২ | লিখেছেন পুতুল (তারিখ: বিষ্যুদ, ২১/০৮/২০০৮ - ৮:৪৯অপরাহ্ন)
গোগলস-এ সার্চ দিয়ে বা বাংলপিডিয়াতে কোথাও পেলাম না!
দেখা যাক, কেউ কিছু করতে পারে কিনা।
গল্পটি জানা থাকলে পাত্র-পাত্রীদের নাম সহ কাহিনীটি হলেও চলবে।
সে ক্ষেত্র আমার ইমেইলে একটা মেইল করার অনুরোধ থাকল।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
চাঁদ সওদাগর মস্ত বড় সওদাগর৷ তাঁর সপ্তডিঙা মধুকর বাণিজ্য করতে সমুদ্দুরে সমুদ্দুরে ঘুরে বেড়ায় ৷ তাঁর গোয়ালভরা গরু, গোলাভরা ধান, সংসারে প্রাচুর্য্য উপছে পড়ছে ৷ ভরযোয়ান ছয়ছেলে বাণিজ্য করে বেড়ায় ৷ আদুরে ছোটছেলে লখিন্দরের এখনও বয়স হয় নি সমুদ্রে যাবার ৷ চাঁদসদাগর শিব উপাসক ৷ এদিকে মনসা ঠাকুরাণী ত্রিলোক পূজিতা হয়েও চাঁদসদাগরের পুজো পান নি এখনও ৷ চাঁদ বরং নানাভাবে ব্যঙ্গ করেন মনসাকে ৷
মনসা নানাভাবে সতর্ক করেন, ধনেপ্রাণে মারার ভয় দেখান, নির্বংশ করার ভয় দেখান ৷ সদাগরের বিরুপতা বাড়েই তাতে ৷ গালিগালাজের মাত্রাও বাড়ে ৷ বাণিজ্য করে ফেরার পথে ঝড়ে পরে সওদাগরের সপ্তডিঙা মধুকর সমুদ্রে ডুবে যায় ৷ ৬ ছেলেই মারা যায় ৷ তারা বিবাহিত হলেও তখনও নি:সন্তান ৷ শিবরাত্রির সলতে লখিন্দরের বিয়ে ঠিক হয় আরেক বণিককন্যা বেহুলার সাথে ৷ বেহুল্লা অসাধারণ নাচে ৷ লোহার বাসরঘর বানানো হয় যার কোথাও কোনো ছিদ্র নেই ৷ বেহুলা লখিন্দরের মাথা কোলে নিয়ে লোহার বাসরে রাত জাগে ৷ শেষরাতের দিকে ঘুমে ঢুলে আসে বেহুলা ৷ আর কালনাগিনী নিজের শরীর সংকুচিত করে সুতোর মত সরু এক ছিদ্র দিয়ে বাসরে প্রবেশ করে লখিন্দরকে দংশায় ৷ লখিন্দরের চিত্কারে বেহুলা জেগে ওঠে ৷ কিন্তু ততক্ষণে সর্বনাশ যা হবার তা হয়ে গেছে ৷ বেহুলা শ্বশুরের কাছে লখিন্দরের দেহ চেয়ে নেয় ৷ কলার মান্দাসে করে স্বামীর মাথা কোলে নিয়ে জলে ভেসে পড়ে স্বর্গের উদ্দেশ্যে ৷ ( এখনও খুব গ্রামের দিকে সাপেকাটা মৃতদেহ জলে ভাসিয়ে দেবার রেওয়াজ আছে৷) এই জায়গাটায় ঠিক মনে পড়ছে না, সম্ভবত: নেতিধোপানির ঘাট থেকেই যাত্রা শুরু হয়েছিল ৷ স্বর্গে উপস্থিত হয়ে দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে লখিন্দরের প্রাণভিক্ষা চায় সে ৷ ইন্দ্র বলে নাচ দেখিয়ে খুশী করতে পারলে তবেই লখিন্দর বাঁচবে (এখান থেকেই বোধহয় সিপ্পি সাহেব "শোলে'তে ঝেপেছিলেন ৷ "যবতক তেরি পাও চলেগী বাসন্তী, তবতক ভীরু জিন্দা রহেগা' ) ৷ বেহুলা নাচতে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে ৷ নেচেই চলে অজ্ঞান হয়ে না পড়া পর্যন্ত ৷
শেষপর্যন্ত লখিন্দর বেঁচে ওঠে, কিন্তু মনসাদেবী শর্ত রাখেন যে চাঁদ সওদাগরকে মনসাপুজো করতে হবে ৷ বেহুলা শ্বশুরকে রাজী করাবার কথা দিয়ে স্বামীকে নিয়ে ঘরে ফেরে ৷ মৃতপুত্রকে বেঁচে ফিরতে দেখে সওদাগর মনসাপুজো করতে রাজী হন ৷ কিন্তু তিনি পুজো দেন বাঁ হাতে
যে হাতে পুজি আমি শিব শূলপাণি
সে হাতে পুজিতে নারি চ্যাঙমুড়ি কানি
৬ ছেলে বেঁচে ওঠে ৷ সপ্তডিঙা ভেসে ওঠে ৷
মঙ্গলকাব্য মূলত: ব্রাহ্মণ্যধর্মের বিপক্ষে লোকায়ত ধর্মের জয়লাভের কাহিনী , ব্রাহ্মণ্যধর্মকে নত হতে বাধ্য করার কাহিনী ৷ মনসামঙ্গল, চন্ডীমঙ্গল , ধর্মমঙ্গল সবকটিই এইধারার ৷
সচল মেইলে কিছু এটাচ করা যায় না
আপনার অন্য কোনো ইমেইল পেলাম না
বাংলাপিডিয়ার সিডিতে মনসামঙ্গলের বিষয়ে কিছু কিছু ইনফরমেশন আছে
কিন্তু বাংলাপিডিয়া আবার তাদের ফন্ট ছাড়া পড়া যায় না
ইমেইল পাঠালে ফন্টসহ পাঠাতে পারব
০৩
দময়ন্তী বেহুলা এবং লখার বেসিক কাহিনী প্রায় পুরোটাই বলে ফেলেছেন
কিন্তু এই কাহিনীগুলোর পেছনে কিছু ফেক্ট রয়েছে। আপনার কাজে লাগতে পারে
০৪
১৩ শতকের দিকের এই কাহিনীগুলোর চরিত্রদের মধ্যে ব্রাহ্মণ কিংবা ক্ষত্রিয় নেই। সবাই বণিক কিংবা ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং দেব দেবতারাও অনেক বেশি অনার্য (শিব বিশ্বকর্ম মনসা...)
সেন রাজারা মুসলিমদের হাতে রাজ্য হারানোর পরে ব্রাহ্মণ এবং ক্ষত্রিয়দের আভিজাত্য নিয়ে সম্ভবত আর কেউ কোনো কাহিনী লিখেনি কিংবা প্রচারের চেষ্টা করেনি এবং তারা রাজনৈতিক চাপে বেকায়দা অবস্থায় চলে যায়
কিন্তু মুসলিম রাজত্বে হিন্দু বণিকরা হয়ে উঠে অভিজাত শ্রেণী এবং বণিকরা সবাই ছিল মূলত ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় কূলের বাইরের শূদ্র কিংবা বশ্য শ্রেণীর
তাই তাদেরকে নিয়ে লেখা কাহিনীগুলোতে আর্য দেবতাদের থেকে অনার্য দেবতারাই উঠে আসে বেশি
০৫
মসনা ছিল শিবের মেয়ে। কিন্তু দেবত্বের নিয়ম অনুযায়ী যে দেবতা মানুষের পূজা পায় না কিংবা পৃথিবীতে যে দেবতার পূজা কোনো মানুষ করে না সে স্বর্গে ঢুকতে পারে না
শিবের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও মনসার পূজা কেউ করত না পৃথিবীতে ফলে মনসা কোনোভাবেই স্বর্গে ঢুকতে পারছিল না।
তখন সে যদি তার পূজার জন্য চাঁদ সওদাগরকে (চন্দ্রধর বণিক) রাজি করানোর চেষ্টা করে। কারণ একমাত্র চাঁদ যদি তার পূজা করে তবেই তার পূজা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সে পূর্ণ দেবতা হয়ে স্বর্গে প্রবেশ করতে পারবে
কিন্তু চাঁদ নিজে শুদ্ধাচারী এবং শিবের পূজারী সে মনসাকে ঘৃণা করত। কারণ সে মসসার ছেলেদেরকে বাড়ির উঠানে ব্যাঙ ধরে ধরে খেতে দেখেছে
সে কোনো ভাবেই রাজি হয় না
শুরু হয় চাঁদ মনসার সংঘাত
মনসা চাঁদকে সর্বশান্ত করে ফেলে। ছয় ছেলেকে খুন করে। বাণিজ্য জাহাজ ডুবিয়ে দেয় এবং সর্বশেষ থাকে লক্ষ্মিন্দ্র বণিক (লখিন্দর- লখা- লখাই)
০৬
লখার বিষয়ে মনসা নিজেও চিপায় ছিল
বাসর রাতে যদি চাঁদ নিজের ছেলে লখাকে রক্ষা করে ফেলতে পারে তাহলে মনসা হেরে যোবে। তখনই সে গিয়ে সাহাজ্য চায় শিবের। আর শিবের আদেশে বিশ্বকর্মা পুরো বাসরঘর লোহা দিয়ে তৈরি করে একটা ছিদ্র রেখে দেয়
পরে সেই ছিদ্রে তুলা ভরে তামাকের ধুয়া দিয়ে তুলার রং লোহার রংয়ের সাথে মিশিয়ে দেয় তারপর
লখার মরার পরে কাহিনীর অন্য একটা দিকে মোড় নেয়
যা ভারতীয় সাহিত্যে আগে কখনও ছিলই না
লাশকে ভেলাতে ভাসিয়ে দেয়া হবে। এটাই নিয়ম। কিন্তু বেহুলা গো ধরে বসে স্বামীর লাশের সাথে সেও যাবে
গুরুজনরা কেউ রাজি না কারণ এরকম নিয়ম নেই
চাঁদ রাজি না কারণ বেহুলা তার ঘরের বৌ। ঘরের বৌ প্রকাশ্যে ঘাটে ঘাটে ঘুরবে এটা তার মান সম্মানের বিষয়। এটা হতেই পারে না
তখন বেহুলা বলে- স্বামীই যদি নাই থাকে; শ্বশুরের সম্মান কি ধুয়ে খাবো আমি?
বেহুলার এই ভাসানকে কেন্দ্র করে কিন্তু আরেকটা সাহিত্য তৈরি হয়েছে- পদ্মপূরাণ (বিষ ঝাড়ার বর্ণনাগুলো অসাধারণ)
মনসার আরেক নাম পদ্মদেবী
০৯
ঘাটে ঘাটে বিষ ঝাড়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বেহুলা ঘুরতে থাকে। কেউ রাজি হয় না এবং পারে না । কারণ সবার প্রতি মনসার হুমকি ছিল যে কেউ লখাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে মনসা তাকে ঝাড়ে বংশে নিবংশ করে দেবে
এই সময় স্বর্গে গিয়ে বেহুলা নেচে গেয়ে শিবসহ দেবতাদেরও খুশি করে (এখানে দেবতা হিসেবে ইন্দ্রের উপস্থিতি একটু প্রশ্ন জাগায়। আমার মনে হয় ইন্দ্র এখানে প্রক্ষিপ্ত দেবতা। এই কাহিনীতে তার থাকার কথা না)
কিন্তু খুশি হবার পরেও সবার এক কথা- যদি মনসা রাজি হয় তবেই লখার জীবনরক্ষা সম্ভব
১০
ঘুরতে ঘুরতে বেহুলা আসে নেতাই ধোবানীর ঘাটে (বেহুলা চক্করের সর্বশেষ ঘাট)
নেতাই মনসার ধোবানী এবং ওঝা
ভারতীয় কাহিনীগুলোর আগাগোড়া সব জায়গাতেই ওঝা হিসেবে পুরুষরা থাকলেও একমাত্র এইখানেই কিন্তু ওঝা নারী
নেতাই সব শুনে বলে তার পক্ষে মরাকে জীবিত করা সম্ভব কিন্তু লখাই ছাড়া। কারণ লখাইর ব্যাপারে মনসার নিষেধ আছে
বেহুলা যদি মনসার পারমিশন আদায় করতে পারে তবেই সম্ভব লখাকে বাঁচিয়ে তোলা
১১
নেতাইর সাথে এসিস্ট্যান্ট হিসেবে মনসার কাপড় ধুয়ে ধুয়ে মনসার নজরে পড়ে বেহুলা। তখন পর্যন্ত স্বামীর কথা কিছুই বলে না সে
যখন মসনা তার কাজে পুরোপুরি খুশি তখন সে জানায় তার বাসনা
আর মনসাও জানায় তার শর্ত
পৃথিবীতে তার পূজা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এবং সেটা একমাত্র পারে চাঁদ সওদাগর
যদি বেহুলা শ্বশুরকে রাজি করাতে পারে মনসাকে পূজা দিতে তাহলে লখাসহ সবাইকে এবং সবকিছু সে ফিরিয়ে দেবে
বেহুলা রাজি হয়। যে করেই হোক শ্বশুরকে রাজি করাবে সে
১২
লখার বেঁচে ওঠার সাথে জড়িয়ে পড়ে তিন শূদ্র নারী
মনসা চায় পৃথিবীতে পূজা
বেহুলা দায়িত্ব নেয় পৃথিবীতে মনসা পূজা প্রতিষ্ঠার
আর নেতাই ধোবানী প্রয়োগ করে তার মৃতসঞ্জিবনী...
নামো বিষ নালে
চাপিয়া দিমুরে বিষ বর্মার খালে
নামো বিষ ধাইয়া
পদ্মর মাথা খাইয়া
নামো বিষ নামো
যেই দিকে আইছ বিষ
সেই দিকে নামো
১৩
তার পরেও চাঁদ সহজে রাজি হয়নি মনসাকে পূজা দিতে
পরে বেহুলার চাপে পড়ে মনসার মন্দিরের দিকে পেছন ফিরে দুই পায়ের ফাক দিয়ে বাম হাতে একটা জবা ফুল ছুড়ে মারে মনসার মন্দিরে
সেই থেকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা হয় মনসা পূজার...
১৪
মনসামঙ্গলের আদি কবি হিসেবে ধরা হয় কানা হরি দত্তকে
আরো অনেকেই মনসাঙ্গল লিখেছেন কিন্তু সবচে বিখ্যাত বোধ হয় বিজয়গুপ্ত
আর লোককাহিনী হিসেবে এর ভার্সনগুলো কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকমের শোনা যায়
১৫
মজার জিনিস হলো মনসা পূজায় যত গান গাওয়া হয় তার বেশিরভাগই কিন্তু বেহুলার গান..
১১ | লিখেছেন কীর্তিনাশা (তারিখ: শনি, ২৩/০৮/২০০৮ - ৫:৫৫অপরাহ্ন)
বারো হাত কাঁকুড়ের তের হাত বিচি।
পুতুল ভাই'র পোস্টের চাইতে লীলেন ভাই'র মন্তব্যের সাইজ বহুত বড়ো। কিন্তু মন্তব্য পড়ে বহুত ফায়দা হলো। সেই জন্য লীলেন ভাইরে ধন্যবাদ অশেষ।
পোস্ট না দেন মাঝে মাঝে এইরম মন্তব্য দিলেও চলবো গুরু!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
................................................................
তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার পকেটে আমি আছি যতটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই আমার করুণ ছায়া
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
মন্তব্য
কি বিপদে ফেললেন! আপনাকে কোনো সূত্রও দিতে পারতেছি না। নিজেও পরছি খুসখুসানিতে। এইরকম লিঙ্ক আদো বাংলায় আছে কি না এই নিয়ে।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
গোগলস-এ সার্চ দিয়ে বা বাংলপিডিয়াতে কোথাও পেলাম না!
দেখা যাক, কেউ কিছু করতে পারে কিনা।
গল্পটি জানা থাকলে পাত্র-পাত্রীদের নাম সহ কাহিনীটি হলেও চলবে।
সে ক্ষেত্র আমার ইমেইলে একটা মেইল করার অনুরোধ থাকল।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
মনসামঙ্গলের কাহিনী আমিও জানতে চাই।
http://www.oswego.edu/india/manasha.html
http://banglapedia.search.com.bd/HT/M_0123.htm
http://en.wikipedia.org/wiki/Special:Search/Manasamangal
http://www.nationmaster.com/encyclopedia/Behula
এগুলো কি দেখেছেন ?
লিংক দেয়ার জন্য ধন্যবাদ দিদি।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
মনসামঙ্গলের গল্প :: ঘুমচোখে সংক্ষেপে
---------------------------------------
চাঁদ সওদাগর মস্ত বড় সওদাগর৷ তাঁর সপ্তডিঙা মধুকর বাণিজ্য করতে সমুদ্দুরে সমুদ্দুরে ঘুরে বেড়ায় ৷ তাঁর গোয়ালভরা গরু, গোলাভরা ধান, সংসারে প্রাচুর্য্য উপছে পড়ছে ৷ ভরযোয়ান ছয়ছেলে বাণিজ্য করে বেড়ায় ৷ আদুরে ছোটছেলে লখিন্দরের এখনও বয়স হয় নি সমুদ্রে যাবার ৷ চাঁদসদাগর শিব উপাসক ৷ এদিকে মনসা ঠাকুরাণী ত্রিলোক পূজিতা হয়েও চাঁদসদাগরের পুজো পান নি এখনও ৷ চাঁদ বরং নানাভাবে ব্যঙ্গ করেন মনসাকে ৷
মনসা নানাভাবে সতর্ক করেন, ধনেপ্রাণে মারার ভয় দেখান, নির্বংশ করার ভয় দেখান ৷ সদাগরের বিরুপতা বাড়েই তাতে ৷ গালিগালাজের মাত্রাও বাড়ে ৷ বাণিজ্য করে ফেরার পথে ঝড়ে পরে সওদাগরের সপ্তডিঙা মধুকর সমুদ্রে ডুবে যায় ৷ ৬ ছেলেই মারা যায় ৷ তারা বিবাহিত হলেও তখনও নি:সন্তান ৷ শিবরাত্রির সলতে লখিন্দরের বিয়ে ঠিক হয় আরেক বণিককন্যা বেহুলার সাথে ৷ বেহুল্লা অসাধারণ নাচে ৷ লোহার বাসরঘর বানানো হয় যার কোথাও কোনো ছিদ্র নেই ৷ বেহুলা লখিন্দরের মাথা কোলে নিয়ে লোহার বাসরে রাত জাগে ৷ শেষরাতের দিকে ঘুমে ঢুলে আসে বেহুলা ৷ আর কালনাগিনী নিজের শরীর সংকুচিত করে সুতোর মত সরু এক ছিদ্র দিয়ে বাসরে প্রবেশ করে লখিন্দরকে দংশায় ৷ লখিন্দরের চিত্কারে বেহুলা জেগে ওঠে ৷ কিন্তু ততক্ষণে সর্বনাশ যা হবার তা হয়ে গেছে ৷ বেহুলা শ্বশুরের কাছে লখিন্দরের দেহ চেয়ে নেয় ৷ কলার মান্দাসে করে স্বামীর মাথা কোলে নিয়ে জলে ভেসে পড়ে স্বর্গের উদ্দেশ্যে ৷ ( এখনও খুব গ্রামের দিকে সাপেকাটা মৃতদেহ জলে ভাসিয়ে দেবার রেওয়াজ আছে৷) এই জায়গাটায় ঠিক মনে পড়ছে না, সম্ভবত: নেতিধোপানির ঘাট থেকেই যাত্রা শুরু হয়েছিল ৷ স্বর্গে উপস্থিত হয়ে দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে লখিন্দরের প্রাণভিক্ষা চায় সে ৷ ইন্দ্র বলে নাচ দেখিয়ে খুশী করতে পারলে তবেই লখিন্দর বাঁচবে (এখান থেকেই বোধহয় সিপ্পি সাহেব "শোলে'তে ঝেপেছিলেন ৷ "যবতক তেরি পাও চলেগী বাসন্তী, তবতক ভীরু জিন্দা রহেগা' ) ৷ বেহুলা নাচতে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে ৷ নেচেই চলে অজ্ঞান হয়ে না পড়া পর্যন্ত ৷
শেষপর্যন্ত লখিন্দর বেঁচে ওঠে, কিন্তু মনসাদেবী শর্ত রাখেন যে চাঁদ সওদাগরকে মনসাপুজো করতে হবে ৷ বেহুলা শ্বশুরকে রাজী করাবার কথা দিয়ে স্বামীকে নিয়ে ঘরে ফেরে ৷ মৃতপুত্রকে বেঁচে ফিরতে দেখে সওদাগর মনসাপুজো করতে রাজী হন ৷ কিন্তু তিনি পুজো দেন বাঁ হাতে
যে হাতে পুজি আমি শিব শূলপাণি
সে হাতে পুজিতে নারি চ্যাঙমুড়ি কানি
৬ ছেলে বেঁচে ওঠে ৷ সপ্তডিঙা ভেসে ওঠে ৷
মঙ্গলকাব্য মূলত: ব্রাহ্মণ্যধর্মের বিপক্ষে লোকায়ত ধর্মের জয়লাভের কাহিনী , ব্রাহ্মণ্যধর্মকে নত হতে বাধ্য করার কাহিনী ৷ মনসামঙ্গল, চন্ডীমঙ্গল , ধর্মমঙ্গল সবকটিই এইধারার ৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
দময়ন্তী, অনেক ধন্যবাদ।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
লখাইর বাপে যখন বিশ্বকর্মারে নিয়া আইল পোলার বাসরঘর বানানের লাইগা তখন মনসা গিয়া কাইন্দা পড়ল শিবের পায়ে-পিতা কিছু একটা করো...
যতোই হোক নিজের মাইয়া। বুড়া দেবতা শিবতো আর তারে পায়ে ঠেলতে পারে না। তখন সে বিশ্বকর্মা কামারেরের ডাইকা কইল...
এগুলোও কিন্তু মনসার এক ধরনের ফোক ভার্সন
০২
সচল মেইলে কিছু এটাচ করা যায় না
আপনার অন্য কোনো ইমেইল পেলাম না
বাংলাপিডিয়ার সিডিতে মনসামঙ্গলের বিষয়ে কিছু কিছু ইনফরমেশন আছে
কিন্তু বাংলাপিডিয়া আবার তাদের ফন্ট ছাড়া পড়া যায় না
ইমেইল পাঠালে ফন্টসহ পাঠাতে পারব
০৩
দময়ন্তী বেহুলা এবং লখার বেসিক কাহিনী প্রায় পুরোটাই বলে ফেলেছেন
কিন্তু এই কাহিনীগুলোর পেছনে কিছু ফেক্ট রয়েছে। আপনার কাজে লাগতে পারে
০৪
১৩ শতকের দিকের এই কাহিনীগুলোর চরিত্রদের মধ্যে ব্রাহ্মণ কিংবা ক্ষত্রিয় নেই। সবাই বণিক কিংবা ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং দেব দেবতারাও অনেক বেশি অনার্য (শিব বিশ্বকর্ম মনসা...)
সেন রাজারা মুসলিমদের হাতে রাজ্য হারানোর পরে ব্রাহ্মণ এবং ক্ষত্রিয়দের আভিজাত্য নিয়ে সম্ভবত আর কেউ কোনো কাহিনী লিখেনি কিংবা প্রচারের চেষ্টা করেনি এবং তারা রাজনৈতিক চাপে বেকায়দা অবস্থায় চলে যায়
কিন্তু মুসলিম রাজত্বে হিন্দু বণিকরা হয়ে উঠে অভিজাত শ্রেণী এবং বণিকরা সবাই ছিল মূলত ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় কূলের বাইরের শূদ্র কিংবা বশ্য শ্রেণীর
তাই তাদেরকে নিয়ে লেখা কাহিনীগুলোতে আর্য দেবতাদের থেকে অনার্য দেবতারাই উঠে আসে বেশি
০৫
মসনা ছিল শিবের মেয়ে। কিন্তু দেবত্বের নিয়ম অনুযায়ী যে দেবতা মানুষের পূজা পায় না কিংবা পৃথিবীতে যে দেবতার পূজা কোনো মানুষ করে না সে স্বর্গে ঢুকতে পারে না
শিবের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও মনসার পূজা কেউ করত না পৃথিবীতে ফলে মনসা কোনোভাবেই স্বর্গে ঢুকতে পারছিল না।
তখন সে যদি তার পূজার জন্য চাঁদ সওদাগরকে (চন্দ্রধর বণিক) রাজি করানোর চেষ্টা করে। কারণ একমাত্র চাঁদ যদি তার পূজা করে তবেই তার পূজা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সে পূর্ণ দেবতা হয়ে স্বর্গে প্রবেশ করতে পারবে
কিন্তু চাঁদ নিজে শুদ্ধাচারী এবং শিবের পূজারী সে মনসাকে ঘৃণা করত। কারণ সে মসসার ছেলেদেরকে বাড়ির উঠানে ব্যাঙ ধরে ধরে খেতে দেখেছে
সে কোনো ভাবেই রাজি হয় না
শুরু হয় চাঁদ মনসার সংঘাত
মনসা চাঁদকে সর্বশান্ত করে ফেলে। ছয় ছেলেকে খুন করে। বাণিজ্য জাহাজ ডুবিয়ে দেয় এবং সর্বশেষ থাকে লক্ষ্মিন্দ্র বণিক (লখিন্দর- লখা- লখাই)
০৬
লখার বিষয়ে মনসা নিজেও চিপায় ছিল
বাসর রাতে যদি চাঁদ নিজের ছেলে লখাকে রক্ষা করে ফেলতে পারে তাহলে মনসা হেরে যোবে। তখনই সে গিয়ে সাহাজ্য চায় শিবের। আর শিবের আদেশে বিশ্বকর্মা পুরো বাসরঘর লোহা দিয়ে তৈরি করে একটা ছিদ্র রেখে দেয়
পরে সেই ছিদ্রে তুলা ভরে তামাকের ধুয়া দিয়ে তুলার রং লোহার রংয়ের সাথে মিশিয়ে দেয় তারপর
০৭
লখার মরার পরে কাহিনীর অন্য একটা দিকে মোড় নেয়
যা ভারতীয় সাহিত্যে আগে কখনও ছিলই না
লাশকে ভেলাতে ভাসিয়ে দেয়া হবে। এটাই নিয়ম। কিন্তু বেহুলা গো ধরে বসে স্বামীর লাশের সাথে সেও যাবে
গুরুজনরা কেউ রাজি না কারণ এরকম নিয়ম নেই
চাঁদ রাজি না কারণ বেহুলা তার ঘরের বৌ। ঘরের বৌ প্রকাশ্যে ঘাটে ঘাটে ঘুরবে এটা তার মান সম্মানের বিষয়। এটা হতেই পারে না
তখন বেহুলা বলে- স্বামীই যদি নাই থাকে; শ্বশুরের সম্মান কি ধুয়ে খাবো আমি?
বেহুলা নিজেই রওয়ানা দেয় লখার ভেলার সাথে
০৮
বেহুলার এই ভাসানকে কেন্দ্র করে কিন্তু আরেকটা সাহিত্য তৈরি হয়েছে- পদ্মপূরাণ (বিষ ঝাড়ার বর্ণনাগুলো অসাধারণ)
মনসার আরেক নাম পদ্মদেবী
০৯
ঘাটে ঘাটে বিষ ঝাড়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বেহুলা ঘুরতে থাকে। কেউ রাজি হয় না এবং পারে না । কারণ সবার প্রতি মনসার হুমকি ছিল যে কেউ লখাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে মনসা তাকে ঝাড়ে বংশে নিবংশ করে দেবে
এই সময় স্বর্গে গিয়ে বেহুলা নেচে গেয়ে শিবসহ দেবতাদেরও খুশি করে (এখানে দেবতা হিসেবে ইন্দ্রের উপস্থিতি একটু প্রশ্ন জাগায়। আমার মনে হয় ইন্দ্র এখানে প্রক্ষিপ্ত দেবতা। এই কাহিনীতে তার থাকার কথা না)
কিন্তু খুশি হবার পরেও সবার এক কথা- যদি মনসা রাজি হয় তবেই লখার জীবনরক্ষা সম্ভব
১০
ঘুরতে ঘুরতে বেহুলা আসে নেতাই ধোবানীর ঘাটে (বেহুলা চক্করের সর্বশেষ ঘাট)
নেতাই মনসার ধোবানী এবং ওঝা
ভারতীয় কাহিনীগুলোর আগাগোড়া সব জায়গাতেই ওঝা হিসেবে পুরুষরা থাকলেও একমাত্র এইখানেই কিন্তু ওঝা নারী
নেতাই সব শুনে বলে তার পক্ষে মরাকে জীবিত করা সম্ভব কিন্তু লখাই ছাড়া। কারণ লখাইর ব্যাপারে মনসার নিষেধ আছে
বেহুলা যদি মনসার পারমিশন আদায় করতে পারে তবেই সম্ভব লখাকে বাঁচিয়ে তোলা
১১
নেতাইর সাথে এসিস্ট্যান্ট হিসেবে মনসার কাপড় ধুয়ে ধুয়ে মনসার নজরে পড়ে বেহুলা। তখন পর্যন্ত স্বামীর কথা কিছুই বলে না সে
যখন মসনা তার কাজে পুরোপুরি খুশি তখন সে জানায় তার বাসনা
আর মনসাও জানায় তার শর্ত
পৃথিবীতে তার পূজা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এবং সেটা একমাত্র পারে চাঁদ সওদাগর
যদি বেহুলা শ্বশুরকে রাজি করাতে পারে মনসাকে পূজা দিতে তাহলে লখাসহ সবাইকে এবং সবকিছু সে ফিরিয়ে দেবে
বেহুলা রাজি হয়। যে করেই হোক শ্বশুরকে রাজি করাবে সে
১২
লখার বেঁচে ওঠার সাথে জড়িয়ে পড়ে তিন শূদ্র নারী
মনসা চায় পৃথিবীতে পূজা
বেহুলা দায়িত্ব নেয় পৃথিবীতে মনসা পূজা প্রতিষ্ঠার
আর নেতাই ধোবানী প্রয়োগ করে তার মৃতসঞ্জিবনী...
১৩
তার পরেও চাঁদ সহজে রাজি হয়নি মনসাকে পূজা দিতে
পরে বেহুলার চাপে পড়ে মনসার মন্দিরের দিকে পেছন ফিরে দুই পায়ের ফাক দিয়ে বাম হাতে একটা জবা ফুল ছুড়ে মারে মনসার মন্দিরে
সেই থেকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা হয় মনসা পূজার...
১৪
মনসামঙ্গলের আদি কবি হিসেবে ধরা হয় কানা হরি দত্তকে
আরো অনেকেই মনসাঙ্গল লিখেছেন কিন্তু সবচে বিখ্যাত বোধ হয় বিজয়গুপ্ত
আর লোককাহিনী হিসেবে এর ভার্সনগুলো কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকমের শোনা যায়
১৫
মজার জিনিস হলো মনসা পূজায় যত গান গাওয়া হয় তার বেশিরভাগই কিন্তু বেহুলার গান..
গুরু অনেক কাম অইছে। আমার কাছে ফোক ভার্সানটাই বেশী মজা লাগে।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
লীলেন ভাই,
আপনার এই মন্তব্যের ঠেলায় আপনার সঙ্গে দ্যাখা করার ইচ্ছা পুনরায় জাগ্রত হইতেছে।।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
বারো হাত কাঁকুড়ের তের হাত বিচি।
পুতুল ভাই'র পোস্টের চাইতে লীলেন ভাই'র মন্তব্যের সাইজ বহুত বড়ো। কিন্তু মন্তব্য পড়ে বহুত ফায়দা হলো। সেই জন্য লীলেন ভাইরে ধন্যবাদ অশেষ।
পোস্ট না দেন মাঝে মাঝে এইরম মন্তব্য দিলেও চলবো গুরু!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
পোস্ট না দেন মাঝে মাঝে এইরম মন্তব্য দিলেও চলবো গুরু!
ঠিক বলেছেন।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
সাংঘাতিক অবস্থা ! এ তো দেখি বিশাল কায়কারবার !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
পাশাপাশি এই লিংকগুলোও দেখতে পারেন :
মনসা
বেহুলা
বিজয়গুপ্ত
................................................................
তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার পকেটে আমি আছি যতটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই আমার করুণ ছায়া
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
নতুন মন্তব্য করুন