সরকার ধরেই নিয়েছিল যে এভাবে দেশে একদিন মডার্ন ইসলাম কায়েম করা যাবে। অনেকটা মালয়েশিয়ার মতো, ফ্যাশন শো, ক্যাটওয়ার্ক, ফ্রি পোর্ট, ফ্রি মিক্সিং চলবে। আবার ধম্ম কম্মও চলবে। কিন' ফ্রাঙ্কেনস্টাইন যখন বুমেরাং হয়ে উঠলো সরকার তখন সসত্দা হিন্দি ছায়াছবির নায়িকার মতো_ 'মুঝে বাঁচাও' 'মুঝে বাঁচাও' বলে চিৎকার করতে থাকলো এবং হঠাৎ ময়দান গরম করে মানুষের জঠোর জ্বালা, মনের জ্বালা, দেহের জ্বালা ভুলিয়ে দিতে আফিম সরবরাহের ঢঙে বাংলাভাই, শায়খদের গর্ত থেকে টেনে বার করলো এবং ধরে নিলো এবার সব ঠিকঠাক স্মুথ অ্যাজ সিলকের মতো মোলায়েমভাবে চলবে। বলাবাহুল্য চলছেও তেমনি করে। কিন' বেয়াড়া মার্কিন প্রতিনিধি আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্তারা শুধু প্রচলিত ধারায় বিচার দেখে প্রীত হতে চাইছে না। তাদের দাবি এদের যথাযথ বিচারের পাশাপাশি সম্পূর্ণ নিমর্ূলের ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ফিরিঙ্গিগুলো হয় বোকার স্বর্গে বাস করছে, নয়তো গিরিঙ্গিবাজিতে বাঙালিকেও হার মানাতে চাইছে। এটা আমাদের দেশের শিশুরাও বোঝে যে 90 ভাগ মুসলমানের (বিজাতীয়দের প্রতি ঘৃণা পুষে রাখা) এই দেশে ঐ কাজটা শুধু অসম্ভবই নয়, অবাসত্দবও বটে। যদ্দুর মনে পড়ে বছর পাঁচ-ছয়েক আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিবিরের সঙ্গে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিবিরকমর্ী আহত হয়, তাদের রক্তের প্রয়োজনে ঢাকার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড তাদের সব বড়ো বড়ো ক্লায়েন্টকে পাঁচ-দশ হাজার করে চাঁদা ধরে। এক সময়কার এক বাম ছাত্রনেতা যে একটা গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের মালিক তাকেও দশ হাজার টাকা শিবিরের জন্য রক্ত কেনা বাবদ, চিকিৎসা বাবদ দিতে হয় এবং হাসিমুখে!
এই ধরনের ব্যাংকগুলো 'বাই মোয়াজ্জেল', 'বাই মোরাকাবা' এসব আরবি নাম দিয়ে চুটিয়ে সুদের কারবার করে আসছে, অথচ 'ঈমানদার' গ্রাহকদের পড়ানো হচ্ছে 'সুদহীন ব্যবসা'। লাভ-ক্ষতির আলোকে জমজমাট সুদের ব্যবসা। 'আল্লাহ ব্যবসাকে করেছেন হালাল আর সুদকে করেছেন হারাম'_এই বাণী দেওয়ালে লটকে দাড়ি-টুপির সঙ্গে টাইয়ের কম্বিনেশন করে ইহুদিদের আবিষ্কার এই ব্যাংকিং সুদের ব্যবসা তো করছেই আবার সেই ব্যবসার বড়ো একটা লভ্যাংশ জঙ্গিদের উত্থানে, জঙ্গিদের মদদে চাঁদা হিসেবে প্রদেয় হচ্ছে। আরবি নামের কিন্ডারগার্টেন দিয়ে কচি কচি মগজগুলো ধোলাই করে দেওয়া হচ্ছে। তারপর আরবি নামের ইউনিভার্সিটিগুলোতে সেই মগজ শাণিত করা হচ্ছে। অতঃপর এই সব 'সুদহীন' ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠানে তাদের চাকরি হচ্ছে। যদিও তারা সুদ-ঘুষ একই সঙ্গে হজম করছেন। কিন' ধর্মপ্রাণ আমপাবলিক ভাবছেঃ'আল্লাহ ব্যবসাকে করেছেন হালাল আর সুদকে করেছেন হারাম!'
এখন এই যে দেশব্যাপী বিশাল জঙ্গি নেটওয়ার্ক বিশাল ব্যাপক অর্থের ছড়াছড়ি নগদ টাকায়, চকচকে কালাসনিকভ, এমএম কেনা হচ্ছে, ব্যবহার হচ্ছে, আর রাতারাতি প্রাইমারি স্কুল বন্ধ হয়ে সবগুলো কওমি মাদ্রাসা হয়ে উঠছে সেটা দমনের ক্ষমতা কি খালেদা-নিজামী সরকারের আছে? হাঁকডাক দেখে মনে হবে আছে। আসলে কিছুই নেই। 'ভাশুরের' নাম নিতে যাদের বেজায় শরম তারা 'ভাশুর'কে নিমর্ূল করবে? এও আমাদের বিশ্বাসে করতে হবে? নির্বাচনী মারফতি পঁ্যাচে জামাতের ভোট ছাড়া বিএনপির গতি নেই। আবার বিএনপির অাঁচলের তলা ছাড়া জামাতের আশ্রয় নেই এটা যেমন বিএনপি-জামাতের সব নীতিনির্ধারকরা বোঝে, তেমনি জনগণও বোঝে, তবে তারা বরাবরের মতো প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করতে পারে না। এসব আসলে থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়। মোদ্দা কথা হলো সাধারণ গরিব মানুষের পেট-পিঠ এক হয়ে গেছে, মানুষ বহুদিন ধরে কোনো ক্যালরি পাচ্ছে না। মানুষ বাজারে গিয়ে ঈশ্বরকে পর্যনত্দ অভিশাপ দিচ্ছে। এখন দরকার মানুষের এই মৌলিক অভাব, মৌলিক অপ্রাপ্তী নিয়ে মানুষকে রাজপথে নামিয়ে এই সরকারের ইঁদুর-বেড়াল খেলাটা বন্ধ করার ব্যবস্থা করা। ওসব বাংলাভাই-টাংলাভাই বলে ফেনা তুলে লাভ নেই। এক একটা ধরা পড়বে সেই সঙ্গে সঙ্গে চৌদ্দটা গজাবে। গজাবেই। প্রগতিশীল ধারার আন্দোলন-সংগ্রাম না থাকলে প্রতিক্রিয়াশীল ধারা তো বাকবাকুম করবেই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমরা সেই মাহেন্দ্রক্ষণের দিকে চেয়ে আছি। যেদিন সরকারের তখতে-তাউস নিয়ে টোকাইরা খেলা করবে।
[বন্ধুবর মনজু'র লেখার অংশ তুলে দিলাম। বন্ধুকে স্মরণ করাও হলো। সেইসাথে আপনারাও কিঞ্চিত তার লেখা পাঠ করলেন]।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন