পাকিস্তানের বন্দী শিবিরে!

পুতুল এর ছবি
লিখেছেন পুতুল (তারিখ: মঙ্গল, ১৯/০১/২০১০ - ৩:৩৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“কে দেবে গো ক্ষুধার অন্ন জীবন করবে দান
কোথায় তুমি ওগো আমার দীনের দয়াবান”

আমার বিবেচনায় আমি ঠিকমতই গাই গানটা। নির্দেশক জহির কাকু কোন ভাবেই পছন্দ করছেন না। কি আর করা! আবার গাই। আবারো অনুভূতির আড়ষ্ঠতায় গানে প্রাণ আসেনা। প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে রাজ্যের সাথে প্রাণ হারানোর ভয়ে অসহায় রাজকুমারের বেদনার সুর আমার কণ্ঠে ধরা দেয় না। অন্য ঝামেলাও আছে। গরিবের পোলার পক্ষে রাজকুমারের চলন-বলন রপ্ত করা মনে হয় অসম্ভব।

ছয় ফুট লম্বা বিডিআর জসিম সেনাপতির বেশে খ্চ করে খাপ থেকে তরবারী বের করলে সত্যিই ঘাবড়ে যাই। অথচ রাজার অঙ্গুলি হেলনের মতই কথার আওয়াজে অবাধ্য সেনাপতিকে বিপন্ন করতে হবে। কিন্তু গোঁফে তা দিয়ে জসিম ভাই এগিয়ে এলে আমি সংলাপ ভুলে যাই; যুদ্ধতো পরের কথা।

রিহার্সেলের পুরো সময়টা বাদক, দোহারী, দর্শক আর নির্দেশকের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির অদৃশ্য সূতোয় নাচের পুতুলের মতো শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে অনূভুতির তন্ত্রিগুলোও বাঁধা থাকে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে সিংহাসনের সাথে রাজ কুমারের প্রাণটাও যাবে। এতোগুলো সন্ধানী চোখের খবরদারী এড়িয়ে, অন্তর দৃষ্টিতে রাজ কুমারের পরিস্থিতিতে নিয়ে যেতে পারি না নিজেকে।

মনে মনে মাধুরী চরিত্র না নেয়ার জন্য অনুতাপ করি। অথচ নারী চরিত্রের সব গুণ আমার নখদর্পণে। ফল বের হলে নাইনে উঠেবো। মেয়েদের চরিত্র করতে করতে এমন একটা পরিস্থিতি হয়েছে যে, এমদাদ, জাকির, হাসেমের মতো ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা বুকে হাত দিতে আসে।

এইবার আর নারী চরিত্র করবনা। দরকার হলে যাত্রাই ছেড়ে দেবো। ভদ্রলোকেরা যাত্রা-ফাত্রা করে না কী! কাজেই আমার অনড় সিদ্ধান্তের কাছে হার মেনে আমাকে আজাদের চরিত্র দেয়া হলো। এখন না পারি কইতে. না পারি সইতে। একটা অচেনা আক্ষেপে ভেতরটা জ্বলছে। এমন সময় জহির কাকুর সংগীত বিশারদত্বে ক্ষেপে গিয়ে মুখ ফসকে কথাটা বের হয়ে যায়-

ক্লাশ ফোর থেইক্যা যাত্রা শুরু করছি মিয়া। আপ্নে আইছেন বুইড়া দাদারে চোদা শিখাইতে!

কথাটা বলে বেয়াদপী করে ফেলেছি। সেটা বুঝতে পারছি। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য সরি টাইপের আর কিছু মুখে আসছেনা। এভাবে কয়েকটা মূর্হুত পার হওয়ার পর কিছু বলার থাকেনা। প্রতিপক্ষ বা তৃতীয় পক্ষের কেউ এগিয়ে এলে, মাফ-টাফ চাওয়া যায়। আমি এমন একটা পক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

জহির কাকু খুব আহত হয়েছেন। সেটা অনুমান করছি আর মনে মনে প্রার্থণা করছি, বাপের ভাই-চড়, থাপ্পর একটা কিছু দিয়ে আমাকে এই লেজে-গোবরে অবস্থা থেকে উদ্ধার কর!

সিকদার বাড়ির পুকুরের পুব পাড়ে রমেশদার দক্ষিনমুখী চায়ের দোকানের সামনে আমাকে ঘিরে বসে থাকা সব মানুষ জিয়ল মাছের পোটা শুনছে। নীরবতার সাথে বেড়ে চলছে আমার শাস্তি। পুকুর পার ছুঁয়ে সড়কটা বাঁয়ে নেমে গেছে। সেখানে কোন মানুষের আনাগোনা আবিস্কারে ব্যর্থ হলাম। টুংটাং শব্দে চামচ দিয়ে চায়ের সাথে চিনি মেশাচ্ছে রমেশদা। নাচের মুদ্রার মতো তাঁর হাতের আংগুল আমার একমাত্র দ্রষ্টব্য। বোয়াল মাছের চোখ দিয়ে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

-শোন ভাতিজা
যাক বাবা বাঁচালে। বুক থেকে একটা পাথর নেমে গেল। টের পাচ্ছিলাম। আমার সাথে অন্য অনেক জোড়া চোখ এখন ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জহির কাকুর দিকে ঘুরে গেছে। দৃশ্যের শেষে গ্রীনরুমে ঢোকার মতো অনুভূতি হলো আমার।
“শোন ভাতিজা” বলে তিনি যা বলতে যাচ্ছিলেন, তা শুরু করতে তাঁকে আবার ঢোক গিলতে হলো। একটা অকারণ যুদ্ধের আক্ষেপ গলায় নিয়ে তিনি শুরু করলেন-

শোন মিয়া, তোমরা সেদিনের ছেলে। দুঃখ কী বোঝ না। চারটা বছর গেছে পাকিস্তানের বন্দী শিবিরে। বর্শী দিয়া আমরা যেমন মাছ ধরি, ছোট মাছ হলে আবার ছেড়ে দেই। সে ভাবে পাকিস্তানীরা আমাগো ধরছে, আর ছাড়ছে।

এতো পটু মানুষটা। এখন যেন রাজকুমারের বেশে মঞ্চে আমার মতই অসহায়। ঠিক কি ভাবে, কোথায় শুরু করবেন বুঝতে পারছেন না। দম নিয়ে তিনি পেট থেকে কথা টানতে লাগলেন-

সৈনিক জীবনটা পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করেই গেলো। সিক্সস্টি ফাইভে পাকিস্তানীর চেয়ে বেশী মরছে বাঙ্গালী সৈন্য। ঊনসত্তুরের ইলেকশনের পর থেইক্যাই পাকিস্তানীরা আমাগো কেইম্নে জানি দেহে! একটা সন্দেহের ভাব সব বাঙ্গালীর দিকে। সিভিল, সামরিক সব বাঙ্গালীই যেন পাকিস্তানীদের চোখে বেঈমান! শেখ/ভুট্টুর নিস্ফল বৈঠকের পর ছুটির দরখাস্ত করলাম। কিন্তু ছুটি পেলাম না।

স্পাই সৈনিকদের ডিসিপ্লিন একটু কঠিন। পরিস্থিতি যুইতের মনে হলো না। পকেট রেডিওর বাক্সটা ফেলে, যন্ত্রটা পাতা কেটে কোরান শরীফের ভিতরে রেখে দিলাম। ব্রিস্টল সিগারেটের প্যাকেটের নীচের সারিতে দুইটা তিন ফাইভ ব্যাটারী ভইরা উপরে রাখলাম সিগারেট। এতদিন পাকিস্তানে থাইক্যা বুঝলাম; পাকিস্তানীরা আসলে সাপের মতো। দুধ-কলা দিলেও সময় মতো ছোবল মারতে ছাড়ে না। কাজেই একটু প্রস্তুতি থাকুক।

খোদার কী মেহেরবানি! মার্চের শেষের দিকে একদিন রেড দিল। অস্ত্রাগারের দায়ীত্ব অনেক আগেই পাকিস্তানীদের হাতে। ব্যারাকে আমরা বেকার সময় কাটাই তাস খেলে। হাতিয়ার উঁচিয়ে, বাইঞ্চোদ গালি দিতে দিতে বিছানা, ট্রাঙ্ক, বালিশের তলায় চিঠিপত্র বই, তছনছ করছে। লেখার কলম, হাত ঘড়ি, কাশ্মীরি শাল, বাটার জুতা মানি ব্যাগ সব নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে নিলো। সৈনিকের পরিচয় পত্রও বাদ গেলো না। বাংলা লেখা যে কোন কাগজ মেঝেতে ফেলে দিলো। আমার কোরান শরীফটা সেখানে দেখে, সাহস করে একজনকে বললাম। আরবী লেখা দেখে সে কোরান শরীফটা নিতে দিলো। কোরান শরীফটা নেয়ার সময় এর নীচের বইটাও তুলে নিলাম। গেইটে ট্রাকের বহর দেখেই তিন ফাইভ ব্যাটারীর ব্রিস্টল সিগারেটের প্যাকেট জাঙ্গিয়ার নীচে লুকিয়ে রেখেছিলাম।

বাইঞ্চোদ গালিটা শিশার মতো কানে গাই মারে। পিঠে রাইফেলের বাট দিয়ে গুতোতে গুতোতে ট্রাকে তুললো। কোথায় নিয়ে যাবে কে জানে! পিছনে ফিরে দেখি বাংলায় লেখা চিঠির বাণ্ডিল, বইয়ের পৃষ্ঠা, ইত্তেফাকের পাতায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ওদের ধারণা এতে শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণ পুড়ে ছাই হচ্ছে।

মরুভূমির মতো একটা জায়গায় এসে থামলো জলপাই রং-এর ট্রাক গুলো। বুটের লাথি, রাইফেলের বাটের গুতা আর সাথে বাইঞ্চোদ গালি। নিজের কবর খোড়ার মতো আমাদেরকে দিয়েই টানানো হলো তাবু। এক তাবুর নীচে বিশ পঁচিশজন করে থাকলেও এতো লোকের জায়গা হবে কী না সন্দেহ। এর মাঝে ট্রাক আসছেই। ফ্যামিলি, সিঙ্গেল, সিভিল, সৈন্য সব পেশার বাঙ্গালী।

মেগা ফোনে আমার নামটা শুনে ঘাবড়ে গেলাম। আরো কয়েজনের পাশে গিয়ে সিঙ্গেল লাইনে খাড়াইলাম। প্রায় সবাই পরিচিত। কমুনিকেশন কোর। স্পাই কোরের আলাদা কোন পরিচয় সব খানেই গোপন রাখা হয়। আমাদেরকে সিঙ্গেল তাবুতে দেয়া হলো। কঠোর নিরাপত্তা। তাবুর বাইরে কাঁটা তারের দিকে এবং তাবুর ভেতরের জড়ো হওয়ার মাঠের দিকে স্বশস্ত্র পাহারা। হাগা-মুতার জন্য তাবু থেকে বের হতে হলেও গার্ড সাথে থাকবে। বালির উপর কম্বল বিছিয়ে বিছানা পাতার শব্দ হলেও ওরা বন্দুক উঁচিয়ে তেড়ে আসে। পাশের কারো সাথে কোন কথা বলা যাবে না।

অন্ধকারের নীচে ঢাকা পরেছে আমাদের কবর গুলো। তাবুর ফাঁক গলে প্রহরীদের টর্চলাইটের আলো বিদ্যুত চমকের মতো, আমার সাথে সভ্যতার ভয়ঙ্কর দূরত্ব অথচ বিপদ জনক সহঅবস্থান নির্ণয় করে যাচ্ছে। পাশে সিভিল তাবু থেকে শিশুর ভয়ার্ত চিৎকার, মেয়েদের বিলাপ আর পাকিস্তানী সৈন্যদের হুমকী, ধমকী, বাইঞ্চোদ গালি কানে আসছে।

ছুটি না পাওয়ার পর থেকেই অস্থির ভাবে যাচ্ছিল সময়। এম্নিতেই ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া হয় না। সকালে চায়ের পর আর খেতে দেয়নি কিছু। খালি পেটে ঘুম এলো না। কামনা করি পাশের তাবুর পিচ্চি গুলো যেন কিছু খেতে পায়। মাথাটা তাবুর ফাঁকে এনে দেখলাম। ধলপর হয়ে গেছে। পাহারার সৈন্যরা বালির উপর বসে পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে ঝিমুচ্ছে।

রেডিওটা কোরান শরীফের ফাঁক থেকে বের করলাম। ক্ষুধায় না কী ভয়ে, হাঁত কাঁপছে। বুঝলাম না। কম্বল থেকে সূতো খুলে শক্ত করে সব বাধছি আর ভাবছি- এই অবস্থায় ধরা পরলে! খুব অল্প শব্দে বিবিসি খুঁজে পেলাম। স্টেশন ধরার ভলিউম ঘুরানোর চাকাটা খুলে বালির নীচে লুকিয়ে রাখলাম। এই সামান্য জিনিসটা খুব বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। একটা কম্বলের ভেতর রেডিওটা পেঁচিয়ে কোরান শরীফের কাপড়ের গিলাপটার ভেতর ঢুকিয়ে ফেললাম। একটা সূতা বের হয়ে রইল। এটাতে টানলে রেডিও চালু হবে। এই বালিশটার উপর কান রাখলেই কেবল রেডিওর শব্দ শোনা যাবে। এতো নীচু করে রাখলাম ভলিউম। কোরান শরীফ আর তার সাথে লুকিয়ে আনা বইটা না দেখেই বালির নীচে কবর দিলাম। আবার বাইরে উঁকি দিয়ে দেখি প্রহরীরা ঘুমুচ্ছে। এবার একটু বিবিসি শোনার চেষ্টা করি। ঢাকা এবং মেসাকার শব্দ দু’টোই কেবল বুঝতে পারলাম।

সারি সারি তাবু। টয়লেটে আসা যাওয়ার সময়, চারদিকটা একটু ভাল করে দেখে নেই। ময়মনসিংহের করিম ভাইয়ের বউ খুব বিলাপ করে কাঁদছে। টয়লেটের ফাঁক দিয়ে দেখলাম সবাই জানাজায় দাঁড়িয়েছে। ভেতরটা একটা কাঁপুনি দিয়ে উঠলো। গুহাবাসী মানুষ দল বেঁধে থাকতো। একদল মানুষের ভেতর আমি গুহায় লুকিয়ে থাকা শেয়াল।

সময় অনেক সময় শত্রুর মতো। কিছুতেই যেতে চায় না। পকেটের টাকা, বোতলের মদ, গায়ের রক্ত, পরিশ্রমের কাজ, সব কিছু মানুষ ইচ্ছে মতো কম বেশী খরচ বা সঞ্চয় করতে পারে। কেবল সময় কারো অধীন নয়। এর সাথে দেশের চিন্তা। যুদ্ধের কী পরিস্থিতি। কবে শেষ হবে যুদ্ধ। দেশে যদি কখনো ফিরে যেতে পারি। সবাইকে দেখতে পারবো তো! আশা-নিরাশা, ভয়-বিহ্বলতা ছাপিয়ে যে অসহায়তা বারে বারে দুরমুজের মতো সমস্ত চেতনা ছেইচ্চা হাড্ডি-মাংস, মগজ-রক্ত চারিদিকে ছিটকে দিতো সেটা হলো কিছুই করতে না পারার অক্ষমতা।

পাকিস্তানী সৈন্যরা অনেক সময় কোন কারণ ছাড়াই তাবুতে ঢুকে লাথি- উষ্ঠা আর গালি দিতো। এই বর্বরতার একটা কারণ হিসাবে মনে মনে আমাদের দেশে এদের মার খাওয়াকে দায়ী করতাম। খোদার কাছে হাত তুইল্যা দোয়া করতাম একটা পাকিস্তানীও যেনো বাঙ্গালীর হাত ফসকে পালাতে না পারে।

এই পরিস্থিতিতে একদিন বালি খুঁড়ে বইটা বের করলাম। তখনই মনে হলো, পুরো বইটা একসাথে পেলে নিয়ে যাবে। আর তন্ন তন্ন করে সব কিছু খুঁজবে। অকেজো রেডিওটা বালিতে পুতে ফেললাম। বইটার প্রথম পাতাটা রেখে বাকীটাও বালির নীচে চালান করে দিলাম। একটা পাতা বাতাসে উড়ে আসতেই পারে। আর নিয়ে গেলে যাবে শুধু একটা পাতা।

পাতাটা ক’য়েক মিনিটেই পড়া হয়ে গেলো। বাকী দিন কাটাবো কী করে! শুরু করলাম মুখস্ত করা। দৈনিক একটা পাতা মুখস্ত করছি। টের পাচ্ছিলাম বইটার পৃষ্ঠা খুব বেশী নেই। একদিন দেখলাম সমাপ্ত লেখা পৃষ্ঠাটা। এখন! কী করি!

শুরু করলাম এতো দিনের মুখস্ত করা “হিংসার পরিণাম” যাত্রা পালার রিহার্সেল। সংলাপ, গান, বাজনা, পাত্র-পাত্রী ঠিক করলাম। একদিনে একটা অধ্যায় রিহার্সেল দেই। সেটা করতেই আমার বারোটা বেজে যায়। ঠিকমতো সংলাপ ডেলিভারী হয়না। একটা সংলাপ দশবার বলে দিলেও ঠিকমতো বলতে পারে না নেকবর আলী। করিম ভাইজু বিবেকের গানে লম্বা টান দিতে গিয়ে হারিয়ে ফেলে তাল! দোহারীরা একেকজন একেক স্কেলে ধরে। বাজনদাররা রেগে যন্ত্র থামিয়ে দেয়। আমি আবার সবার সাথে কথা বলে সব ঠিক ঠাক করি। রিহার্সেল শুরু হয়। সময় কিভাবে যায় টেরই পাই না! ফাইনাল রিহার্সেলটা প্রাণ ভরে উপভোগ করি, কল্পনায়।

একদিন সত্যি সত্যিই যাত্রা মঞ্চস্থ হয়ে যায়। শ্রান্ত, ক্লান্ত আমি। প্রখর রোদের তেজে চোখে শর্ষে ফুল দেখছি। ষ্ট্রেচারে করে তাবুর বাইরে নিয়ে এসেছে কারা যেনো আমাকে। মনে হয় অনেকক্ষণ এখানে এই ষ্ট্রেচারে শুয়েছিলাম। হাতের সেলাইনটা খুলে দিতে এলো এক ইংরেজ তরুণী। সাদা কাপড়ে লাল ক্রসের মানুষ ছাড়া আর বাকী সবাই আমার মতো রোগী। পুরো জায়গাটা যেনো যুদ্ধক্ষেত্রের অস্থায়ী হাসপাতাল! কোন প্রহরী-সৈন্য নেই। পেশাব করতে নিজের পায়ে ভর করেই গেলাম। বের হয়ে মনে হলো তাবুটা একবার দেখে আসি। প্রতিদিন একটা করে মার্বেলের মতো ছোট সাইজের পাথর পায়ের দিকে রেখে দিতাম। গুনে দেখতে ইচ্ছে হলো। ২৬৬ টা পাথর।

তাবু থেকে বের হয়ে দেখলাম তোতা ভাইজু। আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে পোলাপানের মতো কেঁদে দিলো। আমিও চোখের পানি রাখতে পারলাম না। অস্পষ্ট ছাপার একটা পাতা চোখের সামনে ধরলো কেউ। কোন একটা ইংরেজী পত্রিকার পাতা। ফ্যাল ফ্যাল করে শ্বেতাঙ্গীনির মুখের দিকে তাকালাম। তার ইংরেজী যা বুঝলাম তার মানে হলো; গতকাল ষোলই ডিসেম্বর, তোমাদের বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। বুঝতে পারছো? তোমরা মুক্ত, স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক।

১৯৭৪ সালের ১৮ জুলাই। কুর্মিটোলা বিমান বন্দরে নেমে সেই যাত্রাপালার দৃশ্য বাস্তবে দেখার শখ হয়েছিল ভাতিজা। কষ্ট কী সেটা রমেশও আমার মতোই জানে। বাপ-দাদার ভিটা খোয়ানোর যন্ত্রনা একটু বোঝার চেষ্টা করো। দেখবা গান শুনে মানুষ কানের মাছিটা তাড়াতে ভুলে যাবে। বিশ্বাস না হলে রমেশরে জিগাও।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

অদেখা অনেক কিছুই আমরা ঠিকমতো অনুভব করি না। আমাদের নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছেই মুক্তিযুদ্ধ অদেখা "একটা কিছু" , তাই আমরা মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করি না।
ধন্যবাদ বস্‌।
- বুদ্ধু

পুতুল এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ বস।

**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আচ্ছা বস্‌, কে আপনাকে পিছন থেকে তাড়া করেছিল যে লেখাটা এমন হুটহাট করে শেষ করলেন? শুরুতেও কিছুটা তাড়া গেছে। আমারতো মনে হয় এটা একটা উপন্যাসের অঙ্কুর। আপনিতো লম্বা দৌড়ের ঘোড়া, শুরু করে দিন না আরেকটা উপন্যাস।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

পুতুল এর ছবি

লেখাটা খুব বড় হয়ে যাচ্ছিলো বস। সেজন্যই একটু তাড়া ছিল যেন আরো বড়ো হয়ে না যায়।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উল্লেখ যোগ্য কোন লেখালেখি হয়নি। সেটা ঠিক কথা। শেরালী উপন্যাস লিখেছি মুক্তিযুদ্ধের টুকরো টুকরো ঘটনার মালা গেঁথে। তার কিছু আমার দেখা কিছু শোনা। কিন্তু জহির কাকুর গল্পটা সেখানে জায়গা করতে পারলামনা! তাই গল্প লেখার অপচেষ্টা।
এই বিষয়টা নিয়ে উপন্যাস লিখতে গেলে খুব বেশী খাটাখাটনী লাগবে। তথ্য, পাত্রপাত্রীর অবস্থা জানার জন্য কারো সাথে কথা বলা দরকার। সেই রকম অনুসন্ধানী লেখার সুযোগ আমার নেই বললেই চলে।
আগে শেরালী আপনাদের হাতে দেই। তারপর নাহয় আরেকবার চেষ্টা করবো।
এই রকমের গল্প লিখে নিজেই তৃপ্তি পাই না। নতুন একটা উপন্যাসের চিন্তাই করছি। তবে মুক্তযুদ্ধ নিয়ে নয়। শুরুটা আসা করি কয়েকদিনের ভেতরেই করতে পারবো।
আপনার অনু গল্প কৈ?
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

বইখাতা এর ছবি

খুব ভালো লাগলো । এটা কি এখানেই শেষ ! তাহলে তো মনে হয় মেরে ফেললেন একটা খুব ভালো বড় গল্প বা উপন্যাসের প্লটকে।

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ বই(খাতাটা বাদ দিয়ে ডাকলে মাইনড করবেন নাতো?),
সত্যিই খুব ভাল একটা প্লট। সবাই যখন বলছেন, আমি ভাববো উপন্যাস না হোক অন্তত একটা বড় গল্প বানানো যায় কি না।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।