রাঘব বোয়ালেরা পানি ঘোলা করে অথৈ সমুদ্রে পাড়ি জমিয়েছে। মাছ ধরার জন্য এখন তেমন সাধ্য-সাধনা করতে হয় না। বিলের সব চেয়ে নীচু জমি থেকে খালের মত জলের ধারা প্রবাহিত হয়ে নদীতে মেশার মুখে মতি চাই ফেলে রাখে। চুঙ্গির মত মুখ দিয়ে ঘাসফড়িং খাওয়ার লোভে মাছ একবার চাইয়ে ঢুকে গেলে আর বের হতে পারে না। গায়ে কোন জখম থাকেনা বলে চাইয়ের মাছ বেশী দামে বিক্রি হয়। সে দিকে মতির মনোযোগ বেশী। কিন্তু তার চেয়ে বেশী দাম পাওয়া যায় চিংড়ি মাছে। আজকাল বাজারে মতির মাছের মত সব কিছুই খুব সহজলভ্য, যদি টাকা থাকে। শনি মঙ্গল বারে চিংড়ি ছোলম বদলায়। সে দুটি দিনে কখনো আমাবস্যা হলে চিংড়ি পায়ের তলায় পড়ে। এমন সুযোগ শেরালী কিছুতেই হাত ছাড়া করতে পারে না। রাতের অন্ধকারে মতির সাথে শেরালীও চিংড়ি ধরতে যায়।
বিলের তলায় এখন মতির কোমর পানি। কিন্তু শেরালীর কোন রকমে নাক পানির উপরে থাকে। সাপের শরীরের মত শীতল জল। এখন যদি শেরালীর পায়ের তলায় একটা খুব বড় চিংড়ি পরে যায়, শেরালী এত ঠান্ডা জলে ডুব দিয়ে সেটা ধরতে পারবে!
দেশে নতুন সরকার এসেছে। সুবিচারকের দেশে শকুন থাকে। আকাশের অনেক উঁচুতে তার প্রমান। শকুনেরা ছায়া দিচ্ছে।
জল কমে যাওয়ায় নৌ-চলাচলে ভাটা পড়েছে। মাছ ধরা ছাড়া মতির তেমন রোজগার নেই। আটার জাও এর সাথে ওচা দিয়ে ধরে আনা গুড়োচিংড়ি শিলপাটায় বেটে হুরুনি রুটির মত বড়া বানায়। সে প্রধান খাদ্যটা মায়ার কেমন একঘেয়ে লাগে। তাই কাজল আর কালামের সাথে নতুন খাদ্যের অন্বেষণে মায়াও যোগ দেয়।
গত কয়েক দিনের খরায় পাট ক্ষেতের জল হাঁটুর নীচে নেমে গেছে। মায়া খুব সাবধানে পা টিপেটিপে হাঁটছে। কেটে নেয়া পাটের গোড়ায় পা পড়লে গুতো লাগে। ভীষণ ব্যথা হয়! কয়েক বার লেগেছে। তাই এখন সে খুব সাবধান। ঘেচুর পাতা জলের উপর ভেসে উঠেছে। তার তলায় অনায়াসে মায়া বাদামের মত সাইজের ঘেচু তুলে কোমরের দাগায় গুজে রাখছে। কালাম অনেকগুলো ঘেচুর পাতা চুলের মুঠির মত ধরে টান দেয়। একটানে একমুঠো ঘেচু উঠে আসে। কাজল নিজে যা তোলে তা কালামের লুঙ্গির খুঁটিতে জমা রাখে। বাড়ী যাওয়ার সময় কামালের খুঁটি থেকে আজলা ভরে নিয়ে যাবে। মায়া সে দিক থেকে অনেক হিসেবী। নিজের টুকু আগলে রাখে। এ জন্য ওদের থেকে মায়া একটু দূরত্ব রেখে, এক মনে ঘেচু তুলছে।
বাড়ি থেকে জমির সমতলের আইল পর্যন্ত ঢালু জায়গাটায় বাঁশের মাচা। তার তলায় লাউ-সীমের লতার নীচে একটু অন্ধকার। তার তলায় গর্তের অধিকার নিয়ে মাইচ্ছা-পানক সাপ আর বেজীর লড়াই। সেটা দেখে মায়া মজার কোন খেলা মনে করে, কালাম আর কাজলকে এদিকে আসতে ঈশারা করে। কালম এ খেলার বিপদ বুঝতে পেরে, সে দিনের মত ঘেচু তোলা রেখে পা টিপে টিপে সাবধানে বাড়ী আসে।
চলবে...
মন্তব্য
এ যেন লেখা নয়, ক্যানভাসে আঁকা ছবি। খুব খুব ভালো লাগলো।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ধন্যবাদ, র্কীতিনাশা
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
নতুন মন্তব্য করুন