সংসার-ধর্ম-কাম-কাইজ নিয়ে আমরা এত ব্যস্ত যে, বন্ধু-বন্ধবের সাথে দেখা সাক্ষাতের সময় হয়ে উঠেনা। দুই মাস আগের আড্ডায় আমি যেতে পারিনি কামের জ্বালায়। তাই পরের বৈঠকের তারিখ ঠিক হয়েছিল গত কাল, আমার ছুটি নিশ্চিৎ, সেটা জেনে।
আগে গিয়ে পারমিতাদি আর প্রভুদার অপেক্ষা করছি তীরুদার বাসায়। আমার ছোট গল্প পড়ার কথা থাকলেও শেষ সময়ে উপন্যাসের একটা পর্ব পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু আমার লেখা পড়ে শোনাতে হবে, সেটা জানার পর থেকে যে হাঁটু কাঁপা শুরু হলো, তীরুদার কফি খেয়েও তা থামাতে পারলাম না। হিমাংকের দশ ডিগ্রী নীচে তাপমাত্রা! হাঁটুতো এম্নিই কাঁপে।
দেশী চিংড়ি আর পটলের ভাঁপে পারমিতাদি শুরু করলেন দেশের কথা। খাবার টেবিলে উশি ভাবী সহ আমরা পাঁচজন। কিভাবে যে কথাটা শুরু হয়ে গেল! সম্ভবত প্রভুদা প্রশ্ন করেছিলেন আমাকে যে. তোমার উপন্যাসটা কি বিষয়ে?
প্রথম পাক-ভারত যুদ্ধের সময় আমার হিরোর জন্ম। হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা; তার পর ৭১। কি জঘন্য ভাবে বিশেষ করে হিন্দুদের নিধন হল! সেই বর্ণনা দিতে আমার হাত কাঁপে। পরেশ নরেশ দুই ভাই। খালে ডুব দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছিল কিন্তু রাজাকারদের টেডা, জুইত্যা, বল্লমের আঘাতে আহত হয়ে ধরা পরে রাজাকারদের হাতে। তাদেরকে জবাই করা হবে। দুই ভাই কোলাকুলি করে বিদায় নিচ্ছে। বড় ভাই বলে আমাকে আগে মার। ছোট ভাই বলে আমাকে আগে কাট। দুর্ভাগ্য আমার। যার মুখে আমি ঘটনা শুনছি সে নিজেই ঘাতক।
একজন নিখোঁজ ভজনের সহধর্মিনী স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরেও সিঁদুর মুছেনি। মেয়েদের স্কুলে তিনি এখন শিক্ষকতা করছেন। দুটি ছেলেকে মানুষ করেছেন। আমার উপন্যাসের হিরো তার মাকে ধর্ষিতা হতে দেখে। এই সব অভিজ্ঞতায় বেড়ে উঠে একটা বইয়ের পৃষ্ঠা।
আমাদের খাওয়া শেষ হয়েছে। হাত ধুয়ে রান্নাঘরে গেলাম সিগারেট খেতে। প্রভুদা বললো, ডেনহাগে মানবতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যায়। এতোগুলো মানুষ মেরে ওরা বিনা বিচারে পার পেয়ে যাবে!
দুঃখের সাথে প্রভুদাকে জানাতে হল আজকে বাংলাদেশে রাজাকারদের অবস্থান। এইতো হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর কোন পাকি ডিপ্লোমেট ঢাকায় গিয়ে আমাদের জানিয়ে এলো যে, “এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় নয়”।
আমরা আফসোস করতে করতে বসার ঘরের দিকে যাচ্ছিলাম। এমন সময় দিদি একটু ধূমপানের জন্য রান্না ঘরে ঢুকলেন। উশি ভাবীকে সঙ্গ দিতে প্রভুদা চলে গেলেন। সিগারেটে টান দিয়ে দিদি ফিরে গেলেন তার যৌবনে। আসাম-সিলেটের ভারতীয় দিকটায় তাদের বাড়ী। সীমান্ত পার হয়ে আসা শরণার্থীদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করছেন দিদির পরিবার। একটা মাত্র লুঙ্গি আর হাওয়াই শার্ট পরে ছেলেরা এসেছে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিতে! পাহাড়ী শীতে কাঁপছে ছেলে গুলো। এদেরকে ঠিক যায়গায় পৌঁছে দেয়া, প্রাথমিক সাহায্যটুকু করা, এই সব করেছেন দিদির পরিবার। তাঁর মা এই নিয়ে একটা বই লিখেছেন। আশা করি বইটা একদিন পড়তে পারব।
তো তিনি তাঁর মায়ের সাথে জীপে করে ভারতীয় সৈন্যদের পিছু পিছু দেখতে গেলেন স্বাধীন বাংলাদেশর সীমান্ত এলাকা। বড় অস্বস্তিকর। দিদির আড়ালেই সব আলোচনা হচ্ছে। কিছুই শোনার ইচ্ছে না থেকেও তিনি সব শুনছেন!
পাকি এবং রাজাকারদের আস্তানা থেকে উদ্ধার করা মেয়েগুলো সব উলঙ্গ আর ন্যাড়া মাথা। কারণ হলো; গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে অনেকেই নিজেদের এই নরক থেকে রক্ষা করেছেন। পাকি এবং রাজাকাররা এর পর মেয়েদের উলঙ্গ রাখতে শুরু করে। তাতে দেখা যায় মাথার চুল গলায় পেঁচিয়ে অনেকে মুক্তি পায়। এর পর মেয়েদের চুল কেটে রাখতো পাকি আর রাজাকার শুয়োরগুলো।
এই জার্মান ওয়েব সাইডটি ধারণা করছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে দু’ থেকে চার লাখ ধর্ষণ হয়েছে। তাদের মতে যৌন অতৃপ্তি থেকে যুদ্ধকালীন ধর্ষণ ঘটে না। সেটা যুদ্ধের একটা কৌশল। প্রতিপক্ষের মানসিক শক্তি নষ্ট করে দেয়া, এবং নিজেদের ক্ষমতা এবং শক্তির অধিকারী মনে করতে যুদ্ধে ধর্ষণ অস্ত্র প্রয়োগ করা হয়। কর্তা ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ সমর্থনেই যুদ্ধকালীন ধর্ষণ ঘটে। অন্য একটা বইয়ে পড়েছিলাম, আমাদের মুক্তি- যুদ্ধে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ গনধর্ষণ হয়। এখানে শুধু ধর্ষিতা মা বোনের সংখ্যা। ধর্ষণের সংখ্যা অবশ্যই আরো অনেক বেশী। জার্মানীতে ধর্ষণের শাস্তি যাবৎজীবন। মৃত্যুদন্ড নেই এখানে কিন্তু খুনের সাজাও যাবৎজীবন।
আমরা তীরুদার বসার ঘরে গিয়ে বসি। উপন্যাসের একটা অধ্যায় পড়ি। অনেক কথা সংক্ষেপে বলে নিয়ে শেষ কথা বলি। আমার উপন্যাসের হিরো, তার মায়ের ধর্ষক রাজাকারটাকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে খুন করে।
আমরা রাজাকারদের বিচারই চেয়েছিলাম। সেটাতো হলে না। এখন আমাদের বরাহ শিকারে যেতেই হবে।
মন্তব্য
দারুণ লিখেছেন পুতুল। গায়ে কাঁটা দেওয়া। ভয়ানক।
ধন্যবাদ গুরু।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
ভাল্লাগলো... তীরুদা ডুব দিলো কোথায়?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
থেংকু বস। তীরুদার তিনটা বই বের হচ্ছে। এমন সম্ভবনা আছে যে চতুর্থ একটাও বের হবে। এবার বুঝেন ঠেলা। দু'টো বাচ্চাদের অনুবাদ। জাহাজী জীবনের গল্প। আর ছোটগল্পের সংকলন। জানুয়ারীতেই তীরুদাকে ঢাকায় দেখবেন।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
লেখা ভাল হয়েছে। আরো ভাল করতে পারতেন।
ধন্যবাদ শুভাশীষদা। আরো ভাল হতে পারতো। আরো একটু যত্ন নিতে পারতাম। চেষ্টা করবো।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
এই লেখায় মন্তব্য আসে না কেন? ভালা জিনিস রোচে না আমাগোর, নাকি?
থাক পাঠকদা। ভাল লাগলে লোকে পড়বেই।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
উপন্যাসটার থীম শুনেই একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়-শিউরে ওঠা, অসহায় রাগ, একটা কোথাও জ্বলে উঠতে পারার আকাঙ্ক্ষা, একটা তীব্র ক্ষোভ, তারও পরে একটা ভালো দুনিয়া পাবার ইচ্ছা-সবকিছু মেলানো মেশানো একটা অবর্ণনীয় অনুভূতি। তাই কিছুই বলতে পারিনি।
"ইস্পাত" এ যেখানে পাভেল ফিরে এসে শুনেছিলো শত্রুরা কী করেছে মেয়েদের, সেইখানটা পড়ার পরে যেমন হয়েছিল।
গোটা উপন্যাসটার অপেক্ষায় রইলাম লেখক।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ধন্যবাদ তুলিরেখা। ইস্পাতের কথা মনে নেই। যুদ্ধের পটভূমি এমনই তো হয়। হওয়ার কথা।
বইটা লেখার কাজ প্রায় শেষ। প্রকাশায়তনে পাণ্ডুলিপি জমা আছে। দেখি কবে সচলে দিতে পারি।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আপনার উপন্যাসের থীম পড়ে মন্তব্য করার ভাষা হারিয়ে ফেলছি । বইটি শেষ হলে যে করেই হোক পড়তে চাই । লিখে যান ।
ধন্যবাদ নন্দিনী,
সচলায়তনে নিশ্চই প্রকাশ করবো।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
পুতুল ভাই, আপনার এই গল্প বলার কায়দাটা আমার বেশ ভালো লাগে। কেমন অবিচলভাবে আটপৌড়ে কথাবার্তায় কড়া কিছু কথা এসে পড়ে। চমকে যাই।
---
উপন্যাসটি এখানেই পোস্ট করছেন না কেন?
ধন্যবাদ বস, কিছু ঘষামাজা চলছে।
দেব এখানেই।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
চমৎকার লেখা!
থেংকু বস। অনেক দিন পর দেখলাম। অষ্ট্রেলিয়ায় কেমন চলছে?
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আমিও কিন্তু অপেক্ষায় রইলাম।ঐ শেষ শট টা আমি চোখে দেখতে পাইতেছি।
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
থেংকু বস।
ইয়ে মানে যদি প্রচ্ছদের জন্য বইটা পড়া প্রয়োজন মনে করেন, তাহলে প্রুফ দেখা ছাড়া কপিটাই পাঠাই?
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
নতুন মন্তব্য করুন