আজ অনেকদিন পর লিখতে গিয়ে বেশ ভাল রকমেরই অস্বস্তি লাগছে, বিষয়বস্তুরও এতো অভাব (আসল কথা জ্ঞান-গরিমা এতো কম তাই কোন দিক দিয়াই আগাইতে ফারি না) যে কি দিয়ে শুরু করে কি দিয়ে শেষ করব ঠিক ঠাওর করতে পারছি না। তবে এই মুহুর্তে ঘুরে ঘুরে আমাদের 'লালির বাপের' কথা মনে পড়ছে বরং বলা যায় এই ভদ্রলোকের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মনে পড়ছে। বলার বেলায় খুবই সাধারন ঘটনা কিন্তু দেখার মত হাস্যকর ব্যাপার।
এই লালির বাপ হলেন আমাদের বাড়ির রাতের দারোয়ান। বেশ অদ্ভুত চেহারার খিটখিটে মেজাজের মোটামোটি বয়স্ক এক বুড়ো। কমবেশী সবাই যাকে লালির বাপ নামেয় চেনে... এমনকি আমার ৪ বছরের ভাগিনাও তাকে লালির বাপ বলেই ডাকে। তার আসল নামটা যে কি এযাবৎকালে কেউ জানতে পেরেছে বলে মনে হয় না...তাকে যদি জিজ্ঞেসও করা হয় তিনি নিজেকে লালির বাপ হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। আমি কাজের বুয়াদের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটা খুব বেশী হতে দেখেছি...মর্জিনার মা, জুলেখার মা, দুলালের মা... কিন্তু কোন লোককে প্রথম দেখলাম নিজের নামে পরিচিত না হয়ে মেয়ের নামে নিজের পরিচয় দেন। এই লোক কোন অদ্ভুত এক কারনে আল্লহর বারোমাস গলায় মাফলার প্যাঁচিয়ে রাখেন, আর সবুজ রঙের জাম্পার (উনার ভাষ্যমতে) পড়ে থাকেন-হোক তা গরম কাল কিংবা শীতকাল। দুনিয়ার তাবৎ মানুষ তার চোখের বিষ আর বাসার কাজের মেয়েগুলা হল তার জন্মের শত্রু। প্রায়ই তার কাছ থেকে অভিযোগ আসে যে তিনি কাজের মেয়েদের ষড়যন্ত্রের শিকার, তারা তাকে নানাভাবে ত্যক্ত-বিরক্ত করে থাকে।(একটা বয়স্ক মানুষরে কেমনে ত্যাক্ত বিরক্ত করে এটাও একটা রহস্য)
ঘটনা- ১
আমাদের এই লালির বাপ খুবই দায়িত্বপূর্ণ একজন মানুষ, নিষ্ঠার সাথে তার দায়িত্ব পালন করেন প্রতি রাতে। রাত বারোটা বাজলে চা পান করেই তিনি দু'টো চেয়ার জোড়া লাগিয়ে শান্তির একটা ঘুম দেন। এতো জোরে জোরে নাক ডাকাতে শুরু করেন যে বাড়িতে কারো চুরি করে ঢোকার প্রশ্নই আসে না। এমনই এক শান্তিপূর্ন রাতে পাশের বাড়ির এক নব্য হতে যাওয়া সাইন্টিস্ট বেশ জোরে আমাদের বাড়ির গাছের দিকে কিছু একটা জিনিস ছুড়ে মারলো। হঠাৎ করে এতো জোরে শব্দ হওয়ায় বেচারা লালির বাপের ঘুম গেল আতকা ভেঙ্গে। ঘুম ভেঙ্গে সে দেখতে পেল আম গাছ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে আর মাটিতে কিছু ভাঙ্গা বোতলের অংশবিশেষ। ভয় পেয়েই হোক আর হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার ফলেই হোক লালির বাপ বিরতিহীন বাসের হর্নের মত বাশিঁ বাজাতে বাজাতে পুরা বাড়ি বেহুঁশের মত চক্কর কাটতে শুরু করল। নিদেনপক্ষে ৫ বার চক্কর কাটার পর তার হয়তো হুঁশ হল যে আসলে মানুষজন পোড়া গাছের দিকে না বরং সে কি করছে সেটা বোঝার জন্য তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিঞ্চিত লজ্জিত ভাব নিয়ে সে সবাইকে বোঝানর চেষ্টা করল যে ‘হডাৎ করি এক্কান গায়েবী ঠাডা হইচ্চিল, ইয়ারলাই আই কুত্তার ঘরগা খুঁইজতেছিলাম।‘ একথার মানে কি কিংবা এই অবস্থায় তার কুত্তার ঘর খোঁজার পেছনে কারনটাই বা কি তা এখন পর্যন্ত রহস্য। গোয়ান্দা ঝাকানাকা হয়তো এর পেছনে কোন মৌলিক কারন আছে কিনা খুঁজে বের করতে পারেন।
আমাদের এই নব্য সাইন্টিস্ট ছিল আসলে একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট, হয়তো ল্যাব থেকে কোন এসিড চুরি টুরি করে নিয়ে কোন আপজাপ এক্সপেরিমেন্ট চালাতে গিয়েই এই আকামটা করেছিল। এই ভদ্রলোকের কথা খানিকটা না বললেই না... উনাকে আমি আমার ছোটবেলা থেকেয় মেডিকেলে পড়তে দেখে আসছি অথচ আমার বড়বেলা পার হয়ে যাওয়ার জোগাড়, কিন্তু তার স্টুডেন্ট তকমা আর গাঁ থেকে গেল না। তার আপার চেম্বারে খানিকটা হয়তো গন্ডগোল ছিল যার কারনে প্রায়ই তাকে উলঙ্গ অবস্থায় তার রুমে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যেত- আরে ব্যাটা উলঙ্গ থাক সমস্যা নাই দরজা জানালা তো বন্ধ রাখবি ! একবার আমার দাদী একান্ড দেখে কয়বার যে গালি দিয়েছিলেন আর কয়বার যে ওজু করেছিলেন এই মুহুর্তে ঠিক মনে পড়ছে না। পাশের বাসার সেই রুমি ভাই আমাদের ছোটদের মাঝে এরপর থেকে ‘ন্যাংটা মাউ’ হিসাবে পরিচিত হয়ে গেলেন। তার একটা ফেভারেট প্যান্টের কথা এখনও মনে পড়ে যা সে প্রায় রোজই পড়ে বের হত... প্যান্টের এক পায়ের রঙ ছিল লাল এবং আর এক পায়ের রঙ ছিল নীল...আজো জানতে ইচ্ছে করে কে ছিল সে প্যান্টের ডিজাইনার।
ঘটনা-২
আমার একটা ছোট্ট খাট্টো পুডল ছিল বেশ অনেক বছর আগে যে ছিল আমাদের লালির বাপের চরম ভক্ত। বেশ শখ করে পুচকাটার নাম রেখেছিলাম ক্রুজ...সবাই টম ক্রুজের টমটা নিয়ে টানা হ্যাচরা করে, তাই আমি বাকীটা মেরে দিলাম। ক্রুজের বেশীর ভাগ সময় কাটতো লালির বাপের সাথে...স্বাভাবিকভাবেই সে লালির বাপের কথায় মানত বেশী। লালির বাপকে খুব কষ্ট করে এই ক্রুজ নামটা মুখস্ত করানোর অপচেষ্টা করা হয়েছিল যদিও এতে বরং হিতে বিপরীত না বরং তার চেয়েও আজিব কিছু হল। একদিন বাগানে গিয়ে ক্রুজকে বেশ জোরে জোরে ডাকছিলাম কিন্তু সেতো আর আসে না। তখন লালির বাপ এসে বেশ আয়েশ করে হাক দিল 'এ বুরুস...এ বুরুস... তুই কোনায়...তোরে বোলায়...হুনুস না কিল্লাই।' এরপর থেকে ক্রুজের নাম পালটে হল বুরুস...তা না হলে ভদ্রকুকুরটা এক ইঞ্চিও নড়তো না। অবশ্য এই নামটা খুব বেশীদিন আর ডাকা হয়ে উঠেনি...মানুষের নির্মমতা মাঝে মাঝে হিংস্র প্রানীদের হিংস্রতাকেও হার মানিয়ে যায়। আমার বুরুসের যখন আড়াই বছর বয়স, এক সকালে সে আর তার ঘর থেকে বের হয়ে আসল না। কি কারনে কিংবা কে তার খাবারে বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে দিয়েছিল তা আজো জানা হয়নি.........আসলেই কি অদ্ভুত আমাদের স্বভাব...
ভদ্রলোককে নিয়ে আরো বেশ মজার মজার কাহিনী আছে যা আসলে আমি নিজেই কেন জানি ঠিক মজা করে লিখতে পারছি না ... ঠিক এই মুহুর্তে লিখতেও কেন জানি আর ইচ্ছা করছে না... ইচ্ছা করছে পুরোটাই মুছে দেই কিন্তু মুছে ফেলতেও মায়া লাগছে... না হয় থাকুকই এমনি একটা অসমাপ্ত অগোছাল আপঝাপ প্রলাপ। শুরুটা না হয় এমন খামখেয়ালী হোক।
মন্তব্য
কেডা ? দৃশা ??
এতদিন পর কোত্থিকা উদয় হইলা ? আর আইলাই যখন একটা আধা গল্প মাইরা গ্যালা কেন ?
পুরাডা শ্যাষ কর, বাকি কথা পরে হবে
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
ধইরা নাও এখানেই শেষ... সব জিনিস তো আর শেষ হয় না।
এইবার কও দেখি বাকী কথা...
দৃশা
দৃশা আফা:
ঘটনা কী? আপনে থাকেন কই? কতদিন ঝাড়ি দেন না মনে আছে? মেট্রিক পরীক্ষা শেষ হইলো সেই ইশা খাঁ'র আমলে!!! এতদিন কোথায় ছিলেন তাইলে?????
কি মাঝি? ডরাইলা?
- এখন শায়েস্তা খাঁর আমলের কলেজ ভর্তি কোচিং কর্তাছে মনে লয়!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
শায়েস্তা খাঁ'কে শায়েস্তা করার তালে আছে নাকি?
কি মাঝি? ডরাইলা?
আরে মাউ... এতো বুড়িও না... এইতো বেগম রোকেয়া আমলে কলেজের পাট উৎরাই গেছি... কই শায়েস্তা খাঁ আর কই বেগম রোকেয়া। শালী শালী কইরা আপার চেম্বারেরতো সবগুলান স্ক্রু ঢিলা কইরা লাইছেন... রয়ে সয়ে...রয়ে সয়ে
দৃশা
রয়ে সয়ে... ঝাড়ি দিতেও ব্রাদার এনার্জি লাগে... বয়স হইছে... তাই একটু সময় লইয়া এনার্জি যোগাড়-যন্ত করতাছি।
আর এইটা কি? চিলে কান নিছে দেইখা চিলের পিছনে দৌড়াইবেন?
সৌরভ নামক এক বিচিত্র শিশু কোন এক বিচিত্র কারনে আমার মত একজন এক পা কবরে টাইপ মানুষরে মেট্রিক বালিকা বানাইতে চাইতাছে আর আপনেও লাফান...এটা কি ঠিক?
দৃশা
valo hoise. taar chira style ta valo lagse. keep rocking .
ভাল লাগছে? আসলেই?... কি জানি ... কেমনে কি... বুঝতাছি না
দৃশা
ওরে দৃশা খালা !! মজা হইসে !
কিন্তু গল্প আধাখ্যাচড়া রাখলেন কেন ?
-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
ও মাউ... রুচির ট্যাবলেট খাও...
কেমনে কি কেমনে কি...
দৃশা
একটা গান আছে না?
ও জ্যাডা ফইরার বাপ। একবার বুঝিবা জ্যাডা, একবার বুঝিবা! লালির বাপ নাম দেইখাই হেই গানটা মনে পড়ল।
যাউকগা, আমাদেরও একটা দারোয়ান আছিল সেইরকম আইলসা! দুনিয়ার সব দারোয়ানেরাই বোধহয় ঘুমের চ্যাম্পিয়ন হয়
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
খোঁজ লইয়া দেখেন ওইটা লালির বাপের উত্তরসূরী কি না।
যাইতাছি বন্দর নগরী... লালির বাপের সাথে মোলাকাত হইবে...
দৃশা
তবুও হোক। নাই মামুর থাইক্যা অন্তত...
.
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
তা ঠিক... তয় মাঝে মাঝে কানা মামুরা বড় ডেইঞ্চারাস...
দৃশা
শুরুতে খুব হাসি পাচ্ছিলো কিন্তু শেষে এসে খুব কষ্ট পেলাম
--------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
আপনে মানুষ ভালা... তাই এমুন একটা জগাখিঁচুরি পইড়াও হাসি পাইল ... আর আমার বুরুস এর লাইগা হয়ত একারনেই মন খারাপ হইল... মানুষের কাছে আজকাল এগুলা খুব মামুলি ব্যাপার... কে জানে হয়তো আমার কাছেও...দিন দিন পিশাচ হইয়া যাইতাছি বুঝলেন বেহেন...
দৃশা
শেষ প্যারাটাই আমার মন্তব্য।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
আমারও
দৃশা
অনেকদিন পরে আসলেন দেখি। আমি আর আমার বউ, দুইজনেই আপনারে মিস করতেছিলাম।
কুকুরের নাম টম বাদ দিয়া ক্রুজ রাখার অভাবনীয় আইডিয়ার জন্যে আপনাকে জাঝা।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
আমারেও কেউ মিস করে জাইনা কিঞ্চিত পুলকিত+ শরমিন্দা হইলাম... উত্তম জাঝার লাইগা শুকরিয়া কনফু ভাইজান।
ভাবতেছি টম ক্রুজ রে একটা পত্র লিখব এই প্রস্তাবনার সাথে যেন তিনি তার নাম ক্রুজ থেইকা বুরুস বানায়... ফফুলারিটি আরো বাইড়া যাইব।
দৃশা
আমারো মেলা দিন পর কমেন্ট লিখতে গিয়ে অস্বস্তি হইতেসে।
তয় লালির বাপ রে পুরা ঝাক্কাস লাগসে
---------------------------
থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
গায়েবী ফুঁ দিলাম যেন অস্বস্তি কাইটা যায় জলদি...
লালির বাপ আসলেই জিনিস(খারাপ অর্থে না)... মাগার আমি তার কেরামতিটা ঠিক ফুটাইতে পারলাম না...
দৃশা
জ্ঞান-গরিমা এতো কম, তাতেই এই লেখা! বেশী হলে কি করতেন? আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে আপনার স্মৃতিচারণ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
জেনে ভাল লাগলো... but একটা কিন্তু আছে... আপনে নিজে মানুষটা খুব অমায়িক আর ভাল তাই জগাখিচুড়িকে ভাল বলতে পারলেন। আপনার মত ভাল মানুষগুলা না থাকলে আমার মত লেখকের কি হবে নাহলে !!!
দৃশা
নতুন মন্তব্য করুন