শিমুল তুলা ফুটে বাতাসে ছড়িয়ে যাচ্ছে। তুলাটা কাজে লাগে বলেই লোকে ফুলটার সন্ধান করে। শুধু এইটুকু তুলাকে রক্ষা করতেই গাছটার গায়ে এত কাঁটা। গাছে উঠে তুলা সংগ্রহের কোন ব্যাবস্থা নেই। লম্বা বাঁশের আগায় আংটা বেঁধে তুলা পারতে হয়। বসন্তের ভূবন-মোহিনী রূপের অপেক্ষায় তর সয়না বলেই আমের মুকুলেরা শীতেই হলুদ গাঁদার মত প্রকৃতিতে উঁকি দেয়। কৃষ্ণচূড়ার অগ্নিগর্ভা রূপের ঝলকে কোকিল গান ধরতে ধরতে মুকুল থেকে সবুজ আমের ভারে নুয়ে পরে ডালটা। পূজোর থালায় অর্ঘ্য দিতে রক্তজবাটা কোন ফল না দিয়েই নমস্য! তুলসীর মত সব আগাছা ভগবানের বাগানে শোভা বাড়ায় না। কচুরিপানা সাদা জমিনের পাঁপড়িতে, বেগুনী বেষ্টনীর মাঝে, হলদে সিঁদুরের টিপ দিয়েও প্রজাপতির দৃষ্টি আকর্ষনে ব্যর্থ! হয়তো বংশ বিস্তারে ফুলের ভূমিকা নেই বলেই।
পালবাড়ির শান বাধাঁনো ঘাটের পাথরে ঘষে ঘষে, কুঁড়িয়ে পাওয়া ঝিনুকটায় ফুটো করছে মায়া। ঝিনুকের ছিদ্রটা আমের গায়ে ঘষে খোসা ছাড়ানোর জন্য। কিন্তু মায়ার কপাল মন্দ, বেচারী একটা আমও কুঁড়িয়ে পায়নি। শিমুল গাছটার গা ঘেসে কত গুলো আম, অথচ কাঁটার জ্বালায় শিমুল গাছে উঠেও আমগুলো পাড়ার কোন উপায় নেই! ডালের একদম আগায় যেখানে মায়ার পৌঁছার কোন সম্ভবনা নেই সেখানে আমগুলো ঝুলছে। তুলা পারার নাম করে লম্বা বাঁশটা আনতে পারলে থোকায় থোকায় আম পারা যেত। অবশ্য মায়া এত লোভী নয়; ওর দু-তিনটে আম হলেই চলবে।
কি জানি কেন, মায়ার মনটা আজকাল একটু চঞ্চল! কুয়াশায় পা ভিজিয়ে নমিতাদির পিছু পিছু আরো কজন ছেলেমেয়ের সাথে বোয়ালমারী বাজারের বড় হাইস্কুলে ক্লাস ফাইভের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে এসেছে মায়া। দিন কয়েক আগে নমিতাদির কাছে পরীক্ষার ফল এসেছে। নমিতাদির কথা হুরুনী মেনে নিয়েছে। হেড মাষ্টারের সাথে নমিতাদির বাবা গৌরাঙ্গ বাবু আলাপ করেছেন। মাসিক এক টাকা বেতনে মায়া হাইস্কুলে পড়তে পারবে। স্বাধীন মানুষকে পরাধীনতার শৃংখলে আবদ্ধ করতে আরো অনেক কৌশলের সাথে একই রকমের পোশাক পরিধানের বিধানে মায়াকেও জড়াতে হবে। নমিতাদি সে ব্যবস্থাটা করে দিলেন। মায়া স্কুলে যাবার দিনটির জন্য অধীর অপেক্ষায়।
এখন দুপুরের রোদে পাল বাড়ির বাগানটায় মায়া একা। আম পারার প্রথম চেষ্টা হিসাবে একটা ঢিল ছুড়লো মায়া। কিন্তু কোন লাভ হল না। একটা ঘুঘু উড়ে গিয়ে অন্য ডালে বসল কেবল। অথচ শেরালী গুলাইল দিয়ে পছন্দ মত আমটা পেরে ফেলে। দুটো ডালে রাবার বাঁধা যন্ত্রটি মায়া অনেকবার চুরি করে মাটির ঢেলা দিয়ে গুলি ছোড়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু লাভ হয়নি। লক্ষ্যবস্তুর ধারে কাছেও গুলি যায় না।
গাছে উঠে আমের থোকাটা যে ডালে ঝুলছে সেটা ধরে ঝাকুনী দিলে অন্ততঃ একটা আমতো পরবে! কান্ডটাকে দুহাতে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে গাছটার গুঁড়িতে পা দিয়ে জোরে লাফ দিয়ে দুপায়ে দুদিক থেকে কান্ড চেপে বানরের মত ঝুলে গেল মায়া। পায়ে ভর করে হাত দুটো আরো উপরে ধরে আরো একটু উঠলো সে। আর একটু উঠতে পারলেই ডালটা ধরে ফেলতে পারবে। পায়ে শরীরের ভর রাখতে গিয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। তলপেটে চিন চিন করে একটু ব্যথা অনুভব করছে। উড়ু দুটো কাঁপছে। নিজেকে আর গাছের গায়ে জড়িয়ে রাখতে পারছে না। নেমে গেল সে। তলপেটে কেমন যেন চাপ টের পাচ্ছে! প্রশ্রাবের বেগ হল বোধ হয়। আশে-পাশে কেউ নেই দেখে, প্যান্ট নীচে নামিয়ে ফ্রকটা উঁচু করে ধরে বসে পড়ল, গাছের আড়ালে। কিন্তু একি! রক্ত বের হচ্ছে কেন! মায়া পড়ল মহা বিপদে! কাকে জানাবে সে এ বিপদের কথা! মায়ার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল...
মন্তব্য
বয়ঃসন্ধিতে পা দিলো !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
হ্যাঁ, তাই।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
খুব সুন্দর ও কাব্যিক অলংকরণ। অলংকরণ থেকে নানা পথ বেয়ে বাস্তবের মুখোমুখি। খুবই ভাল হচ্ছে।
চালিয়ে যান পুতুল!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ধন্যবাদ তীরুদা, সাথে থাকার জন্য।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
কি সুন্দর বর্ণনা পুতুলভাই, চলবে অবশ্যই
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
ধন্যবাদ দেবদা, চেষ্টা চলবে।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
শিমুল তুলা ফুটে বাতাসে ছড়িয়ে যাচ্ছে। তুলাটা কাজে লাগে বলেই লোকে ফুলটার সন্ধান করে। শুধু এইটুকু তুলাকে রক্ষা করতেই গাছটার গায়ে এত কাঁটা। গাছে উঠে তুলা সংগ্রহের কোন ব্যাবস্থা নেই। লম্বা বাঁশের আগায় আংটা বেঁধে তুলা পারতে হয়। বসন্তের ভূবন-মোহিনী রূপের অপেক্ষায় তর সয়না বলেই আমের মুকুলেরা শীতেই হলুদ গাঁদার মত প্রকৃতিতে উঁকি দেয়। কৃষ্ণচূড়ার অগ্নিগর্ভা রূপের ঝলকে কোকিল গান ধরতে ধরতে মুকুল থেকে সবুজ আমের ভারে নুয়ে পরে ডালটা। পূজোর থালায় অর্ঘ্য দিতে রক্তজবাটা কোন ফল না দিয়েই নমস্য! তুলসীর মত সব আগাছা ভগবানের বাগানে শোভা বাড়ায় না। কচুরিপানা সাদা জমিনের পাঁপড়িতে, বেগুনী বেষ্টনীর মাঝে, হলদে সিঁদুরের টিপ দিয়েও প্রজাপতির দৃষ্টি আকর্ষনে ব্যর্থ! হয়তো বংশ বিস্তারে ফুলের ভূমিকা নেই বলেই।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
পলাশ ধন্যবাদ।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
প্রতি পর্ব আরেকটু বড় হলে ভাল হয় । আর শুরুটা পড়ে মনে হচ্ছে ভাল লাগবে ।
নিবিড়
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
ধন্যবাদ নিবিড়, অনেক ঘটনা বলতে হচ্ছে, তাই একেকটা পর্ব বেশী ফ্যাক্ট রাখতে চাইনি। তবে উপন্যাসের পর্ব একটু বড় হলেই ভাল। চেষ্টা করবো পরের পর্বগুলো একটু বড় করে দেবার।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
নতুন মন্তব্য করুন