লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে-৬

দীক্ষক দ্রাবিড় এর ছবি
লিখেছেন দীক্ষক দ্রাবিড় (তারিখ: মঙ্গল, ২৮/০৩/২০০৬ - ৫:৫৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


'71-এর 11 মে ঝালকাঠি জেলার নলছিটিতে সংগঠিত হয় ভয়াবহ এক গণহত্যার ঘটনা। ঘটনার 3 দিন আগে পাকহানাদার বাহিনী নলছিটি থেকে বেশ কিছু সংখ্যালঘু নারী-পুরুষকে ধরে এনে থানায় আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন-নিপীড়ন চালায়। 8 মে আটক করা এসব স্বাধীনতাকামী নৌকাপন্থীরা একটাই অপরাধ করেছিল পাকহানাদার বাহিনীর স্থানীয় দোসর রাজাকার হওয়ার যোগ্যতা তাদের ছিল না। কারণ ওরা ছিল সংখ্যালঘু হিন্দু।
ঘটনার দিন 11 মে পাকহানাদার বাহিনী রাজাকার সহযোগে বন্দীদের নলছিটির তামাক পট্টির খালপাড়ে লাইন ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। ঘটনাস্থলেই শহীদ হন দশরথ কুণ্ডু, সুকুমার বণিক, অতুল কুড়ি, ভাষাণ পোদ্দার, শ্যামল কানত্দ রায়, কেষ্ট মোহন নন্দী, হরিপদ রায়, নেপাল কুড়ি, কার্তিক ব্যানার্জি প্রমুখ। নিহতদের তালিকায় আরো 3 জন ছিলেন। কিন' পাকহানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা সকলের মৃতু্য নিশ্চিত জেনে ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে গুলিবিদ্ধ কালিপদ বণিক, অনিল দে ও ক্ষিতিশ দত্ত জেগে ওঠেন। স্বাধীনতার পরেও তারা বেঁচে ছিলেন, তবে এখন আর নেই। নলছিটির স্বনামধন্য শিক্ষক শচীন্দ্রনাথ দেকেও হত্যা করে হানাদার পাকবাহিনী। এখানে নিহত অন্য সকলের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, মৃতু্যর পর অনত্দত তাদের লাশ পাওয়া গেছে, কিন' শিক্ষক শচীন্দ্রনাথ দের লাশটা পাওয়া যায়নি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার দীর্ঘ 27 বছর পর বুকে গুলি খেয়ে বেঁচে যাওয়া ক্ষিতিশ দত্ত তামাক পট্টির খাল পাড়ে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলে 3 শতাংশ জমি ঘিরে বধ্যভূমিটি চিহ্নিত করে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করেছিলেন। উপজেলা প্রশাসন তখন তাকে এ কাজে সহায়তা করলেও বর্তমানে এই বধ্যভূমিটি জঙ্গলাকীর্ণ ও আগাছায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এসব আগাছার আড়ালে হারিয়ে গেছে স্মৃতিফলকটি। বর্তমান প্রশাসনের এ ব্যাপারে কোনো আগ্রহ বা উদ্যোগ নেই। কিন' নলছিটির জনগণ প্রত্যাশা করেন তামাক পট্টির খাল পাড়ের এই বধ্যভূমিটি সংরক্ষণে সরকার এগিয়ে আসুক। ঘটনাস্থলে নির্মিত হোক একটি সমাধিসৌধ। যেখানে তারা স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন।

গবেষণা: ড. আবুল আজাদ


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।