তীর্থের কাক ২৭

পুতুল এর ছবি
লিখেছেন পুতুল (তারিখ: শুক্র, ০৯/১১/২০১২ - ৬:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভিকি সিং ছুটা কাটাতে গিয়েছেন দেশে। তাঁর জায়গায় মালিকের অন্য রেস্টুরেন্ট থেকে এসেছে একজন নতুন কুক। পাকিস্তানী। সব কিছুতে একটু বেশী মাতব্বরী করে। কাজ তেমন নেই বলে; কথা একটু বেশীই হয়। কিন্তু পাকিস্তানীদের মনে হয় একটা জাতীয় সমস্যা আছে। তারা সব কিছুতেই বিশেষ করে বাঙ্গালীদের চেয়ে নিজেদের একটু বেশী জ্ঞানী-গুণী-ধনি মনে করে। সব অস্বস্তির মধ্যে একটা স্বস্তির ব্যাপার হচ্ছে লোকটা সব সময় জার্মান বলে। সেটা সে নিজের বিদ্যা জাহির করার জন্যই বলে যদিও। কাজের কথা বেশী হয় তাওহীদ ভাইয়ের সাথেই। তাওহীদ ভাই জার্মান পদ্ধতিগত ভাবে মানে লিখে পড়ে শেখেন নি। শিখেছেন শুনে শুনে। পাকিস্তানীটাও ঐ টাইপের জার্মানই বলে। কিন্তু ঘরে জার্মান বউ থাকায় শব্দ ভাণ্ডারটা একটু বড়। তবে তার পাকিস্তানেও সন্তান-সংসার আছে। আমার কাছে এই ধরণের মানুষ ভীষণ আকর্ষণীয়। এক সাথে দুজন মানুষকে ভালবেসে স্ত্রীর মর্যাদা দেয়া সহজ ব্যাপার নয়। আবার কার কথা কেউ জানে না। পাকিস্তানী বউ জানে না যে, তার জার্মানেও সন্তান-সংসার আছে। আবার জার্মান বউও জানে না যে, তার পাকিস্তানেও সংসার আছে। এই ব্যাপারটা ম্যানেজ করা আমার কাছে ভীষণ কঠিন মনে হয়। সে তো গেল ম্যানেজ করার জটিলতা। দুজনকে এক সাথে ভালবাসা যায় কি? অথবা লোকটা আদোও কাউকে ভালবাসে কি? সে জন্য আমার কাছে লোকটাকে বেশ রহস্যময় মনে হয়। তার প্রতি এইটুকুই আমার আগ্রহ। অনেক আলাপ আলোচনায় তার কথা শুনেছি। অনেকেরই নাকী এমন দুই সংসার আছে!

আন্দাজ করছি লোকটার নাম ছিল ইউসুফ। ইংরেজীতে বললে জোসেফ। জার্মানরা বাংলার মতো করেই বলে ইউসুফ। হয়তো এই নামের কারণে সে পশ্চিমা সংস্কৃতি-সভ্যতার ধারক-বাহক মনে করে নিজেকে। জার্মান বলে ক্রিয়া পদের রূপ ব্যক্তির সাথে পরিবর্তন না করেই। ধরা যাক বাংলায় আমি ভাত খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করার জন্য বললাম; “আমি ভাত খাওয়া”। বাক্যটা শুনে একটি নিরক্ষর বাঙ্গালীরও হাসি চাপতে কষ্ট হবে। খাওয়া ক্রিয়া পদটির কোন পরিবর্তন ছাড়াই জোসেফ যে কোন কাল বা পাত্রে তা ব্যবহার করছে। এখানে প্রায় সবাই এমন অশুদ্ধ জার্মান বলে। মালিক বা অন্য জার্মানরা ধরেই নেয় যে, এর চেয়ে শুদ্ধ জার্মান আমাদের মতো বিদেশীদের পক্ষে বলা সম্ভব না। সব চেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে; জার্মানরাও বিদেশীদের বোঝার সুবিধার জন্য বেশীর ভাগ সময় বিশেষ করে ক্রিয়া পদের কাল বা পাত্রের তোয়াক্কা না করে খাওয়া, যাওয়া, করা মূল শব্দটিই বলে। সেটি শুনে, যারা কোন রকম প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগীতা ছাড়া জার্মান শিখেছে; তারা ধরে নেয় ঐ মূল ভার্ব ব্যবহার করে জার্মান বলাটাই সঠিক। শুনে শুনে কোন ভাষা শেখার ভেতরে খারাপ কিছু নেই। শিশুরা সে ভাবেই শেখে। কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের পক্ষে শুনে শুনে একটা ভাষা মোটামুটি নির্ভুল ভাবে শেখা প্রায় অসম্ভব। তো সে ভাবেই জোসেফ নিজেকে জার্মান ভাষার বিশেষ পণ্ডিত মনে করে। আমি এখনে সর্ব নিম্ন বেতনের সর্ব নিম্ন কর্মচারী। ভুল ধরতে যাই না। হা হা করে হাসির বদলে মুখে একটা খুশির ভাব টানিয়ে রাখি। কিন্তু আমার জার্মান শুনে জোসেফ হা করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুই বুঝতে পারে না। আমার উচ্চারণ নির্ভুল নয়। কিন্তু জার্মানরা বেশ বুঝতে পারে।
কিছু কিছু বাক্য অবশ্য আমি যতটা না চর্চার জন্য তার চেয়ে বেশী বুজর্গী প্রকাশের জন্যই একটু কঠিন করে বলি। যেমন খাবার টেবিলে বসে মালিকনী বলল; খাওয়ার সময় কাউকে কিছু করতে অনুরোধ করা আমি ভীষণ অপছন্দ করি, কিন্তু এখন না বলে পারছিনা, কাইজার; ( আমার বিক্রিত নাম ওরা বলার সুবিধার জন্য বানিয়ে নিয়েছে যার বাংলা রাজা) তুমি তো কাছেই আছো, আমাকে এক গ্লাস পানি দাও। সাধারণত প্রায় সবাই বলে; এক্ষুণি দিচ্ছি। কিন্তু আমি বললাম; মহিয়শী, তোমাকে পানি দিতে পারা আমার জন্য একটি সম্মানের ব্যাপার। খাবার রেখে আমার কথা শুনে সবাই হেসে উঠল। জোসেফ একটু বেশীই হাসল। তার হাসি দেখে ভালটার জিজ্ঞেস করে ফেলল; ও কী বলেছে বুঝতে পেরেছ? জোসেফ তার স্বভাব সুলভ তাচ্ছিল্যের ভাব মুখে নিয়ে বলল; সেদিন জার্মানে এসেছে, ও জার্মান জানে নাকী। যা বলে সব ভুল। আমি ওর কোন কথাই বুঝতে পারি না। কথাটা শুনে ভালটার মনে হয় ক্ষেপেই গেল। সেটা প্রকাশ পেল তার পরবর্তী মন্তব্যে; ওর কথা বুঝতে হলে যেটুকু জার্মান জানা দরকার তুমি ততটুকু জান না বলেই ওর সব কথা বুঝতে পার না। তুমি বুঝতে পার না বলেই ওর সব কথা তোমার কাছে ভুল মনে হয়। ওর মতো এতো যত্ন নিয়ে সুন্দর করে আমরাও জার্মান বলি না। আমি তাড়াতাড়ি বললাম; আরে না না, আমি সত্যিই ভাল জার্মান জানি না। মাঝে মাঝে দু’একটা সুন্দর বাক্য বলে ফেললেই ভাল জার্মান জানি এই দাবী করা ঠিক না। মুখের খাবার পেটে চালান করে ভালটার কোন দিকে না তাকিয়ে বলল; যারা সত্যিই ভাল কিছু জানে তারা বিনয়ীই হয়।

খুব সুন্দর আবহাওয়া। লোকজন বাইরে লেকে সাতার কেটে সময় কাটাচ্ছে কাজ তেমন নেই। এক ধরণের আনন্দ দোলায় প্রথম সপ্তাহ ভালই কেটেছে। আশংকা দেখা দিয়েছে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে। শেষের দিকে রাতে ঘুমোতে পারি না। ছটফট করি। বিছানায় নড়াচড়া করলে খটমট করে শব্দ হয়। আমার নীচে জাহিদ ভাই। পাশের দ্বিতল খাটে নূর উদ্দিন আর জসিম। ঘুম ভেঙ্গে যায় ওদের। বিরক্ত হয়। খাঁচায় বন্দী পাখির মতো অবস্থা আমার। কাউকে বলতেও সাহস পাই না। প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে গেল । সোনিয়া এলো না। ফোনও করলনা। আমাদের রেস্টুরেন্টের একটা কার্ডে আমার লিখে ওকে দিয়েছিলাম প্রথম দেখার পর। কিন্তু ফোন যেহেতু করছে না। তা হলে ধরে নিতে পারি আমাকে ফোন করার ইচ্ছা তার হয় নি। ইচ্ছে না হলে কিছু করার নেই। কিন্তু একটা সম্পর্কের এতো সুন্দর শুরুটা এভাবে সুখস্বপ্নের মতো হারিয়ে যাবে! ভাবতে কষ্ট হয়। এদিকে জার্মান শেখার চেষ্টাটাও অন্যদের কাছে একটু বাড়াবাড়ি মনে হয়। সোনিয়াকে মুগ্ধ করার জন্য এর চেয়ে ভাল এবং আমার পক্ষে সম্ভব কোন উপায়ও খুঁজে পাই না। ঠিকমতো নাওয়া খাওয়া হচ্ছে না। দাড়ি কাটি না বেশ কয়েকদিন। সবার চাপের মুখে আমি সোনিয়ার কথা বলেই ফেললাম। বিভিন্ন ভাবে সবাই সান্ত্বনা দিল। হতে পারে এমন করে কোন মেয়ের সাথে মিশিনি কখনো। হতে পারে তার দেয়ে বৃন্তচ্যুত ফুল থেকে কোন দিন ফল হবে সেই নিষ্ফল আশার বাতি আপনা থেকেই নিভে গেছে বলে, অসম্ভবের পায়ে মাথা ঠুকছি। কষ্টটা ভেতরে ভেতরে আছে। হয়তো আরো কিছু দিন থাকবে। তার পর এক সময় ঠিক হয়ে যাবে।

সে জন্যই বেশী মানুষকে জানিয়ে নিজেকে আর বোকা বানাতে চাই না। কিন্তু কথা কী আর থাকে। এই শহরের সব বাঙ্গালী এখন জানে যে আমি সেক খেয়েছি। হয়তো মেয়ে মহলে ব্যাপারটা আরো বেশী আলোচিত হয়। সেভাবেই তাওহীদ ভাই জেনে থাকবেন ভাবীর কাছ থেকে। টেক ওয়ের পিসসা কার্টুন ভাজ করার ফাঁকে ফাঁকে আমার দিকে তাকান আর মিটিমিটি হাসেন তিনি। দুপুরের বিরতিতে খাওয়ার সময় ভালটারের কথা শোনার পর থেকে জোসেফের মন একটু ভারী ভারী। কথাবার্তা বা আমাকে কোন বিষয়ে জ্ঞানদানে ভীষণ রকমের অনাগ্রহী। হয়তো পরিস্থিতি একটু হাল্কা করার চেষ্টায়ই জোসেফ মুখ খুলল কিন্তু এবার উর্দুতে; কী হয়েছে বন্ধু? যুবক ছেলে, কোন মেয়ে টেয়ে এখনো যোগার হয়নি। তাই বলে মুখে মোল্লাদের মতো দাড়ি নিয়ে থাকলে চলবে! যাও খানকী পাড়ায়, শ মার্কে সব থেকে সুন্দরী সাদা মেয়ে চুদে আস। কথা গুলো আমার উদ্দেশ্যে। কিন্তু বলল তাওহীদ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে। যে ভাবে মানুষ ছেলের বিরুদ্ধে পিতার কাছে নালিশ করে, অনেকটা সেভাবে। বলার মত কথা বা সত্যিই করার মত কাজ আমাদের কারো হাতেই নেই। তাওহীদ ভাই বোধ হয় কথা বলার মতো একটা বিষয় পেয়ে খুশিই হলেন। কিন্তু প্রথমেই আমাকে সাবধান করলেন; খবরদার খানকী পাড়ায় যাইয়েন না তে। পয়সা যা খামান সব ঐ খানকী পাড়ায়ই ডালতায় না। ধন খোঁড়াইলে আত মাইরা লইয়েন তে। সে কাজতো প্রায় নিয়মিত করি। কখনো শ্রীদেবী কখনো রেখা শয্যাসঙ্গিনী। কিন্তু মুখে কিছু বললাম না।
এবার তাওহীদ ভাই তার হিন্দি-উর্দু-পাজ্ঞাবী মিলিয়ে জোসেফের দিকে তাকিয়ে বললেন; পরিচয় হওয়ার পর মেয়ে আর কোন যোগাযোগ করে নি। সে জন্যই তার মন খারাপ। জ্ঞানদান করার মতো বিষয় পেয়ে গেল জোসেফ। এই কথা! ট্রফির মতো বীর্য জমায় জার্মান মেয়েরা নিজের যোনীতে। জার্মানদের যূনী ভোগ কর যত পার। কিন্তু কখনো তাদের প্রেমে পর না। জার্মান তিনটি জিনিস কখনো বিশ্বাস করনা। এক; আবহাওয়া, দুই; মেয়েদের চরিত্র, তিন; প্রেম। তোমার সাথে সারা জীবন প্রেম করে বা সংসার করে তোমার চেয়ে বেশী যৌনান্দ দিতে পারে এমন কোন পুরুষের সন্ধান পেলে; এক সেকেন্ড সময়ও তোমার পেছনে ব্যায় করবেনা। পুরুষরাও তেমনই। এই আমাকেই দেখ। জার্মান বিবি ঘরে আছে কিন্তু বুড়ো হলে ও আমাকে যে কোন সময় ছেড়ে যাবে। সে জন্যই দেশে শাদী করেছি। আর বছর দশেক কাজ করে পেনশনটা পেলেই দেশে চলে যাব।

এমন সময় কান ঝালাপালা করা শব্দে একটা এম্বুলেন্স যাচ্ছিল। রাস্তাটা আমার রেস্টুরেন্টের পাশ দিয়ে গিয়ে মিলেছে একটা চৌরাস্তায়। সে জন্য শব্দটা চৌরাস্তার আশেপাশের মানুষ শুনে বেশী। বিরক্তি লাগে। কিন্তু তাতে যদি এক জন মানুষের জীবন বাঁচে, ক্ষতি কী। আমাদের দেশে পুলিশ বা এম্বুলেন্স যাওয়ার জন্য কাউকে কখনো পথ ছেড়ে দিতে দেখিনি। কিন্তু এখানে পুলিশ এম্বুলেন্স দমকল বাহিনীর গাড়ির সাইরেন শুনলেই সব গাড়ি পাশে সরে পথ করে দেয়। দেখে আফসোস করি আমাদের দেশের মানুষগুলো কবে ভাবতে শিখবে মানুষের এই সব জরুরী বিষয়! এম্বুলেন্সের শব্দে বিরক্ত হয়েই হয়তো, যেন কোন ভাল একটা কিছুর সংবাদ পেয়েছে এমন আনন্দে, আমার প্রসঙ্গ রেখে বলে উঠল; এক জার্মান কমল।

আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না! কী ভাবে কখন এক জার্মান কমল! এক জার্মান কমে গেলে তাতে খুশির কী আছে! তাওহীদ ভাই আমার বোকা বোকা মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পেরেছে যে, আমি কিছুই বুঝি নি। তাই ব্যাখ্যায় মনোযোগ দিল; শোনেন, এই দেশে কখনো মরা মানুষ দেখেছন? মরা মানুষ সত্যিই দেখিনি। তবে ব্যাপারটা আলোচনার মতো বৈকি। আমাদের দেশে কত মানুষ মারা যায়! বিশেষ ব্যক্তি মারা গেলে মাইক যোগে জানাজার স্থান, তারিখ ও সময় জানিয়ে দেয়। প্রায় দেড় বছর হল এই শহরে। কিন্তু মৃত্যুর মতো কোন ব্যাপার দেখিনি। জার্মানরা কি তবে অমর? আমার মুখ দেখেই মনের কথা ধরতে পেরেছেন তাওহীদ ভাই। আর বিনয়ী মানুষের মতো একটু কথা বলার সুযোগ দিয়ে তাওহীদ ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল জোসেফ। শোনেন; জীবন এখানে যৌবনে স্থির থাকে। মৃত্যুর মতো স্বাভাবিক ব্যাপারও বিয়ে-শাদীর মতো একান্ত পারিবারিক অনুষ্ঠান। শব যাত্রা-টাত্রার ব্যাপার এখানে নেই। জীবনে মৃত্যু আছে এই ব্যাপারটাই জার্মান ছেলে-মেয়েদের জানতে দেয়া হয় না। শুধু খবরের কাগজে শোকবার্তা পড়েই জানতে পারবে, কেউ মরেছে কী না। অবশ্য অনেকে নিজের ঘরে মরে পচা গন্ধ বের হলে প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেয়। তবে বেশীর ভাগ মৃত্যুই ঘটে হাসপাতালে। এখানে যে কোন অসুস্থ লোক ফোন করলে পনর মিনিটের মাথায় এম্বুলেন্স হাজির। কিন্তু বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ঐ বুড়োদের মৃত্যু এম্বুল্যন্সে হয়। নয় তো বাঁচার আশা এবং উপায় নাই জেনেও নব্বই-পঁচানব্বই বছর বয়সী বুড়ো-বুড়িদের জরুরী কিছু অপারেশন করে কয়েক সপ্তাহ ভুগিয়ে পরপারে পাঠায়। লাভেরে মধ্যে ডাক্তারের কিছু বাড়তি আয় হয়। আর মৃতদেহ জমা থাকে হিমাগারে। এবং সেখান থেকে সোজা গোরস্থান। মৃতের সৎকার করাও স্কুলে গিয়ে শিখতে হয়। আমাদের দেশের মতো যে কোন মানুষ মৃতের স্নান, কাপড় পড়ানো, কফিনে মরদেহ বা কবরে কফিন ঢোকানোর কাজ করতে পারে না। স্কুলে গিয়ে শিখতে হয়। মৃত্যু এখানে বেশ ব্যায় বহুল ব্যাপার। তার জন্য পেনশনে গেলেই বেশীর ভাগ জার্মান ইনসিওরেন্স করে রাখে। নিজের বুজর্গী যোগ করল জোসেফ। মরতে ইন্সোরেন্স লাগে এই দেশে!

আমি পেছন ফিরে মানে যে ফটক দিয়ে আমরা খাবার বাইরে দেই, তার বিপরীত দিকে তাওহীদ ভাইয়ের দিকে মুখ করে তাঁর কথা শুনছিলাম। কী কারণে তিনি কাজের টেবিল থেকে নেমে খাবার দেয়ার ঐ ফটকের দিকে এগুতে গিয়ে থেমে গেলেন বুঝলাম না। জোসেফও একটু এগিয়েই থামল। কারণ কী? ফিরে তাকিয়ে দেখি গোলাপী লিফষ্টিক মাখা ঠোটে মুখ ঢাকা মালিকনীর। এত বড় হাসির কারণ কী? কাজ না থাকলে মালিকনীর মুখে থাকে শোকের ছায়া। আর এখন বিকট হাঁসি। আমার দিকে তাকিয়েই হাসছেন! ভাল করে খেয়াল করে দেখি, সাপের ফণার মতো টেলিফোনের রিসিভারটা আমার দিকে বাড়িয়ে রেখেছেন। সোনিয়া ছাড়া আর কাউকে আমি এখানকার ফোন নম্বর দেই নি। এবং সোনিয়া ফোন করবে সে আশা ছেড়েই দিয়েছি। কাজেই আমার ফোন আসার আশাও নেই। বেশীর ভাগ সময় ফোন আসে তাওহীদ ভাইয়ের। ভাবি ফোন করে এটা ওটা নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু আমার ফোন কখনো আসে নি।

ততটাই অপ্রস্তুত ভাবে রিসিভার হাতে নিলাম। বলাই বাহুল্য ওল্টো করে। কিছু বুঝতে বা শুনতে না পেরে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি ফোন উল্টো করে ধরেছি। ঠিক করে ধরার পর যা শুনলাম তাতে নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারলাম না। সোনিয়ার কণ্ঠ। আমাকে চিনতে পেরেছ? যে কোন ভুল বোঝাবুঝি এরাতে সে আমি নিশ্চিত করে বুঝতে পারি সে রকম সহজ ইংরেজীতে বলল। কী এক অজানা আনন্দের স্রোতে মন-প্রাণ শরীর ভেসে গেল। আমি কোন কথাই বলতে পারলাম না। যদি তোমার সময় থাকে তাহলে, আজকে তোমার কাজের পরে আমাদের দেখা হতে পারে? আমি এত ব্যাকুল হয়ে আছি ওর সঙ্গে দেখা করতে আর ও কী না বলছে; তোমার সময় থাকলে। সময় সব তোমার জন্য থামিয়ে রেখেছি বোকা মেয়ে, মনে মনে বললাম। আনুমানিক রাত দশটা বাজে। কাজ আজ আর হবে না। তবুও পরের গোলামী করি। তার অনুমতি ছাড়া কাজ না থাকলেও যেতে পারব না। তার এখানে আসতে বা আমার তার কাছে যেতে কতক্ষণ লাগবে সেটা আন্দাজ করার জন্য জিজ্ঞেস করলাম; তুমি এখন কোথায়? সে বলল; তোমার কাজের জায়গার আশেপাশেই আছি আমি। ঠিক আছে আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর। কাজ শেষে বের হব রাত সাড়ে এগারটা নাগাদ। আমি কী তোমার কথা বিশ্বাস করতে পারি? কী ঝামেলা! দেখা করার জন্য আমি নিজেই এত আগ্রহী, আর ও বলছে আমার কথা বিশ্বাস করতে পারে কী না। বললাম; ইয়েস মেম।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

পুতুল ভাই এইসব কিল্লাই করেন? মাত্র একটা জটিল মোমেন্টে আইসা পড়ল আর আপনি "গুলশান এভিনিউর" মত মূলা ঝুলাইয়া যবনিকা টাইনা দিলেন। সামনেরটা তাড়াতাড়ি দিয়েন, বইসা থাকলাম।

--বেচারাথেরিয়াম

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ বস,
বসায়া রাখার জন্য দুঃখিত। পরের পর্ব তাড়াতাড়িই আসবে, কথা দিলাম।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

স্যালুট বস!! শুক্রবার ৭ দিন পর পর আসে ক্যান??? চিন্তিত

ফারাসাত

পুতুল এর ছবি

শক্রবার টার কিছু না বস, প্রথম পাতায় একটার বেশী লেখা আমরা দেই না। প্রথম পাতা থেকে আমার লেখা চলে গেলেই নতুন পর্ব দেই। ধন্যবাদ।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ইস্ সিরে.. কৈ থামাইলেন? রেগে টং আশা করি আগামী পর্বে ভুনা খিচুড়ি-গরু পাওয়া যাবে ... দেঁতো হাসি

পুতুল এর ছবি

ভুনা খিচুড়ি গরু রান্না করা কঠিন কাজ বস। দেখা যাক কী দিয়ে মেহমানদারী করতে পারি।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

স্যাম এর ছবি

চলুক

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ বস।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিক না! ঠিক না! পরের পর্ব চাই পুতুল ভাই-
আর এইখান একেবারে উত্তম জাঝা!

- বিক্ষিপ্ত মাত্রা

পুতুল এর ছবি

ঠিক আছে! ঠিক আছে! পরের পর্ব লিখে শেষ করলাম। অসিতেছে। আসিতেছে।
উত্তম মধ্যমের জন্য সবুজ কচি ধইন্নাপাতা।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

দুজনকে এক সাথে ভালবাসা যায় কি?

সত্যিই যায়কি ? চলুক

পুতুল এর ছবি

আমি জানি না বস। হয়তো ভোগ করা যায়, কিন্তু ভালবাসা তো ভোগের চেয়ে এক কাঠি উপরে। যদিও মানুষ মনোগামী না কোন ভাবেই।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

সুমন চৌধুরী এর ছবি

যায় তো বটেই। বিবাহ আইনের ব‌্যাপার। তার সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক নাই।

পুতুল এর ছবি

বিবাহ আইনের ব‌্যাপার।

ঠিক। একটা সামাজিক শৃংখলা রক্ষার চেষ্টা। তার সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক অল্প।

যায় তো বটেই।

এখানে একটু কথা বলতে চাই; আমার মনে হয় (একাধিক প্রেমিক /প্রেমিকাকে) যায় না। শুরুটা বোধ হয় ভালই লাগে। খাওন োদন ফিরি। এর চেয়ে মজার আর কী হতে পারে! কোন দায়-দায়ীত্ব দেখ-ভালেরও প্রয়োজন নেই। কী আরাম!
কিন্তু তার পরে ঐ মানুষটির জন্য (অতি অবশ্যই অকারণে) এক ধরণের মমতা বা মিস করা শুরু হয়। তখন যদি মনে হয় সে এখন অন্য কারো আলিঙ্গনে আবদ্ধ। শুরু হয় গণ্ডগোল। কারণ আমি যদি এক সাথে কয়েক জনকে ভালবাসতে পারি, তা হলে আমি যাদের ভালবাসি তাদেরও আমার মতই একাধিক মনের মানুষ থাকতে পারে। অনিভার্জ্য ভাবে এসে পরে জেলাস ঈর্ষা বা একক অধিকারের দাবী।
সে জন্যই মনে হয় পরকীয়া প্রেমগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আগের সব তালাক বিচ্ছেদ দিয়ে উভয় পক্ষই নতুন করে শুরু করে পরকীয়া প্রেমকে আপনকীয়া প্রেমে পরিনত করে। কিন্তু দুজনকে এক সাথে ভালবাসা হয় কী?

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ, নামটা লিখলে আরো খুসি হতাম।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চলুক চলুক। তাড়াতাড়ি দেন পরের পর্ব।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ বস। দিচ্ছি।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।