একটি শিশুর জীবনের জন্য কেনো ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে হয়?

দীক্ষক দ্রাবিড় এর ছবি
লিখেছেন দীক্ষক দ্রাবিড় (তারিখ: শনি, ২০/০৫/২০০৬ - ৯:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


অনেক পর ব্লগে এসে দেখলাম প্রাপ্তির ছবিটা ঝুলে আছে চোখের সামনে। দেখলেই চোখ আদর্্র হয়ে আসে। কান্নায় আবেগে অনেকেই পোস্টের পর পোস্ট লিখেছেন। এই সাইটের ব্লগাররা পরম মমতায় আর মানবিক বোধে এগিয়ে এসেছেন। এগিয়ে এসেছেন অনেক স্বঘোষিত আল্লার বান্দাও। তারা মসজিদে মসজিদে টাকা তুলছেন, টেররিস্ট চিহ্নিত হওয়ার যন্ত্রণা বাঁচিয়ে। কিন্তু তাদের আল্লা কই? সেই পরম করুণাময় কেন এগিয়ে আসেন না। তার গ্রন্থ আর বাণী নিয়ে এসব বান্দাদের লম্ফ-ঝম্প দেখলে তো মনে হয় আমীরের সাথে তাদের যেমন ডাইরেক্ট কানেকশন, আল্লার সাথেও তাদের সেরকম লাইন-ঘাট। তো একটা ট্রাংক কল বুক কইরা আল্লারে কন আজরাইলরে থামাইতে। আর জিব্রাইলরে কন আইসা মেয়েটার বুকে একটা ফুঁ দিয়া যাইতে। মেয়েটা ভালো হয়ে যাক। তাইলে তো আর এই টাকা তুলতে হয় না। ডাক্তারগো কাছে দৌড়াইতে হয় না। ওদেরকে পয়সা দিতে হয় না। পয়সাগুলা না হয় আমরা মাদ্রাসার প্রিন্সিপালরে দিতাম।

প্রাপ্তির জন্য অর্থ সংগ্রহ করা নিয়ে ওয়ালী একটা পোস্ট দিয়েছেন। আল্লার কাজ মানুষে করে। তিনিও করছেন। তার এই মানবিক প্রচেষ্টার জন্য তাকে অজস্র ধন্যবাদ জানাই। তার আবেদনের জন্য তিনি একটি লিফলেট বানিয়েছেন। সেই লিফলেটে তিনি লিখেছেন; বিজ্ঞান এখনও এমন যন্ত্র বানায় নাই যাতে প্রাপ্তির মা-বাবার মনের কষ্ট দেখা যায়। কেনো জনাব ওয়ালী? বিজ্ঞান বানায় নাই, বড়ো দুষলেন। তো আপনার আল্লা এমন একটা শিশুকে কেন মারনের লাইগা উতলা হয়ে গেছেন তাতো বললেন না। আবার এই শিশুটারই বিজ্ঞান সম্মত চিকিৎসা হোক সেজন্যই তো টাকা তো তুলতাছেন নাকি? না এই টাকা দিয়া জমজমের পানিতে প্রাপ্তিরে গোসল করতে পাঠাইবেন? একটা শিশুর জীবন নিয়ে যখন ব্যাকুল মানুষেরা অর্থ সংগ্রহ করছে তখনও ধর্ম নিয়ে ব্যবসা। তখনও বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে কুৎসা, অপপ্রচারণা? বাঁচান, দেখি বাঁচান আপনার কালামের ফুঁ দিয়া। ওষুধ-পত্র তো বিজ্ঞান আবিষ্কার করছে, নাকি এইসব ইহুদি-নাসারাদের এমবিবিএস কোর্সে কোরান শিক্ষা দেয়া হয়? সেইখান থাইক্যা ওরা কাটপেস্ট কইরা পেনিসিলিন বানাইছে। কন, আপনারা যা কইবেন তাই তো ধর্ম। আমাদের সবকিছুই অধর্ম। ডাক্তার আর বিজ্ঞানীদের এতো ঘৃণা? এরপর থাইকা আর যাইয়েন না ডাক্তারের কাছে। অসুখ হইলে মসজিদের ইমামের কাছে যাইয়েন। আলিম আর ফাজিলরে বিএ, এমএ সার্টিফিকেট দিয়া লাভ কি? আপনার এক দোস্ত ব্লগার বলছে না চাকরি না পাইয়া বিএ এমএ-রা রিক্সা চালায়। এমবিবিএস, এফসিপিএইচ বানায়ে দেন। বোতলের মধ্যে পানি ফুঁ দিয়া বেঁচবো।

আর নাইলে চলেন, আমরাও আলতাফ চাচা হই। বলি আল্লার মাল আল্লায় নিয়া যাইতে চায়। খোদার সাথে খোদকারী কইরা আমরা তো আর এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা করতে পারি না। প্রাপ্তিকে যদি কোনো ঈশ্বর সৃষ্টি করে থাকেন আর তার জীবন হননের জন্য যদি তিনি ক্যান্সার দিয়ে থাকেন তবে তার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক। স্রষ্টার ইচ্ছার বিপরীতে মানুষের ইচ্ছা যাবে কেন? আর বিজ্ঞান যদি স্রষ্টার ক্যান্সারের চিকিৎসা বের করে থাকে, তবে প্রাপ্তির জন্য আমি বিজ্ঞানের কাছে যাবো। ঈশ্বরের কাছে নয়। যে ঈশ্বর জীবন ও মৃতু্যর সোল এজেন্সি নিয়ে বসে আছে, যে ঈশ্বরের জন্য পরম করুণাময়, পরম করুণাময় বলে আনুগত্যে কপালে দাগ ফেলে দেয় মানুষ, সেই ঈশ্বরের কাছে কি দোষ করেছে এই শিশুটি? কেন তাদের মা-বাবাকে এই অবর্ণনীয় কষ্টের সময় পার করতে হবে? কেনো প্রাপ্তির জীবনের জন্য তার কাছে প্রার্থনা করতে হবে। প্রার্থনা আর ইবাদত ছাড়া তার মন গলে না? প্রার্থনা করে না বললে বুঝি তিনি বুঝতে পারেন না এই শিশুটির মা-বাবারা কষ্ট পাচ্ছে। শিশুটি নিজে কষ্ট পাচ্ছে। আপনি যে ভাষায় বিজ্ঞানকে এক হাত নিলেন, সেই ভাষা ব্যবহার করে আপনাকে বলি ওয়ালী, এমন একজন আল্লা বানাইলেন, যে মোনাজাত না করলে একটা শিশুর জীবনের মূল্য বোঝে না। একটু মানবিক হইতে বলেন আপনাদের আল্লাদের।

প্রাপ্তি, মা-মণি আমার, আমার এই ক্রোধ ক্ষমা করো। কোনো করুণাময় তোমাকে খন্ডিত, রোগাক্রান্ত জীবন দেয়নি। তোমার জীবনের সুদীর্ঘ আয়ুর জন্য কোনো মন্দির মসজিদে আমি প্রার্থনায় নত হবো না। এই নত হওয়া তোমার জন্য কোনো সুফলও বয়ে আনবে না। আমি মানুষের কাছে হাত পাতবো। তাদের ছোট্ট ও অপরম করুণার হৃদয়ে যেটুকু দয়া জন্ম নিতে পারে একটি অপরিচিত শিশুর জন্য সেই দয়ায় যদি তারা আর্থিক সাহায্য দেয় তা জমিয়ে ডাক্তারকে দেবো পারিশ্রমিক আর চিকিৎসার খরচ। বিজ্ঞান, বিজ্ঞানী আর পৃথিবীজুড়ে অজস্র ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর গবেষকদের কাছে আকুতি জানাবো তোমার জন্য। কৃতজ্ঞতায় নত হবো তাদের কাছে যাদের একেকটি ওষুধে বাড়ছে তোমার আয়ু। আমার সমস্ত আবেগ দিয়ে ধন্যবাদ জানাবো তাদের, যারা মানুষ, যাদের মানবিকতা আছে। যাদের হৃদয় একটি শিশুর বেদনায় কাঁদে। আর প্রাপ্তি তোমার কসম, আজন্ম ঘৃণা করবো ঐসব ঈশ্বরদের, যারা পরম করুণাময়ের লেবেল লাগিয়ে বসে থাকে কিন্তু একটি শিশুর বেদনার্ত চোখ দেখে এতোটুকু মানুষ হতে পারে না।

(পড়ুন, আমার আগের পোস্ট: http://www.somewhereinblog.net/Dravirblog/post/6441)


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।