একাত্তরের 7 মে যশোর জেলার তেঘরিয়া গ্রামে ঘটে ভয়াবহ এক নারকীয় গণহত্যার ঘটনা। ঐ দিন পাকহানাদার বাহিনী যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে এসে পুরো তেঘরিয়া গ্রামটি জ্বালিয়ে দেয়। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, আগেরদিন 6 মে ভোরে 4 পাকহানাদার যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে 4 কিলোমিটার দূরবতর্ী তেঘরিয়া গ্রামে ঢুকে এক মহিলাকে ধর্ষণ করে। মহিলার স্বামী তার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এই মর্মানত্দিক ঘটনার প্রতিবাদ জানালে হানাদার পাকবাহিনী তাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। মুহূর্তে খবরটি রাষ্ট্র হয়ে যায় গ্রামময়। বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদী জনতা 4 পাকসেনাকে ধাওয়া করে 2 জনকে হত্যা করে, 1 জনকে আহত অবস্থায় তুলে দেয় শানত্দি কমিটির চেয়ারম্যানের হাতে। অপর জন পালিয়ে যায়। এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে পরদিন 7 মে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে কয়েক প্লাটুন সৈন্য এসে তেঘরিয়া গ্রামটি ঘিরে ফেলে, পুরো গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়। জ্বালিয়ে দেয় বাড়ি-ঘর, সহায়-সম্পত্তি সবকিছু। সেদিন গ্রামে এমন কোনো যুবতী, কিশোরী ও মধ্য বয়স্কা নারী ছিলেন না, যারা পাকহানাদার বাহিনীর লালসার শিকার হননি। এই বর্বর অগি্নদাহ চলার সময় তেঘরিয়ার বহু মানুষ পাশর্্ববতর্ী ধোপাখোলা গ্রামের একটি আমবাগানে আশ্রয় নেয়। পাকবাহিনী এসে এই বাগান ঘিরে ফেলে এবং বাছাই করে 34 বাঙালি নারী-পুরুষের একটি দলকে বাগান সংলগ্ন রেল লাইনের ওপর দাঁড় করিয়ে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের ব্রাশফায়ারে নির্মমভাবে হত্যা করে। নিহতদের অধিকাংশই তেঘরিয়া ও ধোপাখোলাসহ আশপাশের গ্রামের। ধোপাখোলার মানুষ আজো নিহত 34 জনের মধ্যে 17 জনের নাম স্মরণ করতে পারেন। এরা হলেন শহীদ ডা. আবদুস সাত্তার, নজরুল ইসলাম, খলিলুর রহমান, মোশারফ হোসেন, আবদুল আজিজ, আবদুর রশিদ, মকছেদ হোসেন, মোকসেদ আলী, মকলেছুর রহমান, ছলেমান বিশ্বাস, জিন্নাত আলী, মফিজ উদ্দিন, আবু বক্কর, রবিউল ইসলাম, ইয়ারত আলী, খোসদেল বিশ্বাস ও মহসিন।
হানাদার পাকবাহিনী তেঘরিয়া গ্রাম ভস্মীভূত করে, ধোপাখোলা গ্রামটি লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে আমবাগানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে 34 বাঙালিকে হত্যার পর ফিরে যায় যশোর ক্যান্টনমেন্টে। সেদিন বেঁচে যাওয়া গ্রামবাসীর আর সাহসে কুলায়নি নড়াচড়া করার। তাই পরদিন 8 মে স্থানীয় জনতা রেললাইনের ধারে গিয়ে 34টি মৃতদেহকে উদ্ধার করে রেললাইনের পাশেই সমাধিস্থ করেন।
গবেষক: ড. আবুল আজাদ।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন