শকুমেন্টারি শকোথেরাপি এবং কর্পোরেট ডেমোক্র্যাসি

পুতুল এর ছবি
লিখেছেন পুতুল (তারিখ: শনি, ১১/০৪/২০০৯ - ১১:৩৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কিন্তু তার পরও পণ্য উৎপাদনকারীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বিকাশের ফলে বৈরী বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। অসম প্রতিযোগিতা হচ্ছে। মানুষ মাঝে-মধ্যেই সব ছেড়ে ছুড়ে অরণ্যচারি হতে চাইছে। ক্ষণে ক্ষণেই বলে উঠছে 'দাও ফিরে সেই অরণ্য'। সায়েন্স ফিকশন তার তুকতাক মন্ত্রতন্ত্রে আবিষ্ট হয়ে নিভৃতচারি হতে চাইছে। মানুষকে এখান থেকে ফেরানোর জন্য পণ্য প্রবাহ আর অভাব বোধের অসীম আকাক্সক্ষা ফেরানোর জন্য ধরে ধরে শক্ দেওয়া হচ্ছে। সিনেমার মাধ্যমে শক্ দেওয়া হচ্ছে। বীভৎস ছবি ছেপে শক্ দেওয়া হচ্ছে। অরবিটাল ভেরিয়েশনে সৃষ্টি করে হরর মুভি, হরর উপন্যাস, স্যাডিস্ট গল্প, রেপিস্ট সিনড্রোম গিলিয়ে শক্ দেওয়া হচ্ছে। ট্রাডিশনাল শিল্পকর্ম এখন শক্, শকুমেন্টারি। তিনটি 'এস' দিয়ে তাদের বিবস করে দেওয়া হচ্ছে। এস ফর সেক্স, এস ফর স্যাডিজম এবং এস ফর শক্। এর ফলে মানুষের চিরাচরিত ভাবাবেগ, বিচারবুদ্ধি, বিবেক, দর্শন সব শকোথেরাপিতে স্যাডিজমে রূপান্তরিত হচ্ছে। এর নির্বিকার প্রদর্শনে দেখা যাচ্ছে ছাত্র পেটাচ্ছে শিক্ষককে। মাওলানা ধর্ষণ করছে বালককে। পুলিশ সমবেত ধর্ষণ করছে শিক্ষিকাকে। সংবাদপত্রে নগ্নছবির প্রতিযোগিতা। সম্পাদক বিকোচ্ছে কর্পোরেশনে। সাংবাদিক জিন আর ভোদকায় বিবস হচ্ছে, বার্তা সম্পাদক 'লিডের' জন্য মৃতের সংখ্যাধিক্য চাইছে। বিচারক পয়সা নিয়ে খুনিকে ছেড়ে দিচ্ছে, নির্দোষকে ফাঁসি দিচ্ছে। সারা দিন অনৈতিকতার সাগরে ডুবে রাতে ধর্মবাণী ফেরি করছে। ইহজাগতিক পাপের পঙ্কিলে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে পরলৌকিকতার তাবিজ-কোবজ জড়ো করে সন্ত সেজে স্বর্গের গৌরব গাইছে। সারাক্ষণ নিজ নিজ শ্রেণীর সোপান পেরিয়ে ঊর্ধ্ব শ্রেণীর মোহময় স্পর্শ পাওয়ার জন্য ঘরের স্ত্রীকেও ভেট দিচ্ছে। অধ্যাপক বিদ্যা নিয়ে হাট বসাচ্ছে। বেসরকারি মোকাম, ঝকঝকে হাট। ওখানে বিদ্যা বিক্রি হচ্ছে- মিনি-ম্যাক্সি-মেগা সাইজের বিদ্যা। চাই চাই খাই খাই এই জীবনেরও একটা তাল লয় আছে। আজকের বেসুরো বেতাল জীবন যত আপাতবিসদৃশ উৎকট হোক না কেন, তারও একটা অন্তরমিল আছে। এবং সেটা খুঁজে বার করার দায়িত্ব বুদ্ধিমান মানুষের অর্থাৎ 'বুদ্ধিজীবীদের', যারা এখনো বিপণনের জন্য বাজারে উঠেননি, তাদের।"

শকুমেন্টারি শকোথেরাপি এবং কর্পোরেট ডেমোক্র্যাসি বইয়ের প্রথম প্রবন্ধের আংশ বিশেষ। পুরো বইটি এখনো পড়া হয়নি, মানে হাতে আসেনি। প্রথম প্রবন্ধটি পেলাম অন্তর্জালে। ভাল লাগল, তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
বইটি বের করেছে পাঠসূত্র, লেখক; মনজুরুল হক।


মন্তব্য

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

পড়তে হবে

পুতুল এর ছবি

আমিও পুড়োটা পড়ব।
ধন্যবাদ শাহেনশাহ সিমন।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ভাল আলোচনা। আরো বড় পরিসরে এ নিয়ে নাওমি ক্লেইনের বই আছে ডিজাস্টার ক্যাপিটালিজম, কেউ কেউ বলেন শক ক্যাপিটালিজম। শক খেয়ে আর শক দিয়ে এ তার আয়ু বাড়ায়।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ ফারুক ওয়াসিফ,
আজকাল পড়া হয় না একে বারেই। তবে কর্পোরেট বানিজ্যের কারিশমাটা খুব চমৎকার।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অপ্রিয় এর ছবি

শকুমেন্টারি
কথাটা খুব সম্ভবত মৃণাল সেনের এক চলচিত্রে প্রথম শুনেছিলাম, কারও কি মনে আছে?

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।