছে পেঁচা। শিমের পাতা সবুজ করেছে ছনের চালা। উচূ জমির সবুজ ধনে পাতা জমিনের ধানের সোনালী রং ম্লান করতে পারেনি এতটুকু। স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে হাত-পা গুটিয়ে বুড়ির মত বসেছে ধানের ছড়া। সে থেকে সোনার চূলের মত ছড়াটি কেটে নিচ্ছে কৃষকের কাঁচি।
অবহেলায় অথবা ভুলে ফেলে যাওয়া ধানের শীষ কুড়াচ্ছি মুন্সীদের ক্ষেতে। রতন আর বাবার পিছে। বাবা মাঝে মাঝে সবার অলক্ষ্যে লুঙ্গির খুঁটি থেকে কিছু ধানের ছড়া রেখে দিচ্ছে আমার ওরায়। মেয়েদের মাথার চুলের বেনীর মত, খড়ের বেনা জ্বালিয়ে আনার ছুতোয়, আনন্দে সোনার ধান রেখে আসি আমাদের শূন্য গোলায়।
খড়ের নাড়ার কোথাও সবুজের ছানি। কলাই, সর্ষে মটরশুটি এরই মধ্যে মেলে দিয়েছে সবুজ কচি পাতা। মটরশুটির ক্ষেতে নাড়া পোড়ানো হলে কুড়িয়ে খাবো ভাজা মটর। অবশ্য এর মধ্যে কলাই শাক খাওয়া হয়েছে দু'এক বার। আমনের মাড় দিয়ে রান্না, তেঁতুলের টক। সকালে ক্ষীরের মত ঠান্ডা হয়ে জমে থাকে পাতিলে। সাথে দুটো পুঁটি মাছ। এই নাস্তায় পেট ভরে, কুয়াশায় পা ধুয়ে মায়ের সাথে বেরিয়েছি। ক্ষেতের নাড়া তুলে ঝড়ে পরা ধান, ঝাড়ু দিয়ে তুলে আনতে। বিনিময়ে নাড়ার বোঝা পৌঁছে দিতে হবে জমির মালিকের ঘরে। অবশ্য আমি বইতে পারি এমন দু'একটা বোঝা বাড়ি নিয়ে আসি। কিন্তু মূল লক্ষ্য হচ্ছে ধান। পুরো ক্ষেত ঝাট দিয়ে জড়ো করা খড় কুটোর ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে থাকা ধান, কুলোয় নিয়ে ঝেড়ে আলাদা করতে হয়। দিনের শেষে মা এখন তাই করছেন। খড়ের গাদায় হারিয়ে যাওয়া সূই খোঁজার চেয়ে কাজটা অনেক সহজ। ধান যা পাওয়া যাবে, কুলা আর ঝাড়ু সহ তা একাই বইতে পারবেন মা। তাই গোল্লা খেলার লোভে নাড়ার বোঝাটি নিয়ে দিলাম বাড়ির দিকে ছুট।
"নবান্নের দিন" বিদায় নিয়েছে অনেক দিন আগে। আজকাল নতুন ধানের চিড়ে আর খেজুরের গুড়, এতেই নবান্ন। তাও বাবা খেজুর গাছে ঘটি দিতে পারেন বলে কিছু রস থেকে মা গুড় করেন। কিন্তু তা তরকারীর ঝোলের চেয়ে ঘন কখনোই হয়না। জ্বাল দেয়ার খড়ি এবং সময় দুটোই এখন সমান মূল্যবান। বাবা আর রতন প্রায় দিন রাত মুন্সীদের বাড়িতে ধানের মাড়াই নিয়ে ব্যাস্ত। মা এবাড়ী ওবাড়ীতে মুড়ি-ভাজা, ধান-বানা, এসব করে কিছু উপরি আয় করছেন। মা যখন যে বাড়িতে কাজ করেন, আমি দুপুরে সেখানেই দাওয়াত পাই। কার্তিকের অনাহার অর্ধাহারের দিন শেষ। তার উপর আছে বাত্তি তেতুলের ভর্তার সাথে ধনে পাতা, একটু গুড়ো মরিচ। শাকসব্জীর মৌসুম। ফলের আয়োজন একটু পরে হবে। আমের মুকুল খাওয়ার উপযোগী হতে হপ্তা দুই। মুড়ি লুঙ্গির খোটায় ভরে সর্ষে ক্ষেতে মৌমাছির বাসার খোঁজে ধূর্ত শেয়ালের মত শেরালী সতর্ক পায়ে পায়চারি করে । এবার এত সর্ষে হয়েছে যে, হলুদ ফুলে ঢাকা পড়েছে প্রান্তর। খুব খোঁজাখুঁজি করতে হয় মৌঁচাক পেতে। অনেক ক্ষেত্রে বাজ পাখি আমার আগেই তার সন্ধান পেয়ে গেলে আমার কপালে থাকে মৌমাছিদের ক্ষিপ্ত হুল! বিকালে দাঁড়িয়াবাধা খেলা পাল বাড়ীর মাঠে। এ ছাড়া তেমন কাজ নেই শেরালীর হাতে।
ক্রমশ...


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এইখানে অনেকেই কিভাবে যেন বুড়া আঙ্গুলের ছবি দেয়... দিতে পারি না আমি... ভাইবা নেন...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পুতুল এর ছবি

ভাইবা নিয়া খুশী হইয়া ধন্যবাদ দিলাম!
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

কাটাইরা মাছগুলো মাকড়শার লোভেই মাছরাঙ্গার ভয়কে উপেক্ষা করে পানির এত উপরে ভেসে বেড়ায়।
আপনি জানলেন ক্যামনে?

প্রশাখার কান্ডে ঝুলে থাকা তেঁতুল পাতার মত রেল সড়কের দু'ধারে সারি সারি নৌকা বাঁধা।
অদ্ভূত কাব্যময়তায় ভরা এ রকম অনেক বাক্য মুগ্ধতায় পড়লাম।

ইচ্ছে করে ভাতের সানকি বাবার মুখে ছুড়ে মারি।

লাইনটা যেন অনিবার্য ছিলো।

তেতুলের ভর্তার সাথে ধনে পাতা, একটু গুড়ো মরিচ।

জিভে সত্যি সত্যি জল এস গেলো। এখন কি হবে?

খুব খুব ভালো লাগলো। খাঁটি রচনা। আচ্ছা এটাই কি প্রথম পর্ব ছিলো? নাকি মাঝখান থেকে পড়ছি?

পুতুল এর ছবি

"কাটাইরা মাছগুলো মাকড়শার লোভেই মাছরাঙ্গার ভয়কে উপেক্ষা করে পানির এত উপরে ভেসে বেড়ায়।
আপনি জানলেন ক্যামনে?"

চাপা বাজি করতে গিয়া ধরা খাইলাম!

আর সব ভাল লাগার জন্য ধন্যবাদ।
আপনি সপ্তম পর্ব থেকে শুরু করেছেন!

**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

কন কি? আমি এত ব্যাক ডেটেড? ঠিকাছে, কিছু করার নাই, বাকি ৬ পর্ব দ্রুত পড়ে ফেলবো। নেশায় পাইছে।

পুতুল এর ছবি

নেশা নিবারণ করতে না পারলে সাকী ক্ষমা পায় যেন!
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম কইরেন না। সপ্তমে যা পড়েছি - তাতেই আপনার লেখা সম্পর্কে আমার বিশ্বাসের সুর সপ্তমে চড়ে আছে। এর বদৌলতে অন্তত গত ৬ পর্বের গুনাহ যে মাফ পাইবেন তা নিশ্চিত বলতে পারি। আসলেই তুখোড় হইছে। অপেক্ষা করেন, দুই এক দিনের মধ্যেই পড়া শেষ করে ফেরত আসছি। তদ্দিনে অষ্টম রেডী করেন।

পুতুল এর ছবি

এখন সাহস পেয়ে পরের পর্ব লেখার চেষ্টা করব।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

এই উপন্যাসে গ্রামীন জীবনের বাস্তবতার ঘ্রাণ পাই। ঘ্রাণ পাই মাছের আঁষ্টে গন্ধের। তবুও জীবন ক্রমাগত ধেয়ে চলেছে কৃত্রিম আর নকল সুবাসের দিকে। একবার ছোটা আরম্ভ হলে পেছন পানে তাকানো বড়ই কঠিন। ধন্যবাদ।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

পুতুল এর ছবি

"জীবন ক্রমাগত ধেয়ে চলেছে কৃত্রিম আর নকল সুবাসের দিকে। একবার ছোটা আরম্ভ হলে পেছন পানে তাকানো বড়ই কঠিন।" জুলিয়ান সিদ্দিকী ভাই, শুধু কঠিন হলে অন্তত চেষ্টা করা যেত! আমার মনে হয় অসম্ভবও বটে!
ধন্যবাদ আপনার আন্তরিক মন্তব্যের জন্য।

**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

শাহীন হাসান এর ছবি

গ্রামবাংলার প্রকৃত ছবি যেন
মুগ্ধ হচ্ছি দিন দিন, চলুক ...।
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ কবি, আমার চেষ্টা সাফল্যের ঝলক দেখল!
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নুশেরা তাজরীন এর ছবি

প্রাণময়, কাব্যিক, গীতল বর্ণনা
চলুক

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে!
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

স্পর্শ এর ছবি

বাহ দারুণ!! এই পর্বের সাইজ পছন্দ হইসে! হাসি

অসাধারণ বর্ণনা। বাইরে থেকেও দেশের এত ডিটেইল মনে রেখেছেন দেখে অবাক হচ্ছি। অনেক কিছু জানছি। পাঁচ তারা দেওয়ার ক্ষমতা থাকলে দিতাম। দারুণ হচ্ছে।

এবার লেখা সম্পর্কে একটু মতামত দিই। একটা ব্যপার। পুরো বর্ণনা উত্তম পুরুষে। শেরালী কি শিক্ষিত? শিক্ষিত না হলে তার মনের কথার আবেগ টা কেমন চোখে লাগে। মানে পড়তে গিয়ে একটূ খেয়াল করলাম। তার চিন্তা গুলো বেশি সঙ্ঘবদ্ধ কেমন যেন শিক্ষিত একটা ছাপ আছে। 'পদ্মা নদীর মাঝির' মত থার্ড পারসন থেকে লিখলে অবশ্য লেখাটা সহজ হয়ে যায়। "ঈশ্বর থাকেন ঐ গ্রামে..." টাইপের কথা কি শেরালী বলতে বা ভাবতে পারবে? সেক্ষেত্রে দার্শনিক উক্তি গুলো লিখতে অনেক বেগ পেতে হবে। শেরালীর জবানে!

আগবাড়িয়ে মতামত দিয়ে ফেললাম। আমি এক্সপার্ট না। যাস্ট পাঠক হিসেবে কোন বিষয় চোখে পড়ল জানালাম। আসলে বেশি পড়ার অভিজ্ঞতাও নেই আমার। পাঠক হিসেবেও কাঁচা তাই।

আপনি লিখতে থাকুন। পড়তেই আছি। ভাল হচ্ছে। ভাল লাগছে! হাসি

[][][][][][][][][][][][][][][][][][]
ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ, কোরো না পাখা।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

পুতুল এর ছবি

খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন!
গঠন মূলক পরামর্শের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
পরের পর্বটা নাম পুরুষে লেখার চেষ্টা করব।
কিন্তু সেখানে বড় সমস্যা হল: ঘটনার বয়ান কারীকে নিয়ে।
আর একটু ভেবে দেখি। অনেক কিছু ঠিক-ঠাক করতে হবে।

**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

তীরন্দাজ এর ছবি

গ্রামের এই বর্ণনাগুলে আর কেউ এতো সুন্দর করে করতে পারবে কি না, ও নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। অন্ততপক্ষে আমি পারবো না। এই বর্ননাগুলোই পুতুলের লেখাকে একটি বিশেষ স্তরে উত্তীর্ণ করে....।

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ তীরুদা।
আজকাল বর্নণা খুব বেশী লোকে পড়ে না! কিন্তু গ্রামের বর্ণণা ছাড়া এখন আর কিইবা করার আছে!
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।