কি আশ্চর্য্য এতোগুলো মানুষ এভাবে একই কাতারে দাঁড়িয়ে আছে কেন !! এদের কি পেছন করে দু'হাত বাধা , কারো কারো কি চোখগুলোও কালো কাপড়ে ঢাকা?? এতো ঝাপসা কেন সবকিছু...কিছুই যে ঠিকমত বোঝার উপায় নেই। এতো অন্ধকারে এতোগুলো মানুষ দাড়িয়েই বা আছে কেন? আরে ... মনে হচ্ছে কেউ কেউ যেন লুটিয়ে আছে কাঁচা মাটিতে !! এতো প্রশ্ন, এতোখানি অবাক হওয়া সবই কেমন যেন ধোঁয়াটে আবছায়ার মত, ছোঁয়া দিয়েও যেন ধরা দেয় না।
ওই যে ফর্সা করে সুন্দর মত পাতলা গড়নের ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে ও কি দেখতে খানিকটা রুমীর মত না ?? তার পাশে কে দাঁড়িয়ে আছে যে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে কতগুলো নরপিশাচের দিকে? জুয়েল না তো? খানিকটা দূরে বেশ লম্বা মত একমাথা চুল নিয়ে কে যেন বিড় বিড় করে জর্জ হ্যারিসনের গান খানা আওড়াচ্ছে....আজাদই হবে হয়তো। কিভাবে বুঝব....চারপাশটা যে বড্ড বেশী অন্ধকার। নাকি ঝাপসা? আজ ঠিক যেন কত তারিখ কিছুতেই মনে পড়ছে না।
ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখি রুমী, জুয়েল, বাশার, বদি, আজাদ,সেকান্দর সহ আরো শ’খানেক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে আমারই মত ভয়ংকর কিছু একটার অপেক্ষায়। এদের সবাইকেই কি ৩০ আগস্ট রাতে ধরে এনেছিল অনেক ক'টা মুক্তিযোদ্ধা-নিবাস থেকে? কত অচেনা মুখ... কত অজানা নাম... আমি চিনতে চাই প্রত্যেককে... কিন্তু পারি না নিজের সীমাবদ্ধতাকে এড়িয়ে যেতে। হয়তো পারি দু'হাত দিয়ে চোখ আড়াল করে নিতে... নিজেকে ছিটকে দূরে ঠেলে দিতে পারি এই ভয়ংকর অন্ধকার কালকুঠরি থেকে... তবুও পারি না সীমার পাঁচিল ডিঙ্গোতে।
চোখ খুলতেই মনে পড়ল আমি ১৯৭১ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বরে নই বরং ২০০৭ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বরে এক অন্ধকার ছাদের কোণায় দাঁড়িয়ে আছি। আমি শুধু আমার কল্পনাতে দেখেছি শহীদ রুমী, আজাদ, আলতাফ মাহমুদ, জুয়েল, বশির সহ আরো শ’খানেক মুক্তিযোদ্ধাদের...স্নায়ুকুঠিরে ঝড় তোলা আমার ধূসর মলিন কল্পনা।
আজ থেকে ৩৬ বছর আগে এমনই এক ৪ঠা সেপ্টেম্বরে কত শত মা তাদের ছেলেদের হারিয়েছিলেন অথচ হয়তো বহুদিন ধরে জানতেও পারেননি আজই তার খোকার মৃত্যুবার্ষিকি।
ছোটবেলায় বড়দের বলতে শুনতাম যারা মারা যান আকাশে তারা হয়ে সবসময় আমাদের কাছে কাছেই থাকেন...তখন বেকুব হওয়ার বয়স ছিল, সবই বিশ্বাস হত। খানিকটা বড় হওয়ার পর মনে হত এগুলো আসলে সিনেমা দেখে গাঁজাখুড়ি গপ্পো পাতার ভীষন তাল। তবে কিছু কিছু গাল-গপ্পো বেশ ভাল লাগে, বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়। আজ আকাশের দিকে তাকিয়ে খুঁজে পেলাম না কাউকে...জুয়েলকে না...রুমীকে না...আজাদকে না...পৃথিবীর গত কাউকে না। আজ আকাশেরও মন ভার তাই হয়তো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছে তার সব ক'টি উজ্জ্বল নক্ষত্রকে।
এখন এরা সবাই আছে এমন একটা জগতে যেখানে আমার কল্পনারও কোন প্রবেশাধিকার নেই। জানি না এরা সবাই এখন কি করছে। রুমী কি এখনও তার মা'কে ভরাট কন্ঠে "বীরপুরুষ" কবিতাখানা পড়ে শোনাই? জুয়েল ছেলেটা কি এখনও তার জোকসের ভান্ডার খুলে বসে? বাশার কি এখনো মর্নিং নিউজের জন্য পাতার পর পাতা লিখে যায়? আজাদের মা কি তার ছেলের মুখে ভাত তুলে খাইয়ে দেন... আজাদ কি মায়ের চোখ মুছে ১৪ বছরের অপেক্ষার অবসান টেনে মা’র মুখে ভাত তুলে দেয়?
এমন মা কি এখন আছে যিনি জাহানারা ইমামের মত ছেলেকে দেশের জন্য কুরবান করে দেন? আজাদের মা'র মত কি কোন মা ছেলেকে লুকিয়ে বলে দেন “বাবা কারো কথাই তুমি এদের বল না”? অনেক কিছু না জানতে পারা আমি এইটুকুন জানি এমন মা আজও আছেন। যতদিন বাংলা মা বিশ্বে মাথা তুলে রইবেন ততদিন এমন মা’ও থাকবেন...যুগে যুগে... কালে কালে।
আজ এ বেলায় মা তোমাদের জানাই অযুত নিযুত লক্ষ কোটিবার সালাম...তোমরাই বাংলা মা কে দিয়েছিলে এমন দুর্ণিবার বীরের দল যারা আমাদের পদচিহ্ন স্বাধীন রাষ্ট্রে এঁকে যাওয়ার জন্য মুছে গেছে নিজেদের পদচিহ্ন । কিন্তু রয়ে গেছে আমাদেরই মনে অগোচরে।
আজ এই দিনে প্রত্যেক বীর শহীদের কথা স্মরন করছি অগাধ শ্রদ্ধা নিয়ে....ফিরে দেখ আজ আমাদের চোখে অশ্রু নেই... রয়েছে তোমাদের তরে নির্লোভ ভালবাসা....আর বুক ভরা অহংকার।
মন্তব্য
পড়লাম। ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
উদ্ধৃতি
"আজ এই দিনে প্রত্যেক বীর শহীদের কথা স্মরন করছি অগাধ শ্রদ্ধা নিয়ে....ফিরে দেখ আজ আমাদের চোখে অশ্রু নেই... রয়েছে তোমাদের তরে নির্লোভ ভালবাসা....আর বুক ভরা অহংকার।"
আজ কেন? প্রতিদিন স্মরণ করতে হবে।
এম. এম. আর. জালাল
"ফিরে দেখুন একাওর ঘুরে দাড়াক বাংলাদেশ।"
এম. এম. আর. জালাল
"ফিরে দেখুন একাত্তর ঘুরে দাঁড়াক বাংলাদেশ।"
অনেক কিছুই জানা ছিলো না। ধন্যবাদ।
-যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
ইশতিয়াক- ধন্যবাদ আপনার আমাকে না , আমার আপনাকে দেওয়া উচিৎ ।
জুবায়ের ভাই আপনাদের জন্যতো ভোলা একদমই মানা। কারন আপনাদের মাধ্যমে আমাদের এখনও জানার আছে অনেক।
কনফুসিয়াস ভাই আমাদের অনেকেরই অনেক কিছু জানা নেই। ভবিষ্যতে সচলায়তন নিশ্চয় আমাদের আরো অনেক কিছু জানাবে।
জালাল ভাই ঠিক বলেছেন আজ নয় প্রতিদিনই স্মরন করা উচিৎ। কিন্তু আসলেই কি আমরা তা করি? প্রতিটা মানুষই কিন্তু ফাইটার ,প্রতিটা মূহুর্ত লড়ে যাচ্ছে জীবনের প্রতিটা চাহিদার সাথে। এর মাঝে রোজ হয়তো রুমীদের মনে পরে না ঠিকই কিন্তু যখন দরজায় এসে কড়া নাড়ে শ্রদ্ধা জানাতে কেউই কার্পণ্য করে না। আর রুমীরা সবাই আছে ঘুরে দাড়ানো দৃপ্ত বাংলাদেশ দেখার অপেক্ষায়। সেটা বোধহয় আপনার, আমার, আমাদের গড়ে যাওয়া উচিৎ আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য। শহীদদের জন্য এটাই হয়তো হবে আমাদের সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধাঞ্জলি আর তাদের স্মরন করার সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
দৃশা
ইতিহাস ভালোবাসলে জানাটাও জরুরী। ভালোবাসি, কিন্তু অনেক কিছুই জানি না। ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। নতুন করে আবার গর্ব হচ্ছে রুমী,জুয়েল, আজাদদের জন্য।
--তিথি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
আলাদা করে আর কী বলবো?
একদম আমার মনের কথাগুলো!
কি মাঝি? ডরাইলা?
...ওরা দেখেও যদি না দেখে
বুঝেও যদি না বোঝে
গরম লোহার শলকা
দুচোখ দিয়ে
ওদের জানিয়ে দাও
মরা লাশগুলোতে কেমন জীবন এসেছে।...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
যে ভুলে ভুলুক,আমি ভুলিনা । আমি ভুলি নাই ।
কৃতজ্ঞতা দৃশা ।
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
জ্বী আমরা ভুলি না মোরশেদ ভাই...কিন্তু জানিওতো না অনেক কিছু।:(
দ্রোহী ভাই ,জেবতিক ভাই কিছু কিছু ব্যাপার একই সাথে নাড়া দিয়ে যায়, ভাবতেও ভালো লাগে।
বিপ্লব ভাই ভাল বলেছেন।:)
দৃশা
এই পোস্টটা বলে দেয় সব প্রজন্মেই সুন্দর চিন্তা ধারন করার মানুষ ঠিক ঠিক মাথা তুলে দাড়ায়। তারা তাদের ভাবনাগুলো সবাইকে উচু গলায় জানিয়ে দেয়। ধন্যবাদ দৃশা... এমন লেখা আরও চাই
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
স্মরণ হোক চেতনায়, প্রতিদিন।
নাজমুল ভাই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদেরকে নিয়ে গর্ব না হয় নাই করুক অন্তত পক্ষে আমাদের নিয়ে যেন লজ্জায় না পড়ে । আমরা নিজেরাই অনেক কম জানি। তবে যতটুকুই জানি তা যেন তাদের জানিয়ে যেতে পারি।
তবে তাই হোক শিমুল
দৃশা
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
নতুন মন্তব্য করুন