“সার্ভাইভ্যাল অব দ্যা ফিটেস্ট” উক্তিটি করার সময় বাংলাদেশের আজকের অবস্থা চার্লস ডারউইন দেখেন নি। তবু কী খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে বেঁচে থাকার সংগ্রামে যোগ্যতমের উত্তরণ! আফ্রিকার অভয় অরণ্যে সিংহের লড়াই দেখাচ্ছে একটা টিভি চ্যানেল। চারটা সিংহ ঘিরে ফেলেছে তাদের জঙ্গলে অনুপ্রবেশকারী আর একটা সিংহকে। পেছন থেকে অনুপ্রবেশকারী সিংহটাকে থাবার নখর আর মুখের দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরেছে চার সিংহের একটা। বাকি তিনটা সামনে থেকে হাঙ্গরের মতো হা করে কামড়ে দেবার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পালাবার পথ বন্ধ করে দিয়েছে অনুপ্রবেশকারী সিংহটার। থেকে থেকে পালাক্রমে কামড়ে কামড়ে নিথর নিস্তব্ধ করে দিয়েছে অনুপ্রবেশকারী সিংহটাকে। ভয়ঙ্কর রকমের বিভৎস সে দৃশ্য।
স্বগোত্রে এমন লড়াই ঠেকাতে প্রাণীজগতের সব চেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী অনেক নিয়ম/নীতি তৈরি করেছে। সে সব নিয়মে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী গোত্রের বুদ্ধি এবং শক্তির কথা বিবেচনা করে তাঁদের সুবিধাই নিশ্চিৎ করেছে নীতিনির্ধারকরা। কিন্তু অপেক্ষাকৃত দূর্বল প্রজাতি নিজেদের বঞ্চিত ভেবে বিদ্রোহ করে এই নিয়মনীতির বিরোদ্ধে। সভ্য মানুষের নীতি মাফিক অসফল বিদ্রোহীদের বিচার হয়। এমন একটা বিদ্রোহের বিদ্রোহীদের বিচারপূর্ব জিজ্ঞাসবাদের সময় কমপক্ষে ৬৯ জন নিহত হয়েছে বলে জানায় কালের কণ্ঠ। তা হোক। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আমরা বদ্ধপরিকর। কিন্তু এর আগে সেনাবাহিনীর কৃষ্ণলিলায় যারা নিহত হয়েছেন তাঁদের বিচার হওয়া উচিৎ ছিল? মনে হয় না। কারণ খুনিরা বিডিআর বিদ্রোহীদের মতো অপেক্ষাকৃত দুর্বল সামাজিক অবস্থানের নয়।
৩,৬০০ টাকা মাসিক বেতনের অপেক্ষাকৃত দুর্বল সামাজিক অবস্থানের বিডিআর ঠিক কী দাবী নিয়ে বিদ্রোহ করেছিল তা আমরা জানি না। জানার দরকারও নাই। তাঁরা বিদ্রোহ করেছিল, সেটাই যথেষ্ট। কার বা কিসের বিরোদ্ধে? আপাত অলংঘনীয় প্রথাগত সনাতনী শ্রেনী বৈষম্যের বিরোদ্ধে? আমরা জানি না।
কিন্তু এটা জানি যে, সব রকমের প্রথা দিয়েও অনেক সময় দু’এক জনকে আটকানো সম্ভব হয় না। বুদ্ধি করে তাঁরা সব বাধা ডিঙ্গিয়ে যখন চলেই আসে, তখন তাঁদের বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে নিজের অবস্থান আরো শক্ত করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু বুদ্ধিও সব সময় খুব সস্তায় পাওয়া যায় না। সম্পদে ভাগ বসানো এই ধরণের ব্যয়বহুল বুদ্ধিমানদের সে জন্য হত্যাই করে ফেললেন বাজারে প্রতিযোগীতা ঠেকাতে এক শিল্পপতি। সেটা জামাতি আমলে। সেনা বাহিনী ক্ষমতায় এসে আমাদের ন্যায় বিচার উপহার দিলেন। সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত মিডিয়ার কল্যানে আমরা জানলাম, খুনীরা অভিযোগ থেকে অব্যহতি কিনেছিলেন তৎকালীন উপস্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে ২০ কোটা দিয়ে।
কিন্তু জেনারেল মইন ইউ আহম্মেদকে কেনা এত সহজ না। এই সব তথ্য ফাঁস করে দিয়ে খুনের দায়ে সেই শিল্পপতিকে তাঁর দুই ছেলে সহ কয়েক বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করেন সেনা সরকার। তবে এর আগে ভেজাল নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করে গড়া ইমারতের চাপায় পরে মৃত শ’খানেক গরীব নির্মানকর্মীর বিচার বা ক্ষতিপূরণের কথা তিনি ভাবেন নি।
বিডিআর বিদ্রোহ দমন করে অবসর জীবনে ফেরার দিনকয়েক আগে অবসর বিনোদনের জন্য একটা গল্ফ খেলার মাঠ উপহার পেয়ে তিনি (জেনারেল মইন ইউ আহম্মেদ) এক সময় খুনের দায়ে দণ্ডিত শিল্পপতির সব গোনাহ মাফ করে দেন। সব অভিযোগ থেকে অব্যহতি পেয়ে সেই শিল্পপতি এগিয়ে আসেন আমাদের তথ্য সেবায়। কালের কণ্ঠ দৈনিকে এখন আমাদের সম্ভাবনাময় তরুণ সাংবাদিকরা তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব সাধন করেছেন। আমরা জানতে পারি যে, বিডিআর বিদ্রোহীদের বিচার শুরু হয়েছে। দেশে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা দেখে ভাল লাগে।
শক্তির সাথে পাল্লা নয় সমঝোতার মাধ্যমেই মানুষ নামের বুদ্ধিমান প্রাণীটি টিকে আছে/থাকবে। ন্যায়নীতি প্রদর্শনের জন্য বিডিআর বিদ্রোহীরা তো আছেই। শক্তির জগতে বুদ্ধির জোড়ে অনুপ্রবেশকারী নিহত সাব্বির, ভেজাল সামগ্রী দিয়ে নির্মিত ইমারতের নীচে চাপা পরে নিহত শ’খানেক নির্মানকর্মী? তাঁরা সার্ভাইব করার মতো ফিট না। অন্তত ডারউইনবাদ তাই বলে।
মন্তব্য
ষোল কোটি মানুষের জঙ্গলে এমনটাই হয়। কিছুই করার নেই।
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
পড়লাম।
-------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
চিন্তায় খোরাক যোগাল কিন্তু
'জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়।'
এটা কবিতার লাইনই থেকে গেল
'সার্ভাইবেল অব দ্যা ফিটেস্ট' ইয়েস!
মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....
নতুন মন্তব্য করুন