আমার কল্পানায় তুমিন......

দৃশা এর ছবি
লিখেছেন দৃশা (তারিখ: শুক্র, ০৭/০৯/২০০৭ - ১০:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গভীর রাতে ছাদে বসে যখন এরিক ক্লেপ্টনের "টিয়ারস ইন হেভেন" গানটা শুনছিলাম নানা স্মৃতির মধ্য দিয়ে পার হওয়া জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেবগুলো চোখের সামনে এসে চলে যাচ্ছিল অনেকটা স্লাইড শো'র মত।
প্রতিটা দিন..কিছু নতুন প্রাপ্তির আনন্দ..কিছু অপ্রাপ্তির দীর্ঘশ্বাস..

বেশ ক'মাস আগে মেঘ আপুর পোস্টের মাধ্যমে প্রথম পরিচয় ছোট্ট তুমিনের সাথে....আমার ছোট্ট আরও একখানা প্রাপ্তি।
জানতে পারা এই যে, মাত্র ঠিকভাবে চলতে শেখা, বলতে শেখা তুমিনের দুরারোগ্য ব্যধি...পাওয়ার মাঝেও আমার অপ্রাপ্তি।

আমার এই ক্ষুদ্র যাপিত জীবনকালে আমি অনেক কাছের মানুষকে দেখেছি নির্মমভাবে আমাদের ছেড়ে যেতে....তাই বলে আমরাতো এতোখানিও অসহায় নই যে অন্যদেরও ধরে রাখতে পারবো না।
তুমিনের অসুখটা দুরারোগ্য তবে আরোগ্য লাভ যে সম্ভব নয় তাওতো না।
তাই হয়তো গভীর রাতে চোখ বন্ধ করে আমি কল্পনায় দেখতে পাই তুমিনের সামনের দিকে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ার অদ্ভুত সুন্দর ভবিষ্যত। মেঘ আপুর অনুমতি না নিয়েই আমার কল্পনার রেশটুকু ছড়িয়ে দিতে চাই বাকী সবার মাঝে। কল্পনাটুকু আমার নিয়ন্ত্রনে ছিল না, তবে ভুল হলে এই অধম মাথা পেতে শাস্তি বুঝে নেবে।
..........................................................................................................................................................................
৭ই সেপ্টম্বর, ২০০৭"
..............
আমার কল্পনার ৭ বছরের তুমিন এই মূহুর্তে হয়তো যোজন যোজন মাইল দূরে রয়েছে তার মামুনির সাথে, যুদ্ধ করে যাচ্ছে এক ভয়ংকর শত্রুর সাথে। তবে তোমরা এটা ভুলো না... তুমিন মানুষটা ছোট হলেও কিন্তু অনেক বড় সাহসী যোদ্ধা,প্রকৃত যোদ্ধারা নিজে হারতে নয় বরং অন্যকে হারাতে শেখে। তুমিনও হারবে না,অবশ্যই হারবে না !!

আজ থেকে ৩'বছর পর"
...............
কাঁধে ভারী ব্যাগ নিয়ে দু’বেনী নাড়িয়ে মিষ্টি চেহারার একটা বাচ্চা মেয়ে স্কুলের গেইট পেরিয়ে ভেতরে চলে যাচ্ছে। চোখ বন্ধ করেও আমি তার হাতে একটা বাক্স দেখতে পাই। মেয়েটা তার মত আরো ছোট ছোট দস্যিদের কি যেন বের করে দিচ্ছে সেই বাক্সখানা থেকে। খুব করে লক্ষ্য করে দেখলাম ও'যে চকোলেট কেক !! কারন, আজ যে তুমিন নামের মিষ্টি মেয়েটার জন্মদিন !!! ঘোর লেগে থাকা কল্পনাতেও আমি শুনতে পাই দূর থেকে আসা একদল কচি-কাচার ভাঙ্গা ভাঙ্গা সুরের বার্থডে উইশ। হাসি

সময়টা ধরেনি আরও ৯'বছর পর"
..................
ছোট্ট তুমিন আজ বেশ অনেকটা বড়....যদিও এখনো কিছু কিছু মানুষের কাছে সে সেই আগের পুচকা তুমিনই আছে...যাদের কাছে তার আর হয়ত বড় হয়ে উঠা হলো না। আজ তুমিন অনেকগুলো ধাপ ডিঙ্গিয়ে অনেকটা সময় পাড়ি দিয়ে এমন এক অবস্থানে যেখান থেকে শুরু হয় আর এক নতুন যোদ্ধার ইতিহাস। বাস্তবের তুমিন হয়তো একদিন হবে ইঞ্জিনিয়ার,বা শিক্ষিকা,নয়তো সফল ব্যাংকার কিংবা অন্যকোন পেশার কর্ণধার। কিন্তু আমার কল্পনার তুমিন কিন্তু মোটেও তা নয়। আজ তার প্রথম দিন মেডিকেল কলেজের লোকে-লোকারন্য করিডোরে....প্রথম দিন জীবনের এক নতুন অধ্যায়ে। হাসি

কেটে যায় আরও ৭'টি বছর"
................
অনেকগুলো বছরের হাড়খাটুনির ফলাফল আজ তুমিনের মুঠোয়... তুমিনের নামের আগে জুড়েছে ডক্টর নামের বেশ ভারী উপাধি। শ্বেত-শুভ্র বসনা তুমিন গলায় স্টেথস্কোপ ঝুলিয়ে হাসিমুখে ঘুরে বেড়ায় ওয়ার্ড থেকে ওয়ার্ড। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি এক বীর যোদ্ধাকে। আজ তুমিন যুদ্ধমন্ত্রে দীক্ষা দেয় আরও অনেক ক্ষুদে যোদ্ধাদের......ছড়িয়ে দেয় নিজ আত্মবিশ্বাস প্রতিটি রুগ্ন জরাজীর্ন প্রানে। আমি মুগ্ধ হয়ে তুমিনকে একের পর এক রণক্ষেত্রে জয় পেতে দেখি...আমি মুগ্ধ হয়ে এক বিজয়ীকে দেখি !! হাসি

হবে হয়তো আরও বছর খানেক পর"
....................
চারিদিকে আজ আলোর জলসা...যেদিকে চাও হরেক রকম আলোকবাতির পসরা। বেশ খানিকটা দূরে যেন বেদীতে বসে আছে কোন দেবালয়ের দেবী। অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রই তার দিকে... আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর কনে !! হালকা গোলাপী রঙের মসলিন কাপড়ে রুপোলী জরির কাজ করা বিয়ের শাড়ীতে তুমিনের দিক থেকে যেন চোখ ফেরান দায়...এর কারন হয়তো শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য্য নয়...বরং তুমিনের চোখে-মুখে ফুটে ওঠা চাপা আনন্দের উদ্ভাস। তুমিনের চোখ যেন বলছে আজ সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ কারন তার পাশে রয়েছে তার সবচেয়ে পছন্দের মানুষটি।
আলোর প্রতিটি রশ্মি যেন আজ তুমিনের তরে....
আশপাশে সাজানো ফুলের সুবাস যেন আশীর্বাদ হয়ে ছড়িয়ে পরে তুমিনেরই অগোচরে....

আরও খানিকটা সময় পর" হাসি
...............
আমি রুদ্ধ নিঃশ্বাসে দেখি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য...মায়ের কোলে ঘুমন্ত শিশুর নিষ্পাপ মুখ!!তুমিনের কোল জুড়ে ঘুমন্ত তিয়ানা (আমার কল্পনার নাম) !!! এর থেকে সুন্দর কিছু কি কেউ কখন দেখেছে ???তুমিনের চোখ দু'টো যেমন আনন্দ অশ্রুতে চিক চিক করছে আমার চোখখানিও হেসে উঠছে আমাদের যোদ্ধার একের পর এক প্রাপ্তিতে। আজ থেকে যে শুরু হল আমাদের যোদ্ধার দ্বিতীয় জীবন !!

........................................................................................................................................

আমার কল্পনার রাশ হয়ত এখানেই টেনে ধরা ভাল। কারন একটা সময় পর তুমিন নিজেই লিখবে তার দ্বিতীয় জীবনের কাহিনি । বাস্তবের তুমিন হয়ত বেনী বাধবে না, সে হয়ত ডাক্তার হবে না, তুমিনের মেয়ের নাম হয়ত তিয়ানা হবে না.... কিন্তু বাস্তবের তুমিন তুমি থাকো আমার কল্পনার তুমিনের মত সদা আমাদের মাঝে। আমার কল্পনাতে তুমিন তুমি অনেক প্রানবন্ত....তোমার ভবিষ্যত অনেক প্রানোজ্জ্বল....কিন্তু তোমার আমাদের মাঝে ফিরে এসে প্রমান করে দিতে হবে যে তোমার ভবিষ্যত আমার কল্পনা থেকেও অনেক বেশী সুন্দর। বাবুনি তুমি কি জানো কতগুলো মানুষ তোমাকে না দেখেও তোমায় কতখানি ভালবাসে....নিভৃতে প্রার্থনা করে যায় তোমার তরে। তোমার তো অবশ্যই ফিরে এসে আমাদের বলতে হবে "দেখ, তোমাদের যোদ্ধা হেরে নয়... জয়ী হয়ে ফিরে এসেছে তোমাদের মাঝে" ।

বলবে না ???

(উৎসর্গঃ পৃথিবীর সবচেয়ে দুষ্ট-মিষ্টি ছোট্ট ছেলে রকিকে। তুই যেখানেই থাকিস না কেন খুব করে দোয়া করে দে তুমিনের জন্য যেন সে তোর মত তার কাছের মানুষগুলোকে ছেড়ে না যায়। কখনই না যায়। )


মন্তব্য

দৃশা এর ছবি

খুব দ্বিধায় ছিলাম এই কল্পনাটা পোস্ট করব কি করবনা ভেবে...
বড্ড বেশী মনে হয় বড় হয়ে গেল

দৃশা

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

আমরা স্বপ্নে বাঁচি ...
স্বপ্ন গড়ি ...
স্বপ্ন বুকে ধরে ...
দেব পাড়ি ...

বহুদূর ...

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

তুমিনকে নিয়ে আপনার সবগুলো কল্পনা হাজার রঙে রাঙানো হোক ,,, পুরোপুরি সত্য হোক
ছোট্ট রকির জন্য শুভকামনা
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

নজমুল আলবাব এর ছবি

তুমিনের জন্য ভালবাসা

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

মনটা খারাপ হয়ে গেল। তুমিন সুস্থ হয়ে উঠুক, আপনার স্বপ্ন সত্যি হোক।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অমিত আহমেদ এর ছবি

নিজের একান্ত ভাবনা গুলো শেয়ার করার যোগ্য আমাদের ভেবেছেন সেজন্য ধন্যবাদ।

পড়তে পড়তে আবেগটা টের পাচ্ছিলাম।

তুমিনের জন্য আমার অজস্র অজস্র ভালবাসা!


একটা ঝলসে যাওয়া বিকেল বেলা, একটা লালচে সাগরের জলে
যায় ভেসে যায় স্বপ্ন বোঝাই, নৌকা আমার কাগজের...

দৃশা এর ছবি

সবাইকে অসম্ভব ধন্যবাদ। সত্যি হোক আমাদের কল্পনা।
জ্বিনের বাদশাঃ ভাই বেশ অনেকটা দেরী হয়ে গেছে। রকিকে শুভ কামনা পৌঁছে দেওয়া আর কোনভাবেই সম্ভব না। কিন্তু ও নিশ্চয় সবকিছুই দেখছে।

দৃশা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।