মাহবুব ভাইয়ের বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটা পথেই ধীরে ধীরে এগুচ্ছিলাম আস্তানার দিকে। রাত নটা-দশটা হবে। ভাবলাম; বাসায় গিয়ে করবটা কী! সবাই কাজ থেকে ফিরবে মাঝ রাত পার করে। তার চেয়ে বরং শহরের দিকে যাই। যেখানে সোনিয়ার সাথে দেখা হয়েছিল, সে জায়গাটায় একটা ডু মারি। কপাল ভাল হলে সেখানেই তার সাথে আবার দেখা হবে। লোহার সাথে লোহা ঘসার শব্দটা কমে গেল। তার মানে শহরগামী ট্রামটা এখন থেমেছে বোধ হয়। সোজা গিয়ে রাস্তাটা দুভাগ হয়ে একটা ডানে আর একটা বাঁয়ে চলে গিয়ে আবার ডানে ঘুরে মিলেছে ট্রামের রাস্তায়। একদম আমার বিপরীত দিকে। পিছন ফিরে গতি বাড়িয়ে দিলাম। ট্রাম ধরতে হবে। কিন্তু লোহার সাথে লোহা ঘসে এর মধ্যে ট্রাম আবার চলতে শুরু করেছে। পরেরটা আসবে পনর মিনিট পরে। কী আর করা। ধীরে ধীরে হাঁটছি ট্রাম ষ্টেশনের দিকে।
এর মধ্যে থামল একটা পুলিশের গাড়ি। কী মুসিবত!
দয়করে পরিচয় পত্র দেখান।
বলছে “দয়াকরে” কিন্তু না দেখিয়ে উপায় নেই।
পরিচয় পত্র ছাড়া কাল চামড়ার মানুষ এই দেশে অচল। পরিচয় পত্র আমার হাত থেকে নিয়ে চালান করে দিল গাড়ির ভেতরে বসা আরেক পুলিশের হাতে। সে ল্যাপটপ খুলে বসেছে গাড়ির ভেতরের বাতি জ্বালিয়ে। এবার গাড়ি থেকে নেমে যিনি আমার পথ রোধ করেছিলেন, তিনি শুরু করলেন আমার সাথে প্রশ্নোত্তুর খেলা।
বেশ কিচ্ছুক্ষণ আমরা আপনার গতিবিধি লক্ষ্য করছি। আপনি প্রথমে যাচ্ছিলেন ঐ দিকে, হঠাৎ হাঁটা দিলেন উল্টোদিকে। তার কারণটা কী বলা যায়?
না বলে আর উপায় আছে! কিন্তু বলার পরে মনে হয় তাঁর সন্দেহ আরো বেড়ে গেল! তিনি পরের প্রশ্নে আমার মনের গহন গভীরে থাকা অপরাধ সংগঠনের একেবারে কাছে চলে এলেন।
প্রথমে আপনার খুব দ্রুতবেগে প্রায় দৌড়ে যাচ্ছিলেন, তা হঠাৎ আবার চলার গতি মন্থর করে দিলেন কেন?
বললাম;
ভেবেছিলাম দ্রুত হেঁটে গেলে ট্রামটা ধরতে পারব। তাই দ্রুত হাঁটছিলাম। একটু এগিয়ে ট্রাম ছেড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে বুঝেছি, তাড়াহুড়া করে লাভ নেই। ট্রাম ছেড়ে দিয়েছে, পরেরটা আসবে পনর মিনিট পরে। তাই আর দ্রুত হাঁটি নি।
জবাবে খুব সন্তুষ্ট মনে হলনা পুলিশকে। তিনি এবার জিজ্ঞেস করলেন; আপনারতো বাসা অন্য দিকে, এখানে কী জন্য এসেছিলেন?
কৈফিয়ৎ দিতে আর ভাল লাগছিল না। বললাম; এই প্রশ্নের জবাব কী আমাকে দিতেই হবে?
তিনি বললেন; না, এই প্রশ্নের উত্তর বাধ্যতামূলক নয়।
তিনি আর প্রশ্ন করলেন না। আমরা মুখমুখি দাঁড়িয়ে রইলাম চুপচাপ।
গাড়ি থেকে নেমে এল দ্বিতীয় পুলিশ।
এটা কী করে সম্ভব! একটাও বেআইনী উদ্ভাস্তো নেই তা হলে শহরে!
বিরক্তিতে তাঁর কপালের ভাজকরা চামড়া ভেসে উঠল গাড়ির লাইটের আলোতে।
নিজেদের মধ্যে কী কথা বলছিল বুঝতে পারছিলাম না। বোঝার ইচ্ছেও ছিল না। ভিখেরীকে ভিক্ষা দেয়ার মতো পরিচয় পত্রটি ধরিয়ে দিল আমার হাতে। গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিল দু’জন, এবার সাহস করে আমিও একটা প্রশ্ন করে ফেললাম;
আমাকে তল্লাশী করলেন কেন?
কোন প্রকার ভণিতা না করেই একজন দয়াপরবশ হয়ে বলল; ঘনঘন গাড়ি চুরি হচ্ছে আজকাল, সে জন্যই আমরা লোকের চলাচলে নজর রাখছি।
পুলিশ চলে গেল। ধীরে হেঁটে এলাম ট্রামষ্টেশনে। কাঁচের দেয়াল এবং কাঁচেরই একটা একচালা ছাদের নীচে যাত্রীছাউনী। অপেক্ষা করার মতো কঠিন কাজ আমি ভাল পারি না। তাই ছাউনীর পেছনে চত্তরটাতে উঠে এলাম। জায়গাটা রাস্তার ফুটপাতের চেয়ে একটু উঁচু। দুটো সিঁড়ি বেয়ে উঠলে বিশাল উঠান। কিন্তু পাকা। মাঝখানে বিশাল একটা গাছ। গাছটার কারণে পেছনে রাজার মতো সিংহাসনে বসা চার্চটাকে তেমন চোখে পরে না। গাছটার পেছন দিকে মাটিতে চার্চটাকে যেন ভাল ভাবে অন্ধকারেও দেখা যায়, সেই জন্য লাইট বসানো। কী নয়ান কারা কারুকাজে খঁচিত! দেখলে মনে শান্তি আসে। সামনের যাত্রীছাউনী, দোকান-পাট, ঘর-বাড়ি অনুগত প্রজার মতো মাথানত করে আছে সে বিশাল চার্চের সামনে।
গাছটার ডালা ফলের ভারে এত নীচু যে, চাইলে হাতদিয়ে ধরা যায়। মনে হয় এই গাছটাতে সব চেয়ে আগে ফুল ফুটো, ফল হয়। অনেকটা আমের মুকুলের মতো ফলের ডালি হলেও, ফলটা ভেরেণ্ডার মতো, কিন্তু ধুতরা ফলের মতো কাঁটা ওয়ালা। এখানেও (জার্মনে) দেখি সর্বসাধারণের জন্য কেবল মাকাল ফলের বৃক্ষের সোভা!
ট্রামের শব্দে ষ্টেশনে এগিয়ে এলাম। প্রতি মাসে বা কেউ চাইলে বছরের জন্য জনসাধরণের চলাচলের বাহনের টিকিট কিনে নিতে পারে। বছরেরটা একবারে কিনলে দশ মাসের টাকা দিতে হয়। এই কিকেটে ট্রাম-বাস সব কিছুতে যাতায়ত করা যায়। যতবার খুশী, যত দিকে খুশী। ব্যবস্থাটা বেশ আরামদায়ক। টাকিট ও কালে ভাদ্রে কোন চেকার আসলে তাকে দেখাতে হয়। সেটা হয়তো মাসে ছয় মাসে একবার ঘটে। যাত্রীদের টিকেট আছে কী নেই, সেটা নিয়ে চালকের কোন মাথাব্যথা নেই। তিনি মাসিক বেতনে ট্রাম-বাস চালান। কাজেই কে উঠল কে নামল তাতে তাঁর ভ্রক্ষেপ সামান্যই। এবং ষ্টেশনে কোন যাত্রী না নামলে বা উঠার যন্য কাউকে অপেক্ষা করতে না দেখলে তিনি চলতেই থাকেন। সোমবার রাতে এই সময়ে লোকের চলাচল তেমন নেই। যদি কোন যাত্রী নামার না থাকে, এবং চালক আমাকে দেখতে না পান, তা হলে চলে যাবেন। সেই জন্যই একটু দ্রুত যাত্রীছাউনীতে হাজির হলাম। কেউ নামল না, আমি ছাড়া ট্রামে কোন যাত্রিও নেই।
নামলাম এসে কৌনিক্সপ্লাট্স। জায়গা ঢাকা শহরের গুলিস্থানের মতো। শহরের নাভী। কিন্তু গুলিস্থানের মতো নোংড়া না। বেশ পরিচ্ছনা। সব দিকে যাওয়ার রাস্তা শুরু হয়েছে এখান থেকে। একটা চত্তরের চারিদিকে ট্রাম আর বাস চলার রাস্তা। এখান থেকে শহরের রেল ষ্টেশনের দিকে এগুতে যেতে হয় একটা পার্কের ভেতর দিয়ে। অনেক বড় বড় গাছের নীচে অদ্ভূত সুন্দুর সাজানো ফুলের বাগান। বাগানটা পার হলে রাস্তা। রাস্তাটা পার হলে, সেই দোকানের সামনের পায়ে চলার পথ, যেখানে সোনিয়ার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। সেদিকেই গন্তব্য। যেখানে ট্রাম বাস থামে সে ষ্টেশনটা আমার পেছনে। তিন চারজন কালো চামড়ার মানুষ আমার পেছন দিয়ে হেঁটে গেল শহরের পানশালার দিকে। নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল কোন আচেনা ভাষায়। বেশ জোড়ে জোড়ে। তাদের পেছনে আরো চার-পাঁচ জন তরুণ একই দিকে যাচ্ছে। দুটো দলের দূরত্ব পঞ্চাশ মিটার হবে হয়তো। পেছনে সাদা চামড়ার জার্মান তরুণদের কেউ বেশ বড় গলাই অন্যদের উদ্দেশ্যে প্রস্তাব করল; দেখ দেখ, তিনটে নেগা (তাচ্ছাল্যার্থে কালো), চল সব কটাকে ধরে আচ্ছামতো একটা ধোলাই দেই।
জার্মান ভাষাটা শেখা একটা মস্ত বড় ভুল ছিল আমার। এই ধরণের ভয়ানক কথাগুলো বুঝতে পারার অসুবিধা হল; শুনেই ভয়ে নিজের গলা শুকিয়ে যায়। এবং ভয় হল সব চেয়ে বড় শত্রু। ঐ জার্মান তরুণরা আমাকে আক্রমনের কথা বলেনি। কিন্তু আমিও বিদেশী বলে আক্রান্ত হতে পারি, এই ভয় ঢুকে গেল মনে, নিজের অজান্তে! ভীত মানুষ দেখলে সাধারণত আক্রমনকারীরা নিজেদের শক্তি আক্রান্ত ব্যক্তির চেয়ে বেশী ভেবে নিজের শক্তি সম্পর্কে আত্ম বিশ্বাসী হয়ে উঠে। ফল হল ভীত ব্যক্তির নিশ্চৎ পরাজয়। অবশ্য এই ধরণের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এখানে না করলেও চলে। আমাকে কিংবা ঐ কালোদেরকে আক্রমন করলে জার্মান তরুণদের জয় নিশ্চিৎ। তারা সংখ্যায় বেশী। আর অন্তত আমি মেনেই নিয়েছি যে; কোন না কোন ভাবে জার্মানরা আমার চেয়ে বড়। এই অবস্থায় সমতার লড়াই অবান্তর। আমি কালোদের পক্ষে যোগ দিলে লড়াইয়ের ফলাফল ভিন্ন হবে এমনটা মনেই আসে না। শুধু নিজের জান বাঁচাতে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছি দুটো দালানের চিপা গলির দিকে। দৌড় দিতে ইচ্ছে করছিল এই বিপদ জোন পার হতে। কিন্তু দৌড় দিলে বিপদ হবে। ওরা বুঝে ফেলবে যে, আমিও আক্রান্ত হওয়ার ভয়েই দৌড় দিচ্ছি।
যে গলিতে ঢুকেতে যাচ্ছিলাম, সে গলি থেকে আসছে আরেকজন। প্রথম দর্শনেই মূর্ছা গেলাম। স্কিন হেড। লম্বায় আমার চেয়ে বিঘত খানেক উঁচু। নিয়ন লাইট ঝিলিক দিচ্ছে কামানো মাথায়। শুনেছি মাথায় বাজ পরা মানুষ নিজের গায়ে বাজ পরার মুহুর্তে যেভাবে থাকে তার পরেও ঠিক সেভাবেই থাকে। আমার অবস্থা তেমনই হল। কিছু বলতে-করতে পারলাম না। শুধু শেষ প্রার্থনার মতো কামনা করলাম; যত মারই খাই, বেঁচে যেন থাকি।
লোকটা আমার পেছনের ঐ জার্মান তরুণদের উদ্দেশ্য একটু চেঁচিয়েই বলল; ঠোলার (পুলিশের) গাড়িটা দেখেছ নাকী তোমরা?
তাদের কেউ জবাব দিল;
না, কেন কী হয়েছে?
আমার সামনে থেকে জবাব দিচ্ছে লোকটা আমার মাথার উপর দিয়ে;
আর বলো না, কোন শুয়োরের বাচ্চা, আমার গাড়ি ধাক্কা দিয়ে পালিয়েছে, ঠোলাগুলো একেকটা জমিদারের বাচ্চা। পনর মিনিট হয়ে গেল ফোন করেছি, এখনো টিকিটির দেখা পর্যন্ত নেই!
দুঃখিত তোমার দুর্ভাগ্যের জন্য, আজকাল পুলিশের উপর ভরসা করা কঠিন। পুলিশগুলো জনগনের টাকা খেয়ে বিদেশীদের পক্ষে যুদ্ধে নেমেছে! দেখ ভাগ্য ভাল হলে হয়তো তারা আসবে।
তরুণদের কেউ জবাব দিল। এর মধ্যে আমার বাজ পরা অবস্থার একটু উন্নতি হল। দোড় দেব ভাবছি। কিন্তু কোন দিকে, তা ঠিক করতে পারলাম না। মরার আগে একটা শেষ চেষ্টা বলে কিছু তো করতে হবে। উপায় নেই। আমার সামনে দাঁড়ানো স্কিন হেড লোকটা আমার মনের কথা পড়ে ফেলেছে।
একদম চুপ করে এখানে দাঁড়িয়ে থাক।
কথাটা বলল এক ধরণের চাপা ক্রোধকে সংবরণ করার মতো নীচু, অথচ সংযত কণ্ঠে।
দেখছনা, নাৎসীর বাচ্চাগুলো! পুলিশের কথা শুনেছে তো, এখন ভাগবে। আমার কোন গাড়ি-টাড়ি কিছু নেই। বানিয়ে বলেছি গাড়ির কথা। নাৎসী গুলো খুব সাহস দেখালেও পুলিশকে ভয় পায় ঠিকই। তাই পুলিশ আসার গল্প ফেদেছি। অবশ্য পুলিশও বিদেশীদের অযথা হয়রানী করে। কিন্তু দৈহিক নির্জাতন করতে পারে না। এর মধ্যে জার্মান ছেলেগুলো নিজের মধ্যে গল্প করতে করতে অদৃশ্য হয়ে গেল।
আমি পিটার। প্রিটোরিয়ার পিটার। জেম্স বণ্ডের মতো করে বললো নিজের নাম। আমি ভেবেচেকা খেয়ে হাত রাখলাম শুধু পিটারের হাতে। কিছু বলতে পারলাম না।
তোমাকে ধমক দেয়ার জন্য আমি দুঃখিত।
কিছুটা কৈফিয়ত দেয়ার মতো বলল; এ ছাড়া কোন উপায়ও ছিল। নতুন চেটে বাল গজানোর মতো অজ পাড়া গায়ের নাৎসীর বাচ্চারা বিদেশী দেখলেই বীরত্ব দেখাতে আসে। কিন্তু আসলে হার্ম লেস।
আচ্ছা, তুমি ইংরেজী জান?
এমন প্রশ্নও আর শুনিনি জার্মানদের কাছ থেকে। সবাই প্রশ্ন করে; তুমি জার্মান বলতে পার?
আর এই স্কিন হেড প্রশ্ন করছে; তুমি ইংরেজী জান?
তার পর নিজে থেকেই বলল; এই দেশে এসে আমিও দিনে দিনে জার্মান হয়ে যাচ্ছি। লোক কে জিজ্ঞেস করি তুমি এইটি জান ঐটা জান? আমি যেন কোন হরিদ্স পাল হয়ে গেছি। কে কী জানে তাই দিয়ে মানুষকে বিচার করা শুরু করেছি। সরি। সরি কথাটা ইংরেজীতেই বলল সে। কিন্তু আমি দুঃখ প্রকাশ করার জন্য চিবিয়ে চিবিয়ে যতটা সম্ভব জার্মান উচ্চারণের কাছা কাছি গিয়ে বলি “এন্টশুল্ডিগুং”।
আমার কোন অসুবিধা হচ্ছেন না তোমার কথা বুঝতে। কিন্তু তুমি চাইলে আমরা ইংরেজীতেও আলাপ করতে পারি। আমার ইংরেজী তেমন সুবিধের নয়, তবে কাজ চলে যাবে। ইংরেজীতেই বললাম।
কিন্তু তোমার নামটা তো এখনো বললে না হে! আসলে এতো আদব-কায়দা এখনো আয়ত্ব করতে পারিনি। কেউ নিজের নাম বলে হাত বাড়ানোর মানে হচ্ছে ঐ বাড়ানো হাত ধরতে ধরতে নিজের নামও বলতে হয়। দুঃখ প্রকাশ করে নাম বললাম।
জার্মান আদব কায়দা তো ভালই রপ্ত করেছ! কথায় কথায় দুঃখ প্রকাশ কর।
হেঁসে ফেললাম পিটারের কথায়। সত্যিই, আমরা জার্মান সাজার প্রতিযোগীতায় নেমেছি। চলায়, বলায়, পোষাকে, খাওয়ায় সব কিছুতে জার্মানদের মতো হতে চাই। দু’একজন চামচ দিয়ে ভাত খাওয়া শুরু করেছে। অথচ, মাহবুব ভাইয়ের জার্মান বন্ধু-বাদ্ধবরা না কী তাদের বাসায় এসে হাত দিয়ে ভাত খায়!
জলে কুমিড় ডাঙ্গায় বাঘ দেখে ভয়ে গলা শুকিয়ে গিয়েছে। সেটাই বললাম পিটারকে।
চল তা হলে কোন পানশালায় যাওয়া যাক। আমি তোমাকে দাওয়াত দিচ্ছি। দাওয়াতের মানে হল, আমার পয়সা পিটার দেবে। তার কোন দরকার নাই। আমার কাছে যথেষ্ট পয়সা আছে। কিন্তু আমরা সাধারণত এই দাওয়াত টাওয়াত দেই না। সবাই মিলে কোথাও বসে চা-টা খাই। কেউ একজন বিল দেয়। বিল বেশী হয়ে গেল সবাই মিলে দেই। কিন্তু যার যার তার তার ব্যাপারটা মন্দ নয়।
কিন্তু যাব কোথায়? আমার অভিজ্ঞতায়, বিদেশীদের বসার মতো জায়গা এই শহরে খুব বেশী নাই। তা ছাড়া সোমবার দিন বেশীর ভাগ পানশালা বন্ধ।
চলো আজ আফ্রিকায় যাওয়া যাক। আমি সত্যিই আফ্রিকান। প্রিটোরিয়ায় জন্ম আমার। এখানে ক্যারেবিক বার নামে একটা বার আছে। বেশীর ভাগ খদ্দের কালো আফ্রিকান। অবশ্য কালোদের প্রতি যদি তোমার কোন ঘেন্না না থাকে।
ও মা কালোদের প্রতি আমার ঘেন্না থাকতে যাবে কেন! ওরাতো আমার পাঁকা ধানে মই দেয় নি। তোমাদের দক্ষিণ আফ্রিকার নেতা নেলসন ম্যাণ্ড্যালার মুক্তির জন্য আমরা মিছিল করেছি। তাঁর মুক্তিতে গান বেঁধেছি, গান গেয়েছি।
দুর বোকা কালো বা অপেক্ষাকৃত দুর্বল সম্প্রদায়ের মানুষকে ঘেন্না করতে কোন কারণ লাগে নাকী! আর লাগলেও সেটা পয়দা করতে সময় লাগে! কিন্তু নেলসন ম্যাণ্ডেলার জন্য তোমরা গান বেঁধেছ, সেটা শুনে চমৎকৃত হলাম সত্যিই। অবশ্য এটাও সাদা চামড়ার মানুষের মানের চিন্তা। সাদা চামড়ার মানুষ মনে করে; যা কিছু শুভ এবং মঙ্গলময়, তার সব কিছুর ইজারা নিয়েছে সাদা চামড়ার মানুষ। ভাল কিছু করার অধিকার কেবল তাদেরই আছে।
ভয় কী করে বন্ধুতে পরিনত হল বুঝলাম না! যার ভয়ে মৃত্যুর প্রমাদগুনছিলাম তার সাথে গল্পে পল্পে কোন দিক দিয়ে কী ভাবে এখানে চলে এলাম টেরও পাই নি! একটা দালানের চারতলায় খোলা দরজা দিয়ে ভেসে আসছে; “সালামালিকুম সালম”। গানটা এতো বাজছে সব জায়গায়, যেন কোন মিছিলের শ্লোগান। শিল্পীর নাম সম্ভবত আলফাজ ব্লণ্ডি। ভাষাটা ফরাসী, সুরটা বব মার্লির রেগি। আনুমান করি ইহুদী-খৃষ্টান-মুসলিম সব সম্প্রদায়ের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের আহ্বান আছে গানটিতে। কারণ এই সব চেনা শব্দ গুলো বার বার ঘুরে ফিরে আসছে গানে। অবশ্য আমার ধারণা ভুলও হতে পারে। তবে ধারণা ঠিক হওয়ার পেছনে কাজ করে আমার দুর্বল সংখ্যালঘু অবস্থান। দুনিয়াতে শান্তির আহ্বান আসে কেবল দুর্বলের পক্ষ থেকে। কারণ শক্তিতে সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরুর সাথে কখনো পারবে না। এমনকী গনতান্ত্রিক বা নিয়মতান্ত্রিক বা এই জাতীয় যা কিছু মানুষ পৃথিবীতে আবিস্কার করেছে; কোথাও সংখ্যালঘুর জয়ের বিধান রাখা হয় নাই। যা কিছু হয়েছে দয়া বা করুণা করে সংখ্যা গুরুরা তা করেছে। সংখ্যালঘু বা দুর্বলের এক মাত্র হাতিয়ার হচ্ছে দুঃখ।
মন্তব্য
বাঃ! আগের পর্বে মন্তব্য করতে না করতেই নতুন পর্ব পেয়ে গেলাম!! একেই বলে কপাল!! যথারীতি মুগ্ধ!! চলুক!!
ধন্যবাদ। আসলে বউ-বাচ্চা দেশে তো, এই সুযোগে লেখাটা শেষ করার ইচ্ছে। এই পর্বটা অনেক বড় হয়ে গেছে। তাই ভেঙ্গে দিতে হচ্ছে। চেষ্টা করব প্রতি সপ্তাহে একটা পর্ব দিতে।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
একটানে শেষ হয়ে গেল আর আপনি বলেন কি না এটা বড়?? কই যাই?? আশা রাখি পরেরটা আরো বড় হবে।
হবে।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আমারতো মনে হল শুরু করার আগেই শেষ হয়ে গেল আর আপনি বলতেছেন বড় হয়ে গেছে
আপনার এই সিরিজে আমি এখন আর ভাল-মন্দ কিছু বলি না, প্রতিবার এক কথা বলে কি লাভ?!?! নব্য নাৎসীরা এখনো যায় নাই, মাঝেমধ্যে রাস্তায়-দেয়ালে হুট করে চোখে পড়ে।
--বেচারাথেরিয়াম
ধন্যবাদ বেচারাথেরিয়াম। পর্বটা বড় ছিল বলে কেটে দুইটা করে ফেললাম। সেই দুইটার প্রথমাংশ এইটা। তার পরেও পরেরটা এখনই এটার দ্বিগুন এবং আরো কয়েক লাইন বাড়তে পারে। আগ্রহ নিয়ে পড়েন বলে ছোট মনে হয় আপনার কাছে। যেটা আবার আমার খুব ভাল লাগে।
না, নাৎসীরা এখনো বেশ ভাল ভাবেই আছে। পরের পর্বে আরো একটু বিস্তারিত বলব।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
কখন যে শেষ হল টেরই পেলাম না। আমিও রাস্তায় কালোদের বা তরুন দের দেখলে ভয় লাগে। চেষ্টা করি তারাতারি নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে। ভাল থাকবেন।
ধন্যবাদ।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
চলুক পুতুল ভাই। পড়ছি।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ কবি।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
বই বের করতেই হবে --- তারপর কোন এক ট্রেন জার্নি তে পুরোটা পড়তে চাই একসঙ্গে
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
ধন্যবাদ ক্রেসিডা।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
চেষ্টা চলছে। ধন্যবাদ।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
হ্যাঁ, চলুক। পড়ছি।
থেংকু বস।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আমিও নীরব পাঠক হয়ে পড়ে যাচ্ছি। সাথে আছি, অপেক্ষায় আছি আরো পড়ার ও মুগ্ধতা পুষে রাখার তরে ..
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
খুব ভালো হচ্ছে লেখা। স্যাম এর মত আমিও একটানে বইটি পড়তে চাই। এই বইমেলায় বের করা যাবে কি?
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
এই বই মেলায় হবে কীনা বলা মুস্কিল, তবে চষ্টা করব। ধন্যবাদ নীলকমলিনী।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
নতুন মন্তব্য করুন