সতীর্থ ব্লগার সামিয়া জামান তার নারী বনাম পুরুষ লেখায় অভিযোগ করেছেন যে অনেক পুরুষ কর্মকর্তারা নারী কর্মীদের প্রতি অবহেলা দেখান। তার কোনো এক সিইও বন্ধুর বরাত দিয়ে তিনি লিখেছেন যে, সেই বন্ধু মনে করেন নারীকর্মীকে কাজ দিলেই তারা পরিবার, সন্তান ও স্বামীর অজুহাত দেখিয়ে কাজ থেকে মুক্তি চান। অর্থাৎ তারা দায়িত্ব নিতে চান না। সামিয়া তার লেখায় সেই বন্ধুর ধ্যান-ধারণা কে নিন্দা করেছেন।
সামিয়ার লেখার জবাব আমি মন্তব্যে দিয়েছি। এখানে তা বিস্তারিত করে বলতে চাই। সামিয়া আপনার বন্ধুর বক্তব্যগুলো ধ্যান-ধারণা নয় বরং এটি তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা।
নারীদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে এই স্টিরিটাইপ দৃষ্টান্ত থেকে নিজেদের মুক্ত করতে। এবং তা করতে হবে কাজের মাধ্যমে। কীভাবে?
এর উত্তরে আপনি তাকে বলুন, আপনার আগের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাকে বিচার করবেন না। আমি নারী হতে পারি কিন্তু যখন চাকুরি করতে এসেছি তখন আমি পুরুষের সমান মর্যাদা দাবী করি। এবং একজন পুরুষ কর্মী যেভাবে এই প্রতিষ্ঠানকে সেবা দিবে আমিও দিবো। আমি কখনও পরিবার বা সন্তানের কথা বলে, স্বামীর পছন্দ-অপছন্দের কথা বলে কাজ থেকে অব্যাহতি চাইবো না।
তারপর একাজগুলোকে বাস্তবে করে দেখান যে আপনার ওপর একটি প্রতিষ্ঠান নির্ভর করতে পারে। অফিস সময়ের পরেও আপনি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দেন। ছুটির দিনেও প্রয়োজনে আমি এসে দাঁড়াবেন। পরিবারের অন্য কেউ বা আপনার স্বামী আপনার কাজের ক্ষেত্রে নাক গলাবে না। বা আপনি গলাতে দেবেন না। যখন অফিসে দেরী হবে বা রাত হবে তখন আপনি নিজ দায়িত্ব নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারবেন। অথবা এরকম আরো অনেক ক্ষেত্রে আপনাকে অফিস একটি বাড়তি বোঝা মনে করবে না। শুধু তখনই আপনি সমান গুরুত্ব ও মর্যাদা পেতে পারেন।
বাংলাদেশে বহু অফিসে মেয়েরা পুরুষদের সমান মর্যাদা নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। কারণ তারা কখনও নারী কার্ডটি ব্যবহার করে না। কখনও বলে না আমি মেয়েমানুষ আমাকে কি করে এ কাজের কথা বলেন। যেকোনো মিডিয়া হাউজে হানা দিলেই এরকম অনেক নারীর দেখা পাবেন। চাইলে উদাহরণ দিতে পারি: মুন্নী সাহা।
অথবা সম্প্রতি শবনম ফেরদৌসি যে ফটোগ্রাফারের ওপর ডকুমেন্টারি করেছেন তার কথা ভাবতে পারেন, মাসুমা প্রিয়া। কত কষ্টে সে নিজেকে তৈরি করেছে এবং প্রতিযোগিতায় আজ সে যেকোনো পুরুষ ফটোগ্রাফারের মতই মর্যাদা পায়।
আমার অনেক মেয়ে-বন্ধু আছে যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে কাজ করে। কোনো পুরুষ কর্মী অফিসে থাকা অবস্থায় যদি ভুলেও বলে আপনার তো বাসায় যেতে অসুবিধা হবে গাড়ি ডেকে দেই তবে তারা একচোট নিয়ে নেন। একটু হেঁকে উঠেই তারা বলেন, আপনারা যদি থাকতে পারেন, আমিও পারবো। বাংলাদেশে এখন অনেক জেলা-প্রশাসক আছেন মহিলা। যারা সম্পূর্ণ জেলার নেতৃত্ব দেন। এবং একজন জেলা প্রশাসককে রাতদিন কাজ করতে হয়। তা তারা পুরুষদের মতই করেন। পুরো জেলার শত শত পুরুষ কর্মকর্তা তাদের অধীনে কাজ করেন। আবার তাদেরই অনেক ব্যাচমেট হয়তো আছেন যারা এই দায়িত্ব নিতে চান না। তারা হয়তো সচিবালয়ে বা কোনো অধিদপ্তরে 9-5টা নিরুপদ্রব দায়িত্ব পালন করতে চান। দু'জন সেরকম মহিলা জেলা প্রশাসকের নাম বলি: আকতারি মমতাজ ও নাসরিন আক্তার। কোনো পুরুষের কখনও সাহস হয়নি তাদের অফিসে ঢুকে আপা সম্বোধন করার। কেউ কখনো বলতে সাহস পায়নি যে, আমাদের জেলা প্রশাসক একজন পুরুষ হলে ভালো হতো।
কথা হচ্ছে এদের মত আরো অনেক দৃষ্টান্ত আমাদের দরকার। সেজন্য নারীদেরই এগিয়ে আসতে হবে। যাতে মেল শোভেনিস্টরা কথায় কথায় এসব অপমানজনক কথা বলতে না পারে।
দয়া করে আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি নারী-পুরুষকে সমান চোখেই দেখি। বরং একটু বেশিই। উদাহরণ দেই। একবার আমার কর্মস্থলে একজন কর্মকর্তা চিঠি দিয়ে আমাকে জানালেন তার দপ্তরে যে মহিলা টাইপিস্টকে পদায়ন করা হয়েছে তাকে বদলে যেন একজন পুরুষ টাইপিস্ট দেয়া হয়। আমি জানতে চাইলাম, কেন সে কি টাইপ করতে জানে না। তিনি বল্লেন না, অনেক কাজ করতে অসুবিধা হয়। আমি বল্লাম লিখিত পত্র দেন। তিনি লিখিত অনুরোধ করার পর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার ব্যবস্থা করেছি। জানেন কিনা জানিনা যে বাংলাদেশে সরকারী অফিসে কেউ যদি নারী ও পুরুষ কর্মীর মধ্যে বিভেদ করে তবে তার বিরুদ্ধে অভদ্রলোক ও অকর্মকর্তাসুলভ আচরণের অভিযোগ এনে মান হানির মামলা করা যায়। তবে আমি সে অভিযোগ আনতে পেরেছিলাম এ কারণে যে টাইপিস্ট মেয়েটির যোগ্যতা ও কাজে নিষ্ঠার প্রতি আমার আস্থা ছিল বলে। সে আস্থা অর্জনের দায় নারীদের ওপর। শুধু সহানুভূতির মাধ্যমে মর্যাদা অর্জন করা যায় না।
*দু:খিত কথাগুলো খুব শক্ত শোনাচ্ছে। পরিস্থিতি একটু হালকা করতে একটু কৌতুককর ছবি দিলাম।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন