পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং নিয়ে আমার ভাবনা...

পুতুল এর ছবি
লিখেছেন পুতুল (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৫/০৭/২০১০ - ৫:৪৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ডিএনএ

পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং নিয়ে সচল তাসনীম ভাইয়ের এই লেখাটায় একটা মন্তব্য করে ফাইস্যা গেছি। সেই চিপা থেকে মুক্তির চেষ্টা হিসাবে এই লেখার অবতারনা। এই ধরণের লেখা জীবনে এই প্রথম এবং আশা করি এই শেষ। তাসনীম ভাইয়ের লেখায় আমার মুগ্ধ হতে অক্ষমতা প্রকাশ করা মন্তব্যের বিপরীতে অনেক মন্তব্য দেখে মনে হলো পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং-এর গুরুত্ব যাচাইয়ের আগে মলিকুলার বায়োলজি নিয়ে একটু কথা বলা দরকার। অপেক্ষাকৃত নতুন এই টেকনোলজির যাত্রা হয়েছিলো এক শতাব্দীরও আগে। ১৮৬৯ সালে Friedrich Miescher নামে এক সুইস চিকিৎসক রোগীর শরীর থেকে বের হওয়া পুঁজ নেড়েচেড়ে খুব সূক্ষ্ম কিছু আলাদা করে তার নাম দেন নিউক্লাইন। এর পর পঞ্চাশ বছর এই নিয়ে আর তেমন কোনো কথাবর্তা শোনা যায় নি। ১৯১৯ সালে চরকায় তেল ঢালেন Phoebus Levene নামের এক ভদ্রলোক এই বলে যে, ডিএনএ-র উপাদান; বেইস, চিনি এবং ফসফেট-রেস্ট। একের পর এক ফসফেট-রেস্ট জোড়া লেগে লম্বা একটা শিকল দিয়ে ডিএনএ তৈরি বলে তিনি দাবি করেন। এবং তার আঠারো বছর পর ১৯৩৭ সালে William Astbury এক্স-রে ফিল্মে ডিএনএ-র একটা ছবি তুলতে সক্ষম হন। এক গবেষক Pneumokokken নামের ব্যাকটেরিয়া যা ফুসফুসে রোগের সৃষ্টি করে, তার দুটো শাখা নিলেন। রোগ সৃষ্টিতে পারদর্শি ব্যাকটেরিয়ার গায়ে পলিসাখারিড-এর আচ্ছাদন থাকায় সে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তার নাম দিলেন তিনি S; মিউটেশনের কারণে পলিসাখারিড আচ্ছাদন হারিয়ে যে শাখা রোগ সৃষ্টিতে অক্ষম তার নাম দিলেন R. রোগ সৃষ্টিকারি S শাখা তাপ দিয়ে মারা হলো। মৃত S জীবিত R -এর সাথে মিলিয়ে তিনি ইঁদুরের শরীরে ঢুকালেন। ফুসফুসের রোগে ইঁদুরগুলো মরে গেলো। কারণ মৃত S-এর ডিএনএ জীবিত R গ্রহণ করে রোগসৃষ্টিতে সক্ষম হয়ে উঠে। ঘটনা ১৯২৮ সালের। ঘটনার নায়ক Griffith। Griffith-এর ধারণাকে সামনে রেখে ১৯৪৪ সালে Oswald Avery এবং তার সহকর্মীরা ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ পৃথক করতে সমর্থ হন। এবং প্রমাণ করেন যে, ডিএনএ-র মাধ্যমে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে ট্রান্সফরম হওয়া বা করা সম্ভব।

এর মাত্র সাত বছর পরে ১৯৫২ সালে Alfred Hershey এবং Martha Chase প্রমাণ করেন যে, ডিএনএ উত্তরাধিকার সূত্রে বাবা-মার শরীর থেকে সন্তানদের শরীরে বাহিত হয়। বলাই বাহুল্য, তাঁরা ব্যাক্টেরিয়ার উপর পরীক্ষা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন। পরের বছর ১৯৫৩ সালের ২৫শে এপ্রিল James Watson আর Francis Crick "নেচারে" তাদের ডিএনএ মডেল প্রকাশ করলেন। ডিএনএ-র গঠন অনেকটা দড়ির তৈরী মই-এর মতো। যা আবার কেউ যে কোন একদিক থেকে ঘুরালে যে প্যাঁচানো অবস্থাটা হবে তার মতো। মই-এর মাঝের ধাপগুলো (বুঝার জন্য আমরা ধরে নেই) হাইড্রোজেন কাঠি দিয়ে তৈরী। ছবিটা দেখলে সব পরিষ্কার হবে। এর পেছনে একটু ইতিহাস আছে। Erwin Cahrgaff এর সূত্র অনুযায়ী Rosalin Franklin এবং Maurice Wilkins ডিএনএ-র ক্রিস্টাল এক্সরে করে Erwin Cahrgaff-এর সূত্র সঠিক বলে প্রমাণ করেণ। এবং ডিএনএ-র সেই ছবিতে ডিএনএ-র ডাবলহেলিক্স তাঁরাই আসলে প্রথম আবিষ্কার করেন। Crick এবং Watson-এর উপস্থাপিত মডেল তাঁরা Rosalin Franklin এবং Maurice-এর এক্সরে ফিল্মেই প্রথম দেখতে পান। এই তথ্য-উপাত্ত সম্বল করে ইতিমধ্যে James Watson Francis Crick ডিএনএ-র মডেল নেচারে প্রকাশ করে ফেলেছেন। এই নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা এখনো হয়। গুয়ানিন, আডেনিন, তিমিন এবং সিস্টেসিন চারটা মলিকুল দিয়ে উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগৎ-এর সব ডিএনএ গঠিত। এদের যে কোন তিনটি মিলে একটা একক তৈরি করে। এমন কয়েকটা একক মিলে এমাইনো এসিড তৈরি করে। এদের ভেতর দায়িত্বহীন কিছু একক থাকতে পারে যাদের কোন কাজ নেই। বেকার অংশকে বলে Introns, কাজের একক অংশের নাম Extrons।Extrons-এর যে অংশ এমাইনো এসিড এনজাইম বা অন্য কোন প্রটেইন তৈরিতে ভূমিকা রাখে তাদেরকেই জিন বলে। একটা উদ্ভিদ বা প্রাণীর সবগুলো জিনকে বলে জিনোম। ডিএনএ হলো জিনোম নামের ইমারত-এর ইট। এদের ভেতর আবার জাতপাত আছে। সবাই নিজ নিজ পছন্দের পাত্র-পাত্রী বেছে জোড়া মিলে। এই পছন্দ অপছন্দের নাম Cahrgaff সূত্র। Erwin Cahrgaff দেখেন (A)আডেনিন+(T)তিমিন এবং (G)গুয়ানিন+(C)সিটোসিন হাইড্রোজেন দিয়ে যুক্ত। কিন্তু এতো কিছু জেনেও আমরা ডিএনএ সিকোয়েন্স বা জিনের ভেতর ডিএনএ গুলো কিভাবে সাজানো তাতো পড়তে পারছি না। তার কয়েকটি কারণের সব চেয়ে বড়টি হলো, ক্রমোজোমের ভেতর যতগুলো জিন আছে তাদের সাইজ বিশাল।

কিন্তু সব সমস্যারই এক সময় না এক সময় একটা সমাধান মানুষ খুঁজে পায়। নিরন্তর চেষ্টা করতে করতে Werner Arber, Daniel Nathar এবং Hamilton Othanel Smith দেখলেন ব্যাক্টেরিয়ার ভেতর এক ধরনের এনজাইম আছে, যা দিয়ে ব্যাক্টেরিয়া নিজের শরীরের অনুপ্রবশকারি ভাইরাসের ডিএনএ কেটে দেয়। এবং ডিএনএ-র যেখানে দু’দিক থেকে পড়তে একই রকম, যেমন CCCGGG GGGCCC এদের মাঝ খানে কাটে। এদের নাম রাখা হলো রেস্ট্রিকশন এনজাইম। এই কাজের জন্য উক্ত তিন বিজ্ঞানীকে ১৯৭৮ সালে নোবেল দিয়ে সম্মানিত করা হয়। বিজ্ঞানীরা আশার আলো দেখলেন এবং সে আলোতে এগিয়ে গেলেন অনেক দূর। এতদিনকার সঞ্চিত অভিজ্ঞতা সম্বল করে এগিয়ে এলেন নোবেল বিজয়ী রসায়ন বিদ Sanger। একই সময়ে Gilbet এবং তাঁর সহকর্মী Mixam ও সঠিক সমাধান নিয়ে এগিয়ে আসেন। যৌথভাবে তাদেরকে নোবেল দেয়া হয় ১৯৮০ সালে। Sanger-এবার নোবেল পেলেন দ্বিতীয় বারের মতো। কিন্তু তাদের পদ্ধতিতে সিকোয়েন্সিং করতে বা বেইস পেয়ারের সাজানোটা পড়তে অনেক সময় এবং খাটুনি লাগতো। পরে তাঁদের পদ্ধতি থেকে ধীরে ধীরে Sanger ব্যবহার বান্ধব হয়ে উঠলো। তার সাথে যুক্ত হলো Craig Vertar-এর Bioinfrmatic। শুরু হলো মলিকুলার বায়োলজির বৈপ্লবিক অধ্যায়। কথা অনেক বেড়ে যাচ্ছে, অথচ না বললেও সবটা বলা হয় না। এদিকে আরো কয়েকটা সমস্যার সমাধান করতেই হবে। তার মধ্যে সব চেয়ে সহজ হচ্ছে কোন উদ্ভিদ বা প্রাণীর ডিএনএ পৃথক করা। হামানদিস্তা দিয়ে ইচ্ছে মতো গুঁড়ো করে দুটি ধাপে কিছু রিয়েজেন্ট মিশিয়ে সেন্ট্রিফিউজ করলেই টেস্টটিউবে কিছু ডিএনএ পাব আমরা। আজকাল একটা মাত্র কোষের ডিএনএ দিয়েই কাজ চলে। সেটা কি করে? তার জন্য বেশ কয়েকটি পদ্ধতি আছে। সবগুলো আলোচনার দরকার নেই। কিন্তু পিসিআর (PCR) এর কথা বলতেই হবে।

Kary B. Mullis ডিএনএ-র খণ্ড গরম করে তাদের মাঝখানের হাইড্রোজেন বন্ধনটা ছুটিয়ে দেন। সাধারণত ৯৫° তাপমাত্রায় ডাবলহেলিক্স ছুটে একটি একটি করে ডিএনএ-র দুটো অর্ধেক হয়। তাপ একটু কমিয়ে এখন তাদের সাথে দিতে হবে প্রাইমার। প্রাইমারটা ডিএনএ-র এক সিঙ্গেল চেইনের একরকম কপিই বলা চলে। পিসিআর করার সর্ত হচ্ছে ডিএনএ-র সিকোয়েন্স আগে থেকে জানা থাকতে হবে। চেইন যে ভাবে লাগে অনেকটা সেভাবেই প্রাইমার এক সিঙ্গেল চেইন ডিএন-এর এক সিঙ্গেল চেইন মিলে নতুন একটি ডাবলহেলিক্স ডিএনএ তৈরী হবে। এই প্রক্রিয়ায় ডিএনএ-পলিমেরাজে নামে একটি এনজাইম অপরিহার্য। এতো উচ্চ তাপে স্টেবল পলিমেরাজে পাওয়া যায় থার্মোস আকোয়াটিকুস নামক ব্যাক্টেরিয়া থেকে, এরা প্রাকৃতিকভাবে গরম জলের ঝর্ণায় থাকে বলে এদের পলিমেরাজ প্রায় ১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায়ও নষ্ট হয় না। এভাবে আবার তাপ বাড়িয়ে নতুন ডাবলহেলিক্স খুলতে হবে। আবার নতুন প্রাইমার মিলে নতুন ডাবলহেলিক্স তৈরী হবে। ১, ২, ৪, ৮, ১৬... এভাবে ডিএনএ বাড়তে থাকবে। এখন ডিএনএ পাওয়া গেলো। বাকি রইল সিকোয়েন্সিং। এর প্রাথমিক অবস্থা আলোচনা না করে আমারা বর্তমান নিয়ে কথা বলি।

Sanger ভদ্রলোকের সিকোয়েন্সিং পদ্ধতিকে তাঁর নামে বা শটগান পদ্ধতি বলে সবাই চেনে। তিনি বেইস আবিস্কার করলেন, যে গুলোতে হাইড্রোক্সিল গ্রপ নাই। হাইড্রক্সিল গ্রুপ না থাকলে সেই বেইস-এর সাথে অন্য একটা বেইস জোড়া লাগে না। ডিএনএ-র নতুন ডাবলহেলিক্স যেখানে হাইড্রক্সিল গ্রুপ ছাড়া বেইস জোড়া লাগল, তার পর থেকে আর বড় বা লম্বা হবে না। A, G, T, এবং C এর জন্য তিনি এই রকম চারটা বেইস তৈরি করলেন। সংগত কারণেই তিনি তাদের নাম দিলেন (Didesoxyribonucleicacid) ddATP, ddTTP, ddGTP, ddCTP. এদেরকে আজকাল ফ্লোরোসেন্স দিয়ে রং করা হয়। এবং প্রতিটির রং দুনিয়ার সব মানুষ একই রাখে। যাতে বাংলাদেশে করা সিকোয়েন্স আমেরিকার বিজ্ঞানীরাও পড়তে পারেন। আগে পিসিআর থেকে পাওয়া অনেক ডিএনএ-র সাথে Didesoxyribonucleicacid মিশিয়ে আমরা আবার PCR করবো। এখন আগের PCR থেকে পাওয়া ডিএনএ-র সাথে একই পদ্ধতিতে Cahrgaff-এর সূত্রমতে A এর সাথে ddTTP মিলে গেলে T এর সাথে আর কোন A মিলবে না। কারণ ddTTP এখানকার T হাইড্রক্সিল গ্রুপ নাই। কাজেই ডিএনএ আর লম্বা হবে না। একই ভাবে চার রকমের চারটা Didesoxyribonucleicacid তাদের পার্টনারের সাথে বন্ধনে যুক্ত হয়ে ডিএনএ চেইন দীর্ঘ হওয়া বন্ধ করবে বিভিন্ন দৈর্ঘে। এই রিয়েকশনের নামই সিকোয়েন্সিং। এখন আগারোজে জেল দিয়ে চেইনগুলোর দৈর্ঘ এবং Didesoxyribonucleicacid এর রং অনুযায়ী তাদের সনাক্ত করা বা পড়া যাবে। এখন কাজটা ফুল অটোমেটিক পদ্ধতিতে হয়। সিকোয়েন্সিং মেশিনের কাপিলারের আগারোজে জেল এর ভেতর দিয়ে ঋণাত্বক ডিএনএ কেথডের দিকে যাওয়ার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পথে একটা জায়গায় লেজার Didesoxyribonucleicacid এর রং অনুযায়ী তাদের পিক এবং বেইস এর প্রথম ক্যাপিটাল লেটার কম্পিউটারের মনিটরে দেখায়। আমরা পেয়ে যাই ডিএনএ-র সিকোয়েন্স। এক সাথে ৯৬টা কাপিলার সম পরিমান ডিএনএ সিকোয়েন্স পড়া যায়। (বড় প্রজেক্টে যেমন হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট ৩৮৪ কাপিলার একই সময়ে পড়া যায়।) সাধারণত ২০ থেকে ৩০ জোড়া বেইস PCR এবং সিকোয়েন্স করা হয়। কিন্তু পাট বা হিউম্যান জিনোম সিকোয়েন্সিং-এ এর চেয়ে অনেক বড় কয়েক হাজার বেইস পেয়ার সিকোয়েন্স করতে হয়। যেহেতু আগে থেকে তাদের সিকোয়েন্স জানা সম্ভব নয়, তাই কাটা হয় ঘটনাক্রমে। কয়েকটি রেস্ট্রেকক্টিভ এনজাইম দিয়ে বিভিন্ন সাইজের ডিএনএ কাটার পর তাদের সিকোয়েন্সিংও হয় ঘটনাক্রম অনুযায়ি বিভিন্ন প্রাইমার দিয়ে। জিনোম সিকোয়েন্সিং এখানেই শেষ করি।

বলাই বাহুল্য এখানে অনেক খুঁটিনাটি বাদ দিয়ে কেবল সিকোয়েন্সিং-এর একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এবার আসি সিকোয়েন্সিং পাওয়ার পর তার ব্যবহারিক দিকে। কোন একটা জিনের একটা অবিকল কপির নাম ক্লোন। ক্লোনিং এর জন্য বহুল ভাবে ব্যবহৃত হয় ভাইরাস আর ব্যাক্টেরিয়া। ভাইরাস এখনো পর্যন্ত কেবল প্রাণীদেহের কোষেই ভেক্টর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। উদ্ভিদে ভাইরাস ভেক্টরের ব্যবহার এখনো অজানা। আমরা যেহেতু পাট উদ্ভিদের উপর জিন টেকনোলজি প্রয়োগের সম্ভাব্যতা এবং প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলতে চাই, সে জন্য এখানে উদ্ভিদের জিন টেকনিক নিয়েই কথা বলি। তার আগে পাট এবং তুলার কারিগরদের অবস্থাটা একটু দেখে নেই। যারা ঢাকায় থাকেন তাঁরা নিশ্চই দেখেছেন নীলক্ষেতের (জায়গাটার নামটাই কেমন যেন!) মোড়ে অনেকগুলো লেপ তোশকের দোকান আছে। সেই সব দোকানের কর্মচারীরা তুলোধুনো করে লেপ-তোশক-বালিশ বানায় আমাদের জন্য। তাঁদের আয় রোজগার সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নেই। তবুও ধরে নেই তাঁরা পেট ভরেই দু’বেলা ভাত খায়। তবুও তাদের এমন হাড় জিরজিরে অবস্থা কেন! হাড়ের উপড় চামড়ার ছাউনি ছাড়া আর কিছু নেই! তার কারণ; তুলার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা নিঃশ্বাসের সাথে ফুসফুসে যায়। তাবিজ-কবজ দিয়েও তাদের হাঁপানি রোগ আর ভালো হয় না। একই কথা খাটে পাটকলের শ্রমিকদের বেলাও। পাটতন্তুর ভেঙ্গে যাওয়া ক্ষুদ্র অংশ আবার তুলার চেয়ে এক কাঠি উপরে। পাটে তন্তুর এই ভেঙ্গে যাওয়াই পাটকে পাটের জায়গায় রেখে দিয়েছে। তার সাথে আছে আমাদের অপরিণামদর্শী রাজনীতির হতাশাব্যাঞ্জন সিদ্ধান্ত। এবং পাটের প্রতি আমাদের বিমুখতা। প্লাস্টিকের ব্যাগ ছেড়ে আমরা ক’জন পাটের থলে নিয়ে বাজারে যাই? পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহারে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। কৃষিতে জেনেটেনিকের ব্যবহারের বিপক্ষে যত কথা তার প্রায় পুরোটাই পরিবেশ নিয়ে। জেনেটিক মডিফাইড উদ্ভীদ বা প্রাণী নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী কোন স্টাডি সম্ভব হয় নি। তাঁর কারণ টেকনোলজিটা খুব নতুন। ১৯৮৬ সালে আমেরিকা পৃথিবীর প্রথম জেনেটিক মডিফাইড তামাক চাষ করে। বোঝাই যাচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদী পর্যবেক্ষণ অসম্ভব। আজকাল ধান, গম, আলু, সয়াবিন সহ আরো অনেক উদ্ভিদে জিন টেকনিক ব্যবহৃত হচ্ছে। পরিবেশের উপর তাদের প্রভাব অজানা বিধায় এ ধরণের উদ্ভীদকে প্রজননের অনুপযোগী করে বাজারজাত করা হয়। ফলে চাষীকে বারবার বীজ কিনতে হয়। আমেরিকায় অল্প সময়ের পর্যবেক্ষনে দেখা গেছে; ভুট্টার ক্ষতিকারক এক ধরনের পতঙ্গের বিরোদ্ধে বিষ উৎপাদনকারী জিন ট্রান্সপ্লান্ট করা ডিএনএ-র উৎপাদিত বিষ অন্য পতঙ্গ যারা ভুট্টার কোন ক্ষতি করে না বরং ভুট্টা সহ অন্য উদ্ভীদের পরাগায়নে সহায়তা করে, তারাও মারা যাচ্ছে। জেনেটিক ভাবে বিভিন্ন ক্ষমতায় তৈরি করা উদ্ভিদ তাদের বংশ বিস্তারে অন্য অনেক উদ্ভীদ-প্রাণীর চেয়ে দ্রুত বেড়ে কেবল তাদের মনো কালচার তৈরি করে ফেলতে পারে। এতে করে বিপন্ন হতে পারে ইকোসিস্টেম। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপাতত জিন টেকনিকের বিপক্ষে। এবং পাটের ক্ষেত্রে জিন টেকনিকের আপাতত কোন প্রয়োজন দেখছি না।

পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিংএ মুগ্ধ না হতে পারার কথাটা এখন বলি। পাটের জিনোম বা অন্য যে কোন উদ্ভীদ-প্রাণীর জিনোম সিকোয়েন্স করা আমার মতে এখন এমন কোন কঠিন কাজ বলে মনে হয় না। ড্রসফিলা মেলানোগাস্টারের জিনোম সিকোয়েন্সং-এ আমি নিজেই কাজ করেছি। যদিও আমি জিন টেকনিকের বিপক্ষে তবুও আমাদের পাটের উন্নয়নে এর ব্যবহার পাটের গুনগত মানের উন্নয়ন করতে পারলে খুশিই হতাম। খুশি হতাম বলছি কারণ; পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং করার চেয়ে কঠিন হলো, তার যে কোন জিন মডিফাই করা। বা জিন টেকনিক কাজে লাগিয়ে পাটের মান উন্নত করা। এ প্রসঙ্গে পাটের বর্তমান সমস্যা সংক্ষেপে বলে রাখা ভালো। এখন পাট যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থাতে পাটের চাহিদা বিশ্ববাজারে নিম্নগামী। তার বহুবিধ কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান হলো পাটের বিকল্প। নায়লন এবং এই ধরণের বহু অবিনাশী তন্তু। সস্তা এবং টেকসই-এর দিক থেকে অবিনাশী। প্লাস্টিকের পলিথিন ব্যাগ পাটকে সাধারণ মানুষের গৃহস্থালী থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করেছে। এর জন্য আমাদের দায় কিন্তু কোনভাবেই কম নয়। এ পথে বিস্তারিত বলার দরকার আছে বলে মনে করি না। আর দু’একটা কারণের মধ্যে উল্লেখ করতে হয় পাটকলগুলোর রক্ষনাবেক্ষণে অনিয়ম। শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি-জামাত সরকার পাটকল বন্ধই করে দিলেন। হাজার হাজার পরিবার নিজেদের প্রান্তিক চাষীদের সাথে মিলে বাড়িয়ে চললো ভূমিহীনের সংখ্যা। একই সময়ে বা আগে-পরে কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধ করে দিলেন আমাদের বিচক্ষণ সরকার। এতে লাভ হলো ভারতের। বাংলাদেশ কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় পাটের দাম উঠে গেলো আন্তর্জাতিক বাজারে শতকরা ৫০-১০০ ভাগ। যার পুরোটাই গেল ভারতের ঘরে। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উন্নত কোন পাটজাতদ্রব্যও বাজারজাত করা গেলো না। নতুন কর্মসংস্থান তো দূরের কথা। এভাবে আমাদের আমও গেল ছালাও গেলো। চাষীর পাট রইল গলার ফাঁস হয়ে। এ নিয়ে আর কথা না বাড়াই। সরকার যখন এতো ব্যয় করে পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং করিয়েছেন, তখন আশা করতে ভাল লাগে যে, তাঁরা পাটের উন্নয়নে আন্তরিক হবেন। সে আশায় মলিকুলার বায়োলজির ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা নিয়ে পাটের উন্নয়নে আমার দুই পয়সা যোগ করি। আমার দেখা পাটের তিনটা প্রজাতির কথা বলে নেই আগে। তারপর আমরা এগুবো এর থেকে কোনটা জেনেটিক মডিফাইড করলে আমাদের কাজটা সহজ এবং ফলাফল ভাল হবে।

ব্যাপকভাবে প্রান্তিক চাষীদের মধ্যে পাটকে নাইল্যা বলে অভিহিত করতে দেখা যায়। ইউকিতে দেখলাম নাইল্যা শব্দটা আরবি থেকে এসেছে এবং মিশরে পাটের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। চাষীরা পুরো উদ্ভিদটাকে নাইল্যা বলে। পাটের আঁশকে বলে পাট। নাইল্যা আবার তিন প্রকারের; ক) ছাঁটা নাইল্যা:- এই জাতের পাট উদ্ভিদের ডগার দিকে শাখা প্রশাখা থাকে। এবং খুব বেশী লম্বা হওয়ার আগেই শাখা প্রশাখা সহ পাটের কাণ্ডে ফুল এবং ফুল থেকে ফল হয়। জ্বালানি হিসাবে খুব ভাল হলেও পাট এবং পাটখড়ির উন্নত ব্যবহার তেমন দেখা যায় না। খ) দেশি নাইল্যা:- ব্যাপক ভাবে আবাদকৃত এই জাতের পাটে ডালপালা তেমন দেখা যায় না। পাটখড়ি থেকে পাট ছাড়িয়ে নেয়া খুব সহজ। কিন্তু লম্বায় ক প্রজাতির পাটের মতোই দেড় থেকে দুই মিটার লম্বা। ক প্রজাতির পাটের মতো বীজ বোনা হয় শুকনো জমিনে। কিন্তু বেড়ে উঠার জন্য বর্ষায় জমিতে স্বাভাবিক জলের প্লাবন অপরিহার্য। গ) বগি বা বঙ্গি নাইল্যা:- লম্বায় তিন মিটার পর্যন্ত হয়। কিন্তু কোন শাখা-প্রশাখা হয় না। ফুল-ফল দেরিতে হয় বলে বীজ সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করতে হয় কয়েক সপ্তাহ। এখানে দ্রুত ফলদায়ক পাটের অসুবিধাটা বলে রাখছি; ফল হয়ে গেলে জাগ দেয়া পাটখড়র কাণ্ড থেকে পাট ছাড়ানো কঠিন। পাটের ফলে আঁশ আটকে কাজটাকে কঠিন করে। জোড়ে টান দিতে গেলে ভেজা এবং নরম বিধায় পাটের ডগার অংশটা আঁশের সাথে ভেঙ্গে আসে। সেজন্যই ফুল থেকে ফল হওয়ার আগেই পাট কাটার হিড়িক পড়ে যায় কৃষকদের মধ্যে। আগেভাগে পাট কাটার আরো একটা কারণ বন্যা। যাই হোক সব দিক থেকে ভাল হচ্ছে এই বগি নাইল্যা। তার আরো একটা সুবিধা হলো এটা স্বাভাবিক জলে যেমন বাড়ে একদম জল না হলেও তেমনই বাড়ে। চাষ করে বীজ বোনার পরে সব ধরণের পাটেই সাধারণত তেমন কোন পরিচর্যার বালাই নেই। নেই কোন অতিরিক্ত সার বা কীট নাশকের ব্যবহার।

কথা বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু পাটের গুণাগুণ বর্ণনায় আমার মুগ্ধতা শেষ হচ্ছে না। জেনেটিক মডিফিকেশনের জন্য আমি গ প্রজাতির পাটকেই বেশী গুরুত্ব দিতে চাই। আমার ধারণা পাটের এই প্রজাতিকেই সিকোয়েন্স করা হয়েছে। হতে পারে ভিন্ন নামে। এবার আসি জেনেটিক ভাবে পাটের মডিফেকশনে। তাসনীম ভাইয়ের ঐ লেখাটায় এমন মন্তব্য দেখেছি যে, পাট থেকে তুলা উৎপাদন সম্ভব। একেবারে অসম্ভব তা বলব না। কিন্তু আমরা তুলাকে তুলাই রাখি। আর দেখি পাটের জিনে সম্ভাব্য কি মডারেশন সম্ভব। তার আগে ডিএনএ বা জিন ট্রান্সপ্লান্টাশনের কারিগরি দিকটা যাচাই করে নিই। এপ্লাই করা সম্ভব না হলে চিন্তা করে লাভ কী! উদ্ভিদের জিন ট্রান্সপ্লান্টেশনে যেহেতু এখনো কোন ভাইরাস ভেক্টরের ব্যবহার জানা নেই, কাজেই আমাদের দেখতে হবে আর কী পদ্ধতি আমরা ব্যবহার করতে পারি। উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকারক Agrobacterium tumefaciens নামে এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার ক্ষতিকারক জিনকে কেটে তার ভেতর উদ্ভিদের গুণগত মান উন্নয়নের জন্য নির্বাচিত জিনকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। উদ্ভিদের টিউমার সৃষ্টিকারী এই ব্যাক্টেরিয়ার প্লাজমিডকে Ti-Plasmid বলে। উদ্ভিদের নিজস্ব কোন প্লাজমিড নেই। সমস্যা হলো; জেনোমের যে কোন জায়গায় নির্বাচিত জিন স্থাপিত হতে পারে। এর ফলে ভুল জায়গায় নির্বাচিত জিন চলে গেলে কাংক্ষিত ফল তো পাবোই না বরং উল্টো কোন ক্ষতিকারক প্রবণতা দেখা দিতে পারে। এবার বুঝতেই পারছেন কতো বার চেষ্টা করতে হবে নির্বাচিত জিন সঠিক ক্রোমোজমের সঠিক এলাকায় পৌঁছাতে। এই পদ্ধতিতে ধান, গম বা বীজ থেকে মাত্র একটি ডগা নিয়ে অঙ্কুরোদগম করা উদ্ভিদে Ti-Plasmid কাজ করে না। কেন তা এখনো যানা যায় নি। বাল্যকালে একটি পাটের দু’টা পাতা ধরে নিয়ে এই পদ্ধতিটা উল্লেখ করলাম। আশা করি পাটে Ti-Plasmid-এর প্রয়োগ সম্ভব হবে। না হলে আর একটা পদ্ধতি আছে অপেক্ষাকৃত ব্যয়বহুল। তা ডিএনএ কামান নামে পরিচিত। নির্বাচিত ডিএনএ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধাতব গুঁড়ায় ( সাধারণত সোনা) মিশিয়ে বীজের গায়ে ঐ মিশ্রণের গোলাবর্ষণ করতে হয়। এখানেও অনেক বীজে নতুন জিন ঢুকিয়ে আশা করতে হয় যে, অন্তত একটা বীজের সঠিক জায়গায় আমাদের নির্বাচিত জিন পৌঁছেছে। এখানেও টেকনিকের খুঁটিনাটি বাদ দিলাম। এবার আসুন পাটের সম্ভাব্য জেনেটিক মডিফেকেশন কী হতে পারে একটু ভেবে দেখি।

এই ভাবনাটা ভাবছি এটা ধরে নিয়ে যে, পাট জেনোমের সকল জিন বা ডিএনএ-র সব ফাংশান আমরা জানি। এবং ধরে নেই পাটের আঁশ ভেঙ্গে যে ধুলো ছড়ায় সে জিনটা পাট জেনোমের কোথায় তাও আমরা জানি। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে সোনালি আঁশকে রেশমের মতো করে তোলা। সিল্কের কাপড় এতো মিহি এবং আরামদায়ক। তন্তু যত চিকনই হোক ভাঙে না। যে গুটি পোকা মুখের লালা দিয়ে রেশম তৈরি করে তাদের জিনোমটাও সিকোয়েন্স করে নিতে হবে। এবং খুঁজে বের করতে হবে গুটি পোকার কোন জিন লালাটা তৈরি করে। এখন সে জিনটা পাটের জেনোমে ঢুকিয়ে দেখা যেতে পারে, পাট সিল্কের মতো রেশমি কোমল ঝলমলে হয় কি না। বুঝতেই পারছেন কাজটা খুব সহজ না। এখন আমরা যা করতে পারি তা হলো সম্ভাব্য সব জায়গায় পাটের ব্যবহার নিশ্চিৎ করা। কাল থেকে পাটের থলে নিয়ে বাজারে যাবেন। কনডম ছাড়া আর কোন জিনিস পলিথিন দিয়ে প্যাকেট করা থাকলে বর্জন করুন। প্রস্তাব, পরামর্শ বা প্রশ্ন যা-ই হোক বলে ফেলুন নির্দ্বিধায়। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আগ্রহীরা ইংরেজি নামগুলো কপি করে গুগল মামাকে জিজ্ঞেস করলে অনেক বিস্তারিত ভাবে আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন। ধৈর্য নিয়ে এতো লম্বা লেখা পড়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

এক নিশ্বাসে পড়ে গেলাম। যুক্তি ঠিকাছে। কঠিন একটা বিষয় কে সাবলিল ভাবে তুলে দরার জন্যে ধন্যবাদ।

শাফি।

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ শাফি ভাই।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

বিলাশ [অতিথি] এর ছবি

জেন জিনিসটা কী?

আলমগীর এর ছবি

ভালো লেখা চলুক
অনেক কিছু জানতে পারলাম। আপনি ব্যক্তিগতভাবে জিন মডিফিকেশন পছন্দ করেন না। পাটের সেকুয়েন্সিং অপছন্দ হওয়ার এ একটা মাত্র কারণ ছাড়া আর কিছু পেলাম না। তবে শেষে এসে আবার জিএম করার কথা বলেছেন।

আপনি বলছেন সেকুয়েন্সিং এখন তেমন কোন কঠিন কাজ না। অথচ, ড. মাকসুদ বলেছিলেন মালয়েশিয়া বহু অর্থ ব্যয় করেও এখনও রাবারের সেকুয়েন্সিং করতে পারেনি।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এটা কিন্তু টেকনোলজির বিপরীতে একধরনের সুক্ষ্ম গোঁড়ামি। কেনো এক্সপ্লেইন করি।

যত দিন যাবে মানুষ প্রকৃতির কাছ থেকে নিজেদের পরিবর্তনের দায় নিজেরাই নিয়ে নেবে। হাত কেটে গেল নিজেই হাত গজিয়ে নেবার টেকনলজি আবিষ্কার করে ফেলবে। ফিটাল শিশুদের মায়ের পেটের বাইরে জন্ম দিবে যাতে মস্তিষ্কের আকৃতি বড় হয়। জিন বদলে নেবে যাতে সন্তানের শক্ত জিনেটিক রোগ না হয় (যেমন প্রোজেরিয়া)। ডিজিটাল ইন্টারফেসে সাথে যুক্ত হতে পরিবর্তন করবে নার্ভাস সিস্টেম।

মানুষ প্রকৃতির সাথে টিকে থাকার যুদ্ধ করত একসময়। কিন্তু এখন মানুষ করছে প্রকৃতির সাথে প্রতিযোগীতা। এই প্রতিযোগীতায় মানুষের জয় হবেই। এই পরিবর্তনগুল অবশ্যম্ভাবী। সুতরাং এমব্রেইস ইট। চোখ টিপি

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

আরিফ জেবতিক এর ছবি

এটা নিয়া আমার কিছু আফসোস আছে। মাঝে মাঝেই মনে হয়, ২শ বছর পরে জন্মালে কতোই না লাভ হতো। এই যে আমার দাদার দাদা, উনি এটা জীবনেও জানতে পারবে না যে দুনিয়ায় এরোপ্লেন আবিস্কার হইছিল, কিংবা মানুষ চান্দে যাইতে পারে।

কতো কিছু না জাইনা মরে যাইব।
একদিন হয়তো রাস্তাঘাট লাগবে না, ইমেলের এটাচমেন্ট হয়ে মানুষ একজনের বাসা থেকে আরেকজনের বাসায় গিয়ে হাজির হবে। অথচ আমি দেখতে পাব না। কোনো মানে হয়!

পুতুল এর ছবি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ,
মানুষ কিন্তু প্রকৃতি থেকে প্রয়োজনীয় বা অধিকতর উপযোগী উপাদান নিজেদের সুবিধার জন্য বহু আগেই নির্বাচন করা শুরু করেছে। বলা যায় যাযাবর জীবন ত্যাগ করে স্থায়ী ভাবে বসবাসের সময় থেকেই। গৃহপালিত পশু বা অপেক্ষাকৃত উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ এখনো চলছে।

জিন বদলে নেবে যাতে সন্তানের শক্ত জিনেটিক রোগ না হয় (যেমন প্রোজেরিয়া)।

জিন বদলে নেবার বা ডিজাইনার বেবীর প্রজুক্তি হয়তো একদিন আবিষ্কার হবে, কিন্তু এখনও কিন্তু বিশেষ করে পেশা সফল বাবামা জন্মের আগে শিশুর ক্রমোজোম দেখে নেন। পেশা সফল বললাম এই কারণে যে, কেরিয়ার গড়তে গিয়ে সন্তান নিতে বয়স বেড়ে যায়। বাবমায়ের বয়স বাড়ার সাথে সাথে সন্তানের জেনেটিক রোগ হওয়ার সম্ভবনাও বেড়ে যায়। কাজেই সর্তকতা হিসাবে তাঁরা ভ্রুনের কারিওগ্রাম (ক্রোমোজোমের সংখ্যা এবং সাইজ) দেখে নেন।

সন্তানের ত্রিজমি ২১ বা এ জাতীয় আরো বেশ কয়েকটি রোগ এই অবস্থায় নির্নয় করা যায়। এখন কথা হলো রোগ নিয়ে জন্মানো শিশুর কি পৃথিবীতে আসার অধিকার নেই? অবশ্য ক্লোন করে মানুষ জন্মানোর মতো টেকনোলজি হাতে নিয়ে মানুষ এমন রিস্ক কেনো নেবে!

বিকলাঙ্গ মানুষকে কোন পাপের ফলে ঈশ্বর দুনিয়তে পাঠায়, এমন ধারণা সব সংস্কৃতিতেই ছিল। কাজেই পূণ্যবান মানুষে পৃথিবী ভরে উঠুক এই কামনা আমরা করতেই পারি।

মানুষ প্রকৃতির সাথে টিকে থাকার যুদ্ধ করত একসময়। কিন্তু এখন মানুষ করছে প্রকৃতির সাথে প্রতিযোগীতা। এই প্রতিযোগীতায় মানুষের জয় হবেই। এই পরিবর্তনগুল অবশ্যম্ভাবী। সুতরাং এমব্রেইস ইট।

মানুষ প্রকৃতিকে প্রতিপক্ষ ভেবে নিজের বিরোদ্ধে বৈরি করে তুলেছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর ফল ভোগ করছে এবং করবে প্রকৃতি বান্ধব বাংলাদেশর মানুষ। যদি আর্কটিকের বরফ গলে সমুদ্র সমতল উঁচু হয় এবং স্থায়ি ভাবে বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চল লবনাক্ত নোনা জলের নীচে চলে যায়। এর পেছনে কিন্তু প্রকৃতির বিরোদ্ধে প্রতিযোগি মানুষের অবদান কম না। টেকনোলজির বিপরীতে একধরনের সুক্ষ্ম গোঁড়ামি করার মতো কিছু নাদান যদি প্রকৃতির বিপক্ষে অফেরতযোগ্য কিছু সিধান্ত নিতে আর একবার ভেবে দেখতে বলে তো ক্ষতি কী?

**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

পুতুল এর ছবি

শেষ থেকে শুরু করি। রাবার গাছের প্রযনন সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। পাটের মতো বীজ থেকে বংশবিস্তার হয় কী না, জানি না। কিন্তু হিউম্যান জিনোম প্রজেক্টের পর আর কোন জিনোম সিকোয়েন্সিং অসম্ভব বলে মনে হয় না।

এখানে জেনোম সিকোয়েন্সিং নিয়ে একটা কথা বোধ হয় বলে নেয়া ভাল। কাজটা কঠিন নয় বলতে বোঝাতে চাই যে, এই কাজটা করতে নতুন কোন টেকনোলজি উদ্ভাবনের দারকার হয় না। তার মানে এই নয় যে, জিনোম সিকোয়েন্সিং এর কাজটায় কোন পরিশ্রম নেই। কাটা কাটা জিনের আংশ সিকোয়েন্স করে, কম্পুতে আবার জোড়া লাগাতে হয়। এভাবে জোড়া লাগিয়ে লাগিয়ে পুরো ক্রমোজোম গুলো তৈরী করতে হয়। এর আগে সিকোয়েন্সিং তো করতেই হবে। কাজেই কাজটা সহজ মানে এই নয় যে, এই ধাপ গুলো বাদ দিয়ে করা যাবে।

চেষ্টা করেছি বোঝাতে যে, জিনোম সিকোয়েন্স আরো অনেক মানুষ করেছে। এটা নতুন কোন আবিষ্কার নয়। নতুন আবিষ্কার হতো যদি পাটের জিনোমে রেয়ন উৎপাদন কারী গুটাপোকার ডিএনএ লাগিয়ে পাটের সাথে রেয়নের গুনাগুন যোগ করা যেতো।

সবকিছু বলতে গিয়ে কোন কিছুই ঠিকমতো বুঝানো সম্ভব হলো না। আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। যা বলতে চেয়েছি তা অনেকটা এ রকম; ধরুন আমরা পাটের জিন-এ বিছা (এক ধরণের হলদে পোকা যা, পাটের পাতা খেয়ে ফেলে। চাষীরা পাট ক্ষতে এই পোকার আক্রমন ঠেকাতে ছাই ছিটিয়ে দেয়। এবং এতে খুব ভাল ফল পাওয়া যায়।) প্রতিসেধক জিন ঢুকিয়ে দিলো। কিন্তু সে জিন থেকে নিসৃত বিষ শুধু বিছার জন্যই ক্ষতিকারক না হয়ে অন্য অনেক কীট-পতঙ্গকেও মেরে ফেলতে পারে। ভূট্টা ক্ষেতে এ ধরণের জিন-এর প্রয়োগে এমন ফলাফরই দেখা গেছে। এখন ধরি আমাদের পাটের সংযোজিত জিন-এর নিসৃত বিষ মাকর্শাকে মেরে ফেলে। মাকর্শা না থাকলে মশা এবং এই জাতীয় ছোট প্রজাতির পোকা বেড়ে যাবে। আর মাকর্শাকে খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে এমন প্রাণী যেমন ছোট মাছ, মাকর্শার বিলুপ্তির সাথে তাদেরও বিলুপ্তি ঘটতে পারে। বেড়ে যেতে পারে এমন সব প্রাজাতির প্রাণী, যারা ওকো সিষ্টেমের জন্য ক্ষতি কারক।

পাটের বা অন্য যেকোন উদ্ভীদ বা প্রণীর জেনেটিক মডিফিকেশন এই সব কারণে আমার কাছে রিস্কী মনে হয়, এখনো। শেষের দিকে যেখানে পাটের জিনোমে রেয়নের গুটিপোকার জেন ট্রান্সপ্লান্টাশেনের সুপারিশ করেছি, সেখানে শুধু গুনগত মানের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে। এবং এই ধরণের ট্রান্সপ্লান্টাশেনে ওকো সিস্টেমে প্রভাব খুব কম হওয়ার কথা।

সব শেষে বলছি; বিজ্ঞান যেহেতু কোন ধর্ম না, সে জন্য এখানে খুব কট্রর কিছু নেই। যে কারণে জেন মডিকেশনের বিপক্ষে, সে কারণ গুলোর সমাধান পেয়ে গেলে এর বিপক্ষে থাকার মতো গোয়ারও আমি না। আশা করি আমার অবস্থান কিছুটা পরিস্কার করতে পেরেছি।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আলমগীর ভাই।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

হিমু এর ছবি

পাটে আসলে জেনেটিক পরিবর্তনটা একটু অন্যরকম করা হতে পারে। পাটের ছালে লিগনিনের পরিমাণ কমানোটা শুনলাম প্রাথমিক টার্গেট। পোকামাকড়ের জন্যে "বিষ" তৈরি করার জিন পাটের মধ্যে ঢোকানোর চেয়ে ফেরোমোন ট্র্যাপ ব্যবহার করা সহজ আর সস্তা হতে পারে। সেক্ষেত্রে কেবল ক্ষতিকর পতঙ্গটিকেই পাট থেকে সরিয়ে নেয়া যাবে।

তবে যে কোনো জেনেটিক পরিবর্তন করতে গেলেই বিপুল পরিমাণ কাজ করতে হবে। সেটা শুরু করার জন্যে উপযুক্ত ক্ষেত্র দেশে তৈরি হয়েছে, এমনটা মনে হয় না।

গোটা ব্যাপারটা এখন এরকম, একটা বিরাট বইয়ের হরফগুলো কম্পোজিটররা সাজিয়েছেন। তাতে কোটি কোটি হরফ। এর মধ্যে কয়েকশো হরফ পাল্টে দিতে হবে। কোথায় পাল্টাতে হবে, সেটা এখনও কেউ জানেন না। ঐ পাল্টানোর জায়গাটা খোঁজা এখন আসল চ্যালেঞ্জ। পাল্টে কী ঢোকাতে কী হবে, সেটা আরেকটা আসল চ্যালেঞ্জ।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

পুতুল এর ছবি

কোথায় পাল্টাতে হবে, সেটা এখনও কেউ জানেন না। ঐ পাল্টানোর জায়গাটা খোঁজা এখন আসল চ্যালেঞ্জ। পাল্টে কী ঢোকাতে কী হবে, সেটা আরেকটা আসল চ্যালেঞ্জ।

সেটা করতে পারলে মুগ্ধ হতাম।
পাটের ছালে লিগনিনের পরিমাণ কমানোটা শুনলাম প্রাথমিক টার্গেট।

লিগনিন শব্দটার অর্থ অনুমানে ধরে নিচ্ছি ঐ পাটের আঁশের ভেঙে যাওয়া। এই সমস্যাটার সমাধান করা গেলে পাট শিল্পে সত্যিই বিপ্লব সাধিত হবে।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

হিমু এর ছবি

না, লিগনিন সম্ভবত পাটের ছালের প্রোটিন। ছালে লিগনিন বেশি থাকলে পাট পঁচাতে বেশি পানি আর সময় লাগে।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

লিগনিন একটা শর্করা। এটার বিশেষত্ব হচ্ছে গাছের এই উপাদানটি বেশিরভাগ জীবানু ব্যবহার করতে (পচাতে) পারেনা। এই বস্তুটি পচাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফাঙ্গাসের উপর নির্ভর করতে হয়। আর পাট যেরকম পরিবেশে পচানো হয় সেরকম পরিবেশে খুব বেশি ফাঙ্গাসও থাকেনা। তাই লিগনিন পচতে দেরি হয়।
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

পুতুল এর ছবি

এখন বুঝলাম, ধন্যবাদ অনার্য সঙ্গীত।
আচ্ছা পাটের উপর আপনি একটা লেখা দেন না মিয়া।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ফারুক হাসান এর ছবি

জিন মডিফিকেশনের যে ক্ষতিকর দিকের কথা বললেন সেটাতো আগে থেকেই যাচাই বাছাই করা সম্ভব। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিংবা খারাপ প্রতিক্রিয়া থাকলে সেটা পাবলিক ডোমেইনে ছাড়ার আগে ল্যাব এবং পাইলট স্কেলেই তা ধরা পড়ার কথা। এবং প্রয়োজন তখনই ব্যবস্থা নেয়া।

পুতুল এর ছবি

ফারুক ভাই,
ল্যাব এবং পাইলট স্কেল খুব আদর্শ পরিবেশে করা হয়। এর আগে যারা এই কাজ করেছেন তারাও সব ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই করেছিলেন। যাই হোক আমাদের জন্য এমন নেগেটিভ প্রভাব না আসুক, সেটাই কামনা করি।

**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ফারুক হাসান এর ছবি

পোস্টটি তথ্যবহুল এবং আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। একটানে পড়ে গেলাম। পুতুল ভাইয়ের কাছে এরকম আরো পোস্ট নিয়মিত আশা করছি।

পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং যদি কঠিন কোনো কাজ নাও হয়, তবু আমি বলবো বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে যে কাজটি হয়েছে তার গুরুত্ব অপরিসীম। সবকিছুরই একটা শুরু আছে। সেই শুরুটাই পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রজেক্টের মধ্য দিয়ে হয়েছে। জিন মডিফিকেশন অবশ্যই কঠিন এবং অনিশ্চিত একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু এই পোস্টেই তো এর কয়েকটি উপায়ের কথা বলা হয়েছে। আমাদের জন্য এই মুহুর্তে যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো এই বিষয়ে গবেষণা ও অবদান রাখার জন্য প্রয়োজনীয় এবং দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। আমি মনে করি, পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রজেক্টের হাত ধরেই সেই কাজটি আরম্ভ হয়েছে।

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ ফারুক ভাই,

আমাদের জন্য এই মুহুর্তে যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো এই বিষয়ে গবেষণা ও অবদান রাখার জন্য প্রয়োজনীয় এবং দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। আমি মনে করি, পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রজেক্টের হাত ধরেই সেই কাজটি আরম্ভ হয়েছে।
তাই যেন হয়।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

হিমু এর ছবি

জিনোম সিকোয়েন্সিঙের ফলে যদি মেধাসত্ত্ব পায় বাংলাদেশ, খারাপ কী? আর এটা বড় একটা কাজের শুরুর ধাপ।

তবে আমি মনে করি, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট আরো কিছু সরলতর গবেষণার উদ্যোগ নিতে পারে। যেমন পাটের আঁশ পঁচানোর কাজে কোন অণুজীবটি সবচে বেশি কার্যকর, সেটি নিয়ে গবেষণা হতে পারে। এই অণুজীবের একটি স্ট্রেইন ডেভেলপ করা যেতে পারে, যেটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে ব্যবহার করা হবে পাট জাগ দেয়ার কাজে। পাটের ডিএনএতে বেলস অ্যান্ড হুইসলস যোগ করার পাশাপাশি এই অণুজীবগুলোকেও পাট পঁচানোর কাজে সুপারহিরো হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে কম পানিতে, কম সময়ে আরো ভালো মানের আঁশ পাওয়া যায়। অনার্য সঙ্গীতের সাথে কথা বলছিলাম এ নিয়ে, সে এমন বুদ্ধিই দিলো।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

পুতুল এর ছবি

তবে আমি মনে করি, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট আরো কিছু সরলতর গবেষণার উদ্যোগ নিতে পারে। যেমন পাটের আঁশ পঁচানোর কাজে কোন অণুজীবটি সবচে বেশি কার্যকর, সেটি নিয়ে গবেষণা হতে পারে। এই অণুজীবের একটি স্ট্রেইন ডেভেলপ করা যেতে পারে, যেটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে ব্যবহার করা হবে পাট জাগ দেয়ার কাজে। পাটের ডিএনএতে বেলস অ্যান্ড হুইসলস যোগ করার পাশাপাশি এই অণুজীবগুলোকেও পাট পঁচানোর কাজে সুপারহিরো হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে কম পানিতে, কম সময়ে আরো ভালো মানের আঁশ পাওয়া যায়। অনার্য সঙ্গীতের সাথে কথা বলছিলাম এ নিয়ে, সে এমন বুদ্ধিই দিলো।

কতো যুগ থেকে বাংলাদেশে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট আছে জানি না। কিন্তু তাদের কোন কাজ আছে এমন নজির দেখি নাই। অনার্য সঙ্গীতের পরামর্শমতে এমন ছোট ছোট এফেক্টিভ অনেক পদক্ষেপই নেয়া যায়। জিন টেকনোলজি আবিষ্কারের আগেও চাষাবাদে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহার ছিল। মডিফাইড পাট পাওয়ার আগেও তো আমাদের পাট চাষ করতে হবে। তো এখন অনার্য সঙ্গীতের প্রস্তাব মতো কাজগুলো করলে ক্ষতি কী!
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

দ্রোহী এর ছবি

এমনিতেই বাংলাদেশে পৃথিবীর সবচাইতে উৎকৃষ্টমানের পাট উৎপন্ন হত। তারপরও আমাদের পাটশিল্প মৃত।

আজ পাটের জিনোম সিকোয়েন্সের পাঠোদ্ধার হয়েছে। হয়তো অচিরেই রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ টেকনোলজি ব্যবহার করে পাটের গুণগতমান আরো উন্নত করা হবে। কিন্তু কথা হচ্ছে পাট শিল্পকে পূণরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা না নিলে মঙ্গল গ্রহ থেকে পাট নিয়ে আসলেও আমাদের পাট শিল্প যেমন আছে তেমনই থেকে যাবে।


কি মাঝি, ডরাইলা?

পুতুল এর ছবি

পাট শিল্পকে পূণরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা না নিলে মঙ্গল গ্রহ থেকে পাট নিয়ে আসলেও আমাদের পাট শিল্প যেমন আছে তেমনই থেকে যাবে।

মাঝি,
নারায়ণগঞ্জকে এক সময় বাংলাদেশের ডাণ্ডি বলা হতো। এবার বুঝেন ঠেলা! আমাদের পাট, নারায়ণগঞ্জ থেকে নৌপথে দেশের বিভিন্ন কলে পৌঁছত, তার বিশালতা তুলনা করা হতো অন্যদেশের একটা শহরের পাটের আমদানী-রপ্তানীর সাথে। যে দেশে কোন পাট হয় না। পাট একটা শিল্প, এই বিষয়টাই আমরা বুঝতে পারি নাই। পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিংর মাধ্যমে এই শ্লোগানটা আমাদের মাথায় ঢুকলেই একটা বড় কাজ হবে।

**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

পাঠক [অতিথি] এর ছবি

আমি ব্যক্তিগত ভাবে আপাতত জেন টেকনিকের বিপক্ষে।

টিভিতে এনিম্যাল ফার্ম ডকুমেন্টারি দেখে জিএম ফুড/জিন টকনোলজির ফ্যান বনে গেছি।

মাইকেল স্পেক্টারের টেড টকেও সেরকমই হিন্টস পেলাম।

"বেশীদিন পর্যবেক্ষন করা হয়নি" ছাড়া আর কোন উপযুক্ত কারন আছে কি?

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ পাঠক ভাই,
উপরের আলমগীর ভাইয়ের মন্তব্যে জবাবে কিছু কথা বলেছি আর মূল লেখাটায়ও একটা পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ আছে। তা ছাড়া আর কোন প্রমান নাই। মন্তুব্যের জন্য ধন্যবাদ।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

চলুক অপেক্ষা করে ছিলাম। লেখাটা ভাল লেগেছে পুতুল ভাই। অনেক বিষয় কভার করেছেন। কিছু কিছু জায়গা বুঝতে কঠিন লাগল, পরে সময় নিয়ে গুগল করে দেখব। এই ধরণের লেখার এটাই শেষ না হয়ে বরং এমন লেখার এটাই শুরু হলে চমৎকার হয়। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ব্যস্ততার মাঝে সময় বের করে লেখবার জন্যে। হাসি
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

পুতুল এর ছবি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার, ভাই ধন্যবাদ। খুব সংক্ষেপ করতে গিয়ে কিছু কিছু যায়গা একটু জটিল হয়ে গেছে। দেখি আর কোন টপিক মাথায় আসলে লেখব।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

সিরাত এর ছবি

"গুয়ানিন, আডেনিন, তিমিন এবং সিস্টেসিন চারটা মলিকুল দিয়ে উদ্ভিদ এবং প্রণীজগৎ-এর সব ডিএনএ গঠিত।"

পুতুল ভাই আমি এই জায়গাটা পড়ে মাত্র ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলাম। মনে মনে অনেক হাসলাম। চোখ টিপি

বাকিটা পড়ি।

কৌস্তুভ এর ছবি

উমম... ফসফেট আর সুগারের শিরদাঁড়াটা বাদ পড়ে গেল যে... তবে ওগুলো অবশ্য দুধভাত...

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটা অনেক আগেই ভালো মতো পড়েছি। সম্ভাবনাময়। বিস্তারিত লিখার
জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক।
Email:md.shafiuddin@gmail.com

পুতুল এর ছবি

পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

কৌস্তুভ এর ছবি

পুতুল আপনি অনেক পরিশ্রম করেছেন এত বড় লেখাটা লিখতে, তবুও একটা ছোট্ট অনুযোগ করি, বানান ভুলগুলো চোখে লাগছে, জেন ইত্যাদি।

পিসিআর আর সিকোয়েন্সিং দুটো একটু তাড়াহুড়োয় লিখেছেন মনে হল, বা চেপেচুপে দিয়েছেন বলে, অন্যগুলোর চেয়ে একটু কম সহজপাঠ্য।

আপনার মূল বক্তব্যে আসি। আপনি বলছেন যে এক্ষুণি জিন ইঞ্জিনিয়ারিং কতটা করা যাবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। মানলাম। তাই আপনার বক্তব্য এই মুহূর্তে জিনোম সিকোয়েন্সিং করে কোনো লাভ নেই। এটায় কিঞ্চিৎ দ্বিমত করি। পাট নিয়ে কোনো ধরনের আধুনিক গবেষণা করতেই যেহেতু তার জিনোম সিকোয়েন্সটা প্রয়োজন, তাই সেটা করে রাখলে তো ভালই। কাজটা তো খুব সহজসাধ্য নয়। তবে হ্যাঁ, আপনি বলতে পারেন, এক্ষুণি যদি আর কোনো গবেষণা না-ই করা হয়, তাহলে এখন সিকোয়েন্সিং করে কি লাভ, ভবিষ্যতে করলে তখন সস্তা পড়ত, এখন এই টাকাটা অন্য জনকল্যাণের খাতে ব্যয় করা যেত। তাহলে আর কি বলি...

অফটপিক: আপনি ভাই না আপা?

পুতুল এর ছবি

সচলবোন বুনোহাঁস ব্যক্তিগত মেসেজে ভুল বানানের তালিকাটা পাঠিছে। এই সুযোগে তাকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে নেই। আশা করি এখন আর তেমন বেশী বানান ভুল নেই।

কৌস্তুভ ভাই, আমাকে আপনি পুতুল ভাই ডাকতে পারেন।
লেখাটা শেষ করার একটা তাড়া ছিলো। প্রথমে ভেবেছিলাম কয়েকপর্বে ভাগ করে দেবো। পরে দেখলাম বেশীর ভাগ পাঠকের এই বিষয়ে তেমন অভিজ্ঞতা নেই। শেষ পর্বে এসে মন্তব্য করতে আবার প্রথম পর্বে ক্লিক করতে হবে। আর খেই হাড়িয়ে ফেলবে সহজে। তা ছাড়া এই লেখাটা ঠিক প্রটোকল টাইপেরও না। পাঠককে একটু ধারণা দেয়ার জন্য লেখা। কিন্তু এতোসব ভেবে চিন্তে লিখতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটাই একটু দুর্বোধ্য হয়ে গেছে।

এবার মূল বক্তব্য নিয়ে বলি;
আমি বলতে চেষ্টা করেছি; পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং হয়েছে, সেটা নিয়ে আমি মুগ্ধ হতে পারি নি। কারণ আমার মতে প্রচুর খাটুনি হলেও কোন উদ্ভিদ বা প্রাণীর জিনোম সিকোয়েন্সিং একশভাগ একক বা মৌলিক কোন আবিষ্কার নয়। এই পদ্ধতির ব্যবহার অনেকে করেছেন। যদিও পাটের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার এই প্রথম।
মুগ্ধ হতাম বা হবো যদি এই সিকোয়েন্সিং কাজে লাগিয়ে পাটের মান উন্নয়ন সম্ভব হয়।
আমাদের গোটা দেশটায় এর আগে একটা সেন্ট্রিফিউজ পর্যন্ত ছিল না! আপনি জানেন উন্নত দেশগুলোর প্রতিটা বায়োলজি বিভাগে জিনোম সিকোয়েন্সিং হচ্ছে। প্রাণীর ভেতর ড্রসোফিলা আর উদ্ভিদের ভেতর তাথিয়ানা আরাবি ডপসিস পৃথিবীর সব চেয়ে বহুল পঠিত বা সিকোয়েন্সিত জিনোম। প্রথমটার বয়স অনুমান দশ মিলিয়ন বছর। পরেরটার কম/বেশী তিরিশ মিলিয়ন।
এখন একটা দেশে মলিকুলার পর্যায়ে জীব/উদ্ভীদ বিজ্ঞান চালু করতে হলে যেহেতু অনেক টেকনিক/ইকুইপমেন্টের জন্য অন্যের উপর নির্ভর করতে হয়, সেহেতু যুক্তিযুক্ত হতো যদি আমরা বহুল পঠিত ঐ প্রাণী এবং উদ্ভিদের জেনোম বা জিন সিকোয়েন্স করতাম। আমারদের সঠিক বা ভুল গুলো ইন্টার নেটেই যাচাই করে নিতে পারতাম। ড্রসফিলা ছোট প্রাণী। কয়েক সপ্তাহে পাওয়া যায় পরের জেনারেশন। এর জন্য থার্মাল সাইক্লেলারই ( RT-PCR) সিকোন্স করতে যথেষ্ট। আমি বলতে চাই, আমরা অনেক অল্প খরচে অনেক ছাত্রী/ছাত্রকে মলিকুলার পর্যায়ে বায়োলজি পড়াতে পারতাম। এবং তখন অনেক মানুষ বিজ্ঞানের এই নতুন শাখায় শিক্ষিত হয়ে, পাটের জিনোম সিকোয়েন্সির চেয়ে বড় বা ভাল কাজও হয়তো করতে পারতো। পাটের জিনোম থেকে সুফল পেতে অপেক্ষাতো আমাদের করতেই হচ্ছে। আরো কিছুদিন অপেক্ষা করলে ক্ষতির কিছু ছিল কী? ডঃ মাকসুদুল আলম সাহেব পাটের জিনোম সিকোয়েন্স করে আবার প্রবাসে। এখন বাকি কাজটা করবে কে? বা এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য আমাদের কেবল একজনই মানুষ থাকবে কেন?

জবাব অপ্রাসংগিক হয়ে যাচ্ছে, দুঃক্ষিত। কিন্তু মূল বিষয় "পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং-এর সাথে কোন বিরোধ নেই। আশার কথা এই টেকনোলজিটা অন্তত আমাদের দেশে এখন পৌঁছেছে।

খুব মনোযোগ দিয়ে লেখাটা পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

অর্হদেকের বেশী জিনিসই আমার মাথার ওপর দিয়া গেল...

---থাবা বাবা!

পুতুল এর ছবি

সরি, আরো সহজ করে লেখা উচিৎ ছিল।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

আরিফ জেবতিক এর ছবি

প্রিয় পোস্টে রাখলাম। তথ্যবহুল লেখা।
মন্তব্যের ঘরে আরো জমজমাট বিতর্ক আশা করেছিলাম।

পুতুল এর ছবি

থেংকু বস।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথমেই বানান গুলা ঠিক করার অনুরোধ রইল:

Pneumokokken = Pneumococcus (Streptococcus pneumonie)

পলিসাখারিড = পলিসাকারাইড/পলিসেকারাইড (polysaccharide)

তিমিন = থাইয়ামিন/থায়ামিন (Thiamine)

প্রটেইন = প্রোটিন

জেন = জিন (gene)

ভেক্টেরিয়া = ব্যাকটেরিয়া (bacteria)

রেস্ট্রেশন এন্জাইম = রেসট্রিকশন এনজাইম (restriction enzyme)

Craig Vertar = Craig Venter

ডিএনএ-পলিমেরাজে = ডিএনএ পোলিমারেস/জ (DNA ploymerase)

হাইড্রোঅক্সিল = হাইড্রোক্সিল

আগারোজে = এগারোস/জ (agarose)

হিম্যান = হিউম্যান (human)

ওকো সিস্টেম = ইকো সিস্টেম

কাটর = কাটার

=======================
এবার আসি সিকোয়েন্সিং পাওয়ার পর তার ব্যবহারিক দিকে। কোন একটা জেন অন্য আর একটা (বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী বা উদ্ভিদের) জেন বা ক্রমোজমে জোড়া লাগিয়ে দেওয়ার নাম ক্লোনিং।-----------

ক্লোনিং এর মানে সোজা বাংলায় হইল ফটোকপি করা। আপনি যেটা বললেন ক্লোনিং সেটা হইল লাইগেশন।
======================

এমন কী ড্রসোফিলা মেলানোগাস্টারের জিনোম আমি নিজেই সিকোয়েন্স করেছি। ---------আপনে কি Drosophila melanogaster এর whole genome sequence করসেন??? যদি তাই হয় তাইলে সেইটা করতে আপনার/আপনাদের গ্রুপের কত বছর সময় লাগছে? একটা এককোষী ব্যাকটেরিয়ার whole genome sequencing করতেই হাজারটা ল্যাবের কোলাবোরেশন লাগে, ডাটা এনালাইসিস করতে বছরের পর বছর লাগে, সেইখানে আপনি নিজেই যে দাবী করতেছেন সেইটা একটু বাড়াবাড়ি রকমের বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে।
=================

চেষ্টা করেছি বোঝাতে যে, জিনোম সিকোয়েন্স আরো অনেক মানুষ করেছে। এটা নতুন কোন আবিষ্কার নয়। নতুন আবিষ্কার হতো যদি পাটের জিনোমে রেয়ন উৎপাদন কারী গুটাপোকার ডিএনএ লাগিয়ে পাটের সাথে রেয়নের গুনাগুন যোগ করা যেতো।----

আপনে একটার সাথে আরেকটা গুলিয়ে ফেলেছেন মনে হচ্ছে। যেকোন organism এর whole genome sequencing করা মামার হাতের বানানো কোন মোয়া না যে অনলাইনে অর্ডার দিলাম সেইটা আমার দরজায় এসে গেল। যদি ১ কিলোবেইস (১০০০ বেস) (যদিও খুব ভাল মেশিন এবং লাক ফেভার না করলে ৭০০-৮০০ বেস ভালমত রিড করা যায় না) হিসেবেও ধরি এবং ৫০০ ক্যাপিলারির মেশিনও ধরি তাহলে একদিনে ১০০০ গুনন
৫০০ = ৫,০০,০০০ বা ৫০০ কিলোবেস বা ৫ মেগাবেস আপনি রিড করতে পারবেন। এখন বাকীটা আপনে হিসেব করেন, পাটের পুরা সিকুয়েন্স করতে কতদিন লাগতে পারে। আর আপনি নতুন আবিস্কারের যে উদাহরণটা দিলেন সেটা হয়ে গেল জেনেটিক ইন্জিয়ারিং। এবং সেইটা আপনে হোল জেনম সিকুয়েন্স ছাড়াও করতে পারবেন রেনডম মিউটেশনের মাধ্যমে তবে কবে সাকসেসফুল হবেন সেটা কেউ বলতে পারবে না। তবে কোন organism এর হোল জেনম ডাটা থাকলে সেই কাজটা করতে একটু সুবিধা হবে এই যা।

Whole genome sequencing এর সহজ একটা উপকারিতা বলি। আপনি ঠিক করেছেন কুমিল্লা থেকে হেটে রংপুর যাবেন, কিন্তু আপনার হাতে কোন ম্যাপ নাই। আপনাকে রংপুর যেতে হলে একটু একটু করে পথের ঠিকানা যারা কিনা কুমিল্লা ১ থেকে কুমিল্লা ২/৩/৪/৫ এ যাবার রাস্তা চিনে সবাইকে জিজ্ঞাসা করে করে অগ্রসর হতে হবে। এতে করে একদিন হয়ত আপনি রংপুর পৌছাবেন কিন্তু সেটা ঠিক আরামদায়ক হবে না ভ্রমনটা। এই ভ্রমনটা আরামদায়ক করার জন্যই আপানর একটা ম্যাপ দরকার যাতে আপনি কম সময়ে কম কষ্ট করে বিপদ আপদ দুর করে রংপুর পৌছাতে পারেন। হোল জেনম সিকুয়েন্সটা হচ্ছে একটা organism এর সম্পুর্ন ম্যাপ, যেই ম্যাপ দেখে আপনে আপনার ট্রাভেল প্ল্যান ঠিক করতে পারবেন।

--র--

পুতুল এর ছবি

সচলায়নে স্বগতম --র--,

রোমান হরফের বানানগুলো জার্মন ভাষা থেকে নেয়া। কিন্তু আমার সেটা উল্লেখ করা উচিৎ ছিল। বেশীর ভাগ পাঠক যেহেতু ইংরেজির সাথেই বেশী পরিচিত, ইংরেজি নিলেই ভাল হতো। বাংলায় লেখা জার্মান অনেক শব্দই একই কারণে ভুল মনে হতে পারে। দেখলাম কিছু টাইপো এখনো রয়ে গেছে। শুদ্ধ করে সংরক্ষণ করতে বেশ সময় লাগে। দেখব সময় করে যে কটা পারি ঠিক করে দেবো।

ক্লোনিং যে জন্য করা হয়, সেটা বলতে গিয়ে ক্লোনিং-এর সজ্ঞাই ভুল হয়ে গেল! ক্লোন হল কোন ডিএনএ-র অবিকল কপি। ঠিক করে দেবো।

নিজেই করেছি বলে আমি একা করেছি এমটা বোঝাতে চাই নি।

যেকোন organism এর whole genome sequencing করা মামার হাতের বানানো কোন মোয়া না যে অনলাইনে অর্ডার দিলাম সেইটা আমার দরজায় এসে গেল।

আমি মনে হয় এমনটা দাবী করিনি। একটা বড় বিল্ডিং বানাতে কতো কিছু লাগে! তাতে সেই দালানটা মৌলিক আবিষ্কারের মর্যাদা পায় না। এইটুকুই বলতে চেয়েছি।
আমি নতুন আবিষ্কারের যে উদারহনটা দিলাম, সে রকম একটা আবিষ্কারের খবর পেলে খুব মুগ্ধ হতাম।

Whole genome sequencing এর সহজ উপকারিতাটা আমি জানতাম। আরেকবার বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

বিপ্লব কুমার কর্মকার  এর ছবি

প্লাস্টিকের পলিথিন ব্যাগ পাটকে সাধারণ মানুষের গৃহস্থালী থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করেছে।

প্লাস্টিকের পলিথিন ব্যাগ আবার পলিমার সায়েন্সের বিরাট আবিস্কার ।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞানের এক শাখার আবিস্কার অন্য শাখাকে বসিয়ে দিচ্ছে ।
মাঝে নাঝে দ্বন্দ্ব লেগে যায় , আমরা কোনটাকে বেছে নিব ।

আপনার উচিত ছিল ধীরে ধীরে এগুনো ।
কারন , আমরা অনেকেই এ বিষয়ে নতুন বা ভুল ধারনা নিয়ে আছি ।
আশা করি পাঠকদের একটি স্বচ্ছ ধারনা দিতে আরো কয়েকটি পর্ব লিখে যাবেন ।

পুতুল এর ছবি

বিজ্ঞানের এক শাখার সাথে অন্য শাখার ঠিক বিরোধ নেই। পলিথিনের সুবিধাতো আছেই, কিন্তু সেটা বিকল্প আছে এমন সব ক্ষেত্রে ব্যবহার না করলে ভাল হতো। আর কিছুদিন পরে আমরা পলিথিনের কুফলটা খুব ভালভাবে টের পাবো।
ঠিকই বলেছেন অনেকের জন্য বিষয়টা একেবারেই নতুন। দেখি সময় হলে সামনে এই বিষয়ে আরো কিছু লিখব। আপনার মন্ত্যবের জন্য ধন্যবাদ।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নীল রোদ্দুর এর ছবি

উদ্ধৃতি,

"আমি বলতে চাই, আমরা অনেক অল্প খরচে অনেক ছাত্রী/ছাত্রকে মলিকুলার পর্যায়ে বায়োলজি পড়াতে পারতাম। এবং তখন অনেক মানুষ বিজ্ঞানের এই নতুন শাখায় শিক্ষিত হয়ে, পাটের জিনোম সিকোয়েন্সির চেয়ে বড় বা ভাল কাজও হয়তো করতে পারতো। পাটের জিনোম থেকে সুফল পেতে অপেক্ষাতো আমাদের করতেই হচ্ছে। আরো কিছুদিন অপেক্ষা করলে ক্ষতির কিছু ছিল কী? ডঃ মাকসুদুল আলম সাহেব পাটের জিনোম সিকোয়েন্স করে আবার প্রবাসে। এখন বাকি কাজটা করবে কে? বা এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য আমাদের কেবল একজনই মানুষ থাকবে কেন?."

তাসনীম ভাইয়ের ব্লগে, আপনার আগের কমেন্ট পড়ে, এতো বেশী পরিমাণ বিরক্ত হয়েছিলাম, যে বিরক্তির কারণে কমেন্টই করি নাই আর। মনে হয়ছিল, এর চেয়ে যে বুঝবে, তাকে বোঝানো ভালো। এর পর আপনার ব্লগ পড়ে, মনে মনে হেসেছি। কমেন্ট করি নাই। কিন্তু এই অংশটুকু পড়ে আর চুপ থাকতে পারলাম না। দুঃখিত।

বাংলাদেশের মত একটা দেশে, পাটের জিন সিকোয়েন্সিং এর মত কাজ হচ্ছে, তাকে সাধুবাদ জানাতে পারেন না, বরং আগের বেফাস কথাটাকে জোর করে প্রতিষ্ঠা করতে, অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে তথ্য যোগাড় করে, আরেকটা ব্লগ লিখে বসেন, কেমন বিজ্ঞানী আপনি? মনকে বোতলে পুরে রেখে চোখ বন্ধ করে বিজ্ঞান চর্চা করলে এমনই হওয়ার কথা। বায়োকেমিস্ট্রি, মলিকুলার বায়োলজী, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় গুলো যে ঢাকা বিশ্ব্যবিদ্যালয়ে পড়ানো হয়, জানেন আশা করি। বিজ্ঞান যে এক লাফে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে যাওয়ার জিনিস না, এটা বুঝেন? ডঃ মাকসুদুল সিড়ির একটা ধাপ গড়েছেন, বাকিগুলো এখন গড়া বাকি, তবেই না আমরা আরো ভালো কিছু করব। অন্তত, এইটুকুকে সাধুবাদ জানান।

পুতুল ভাই, কিছু মনে কইরেন না, বিজ্ঞানের ছাত্রী, তার উপর অ্যাডভান্স টেকনোলজী নিয়ে পড়ালেখা করার বেশ ভালো রকম অভ্যাস আছে,
আপনি যা লিখছেন তার ৮০% , সপ্তাহ দুই আগে নিচের বইটা থেকে এক সিটিং এ ওয়ান থার্ড পড়ে শেষ করছিলাম। আপনি চাইলে, একটু চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন, কোন বিজ্ঞানীর নাম আবার বাদ পড়ে গেল কিনা।

title : The Thread of Life : The Story of Genes and Genetic Engineering

author : Aldridge, Susan.

publisher : Cambridge University Press

বাংলাদেশের মত দেশে এমনিতেই বিজ্ঞানের বেহাল দশা। দুইমাস আগে, ডঃ জাহিদ হুসাইন, আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালে এসেছিলেন, DNA টেষ্টের মাধ্যমে উনার আবিষ্কৃত ক্যান্সার নির্ণয় পদ্ধতি বাংলাদেশে চালু করতে। মিশন রাজি হয়েছে, তিন কোটি টাকা খরচ করে ল্যাব তৈরী করে সেই পদ্ধতি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে। তিনিই বলেছিলেন, বেশী কথা বলব না, আমি জিন নিয়ে গবেষনা করি, এটা যখন দেশের মানুষ শোনে, জিজ্ঞেস করে, কি সব জিন ভুতের কথা বল। আপনার রিয়্যাকশন দেখে সেই কথাটাই মনে পড়ে গেলো। জ্ঞানীর কথা বিফলে যায় না। উনি হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ক্যান্সার গবেষক। সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে, আগামী বছর উনি স্থায়ীভাবে দেশে চলে আসবেন, দেশেই কাজ করার জন্য।

এখন আপনি প্রশ্ন করতেই পারেন, ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্যই তিন কোটি টাকার ল্যাব লাগবে! এই দিয়ে আরও কতজনকে মলিকুলার বায়োলজী পড়ানো যেত!

আপনি যদি এই কথা বলেন, তাও আমি আর অবাক হব না। দেঁতো হাসি
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।