(জেনেটিক মডিফাইড (বিটি) খাবার নিয়ে তিন পর্বের এই সিরিজ শুরু হচ্ছে পৃথিবীর জিএম বীজ সরবরাহের নব্বই ভাগ যার দখলে সেই মনসানটো কোম্পানি দিয়ে। দ্বিতীয় পর্বে থাকবে বিটি খাবার এবং শেষ হবে গোল্ডেন রাইস বা সোনালী ধান দিয়ে।)
(Monsanto) মনসানটো নবযুগের ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি?
মনসানটো কেমিক্যাল ওয়ার্কস নামটি জন ফ্রান্সিস কুইনি নির্বাচন করেন স্ত্রীর নামে। ১৯০১ সালে মাত্র ৫০০০ ডলার পূঁজি নিয়ে কোম্পানিতে নিযুক্ত করেন সানডোসের এক সময়ের কর্মী সুইস কেমিস্ট লুইস ভেইলন-কে। স্যাকারিন তৈরী করার কাঁচামাল আসতে লাগল কেমিস্ট লুইস ভেইলন-এর আগের কোম্পানি সানডোস থেকে। তখন স্যাকারিন তৈরী করতে পারত কেবল জার্মানরা। মি. কুইনি নিজের কাজ ছেড়ে আসলেন না। ১৯০৪ সাল থেকে উৎপাদিত হতে লাগল কফিইন এবং ১৯০৫ থেকে ভেনিলিন। কোম্পানিতে যুক্ত হলেন গাষ্টন ডুবইস এবং ইউলেস বেবিয়ে নামের আরো দু’জন সুইস কেমিস্ট। প্রথম তিন বছরে কোম্পানি লস করলেও ১৯০৫ সালে লাভ হল ১০৬০০ ডলার। লাভ জনক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হল কফিইন। ১৯০৮ সাল থেকে মি. কুইনি আগের কাজে ইস্তফা দিয়ে নিজেই নিজের কোম্পানির হাল ধরলেন। ১৯১৫ সালে কোম্পানির বিক্রি উন্নীত হল এক মিলিয়নে।
১৯২৭ সাল থেকে কোম্পানির শেয়ার কেনা-বেচা শুরু হল। মি. কুইনি ১৯২৮ সালে কোম্পানি বুঝিয়ে দিলেন ছেলে এডগার-কে। ১৯৩৩ সালে কোম্পানির নতুন নাম হল মনসানটো কেমিক্যাল কোম্পানি। ১৯৩৬ সালে মনসানটো কিনে নিলেন থমাস এন্ড হোকভাল্ড ল্যাবরেটরিস। এটাই পরে তাদের কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে পরিণত হয়।
১৯৪৪ সাল থেকে আরো এগারটি কোম্পানির সাথে মনসানটো লাইসেন্স ছাড়া আমেরিকান সরকারকে ডিডিটি সরবরাহ করার সুযোগ পেয়েছিল। ১৯৬২ সালে ডিডিটি উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়।
চল্লিশের দশক থেকে মনসানটো পিসিবি উৎপাদন করে আসছিল। বর্তমানে ডার্টি ডজন নামে খ্যাত মনসানটো ছাড়া আরো এগারটি কোম্পানি যে বিষ উৎপাদন করতো তা স্টক হোম কনভেনশন নিষিদ্ধ করে বাইশে মে ২০০১। মনসানটো অবশ্য তার আগেই ১৯৯৭৭ সালে ঐ বিষ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। ১৬ এপ্রিল ১৯৪৭ সালে টেক্সাস সিটিতে মনসানটোর কারখানায় একটি বিস্ফোরণ ঘটে। এই বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা ৫১২ জন। ১৯৪৯ সালে আমেরিকান ভিসকোস এর সাথে জয়েন ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠিত হয় নাইলন সূতা তৈরীর উদ্দেশ্য। নতুন শাখার নাম কেমস্ট্রান্ড। ১৯৬১ সালে জয়েন ভেঞ্চারের আমেরিকান ভিসকোসের অর্ধেক কিনে নেয় মনসানটো। তেল এবং গ্যাস উৎপাদনকারী লায়ন ওয়েল কেনে মনসানটো ১৯৫৫ সালে। তাদের বাৎসরিক বিক্রি বেড়ে দ্বারায় ৬৩২ মিলিয়ন ডলার। ১৯৭২ সালে ফিলিং স্টেশন এবং তেল পরিশোধাগার বেঁচে দেন টেস্কোর কাছে।
কেমি থেকে শঙ্কর কোম্পানি;
১৯৬০ সালের দিকে কৃত্রিম সার এবং কীটনাশক উৎপাদন শুরু করে মনসানটো। অনেক রকমের সামগ্রী উৎপাদনের কারণে ১৯৬৪ সালে কোম্পানির নাম হয় মনসানটো কোম্পানি। একই বছর ইতিপূর্বে কেনা কোম্পানির শাখা কেমস্ট্রান্ড উৎপাদন করে কৃত্রিম ঘাস, যার নাম দেওয়া হয় কেমগ্রাস। আস্ট্রডোমে সফল ব্যবহারের ফলে যা পরে আস্ট্রোটার্ফ নামে পরিচিত হয়। ১৯৬৫ থেকে -৭০ পর্যন্ত ভিয়েতনাম যুদ্ধে এজেন্ট অরেঞ্জ নামে পাতা ঝড়ার বিষ মার্কিন সেনাবাহিনীকে সরবরাহ করতো মনসানটো। ভিয়েতনামের ঐ এলাকার জনগণ এবং ঐ এলাকায় যুদ্ধরত মার্কিন সৈন্যরা এই বিষের সংস্পর্শে এসে চিকিৎসা করে সারানো সম্ভব নয় এমন স্বাস্থগত ক্ষতির শিকার হয়।
আবার সত্তরের দশকে মনসানটো তৈরী করে এলইডি লাইট ইঅড। যার ফলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ঘড়ি এবং ক্যালকুলেটর তৈরী সম্ভব হয়।
বায়োটেকনোলজি;
১৯৮০ সালে বিওগেন-এর অংশ বিশেষ কিনে নেয় মনসানটো এবং সহযোগী গবেষণা শুরু করে জিনটেক-এর সাথে। ১৯৮৫ সালে কেনা হয় মিষ্টদ্রব্য তৈরীর কারখানা গি.ডি. সেআর্ল এন্ড কোম্পানি এবং তৈরী করে শাখা কোম্পানি নুটরা সুইট। কিন্তু পুরো মিষ্টিদ্রব্য তৈরীর শাখা কোম্পানি বেচে দেয় ২০০০ সালে।
১৯৮২ সালে মনসানটো পৃথিবীতে প্রথম উদ্ভিদের জিন পরিবর্তনে সক্ষম হয়। ১৯৮৩ সালে তারা প্রথম জিন পরিবর্তিত জীবের জন্য পেটেন্ট জমা দেয়, নাম তার পেটুনি। ১৯৮৭ সালে আমেরিকায় মনসানটো শুরু করে জিন পরিবর্তিত উদ্ভিদ নিয়ে প্রথম মাঠ গবেষণা। পোসিলাক নামে পৃথিবীর প্রথম জিন পরিবর্তিত পণ্য আসে বাজারে। গাভীর দুধ বাড়ানোর একটা হরমোন । যা তারা ২০০৮ সালে ইলি লিলি নামের অন্য একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়।
জিন পরিবর্তিত টমেটো উৎপাদক কোম্পানি কোলজেন কিনে নেয় মনসানটো। পরের বছর কেনে কারগিল ১৪০ কোটি ডলার দিয়ে। কারগেল নিজেদের জন্য রেখে দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার। একই বছর মনসানটো কেনে ডেকাল্ব জেনেটিক কর্পোরেশন। বীজ উৎপাদনকারী দ্বিতীয় বৃহৎ কোম্পানিতে উন্নীত হয় মনসানটো। ২০০৫ সালে তারা কেনে ফল এবং সব্জীর বীজ উৎপাদক কোম্পানি সেমিনিস ১৪০ কোটি ডলার মূল্যে। এই বছর তুলার বীজ উৎপাদক স্টেনভিলে পেডিগ্রীড এবং নেক্সগেন কেনেন ৩শ মিলিয়ন ডলারে। কয়েকদিন পরে কেনেন ডেল্টা এন্ড পাইন ল্যান্ড ১৫০ কোটি ডলার মূল্যে। ২০০৯ সালে জিন পরিবর্তিত গম বীজ উৎপাদক ওয়েস্টব্রেড কেনেন ৪৫ মিলিয়ন ডলারে। আবার সিনগেনটার কাছে সূর্যমুখী তেলের বীজ উৎপাদন অংশ বেচে দেয় মনসানটো। ২০১১ সালে মনসানটো কেনে RNAi উদ্ভাবনের জন্য নোবেল প্রাইজ পাওয়া Craig Mello –এর বিওলজিক্স। বর্তমানে পৃথিবীর ৯০ ভাগ জিএম বীজ সরবরাহ করে মনসানটো।
মনসানটোর বিরুদ্ধে অভিযোগ:
১৯১২ সালে মার্কিন কৃষিমন্ত্রনালয়ের অভিযোগে সেগারিন স্বাভাবিক খাবারের উপাদান হিসাবে নিষিদ্ধ হয়। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ব্যবহার যোগ্য থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে বাজারে আবারো সেগারিন ছাড়ে মনসানটো। কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হিসাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় সরকারের পরিচ্ছন্ন খাদ্য আইনের কর্মীরা। ১৯২৫ সালে অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভাবে প্রত্যাখ্যান করে আদালত।
ভিয়েতনাম যুদ্ধে এজেন্ট অরেঞ্জ নামের বিষে স্বাস্থগত ক্ষতির কারণে মনসানটো সহ আরো এগারটি কোম্পানির বিরুদ্ধে সংযুক্ত অভিযোগ করে সৈন্যরা। ১৯৮৫ সালে ১৮০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ পেয়ে মামলা প্রত্যাহার করে নেয় সৈন্যরা। কিন্তু ঐ একই বিষে ক্ষতিগ্রস্ত ভিয়েতনামদের মামলা খারিজ করে দেয় একটি মার্কিন আদালত।
সয়াবিন-মোজাইক-ভাইরাস রোগের বিরুদ্ধে রেসিস্টেন্স সয়াবিন বীজ বাজার জাত করে মনসানটো। যারা সেই বীজ ব্যবহার করেছে তাদের ফসলের প্রায় ৮০ ভাগ ঐ ভাইরাস নষ্ট করে ফেলে। তাদের অভিযোগে এক লাখ তেষট্টি হাজার ডলার জরিমানা দেয় মনসানটো।
২০০৩ সালে অ্যালাব্যামার আনিষ্টন এলাকার বিশ হাজার অধিবাসীকে ক্ষতিপূরণ দেয় মনসানটো। কারণ তারা বছরের পর বছর মনসানটোর পিসিবি উৎপাদনের বাই প্রডাক্টের বিষক্রিয়ায় স্বাস্থগত ক্ষতির স্বীকার হন। ঐ এলাকায় পিসিবি উৎপাদন নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় ১৯৭৬ সালে। ত্রিশের দশকেই পিসিবির বিষক্রিয়া মনসানটোর জানা ছিল। তার পরেও তারা পিসিবি উৎপাদন বন্ধ করেনি। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে ঐ শহরের কাছে মিলিয়ন মিলিয়ন টন পিসিবি ফেলে দিত তারা বর্জ্য পদার্থ হিসাবে। অনেক রকমের খরচ মিলিয়ে মনসানটো জরিমানা দেয় ৭০০ মিলিয়ন ডলার।
৬ জানুয়ারি ২০০৫-এ মনসানটো-কে দেড় মিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়। কারণ; মনসানটো ইন্দোনেশিয়া সরকারের ১৪০ জন কর্মকর্তাকে শত্তুর হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছেন। বিটি তুলার বীজ উলগার্ড পরিবেশের জন্য কী রকমের ক্ষতিকর হতে পারে সেই রকমের কোন অনুমান ছাড়াই চাষের জন্য ছাড়পত্র প্রদানের উদ্দেশ্যেই এই ঘুষ দেওয়া। ঘুষের মাধ্যমে বিভিন্ন বই এবং বিল মানিপুলেট করা হয়।
বিটি বেগুনের ছাড়পত্র প্রদানের মামলায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল জ্বাল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রায় কুড়ি বছরের মনসানটো ভারতের (শেষ আট বছর প্রধান) “টিরুভারদা জগদিসান”। তিনি প্রমাণ করেছেন: মনসানটো তাদের পণ্য ভারতে ছাড়পত্র সহজে পাওয়ার জন্য পণ্য সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল নিজেদের অনুকূলে মানিপুলেট করেছে।
মনসানটো কীটনাশক বাজারে আনল। নাম তার রুন্ডআপ। টেক লাগানো হল; (কাজ শেষে) বায়োলজিক্যালি নষ্ট হয়ে যাবে। যা সঠিক নয়। নিউ ইয়র্ক প্রদেশ কীটনাশকে ঐ টেগ নিষিদ্ধ করে। একই কৌশলে রুন্ডআপ বাজারজাত করা হয় ফ্রান্সে। সেখানে টেগে নতুন যুক্ত হয় পরিবেশ বান্ধব। যা ঠিক নয়। দুটি সংস্থার অভিযোগ সব কোর্ট থেকে প্রমাণ হয়। মনসানটো জরিমানা দেয় ১৫ হাজার ইউরো।
কীটনাশকের নাম লাসো। ইংল্যান্ড এবং বেলজিয়ামে মানুষের জন্য বিষাক্ত বলে নিষিদ্ধ ঘোষিত। কিন্তু মনসানটো যেখানে পারছে সেখানে তা বিক্রি করেই যাচ্ছে। মানুষের স্বস্থের জন্য লাসো যে বিষাক্ত তা জানা ছিল ৮০-র দশক থেকেই। তার পরেও মনসানটো বাজার থেকে ঐ কীটনাশক প্রত্যাহার করেনি। সেই রকম একটা ড্রামের বাষ্প নিঃশ্বাসের সাথে ঢুকে যায় এক ফরাসী চাষির ফুসফুসে। প্রথমে বমি, অবসাদ, মাথাব্যথা। পরে দেখাযায় তাঁর প্রধান নার্ভ সিস্টেমও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১২ সালে কোর্ট রায় দিয়েছে চাষির পক্ষে। কিন্তু মনসানটো আপিল করেছে।
চাষিদের বিরুদ্ধে মনসানটোর অভিযোগ:
১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মনসানটো ১৪৭ জন আমেরিকান চাষির বিরুদ্ধে জেনেটিক মডিফাইড বীজের মেধা স্বত্ব অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করে। মনসানটোর থেকে কেনা বীজের ফসলের একটা অংশ চাষিরা পরের বছর নিজের ক্ষেতে বীজ হিসাবে ব্যবহারের করেছে। মনসানটোর চুক্তি অনুযায়ী যা বেআইনি। এই ধরণের চুক্তি ভঙ্গের বিরুদ্ধে মনসানটো প্রতিবেশী চাষিদের সাহায্য কামনা করে। পাশের জমিতে মনসানটোর অবৈধ বীজ বপন করেছে এমন খবর জানার পর মনসানটো এগারজন চাষির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অবৈধ ভাবে মনসানটোর পণ্য ব্যবহার কারী চাষিদের বিরুদ্ধ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাৎসরিক দশ মিলিয়ন ডলার বাজেটের ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি শাখা রয়েছে মনসানটোর। ১৯৯৮ সালে তারা ৪৭৫ জন চাষির বিরুদ্ধে অভিযোগ যাচাই করে দেখেছে। বছরে কমপক্ষে এই রকমের পাঁচ শত চাষির সন্দেহ জনক বীজ ব্যবহার যাচাই বাছাই করে কোম্পানি। ২০০৫ সালে ৯০ জন চাষির বিরুদ্ধে মনসানটো আদালতে নালিশ করেছে বলে জানায় আমেরিকান খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা। ৯০ জন চাষির মধ্যে কমপক্ষে ছয়জন চাষির সই নকল করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে মনসানটোর বিরুদ্ধে। সেই ছয় জনের এক জন চাষি স্ট্রেটমায়ার আদালতে অভিযোগ করে বলেছে; তাঁর দস্তখত জ্বাল করে বীজের চুক্তি করেছে মনসানটো।
কানাডায় সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গিয়েছে মনসানটো চাষি স্মাইসার-এর বিরুদ্ধে। স্মাইসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ; সে মনসানটোর রুনডআপ-রেডি-কানোলা সরিষা অবৈধ ভাবে বুনেছে নিজের ক্ষেতে। কারণ সে সেই বীজ মনসানটো-র কাছ থেকে কেনে নি। স্মাইসার আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলছে; হয়তো ক্ষেতের পাশ দিয়ে মনসানটোর ঐ বীজ বা ফসল বাহী ট্রাক থেকে আমার ক্ষেতে বীজ এসে থাকতে পারে। এমনও হতে পারে পাশের জমির পাকা ফসল বাতাসে আমার ক্ষেতে চলে এসেছে। (ক্ষেতের আগাছা মারা জন্য স্মাইসার যে ওষুধ ব্যবহার করেছে, তাতে মনসানটোর উদ্ভাবিত ফসলের চাড়া মরে নি। সে সেটাকেই বীজ হিসাবে ব্যবহার করেছে। আমেরিকা, ইউরোপ বা কানাডায় বিশাল বিশাল জমি। সে জমিতে এক দিক দিয়ে বীজ বাহী ট্রাক গেলে এবং বাহিত বীজের কোন বা একাধিক বস্তায় ছিদ্র থাকলে এবং শস্য যদি হয় সরিষা, তা হলে অনেক সরিষা পরে যাবে। তাতে যে ফলন হবে তা দিয়ে পুরো ক্ষেতের বীজ হয়ে যাওয়ারই কথা।) প্রায় এক হেক্টর জমিতে আগাছা বিনাশী রুন্ডআপ ছিটানোর পরেও প্রায় ৬০ ভাগ গাছ মরে নি। সেই ৬০ ভাগ থেকে বীজ সংগ্রহ করে সে তার ৪০০ হেক্টর জমিতে ব্যবহার করেছে। স্মাইসারকে কোন লাইসেন্স ফি বা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়নি। কারণ সে ঐ বীজ থেকে বিশেষ কোন সুবিধা পায়নি। কিন্তু তাঁর জেনেশুনে ঐ লাইসেন্স করা বীজ ব্যবহার করা ঠিক হয় নি বলে জানিয়েছে আদালত।
ওয়াকুর্ট ডায়েরী তাদের বিজ্ঞাপনে দাবী করেছে যে; তারা মনসানটোর উদ্ভাবিত বর্ধনশীল হরমোন ছাড়া দুধ উৎপাদন করেছে। সে জন্য তা গুনে মানে মনসানটোর বর্ধনশীল হরমোন খাওয়া গাভীর দুধের চেয়ে অনেক অনেক গুন ভাল। ২০০৪ সালে কোম্পানির সুনাম নষ্ট হওয়া ঐ বিজ্ঞাপন বাতিলের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হলে, আদালত মনসানটোর পক্ষে রায় দেয়।
মনসানটো-র রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি:
লিনডা জে. ফিসার ছিলেন আমেরিকান সরকারের পরিবেশ প্রতিরক্ষা এজেন্সি-র কর্মকর্তা, পেস্টিসাইড এবং বিষ বিভাগে। মনসানটোতে এলেন সহ-গণসংযোগ কর্মকর্তা হয়ে। তারপর আবার গেলেন সরকারের অধীনে। তবে এবার গেলেন পরিবেশ প্রতিরক্ষা এজেন্সির সহ প্রধান হয়ে। আমেরিকার ফুড এন্ড ড্রাগ বিভাগের এডমিনিস্ট্রেটর উইলিয়াম ডি. রুকেলহাউস অনেক বছর মনসানটোর প্রেসিডিয়াম সদস্য। মারগ্রেট মিলার মনসানটোর কেমিস্ট্রি ল্যাব প্রধান। প্রমোশন পেয়ে হয়ে যান আমেরিকান খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের সহ প্রধান।
মেক্সিকোতে বায়োডাইভারসিটি GVO নামে একটি আইন আছে। অনেকের কাছে তা মনসানটো আইন নামে পরিচিত। কারণ সেই আইনে বড় কয়েকটি মেক্সিকান কোম্পানি ছাড়া ছোট কৃষকদের কোন উপকারে আসে না। তবে সেই আইনে সব চেয়ে বেশী লাভ হচ্ছে মনসানটোর।
জার্মান কৃষিমন্ত্রী ইলসে আইগনার মনসানটোর MON810 জেনেটিক মডিফাইড ভুট্টা জার্মানিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন ১৪ এপ্রিল ২০০৯। আমেরিকান বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জার্মান রাষ্ট্রদূতকে তলব করে মনসানটোর ভুট্টা জার্মানে চাষের অনুপযোগী ঘোষণা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পরের পর্বে থাকবে বিটি খাবার।
১ জেনেটিকালি মডিফাইড খাবার মানেই বিটি খাবার নয়, তাই প্রথম বাক্যে ব্র্যাকেটে 'বিটি' লেখার জায়গায় 'জিএম' হওয়া উচিত।
জেনেটিক্যাল মডিফাইড না হলে বিটি হওয়া সম্ভব না। জিএম অনেক কিছু হতে পারে সে জন্য জিএম পদ্ধতিতে (এখানেও যথেষ্ট স্পেসেফিক হওয়া কঠিন) বিটি খাবারের ভেতরে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখতে চাই। তাই জেনেটিক মডিফাইড এর পরে ব্র্যাকেটে বিটি লিখেছি। সোনালী ধানও আলাদা ভাবে আলোচনা করতে চাই। সোনালী ধান আবার জিএম তবে বিটি নয়।
২ আপনি বলছেন, 'বর্তমানে পৃথিবীর ৯০ ভাগ বীজ সরবরাহ করে মনসানটো।' - ভুল। আসলে ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদের বীজের ৯০ শতাংশের মালিক মনস্যান্টো।
বেখায়ালে আসেনি। এখন জিএম যোগ করে দিলাম।
- উচ্চারণ হিসেবে বানানগুলি খুব চোখে লাগলো। যেমন: পেটেন (পেটেন্ট), নেক্সগেন (নেক্সজেন), বিওলজিক্স (বায়োলজিক্স), সিনগেনটা (সিনজেনটা) ইত্যাদি। [ইংরেজি হিসেবে উচ্চারণ কেমন হবে সেটা ব্র্যাকেটে দেখালাম]
পেটেন= টাইপো, ঠিক করে দিলাম। ব্র্যাকেটের অন্য বানাগুলোর ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই। আমার সোর্স জার্মান ভাষা। সেই প্রনানসিয়েশন আমি চাইলেও এড়িয়ে যেতে পারি না। ইয়েস, নট, ভেরিগুড টাইপের জানা কয়েক বর্ণ ইংরেজী, জার্মান ভাষার প্রাবল্যে ভুলেই গেছি।
- ব্যাবসা হিসেবে অনেক কর্পোরেট কোম্পানির অনেক বাজে কাজের উদাহরণ দেয়া যায়। যেমন, মনে করি আমেরিকান গাড়ি প্রস্তুতকারি কোম্পানি 'জিএম' (জিনেটাকালী মডিফাইড নয় চোখ টিপি ) বহু গর্হিত কাজ করেছে। আমরা সেজন্য সেই কোম্পানি কে দোষ দিতে পারি, কিন্তু গাড়িকে দোষ দিতে পারিনা। আপনি মনস্যান্টোর কথা প্রথম পর্বে এনে পরের পর্বগুলোতে পুরো জিএম টেকনোলজিকে দোষারোপ করতে চাইছেন না আশা করি।
মনসানটোর অনেক খারাপ কাজ আছে সেটা মেনে নিচ্ছেন। ধন্যবাদ।
- ঠিক একই যুক্তি দিয়ে পৃথিবীর বড় কোন তেল কোম্পানিকে 'ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি' হিসেবে ডাকা যায়
তা হলে ডাকা শুরু করুন।
- মনসান্টোর একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন আছে, যদিও ব্যাবসার স্বার্থে করা কিন্তু এটা নতুন গবেষণার দিগন্ত দেখিয়েছে। তাদের অর্থের গবেষণাই প্রথম দেখিয়েছে যে উদ্ভিদে ব্যাকটেরিয়ার জিন ঢুকিয়ে ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ তৈরি করা যায়
তাদের বিটি-ই আগামী পর্বে আলোচনার আশা রাখি।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
কয়েকবার উচ্চারণ করেছেন "সেগারিন", এটা কই স্যাকারিন হবে?
বিটি বেগুনের ছাড়পত্র প্রদানের মামলায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল জ্বাল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রায় কুড়ি বছরের মনসানটো ভারতের (শেষ আট বছর প্রধান) “টিরুভারদা জগদিসান”। তিনি প্রমাণ করেছেন: মনসানটো তাদের পণ্য ভারতে ছাড়পত্র সহজে পাওয়ার জন্য পণ্য সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল নিজেদের অনুকূলে মানিপুলেট করেছে।
এই মামলার ফলাফল কি? কোন রেফারেন্স আছে?
স্যাকারিন ঠিক করে দিলাম।
তথ্য সূত্র জার্মান ভাষায় নীচের দিকে আছে। মামলার এখনো কোন রায় হয়নি। বিটি বেগুন ভারত যে কারণে এখনও ছাড়েনি, সেই মামলার একজন সাক্ষী টিরুভারদা জগদিসান।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
জিএম=বিটি এই নিয়ে প্রশ্ন করতে যাচ্ছিলাম দেখি ওসমান ভাই বিবাদ ভঞ্জন করে রেখেছেন
আপাতত নিয়া বসি, অবস্থা
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
জিএম না হলে বিটি হওয়া সম্ভব না। বিটি অতি অবশ্যই জিম। তবে জিএম হলেই বিটি হবে এমন কোন কথা নেই। এই নিয়ে বিস্তারিত কথা হবে পরের পর্ব। পর্বের নামই হবে বিটি খাবার।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
সচেতনতার ডাকে আপনার প্রয়াসে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। মনসানটো যে “হায়েনা”, বিভিন্ন বক্তব্যেই সেটি প্রকাশিত:
১) বিশ্ববাজারে মনসানটো তাদের আগ্রাসী প্রভাব এতো বেশি বাড়াতে বদ্ধপরিকর যে, একসময় সবরকম প্রতিবাদই স্তিমিত হয়ে পড়তে বাধ্য হবে।
২) সারা পৃথিবী জুড়ে নব্বুই ভাগ জিএম-বীজ সরবরাহ করে মনসানটো।
৩) আমেরিকার বীজ-বাজারে মনসানটোর ভুমিকা এতোই প্রবল যে, জিএম বীজ ছাড়া অন্যান্য ভালো জাতের বীজ বাজার থেকেই উধাও।
৪) মনসানটোর প্রভাবে সাধারণ বীজ নিয়ে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নীরিক্ষা ক্রমশঃই কমে আসছে। অন্যদিকে জিএম-বীজের প্রতিটিই পেটেন্টের আওতাভুক্ত।
৫) মনসানটোর সাথে চুক্তিবদ্ধতার কারণে পরের বছরের জন্যে বীজসংরক্ষন করার অধিকার চাষীদের নেই।
৬) চাষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে মনসানটোর বাজেট দশ মিলিয়ন ডলার।
৭) পেটেন্ট-বিবাদে এ অবধি প্রতি বছর গড়ে ৫০০ চাষীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে মনসানটো।
৮) আদালতের রায়ে দোষী বা নির্দোষ, এর বাইরে প্রতিটি চাষীকেই অর্থ ও শারিরীক শক্তি প্রয়োগে নিজেদের সাথে সমঝেতায় আনার চেষ্টা চালায় মসনানটো।
৯) দুহাজার সাল থেকে আদালতেই বাইরে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে অনেক চাষীকে নিজেরদের পথে আনতে বাধ্য করা হয়েছে, সে কথা নিজেই স্বীকার করেছে মনসানটো।
এই মনসানটো যদি “ইষ্ট ইন্ডিয়ান কোম্পানীর” মতো হায়েনা না হয়, তাহলে কে হায়েনা? আরো অন্যান্য পরিবেশবাদী আন্দোলনের সাথে মনসানটোর অপকর্মের বিরুদ্ধে যারা তৎপর, সেই “গ্রীন পিসকেই” হায়েনা সাজাতে চেষ্টা করে কোনো কোনো মহল। জানি, খুব দরিদ্র এক দেশ আমাদের। এই দরিদ্রতার সুযোগ গ্রহণ করে কোন কোনো মহল আমাদেরকে দেশকে এ ধরণের হায়েনার হাতে তুলে দিতে চায়। এর প্রতিবাদে সব রকম সত্যকে ঢাল হিসেবে তুলে ধরতে হবে আমাদের।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে মুক্তবাজার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব দিয়েছে আমেরিকা। আরও অন্যান্য কারণের সাথে জিএম-শষ্যের বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত আমেরিকার ইউরোপের বন্ধুরা। যেখানে আমেরিকাতে জিএম-শষ্যের চাষ ৯৯%, ইউরোপে সে পরিমান ১%। একদিকে বন্ধুত্ব, অন্যদিকে জিএম-আগ্রাসন, শ্যাম রাখি না কুল রাখি!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
শেষের দিকের মন্তব্য কেমন যেন প্রস্থে বেড়ে গেছে। অন্তত আমার মনিটরে পড়তে পারলেও, সুন্দর লাগছে না। এবং পড়ে আরাম পাচ্ছি না। আর যারা একই সমস্যায় আছেন, তাদের কাছে ক্ষমা প্রর্থনা করছি। আমি কম্পু কানা মানুষ, কোথায় কোন ভুল বাটনে চাপ লেগে, (অশা করি শুধু আমার) মনিটরেই এমন অদ্ভূত দেখাচ্ছে।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
এরকম চেহারার সচলায়তন কখনও দেখিনি। পুরো প্রস্থ জুড়ে মন্তব্য দেখাচ্ছে!
এমনিতেই, মন শান্ত (!) ছিল, এখন এসব পড়ে মন বড় ভাবনায় পড়ে গেল
যাইহোক, ঘটনা বেশ চিন্তার।
অবস্থা এই রকমঃ বাচ্চা নিয়েছেন ঠিক আছে, কিন্তু নাতির আগে পারমিশন লাগবে, তা না হলে ক্ষতিপূরণ মামলা তো আছেই!!!!
মন্তব্য
- ভুল:
১। জেনেটিকালি মডিফাইড খাবার মানেই বিটি খাবার নয়, তাই প্রথম বাক্যে ব্র্যাকেটে 'বিটি' লেখার জায়গায় 'জিএম' হওয়া উচিত।
২। আপনি বলছেন, 'বর্তমানে পৃথিবীর ৯০ ভাগ বীজ সরবরাহ করে মনসানটো।' - ভুল। আসলে ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদের বীজের ৯০ শতাংশের মালিক মনস্যান্টো।
- উচ্চারণ হিসেবে বানানগুলি খুব চোখে লাগলো। যেমন: পেটেন (পেটেন্ট), নেক্সগেন (নেক্সজেন), বিওলজিক্স (বায়োলজিক্স), সিনগেনটা (সিনজেনটা) ইত্যাদি। [ইংরেজি হিসেবে উচ্চারণ কেমন হবে সেটা ব্র্যাকেটে দেখালাম]
- ব্যাবসা হিসেবে অনেক কর্পোরেট কোম্পানির অনেক বাজে কাজের উদাহরণ দেয়া যায়। যেমন, মনে করি আমেরিকান গাড়ি প্রস্তুতকারি কোম্পানি 'জিএম' (জিনেটাকালী মডিফাইড নয় ) বহু গর্হিত কাজ করেছে। আমরা সেজন্য সেই কোম্পানি কে দোষ দিতে পারি, কিন্তু গাড়িকে দোষ দিতে পারিনা। আপনি মনস্যান্টোর কথা প্রথম পর্বে এনে পরের পর্বগুলোতে পুরো জিএম টেকনোলজিকে দোষারোপ করতে চাইছেন না আশা করি।
- ঠিক একই যুক্তি দিয়ে পৃথিবীর বড় কোন তেল কোম্পানিকে 'ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি' হিসেবে ডাকা যায়, মনোপলিটা বরং সেখানে আরও প্রকট! পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ এখনও নন-জিএম শস্য উৎপাদন করে, কিন্তু পৃথিবীর প্রায় সব গাড়িই খনিজ তেল ব্যবহার করে।
- মনসান্টোর একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন আছে, যদিও ব্যাবসার স্বার্থে করা কিন্তু এটা নতুন গবেষণার দিগন্ত দেখিয়েছে। তাদের অর্থের গবেষণাই প্রথম দেখিয়েছে যে উদ্ভিদে ব্যাকটেরিয়ার জিন ঢুকিয়ে ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ তৈরি করা যায়।
কিন্তু কোম্পানি যদি একবার আস্থা হারায়, তাহলে তার পণ্য বা আগ্রহকে আপনি কিভাবে বিশ্বাস করবেন?
হয়তো ঠিকমত বোঝাতে পারিনাই।
হ্যাঁ, ওই কোম্পানির পণ্য, মানে জেনারেল মোটরস এর মোটরগাড়ি খারাপ, বা তাদের আধিপত্য খারাপ এটা বলতে পারেন। কিন্তু 'মোটরগাড়ি খারাপ জিনিস' এটা বলতে পারেন না।
... আর কোন পণ্যের জোরে এই আধিপত্য, সেটি নিয়ে একবারও ভাব না?
যে মোটরগাড়ি “এ থেকে বি” তে যাবার পথে পাঁচ লিটার ফুয়েল পোড়ায় আর
যে মোটরগাড়ি “এ থেকে বি” তে যাবার পথে পঁচিশ লিটার ফুয়েল পোড়ায়,
এদের মাঝে কোনো বাছবিচার থাকবে না আপনার? আর এর বিরুদ্ধে যদি গ্রীন পিস কথা বলে, তাহলেই মহল খোঁজা শুরু করতে হবে?
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
অবশ্যই বাছবিচার করবেন। কিন্তু একটা পণ্য খারাপ বলে গোটা 'মোটরগাড়ি খারাপ জিনিস', বা 'জিএম খাবার খারাপ জিনিস' এরকম বলে চিল্লাপাল্লা করাটা মূর্খতা।
এরকম বলে চিল্লাপাল্লা করাটা মূর্খতা
এই ধরণের বাক্যবন্ধ দয়া করে লিখবেন না। যখন তখন যাকে তাকে মূর্খ বলাটাও কোন জ্ঞানির পরিচয় বহন করে না।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আমিতো যখন তখন যাকে তাকে মূর্খ বলছি না। একেবারে স্পষ্টভাবে চোখে আঙুল দিয়ে বলছি: জেনারেল মোটরস খারাপ কাজ করেছে বা খারাপ গাড়ি (পণ্য) তৈরি করেছে বলে 'সকল মোটরগাড়িই খারাপ' এইভাবে যুক্তি যারা দেয় তারা মূর্খ নয়, মহামূর্খ।
অযৌক্তিক চিল্লাপাল্লাকে মূখর্ামি বলতে 'জ্ঞানী' হওয়া লাগেনা। তবে আপনার 'জ্ঞানী ব্যাক্তিরা মূর্খ বলেনা' কথাটা নিয়া সংশয় হওয়ায় খুঁজে দেখলাম নেট, কি পেয়েছি দেখেন!
আপনার প্রথম তুলনা, জিএম এর মোটর গাড়ি আর কোটি কোটি মানুষের খাদ্য, ভয়ঙ্কর ভাবে অপাংতেয়। আপনি তো নির্বোধ নন, তাই আপনার এই তুলনা আমাকে হতাশ করেছে।
কারো মোটরগাড়ি খারাপ, কারোরটা খুব ভালো, কারোরটা তত ভালো না। আমি কোনটি কিনব, সেটি নির্ভর করছে, প্রথমত আমার পকেটের অবস্থা, দ্বিতীয়ত আমার পছন্দের উপর। এতে অন্য, বিশেষ সমাজের তেমন কিছু যায় আসে না। এই নিয়ে তর্ক হলেও, এই তর্কের মুল্যমান আমরা যে বিষয় নিয়ে কথা বলছি, তার তুলনায় একেবারেই নগন্য।
আর যে খাবার খেয়ে কোটি কোটি মানুষ বাঁচবে, সেখানে কী এই তুলনা আনা আপনার বিজ্ঞানী মানসে বুদ্ধিসন্মত বলে মনে হয়? মনসানটোর দুর্নাম আছে, সেটি আপনি পরোক্ষভাবে হলেও স্বীকার করে নিয়েছেন। এই দুর্নামের ভাগীদার মনসানটোকে আমাদের দেশের, এমন কি সারা বিশ্বের কোটি কোটি খাবারের মনোপোলি তুলে দিয়ে আপনি নিশ্চিত মনে নাক ডাকাতে পারলেও আমরা পারি না। সেজন্যেই প্রতিবাদ করি, একবার নয়, দু বার নয়, হাজারো বার ভেবে দেখতে বলি। কারনগুলো হচ্ছে, প্রথমতঃ কোনো ধরণের মনোপোলিই গ্রহনযোগ্য নয়, দ্বিতীয়ত: এই মনোপোলি যদি মনসানটোর মতো দুর্নামধারীর দখলে আসে, তৃতীয়তঃ বিষয়টি যদি ইজএম খাবারের মতো একটি নাজুক বিষয় নিয়ে হয়, তাহলে অবশ্যই ভাবতে হবে। আপনি তো ভাবছেনই না, সারা পৃথিবী ভাবছে, সেগুলো আপনার চোখে একবারও পড়ছে না। আমরা ভাবছি, সবাইকে বারবার ভাবতে বলছি, আর আপনি বার বার এসে অন্ধ এক ডিক্টেটরের মতো যারা ভাবছে, তাদের একবার কুচক্রী মহল, আরেকবার মুর্খ বলে আখ্যা দিয়ে যাচ্ছেন। ভারত, ফিলিপাইন বিটি বেগুন নিষিদ্ধ করেছে, পুরো কেনিয়াতে জিএম খাবার নিষিদ্ধ, ইউরোপে আন্দোলন চলছে এর বিরুদ্ধে, আমেরিকাতে চাষীরা, ভোক্তারা মিছিল করছে, এরা সবাই মূর্খ, আপনি মহাবুদ্ধিমান বিজ্ঞান বিশারদ?
কে আপনি? আপনি কি মনসানটোর চাকুরে? যদি সেটি হয়, তাহলে অন্তত প্রভুভক্তির কারনে আপনাকে বাহবা জানাতে হয়! যদি তা না হন, তাহলে মনসানটোর চশমাটি খুলে আরো কয়েকশ বার ভাবুন, এ ধরণের নাজুক প্রশ্নে সেটি বিজ্ঞানীদেরও করতে শিখতে হয়। তাতে জনমানুষের মঙ্গল হওয়া ছাড়া অমঙ্গল হবে না। আপনি তো জনমানুষের মঙ্গলই চান।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আমার জিএম-বিরোধীদের যুক্তিহীন এবং প্রমাণহীন ব্যাখ্যাগুলির বিপক্ষে অবস্থান মানে এই নয় যে আমি মনসান্টোর দালালী করি। তেমনি আপনি জিএম টেকনোলজির বিপক্ষে অবস্থান করছেন মানে এই নয় যে আপনি উবীনীগের দালাল বা ফরহাদ মাজহারের শিষ্য।
একটা কথা ঠিক বলেছেন, আমি আসলেই পৃথিবীজুড়ে অযৌক্তিক চিল্লাপাল্লা যারা করছে তাদের পক্ষে যাবোনা। এরা সবাই আপনার মত খুবই বুদ্ধিমান হতে পারেন, তারপরও যাবোনা। আমি মনসান্টো নামক কোম্পানির পক্ষেও যাবোনা, উপরের লেখা দেখলে আপনার সেটা বোঝার কথা (কিন্তু বোঝেননি সেটা আপনার কমেন্টের শেষ প্যারা দেখে বুঝেছি)। কারনটা বলছি।
আমি যেটা দেখবো সেটা হল যেসব বিজ্ঞানী জিএম নিয়ে কাজ করছেন তাদের কথা। আপনি বিজ্ঞানের লোক হলে হয়তো 'সায়েন্স' এবং 'নেচার' পত্রিকা দুইটির নাম শুনে থাকবেন। বিজ্ঞানে নোবেল পাওয়া সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা প্রথম প্রকাশিত হয় এই দুইটি পত্রিকায়। তাই আমি এদের কথা অন্যদের চেয়ে গুরুত্ব দিয়েই দেখবো। আগে দুইটা লেখায় দেখিয়েছিলাম পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় এই দুইটি পত্রিকার সম্পাদকীয় জিএম টেকনোলজি নিয়ে কি লিখছে। আমার দেশ, ডেইলি মেইল, গ্রীণপিস এই ধরনের পত্রিকা এবং সংগঠনগুলির খবরের চেয়ে বিজ্ঞান পত্রিকাগুলির লেখা অনেক বেশি প্রমাণ বহন করে। ব্যাপারটা হয়তো বুঝতে পারছেন। আমার এই সহজ যুক্তিগত অবস্থান হয়তো বুঝতে পারবেন। আবার দিচ্ছি লেখাগুলির লিংক:
http://www.sachalayatan.com/shajib_osman/51515
http://www.sachalayatan.com/shajib_osman/51505
পর্যাপ্ত যুক্তি দিতে না পারলে একটি জিএম শস্য খারাপ বলেই সবগুলি জিএম শস্য খারাপ, এই অবস্থান মূর্খামি মনে করি এখনও। উদাহরণ দিয়ে বলি, কিছু মাশরুম (প্রাকৃতিক ছত্রাক) মানুষের জন্য বিষ বহন করে বলে সকল মাশরুম খারাপ, এই যুক্তি দেয়া যায়না। মাশরুম আপনি চাষ করতেই পারেন, তবে ক্ষতিকর নয় এমন। এখন আপনি কেন মাশরুম চাষ করবেন, এটা নিয়ে আমি চিল্লাপাল্লা করলে সেটা হবে অযৌক্তিক।
জীবে জিনগত পরিবর্তন প্রাকৃতিকভাবেই হয়। খুব ভয়াবহ ভাইরাস তৈরি হয় এভাবে। এইডস এর কথাই ধরুন। আবার মানুষের জন্য খুব ভাল জীবও তৈরি হয় এভাবে, যেমন ঔষধ তৈরি করা যায় এমন উপাদান বহন করা কোন উদ্ভিদ। এখন আমি এইডস এর উদাহরণ দিয়ে শুধু বলতে পারিনা যে প্রাকৃতিক জিনগত পরিবর্তন খারাপ। জিএম টেকনোলজির ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে।
মনে হচ্ছে জিএম শস্যের ব্যাপারে মোটা দাগে তিনটা পৃথক ইস্যু আছেঃ (১) বীজ স্বত্ব (যার সঙ্গে কপিরাইটের কোন মৌলিক পার্থক্য নেই), (২) মানব স্বাস্থ্য ঝুঁকি, এবং (৩) পরিবেশ ঝুঁকি। যেসব দেশে জিএম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, অথবা নিষিদ্ধ করার পক্ষে আন্দোলন চলছে, সেসব দেশে এই তিন ইস্যুর মধ্যে ঠিক কোন ইস্যুতে জিএম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেটা জানা প্রয়োজন। অবশ্য দুর্বল, ত্রুটিপূর্ণ গবেষণার ফলের ভিত্তিতেও অনেকে জিএম-এর বিরোধিতা করেন।
Emran