তীর্থের কাক ১৯

পুতুল এর ছবি
লিখেছেন পুতুল (তারিখ: শনি, ১৮/০৮/২০১২ - ১:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শীতের শুরু হয়ে গেল আমার জন্য সেপ্টেম্বরেই। পুরানো সব জ্যাকেট-পুলওভার পড়ে কাজে যাই আসি। কিনি কিনি করে করে আর একটা জ্যাকেট কেনা হয় না। আসলে জার্মান জানি না বলে; যেখানে জার্মান বলতে হবে সেই পথে খুব একটা যাই না। এমন কী চুল কাটাতে পর্যন্ত নাপিতের কাছে যাই না। এখানে দেখি নাপিতের কোন জাত-পাত নেই। ছেলে নাপিতের চেয়ে মেয়ে নাপিত বেশী। চুল বাড়ছে বাড়ুক। মুখে বলছি; পয়সা বাঁচানোর জন্য নাপিতের কাছে যাই না। আসলে সাহসে কুলোয় না। সবার পিছে সবার নীচে সব হারাদের মাঝে সব সময়ই ছিলাম। দেশে থাকতেও আমার অবস্থা সমাজে এখানকার চেয়ে উঁচুতে ছিল না। তারপরেও নিজের দেশ। সেখানে আমাকে কেউ বিদেশী বলে গালি দিতে পারত না। এখানে পারে। অবশ্য বিদেশী অনুপ্রবেশকারী শরণার্থীর অতিরিক্ত সংখ্যা একটা ব্যাপার হতে পারে। যুগশ্লাভিয়ান শরণার্থী এসেছে তিন মিলিয়ন। তাতেই জার্মানরা বিদেশীদের উপর ক্ষেপে গেছে। কিন্তু যুগশ্লাভিয়ানরা আমাদের মতো উচ্চ আয়ের আসায় এখানে আসেনি। এসেছে যুদ্ধের কারণে। তিরিশ লাখ মানুষের জায়গা দেয়া সহজ কথা নয়। জার্মানির মতো একটা দেশ তিরিশ লাখ মানুষের ধাক্কা সামলাতে এত সামাজিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে! আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত এক কোটি বাঙ্গালিকে আশ্রয় দিয়েছে। আমাদের শরণার্থীদের প্রতি ভারতের তখনকার আচরণ বিশ্লেষণে, অনেকেই অনেক অমানবিক দিক তুলে ধরেন। তাদের সব অভিযোগ মেনে নিয়েও বলা যায়; ইতিহাসে এতো মানুষকে আর কোন দেশ আশ্রয় দিয়েছে।

এখানে আছে বসনিয়া-ক্রো-শিয়ান-আলবানিয়ান, এমনকি কিছু সার্বিয়ানও। কিন্তু সবাই সাদা চামড়ার মানুষ। চট করে বিদেশি বলে তাদের চেনা যায় না। জার্মানদের চোখে বিদেশী হচ্ছি আমরা বাদামী বা কালোরা। আজুইল হাইমে (যেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীরা থাকে) ক্ষিপ্ত জার্মানরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। পুলিশ ক্ষিপ্ত জনতাকে ঠেকিয়ে রাখছে বহু কষ্টে। জানালার পাল্লায় বিছানার চাদর বেঁধে জ্বলন্ত ভবনের দ্বিতল থেকে নেমে আসছে একজন কাল মানুষ। তাকেই তেড়ে মারতে যাওয়া লোকদের ঠেকিয়ে রাখছে পুলিশ। শ্লোগান হচ্ছে আউসল্যাণ্ডার রাউস মানে বিদেশীরা জার্মান ছাড়।

দেখতে দেখতে ডিসেম্বর এসে গেল। শীতে নাক এবং চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। সোমবার ছুটির দিন। মাসে অন্তত একটা ছুটির দিনে পুরানো ঠিকানায় মানে যেখানে আমি জার্মান সরকারের হিসাবে থাকি, সেখানে যাই। কোন চিঠি-পত্র আসতে পারে। সেই খোঁজ খবর নিতে যেতে হয়। দেশ থেকে আমার চিঠি আমি যেখানে থাকি সেখানেই আসে। জাহিদ ভাইয়ের কেয়ার অফ-এ। গিয়ে দেখি সেখানে কেউ নেই। আমার কাছে চাবি ছিল। ভেতরে ঢুকে দেখলাম কোন চিঠি নেই আমার জন্য। খুসী হলাম। জার্মান সরকার এখনো আমার খোঁজ করে নি দেখে। পরের ট্রেনে ফেরত এসেছি শহরে।

আমি তিন বেলা রেস্টুরেন্টে খাই। রান্না করি না। ছুটির দিনে বাইরে খাই। সকাল ঘুম থেকে উঠেছি দুপুরে। দেশের মেঘলা দিনের মতো জার্মান শীতের দিন গুলো। কখন সকাল বা বিকেল হয় বোঝার উপায় নেই। সপ্তাহে এক বা দুই দিন সূর্য উঠে, তাও কয়েক ঘণ্টার জন্য। ঘুমের জন্য আদর্শ আবহাওয়া। দেরী করে ঘুম থেকে উঠে পুরানো আস্তানায় গিয়ে ফিরে আসতে আসতে এখন প্রায় পাঁচটা বেজে গেছে। তুর্ক একটা দোকানে ঢুকলাম, ডোনার কাবাব খেতে। একটা বড় সাইজের রুটির ভেতর ভাজা মোরগের মাংস। সাথে রকমারি সালাত। টেবিলে রাখা আছে অতিরিক্ত ঝালের জন্য শুনো মরিচের গুড়ো। সাথে নিয়েছি একটা কোকাকোলা। ঘরটার একটা কোনায় ছাদের সাথে ঝুলছে একটা টিভি। সেখান থেকেই ভেসে আসছে “আউসল্যান্ডার রাউস” শ্লোগান। সাথে সচিত্র ধারা বিবরণী। এদিকে (পশ্চিমে) বিদেশী নির্যাতনের খবর তেমন আসে না। মাঝে মাঝে নিউ নাৎসিরা শহরে মিটিং-মিছিল করে “আউসল্যান্ডার রাউস” শ্লোগান দিয়ে। কিন্তু পূর্ব জার্মানির মতো কোন বিদেশীকে আক্রমণ এখনো করেনি। তবুও ভয় হয়। সব চেয়ে বড় সমস্যা যেটা হয়েছে। আমি নিজেই এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে; আমি ছোট জাতের বা নিচু জাতের মানুষ। সাদা চামড়ার মানুষরা অবশ্যই আমার থেকে কোন না কোন দিকে বড়। আমাদের দেশেও বড়লোক দেখলে ভয় পেতাম। তার কারণ ছিল ভিন্ন। কী ভাবে যেন মনের মধ্যে এমন একটা ধারণা জন্মেছিল যে; আমাদের দেশের বড় লোকরা আসলে সবাই কোন কোন ভাবে অবৈধ সম্পত্তি দখল করে বা স্বৈরাচারী সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বড় লোক হয়েছে। কাজেই তারা অসৎ। বড় লোক বলে যতই বাহাদুরি দেখাক না কেন। আসলে তারা ছোট লোক। সব জনগণের পয়সা চুরি করে বড়লোক হয়েছে। এখানে সেই সুবিধা নেই। বড় লোক দেখলে ভয় পাই।

এমন কী দোকানে ঢুকে কোথায় আমার প্রয়োজনীয় জিনিসটা পাওযা যাবে, তা না যেনে এদিক ওদিক বিচ্ছিন্ন ভাবে যখন ঘুরি, তখন বেচারি সেলস গার্ল যদি জিজ্ঞেস করে; মে আই হেল্প ইউ? তখনও পালাবার পথ খুঁজি। দুপুরে দুই ঘণ্টা কাজের বিরতির অর্ধেক পার হয়ে যায় আসতে যেতে। দৌড়ের উপর মাধা ঠাণ্ডা রেখে কোন কাজই ঠিকমত হয়না। তার চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে হালফ্যাশনের জ্যাকেট খুঁজে পাওয়া। মেয়েদের চুল ছেলেদের মতো করে ছাটা। আবার ছেলেদের চুল মেয়েদের মতো কোমর অব্দি লম্বা। এখন এক ঘণ্টা সময় আছে হাতে। দোকান বন্ধ হবে সন্ধ্যা ছটায়। বড় দিনের কেনা-কাটার ভিড়। লোকজন ঠেলে এদিক ওদিক যেতে হয়। চারতলা সুপার মার্কেটের নীচের তলাতেই জ্যাকেট। রং, সাইজ এবং সব চেয়ে বড় কথা শীত মানাবে কীনা? এই সব ভেবে যখন একটা জ্যাকেট পছন্দ হয়, তখন সমস্যা সাইজ নিয়ে। স্মল সাইজটা সব মডেলের জ্যাকেটে নেই। কারণ স্মল জার্মানও খুব বেশী নেই। এদিকে সময় যাচ্ছে। ভেতরে মানুষের ভিড় আর হিটারের বেশ গরম। কিন্তু বাইরে শীত। আমার জিন্সের জ্যাকেট আর নীচের পুলওভার সে শীতের কাছে কিছুই না। সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় অস্থিরতা। সাথে কখন দোকান বন্ধ হয় সেই তাড়া তো ছিলই। পেছন থেকে বেশ জোড়ে কে যেন থাপ্পড় দিয়ে হাতটা আর ফিরিয়ে নেয় নি। কাঁধটা ধরেই রেখেছে। চড়-থাপ্পড় মেরে রসিকতাটা আমার একদম ভাল লাগে না। ভীষণ রকম বিরক্তি নিয়ে পেছনে ফিরে মাসুদকে আজকে কড়া করে কিছু বলব। সেই বিরক্তি নিয়ে পেছনে ফিরে দেখি আমার চেয়ে কমপক্ষে বিঘত খানেক উঁচুতে যে কাঁধে আমার কাঁধ ধরে রাখা হাতটা ঠেকে আছে তার মাথায় সবুজ রং-এর পুলিশের টুপি।

ফলো মী। মার্কেট থেকে বের হয়ে গেলাম। বাইরে গিয়ে আউসভাইস (পরিচয় পত্র) চাইল। নিজে নিজেই বির বির করে কিছু বলল। তারপর আমার কাছে জানতে চাইল তুমি এখানে এসেছ কেন? একটা জ্যাকেট কিনতে। তুমি টাকা কোথায় পেলে? কাজ করে আয় করেছি। কিন্তু এই শহরে এসেছ কেন? এখানে তো প্রয়োজন ছাড়া তোমার আইসার অনুমতি নেই? অথচ শহরে আসার এবং কাজ করার পারমিশন আমার আছে এবং সেটা এই পরিচয় পত্রে জার্মান ভাষাতেই লেখা। আর পুলিশ তো এমনি এমনিই হয়নি। এই সব নিয়ম কানুন শিখে পড়েই হয়েছে। একজন বিদেশী পেয়ে, এক হাত দেখিয়ে নিচ্ছে আর কী। বিরক্ত হয়ে লাভ নেই। আমাদের আস্তানায়ও কারণে অকারণে পুলিশ যায়। তবে তাদের সাথে তখন একজন আমেরিকান আর্মি থাকে। কথাবার্তা ইংরেজিতেই বলতে হয়। এখানেও ইংরেজিতেই বলছে। কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে কোন কারণে ওর মেজাজ খারাপ। সেটা আমার বৈধ পরিচয় পত্র দেখেও হতে পারে। আমাকে দেখে তো হতেই পারে। কিন্তু যাই বলুক বা যাই জিজ্ঞেস করুক, মাথা ঠাণ্ডা রেখে জবাব দিতে হবে। শুধু মাত্র আমাকে চটিয়ে দিয়ে আমার কাছ থেকে পুলিশ এবং সেই সূত্রে সরকারের একটা অঙ্গ (অর্গান)কে অপমান জনক কোন কথা বের করতে পারলেই আমার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। এত বেশী চালাকি নাকী আমাদের দেশে বিকলাঙ্গ বা কুশ্রীদর্শন মানুষ করে। অথচ এই পুলিশটার চেহারাটা এমন সুন্দর এবং পবিত্র যে দেখে যে কোন মানুষের মন ভাল হয়ে যাবে। সুন্দর দেহে সব সময় সুন্দর মন থাকে না। এই সব অপমান জনক হয়রানী বা পুলিশের পেঁদানি দেশেই অনেক খেয়ে এসেছি। এসব গায়ে মাখি না। কিন্তু কোন কথা বলতেও ইচ্ছে করছে না। নিজের কাজে যাও। ঐ দোকানে আর যাবে না। আমার নিরুৎসাহ ওর ভেতরে সঞ্চারিত হয়েছে দেখে ভালই লাগল।


মন্তব্য

মন মাঝি এর ছবি

পুরোটা একসাথে কবে পাব?

****************************************

পুতুল এর ছবি

আশা করি এ বছরের শেষে।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ঠোলা ঠোলাই। সে যেই জাতেরই হোক। সিরিজ চলুক বস্ ।

পুতুল এর ছবি

সেটাই।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

মনটা খারাপ হয়ে গেলো। রেসিজম যুগে যুগে সব দেশেই ছিল - এমনকি আমাদের দেশেও ছিল এবং আছে। তারপরও কেন যেন আপনার লেখাটা পড়ে মনের ভেতরটা আর্দ্র হয়ে গেল।

-অয়ন।

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ অয়ন।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ট্যাগে লেখা দেখি, 'উপন্যাস' আবার পাশে, 'স্মৃতিচারণ'। আমার ধারনা আপনি আপনার জীবনকথাই লেখেন, অবশ্য আমার ধারনা ভুলও হতে পারে। আপনার অকপট সরল বয়ান, এবং আপনার সংগ্রাম করার এই মানসিকতার উপন্যাস মনকে নাড়া দেয়। লিখতে থাকুন অকপটে।

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ প্রৌঢ় ভাবনা। জীবনকথাই লিখছি।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

রিজু এর ছবি

ফ্রান্স থেকে একবার জার্মানি যাচ্ছিলাম ট্রেনে করে। জার্মান অংশে ঢুকবার পরে দুইজন পুলিশকে দেখলাম হেটে আসতে। কামড়া ভর্তি মানুষের মধ‌্যে আর কাউকেই তারা কিছু জিঙ্গাসা করল না, কিন্তু আমার কাছে এসেই পাসপোর্ট চাইলো। এরপর ফ্রান্সের কোন শহর থেকে এসেছি, কোন শহরে যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি নানান ধরনের প্রশ্ন। আর বাকি সব মানুষ আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে ছিল, নিজেকে চোর-ডাকাত টাইপের কিছু একটা মনে হচ্ছিল।
যদিও ব্যাপারটা হয়ত এমন বেশি কিছু না, কিন্তু অন্যদের কাছে এট লিষ্ট যদি পরিচয় পত্রটাও দেখতে চাইত, তাহলে এত খারাপ লাগত না।

পুতুল এর ছবি

দৈনন্দিন এর মুখমুখি হই। অবশ্য এখন একটু কমেছে যদিও।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

সজল এর ছবি

চলুক

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

দারুচিনি এর ছবি

জার্মান পুলিস তো আমার বেশ ভালো মনে হয়েছে. এরকম অবস্থায় পরিনি কখনো . একবার শুধু সুইস বর্ডার এ পাসপোর্ট দেখতে চেয়েছিল!
যাই হোক, আপনার সাথে একমত জার্মান রা আওউসলেন্ডার দের পছন্দ করেনা. আমার প্রতিবেশী গায়ে পরে ঝগড়া বাধায় আমার সাথে !

পুতুল এর ছবি

পাসপোর্ট দেখতে চায় চামড়ার রং দেখে।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

কল্যাণ এর ছবি

চলুক

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ কল্যান।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।