আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

দৃশা এর ছবি
লিখেছেন দৃশা (তারিখ: রবি, ০১/০২/২০০৯ - ১১:১৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গানটি রচনার ইতিহাস

শুরুতে এটি কবিতা হিসেবে লেখা হয়েছিল। তৎকালীন যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক কবিতাটি আব্দুল লতিফকে দিলে তিনি এতে সুরারোপ করেন। পরবর্তীতে, লতিফ আতিকুল ইসলাম প্রথম গানটি গান। ঢাকা কলেজের কিছু ছাত্র কলেজ প্রাঙ্গনে শহীদ মিনার স্থাপনের চেষ্টা করার সময়ও গানটি গেয়েছিল। একারণে তাদেরকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

পরবর্তীতে আলতাফ মাহমুদ, যিনি সে সময়কার একজন নামকরা সুরকার এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, গানটিতে পুনরায় সুরারোপ করেন। বর্তমানে এটিই গানটির প্রাতিষ্ঠানিক সুর হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের সব অঞ্চল থেকে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শত শত মানুষ এই গান গেয়ে শহীদ মিনার অভিমুখে খালি পায়ে হেঁটে যান।

ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরীতে এই গান গেয়ে সবাই শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যায়। গানটি রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরী এবং প্রথম সুরারোপ করেন আব্দুল লতিফ। কিন্তু পরবর্তীতে সুরকার আলতাফ মাহমুদ গানের সুরে পরিবর্তন আনেন। বর্তমানে আলতাফ মাহমুদের সুর করা গানটিই গাওয়া হয়। বিবিসি শ্রোতা জরিপে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ গানের তালিকায় এটি তৃতীয় স্থান লাভ করেছে।
তথ্যসূত্রঃ এখানে

মূল কবিতা

আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।।

জাগো নাগিনীরা জাগো নাগিনীরা জাগো কালবোশেখীরা
শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা,
দেশের সোনার ছেলে খুন করে রোখে মানুষের দাবী
দিন বদলের ক্রান্তিলগ্নে তবু তোরা পার পাবি?
না, না, না, না খুন রাঙা ইতিহাসে শেষ রায় দেওয়া তারই
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।

সেদিনও এমনি নীল গগনের বসনে শীতের শেষে
রাত জাগা চাঁদ চুমো খেয়েছিল হেসে;
পথে পথে ফোটে রজনীগন্ধা অলকনন্দা যেন,
এমন সময় ঝড় এলো এক ঝড় এলো খ্যাপা বুনো।।

সেই আঁধারের পশুদের মুখ চেনা,
তাহাদের তরে মায়ের, বোনের, ভায়ের চরম ঘৃণা
ওরা গুলি ছোঁড়ে এদেশের প্রাণে দেশের দাবীকে রোখে
ওদের ঘৃণ্য পদাঘাত এই সারা বাংলার বুকে
ওরা এদেশের নয়,
দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়
ওরা মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শান্তি নিয়েছে কাড়ি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।

তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারি
আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর ছেলে বীর নারী
আমার শহীদ ভায়ের আত্মা ডাকে
জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাটে
দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালবো ফেব্রুয়ারি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।

গানঃ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো
শিল্পীঃ সমবেত সংগীত
সুরকারঃ শহীদ আলতাফ মাহমুদ
গীতিকারঃ আব্দুল গাফফার চৌধুরী

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি।।
ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু
গড়ায়ে ফেব্রুয়ারী।।
আমার সোনার দেশের
রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী।।

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

ছবিসূত্রঃগ্লোবালভয়েস


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

চলুক

রেনেট এর ছবি

অদ্ভুত সুন্দর গানটি। অদ্ভুত, অদ্ভুত সুন্দর।
---------------------------------------------------------------------------
If your father is a poor man, it's not your fault ; but If your father-in-Law is a poor man, it's definitely your fault.

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

মুশফিকা মুমু এর ছবি

আমি আর কিছু ইনফো এড করছি,
আবদুল গাফফার চৌধুরী, ১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজের বিদায়ী ছাত্র ছিলেন। ২১ এ ফেব্রুয়ারী মেডিকেল কলেজের সামনে ছাত্রদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে শুনে তিনি সেদিন খবর নিতে মেডিকেল কলেজে যান। আউটডোরে এক নিহত ছাত্রের লাশ দেখে তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। গুলিতে ছাত্রটির মাথার খুলি উড়ে গিয়েছিল, নিহত ছাত্রটি ছিলেন শহীদ রফিকুদ্দীনের।
২২ এ ফেব্রুয়ারী নিহতদের স্মরনে গায়েবী জানাজা হয়েছিল, মওলানা ভাসানী জানাজায় ইমামতি করেছেন। জানাজা শেষ হবার পর গনমিছিল শুরু হয় যে মিছিলে আবদুল গাফফার পুলিশের বেটনের আঘাতে আহত এবং অজ্ঞান হন। ওনার বন্ধুরা ওনাকে প্রথমে কার্জন হলে নিয়ে যান, পরে সেখান থেকে গেন্ডারিয়ায় এক বাসায় নিয়ে যান। আহত অবস্থায় সে বাসাতেই তিনি এ কবিতাটি লিখেছিলেন। গেন্ডারিয়ায় গোপন এক সভায় এক ইশতেহার প্রকাশ করা হয় এবং সে ইশতেহারেই প্রথম এ কবিতাটি ছাপানো হয়।
আবদুল লতিফ কবিতাটির সুরারোপ করেন এবং ১৯৫৩ সালে গুলিস্তানের ব্রিটেনিয়া হলে ঢাকা কলেজের নব নির্বাচিত ছাত্র সংসদের অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রথম গানটি পরিবেশন করেন। যার প্রতিক্রিয়ায় ১১ জনকে ঢাকা কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে মাওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অনুরোধে শহীদ সোহরওয়ার্দী বহিষ্কারের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানালে বহিষ্কার আদেশ তুলে নেয়া হয়। গানটি গাওয়ার অপরাধে সে বছর আবদুল লতিফ এর বাসাতেও গ্রেফতারের জন্য পুলিশ আসে।
১৯৫৬ সালে শিল্পী আলতাফ মাহমুদ শিল্পী আবদুল লতিফের অনুমতি নিয়ে একটি বিদেশী চার্চ সংগীতের সুরের অনুকরনে গানটি পুনোরায় সুর করেন যেটি আমরা এখন শুনতে পাই।
----- সংগ্রহ: সিরাজুস সালেকিন (শিল্পী আবদুল লতিফের ছেলে)
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।