সোনিয়া একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কম্পিউটারে কী যেন একটা কাজ করে। দিনকাল এখন ভালই কাটে। রাত বারটার পর কাজ থেকে তুলে একটু আদর আহ্লাদ করে, রাত তিন-চারটার দিকে আমাকে লাগারের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় সে, আবার পরের দিন দেখা হবে সেই প্রতিশ্রুতিতে। আমি কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাজে যাই ঘুম জড়ানো চোখে। দুপুরের কাজের বিরতিতে রেস্টুরেন্টে একটু ঘুমিয়ে নেই। এর মধ্যে সোনিয়ার পেটের অপারেশন হয়ে গেল। তাকে দেখতে গিয়ে পরলাম বাঘের মুখে।
সোনিয়ার মা। একদম কোন রকম বিচলিত না হয়ে সোনিয়া বলল; মা এর কথাই তোমাকে বলেছিলাম। পালানোর কোন উপায় না দেখে নাম বলে আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম। তিনি বেশ আন্তরিকতার সাথেই আমার হাত ধরলেন। মায়ের সামনে মেয়ের কাছে গিয়ে একটা চুমো খাওয়ার সাহসও হল না আমার।
তিনি চলে গেলেন হাসপাতালের নীচ তলায় গেটের সামনের দোকান থেকে সোনিয়ার জন্য পানি কিনে আনতে। সোনিয়কে অসুস্থ মনে হচ্ছে না এতটুকুও। সদ্য ফোটা ফুলের মতো তরতাজা মুখ। আলতো করে একটু চুমো খেতে খেতে টোকা পড়ল দরজায়। কাল সোনিয়া বাড়ি চলে যাবে। সোনিয়া তাদের বাড়ির ফোন নম্বরটা লিখে দিল আমাকে।
সোমবার ছুটির দিন। সময় কাটানো কঠিন হয়ে গেল। সোনিয়ার সাথে পরিচয়টা ঘনিষ্ঠ হবার পর থেকে একটা কাজ খুঁজছিলাম। যেখানে সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত কাজ করতে হবে। শনি রবি ছুটি পাব সোনিয়ার মতো। সে ভাবেই অনেক লোককে অনুরোধ করতে থাকলাম।
কাজের সুখবর পেলাম আমাকে যে জার্মান শিখিয়ে ছিল সেই মার্টিনের বান্ধবী সাবিনার কাছে। ইন্টার্ভিউ দিয়ে এলাম। ডঃ আর্নল্ড মানুষটা বেশ অমায়িক। সাবিনা সামনেই ছিল। পুরো ইন্টার্ভিউ ইংরেজীতে শেষ করে ভদ্রলোক ইংরেজীতেই জানতে চাইলেন আমি জার্মান জানি কী না। মজার মানুষ। বললাম; এত ভাল নয়, কিন্তু কাজ চলে যাবে মনে হয়।
আগস্টের প্রথম দিন থেকে কাজ। আমার জীবনে প্রথম প্রদীপ জ্বালানো কোন মঙ্গলময়ী অপ্সরী বলে মনে হচ্ছে সোনিয়াকে। নাম্বার তো পকেটেই আছে, কয়েন বক্সে ঢুকে একটা মার্ক ঢুকিয়ে নাম্বারটা ডায়াল করলাম। কোন এক মহিলার কণ্ঠ ভেসে উঠলো। মনে হয় সোনিয়ার মা ধরেছেন। দয়া করে সোনিয়াকে ফোনটা দেবেন প্লীজ! মহিলা হাসতে হাসতে সোনিয়াকে ডাকল। একটু পরে সোনিয়া এলো।
হ্যালো।
কেমন আছো?
ভাল। তুমি কী বলে আমাকে চেয়েছ দিদিমার কাছে?
সোনিয়া হাসছে আমার বাক্যটা শুনে।
হাসছ কেন?
দয়া করে এবং প্লীজ একই বাক্যে দুবার অনুরোধসূচক শব্দ বলতে হয় না; গাধা।
কী করব! অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে তোমার দিদিমার কণ্ঠ শুনে আমি ভাবলাম, বোধ হয় তোমার মা। ভয়ে সব কিছু গড়বড় হয়ে গেল। আমি তো সাধারণত এর চেয়ে ভাল জার্মান বলি।
দুর বোকা! ভয়ের কী আছে! এ-বাড়ির সবার সাথেই তো এক সময় কথা বলতে হবে তোমাকে।
দিদিমা তো তোমাকে পছন্দ করেছেন মনে হয়। বেশ খুসী হয়েছেন ফোন পেয়ে। কিছু চলছে নাকী তোমাদের মধ্যে?
চলছে মানে! তুমি কিছুই জান না দেখছি! আগের জনমে তো আমি তোমার দাদা ঠাকুর ছিলাম!
ও এই কথা, দাদীর মতো বুড়ো হয়ে গেলে তুমি আমাকেও ছেড়ে অন্য কোন যুবতীর সন্ধান করবে। কিন্তু তা হবে না। তার আগে তোমার ধনটা ছুড়ি নয় চামচ দিয়ে কেটে রেখে দেব আমি বুঝলে।
সেটা তোমার কাছে থাকাই ভাল, কিন্তু ছুড়ি, চাকু বাদ দিয়ে চামচ দিয়ে ধন কাটতে চাও কেন?
যাতে বেশী কষ্ট পাও। হি হি হি করে হাসছে সে।
সে কষ্ট আমি একবার পেয়েছি। বেশ গম্ভীরতা নিয়ে বললাম।
দুর বোকা! আমি তো মজা করছিলাম।
ব্যাপারটা মজার নয় মোটেই।
শুনেছি ইহুদীদের সেই ব্যবস্থা আছে। কিন্তু হিন্দুদের শিশ্ন কর্তনের কথাতো শুনিনি! তোমার খাপছাড়া তরবারি দেখে জিজ্ঞেস করবো করবো করেও আর করা হয়নি।
আমি হিন্দু, সে কথা তোমাকে কে বলল?
কেউ বলেনি, ভারতবর্ষের প্রধান ধর্ম তো হিন্দুই।
আমিতো ভারতীয় নই। বাংলাদেশী।
সে তো জানি কিন্তু, যেমন ধর; ইউরোপিয়ানরা, মোটামুটি সবাই খৃষ্টান। সেভাবেই আমি ধরে নিয়েছি ভারতের আশে পাশেও কাছাকাছি সংস্কৃতি। ধর্মও একই হবার কথা। আমার ধারণা ভুল। ঠিকাছে এবার বল তোমার ধর্ম কী?
আমি কোন ধর্মের আনুগত্য মানি না।
এথিইষ্ট। অনেকটা সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো নিশ্চিত শোনাল সোনিয়ার কণ্ঠ।
এথিইষ্ট শব্দটার সাথে পরিচয় নেই। কিন্তু বুঝতে পারছি, নাস্তিকতাই ধরে নিয়েছে সে।
বললাম; ধর্ম মানুষকে হিন্দু-মুসলিম-বৈদ্য-খৃষ্টান বা আরো কিছুতে বেঁধে রাখে, মানুষ হতে দেয় না। আমার জন্ম একটা মুসলিম পরিবারে হয়েছে, সে ভাবেই তারা আমাকে মানুষ করতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু লাভ কিছু হয়নি। আমি নিজে ভেবে কোন প্রকার ঈশ্বরের সন্ধান পাইনি। যদি কোন দিন পাই তা হলে আবার ধার্মিক হয়ে যাব। আপাতত স্বাধীনতাটা একটু ভোগ করে নিই।
পুরুষ লোক স্বাধীনতা খুব পছন্দ করে। নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল, সোনিয়া।
শোন, আমাকে এখন রাখতে হবে; আনিতা এসেছে। আমার প্রিয় বান্ধবী। তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেব কোন এক দিন। বিকেল বেলা বা রাতে পারলে আবার ফোন করো। কিন্তু রাত নটার পর ফোন কর না। ফোনটা নীচ তলার করিডোরে। আমার ঘর দোতালায়। রিং হলে চট করে ধরতে পারি না।
ঠিক আছে, সময় মতোই ফোন করব।
ফোন রেখে দিয়ে মনে হল; চাকরীর সুখবরটা তাকে দেয়া হল না। কী আর করা, আরেক দিন বলা যাবে।
মন্তব্য
এতো অকপটে লেখেন কিভাবে?? চলুক, সাথে আছি।
ফারাসাত
চলুক
অজ্ঞাতবাস
পড়ছি। এই পর্বটা এত্ত ছোট।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
নতুন মন্তব্য করুন