বারের খোলা দরজায় দাঁড়িয়ে দেখি সাদা কালো। বার কীপার থেকে শুরু করে সব স্ত্রীলিংগের মানুষ সাদা আর বিপারীত লিংগের সব কালো। আর আছে পিটারের মতো দুই তিনজন ক্সিন হেড। বারকীপার মহিলার মাথার জটা আমাদের দেশের সাধূ-সন্যাসীদের মতো। বেশ মিষ্টি হাসিতে হ্যালো বললো পিটারকে।
মেঘ না চাইতে জলের মতো বিয়ার এসে গেল টেবিলে। পিটির পাশের টেবিলের কয়েকজনের সাথে করমর্দন করে ফিরে এল। গ্লাসে গ্লাম ঠুকে চিয়ার্স বলে এক চুমুকে প্রায় অর্ধেক তরল পেটে চালান করে দিল সে। আমি কোন রকমে ঠোঁট ভেজালাম। একটা ব্যাপার আমি বুঝতে পারলাম না। পিটার বলছে সে প্রিটোরিয়ার পিটার। জার্মান বলছে মাতৃভাষার মতো। ভণিতা না করে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম।
ও এই কথা? বলছি; শোন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে অনেক নাৎসী পালিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকায় চলে যায়। অবশ্য অনেক ইহুদীও ঐ সব এলাকায় চলে গেছে। আফ্রিকার অনেক জর্মান কলোনীকে এখনো জর্মানরা জায়গা-জমি দখল করে বা কিনে জমিদারী হালতেই আছে।
আমার বাবা নাৎসী। বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকায় বেশ ভালই ছিলেন। আমি ঘরে জর্মান ভাষাই বলতাম। পড়েছি জার্মান স্কুলে। জন্মও হয়েছে সেখানেই। কিন্তু ইংরেজী ছাড়া আর কোন ভাষা শেখার সুযোগ ছিল না আমার জন্য আফ্রিকায়।
বিয়ারে গ্লাস আবার কাত হল পিটারের মুখে। পিটার ইংরেজীও বলে মাতৃভাষার মতো। বুঝতে কষ্ট হয়। একটু বেশী মনোযোগ দিতে হচ্ছে। গ্লাস ধীরে ধীরে নামিয়ে রাখলাম পিটারের চোখে চোখ রেখে।
এত দিনে যত বড় বড় বা ক্ষমতাধর নাৎসী ছিল, তাদের বিচার হয়ে গেছে। এদিকে পৃথিবী এগিয়ে গেছে। দুনিয়ার সব মানুষ বর্ণবাদের বিপক্ষে। দেখতে দেখতে মেণ্ডেলার দুঃখে সবাই সমব্যাথী হয়ে গেল। কালোদের হাতে চলে গেল ক্ষমতা। বাবা দেখলেন জার্মান এখন তার জন্য যথেষ্ট নিরাপদ। দক্ষিণ আফ্রিকার খামার বিক্রি করে তিনি জার্মানে চলে এলেন। কিছু বাড়ি-ঘর এখানে উত্তরাধীকারী সূত্রে আমার বাবার ছিলই। আফ্রিকা থেকে খামার বিক্রির টাকা পয়সা দিয়ে এখানে আরো বাড়ি-ঘর কিনেছেন, কিনছেন।
খুব সুযোগ সন্ধানী মানুষ আমার বাবা। তার সাথে জার্মান আসা ছাড়া উপায় ছিল না আমার। অবশ্য পারিবারিক যাতায়ত সব সময়ই ছিল আমাদের। দাদু আমাকে এখনো বকা দেন ইহুদী বলে। আমাদের পরিবারে প্রায় সবাই এই ধরণের মানুষ।
কিন্তু তুমি এতো ভাল মানুষ হলে কী করে! মানে মানুষ তো সব কিছু শেখে তার বাবা-মা এবং পরিবারের কাছ থেকে। তোমার পরিবারে সবাই নাৎসী, অথচ তুমি ....
আরে নাহ।
বিয়ারের গ্লাসে চুমুক দিয়ে, খালি গ্লাস উঁচু করে ধরে তাকাল বারকীপার মহিলার দিকে। তিনি বোতল খুলে নতুন গ্লাসে বিয়ার ঢালা শুরু করলেন। দুই গানের কলির চরণের ফাঁকে সামান্য বিরতীর মতো ঘটল ব্যাপারটা।
আগের বলা; আরে নাহ, থেকেই শুরু করল পিটার;
আমি তো নাৎসীর সন্তান। তাদেরটাই খাচ্চী-দাচ্ছি। হয়তো তাদের সম্পত্তিও পাব একদিন উত্তরাধীকারী সূত্রে। অবশ্য সেই উত্তরাধীকার সব জার্মানেরই আছে। যত নামী-দামী জার্মান কম্পানী আছে সবাই ইহুদীদের খাঁটিয়েছে কৃতদাসের মতো। এর থেকে চার্চও বাদ দেয়া সম্ভব না। সেই অর্থে নাৎসীদের করে দেয়া সুযোগ সবাই কাজে লাগিয়েছে।
কিন্তু নাৎসী কায়দায় আমাদের উপরে নির্জাতন করেছে সব উইরোপিয়ান কলোনীর মালিকরা। এত ভয়ানক ছিল পর্তুগীজরা যে; তাদের নিয়ে শিশুদের ঘুমপাড়ানী ছড়া আছে। বৃটিশ ইস্টিন্ডিয়া কম্পানী আমাদের মসলিন তাঁতীদের হাত কেটে দিয়েছে, যাতে তারা কম্পানীর তৈরী তুলার কাপড়ের চেয়ে উন্নত কাপড় না বানাতে পারে। নিজের ধানী জমিতে নীল এবং তুলাচাষে বাধ্য করেছে কৃষকদের। যার অবিসম্ভাবী ফল দুর্বিক্ষ। না খেয়ে মরেছে লাখে লাখে মানুষ।
কেন এবং কী কারণে কথাগুলো মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল বুঝলাম না।
পিটার খুব একটা অবাক হল বলে মনে হচ্ছে না।
সে তো সবাই করে। কলোনিয়ালিজমের শুরুতে ইংল্যাণ্ডে শোনা যেত; বৃটিশদের সববাসের জন্য জায়গা দরকার। সংগতি মানুষকে সাম্যর্থ এনে দেয়। জ্ঞনে বিজ্ঞানে এগিয়ে থাকার কারণে ইউরোপিয়ানরা তার সদব্যবহার করেছে। দক্ষিণ আমেরিকা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে স্পেন। সেই মাটিতে এখন স্পেনিশ ছাড়া আর কিছু জন্মায় না। আমেরিকা, আফ্রিকা, অষ্ট্রেলিয়া এখন ইংরেজী ভাষী সাদা চামড়ার মানুষের দেশ। সেই তুলনায় তোমাদেরকে তো ভাগ্যবানই বলতে হয়।
মনে ভাবলাম, তাই হবে হয়তো।
পিটার যেন উৎসাহী হয়ে উঠেছে; মজার ব্যপারটা দেখ; এখন কিন্তু যে কোন একাডেমিক আলোচনার আগে বলে নেয়া হয়; পোস্ট কলোনিয়ালিজম। তার মানে কলোনিয়ালিজমের পরের সব অপকর্ম নিয়ে আলোচনা। তার আগের সব অপকর্ম বাদ। সব ঠিক আছে।
এখন জার্মানীতে আলোচনা হচ্ছে নাৎসীদের সময়ে কৃতদাস হিসাবে খাটানো ইহুদীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। দেয়া উচিত। সরকার উহুদীদের সেই মামলা ঝুলিয়ে রাখছে যদিও। কিন্তু আমার মতে দেয়া উচিৎ। এখন শুধু কলোনিয়ালিজমের সময়ে আফ্রিকায় নিয়ে আসা ভারতীয়রা যদি ক্ষতিপূরণ চায় বা তাদের উপর নির্জাতনের বিচার চায়। সেই ভয়ে পোস্ট কলোনিয়ালিজম শব্দটা জনপ্রিয় হয়ে গেছে।
কলোনিয়ালিজমে জার্মানরা খুব সুবিধা করতে পারেনি। অনান্য সাদা চামড়ার মানুষরা সব দখল করে নিয়েছে। যখন তৃতীয় রাজ্য তৈরী (নাৎসী জার্মান) হয়, তখন অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছিল কেবল ইহুদীরাই। অবশ্য পুরানো যে কোন সাহিত্য ঘাটলে খারাপ যত চরিত্র আছে, সেখানে ইহুদীদেরই নাম পাবে। মানে জনমনে ইহুদীদের সম্পর্কে কখনো ভাল ধারণা ছিল না।
সব গুলো ক্রুশেড ইউরোপ থেকে শুরুই হতো ইহুদী নিধনের মাধ্যমে। এখন পোস্ট কলোনিয়াল আলোচনায় নাৎসী বর্বরতা ছাড়া আর কিছু নেই। নাৎসীদের বর্বরতা অতি অবশ্যই মানব সভ্যতার জন্য বিরাট কলঙ্ক। তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু একটা বর্বরতা সংঘটন মানেই তার প্রতিকারও হবে, এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। ইহুদীদের পক্ষে যথেষ্ট মেধাবী এবং শক্তিশালী মানুষ আছে, যারা এই বর্বরতা বিভিন্নভাবে ধরে রেখেছে এবং মানুষকে বোঝাতে পেরেছে যে; এটা একটা বর্বরতা।
তার বিপরীতে অন্য যে বর্বরতা পৃথিবীতে ঘটেছে, যদি মেনেও নেই যে, সে গুলো গুনগত মানে নাৎসীদের মতো ছিলনা; তার পরেও বর্বরতা বর্বরতাই। প্রত্যেকের দুঃখই তার কাছে অসহনীয়। কিন্তু তাদের দুঃখ বড় করে তোলার বা ধরে রাখার জন্য তেমন মেধাবী বা মনোযোগী মানুষ খুব অল্প। টাকা-পয়সাও একটা বিরাট বাঁধা।
এর বাইরে হচ্ছে বর্ণবাদ। তুমি যা কিছু কর কোন ক্ষতি নেই। কেবল ইহুদী বিরোধী না হলেই হল। এটাই এখন এই দেশে চলমান মতবাদ। বর্ণবাদী হওয়া কখনো অপরাধ ছিল না। এখনো না। তো, এই বর্ণবাদীরা নিজেরদের বর্ণের ইহুদীদের আক্রমন করেছে, এইটাই সমস্যা। এবং এর বিচার হতেই হবে। ঠিক আছে, তাতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু অন্য যা কিছু বর্বরতা হয়েছে তার বিচারও তো হওয়া উচিৎ। কিন্তু তা হবে না। কারণ; তারা নীচু বর্ণের মানুষ।
পিটারের দ্বিতীয় গ্লাসও খালী হয়ে গেল, অথচ আমার প্রথম বিয়ারই এখনো শেষ হচ্ছে না। কিন্তু বিয়ার বেশীক্ষণ গ্লাসে ঢেলে রেখে দিলে গরম হয়ে যায়। কাজেই আমিও পিটারের মতো গ্লাস উঁচু করে বারের পেছনে দ্বাড়িয়ে থাকে জটাধারী সন্যাসীনির দুষ্টি আকর্ষণ করলাম।
পিটারের কথা এতো মনোযোগ দিয়ে শুনতে হচ্ছে যে; প্রশ্রাবে মূত্রথলি ফেটে যাওয়ার অবস্থা এই একটু অবসরে টের পেলাম। আমার অসহনীয় অবস্থা বোধ হয় কথক টের পেয়েছে। চেয়ার ছেড়ে উঠে নিজে বলল; চল আমার বিয়ারও ফেলতে হবে। টয়লেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি ওর পেছনে পেছনে। বারটাতো বেশ বড়ই। এল সাইজের। আমরা একটা কোনায় বসেছিলাম বলে আমি আগে দেখতে পাইনি। ওখানে আলো-আঁধারীতে আরো কিছু ছেলে-পেলে আমার মতই গায়ের রং। দু’একটা চেনা মুখও দেখলাম। কোথায় যেন দেখেছি এমন একটা অনুভূতি অথবা বর্ণ বা রংটা কাছা-কাছি বলে চেনা-চেনা মনে হচ্ছে।
পেট খালাশ করে ফিরে এলাম টেবিলে। এর মধ্যে নতুন বিয়ার এসে গেছে। কিন্তু সাথে দু’জনের আরো দুটো ছোট গ্লাস। বোতলের ঢাকনার মতো সাইজ সে কাঁচের গ্লাসের, তবে স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ জলে পূর্ণ। প্রশ্নবোধক চিন্হ চোখে নিয়ে তাকালাম সন্যাসীনীর দিকে। ব্যাপারটা ক্লিয়ার করতে এগিয়ে এলো আমার মতো দেখতে ছেলেগুলোর একজন।
আমি তোমাদের নেমতন্ন করেছি। আমার দিকে তাকিয়ে বলল; তোমাকে তো দেখি লাগারে প্রায়ই। তুমি মনে হয় তিন তলায় থাক। আমি দোতলায় থাকি।
বিনয়ের সঙ্গে বলল ছেলেটি।
কিন্তু কেন? প্রশ্ন করল পিটার। মগনা পেলে আলকাতরা খাওয়া বাঙ্গালি আমি। বিষ না হলেই হল। দিয়েছে যখন খেয়ে ফেলি এমন একটা ভাবনা আমার।
ছেলেটি প্রশ্ন শুনে খুসী হয়েছে মনে হয়। মুখে একটা খুসী এবং গর্বের ভাব নিয়ে বলল;
আমার ভাগ্য খুলে গেছে। কাল রাত জুয়ায় জিতেছি বারশ মার্ক। সকালে ভিসার জন্য গেসলাম ফরেন অফিসে। তাঁরা আমাকে বলেছে, আপনি ইহুদী, এখানে এসাইলাম প্রর্থীদের সাথে থাকতে হবে না। হোম অফিসে যান এই কাগজ নিয়ে তারা আপনাকে বাসা খুঁকে দেবে এবং জার্মান নাগরিকদের মতো বেকার ভাতারও ব্যবস্থা করে দেবে। অবশ্য যদি আপনি চান। এই অবস্থায় না করতে পারে কোন মানুষ! আমি সত্যিই খুব ভাগ্যবান। আর সে জন্যই তোমাদের দাওয়াত দিচ্ছি। অবশ্য তোমরা যদি চাও, আমাদের টেবিলে এসে বসতে পার, অথবা আমরা তোমাদের টেবিলে। ভাল ভাবে ফূর্তি করা যাবে। আজকে তোমরা সবাই আমার মেহমান।
মানুষজন চলে গেছে ধীরে ধীরে। পাঁচ-ছ জন সবাই মিলে ওদের টিবেলে গিয়েই বসলাম। ইহুদী ছেলেটি বলল; আমার নাম মুসা। আমরা নিজের নাম বলে তার সাথে হাত মেলালাম। কিন্তু ছেলেটি ইহুদীদের মতো ফর্সা বা সাদা নয়। আমার মতো ফর্সাও নয়। গড়পরতা বাঙ্গালির মতো গায়ের রং।
কী আছে গ্লাসে? জার্মানদের জিজ্ঞাসার যেন শেষ নেই! পিটারের প্রশ্নশুনে এবার একটু বিরক্তই হলাম। কিন্তু বললাম না কিছুই।
বি ফিফটি টু। বিগলিতে হাসিতে মুখ ভাসিয়ে জবাব দিল মুসা।
এর মধ্যে বারের সন্যাসীনিও টেবিলে এসে বসেছে।
এবার বি ফিফটি টু-র তর্জমার দায়ীত্ব নিলেন তিনি স্বপ্রনোদিত হয়ে।
আমেরিকান লং ট্রেক বোমারু বিমানের নাম বি ফিফটি টু। এই মদের তেজ সেই বিমানের মতো, খেলে আকাশে উড়ার শক্তি আসবে গায়ে।
কিন্তু মুসার চেহারা দেখে সে কথা বিশ্বস করা কঠিন। অবশ্য মুসা যদি এর আগে বি ফিফটি টু না খেয়ে থাকে তাহলে ভিন্ন কথা। নির্বাচনের সময় মাঠকর্মীরা দিন-রাত না ঘুমিয়ে গনণযোগাযোগ করে নেতা নির্বাচিত হলে ক্লান্ত শরীরে বিজয় মিছিলে যোগদেয় যে চেহারা নিয়ে, মুসার দশা অনেকটা তেমন। নীচে কালি পরা চোখ গর্তে ঢোকা তার। হয়তো অরিক্ত পান আর অতি অল্প খাবারের এই ফল। অবশ্য জার্মারা বলে বিয়ার হচ্ছে তরল রুটি। কিন্তু বিয়ার খেলে আমার কেবল ক্ষুধা-তৃষ্ণা বেড়ে যায়!
আচ্ছা, ইহুদী হলে এই দেশে থাকা যায়!
আমার অবাক প্রশ্ন নিজের অজান্তেই বের হয়ে গেল মুখ দিয়ে। মুসা একটু বিব্রত হল মনে হয়। আমার প্রশ্ন শুনে।
আমাদের লাগারের দ্বিতলে আরব আর তুর্কীদের আস্তানা। আমাদের তলায় ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা আর বাংলাদেশ।
আমরা আরব তুর্কী বললেও ওদের আলাদা পরিচয় আছে। তুর্কীদের অনেকেই কুর্দী। কুর্দীরা আবার ইরান বা ইরাকে বা তুরস্তের কুর্দী। বাকীরা ফিলিস্তিন। ধর্মে প্রায় সবাই হয়তো মুসলমান। ইহুদী হয়ে বিশেষ করে ফিলিস্তিন মুসলমানদের সাথে থাকা কঠিন। কিন্তু মুসাকে এমন আলাদা বিশ্বাসের মানুষ বলে মনে হয়নি কখনো। অবশ্য আলাদা বিশ্বাস পালনের কোন ব্যবস্থা আমাদের নেই এখানে। সর্দারজ্বীরা প্রতি রবিবার সকালে লাগারের সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়ায়। এটা ওদের ধর্মের প্রকাশ। মাঝে মাঝে মনে হয় ধর্মগুলো কেবল এই একটা প্রথা পালন করলেই সব লেটা চুকে যেত। মুসাওতো এখন দাওয়াত দিল সেই ধর্মের কারণেই।
সন্যাসীনি মুখ খুললেন; ইহুদীদের নির্জাতনের কিছুটাও যদি লাঘব হয়, সেই জন্যই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানে আইন হয়েছে; পৃথিবীর যে কোন ইহুদী জার্মানে বসবাস করতে পারবে।
ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সব চেয়ে বেশী মুস্কিলে পরেছে, আরব ইহুদীরা। তাঁরা না পারছে আরবদের পক্ষে কথা বলতে, না পারছে ইসরাইলী ভূমিদশ্যুতার প্রতিবাদ করতে।
মুসার সাথে আছে আরো দু’জন। তাদের একজন নাম বলেছিল রশিদ। সে বলল;
মুসা আমাদের কাছে আরব। যদিও ইসরায়িলীরা বলে ভাল আরব মানে মৃত আরব। জীবিত আরব মুসা আমাদের ভাল বন্ধু। আমাদের বিরোধ আছে রাষ্ট্র ইসরাইলের সাথে। আরব ইহুদী বা ইহুদীদের সাথে কোন আক্রশ নেই।
এখন আমাদের আলোচনা চলছে ভাঙ্গা ভাঙ্গা জার্মানে। উচ্চারণ এবং বাক্য বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক হচ্ছে না। আর মাতাল হলে উচ্চারণ এবং বাক্যগঠনে তার যথেষ্ট প্রভাব পরে। কোন কিছু বুঝতে না পারলে সন্যাসীনী এবং পিটার তাকাচ্ছে আমার চোখের দিকে। যেন আমি আরব আর আরব-ইহুদীদের মনের কথা পড়তে পারি। তবে একটা ব্যাপার লক্ষ করলাম। এই আরব বা পেলেষ্টান প্রসংগে মধ্যবিত্ত জার্মানরা কেন যেন খুব সাবধান হয়ে যায়। যেন রাজনৈতিক ভাবে সঠিক নয়, এমন কোন কথা না বলে ফেলে। সেটা হোক ইসরাইলের পক্ষে, হোক পেলেষ্টাইনের পক্ষে। এখানে তারা বেশ নিরপেক্ষ।
আমার সাথে দুনিয়ার কলোনিজম, নাৎসীদের ইহুদী নিধণ নিয়ে কথার খই ফুটাল পিটার। কিন্তু এখন বেশ চুপচাপ। একটা ব্যাপার ঠিক বুঝতে পারি না আমি। মানুষ আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায় কী করে! ইহুদী এবং পেলেস্তিনা প্রসংগে আমার বিন্দুমাত্র কোন আগ্রহ নাই। আমি শুধু বুঝতে চাই, মানুষ অন্যের সর্বনাশ করতে নিজের জীবন পর্যন্ত দেয় কেন!
সেটাই আমি রশিদকে জিজ্ঞেস করে বসলাম। হয়তো ফিলিস্তিন ইজরাইল সমস্যা দূর থেকে দেখি বলে আমার ঠিক নিজের কোন ক্ষতিবৃদ্ধি নেই। তাই আমি একটা ফেনুমেনেই স্থির থাকতে পারি।
রশিদের মূখের দিকে তাকিয়ে আছি আমরা সবাই। যেন তাকেই কৈফিয়ত দিতে হবে।
শোন একটা ঘটনার কথা বলি;
রশিদ যথেষ্ট ধীর্স্থিরে কথা বলছে।
আমার বোনের শ্বশুর বড়ি যাব। বোনটা প্রেগনেট। প্রথা অনুযায়ী হবু শিশুর মামার বাড়ি থেকে অনেক জিনিস পত্র দিতে হয়। মাইল পাঁচেক দূরত্ব। অনেক কিছুই নিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু পদে পদে বাঁধার কথা চিন্তা করে কিছু কাপড় আর সোনার একটা চেন ছাড়া আর কিছু সাথে নেই নি। প্রতিটা গ্রাম পার হলেই একটা ইসরাইলি আর্মির চোক পোষ্ট। ফিলিস্তিনাদের ক্ষেতের উপর ইসরাইলি নাগরিকদের গ্রাম। অনেক সময় আমরা জানার আগেই একটা গ্রাম উঠে যায় আমাদেরই জমিতে। এবং সেই জমির উপর দিয়ে যেতে হলে ইসরাইলের ভিসা লাগে।
ভিসা যোগার করাও খুব সহজ ব্যাপার না। ভিসা নিয়ে যেতে হবে তিনটা ইসরাইলী চেকপোস্ট পার হয়ে। তাদের কাছে যোগাযোগের যন্ত্র আছে। ভিসা অফিসের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারে আমার ভিসা কী কারণে দেওয়া হয়েছে। তারপরও তৃতীয় চেকপোস্ট যেতে দিলনা। কী করবে তুমি?
এই সব পরিস্থিতিতে অন্তত নিজের দেশে পরতে হবে না কখনো। রাজীব গান্ধি নৌ-বিহারে বের হয়েছিলেন বাংলাদেশে এসে এরশাদের আমলে। সে জন্য দাউদকান্দি ফেরী ঘাট বন্ধ ছিল একবার কয়েক ঘন্টার জন্য। বলাই বাহুল্য রাজিব গান্ধীর সত্যিই নিরাপত্তা দরকার ছিল। বিডিআর ঘেরাউ করে রেখেছে এমন ভাবে যে; উঁকি দিয়ে তার নৌ বহর দেখারও সুযোগ ছিল না। তখন ঠোলা দেখলেই চেইত্তা যাইগা এমন অবস্থা।
আমার দেশ, আমিই বন্ধি হয়ে থাকব! আমার কথার জবাব দেবার মতো এতো প্যাচাইল্যা লোক অতি সাধারণ বিডিআরদের ছিল না। একজন সেনরাবাহিনীর অফিসার এসেও আমাকে থামাতে না পেরে একদম জেটিতে নিয়ে গিয়েছিলেন, যাতে খুব কাছ থেকে নৌবিহার দেখতে পারি। আমার মনে হয় আমি যদি রাজিব গান্ধীর সাথে আলাপের খায়েশ করতাম, সেই চেষ্টাও তারা করত। আমার দেশ, আমি অতিথি আপ্যায়ন করা তো দূরের কথা, সেখানে যেতেই পারছি না। মাঝে মাঝে এখনো হাসি পায় আমার সেই সব দিনের কথা মনে হলে।
আর এই ছেলেটা ভিসা নিয়ে দুটি চেক পোষ্ট পার হয়ে তৃতীয়টিতে গিয়ে ফিরে আসতে হল। সত্যিই আমার দেশে আমার এই অবস্থা হলে আমি কী করতাম।
চুপ করে তাকিয়ে রইলাম রশিদের মূখের দিকে।
তারপর ধর তোমার ভাই বা বাপকে বা কোন বন্ধুকে এম্নিই গুলি করে মেরে ফেলল, ইজরাইলী সেনা বাহিনী।
আমার বাবাকে বন্দুকের বাট দিয়ে পিটিয়ে হাত এবং চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে গিয়েছিল রাজাকার লোকমান। আমি তাকে এখনো খুঁজি। আমার ভেতরে কোন প্রতিশোধস্পৃহা নেই। সত্যিই আমি কেউ আজ গালি দিয়ে কাল ভাল করে কথা বললেই ভুলে যাই। কিন্তু লোকমান রাজাকারকে তো ভুলিনি। আর কিছু না পারি কখনো দেখা হলে আমি তার গালে কষিয়ে একটা চড় মারবই। ফিলিস্তিনদের চোখে ইসরাইল এমনই একটা বিদেশী শক্তি। যারা তাদের দেশ দখল করে, তাদেরকেই উৎখাত করছে।
তোমার তো কিছুই করার নেই। এমন কী প্রতিবাদও করতে পারবে না। ক্ষোভ তো মানুষের মনে থাকেই। যদি তা প্রকাশ করার জন্য কোন উপায় না থাকে তখন সেই মানুষকে দিয়ে তুমি আত্মঘাতি হামলা কেন, যা খুসী তাই করাতে পারবে। আমার ভাগ্য ভাল, আমি চলে এসেছি এখানে, না হলে হয়তো আমিও আত্মঘাতী বোমা হামলা করতে পারতাম।
যারা নাৎসীদের দ্বারা এতো নির্জাতিত, সেই ইহুদীরা কেন ব্যাপারটা বুঝতে পারে না! আমার অবাক করা প্রশ্নের বানে মাথা নীচু করে আছে মুসা। যেন দোষটা তার ঘাড়েই বর্তায়। প্রশ্নটা আদোও তাকে করিনি। খারাপই লাগছে ছেলেটার জন্য। ফূর্তি করতে আমাদের আমন্ত্রন জানিয়ে এখন বড় বেকায়দায় পরেছে বেচারা।
মনে হয় প্রসংগ পাল্টানোর হন্য জন্য একটা গলা খাকড়ি দিল পিটার। তারপর, এমন করে কৈফিয়তের ভঙ্গিতে কথা বলতে লাগল যেন স্কুলের শিক্ষকের কাছে পড়া বলছে।
এই দোষ ইসরাইলি বা ইহুদীদের ঘাড়ে একা দিয়ে লাভ নেই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই কিছু জার্মান ইহুদীদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের চিন্তা করছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন বা ছিলেন। এখন মনে আসছে মার্টিন বুবারের নাম।
কোথায় যেন পড়েছিলাম; রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর এসেছিলেন জার্মানে সম্ভবত ১৯২৫ বা ১৯২৬ সালের দিকে। তখন একটা স্বাধীন ইহুদী রাষ্ট্রের ধারণা এখানে বেশ জনপ্রিয়। সেই প্রসংগে বাংলার রবি বলেছিলেন (অনেকটা প্রতিবাদের মতো);
ইহুদীরা এই সমাজ-সংস্কৃতির অংশ। জোড় করে তাদের অন্যদেশে পাঠিয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
সেটাই বললাম সবার উদ্দেশ্যে।
আসলে আমরা আমাদের শান্তি চেয়েছি। আর ছয়বার ক্রুশেড পরিচালনা করেও তো আরবদের সাথে পারলাম না। সে জন্য সাত নম্বর ক্রুশেড হচ্ছে এই ইজরাইল রাষ্ট্র। ক্রুশেড পরিচালনার দায় দিলাম ইহুদীদের হাতে। অশ্র-পাতির যোগান দেব আমরা। দেখ আমাদের কিন্তু কোন দোষ নেই। যুদ্ধ করছে কে? ইসরাইলীরা। মার খাচ্ছে কে? আরবরা।
শান্তিতে আছি আমরা। আমাদের দেশে এখনো ইহুদীদের সিনাগোগে পাহারা দিতে হয়।
শুধু সিনাগোগে! ইহুদীদের কবরস্থানতো আক্রমন করে নাঃসীরা। পিটারকে থামিয়ে দিয়ে বারের সন্যাসীনি যোগ করল নিজের অভিজ্ঞতা।
তাই তো বলছি; যদি আরো ইহুদী থাকতো তা হলে দাঙ্গা থামাতে একটা আলাদা বাহিনী দরকার হতো এই দেশে। আমাদের অসহনশীলতা সম্পর্কে আমরা যথেষ্ট সচেতন।
গান থেমে গেছে। এতক্ষণ খুব অল্প আলোতে একটা মায়াজাল বিছানো আলো-আধারের খেলা চলছিল। অনেকটা বনের ভেতর গাছের পাতার ফাঁক-ফোকর দিয়ে আসা জোছনার আলোর মতো। এখন সব ফকফকা। হয়তো আমাদের চলে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন বারের সন্যাসিনী। আমরা চলে গেলে তিনি পানশালার দরজায় তালা দেবেন। পিটার উঠে দাঁড়াল। কিন্তু বারের সন্যাসিনী উঠার তাড়া না দিয়ে বরং আমার উদ্দেশ্যে বলল; তুমি অনেকটাই নিরপেক্ষ, বলতো ইসরাইল আর পেলেস্টাইনীদের শান্তির কোন উপায় আছে?
কতো বাঘাবাঘা রাজনীতিবিদ সমাজ বিজ্ঞানী বিশেষজ্ঞ এই সমস্যার কোন সমাধান করতে পারেনি! আর আমি কী বলব! হাতি-ঘোড়া গেল তল, ভেড়া বলে কত জল!
আমাদের কথায় ইসরাইল বা পেলেস্টাইনীরা তাদের শান্তির লড়াই পরিবর্তন করবে বা থামাবে এমনটা মনে করা অতিঅবশ্যই বড় রকমের বোকামী। কিন্তু তোমার মতটা বলতে তো কোন অসুবিধা নেই। বললেই পিটার আবার বসে পড়ল চেয়ারে।
মুসা এবং রশিদ ও তাকিয়ে আছে আমার মূখের দিকে। কী করি! ঢোক গিলে, কাশি দিয়ে গলা পরিস্কার করে শুরু করলাম;
আমি পেলেস্টাইনী হলে; সব রকমের বলপ্রয়োগ এবং আত্মঘাতী হামলা বাদ দিয়ে, শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে থাকতাম ইসরাইলী টেংক-কামান-রাবার বুলেটের সামনে। আমার এক কনা মাটি দখল করতে হলেও ইসরাইলীদের যেতে হবে আমার লাশের উপর দিয়ে। মরতে তো হচ্ছেই, তা হলে মরি ইসরাইলিদেরকে আমাকে টেরোরিষ্ট বলার সুযোগ না দিয়ে। এই ভাবে দশজন পেলেস্টাইনী মারুক এইরাইলীরা। দেখবে দুনিয়ার সামনে কত বেকায়দায় পরে তারা। আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে ইসরাইলের তথাকথিত আত্মরক্ষার যুদ্ধ জায়েজ করে দিচ্ছে পেলেস্টাইনীরা। শত্রু যদি ইসরাইলের মতো মহা পরাক্রমশালী হয়; সেখানে নির্জাতিত হওয়ার মতো বড় আর কোন অশ্র কাজে লাগে না।
কিন্তু তুমিতো জাননা, কী ভাবে উস্কানী দেয় ইসরাইল। সেখানে শান্তিপূর্ণ ভাবে দাঁড়ি থাকা সম্ভব না। আমার জ্ঞানগর্ভ ভাষণ থামিয়ে দিল রশিদ।
সেটা তো ইজরাইল করবেই। কারণ পেলেস্টাইনীদের টেরোরিষ্ট বানাতে পারলেই, তথাকথিত আত্মরক্ষার জন্য আক্রমন জায়েজ হয় তাদের। পেলেষ্টাইন যত অর্থ-লোকবল ব্যায় করছে আত্মঘাতী হামলার পেছনে তার ভগ্নাংশ করে দেখুক এই পথে।
অবশ্যই আমার ধারণা খুব হাস্যকর রকমের বালখিল্য। কিন্তু একটা ধারণা মাত্র। তাঁরা কী ভাবে সেখানে টিকে আছে সেটা না জেনেই বাইরে থেকে তাদের পরামর্শ দেয়া খুবই সহজ। কিন্তু এ ছাড়া আমার মাথায় আর কিছু আসছে না।
গান্ধীবাদী বলে তোমাকে সন্দেহ হচ্ছিল আমার প্রথম থেকেই। বলল পিটার।
গান্ধীর পক্ষে আরো অনুঘটক ছিল নিশ্চই। হিটলারকে তাড়াতে বৃটিশরা সামরিক ভাবে যথেষ্ট দুর্বল ছিল। এ নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। তারপরেও একমাত্র নির্জাতিত হওয়ার যে শক্তি তাকে উপেক্ষা করার কোন কারণ নেই। বিশেষত পেলেস্টইনেদের জন্য তো নয়ই।
ইসরাইলে কিন্তু যথেষ্ট মানুষ শান্তির পক্ষে। তারা কী করতে পারে? যেন আমার কাছে সব সমস্যার সমাধান থাকা উচিৎ; এমন বিশ্বাস নিয়েই প্রশ্ন করল সন্যাসিনী।
কথা বলতে বলতে আমার ভেতরে বোকার মতো একটা নির্ভীক ভাব চলে এসেছিল তাই, নির্দিধায় বলতে লাগলাম দেখ;
সাদা চামড়ার মানুষ কত যুক্তি, কত নৈতিকতা পেয়েছিল দুনিয়াটা কলোনী বানাতে। দুনিয়ার বহু দেশ মহাদেশ এখন ইংরেজী বা স্পেনেশি ভাষাভাষী সাদা চামড়ার মানুষের দেশে পরিণত হয়েছে। সে সব দেশে গনতান্ত্রিক ভাবে ইউরূপিয়ানরা রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হচ্ছে বা নির্বাচিত করছে। সেই সব দেশের মানুষের উপর সব রকমের প্রভূত্ব নিশ্চিৎ করে এখন তাদেরকে ন্যাটিভ উপাধিতে ভূষিত করছে।
এই অনুসৃত পদ্ধতি পেলেষ্টাইনেও হয়তো কাজে লাগবে। কিন্তু তা করতে হলে যে পরিমান নির্মমতা দরকার তা করার সুযোগ বর্তমান দুনিয়াতে নেই। এই বাস্তবদা বুঝতে হবে ইসরাইলকে। তা ছাড়া কোন জাতিই অনন্তকাল পর্যন্ত যুদ্ধ করতে পারে না। দেখ; যেকোন পরিবার জেরুজালেম শহরে বাজার করতেও যেতে পারে না, রাষ্ট্রীয় বডিগার্ড ছাড়া। বডিগার্ড দিয়েও সব সময় নিরাপত্তা নিশ্চিৎ হচ্ছে না। নিয়মিত ব্যবধানে আসছে পেলেস্টাইনী আত্মঘাতী বোমা। এমন আতঙ্কের ভেতরে সুস্থ জীবনযাপন এবং জাতিগত বিকাশ অসম্ভব। যুদ্ধ একটা সাময়ীক ঘটনা। যত দীর্ঘ যুদ্ধ তত বেশী কঠিন এর পক্ষে জনমত গঠন করা।
কিন্তু শান্তির পক্ষে কাজ করেও তো রক্ষণশীল ইহুদীদের হাতে নিহত হল সেমন পেরেজ। পাল্টা প্রশ্ন পিটারের।
সে তো উভয় পক্ষেই আছে। ইজরাইলের সাথে শান্তিচুক্তিতে যাওয়ায় নিহত হল আনোয়ার সাদাত। কিন্তু তাতে ইজরাইল বা পেলেষ্টাইনীদের কোন লাভ হয়েছে? যুদ্ধে তো সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। কেউ কেউ লাভবানও হচ্ছে। তারা তো চাইবেই যুদ্ধ টিকিয়ে রাখতে। ইসরাইলইতো বলছে; “টেরোরিষ্টদের সাথে তাঁরা কোন আলোচনায় আগ্রহী নয়”। সেই ইজরাইলীরা নিজের পক্ষের টেরোরিষ্টদের কাছে মাথা নত করবে?
কিন্তু তাদের কী করা উচিৎ? সন্যাসিনী নাছোর বান্ধা।
আমি কী জানি! তবে আমি ইসরাইলি হলে এই সুবর্ণ সুযোগে একটা সিদ্ধান্ত নিতাম।
সুবর্ণ সুযোগ বলছ কেন!
পিটার ছেলেটা সহজে কোন কথা মেনে নেয় না।
দেখ; ইজরাইল দেশটা সামরিক এবং আর্থিকভাবে প্রায় শতভাগ নির্ভশীল আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে। এইটা একটা দীর্ঘ মেয়াদী পরাধীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়। ভূমধ্য সাগর থেকে কতদিন আমেরিকার রণতরী এবং সাবমেরিন ইজরাইকে পাহারা দেবে? যুদ্ধের গোলাবারুদ কতদিন আসবে আমেরিকা থেকে?
প্রতিবেশী সবগুলো রাষ্ট্রের বৈরীতা মোকাবেলা করে কতদিন টিকে থাকতে পারে একটা দেশ? ইজরাইলের মহাপরাক্রমশালী বন্ধুরা অনন্তকাল তাদের এই অবস্থান টিকিয়ে রাখতে পারবে? আমার মনে হয় না। সে জন্যই এখনো যেহেতু অপেক্ষাকৃত ভাল অবস্থানে আছে ইসরাইল, সে জন্যই এখনই তাদের আখের গোছানোর সময়।
এবার বল কী রকম হতে পারে তাদের সেই আখের গোছানো? সন্যাসিনী মনে হয় আমার বকবকানীতে ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে।
আমি ইসরাইলী হলে পেলেস্টাইন স্বাধীন ঘোষনা করতাম। অধিকৃত গাজা এবং অন্য পেলেস্টাইনী এলাকা ছেড়ে দিতাম। আলাসকা মসজিদ বাদ দিয়ে জেরুজালেমে দেয়াল তুলে ভাগ করে দিতাম।
বল কী! আমরা তো বার্লিন প্রাচীর ভাঙ্গার জন্য জীবন দিলাম। অবাক হয়ে প্রশ্ন করে পিটার।
হয়তো জেরুজালেম দেয়াল ভাঙ্গার জন্যও একদিন প্রাণ দেবে মানুষ। তারপর দেয়ালের প্রয়োজন না থাকলে তা ভেঙ্গে দেবে। নির্গত লাভার উপরেও কোন এক সময় সবুজ ঘাস গজায়, ফুলফোটে, ভ্রমর গুঞ্জন করে। মানুষ সেই রকম সভ্য হলে দেয়াল ভেঙ্গে দেবে। কিন্তু আপাতত আর কোন সমাধান সম্ভব বলে আমার মনে হয় না।
মন্তব্য
রেখে গেলাম। এবার পড়ি।
শিরোনামের বানানটা ঠিক করে নিতে হবে পুতুল ভাই। পুরোটা পড়ে তারপর মন্তব্য করছি।
ঠিকর্লাম। ভুলটা দেখিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
ক্যামনে লিখলেন এই লাইনগুলা। সিরিয়াসলি পুতুল ভাই পুরোটা শেষ হলে আমাকে একটা পিডিএফ দিবেন। আমি মোবাইলে রাইখা পড়ব সময় অসময়
--বেচারাথেরিয়াম
ধন্যবাদ। ঠিকাছে, শেষ হলে দেব।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
দারুণ!
ধন্যবাদ দাদা।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
পড়ছি
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
ধন্যবাদ বস।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আমার জানা মত এ ইহুদি দের জার্মানি তে থাকতে পারার আইন টা হয়েছে ১৯৯১ এর দিকে এবং এই আইনে টা উঠিয়ে দেয়া হয় ২০০৫ সালে , কিছু কিছু কারণে , অনকে কারণের একটা ছিল ইস্রায়েল এর বিরোধিতা , কারণ প্রচুর রাশান ইহুদি ইস্রায়েল এ না যেয়ে উন্নত সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধার জন্যে চলে আসছিল জার্মানি তে ওই সময় তে
সেই সময়ের কথাই বলছি। ধন্যবাদ জীবনযুদ্ধ। আইনটা বদল হয়েছে, সেটা জানতাম না।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
এই পর্বটা দেখি বিশাল!
পড়তে যেয়ে মনে হলো পুরোটাই গ্লাস সামনে নিয়ে লিখেছেন।
...........................
Every Picture Tells a Story
মুস্তাফিজ ভাই, আমি একটু আভাস পেয়েই সব সময় সব অসঙ্গি ধরতে পারি না। খুব কৃতজ্ঞ থাকব যদি আরো একটু বিশদে এর ত্রুটি-অসঙ্গি-ভুল গুলি ধরিয়ে দেন। ধন্যবাদ।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
মাঝের এই ব্যাপারগুলোই জমিয়ে রেখেছে কাহিনীকে।
- বিক্ষিপ্ত মাত্রা
ধন্যবাদ বিক্ষিপ্ত মাত্রা।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
ইজরায়েল-প্যালেস্টাইনের সমস্যা এখনও অনেকদিন থাকবে। প্রহসন করে একটা দেশ অন্য একটার ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেই সেটা বৈধ হয়ে যায় না মানুষে জীবন দিয়ে সেটা প্রমাণ করে যাবে। ইজরায়েল তৈরী হওয়া হয়ত দরকার ছিল, আমি ইহুদী-হলোকস্ট কন্সপিরেসী থিয়োরীতে বিশ্বাসী নই, কিন্তু ওইটা ইউরোপের মধ্যেই জায়গা বের করে তৈরী করতে হত। এতে ইহুদীদেরও ভাল হত, প্যালেস্টাইনীদেরও।
- এইটা কিন্তু একটা প্রচলিত মিথ। ইজরায়েল নির্ভরশীল ছিল বহুকাল আগে, হয়ত বছর কুড়ি আগেও - এখন মনে হয়না সেরকম। আর্থিকভাবে ইজরায়েল অনেক-কাল ধরেই স্বয়ং-সম্পূর্ণ, সামরিকভাবে অন্তত আশেপাশের দেশগুলোর থেকে অনেক গুণে উন্নত।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
সেই সময়ের কথাই বলছি।
আমাদের ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশর মতো?
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
ভারত-পাকিস্তানের অবস্থা কি ইজরায়েল-প্যালেস্টাইনের থেকে অনেক ভাল নয়?
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ভাল তো বটেই। কিন্তু পাকিস্তানের জনসংখ্যার প্রায় সম পরিমান মুসলমান তো এখনো ভারতে আছে। যদিও তাদের(ভারতী মুসলমান) মধ্যে সাম্প্রদায়ীক দাঙ্গা হরহামেসা লেগেই আছে। তার পরেও আমার কাছে মনে হয়; ভারতের মতো এত জাতি-ধর্ম নিয়ে পৃথিবীতে আর কোন দেশ নেই। অনেক অভিযোগ ভারতের বিরোদ্ধে করা যায়, কিন্তু তারপরেও একটা মোটামুটি সহশীল পার্যায়ে তারা আছে।
মানে একটি বিশেষ ধর্মের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের অসারতার উদাহরণ ভারত, বা বাংলাদেশও হতে পারে।
অপরদিকে মুসলমানদের দেশ দেখুন পাকিস্তান। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রায় প্রতি শুক্রবারে হয় মোজাহের না আহম্মদীয়া বা কাদিয়ানীদের মসজিদে একটা বোমা ফুটে। খেয়াল করুন; সবাই কিন্তু মুসলমান। কিন্তু দাঙ্গা-হাঙ্গামা কী কমল?
আমারতো মনে হয় ভারতের মুসলমারা বরং পাকিস্তানের মুসলমানদের চেয়ে শান্তিতে আছে। আমাদের কবি গুরুর কথাটা এখানে আবার বলতে ইচ্ছে করছে; "ইহুদীরা এই সমাজ-সংস্কৃতির অংশ। জোড় করে তাদের অন্যদেশে পাঠিয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।"
কিন্তু সেটা আমরা সম্ভব করে দেখিয়েছি ভারত ভাগ করে। একটা সময় হয়তো পেলেষ্টাইনও স্বাধীন হবে। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাই মানুষ এই সত্যের চেয়ে মানব সমাজ এখনো অনেক পেছনে। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে এগিয়ে থাকা পশ্চিমারা ভারতের মূর্খ-অশিক্ষিত জনগনের চেয়ে এই দিকে আরো অনেক পেছনে।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আমার বক্তব্য ছিল যদি ভাগ হতেই হত, তাহলে ইউরোপেই হলে ভাল হত। একত্র থাকতে পারলে এর থেকে ভাল কিছু হত না।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
দিগন্তদা, সেইটিই বোধ হয় আমাদের রবিও বলেছেন। ভৌগোলিক বা প্রাকৃতিক বা নৃতাত্তিক যো কোন বিচারেই আজকের ইসরাইলীরা আরবের আংশ নয়। অথচ দুনিয়াতে তাদের থাকার মতো জায়গা শুধুই পেলেষ্টাইন! পা-য়ে পারা দিয়ে ঝগড়া লাগানোর এর চেয়ে বড় উদাহরন মনে হয়, এই আধুনিক ইতিহাসে আর নেই।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
নতুন মন্তব্য করুন