এই দেশে আমি একটা কোঠরে থাকি। বাইরের সব কিছু ভাল মতো দেখতে বা শুনতে পাই না। উচ্চ প্রজাতির প্রাণী হিসাবে মানুষের চিন্তার মতো জটিল তার তথ্য আদান প্রদানের কৌশল। প্রধান মাধ্যম ভাষা। রান্না ঘরে ভিকি সিং বা তাওহীদ মালকনীর সাথে কী বলে তার এক বিন্দু বির্সগও বুঝতে পারি না। প্রতিদিন দুপুরের বিরতিতে ভিকি সিং খবরের কাগজ পড়ে জার্মান ভাষায়। দেশে থাকতে মালেক সওদাগরের দোকানে গিয়ে বসে থাকতাম খবরের কাগজের আশায়। ভাগাভাগি করে খবরের কাগজ পড়তাম। প্রায় এক বছর হল দুনিয়াতে কী ঘটছে তার কোন কিছুই আমি জানি না। এক অর্থে গুহাবাসী জীবনে ঢুকে গেছি।
মালিক পক্ষ বারবার তাড়া দিচ্ছে ছুটি কখন ভোগ করতে চাই সেটা জানাতে। তাকে আমার কাজ যে কয়দিন আমার ছুটি থাকবে সে কয়দিন অন্য একটা লোক যোগার করতে হবে। আগে থেকে জানালে সেই সময়ের জন্য একটা লোক ঠিক করা তার পক্ষে সহজ হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি, ছাব্বিশে মার্চ, মে দিবস, ষোলই ডিসেম্বর এই কয়দিন আমি ক্যালেণ্ডারে আমার লিখে দিলাম। বছরে আমার ছুটি বিশ দিন। বাকী দিনের টাকা দিয়ে দেবে মালিক।
কিন্তু রানা ভাইয়ের কাছে শুনলাম; লাগারের নীচে সাবিনার বন্ধু মার্টিন একটা জার্মান কোর্সের পরিকল্পনা করছে। মাসিক দশ মার্ক বেতন। প্রায় বিনা মূল্যে। সোমবার আর বুধবার বিকালে। সোমবার ছুটি আছে। কিন্তু বুধবারে যাই কী ভাবে! ভেবে দেখলাম প্রতি বুধবার ছুটি নিলে কেমন হয়। মালিক রাজি হলেন। সর্ত হচ্ছে; বুধবার সকালে কাজ করতে হবে। বিকালের কাজের সব কিছু ঠিক করে আসতে হবে। যাতে বিকেলে যে কাজে আসবে তার কিছু করতে না হয়। থালা বাসন ও সে ধোবে না। পরেরদিন সকালে গিয়ে আমাকে বুধবার বিকালের জমানো থালা বাসন ধুতে হবে। আর প্রতি তিনটি বিকালকে দুই দিন ছুটি হিসাবে ধরা হবে। তাতে আমার আপত্তি নেই। দেশে থাকতে মাত্র তিন হাজার টাকার জন্য টো-ফেল করা হয়নি। আর এখানে এই দেশে থেকে ভাষাটা শিখতে পারব প্রায় বিনা খরচে!
ভর্তি হয়ে গেলাম। দুপুরের বিরতিতে রাস্তায় দাড়িয়ে কোন শব্দের উচ্চারণ বা অর্থ বলে দেয়ার জন্য পথচারী জার্মানদের পথ রোধ করি। প্রতি দুই জনে একজন বুঝিয়ে দেয়। এটি দেবের ইংলিশ টু বেঙ্গুলী ডিকশেনারী নিয়ে এসেছিলাম দেশ থেকে। আর এখানে কিনে নিয়েছি জার্মান টু ইংলিশ ডিকশেনারী। তিন মাস পরে খবরের কাগজ পড়া শুরু করলাম ডিকশেনারী দেখে। প্রতি লাইনে অন্তত একবার ডিকশেনারী খুলতে হয়। যে শব্দটা দেখার জন্য ডিকশেনারী খুলতে হল সেটা কমপক্ষে দশবার লিখি বাংলায় উচ্চারণ এবং অর্থ সহ। বিড় বিড় করে মনে মনে উচ্চারণ করি কঠিন কঠিন জার্মান শব্দ। আমার আগ্রহ দেখে বা কতটুকু শিখছি সেটা পরীক্ষা করার জন্য একদিন সেলফ্স্টফরটেণ্ডলিখ শব্দটার মানে এবং বানান জিজ্ঞেস করে বসল ভালটার। আমি নিশ্চিত হওয়ার জন্য শব্দের বানানটা মনে মনে বলার আগে আর একবার ভেবে নিচ্ছিলাম। আমার দেরী দেখে ভালটার এবার ভিকি সিং কে জিজ্ঞেস করে ফেলল বানানটা। ভিকি সিং পারলনা। কিন্তু ভিকি সিং-এর ভুলটা কোথায় আমি বুঝে গেলাম। আর সঠিক বানানটা বলতে পারলাম। সেই থেকে ভালটার আমার সাথে ইংরেজী বলা ছেড়ে দিল। কিন্তু খুব ফ্লুয়েন্ট আর নিশ্চিত হয়ে জার্মান বলতে পারার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। সে জন্য এখনো সাথে দুইটি ডিকশেনারী আর কাগজ কলম থাকে। কোর্সটাও এক সময় শেষ হয়ে গেল। সফল ভাবে কোর্সে অংশ নেয়ার উপহার হিসাবে পেলাম জার্মান ভাষায় আমার প্রথম বই “টিল অয়েলেনস্পিগেল”।
ডিকশেনারী দেখে দেখে আজ দুপুরের বিরতিতে বইটা পড়া শেষ করলাম। কী যে আনন্দ! আহা। অন্ধ মানুষ হঠাৎ দেখতে পেলে হয়তো এমনি খুশি হতো। রবিবার রাতে কাজ শেষ হয় একটু আগেই। সব শেষ করে মিমোর সাথে টয়লেটে গিয়ে ভাল করে হাতমুখ ধুয়ে নিলাম। শীত প্রায় শেষ। লাগারের মেশিনে ধূতে দেয়া কাপড় চুরি হয়ে যাবার পর রেস্টুরেন্টের কাপড়ের সাথে আমার কাপড় ধোয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন মালিকনী। জুতা ছাড়া আর সব ধুয়ে দেয়। বাইরে পরার আর কাজের জুতো আলাদা। একেবারে ইস্ত্রির ভাজ ওয়ালা কাপড় পরলাম। মাঞ্জা মেরে বের হওয়া বলতে যা বোঝায় আর কী। এপ্রিলের শেষ দিক। কিন্তু পাতলা একটা জিন্সের জ্যাকেট পরতে হল। পিঠে ডিকশেনারী আর বই-খবরের কাগজের ঝোলা।
কিন্তু দারওয়ান আজোও ডিস্কোতে ঢুকতে দিল না। বছর হয়ে গেল এই দেশে অথচ ডিস্কো দেখা হল না! জীবনটাই বৃথা। জার্মান বলতে পারি। জামা-কাপড় চলন সই। তারপরও ঢুকতে দিচ্ছে না! পকেটে খরচ করার মতো টাকাও আছে। বিশ মার্কের একটা নোট হাতের তালুতে নিয়ে বিগলিত হাসিতে হাতটা বাড়িয়ে দিলাম মহান দারওয়ানের দিকে। হাতটা উল্টো করে ধরে একটা মোড়া দিল, যে ভাবে হাত ঘুরছিল সে ভাবে না ঘুরলে হয়তো ভেঙ্গেই যেতো। হাতটা ছুড়ে দিয়ে বলল; সাইজে আউসল্যাণ্ডার (সিট বিদেশী), ভাগ জলদী, নইলে হাড্ডি গুড়ো করে দেব।
কী আর করা! মাঝ রাত পার হয়ে গেছে। রাস্তায় মানুষের চলাচল নেই বললেই চলে। বিস্তীর্ণ পথে নেমে মনটা পথের মতই প্রশস্ত হয়ে গেল। এই সব অভিমান গায়ে মেখে এমন সুন্দর সময়টা নষ্ট করার মানে নেই। কৌনিগপ্লাস্ট এর বাগানে ঝগড়া করছে কয়েকজন মাতাল। ডান দিকে রেলস্টেশনের দিকে যাওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছি। কোন কারণ ছাড়াই। লাগারে গিয়ে সেই এক ঘেয়ে জীবন। ভারতীয় বা পাকিস্তানীদের কাছ থেকে সস্তায় বিয়ার এনে তাসের টেবিলে ব্রিজ খেলা। অনেকেই পাকিস্তানীদের ঘরে গিয়ে পয়সা দিয়ে জুয়া খেলে। ব্রিজ তার চেয়ে অনেক ভাল। কিন্তু কত আর ভাল লাগে। নিজের যোগ্যতায় এই দেশের একটি মানুষের সাথেও পরিচয় হল না। কতদিন এখানে থাকব জানিনা। কিন্তু এই দেশের একটি মানুষের সাথেও আমার বন্ধুত্ব হবে না! জন্ম থেকে মানুষ অনেক কিছুই পায়। কিন্তু বন্ধু হচ্ছে অর্জনের ব্যাপার। টাকা পয়সা দিয়ে চাটুকার পাওয়া যায়। অভাব অনটনের কারণে অনেক সময় দয়ালু দাতা পাওয়া যায়। বন্ধু পাওয়া যায় নিজের গুনে। দেশে আমার শত্রুর অভাব নাই। কিন্তু তার ভেতরেও কিছু বন্ধু ছিল। জানি চেষ্টা করে বা টাকা পয়সা খরচ করও বন্ধু পাওয়া যায় না। তবু, পথে বের না হলে গন্তব্যের খোঁজ অবান্তর, মানুষের সাথে পরিচিত না হয়েও বন্ধুর জন্য আক্ষেপ করা সে রকমই অনেকটা। এমনই বিচ্ছিন্ন ভাবনায় পথের ধুলোর দিকে চোখ রেখেই হাঁটছিলাম।
চৌরাস্তায় এসে দেখতে হল, রাস্তা পার হওয়ার সবুজ বাতি সবুজ কী না। একটা অলংকারের দোকানের সামনে একটি মানুষ। বেশ দূর থেকে দেখেও বোঝা যায় মানুষটি স্ত্রী লিঙ্গের। এত রাতে একটি মেয়ে একা পথে ঘুরছে! জার্মানদের বদনাম যতই করি না কেন, এই জান-মালের নিরাপত্তার প্রশংসা না করে উপায় নেই। প্রতিটা রাস্তার দুই পার্শে গাড়ির সারি। অথচ কেউ কিছু খুলে নিচ্ছে না! ভাঙচুর করছে না। আর রাত দুপুরে একটা মেয়ে একা রাস্তায়! ধীর পায়ে হেঁটে মেয়েটির দিকে যাচ্ছি। তার পেছন দিয়ে হেঁটে চলে যাব রেল ষ্টেশনে। দোকানের নিয়ন লাইট মেয়েটির মুখে। পায়ে চলার পথটা বেশ চওড়া। দোকান থেকে একটু পেছনেই দাড়িয়ে আছে মেয়েটা। যাতে দোকানে সাজানো সব অলংকার দেখতে পায়। সে জনই তার মুখের একটা অংশ আমি দেখতে পাচ্ছিলাম খুব ভাল করে। আর এমনিতেই লাইট-পোষ্টের আলো রাতকে উজ্জ্বল জোছনার মতো করে রাখে। সে কী দেখছে বা আদোও কিছু দেখ কী না বোঝার উপায় ছিল না। শরীরটা এবং আমার দেখা মুখের অংশটুকু দেখে বরং মোনালিসার কথাই মনে পরল।
এই সব ভাবতে ভাবতে তার প্রায় পেছনে দিয়ে চলেই যাচ্ছিলাম। মেয়েদের সামনে আমি বরাবরই নার্ভাস। আর জার্মানরা আমাদের মতো বিদেশী দেখলে কথাই বলতে চায় না। মেয়ে হলে তো কথাই নেই। বকাঝকা দিয়ে দিতে পারে। কাজেই সাহসে কুলায় না সব সময়। কিন্তু ভাবলাম কী আর করবে! হয়তো সাইজে আউসল্যাণ্ডারই বলবে। তার গালি তার মুখে থাকবে আমি চলে যাব। না থেমেই বললাম; হ্যালো।
আমাকে অবাক করে দিয়ে সেও বলল; হ্যালো।
থেমে তার দিকে তাকালাম। সেও শরীরটা আমার দিকে একটু ফিরিয়ে এনে “তারপর?” টাইপের একটা কিছু ভাব নিয়ে চেহারায় একটু খুশির ভাব নিল। ঠিক মোনালিসার মতো। আমার নার্ভাসনেস চরমে। বুঝতে পারছি এখন কিছু একটা বলা দরকার। কিন্তু কী বলব! একেবারে ব্যক্তিগত কিছু জিজ্ঞেস না করেও “কেমন আছো?” টাইপের প্রশ্ন অশালীন নয়। কিন্তু একেবারে অপরিচিত মানুষকে এই সব প্রশ্ন করে নাকী কেউ! আবহাওয়া নিয়ে অনেক কথা বলা যায়, যে কোন মানুষের সাথে। আবহাওয়া খারাপ হলে সে সব আলাপ আরো বেশী জমে। কিন্তু সমস্যা হল মানুষটি অন্য কোন কারণে বিরক্ত থাকলে সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেবে; এখানে ভাল না লাগলে নিজের দেশে চলে যাও। একটু ঝুঁকি আছে। অবশ্য এই মেয়েটির চেহারায় তেমন কোন বিপদের পূর্বাভাস নেই। তা ছাড়া আবহাওয়া আজকে বেশ ভাল। তাই বেশী ওস্তাদি না করে সেটাই বললাম; আজকের আবহায়াওটা কিন্তু খুব সুন্দর।
-এই সুন্দর আবহাওয়াটার জন্য আমরা যথেষ্ট সময় অপেক্ষাও করেছি। এই ধরণের সংক্ষিপ্ত আর আলাপের ভবিতব্য হীন জবাবে মুস্কিলই হল। এখন কী বলি! বেশি দেরী করাও ঠিক হবে না। আমি যে কথা খুঁজে না পেয়ে দেরী করছি, সেটা না বোঝে যদি মনে করে আমার কথা বলার কোন আগ্রহ নেই। তা হলে তো মুস্কিল! কী করি! কিছু না পেয়ে আমি আমার নাম বলে ফেললাম। যেন আমি তার সাথে পরিচিত হতে চাইছি। ওমা! সেও “আমি সোনিয়া” বলে তার হাত বাড়িয়ে দিল। এই শীতের দেশে দুই হাত শীতের ঠেলায় পকেটে রেখে অভ্যাস হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি পকেট থেকে হাত বের করে তার হাতটা ধরলাম। এতো নরম তুলতে হাত আমি জীবনে আর কখনো হাতের মুঠোয় পাইনি। ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। সেও বেশ কাছে এসে দাঁড়াল। হাত ধরে রাখাটা একটা আরামের ব্যাপার হয়ে গেল আমার জন্য। কিন্তু কতক্ষণ? আবার কী বলব সেই চিন্তায় এই হাতের ভেতর রাখা হাতটির স্পর্শটাই উপভোগ করতে পারছি না ঠিকমতো। অবশ্য পশ্চিমারা হাতে হাত রাখার ব্যাপারে এতো রোমান্টিকও নয়। ভাবলাম কোথাও গিয়ে বসলে কেমন হয়! সেটা বলেও ফেললাম। কিন্তু সোনিয়া বলল; কোথায় আর বসবে! সব খানেই সিগারেটের দোয়া, আর হাই ভলিউমের মিউজিক। কথা বলার কোন উপায় আছে নাকী সেখানে! তার চেয়ে বরং চল আমার গাড়িতে বসে গান শুনি। হাটার জন্য মর্দনকৃত হাত ছেড়ে দিতে হল। আমার দুই হাত পকেটে। পকেটে হাত ঢুকাকে কনুইটা দুই দিকে কোণ করে থাকে। তারই বায়ের কোণায় সোনিয়া নিজের হাত ঢুকিয়ে কোন রকমের জড়তা, তাড়াহুড়া ছাড়া শান্ত-স্বচ্ছন্দ ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে লাগল।
গাড়ীতে বসে জানতে চাইল; কী গান শুনবে? বাংলা গানই কোন দিন ভাল করে শোনা হয়নি। আমাদের কখনো কোন রেডিও বা কলের গান ছিল না। ইংরেজী গান শুনেছি আবহ সংগীতের মতো। কার গান, কী গান সে সব জানার কোন সুযোগ হয়নি কখনো। তাই বললাম; ছাড় তোমার পছন্দের কোন গান।
ছেড়ে দিল। “আই এম সেইলিং থ্রু দ্যা ডার্ক নাইট ফার ওয়ে”। এখন যদি কিছুই বুঝতে না পারি! অনেক বাংলা গানের সব কথাই সব সময় বুঝি না। আর এতো ইংরেজী। আমেরিকানদের ইংরেজী কথাই বুঝি না ঠিকমতো। আর এতো গান। গানের কথা বোঝা আরো কঠিন, অন্তত আমার জন্য। কিন্তু একটু মনোযোগ দেয়ায় “অন্তত আই এম সেইলিং” কথাটা বুঝতে পারলাম। এর মধ্যে কাঁঠাল চাঁপা ফুলের পাপড়ির মতো কয়েকটা পাপড়ির ছোঁয়া লাগল ঘাড়ে। সুড়সুড়ির মতো নয়। বেশ ভাল ভাবে অনুভব করছিলাম মোলায়েম সেই ছোঁয়া। মাথার পেছনের চুলগুলোর ভেতর বিলি কেটে মুঠো করলো বোধ হয় কাঁঠাল চাঁপার মতো আঙ্গুল। একটু টান লাগল, কিন্তু কেমন যেন আরাম হচ্ছিল। গায়ের পশম খাড়া হয়ে গেল। কোন এক অজানা কারণে শরীরটা একটু কাঁপছিল। অথচ শীত নেই। ধীরে ধীরে সোনিয়ার দিকে ফিরে দেখি; তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কোন কিছু চেয়ে হাত বাড়ানোর মতো মুখটা এগিয়ে দিয়েছে আমার দিকে। হাত দুটো দিয়ে ওকে বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরতে গিয়ে দেখি সীটের দূরত্বে তা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এই নিষ্ফল চেষ্টায় তার মুখের এতো কাছে চলো এসেছে আমার মুখ যে তার নিশ্বাস টের পেলাম। আর ঠোট দুটো লেগে গেল তার গালে। নিজের মুখটা এমন ভাবে ঘোরালো সে যে, আমরা ঠোঁটা-ঠোঁটি হয়ে গেলাম। খুব আলতো করে সে তার ঠোঁট দিয়ে ছুঁয়ে দিল আমার ঠোঁট। জলের ছিটায় সিক্ত হয়ে প্রস্তুতি না থাকলেও স্নানে নামার জন্য পানিতে নামতে সিদ্ধান্ত নিলাম। হয়তো একেই চুমো বলে। আমরা পরস্পরের ঠোঁট চুষতে লাগলাম। কী জানি কোন আনন্দে বা দুঃখে আমার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগল। সময় কখন কী ভাবে গেল বা এর পর কী হল, কিছুই আর মনে নেই। এক সময় সে বলল; আমার এখন যেতে হবে। রাত প্রায় শেষের দিকেই হবে বোধ হয়। কিন্তু ওকে ছাড়তে ইচ্ছে করছিল না। আবার ধরে রাখার কোন উপায়ও ছিল না। আমাদের চার জনের ঘরে জাহিদ ভাইয়ের উপরে আমার সিঙ্গেল খাট। অন্য দ্বিতল খাটে জসিম আর নূর উদ্দিন। ওকে নিয়ে রাখব কোথায়? তার পরেও জিজ্ঞেস করলাম কেন? ও বলল আমার জন্য অন্য একজন পুরুষ অপেক্ষা করছে।
যত আগ্রহ নিয়ে ওর কাছে থাকতে চাইছিলাম ততটা বিরক্তি নিয়ে এখন গাড়ি থেকে নামতে ব্যকুল হয়ে উঠলাম। আমার তাড়াহুড়োয় একটু অবাক হয়ে গেল সে। কী হয়েছে?
না কিছুই হয়নি। তোমাকে যেতে হবে, তোমার জন্য অন্য একজন পুরুষ অপেক্ষা করছে! মানুষকে অপেক্ষায় রাখা ঠিক নয়। তুমি যাও। আমার অভিমান এবং ক্ষেদ মেশানো কথায় খিল খিল করে হেঁসে উঠল সে। আমি আরো বিরক্ত হয়ে রাগি রাগি চেহারা আর বিরক্তি নিয়ে তাকালাম।
কোন রকমে হাসি থামিয়ে সে বলল; আরে বোকা ঐ বেটা আমার বাপ। সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে ঐ বেটা আমাকে না দেখলে তার দিনটা নাকী শুভ হয় না। হোক সেটা আমার ঘুমন্ত মুখ। ধপাস করে বসে পড়লাম ওর গাড়ির সীটে।
আমরা ভাঁড় বংশের লোক। আমাদের ভাঁড় নাম সার্থক হলো তা হলে। গাড়ি এসে থামল লাগারের সামনে। উপর থেকে বদনার নল দিয়ে কে যেন পানি ফেলছে! উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি; জানালা খুলে কোন লোক হিসু করছে। এবার হেঁসে উঠলাম দুজনেই।
মন্তব্য
আপনার সিরিজটা পড়লে (বা যেকোনো ইমিগ্রেন্ট জীবনের কথা পড়লেই হয়ত) ব্লেড রানার সিনামাটার কথা প্রায় অপ্রাসঙ্গিকভাবে মনে পড়ে। যাগ্গা। জার্মান শিখা কী তাইলে কঠিন না সহজ? মানে একজন বাঙালির জন্য?
কিছু বানানের এদিকসেদিক আছে। বই হিসাবে বাইর করার আগে থরো চেকিং দিতে হবে।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
গ্রীন কার্ড ছাড়া এই প্রসংগে আর কোন ছবি দেখিনি, তাই বলতে পারব না ব্লেড রানার অপ্রাসংগিক কিনা।
জার্মান ভাষাটা বিদেশীদের শেখার জন্য খুব ভাল ভাবে সাজানো। কিছু ব্যাকরণ জানা থাকলে একটা ধাপ পর্যন্ত ভালই বলা এবং বোঝা যায়। আমি বাংলার সাথে জার্মানের অনেক মিল পেয়েছি। তবে ভাষা হিসাবে জার্মান বাংলার চেয়ে সহজ। আমার ধারণা ভাষাটা একটা গাণাতিক বিদ্যা। সে কারণে আপনার মতো বুদ্ধিমান মানুষের জন্য জার্মান শেখাটা সহজ হবে।
বানানের জন্য দুঃখিত। বই বের হলে, সেদিকটা ঠিক করার জন্য কাউকে অনুরোধ করব।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
ব্লেড রানার একটা সায়েন্স ফিকশন। সরাসরি কোনোই সম্পর্ক নাই।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
জানতাম না।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
বই কিন্তু অবশ্যই বাইর কইরেন।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
দেখি কী হয়। ধন্যবাদ বস।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আমার ৫ মাস হতে চলল জার্মানে, ভাষার অবস্থা এখনো তথৈবচৈ। মাস্টার্সের চাপে ভাষা পিছনের দরজা দিয়ে পালাতে চায়।
আজকে কিন্তু অনেকটা লিখছেন, খুব সময় পড়লাম।
--বেচারাথেরিয়াম
ধন্যবাদ। মাথায় পড়ালেখার চাপ থাকলে ভাষা শেখার পেছনে সময় দেয়া একটু কঠিন বৈকী। ভাষা শেখাটা ঐ সময় আমার জন্য একটা বিলাসিতা ছিল। মাথা খাটিয়ে করার মত কাজ তখন কেবল ভাষা শেখা। তাও যতটুকু সুযোগ পেয়েছিলাম তার সঠিক ব্যাবহার তো করিনি।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
পড়ছি। চলুক ....
অজ্ঞাতবাস
ডাংকে
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
ধন্যবাদ বস।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
পড়ছি।
--------------------------------------------------------------------------------
ধন্যবাদ ভাবী। অতিথি হয়ে আপনি আর কত বছর থাকবেন সচলায়তনে!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
নতুন মন্তব্য করুন