আরবে নবীদের জন্মহার হ্রাস বনাম পাপ-পূণ্যের হিসাব

দীক্ষক দ্রাবিড় এর ছবি
লিখেছেন দীক্ষক দ্রাবিড় (তারিখ: মঙ্গল, ২৭/০৩/২০০৭ - ৭:১৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


মানুষ কীভাবে পয়গম্বর হয়ে ওঠে-এই ধারাবাহিকের লেখা নয় এটি। তবে সম্পর্কিত। মূল সম্পর্ক সাদিক মোহাম্মদ আলমের সব পয়গম্বররা আরবে কিত্তে? লেখাটির সাথে।

প্রথম কিসত্দিতেই বলেছি, আরবে নবী হওয়া ছিল ভীষণ ফ্যাশন। প্রতিবাদী তরুণ-যুবাদের বিদ্রোহের অংশ ছিল নবী হওয়া। নতুন ঈশ্বরের কাছে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে পুরাতন/প্রচলিত দেব-দেবীকে অস্বীকার আর রাজা-ঈশ্বরকে চ্যালেঞ্জ করা। কত নবী ছিলেন এরকম? মাওলানারা সুর করে বলেন, এক লক্ষ চবি্বশ হাজার, ভিন্নমতে দুই লক্ষ চবি্বশ হাজার।

বাইবেলের হিসাব যদি ধরি, তবে হযরত আদম থেকে হযরত ঈসার জন্মের মধ্যে পার্থক্য 4 হাজার বছরের। যেহেতু নবী মুহাম্মদের পর আর কাউকে নবী স্বীকৃতি দেয়া হয় না সেহেতু এই বিপুল সংখ্যার নবীদের জন্ম হয়েছিল এই 4 হাজার বছরের মধ্যেই। আরো 570 বছর পরে একজন। সুতরাং নবী ঈসা পর্যনত্দ গড়ে বছরে 30 জনের উপরে নবী আরবের ধূলোতে লুটোপুটি করেছেন। অসম্ভব নয়।

অনেক নবীর বাবা, দাদা নবী ছিলেন। ছেলে, নাতিরাও নবী ছিলেন। দুই/তিন ভাই নবী ছিলেন এমনও হয়েছে। শ্বশুর-জামাই নবী ছিলেন এও দেখা যায়। অনেকটা বাংলাদেশের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান-মেম্বার পদে প্রতিযোগিতার সময়কার সংবাদপত্রের হেডলাইনের মতো: শ্বশুর ও জামাতা উভয়েই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। দু'জন দুই দল থেকে।

এসব নবীদের কেউ ভারতে বা চীনে জন্মান নি। রাশিয়ায় বা জাপানে জন্মান নি। অস্ট্রেলিয়ায় বা মেঙ্েিকাতে জন্মাননি। অন্তত: সেরকম কোনো উদাহরণ আমরা আরব অঞ্চলের ধর্মগ্রন্থগুলোতে পাই না। কিন্তু পরিস্থিতি এমন যে এখন খোদ আরবও নবী পাওয়ার রহমত থেকে বঞ্চিত। কেয়ামত পর্যন্ত নবী হওয়া বন্ধ।

নবীদের জন্মহার কমে যাওয়ার কারণ কী? পৃথিবীতে পাপ ও পাপীর সংখ্যা কমে যাওয়া? দুনিয়ার সব মানুষ ধর্মপ্রাণ হয়ে পড়া?

ভারতের কাউকে (যেমন রাম, কৃষ্ণ বা বুদ্ধ) নবী বানানোর চেষ্টা না করাই ভালো। ভারতে আসতেন অবতার। একা বিষ্ণুই- মৎস্য, কুর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ, বুদ্ধ ও কল্কি- এই দশরূপে ধরায় এসেছেন। মজার বিষয়, এসব অবতারদের কেউ আরবে হেদায়েত করতে জন্মান নি। এমন কি, ইংল্যান্ড-আফ্রিকা-আমেরিকতেও তাদের জন্ম হয়নি। পথভ্রষ্ট মানব বোধহয় তখন কি শুধু ভারতেই ছিলো? হেদায়েত কি শুধু তাদেরই দরকার ছিল?

তারচেয়েও বড় প্রশ্ন হেদায়েত কি এখন দরকার করে না? এখন কেন আবাবিল পাখি আসে না বুশের আর্মি থেকে ইরাককে মুক্ত করতে? এখন যখন সমকামীরা গির্জায় গিয়ে বিয়ে করে সংসার শুরম্ন করে তখন লুতের সময়কার মত অভিশাপ নেমে আসে না। নুহের বন্যা হওয়ার মত পাপাচার কি তখনকার চেয়ে এখনকার মানুষ কম করছে?

এখন কেউ নবীত্ব দাবী করলে তাকে আমরা ভন্ড ভাবি কেন? কোন মাপকাঠিতে তাহলে আগের এরকম দাবীদাররা উতরে যান?

ছবি: ইয়ানা ভানোরকুভা


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।