সৃষ্টিবাজির গালগল্পে আদমের পাপাচার

দীক্ষক দ্রাবিড় এর ছবি
লিখেছেন দীক্ষক দ্রাবিড় (তারিখ: মঙ্গল, ২৮/১১/২০০৬ - ১১:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


প্রথমে সহজ জিনিস, সরল জীব বানিয়ে তারপর ঈশ্বরের জটিল প্রাণী বানানোর কথা। হাত পাকানোর একটা বিষয় থাকে। কিন্তু আচানক কারণে অ্যামিবার মত সরল প্রাণী বানানোর কাহিনী কোনো ধর্মগ্রন্থেই পাওয়া যায় না। (অবশ্য বিজ্ঞানীরা তখনও অ্যামিবা দেখার মত মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কার করেননি বলে ঈশ্বর অ্যামিবা দেখতে পাচ্ছিলেন না। বানানোর প্রশ্ন তো ওঠেই না।)। আরবের ঈশ্বরের সৃষ্ট আদম তাই ধর্মগ্রন্থ মেনে ডাইনোসরের সাথে হাঁটাহাঁটি করে পৃথিবীতে। যদিও ফসিলের হিসাব অনুযায়ী তাদের দেখা হওয়ার কথা নয় (টুপ-করে-পড়া তত্ত্বের বিশ্বাসীরা বিপুল অর্থব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্রে বানিয়েছে [লিংক=যঃঃঢ়://িি.িধহংবিৎংরহমবহবংরং.ড়ৎম/সঁংবঁস/]ক্রিয়েশন মিউজিয়াম[/লিংক]। ঈশ্বরের বর্ণনা অনুযায়ী সৃষ্টিতত্ত্বের থিমপার্ক। ঢুঁ মারুন, সৃষ্টিবাজির নানা দিক চটজলদি পরিষ্কার হয়ে যাবে। প্রাচীন ভাষায় ধর্মগ্রন্থ পড়ার কষ্ট করতে হবে না। আর নীচের হেঁচকিগুলো থেকে বাঁচতে হাজমলা বানাতে সুবিধা হবে।)। আদম বানানোর গল্পটা ছন্দ-কথায় আপনাদের জানা থাকবার কথা। বিস্তৃত আছে দ্য বুক অব জেনেসিসে। তিন ধর্মগ্রন্থে গল্পটা যদিও বিবর্তিত হয়েছে, সৃষ্টির বিবর্তন ধর্মবিশ্বাসীরা কক্ষণো মানে না (গল্প বিবর্তিত হয় মানে, অন্যকিছু বিবর্তিত হতে পারে মানে না)। সে যাক, একেক ধর্মের বিশ্বাসীরা গল্পটার একেক শাখা-প্রশাখায় জোর দিলেও [লিংক=যঃঃঢ়://িি.িনরনষবমধঃবধিু.পড়স/ঢ়ধংংধমব/?নড়ড়শথরফ=1্পযধঢ়ঃবৎ=3্াবৎংরড়হ=31]মূল গল্প [/লিংক]এক। রেসিপি একই ছিল, বাবুর্চির হাতে মসলা কম বেশি হয়। সেই রান্নার প্রক্রিয়া বিসত্দারিত আপনারা নিজ দায়িত্বে জেনে নিন। যেহেতু রেসিপিটা আমার পছন্দ হয় নাই, খেতে গিয়ে আমার হেঁচকি উঠেছে। এই মেনূ্যতে আমি আস্থা রাখতে পারছি না। । সৃষ্টির প্রচলিত গাল-গল্প গেলার পর যে হেঁচকি উঠে তার মধ্যে নীচেরগুলো এখন মনে পড়ছে:* ঈশ্বর যদি এটাই চান যে আদম ও হাওয়া জ্ঞানবৃক্ষের ফল না খাক, তবে কেন তিনি তাদেরকে ঐ বাগানেই রাখলেন। তার কি আর বাগান ছিল না?* যা খেলে এরকম বিশাল পাপ সংঘটিত হয় সেরকম একটা গাছ ঈশ্বর কেনইবা বানাতে গেলেন, তার আবার ফলই হয় কেন? সেই গাছকে আবার বাগানের মাঝেই লাগানোর কারণ কি? নাকি গাছ ও ফলের জন্মের উপর ঈশ্বরের হাত ছিল না? * জ্ঞান বৃক্ষের ফল অথবা ভাল-খারাপ জ্ঞান হওয়া তো খারাপ কিছু না, তাহলে ঈশ্বর কেন আদমকে তা খেতে নিষেধ করেন?* যদি শয়তানের প্ররোচনাই আদমের এই ভ্রানত্দির জন্য দায়ী, তবে সেই শয়তানকে ঈশ্বর কেন সৃষ্টি করলেন? যদি সৃষ্টি করলেন তবে কেন তাকে ধ্বংস করলেন না? যদি ধ্বংস না করেন, তবে কেন তার বাগানে ঢুকা বন্ধ করতে পারলেন না? *ঈশ্বর বারবার আদমকে বলেন যে শয়তান আদমের শত্রু। তাহলে শিশু আদমকে শয়তানের হাত থেকে ঈশ্বর কেন রক্ষা করতে পারলেন না? শয়তানের ক্ষমতা কি ঈশ্বরের ইচ্ছা-বহির্ভূত ক্ষমতা? ঈশ্বরের আদেশ-নির্দেশ বহির্ভূত কাজও কি শয়তান করতে পারে? তাহলে শয়তান কি খল-ঈশ্বর? * ঈশ্বর আদমের সাথী হিসেবে হাওয়াকে তৈরি করেছিলেন। তো কি এমন সাথী তৈরি করলেন ঈশ্বর যে তার সঙ্গ ও পরামর্শ-বুদ্ধিতে আদমকে চিরতরে স্বর্গের বাগানে বসবাস করা থেকে বঞ্চিত হতে হলো? এর চেয়ে ভালো সঙ্গী-সাথী কি ঈশ্বর বানাতে পারেন না?* আদম হাওয়ার তখন ভালো-মন্দ জ্ঞান ছিল না। যাদের ভাল-মন্দ জ্ঞান ছিল না তাদেরকে ফল খাওয়ার জন্য কি শাসত্দি দেয়া যায়? ঈশ্বর দাবী করেন তিনি মহান করুণাময় ও ক্ষমাশীল, অথচ আদমের প্রথম অপরাধেই তিনি এমন শাসত্দি দিলেন যে আদমের চৌদ্দ লক্ষ গুষ্ঠিকে দুনিয়াতে পঁচতে হচ্ছে? কেমন ন্যায়-বিচারক তিনি? শিশু আদম-হাওয়ার প্রতি আরেকটু ক্ষমাশীল হওয়ার ক্ষমতাও তার নেই?*একটি বৃক্ষের ফল খাওয়ার জন্য যিনি আদম-হাওয়াকে তিনি গুষ্ঠিসহ শাসত্দি দিলেন, তাকে কি করে ন্যায় বিচারক, করুণাময়, বা প্রেমময় বলা যায়?*জ্ঞান বৃক্ষের ফল খাওয়ার পর আদম-হাওয়ার লজ্জাবোধ সৃষ্টি হলো, তারা গাছের পাতা দিয়ে নিজেদের লজ্জাস্থান ঢাকতে চেষ্টা করলো, তার আগে তাদের লজ্জাবোধ ছিল না। তাহলে কি ঈশ্বরের মূল ইচ্ছা ছিল আদম-হাওয়াকে আজীবন নগ্ন রাখার? (ব্রিটনি স্পিয়ার্সের মিনিস্কার্ট তাহলে কি এমন দোষের? ঈশ্বরের মূল পরিকল্পনার চেয়ে অনেক শ্লীলই তো মনে হয়। এনিমেশন নির্মাতা ঐতিহাসিক সত্যতা সত্ত্বেও এত অশ্লীল হতে পারে নাই।)*ভালো-মন্দ জ্ঞান যদি আদম-হাওয়ার না থাকে তবে তারা ঈশ্বর আর শয়তানের আদেশ-অনুরোধের মধ্যে পার্থক্য করবে কি করে? (আদম-হাওয়ার কি বর্ণপরিচয় হয়েছিলো? তাদেরকে কোনো ধর্মগ্রন্থও দেয়া হয়েছে বলেও তো ঈশ্বর জানাননি? তারপরও এইসব নাবালক-নাবালিকাদের এত কঠিন শাসত্দি হলো?) *আদম-হাওয়ার সামনে ছিল দুটি দিক। ঈশ্বরের কথা ও শয়তানের প্ররোচনা। শয়তানের প্ররোচনার কাছে ঈশ্বরের নির্দেশ হেরে গেল। ঈশ্বর পারলেন না অথচ শয়তান পারলো আদম-হাওয়াকে প্রভাবিত করতে। এ কেমন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর? *শয়তান কি কোনো গোপন কারণে ঈশ্বরকে ব্ল্যাকমেইল করে? নতুবা আদম-হাওয়ার এত বড় শাসত্দি হয় আর শয়তানের কোনো শাসত্দি হয় না কেন? সে দিব্যি বেহেশত-দোযখ-পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায়? তার কেশাগ্রও ঈশ্বর স্পর্শ করতে পারেন না কেন? আপনাদের যদি নতুন হেঁচকি উঠে তবে যোগ করতে পারেন। অথবা যারা পরম তৃপ্তিতে গিলেছেন তারা আমাদের দিকে হাজমলার কৌটাটা বাড়িয়ে দিতে পারেন। আপনাদের ওষুধেই না হয় হেঁচকি বন্ধ হোক।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।