• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

শেরালী-তের (স্বাধীনতা তুমি)

পুতুল এর ছবি
লিখেছেন পুতুল (তারিখ: বুধ, ১১/০৬/২০০৮ - ২:২৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বর্ষার জল খুব তাড়াহুড়ো করে পালিয়ে যাচ্ছে। আর বেড়ে চলেছে মুক্তি ফৌজের হামলা! রাজাকার আর পাক বাহিনীর রাতের ঘুম হারাম। কবর খুঁড়ে তার চারিদিকে বালির বস্তা রেখে, লোহার টুপি মাথায়, বাহিরের দিকে বন্দুক তাক করে সারা রাত কার ভয়ে জেগে থাকে ওরা! পালদের পাকা দালান ছাড়া বাদ বাকী ঘরগুলো, রাজাকাররা নিজেদের বাড়ী নিয়ে গেছে। দুর্গের মত দালানটাই এখন পাহাড়ার বস্তু।
মা যেন দিন দিন বদলে যাচ্ছে! মাঝে মাঝে বমি করে! শোক, লাজ, ভয় অর্হনিশি সঙ্গী বলেই বোধ হয়, অপ্রয়োজনীয় আবর্জনার মত শরীরের স্বাভাবিক কৌমার্য্য ঢেকে দেয়। অনাকাংখিত আগাছায় শরীর ভারী হয়।
একদিন হঠাৎ মায়ের বমির মত, আকাশ থেকে পড়ে বিশাল বাজ। পাল বাড়ীর উঠোনে পুকুরের মত বিরাট একটা গর্ত হয়ে গেল। খান সাহেবেরা পাগলের মত, মুখের কাছে কি একটা বাক্স এনে কথা বলছে। ভোরের স্নিগ্ধতা কাটিয়ে সূর্য খড়তাপের পৌরুষে দীপ্ত হচ্ছে। গুলির মালা গলায় আর রাইফেল কাঁধে ঝুলিয়ে, রাজাকারদের হাতে ক্যাম্পের দায়ীত্ব দিয়ে, পাক বাহিনী পলায়ন করছে! রাজাকার ভাইয়েরা রাজ বেশ রেখে, লুংগি-গেন্জী পরে, পাক বাহিনীর একটু পরেই, গা ঢাকা দিলেন।
খোলায়, মায়ের খৈ ভাজার মত, গুলির শব্দ। নতুন দিনের তোপধ্বনিতে কান ঝালাপালা। কৌতূহলী শেরালী সব কিছু দেখতে চায়! মায়ের বাহু বন্ধন থেকে মুক্তির উপায় নেই।
গর্তে লুকিয়ে থাকা কালসাপের ছোবল থেকে রক্ষা পেতে, বেয়নেট লাগানো রাইফেল তাক করে ঘিরে রেখেছে, বিজয়ী বীর মুক্তি সেনা, আমাদের আশ্রয় নেয়া বালির বস্তা বেষ্টিত, কবরটি। সাহসী মানুষটি মায়ের জুবুথুবু অবস্থা আবিস্কার করে একটু অসস্তিই বোধ করলো! দীপ্ত কন্ঠে বললেন: তোমার ভয় নেই মা।
এতদিন মা এই কান্না কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলেন! শ্বাশুড়ী- ননদীর জ্বালায় অতিষ্ঠিত বধূ ভাইয়ের দেখা পেয়ে যেন, সব ব্যাথার পূজা একবারে সেরে নিচ্ছে! পালদের বাড়ীতে পাক বাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্র, আর গোলা-বারুদ পাহাড়া দিতে, তিন জন মুক্তি সেনা রয়ে গেল। অনেক দিনের, ঘর ভোলানো সুরের সাধকদের, সব কিছু, সাধনার তীব্রতায় মলিন। আপাততঃ তাদের পেট পূজার আয়োজনে, মায়ের অঞ্জলী নিবেদনের শাঁখাহীন হাত দু'টি ব্যাস্ত।

গ্রামের হিন্দুরা ধীরে ধীরে নিজের বাড়ী-ঘরে ফিরে আসছে। যাদের সহায়সম্পত্তি উদ্ধার করা গেল, তারা তা ফেরৎ পেলেন। কিন্তু বেশীর ভাগ হিন্দু এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বিশেষ করে বাসস্থানের ব্যবস্থাটি শূন্য থেকে শুরু করতে হল। কারণ; রাজাকার আর পাক হানাদাররা বেশীর ভাগ ঘর-বাড়ী পুড়িয়ে দিয়েছিল। জীবন নিয়ে যেখানে সংশয়, সেখানে আমনের পরিচর্যার মত বাহুল্য কেউ করেনি। তাই অনেক জমিতে ফসলতো দূরের কথা, আবাদই হয়নি। স্বাধীনতার নব ঘন আনন্দের হিল্লোলে অনেক পরিবারই যোগ দিতে পারছে না। হিন্দুদের প্রায় প্রতি ঘরে প্রতি রাতে স্বজন হারানোর বিলাপ। বেশীর ভাগ হিন্দু কোন না কোন ছোট খাট ব্যাবসা বানিজ্য নিয়ে থাকত। সেক্ষেত্রে প্রায় সবগুলো পরিবার ব্যবসার সাথে সাথে কর্তাটিকে হারিয়ে এখন দিশেহারা। মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই এখনো ঘরে ফেরেনি। তাদের মায়ের আশা সময়ের সাথে সংকীর্ণ হয়ে উঠছে।
সেই ঘর পালানো দামাল ছেলেদের মায়েরা রাতবিরাতে কাঁন্নার সুরে ডাকে; খোকা শূন্য এ বুকে আয় ফিরে আয়। ওরে অবুঝ তোর জ্বালায় নয়, তোর বিরহে তোকে বকি। লাউয়ের মাঁচায় মৌচাক ঝুলছে, কিচ্ছু বলবনা, পেড়ে পুরোটা তুই একাই খাবি। তালের শাঁস অনেক জমিয়েছি। শিমের বিঁচি, খেজুরের রস সবটুকুই পাবি। দোহারীর মত পাশ থেকে কিশোরী বোনটি বলে, ভাইয়া মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা নিয়ে গেছিস বলে কিচ্ছু বলবনা। তুই এলে আমার মুরগীর ডিম আর কেউ পাবে না। দুঃখের রাগিণীর মুদ্ধ শ্রোতাদের মত গ্রামের মানুষগুলো তাদের কান্না শুনে ক্ষনিকের জন্য স্তব্দ হয়ে থাকে। রাগিণীর মুগ্ধতায় মূর্ছিত শ্রোতাদের স্বতঃস্ফূর্ত করতালিতে ঘর পালানো ছেলেদের শোক ধীরে ধীরে স্মৃতির আড়ালে আশ্রয় নিতে থাকে।

নব জাতকের চিৎকারে মায়ের প্রসব বেদনা আনন্দে পরিনত হয়। হয়তো সদ্য স্বাধীন এই দেশে শহীদের বিসর্জণ অনেকটা সে ভাবেই আমাদের মুক্তির আনন্দে পরিণত হয়েছে। হত্যা, ধ্বংস, ধষর্ন, সব যুদ্ধের এইতো উপকরণ। না ফোটা বোমার মত যুদ্ধের কত প্রশ্ন অমিমাংসীত থেকে যায়! অনেক প্রশ্ন যুদ্ধের পরে নতুন করে জাগে।
হয়তঃ এমন একটা প্রশ্নের জন্ম দিতে শেরালীর মায়ের প্রসব বেদনা শুরু হল। কেবা পিতা কেবা জন্ম দাতা তার খোঁজ কে জানে! অথচ জীবনের স্পন্দনে পৃথিবীর পথে পা রাখতে ব্যাকুল শিশুটি আঁকুপাঁকু করে। ঐ জন্মের পেছনে লজ্জার কী আছে! পৃথিবীকে তার অস্তিত্ব জানাতে সেও মুষ্টিবদ্ধ হাতে অধীকারের দাবীতে চীৎকার করে। মা ব্যাকুল হোন। বেশী লোক জানাজানি না হলেই বাঁচেন।
দিন কয়েকের মধ্যেই প্রথমে পাড়ায়, পরে গ্রামে, আরো পরে গ্রাম ছেড়ে এসব শিশুদের খবর পৌঁছে যায় মাদার তেরেসার উদ্ধার কর্মীদের কানে। সে সব শিশুদের, যারা এখনো বেঁচে আছে, তাদের অনাথ আশ্রমে নিয়ে যেতে, আসেন মাদার তেরেসার সেবিকারা।
কে বলবে এই শিশুটি কারো পাপের ফসল! আমাদের এক রকম করুনা করেই ছনের চালা দু'টো এখনো আশ্রয় দিচ্ছে। এই অন্ধকার আশ্রয়টুকু আলো করে রেখেছে "মায়া"। আমার খুব মায়া হচ্ছিল নবজাতিকার জন্য। তাই তার নাম দিয়ে ফেললাম মায়া। নিশ্বাসের বাতাস ছাড়া তাকে আর কিছুই আমরা দেইনি। মায়ের স্তন পাওয়ার অধিকার টুকু অনেক সময় ক্ষুধার কারণে রক্ষিত হয়নি।
তবু আজ বিদায়ের দিনে শেষবারের মত মায়ের স্তন্য পান করে যখন অচেনা আশ্রয়ের খোঁজে অপরিচিতের কোলে উঠল মায়া, তখন আমাদের কান্না দেখে ঘাবড়ে গেল সেবিকা ভদ্র মহিলা। মায়ের আঁচলটুকু অথৈ জলে ভাসা অনাথ শিশু কিছুতেই ছাড়তে চায় না।


মন্তব্য

Pagol  mon এর ছবি

এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেল্লাম ...

পুতুল এর ছবি

পাগল মন, অনেক অনেক ধন্যবাদ।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

চিকন বেতের বাইন।
উদ্ধৃতি
অনাকাংখিত আগাছায় শরীর ভারী হয়।
বেশ লাগলো আজকের পর্ব। ধন্যবাদ।
________________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

পুতুল এর ছবি

অনেব ধন্যবাদ জুলিয়া সিদ্দিকী।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নুশেরা তাজরীন এর ছবি

যথারীতি চমৎকার।
কিছু বানান ঠিক করলে নিখুঁত হয় (বোধকরি তড়িঘড়ি টাইপিঙের ফল)।

পুতুল এর ছবি

কিছুটা তরিঘরি টাইপিং-এর ফল, কিছুটা অজ্ঞতা। কিন্তু লেখার সময় চিত্রটা চোখের সামনে খুব জ্বলজ্বল করে, কাজেই বানানের দিকটায় মনোযোগ এমনিতেই একটু কম পড়ে। আর এম্নিতেই একটু আলসে। গৃহিনীর গুতোয় আর হস্তক্ষেপে এখন কিছুটা হলেও কমেছে।
মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

স্পর্শ এর ছবি

শিশু জন্মদানের সাথে 'পাপের' এত বেশী সম্পর্ক হতাশ করে মাঝে মাঝে। :(

এপর্বটাও অসাধারণ। বরাবরের মতই। :)
[][][][][][][][][][][][][][][][][][]
ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ, কোরো না পাখা।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

পুতুল এর ছবি

তখন ক্লস ফোরের ফাইনাল পরিক্ষা দিয়ে খুব বড় হয়ে গেছি এমন একটা ভাব। আকবর হোসেন নামে এক উপন্যাসিকের অবাঞ্চিত নামে একটা উপন্যাস যেন আমার জন্যই লিখেছেন। কি বুঝলাম জানিনা। কিন্তু তখন থেকেই কোন শিশুকে আর জাউরা, হারাম জাদা, জারজ এসব ভাবতে পারতাম না।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব ভালো লাগলো।

কীর্তিনাশা

পুতুল এর ছবি

কীর্তিনাশা, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

কেমন আছেন? আবারো পরছি আর নতুন করে যুগপত্ মুগ্ধ আর শিহরিত হচ্ছি।

জুবুথুবু (sonalidin@gmail.com)

পুতুল এর ছবি

জুবুথুবু কি যে ভাল লাগছে আপনাকে এখানে পেয়ে।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

তীরন্দাজ এর ছবি

এই পর্বটি এতোদিনে চোখে পড়লো। বরাবরের মতোই অসাধারণ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

পুতুল এর ছবি

এখান থেকে নতুন পর্ব শুরু হল। পড়ার জন্য ধন্যবাদ গুরু।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।