এদেশে মোহাম্মদ-দের আগমনের পর, গোমতীর ওপারে মা কালি পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। ইতিমধ্যে ঐপারে গড়ে উঠা মোহাম্মদী দাওয়াখানার সংবাদ তিনি পাননি। ও পারে পানি থেকে ডাঙ্গায় উঠার সাহায্য চেয়ে হাত বাড়ালেন। অপবিত্র কালিকে হাত দিয়ে মোহাম্মদীরা ছুঁতে পারে না। এদিকে অসহায় কালিকে সাহায্য না করে, পরকালে বিপদে পরতে পারেন। তাই জনৈক শান্তিরক্ষী লুঙ্গী উঁচু করে শরীরের সব চেয়ে নিকৃষ্ট অংশ কালির সাহায্যে বাড়িয়ে ধরলেন। সেটা ধরে কালী কূলে উঠে প্রাণ রক্ষা করলেন। এদিকে শরীরের ঐ নিকৃষ্ট অংগে কালির হাত লেগে অপবিত্র হয়েছে। সে থেকে পুরুষ মুমিনদের সে বিশেষ অংগের চামড়া কেঁটে ফেলার নিয়ম। এভাবে খতনা প্রথা এদেশে চালু হয় বলে আলোচক বৃন্দের হাস্যরসাত্বক আলোচনার অবসরে;
"জয়বাংলা জয় হিন্দ
লুঙ্গি ছাইড়্যা ধূতি পিন।"
পুরোনো ছড়া বাদ দিয়ে;
"এক নেতার এক দেশ
বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ
এক বুলেটে সব শেষ।"
এ জাতীয় নতুন ছড়া আবৃত হয়।
হাতে ষ্টেনগান, মুখে দাড়ী, ছবিটা দেখলে ভয় হয়। মনে হয় ষ্টেনগানটা ছবির দিকে যে তাকাচ্ছে, তার দিকেই তাক করা। এইতো সেদিন এরা এই অস্ত্র দিয়ে, এই দেশটা স্বাধীন করল। আর আজ এরা সমাজের শত্রু! ছবির নীচে বড় করে লেখা " এরা দেশ ও জাতীর শত্রু, এদের ধরিয়ে দিন।" প্রতি ঘরের টিনের বেড়ায় এর পাশে আওয়ামী দুঃশাষনের খতিয়ান তুলে ধরা হয়েছে অন্য একটি পোষ্টারে। এসব অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষে শক্তি আর বলের অধিকারী ছাত্ররা নিয়মিত পাল বাড়ীর প্রাইমারী স্কুলের মাঠে হাওয়া খায়, আর উপরের ছড়া গুলো আওড়ায়।
মাত্র কয়েক বছরের চেষ্টায় নমিতাদি মরা গাছে ফুল ফুটিয়েছে। নানা ফুল আর ফলের গাছে ফলন শুরু হয়েছে। ছাত্ররা সে সব গাছের ফল-ফুল যথেচ্ছা ব্যবহার করছে, করবেইতো! এসব বিধর্মী হিন্দুরা এদেশে আশ্রিত মাত্র, আশ্রিতরা শুধু তাকিয়ে থাকে। প্রতিবিধানের প্রতিদানে গ্রাম-সরকারের ধমকী খেয়ে, এখন তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করার নেই!
হিন্দুনীরা জোগার দেয়,
তুলসী পাতা হোগাত দেয়,
নৌকাদিয়া পারি দেয়,
মশালদিয়া চেরাগ দেয়,
ভারত গিয়া কুলু দেয়,
কু লু লু......
সন্ধ্যায় জল আনতে ঘাটে গেলে এসব আজকাল নমিতার শুনতে হয়!
সমাজের সব চেয়ে নীচের মানুষগুলো এম্নিতে বেশ স্বাধীন! নিজে কিছু চলে, খোদায় কিছু চালায়। যেদিন রুজী-রোজগার হয়, সে দিন নিজের চেষ্টায় রান্নাবান্না করে খায়। আর যে দিন নিজের চেষ্টায় কিছুই জোটে না, সে দিন খোদার ইচ্ছায় উপোষ করে। এদের বোরখা তো দূরের কথা, শরীর ঢাকার কাপড় না থাকলেও তেমন দোষের কিছু নেই। এদের দিকে মানুষের সম্মান নিয়ে কে তাকায়! হুরুনীর মত, তাদের একজন রাখাল। প্রিয় পাঠক ইনি "রাখাল ছেলে" কবিতার রাখাল নন। নামেই রাখাল। বংশ পরম্পরায় এই রাখাল নরসুন্দর। এদেশে এমন দিন ছিল, যখন রাখালরা নবান্নের সময় গৃহস্তের বাড়ী থেকে যে ধান পেত, তাতে বছর চলে যেত। খুর-কেচী নিয়ে বাজারে জলচৌকীতে বসতে হতো না। আজকাল সে সব দিনের গল্প করার সময় এরা পায় না। নিতান্ত প্রয়োজন না থাকলে (মুসলমানেরা এ কাজ এখনো শেখেনি) বাজারে এদের বসার জায়গা পাওয়া কঠিন হতো। এবার গ্রাম সরকার দূর্গাপূজা করতে দিল না। গ্রামে আবার দূর্গাপূজা কী, সে সব শহরে হয়! তার চেয়ে ভাল হয় কোলকাতায়। মা দূর্গা রাখালের ভাগ্যে সুপ্রসন্ন ছিলেন না কখনো। অথচ মা দুর্গার জায়গায় মা ফাতেমাকে বসিয়ে দিলে অন্তত অনেক ঝামেলা কেটে যায়! মুক্তিযুদ্ধের সময় সবাইতো মরল! সংসারে কে আর আছে, যে আপত্তি করবে! তাই একদিন রাখাল শরীরের বিশেষ চামড়াটা কেটে মোহাম্মদ আলী হয়ে গেল।
চলবে...
মন্তব্য
মাঝে মাঝে পড়ি এই উপন্যাস
মাঝে মাঝে টের পাই এর মহাকাব্যিক বিন্যাসটা ধরা পড়ে
চমৎকার
মহাকাব্যিক উপন্যাস লেখা বাঙালিরা ভুলে যেতে বসেছে আমার এই ধারণা বোধহয় আর থাকল না
ধন্যবাদ গুরু, অনেক মিছা কতা কওনের লাইগ্যা। কিন্তু মহাকাব্যিক উপন্যাসটা আসলে কী? এ ধরনের ক একটা উপন্যাসের নাম বলা যায়? তাহলে বুঝতে পারতাম, মহাকাব্যিক উপন্যাস কাকে বলে!
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
পুতুল... শেরালী প্রথম কয়েকটা পর্ব একেবারে প্রথমে পড়ছিলাম। তারপরে আপনেই গ্যাপ দিলেন। দ্বিতীয় কিস্তিতে আবার পড়া শুরু করলাম। কিন্তু কয়েক পর্ব পড়ে ব্যস্ততায় আমিই পড়া বন্ধ করলাম।
এখন আর পড়ছিনা। অপেক্ষা করছি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাসখানাই পড়তে। শেষ করে পিডিএফ দেন পুরোটা পড়বো। পড়তে চাই। কারন আমার খুব ভালো লাগছে উপন্যাসটা।
তবে সবচেয়ে ভালো হয় পুস্তক আকারে পেলে। আমি পুস্তকেই পড়তে আগ্রহী।
ভালো থাকবেন...
লেখা চলুক...
শুভেচ্ছা রইলো।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আজকে পঁচিশতম পর্ব পোষ্ট করলাম। এত লম্বা লেখার ছোট ছোট পর্ব পড়ে পাঠকের পক্ষে ঘটনার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব। সেটা নিজেও বুঝি। কিন্তু ব্লগে না দিলে কেমন যেন লেখার গরজ থাকে না। তাই দেই, দিতে হয়।
আর বই আকারে প্রকাশের ব্যাপারটা একটু নির্ভরশীল। পিডিএফ দিলে পাঠক ঠিক করবেন এর ভবিষ্যৎ কী হবে। উৎসাহের জন্য ধন্যবাদ।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
নতুন মন্তব্য করুন