পিন্টু ভাই

দ্রোহী এর ছবি
লিখেছেন দ্রোহী (তারিখ: মঙ্গল, ০৫/০২/২০০৮ - ৩:৪৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

×××আমি যা লিখি তার সবই যাচ্ছেতাই। অনেকদিন কোন কিছু লিখছি না। একটা যাচ্ছেতাই দিয়ে আবারও লেখা শুরু করা যাক।×××



আমি থাকি আলাবামায়। আলাবামাকে কেউ কেউ “সুইট আলাবামা” বলে ডাকে আবার দুষ্ট লোকেরা “আলা-ফাকিং-বামা” নামেও ডেকে থাকে। আমি কি নামে ডাকি সেটা না হয় উহ্য থাকুক, তবে মা বলতেন আমি নাকি জন্ম থেকেই দু্ষ্ট প্রকৃতির।

আমাদের ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশ অতি বিখ্যাত একটা জায়গা। বাংলাদেশ নিয়ে কোন প্রজেক্ট প্রোপোজাল লিখলেই ফান্ড পাওয়া যায়। তার উপর আমার আগে যারা এখানে পড়ালেখা করে গিয়েছে, তাদের সবাই পুরষ্কার-টুরষ্কার পেয়ে একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা করে দিয়ে গেছে। আমার অবস্থাও যে যাচ্ছেতাই সেটা টের পাওয়া গেল প্রথম দিনেই – যখন আমি ইন্টারন্যাশনাল অফিসে রিপোর্ট করলাম পাসপোর্ট, ডিপারচার কার্ড, অ্যাডমিশন লেটার, আই-টুয়েন্টি ছাড়া। সেই থেকে ডিপার্টমেন্টে এবং ইন্ট্যারন্যাশনাল অফিসে আমার খুব সুনাম!

আমি এবং আমার হাফপ্যান্ট-পরা-কালের বন্ধু শামীম একই সাথে পড়ি। বাংলাদেশ থেকে আসার পর প্রথমদিকে একদিন শামীম চুল কাটিয়ে আসলো। বেচারা তখনো বিভিন্ন ক্লিপারের সাইজের সাথে চুলের দৈর্ঘ্যের সমানুপাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পটু হয়ে উঠেনি। তাই চুল কাটার পর দেখা গেল তার চুলের সাইজ আর জুলফির সাইজ এক সমান। তার উপর জুলফির ইংরেজি সময় মত মনে করতে না পারার কারনে সাধের জুলফির দফারফা।

আমাদের উত্তর ভারতীয় বন্ধু দেবী আবিষ্কার করলো শামীমকে অনেকটা “পিন্টু-সুমন” অভিনীত সামাজিক ছায়াছবির বিখ্যাত চরিত্র “পিন্টু ভাই” এর মত দেখাচ্ছে। দেবীর কল্যানে কয়েক সপ্তাহের ভেতর “পিন্টু ভাই” নামটি ডিপার্টমেন্টে বিখ্যাত হয়ে গেল। দেখা গেল শামীম করিডোর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, পেছন থেকে ডিপার্টমেন্টের চেয়্যারম্যান চাক সাভার্দা বললেন, “হাউডি, পিন্টু ভাই!”

কয়েকদিন পর দেবী যখন চুল কাটিয়ে আসলো তখন সবাই তাকে পিন্টু ভাই ডাকা শুরু করে দিল । এখন এমন এক অবস্থা হয়েছে যে ডিপার্টমেন্টে কেউ চুল ছোট করে কাটালেই তাকে পিন্টু ভাই নামে ডাকা হয়।

গত সেমিষ্টারের শেষ দিকের কথা। আমরা সবাই জিওফিজিক্স ক্লাসে বসে আছি। প্রফেসর লোরেইন উলফ সাইজমিক ওয়েভ ট্রাভেলটাইম বিষয়ক বিরক্তিকর প্যাচাল পাড়া শুরু করেছেন। এমন সময় আমাদের চেয়্যারম্যান চাক সাভার্ডা উঁকি দিলেন। তিনি তার চুলের ছাঁট দেখাতে এসেছেন। শামীম তাকে দেখেই বললো, “হাই, পিন্টু ভাই !”

চাক সাভার্ডা খুব খুশী হয়ে গেলেন। এত বিখ্যাত একটা চরিত্রের নাম ধরে কাউকে ডাকা হলে কে না খুশী হয়?

চাক চলে যাবার পর লোরেইন উলফ প্রশ্ন করলেন, “পিন্টু ভাই কে?”

পশ্চিম বঙ্গের বন্ধু শুভদ্বীপ ভাবলো পিন্টু ভাইয়ের আসল পরিচয় বলে দিয়ে মহিলাকে বিব্রত করার কোন মানে হয় না।

“পিন্টু ভাই হচ্ছে বাংলাদেশের বিখ্যাত এক গ্যাংস্টার! ফেমাস কিলার!” বলে মিষ্টি করে হাসলো শুভদ্বীপ।

ভদ্রমহিলা চেয়ারম্যানকে দীর্ঘদিন ধরেই চিনেন। তিনি বুঝতে পারলেন “পিন্টু ভাই ষ্টাইল” কোন যেনতেন ষ্টাইল নয়। যেনতেন ষ্টাইল হলে ডিপার্টমেন্টের চেয়্যারম্যান ক্লাসে উঁকি দিয়ে নতুন চুলের ষ্টাইল দেখাতে আসবেন না।

লোরেইন উলফ বললেন,“আমার মনে হয় শুভদ্বীপ ঠিক কথা বলছে না। পিন্টু ভাই তার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ কেউ হবার কথা !”

শামীম তখন বললো, “পিন্টু ভাই বাংলাদেশের একজন অতি বিখ্যাত পর্ণষ্টার।”


মন্তব্য

তানভীর এর ছবি

মজা পাইলাম দেঁতো হাসি অনেক পুরান কথাও মনে পড়ল।

তার উপর জুলফির ইংরেজি সময় মত মনে করতে না পারার কারনে সাধের জুলফির দফারফা।

প্রথম যেবার চুল কাটাতে গিয়েছিলাম, জুলফির ইংরেজী কি আমিও জানি না। আমারে নাপতানী (এইখানে আবার নাপিত সব মহিলা, এই ব্যাপারটা খুবই ভালো লাগে হাসি )কইল, Do you wanna keep your sideburn? আয়েশ করে ঘুমঘুম ভাবে ছিলাম। কানে শুধু sideburn এই শব্দটাই শুনছি। আমি বুঝলাম, 'বেটি কিছু ইউজ করতে চায় যেটাতে সাইডে মানে কানে বার্নিং হবে। তাই জিগাইতেছে।' ভাব নিয়া কইলাম, No। মূহুর্তেই আমার সাধের জুলফি নাই হয়ে মুরগী ছিলা হয়ে গেলাম মন খারাপ জুলফি শহীদের বিনিময়ে ইংরেজী ভাষার একখানা শব্দ শিখলাম। এতবড় ত্যাগ স্বীকার করে আর কখনো কিছু শিখেছি বলে মনে পড়ে না!

=============
"কথা বল আমার ভাষায়, আমার রক্তে।"

ধুসর গোধূলি এর ছবি
সুমন চৌধুরী এর ছবি

হুম....
২০০১ সালের শুরুতে ক্যাম্পাসে ফিরলাম। হলে ঢুকতে ৯৮ ব্যাচের ফরিদ কয়, আরে সুমন ভাই কি খবর? মুখে টিপটিপ হাসি। পোলা শুরু থিকাই পাখোয়াজ টাইপ। আমি ভালোটালো বললাম। কিন্তু মনে হইতেছিল ওরা সুমন ভাই নামটার উপর বেশী জোর দিতেছে। তারপর চাইর তলায় যাওয়ার পরে দেখি যার সাথেই দেখা হয় সেই সুমন ভাই বইলা রহস্যজনকভাবে হাসে। এমনকি সুশীল নজরুল গীতি শিল্পীও দেখি পিঠ চাপড়াইয়া দেয়। ঘটনা কি? প্রিন্সরে জিজ্ঞাসা করি। ও কয়, তুই ক্যামন আছছ? তারপর নজরুলগীতি শিল্পী আইসা তার ঘরে সিনেমা দেখার দাওয়াত দিলো। বুঝলাম। আছিলাম বোকা।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

সৌরভ এর ছবি

বুঝলাম। আছিলাম বোকা।
গড়াগড়ি দিয়া হাসি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নিঘাত তিথি এর ছবি

অ! বুঝলাম।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

সৌরভ এর ছবি

পিন্টু ভাই তো নোবেল পাইবো দেহি।
পর্নবিজ্ঞানে।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

কেমিকেল আলী এর ছবি

ব্যাপক মজাক পাইলাম

অয়ন এর ছবি

পিন্টু ভাই বিখ্যাত হইছিলো ছবির আগে তাগো নিজেদের মধ্যে একটা হালকা পাতলা সংলাপের কারণে। তারপর সাপ্তাহিক ২০০০ এর রিপোর্টটাও তো হটকেকের মতো বিক্রি হইছিলো।

দ্রোহী এর ছবি

"পিন্টু ভাই আপনি কিভাবে চাচ্ছেন যে আমি ওকে ......"

"সুমন তুই তো ওকে আগেও ....."

ডায়লগ ঠিকাছে না?


কি মাঝি? ডরাইলা?

অয়ন এর ছবি

হ পুরা ঠিকাছে।
আরেকটা হিট কথা কইছিল
do u think she is a ..........চোখ টিপি

অতিথি লেখক এর ছবি

দেঁতো হাসি. আরো লেখেন। পইড়া মজাক লই।
রায়হান আবীর

কনফুসিয়াস এর ছবি

চলুক
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

হিমু এর ছবি

দুনিয়াতে আসলে ইনসাফ নাই। দেশে খাটলো সুমন, বিদেশে নাম ফাটলো পিন্টুর।


হাঁটুপানির জলদস্যু

দ্রোহী এর ছবি

এমনই হয়। জার্মানীতে খাটবো সুমন বদ্দা আর নাম ফাটবো হিমুর.... হাসি


কি মাঝি? ডরাইলা?

অয়ন এর ছবি

হো হো হো

অতিথি লেখক এর ছবি

ইস! যদি 'পিন্টু ভাই' হইতে পারতাম!
-পরিবর্তনশীল

দ্রোহী এর ছবি

পিন্টু ভাই হয়ে লাভ কি? খালি সুনাম হবে, কিন্তু আসল কাম করতে হলে সুমন হতে হবে।


কি মাঝি? ডরাইলা?

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

পরবর্তী "যাচ্ছেতাই লেখা" কবে আসছে?

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

চোখ টিপি

বিপ্লব রহমান এর ছবি

হো হো হো হো হো হো হো হো হো


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

পিন্টু ভাই, জিন্দাবাদ!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

জনসমক্ষে প্রকাশ এর ছবি

সবাই বেপক মজা পাইছে...
লেখাটা জব্বর হইছে।
আজকাল ব্লগের বেশীর ভাগ লেখাই “বিজ্ঞাপন আর বিজ্ঞাপন, বিজ্ঞাপনের সাইনবোর্ডের চাপে আকাশ সাথে সাথে বাতাসও ভারাক্রান্ত অথবা বিজ্ঞাপন ছেড়ে দিয়ে কেন সবাই ন্যাশনাল জিওগ্রাফি দেখছে না, সরকারি চাকরি অথবা ব্লগিং করছে না...যদি করত... করলে দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যে কতগুন বেড়ে যেত...তথাপি এসএমএস জেনারেশন জিন্স পরে হেটে যাওয়াতে...নীলখেতের চটি বই পড়ে বড় হওয়া জেনেরেশনের কেন সুরসুরি লাগে?
কিংবা বিজ্ঞাপন বিষয়ক বিরুপ মন্তব্যের জমজমাট পোস্টের সারিতে কোন ব্লগার সদ্য প্রকাশিত তার নিজের বইয়ের ছবির বিজ্ঞাপন লাগাইয়া বিজ্ঞাপন আর টেলিফিল্ম ওয়ালাগো বাল চাষা টিয়া পাখি কইতাছে...
কেউ কেউ আবার ঘুম থেইকা উইঠা দাঁত ব্রাশ না কইরা কীবোর্ডে হুমরি খাইয়া গন্দম ফল ভাল না আফেল ফল ভালা, দস্তাভভস্কি জীবনে কয়বার লাগাইছে...
এই আমি জানি না তুমি জানো?... মুক্তিযোদ্ধা খারাপ না আল-বদল ভাল?
বালচাষা টিয়া পাখি ভাল না ময়না পাখি ভাল?
অমুকের লগে তমুকের শালীর কি সম্পর্ক?
তমুকের পোস্ট ‘জানালার কার্নিশে কাক’ পইড়া হমুকের ভাই ইংলিশ মিডিয়ামের পোলা কেন কইল ‘জানালার কার্নিশে কাক!! Oh man fuck…আমিতো অবাক !!’

এইসব কচকচানির চেয়ে ...এই পোস্টটা আরামের হইছে দেঁতো হাসি

পিন্টু আর সুমন ভাইকে নিয়ে এধরনের সচেতন রসময় হাল্কা রম্যপোস্ট আর তার চেয়েও মজাদার স্ম্রৃতিচারণের মধ্যে একটা মুক্তমনা সচলভাব উদ্রেক করছে সবার মাঝে...

পিন্টু ভাই আর সুমন ভাই সচেতনভাবে একটি মেয়ের সাথে প্রতারনা করে যে চলচিত্র উপহার দিয়েছে তার এওয়ার্ড হল আজকে তারা পর্ণস্টার...
তবে এখানে প্রতারনার শিকার মেয়েটাকে নিয়ে সবাই নিশ্চুপ থেকে সে চাতুর্যের পরিচয় দিয়েছেন সেটা প্রসংশনীয় এবং শিক্ষনীয়!!
সচলায়তন থেকে এধরনের রসে ভরা আরো পোস্টের প্রত্যাশায় রইলাম...

বিষেশ দ্রষ্টব্যঃ পিন্টু সুমনের লম্পট প্রতারনা মূলক সফল চলচিত্রটি একটি সময় জমজমাট গোপন ব্যবসা করার পরও অচলায়তনের কিছু বিবেকবান মানুষের সাহায্য নিয়ে প্রতারিত মেয়েটি ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করে।
হয়তো সচলায়তন থেকে নয়...
কোন অচলায়তন থেকে...
সৃষ্টি হবে হয়তো কোন গান, কবিতা, গল্প অথবা চলচিত্র ।
যে সৃষ্টি অচেতন মূল্যবোধের গভীরে সচেতন হবার স্পন্দন শুরু হওয়ার তাগিদ দেবে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।