তীর্থের কাক শেষ পর্ব

পুতুল এর ছবি
লিখেছেন পুতুল (তারিখ: সোম, ১৮/১১/২০১৩ - ১:১৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সোনিয়া আমাদের লাগারে আসে রাজহংসীর মতো। মুখে একটা মিষ্টি হাসি। ভারতীয় পাকিস্তানীরা বেশ সমীহই করে তাকে। সেভাবেই এসেছিল সে দিন। একটা পাকিস্তানী এসে বায়না ধরল, “তোমার সহেলির সাথে পরিচয় করিয়ে দাও”। আমি জানি সোনিয়া জানতে চাইবে “কী বলেছে লোকটা”? কাজেই আমি তাকে পরিচয় করিয়ে দিলাম সোনিয়ার সাথে। ডাল চড়িয়ে এসেছি রান্না ঘরে। সেখানেই যাচ্ছি। একটু চা ও করে আনব সাথে। ফিরে এসে দেখি “সোনিয়া হাসছে”। কানে কানে বলল; তোমার ঐ পাকিস্তানী বন্ধু আমাকে চুমো খেতে চেয়েছে। শুনে আমিও সোনিয়ার হাসিতে যোগ দিলাম। সে বলে কীনা “তুমি হাসছ কেন? তোমার তো রেগে যাওযার কথা”! রাগবো কেন! তুমি যদি আমার চেয়ে অন্য কাউকে বেশী যোগ্য মনে কর বা ভালবাস, তাহলে তার কাছে যেতেই পার। আর পাকিস্তানীরা এমনই হয়। না হলে নয় মাসে চার লক্ষ ধর্ষণ করল কী করে?

কিন্তু আমি অবাক হচ্ছি তোমার শান্ত ভাব দেখে নয় বরং তোমার এত নিশ্চিত ইতিহাস জ্ঞান দেখে। তোমার সাথে পরিচয়ের পর বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু খোঁজ-খবর নিয়ে অনেক কিছুর সঙ্গে এই জঘন্য ইতিহাসটাও জেনেছি। আশা করি তুমি বা তোমার পরিবারের কারো ভাগ্যে যুদ্ধের ভয়ানক কোন প্রভাব পড়েনি।
না। তা পড়েনি। কিন্তু না পড়লেও কী আর যুদ্ধের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

একটা হাড়ি নিয়ে মুখের সব দাঁত বের করে ঘরে ঢুকছে জসিম। সোনিয়া ঘরে এলে আমরা কখনো দরজা বন্ধ করি না। বন্ধ দরজা অনেক কাল্পনিক গল্পের জন্ম দেয়, যা সোনিয়ার জন্য এই পাক-ভারত-বাঙ্গালী পুরুষদের সামনে খুব একটা স্বস্তিকর নয়। আমি এত কিছু ভাবতাম না। ব্যাপারটা চালু করেছে জসিম। ডালে পানির তুলনায় ডালের পরিমাণ এত কম যে, তাকে সুপ বা চা বলেও চালানোর কোন উপায় নেই। আর সেটা রান্না করেছি আমি। একটু উত্তেজনা তো থাকেই সেটা শুধু সোনিয়া বলে কথা নয়, ঘনিষ্ঠ নিকট আত্মীয় ছাড়া যে কোন মেয়ের সামনেই আমি একটু অপ্রস্তুত থাকি। এর মধ্যে জুটেছে খানের উপদ্রব। ব্যাটা এসে দরজায় দাঁড়িয়ে কোন কথা না বলেই চলে যায়। সোনিয়ার সাথে সে অন্তরঙ্গ হতে চেয়েছিল, সেটা কোন অপরাধ না হলেও, আমাকে চিনেই না এমন ডাহা মিথ্যাটা বলায়, তার উপর একটু ক্ষ্যাপাই ছিলাম। তবুও কিছু বলিনি, কারণ সে তো জেতেনি। পরাজিত সৈনিককে আঘাত করা অনৈতিক। কিন্তু তার এই আসা এবং একটু খানি তাকিয়ে থেকে আবার চলে যাওয়া বেশ বিব্রতকর মনে হচ্ছে। মনে ক্ষোভ থাকায় আমিও আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে পারছি না। এর মাঝে জসিম সোনিয়াকে বলছে; দেখ তোমার নিষ্কর্মা পুরুষ ডাল রেঁধেছে। ডাল খেয়েছি মেসে, হলে। বুড়িগঙ্গার পানির চেয়ে বেশী ঘোলা তা কখনো ছিল না। সেই অভ্যাস এখনো যায়নি। তা ছাড়া ভাল সিদ্ধ না হওয়ায়, ডাল হাড়ির তলায়। ঘোলা পানির উপরে কাঠকয়লার মতো ভাসছে বাগাড় দেয়া কালো রসুন। ডালের দিকে তাকিয়ে সোনিয়াও দেখি জসিমের পক্ষেই চলে গেল! হাসিটা কমিয়ে সে বলল; ডালে বেশী পানি দিয়ে বন্যা প্রতিরোধ করতে পারবে না। বুঝতে না পেরে আমার মুখের দিকে তাকাল জসিম। আমার অনুবাদ শেষ হওয়ার আগেই দু’জনে কোরাস তুলল হাসির। এত বড় অপমান!

হাসি থামিয়ে গাড়ি থেকে পানির বোতল এনে দিতে অনুরোধ করলো সোনিয়া। এতো পরিষ্কার কলের পানি! কিন্তু জার্মানরা তা পান করে না! দোকান থেকে কিনে খায়। সোনিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়। যত পরিচ্ছন্নই হোক, কলের পানি খাবে না। আরে বাবা, এই যে আমরা কলের পানি খাই, তাতে তো কারো কোন অসুখ-বিসুখ হয়নি কখনো! তা ছাড়া নীচে নেমে গাড়ী খুলে পানির বোতল আনার কষ্ট তো আছেই। সেটা না হয় করলাম। কিন্তু চাবি দিয়ে কী ভাবে গাড়ি খুলতে হয় তাও জানি না। নীচে গিয়ে চাবি দিয়ে গাড়ি খুলে যদি পানি আনতে না পারি, তা হলে আরো বড় অপমান সইতে হবে! সব দিক ভেবে আমি না করে দিলাম।
এবার সে নিজেই গেল পানি আনতে। পানির বোতল টেবিলে রেখে চেয়ারে শরীরটা ছেড়ে দিল কোন ভারি বস্তুর মতো। হাত থেকে খসে গেল চাবির তোড়া। বিরক্ত হয়ে তাকালাম তার মুখের দিকে। বাঁকা হাসির মতো বাঁকা ঠোঁট দুটো তাক করা আমার দিকে। অথৈ জলের নীচে বাতাসের অভাবে নিশ্বাস নিতে না পারা সোনিয়ার চোখ দু’টি কোটর ছেড়ে বের হয়ে আসতে চাইছে আমার দিকে। তার হৃদয়ের ফুটোর কথা মনে পড়লো আমার। দ্রুত বিছানার মাদুরটা ফ্লোরে ফেলে তার উপর শুইয়ে দিলাম সোনিয়াকে। ফার্স্ট এইড দেখেছিলাম টিভিতে। সে ভাবেই মুখে মুখ দিয়ে জোড়ে ফু দিয়ে বুকে চাপ দিচ্ছিলাম। বেশী মাছের লোভে পুকুরের সব চেয়ে গভীর তলায় ডুব দিয়ে হাতে লেগে যাওয়া মাছকে ধরার জন্য দম ফুরিয়ে এলেও আরো একটু থেকে যেতাম পানির তলায়। একেবারে দম ফুরিয়ে গেলে মনে হতো, এতো গভীর কেন পানি! কেন বেঁচে থাকার বাতাস নিতে পারছি না। একদম সেই অনুভূতি। জসিমকে ফোন করতে পাঠিয়েছি, যে কীনা আমাদের মধ্যে সবচেয়ে কম জার্মান জানে। আমি সোনিয়াকে একা রেখে কোথায় যাব! তার সবচেয়ে বড় বিপদে আমি তাকে একা রেখে যেতে পারলাম না।

আমি মুখে ফু দিয়ে আবার বুকে চাপ দিচ্ছি। কোন ভয় নেই সোনিয়া, জসিম কোন অলৌকিক ভাবে জরুরী চিকিৎসককে তোমার অবস্থা এবং অবস্থান নিশ্চয়ই জানিয়ে দেবে। এই তো ঐ জসিমকে দেখা যাচ্ছে। জসিম ছুটে এসে বলল; কোন এক জার্মান মহিলা টেলিফোন বুথ থেকে জসিমের অনুরোধে জরুরী বিভাগে ফোন করে রোগিণীর অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন। তারা আসল বলে। এদিকে সময় যেন যেতেই চায় না। বাঁকা হাঁসি চলে গিয়ে তৃপ্তির আমেজে উদ্ভাসিত এখন সোনিয়ার মুখ। আমার আশংকা তবুও দূর হচ্ছে না। আমি এখন আর ফু দেই না। শুধু ম্যাসেজ করে চলেছি সোনিয়ার বুক। যেন তার অস্থি-মজ্জা, শিরা উপশিরায় আমার অন্তরের সঞ্চিত সব ভালবাসার পরশ পৌঁছে যায়। তার সব জড়া-ব্যাধি আমার হয়ে যায়। তবু সে ভাল থাকুক।
ডাক্তার এসে পড়েছেন। ব্যাগ থেকে শক‌ দেয়ার যন্ত্র বের করেছেন। এখন সব ঠিক হয়ে যাবে। শক্ দেয়া হল, সোনিয়ার বুক একটু উপড়ে উঠে আবার স্থির হল আমার ম্যাট্রেসে। কয়েক বার এমন চেষ্টার পরে গম্ভীর হল ডাক্তারের মুখ। না ডাক্তার না, এমন অলক্ষুণে কথা আপনি বলবেন না যেন। দেখুন সোনিয়া কত শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। ও জেগে উঠলে, আমরা আবার আদম হাওয়ার প্রথম দেখার জায়গাটায় ফিরে যাব, ওর গাড়িতে করে। আপনার পায়ে পড়ি, আপনি জীবন রক্ষার বিদ্যা শিখেছেন। ওর তো কিছুই হয়নি, ও ঘুমোচ্ছে কেবল। আপনি আপনার জিয়ন কাঠি দিয়ে ওকে শুধু একবার জাগিয়ে তুলুন। ওর কাছে আমি কখনো যাব না। শুধু একবার, মাত্র একবার বলব; আমি তোমাকে ভালবাসি। এত কথা এত গল্পের ভিড়ে শুধু এই কথাটাই তাকে এখনো বলা হয়নি ডাক্তার।

জানি না কী অদ্ভুত কারণে, কার কাছে খবর পেয়ে পুলিশ চলে এলো। একটা আমেরিকান কালো সৈন্য, সাথে একটা জার্মান পুলিশ। সোনিয়া ঘুমিয়ে আছে। জার্মান পুলিশটা বেশ হাসি-খুশী। যেন সোনিয়ার ঘুমটা একটা খুশীর ব্যাপার। কালো আমেরিকান সৈন্যের বয়স খুব বেশী নয়, তবু সে বলল; বাবা, চাঁদে নেমেছি বলেই মহা বিশ্বের সবটুকু আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ভাবার কোন কারণ নেই। তুমি শান্ত হও।

বাগাট্টার পেছনে ছুটতে ছুটতে নূরপুর গ্রাম পাড়ি দিয়ে গিয়ে দেখতাম গোমতীর ওপারে চলে গেছে ঘুড়ি। নদী পাড়ি দেয়ার কোন উপায় তখন আমার ছিল না। কিন্তু এখন তো আমার উপায় আছে। সোনিয়ার গাড়ী থেকে পানির বোতলটা গিয়ে নিয়ে আসলেই তো মেয়েটা চলে যেত না। সে তো প্রাণ রক্ষার জন্য পানি চেয়েছিল! আমি পানি এনে দিইনি বলেই তাকে মরতে হল। এই ব্যাপারটা ধারালো ছোড়ার মতো এখনে চৈতন্যের কোথায় যেন আঘাত করে মাঝে মাঝে!


মন্তব্য

ঘুমকুমার এর ছবি

তীর্থের কাকের প্রতিটা পর্বের জন্য সত্যিই "তীর্থের কাক" এর মত অপেক্ষা করতাম। আগের কোনও পর্বে মন্তব্য করি নি শেষ পর্বের জন্য অপেক্ষায়।
কিন্তু এভাবে কেন শেষ হলো? কেন একটু অন্যরকম হতে পারল না? মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

না...............................................................
এভাবে হবে না ওঁয়া ওঁয়া

মনটা খারাপ করে দিলেন।
সোনিয়া তো দূরে কোথাও চলে যেতে পারত, এভাবে মরে যাওয়াটা ঠিক হল না।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে অনেক ধৈর্য্য নিয়ে, নিয়মিতভাবে লিখে সিরিজটা শেষ করার জন্য।
সামনে আর তীর্থের কাক থাকবে না, ভাবতেও মনটা খারাপ লাগছে।

ভাল থাকুন, শুভেচ্ছা হাসি

[মেঘলা মানুষ]
(ক্যাপচা না আসায় অতিথি অ‌্যাকাউন্ট থেকে মন্তব্য করলাম)

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বেশি তাড়াহুড়া হয়ে গেল বস! মনে হচ্ছিল যে করে হোক আপনাকে এই পর্বে শেষ করতেই হবে এমন তাড়া ছিল।

এই পর্বটা নিয়ে
এই পর্বের আগের দুই/তিনটা পর্বের সাথে এটার জোড়া লাগানো নিয়ে
উপন্যাসটা কীভাবে শেষ করবেন সেটা নিয়ে
- আরো ভাবার অনুরোধ করছি। প্রয়োজনে আরো একশ'বার ভাবুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

গুরুত্বহীন এর ছবি

এভাবে শেষ হবে বুঝতে পারিনি। এই সিরিজটা খুব বেশিদিন পড়িনি, তারপরও চরিত্রগুলোর প্রতি একটা দুর্বলতা চলে এসেছিলো। ভালো হতো যদি একবারে শেষ না করে মাঝে মাঝে দুয়েকটা লেখা পাওয়া যেতো।
পাঠক হিসেবে যাচাই করার মতো যোগ্যতা আমার নেই, তাও মনে হয় আনিসুল হক আর ইমদাদুল হকের মতো লেখকদের ভীড়ে আমাদের সৌভাগ্য আপনাকে সচলে পাওয়া।

এক লহমা এর ছবি

আমি সচলায়তনে খুব সামান্য দিন-ই এসেছি। আপনার এই উপন‌্যাস পিছিয়ে পিছি‌য়ে পড়েছি। ভেবেছিলাম আরো অনেকদিন চলবে এবং শেষ হওয়ার পর মুগ্ধতা জানানো সহ কিছু কথা লিখব। একটু ঠোক্কর খেয়ে গেলাম। প্রতি শব্দে শব্দে উপরে ষষ্ঠ পান্ডবের মন্তব্যের সাথে ঐকমত্য জানাচ্ছি। এমনকি আরো কয়েকটা পর্ব জুড়ে আপনি যদি একটা বিকল্প বিস্তার আর পরিণতি আমাদের পরীক্ষা করে দেখতে দেন তাতেও রাজী আছি!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তীরন্দাজ এর ছবি

খুব দ্রুত শেষ করে ফেললেন!
“গোমতীর ওপারে চলে গেছে ঘুড়ি”, বুকে এসে লাগলো কথাটি।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ছোটগল্পের নাটকীয়তা নিয়ে যেন অকস্মাৎ শেষ হয়ে গেল! স্বান্তনা একটাই, একটা মুগ্ধতার রেশ রেখে গেল মনে। চলুক

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হে হে... ভাগ্যিস এতদিন পড়িনাই... এবার জুত করে বসে পড়ে ফেলি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

সচলে আমি নতুন, শেষ কয়েকটি পর্ব পড়েছি। শেষ করতে তাড়াহুড়া করে ফেললেন মনে হয়। পুরোটা পড়ে দেখার আশা রাখি।

শব্দ পথিক
নভেম্বর ১৮, ২০১৩

নীড় সন্ধানী এর ছবি

উপন্যাসের সিরিজ পড়তে ধৈর্য ধরতে পারি না বলে শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি। পরে দেখি শেষ পর্বটাই আড়ালে চলে গেছে। অনেকের অনেক সিরিজ বাদ পড়ে গেছে। আপনার শেষ পর্বটা ধরতে পারলাম। এবার প্রথম দিকে যাওয়া যায়। তবে সমাপ্তিটা এত বেদনাদায়ক, মনে হচ্ছে এটা আগে না পড়লেই ভালো ছিল।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

কল্যাণ এর ছবি

পুরোটা পড়লাম প্রথম থেকে। ভাল লেগেছে।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।