শিমুল তুলার মত সাদা পাজামা আর আকাশের মত নীল সার্ট পরে শেরালী চলেছে রাজ দর্শনে। গ্রাম সরকারের লোকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষক-শ্রমিক, কুলি-মজুর সবাইকে তাড়া দিচ্ছে পূণ্য দেশের ধন্য রাজার আগমনকে শুভেচ্ছা স্বাগতমে সাফল্য মন্ডিত করতে। সে কারনে বোয়ালমারী বাজারের দিকে হাট-বারের মত মানুষের স্রোত। দেখা যাক নতুন রাজা আমাদের ভাগ্যের কি পরিবর্তন করতে পারে!
"মেজর জিয়ার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম" লেখা ব্যানার নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে লোকমান হাজীর দল। কচু-পাতার জমিনে লাল মাটির ছাপ দেয়া পোষাক পরে, সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকারী সৈনিকেরা রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে; শান্তিপূর্ণ ভাবে এগিয়ে দিচ্ছে মানুষের ঢল রাজ দরবারের দিকে।
"জিয়া তুমি এগিয়ে চল আমরা আছি তোমার সাথে" -শ্লোগানে গলা ফাঁটিয়ে এগিয়ে আসছে ছাত্র দল। ধানের শীষে দিলে ভোট, শান্তি পাবে দেশের লোক" শোনা যাচ্ছে মাইকের শ্লোগান। ওড়া- কোদাল নিয়ে ধেয়ে আসছে যুব দল, ব্যানারে লেখা "খাল কাঁটা হলে সারা দূর হবে বন্যা-খড়া"।
এত হৈচৈ চেঁচামেচী আর মানুষের ভিড়ে বালুর মাঠের মাঝখানে শান্তি রক্ষার সৈনিকেরা বৃত্তের মত একটু ফাঁকা জায়গা করতে সমর্থ হল। রাজার রথ গগন বিদারী হুংকারে জনগনের মাথার উপড় পা রাখার মোক্ষম মূহুর্তের অপেক্ষায়। জলে ভাসা মরা গরুর উপড় শকুনেরা যেমন ডানা ঝাপটায়, সে ভাবে ধীরে ধীরে নীচের দিকে নেমে আসছে রথ। রথের প্রবল বায়ূ সঞ্চালনে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হল। রথটা যত কাছে আসছে বায়ূর বেগ তত বেড়ে যাচ্ছে। ধুলোয় সব একাকার। গলার মাফলার, মাথার টুপি, ফেষ্টুন-ব্যানার-লুঙ্গী-শাড়ী সব হাওয়ায় পতাকার মত পত পত করে উড়ছে। হাওয়ার স্রোতে ভেসে যাচ্ছে কৃষ্ণচূড়া-পাখি-প্রজাপতি। শব্দে কানে কপাট, ধূলোয় চোখ বন্ধ এর মাঝে মড়মড় আরো একটা শব্দ, মানুষের চিৎকার চেঁচামেচী। ভেঙ্গে পড়ল কৃষ্ণচূড়ার একটা ডাল মানুষের মাথায় বজ্রপাতের মত।
এতক্ষনে প্রায় ছত্রভঙ্গ জনতাকে শান্ত করতে রাজা স্বয়ং মঞ্চের মাইকে ঠোঁট লাগিয়ে বজ্রকন্ঠে অভয় বাণী দিতে লাগলেন "বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম" বলে। কচু পাতা রঙের ফড়িং-এর মত রাজ-রথ সৈনিকদের বেষ্টনীর ভেতর থেকে পাখা মেলে দিয়েছে জনতার মাথার উপর।
জনগন বিপদ কেঁটে গেছে দেখে, এবার অভয় বাণীর উৎসের দিকে তাকালো। চোখে কালো ঠুলি পরা হিন্দী ছবির ভিলেনের মত, এ রাজার দু'চোখেই কালো কাঁচের ঠুলি। রঙ্গিন কাঁচের দেয়াল ভেদ করে জনগন রাজার চোখ দেখতে পেলো না। রাজা বলছেন; প্রিয় দেশবাসী...
কথার মাঝখানে বোমা ফাঁটার মত একটা বিকট শব্দ হল। আবার হুড়োহুড়ি-হৈচৈ-হট্টোগোল। জনতা দিগ্বিদিক ছুটছে। ধাক্কা সামলাতে না পেরে শেরালী ধূলোর ধরনীতে পরে মানুষের পায়ের তলায় পিষ্ট হতে লাগলো। যে সেন্ডেলটা রাজার মাইক্রোফোনে আঘাত হেনে বোমা ফাঁটার মত বিকট শব্দ করে টেবিলে স্থির হল, সেটা শেরালীর বলে শান্তি রক্ষীদের স্থির সিদ্ধান্ত। শেরালীকে ধরে আরো অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া গেল, গুলাইল আর এঁটেল মাটির গুল্লি। চুলোর আগুনে পুড়ে গুল্লি গুলো লাল এবং এ কারনে আরো বিপদ জনক। স্থানীয় পুলিশের খাতায় রকমত আলী কন্টেকদারের শিশুকন্যার লাশের সুরুতহাল লেখার সময় সাক্ষী হিসাবে শেরালীর নাম পাওয়া যায়। কাজেই এমন বিপদ জনক আসামীকে শান্তিরক্ষীরা লাল দালানে আবদ্ধ না করে শান্তি রক্ষার কোন উপায় খুঁজে পেলেন না...
মন্তব্য
চোখে কালো ঠুলি পরা হিন্দী ছবির ভিলেনের মত, এ রাজার দু'চোখেই কালো কাঁচের ঠুলি। রঙ্গিন কাঁচের দেয়াল ভেদ করে জনগন রাজার চোখ দেখতে পেলো না।
একেবারে সঠিক পর্যবেক্ষণ! আপনার পক্ষেই সম্ভব। সাবাস!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ধন্যবাদ তীরুদা।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
বলতে ভূলেগেছি, সেন্ডেলটা লক্ষভ্রষ্ট হয়ে রাজার মাথায় না লেগে, লেগেছে মাক্রোফোনে। ধন্যবাদ অথৈয় জলের সাতারু।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আমাদের শান্তিরক্ষীগণ শান্তিমত কাজ করতে পছন্দ করেন বলেই প্রকৃত আসামী সন্ধানের মত ঝামেলায় না গিয়ে ইচ্ছে মত যে কাউকে ধরেই চালান করে দিয়ে নির্ঝঞ্ঝাট থাকতে পছন্দ করেন।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
ঘটনা কিন্তু এরকমই। এরা একটুও ভাবেনা।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
নতুন মন্তব্য করুন