অরল্যান্ডো ভ্রমণের গল্পের শিরোনাম "দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া" রাখার পেছনে একটি যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। পড়ুয়ারা ভাবতে পারেন "বহুদিন ধরে বহু্ক্রোশ দূরে" থেকে মেরে দিয়েছি। কিন্তু আপনাদের নিশ্চয়তা দিয়েই বলছি, নামটি ঠাকুর্দার কাছ থেকে মারিনি। নামটি পুরোপুরি মৌলিক।
আমার বিভিন্ন ধরনের ভীতি আছে। উচ্চতাভীতি থেকে শুরু করে পত্নীরপ্যানপ্যানানীভীতি পর্যন্ত যত ধরনের ভীতি থাকা সম্ভব তার সবগুলোই আমার ভেতর বিদ্যমান। ভয় পেলেই আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। কেননা চোখ বন্ধ করে ফেললেই ভয়ের ব্যাপারগুলো চোখের সামনে থেকে আড়াল হয়ে যায়। আর অদৃশ্য জিনিষে ভয় পাওয়ার কোন যুক্তি নেই। অরল্যান্ডোর ডিজনীল্যান্ড আর ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে রোমহর্ষক সব রাইডে চড়তে গিয়ে দিনের বেশিরভাগ সময় ধরেই আমাকে চোখ বন্ধ করে রাখতে হয়েছিল। আর তাই অরল্যান্ডো ভ্রমণকাহিনী লিখতে বসে শিরোনাম হিসাবে "দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া" লেখাটাই সমীচীন বোধ করলাম। কেননা ডিজনী ওয়ার্ল্ড আর ইউনিভার্সাল স্টুডিওর রূপ আমাকে চোখ বন্ধ রেখেই উপভোগ করতে হয়েছিল।
যাই হোক। প্যাচাল বাদ দিয়ে ভ্রমণের গল্পে ফিরে যাই।
অ্যাডভাইজারকে মুড়ি খেতে দিয়ে এবং যমের মুখে ছাই ছুঁড়ে মেরে শেষ পর্যন্ত আমরা আটলান্টা গিয়ে পৌঁছালাম। আমরা মানুষ মোটে দুইজন কিন্তু আমাদের ব্যাগ সর্বমোট পাঁচটা! বউকে জিজ্ঞেস করলাম, "অ্যাতো ব্যাগ ক্যানো?"
বউ একগাল হেসে বললো, "এই যে ব্যাগদুটো দেখছো না? এই যে বড় বড় ব্যাগ দুটো! এগুলোতে ভরে খিচুড়ি নিয়ে চলেছি। খিচুড়ির সাথে মুরগীর রান ভাজা।"
শুনে আমার পেটের ভাত খিচুড়ি হবার দশা —বলে কী এই আওরাত! আলাবামা থেকে খিচুড়ি নিয়ে চলেছে অরল্যান্ডোতে! জিজ্ঞেস করলাম, "কেন?"
বউ বললো, "খিচুড়ি দিয়ে কী করে?"
আমি বললাম, "মানুষে কী করে তা আমি জানি না। তবে আমি মনে হয় খাই।"
বউ বললো, "তাহলে তাই। খাওয়ার জন্যই নিয়ে যাচ্ছি।"
আমি তখন আবার বললাম, "কিন্তু তোমাকে না বললাম হাওয়াবদলের আরেক অর্থ হচ্ছে খাওয়াবদল। নতুন একটা জায়গা দেখতে গিয়েও যদি ঘরের খাবার খেতে হয় তাহলে ক্যামনে কী?"
বউ বললো, "তোমাকে কে খেতে বলেছে? তোমার ইচ্ছা না হলে খাবে না। এসব যাচ্ছে ছোট ভাই পীযুষ আর তার বন্ধু ইমণের জন্য। কারন ওরা নিউ ইয়র্ক থেকে মিহিদানা লাড্ডু, সন্দেশ ইত্যাদি নিয়ে আসবে আমার জন্য।"
মিহিদানা লাড্ডু বয়ে আনার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ খিচুড়ি বহন করে নিয়ে যাবার আইডিয়াতে ভেটো দিই আমি— খানিকটা রেগে যাই। বউ তখন বলে, "চা খাবা?"
ব্যাস এতেই কাজ হয়! আমার রাগ পড়ে আসে। মনে পড়ে যায় বঙ্গভবনের চায়ের দাওয়াতের কথা।
আটলান্টায় পরিচিত এক বাসায় একদিন বেড়িয়ে পরদিন বিকেলবেলায় আটলান্টা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই।
আটলান্টা এয়ারপোর্টের এক চিপায় আমাদের জন্য নির্ধারিত গেইটে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সাথে বসে রানওয়ের রূপসুধা উপভোগ করি কিছুক্ষণ। যথাসময়ে বিমানের ভেতর ঢুকে একটা দড়ি দিয়ে নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধি। একটু পরেই পক্কবিম্বাধরোষ্ঠী শিখরীদশনা শ্রোণীভারাদলসগমনা স্তোকনম্রাস্তনাভ্যাং এক শব্দে বলিতে গেলে হট [কৃতজ্ঞতা: মুখফোড়] এক বিমানবালা এসে পেটে হাত দেবার ভঙ্গি করে যে দড়িখানা দিয়ে নিজেকে বেঁধেছি তা চেক করতে লাগল। তারপর ফিরে গিয়ে ঘোষণা দিল: অমুক পরিবহনে ভ্রমণ করার জন্য ধন্যবাদ...হ্যান ত্যান। তারপর বললো— বিমানের ভেতর বিড়ি খাওয়ার অনুমতি প্রদান করা হল। তারপর সামলে নিয়ে আবার বলল, বিমানের ভেতর বিড়ি খাওয়া সম্পুর্ণরূপে হারাম। বিড়ি খেতে পাই না অনেকদিন হয়ে গেল —তাই বিমানের ভেতর বিড়ি খেতে দিলেই কী আর না দিলেই কী? আমার কী আসে যায় তাতে? আমি চোখ বুঁজে টেক অফের প্রস্তুতি নিতে লাগলাম।
মন্তব্য
ভাইরে, আপনি বড়ই কিপটা। একটু একটু কইরা খালি মাল ছাড়তাছেন। এখনো টেক অফও করলেন না!
আর আটলান্টা থেকে প্লেনে অরল্যান্ডো গেলেন! আর কন আপ্নের পয়সা নাই আমি তো পয়সা নাই দেইখা রেন্টাল কারে ঝাঁকুনি খাইতে খাইতে হাজার মাইল পাড়ি দিয়া টেক্সাস থেকে অরল্যান্ডো গেলাম।
= = = = = = = = = = =
তখন কি শুধু পৃথিবীতে ছিল রং,
নাকি ছিল তারা আমাদেরও চেতনায়;
সে হৃদয় আজ রিক্ত হয়েছে যেই,
পৃথিবীতে দেখ কোনখানে রং নেই।
সস্তায় পাইলে কী করুম? রকেটে গেলে মনে হয় এর চাইতে সস্তা পড়ত। কিন্তু দূরত্ব অল্প বলেই যাওয়া হল না।
কি মাঝি? ডরাইলা?
খাইসে, টেক্সাস থেকে ফ্লোরিডা ড্রাইভ করে যাওয়া এই দুইনম্বর লুকের সন্ধান পাইলাম।
আমি হলাম তৃতীয়জন।
ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সঙ্গে আমারও গাড়িতে লম্বা ভ্রমণ খুব আনন্দের মনে হয়। যেখানে যখন খুশি থামো, একদিনের পথ চাই কি তিনদিনে যাও। এই স্বাধীনতা আর কীসে পাওয়া যায়?
একবার ডালাস থেকে গাড়ি নিয়ে আরো দূরের লস এঞ্জেলেসও গিয়েছিলাম। যাওয়া-আসাতেই ৩২০০ মাইল।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
চুনা হাগার মতো এইসব কী ছাড়ছেন? একটা স্ট্যান্ডার্ড পোস্টের এক ছটাক মাল নিয়ে পোস্টান ক্যান? লাইনে আসেন।
হাঁটুপানির জলদস্যু
কী আর করা? এখন একটু ত্যানা পেঁচিয়ে নিচ্ছি। অরল্যান্ডোর বর্ণনা তো চোখ বন্ধ করেই লিখতে হবে।
কি মাঝি? ডরাইলা?
ভালো কৈরা চা চু খাইয়া আরো ছাড়ো.....
ঈশ্বরাসিদ্ধে:
অজ্ঞাতবাস
আমার বিভিন্ন ধরনের ভীতি আছে। উচ্চতাভীতি থেকে শুরু করে পত্নীরপ্যানপ্যানানীভীতি পর্যন্ত যত ধরনের ভীতি থাকা সম্ভব তার সবগুলোই আমার ভেতর বিদ্যমান।
চেহারা দেখলে কিন্তু উল্টা মনেহয়। ব্যাখ্যা কী? লেখা দুর্দান্ত হইছে কিন্তু।
উদ্ধৃতি
পক্কবিম্বাধরোষ্ঠী শিখরীদশনা শ্রোণীভারাদলসগমনা স্তোকনম্রাস্তনাভ্যাং
ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করতেছি।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী
ব্যাপারটা কিন্তু খুব ইয়ে।
পক্কবিম্বাধরোষ্ঠী শিখরীদশনা শ্রোণীভারাদলসগমনা স্তোকনম্রাস্তনাভ্যাং
তাইলে কালিদাস আজকাল মুখফোড় নামে ব্লগাইতাসে। আমার ক্যান জানি তখনই সন্দেহ হইছিল। হালা পুরা আলুবাজ একটা।
আর ঐ রাইডগুলা নিয়ে যা বললেন, পুরা আমার অবস্থা। আমার বৌ হালায় ঐ রাইডগুলার পুরা পাংখা। আর আমি যথারীতি চোখ বন্ধ করে ঈষ্টনাম।
সহমত...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আস্তে আস্তেই হোক ... তা-ই ভালো । এই লোক একবারে সব শেষ করে দিলে আবার অনেক দিনের জন্য গায়েব হয়ে যাবে । দ্রোহী আমাদের সাথে সবসময়ই থাকুক ।
সিরিজটা খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ছি । মূলত রম্য ভ্রমণ কাহিনী বলে ।
---------------------------------------------------------
পৃথিবীর সব সীমান্ত আমায় বিরক্ত করে। আমার বিশ্রী লাগে যে, আমি কিছুই জানিনা...
---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
এই কথা পইড়া যা মজা পাইছি !!!! হাঃ হাঃ হাঃ
হিমু ভাইয়ার কমেন্ট পড়েও মজা লাগছে।আপনার যখন ইচ্ছা চুনা হাগার মতই দেন লেখা, তাও দেন আরকি তাহলেই চলবে।
পড়ের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।
~~টক্স~~
খুব বেশি ভয় পাইসিলেন? হাগা-হয়-নাই-কাপড়-খুলিয়া টাইপ অবস্থা হয় নাই তো?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
সন্নাদা, আমার সিস্টেম পুরা উল্টা। ভয় পেলে আমার হাগা বন্ধ হয়ে যায়। রাগ হলে আমি ভাত বেশি খাই।
কাপড় পরে হাগার কথা যে চিন্তাই করতে পারি না।
কি মাঝি? ডরাইলা?
সলিড একদম!
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
সিরিজের নামকরণের ব্যাখ্যাটা অসাধারণ! সত্যিই মৌলিক।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
কি মাঝি? ডরাইলা?
ওস্তাদ! অপেক্ষায় রইলাম। আরো ছাড়েন তারাতারি।
কীর্তিনাশা
জমছে!
বিমান বালার কথা আরো কন!
[][][][][][][][][][][][][][][][][][]
ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ, কোরো না পাখা।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
মেম্বর সাবের ব্লগ আনন্দময় ব্লগ। আমি বলি কি, আরও ছোট করে ছাড়েন। তাইলে অনেকগুলা পর্ব হবে...অনেকদিন ধরে পড়া যাবে।
আর আমার এই মন্তব্যের জবাব না দিলে আপনের খবরাছে কইলাম...
---------------------------------
এই নিরানন্দময় জীবনে ব্লগটারেও যদি দুঃখের সাগরে ভাসাইয়া দিই তাহলে ক্যামনে কী?
কি মাঝি? ডরাইলা?
- জনস্বার্থে এইখানে কিছু ডিসক্লেইমার লাগাইতে আমি ব্র্যাক হইয়া আগায়া আসলাম। জনগণ, উপরের বোল্ড লেখায় খিয়াল করেন।
আপনারা যতোই মনে করেন এইটা গাছের কঁচিপাতা হইতে উদ্ভূত পানীয় বিশেষ, মনে করতে পারেন। মনে করতে করতে শহীদ হইয়া যান, তবে আসল কথা হইলো এইটা দ্রোহী দম্পতির একটা কোডেক ভাষা! যার মানে পরবর্তী ইটালিক লাইনেই উল্লেখ আছে। দ্রোহী মেম্বারের রাগ পড়ে যায় "চা"এর কথা শুনে! এটা কি বিশ্বাসযোগ্য কথা?
মোটেও না।
গোয়েন্দা সংস্থা সিডিএস-এর ডেপুটি ডিরেকটর জনাব বিষণ্ণ স্যার জানাচ্ছেন, দ্রোহী মেম্বারের ঘরে দেড় ফুট প্রশস্ত এবং পৌণে পাঁচফুট লম্বা দুইটা তক্তা বিদ্যমান। দ্রোহী তাঁর গিন্নির অবাধ্য হলেই চা-খাওয়ার দাওয়াত দেন। এবং পরবর্তীতে ঘর থেকে ধুপুশ-ধাপুশ শব্দ বেরিয়ে আসে। এজেন্ট মওলানা জানিয়েছেন, ঐগুলা তক্তা মাইরের শব্দ।
বেশ কয়েক দফা তক্তা মাইর খাওয়ার পর এখন দ্রোহী সাহেবকে কেবল চা- খাওয়ার কথা বললেই হয়। তিনি নাকি তখন তুষারপাতের মতো শীতল হয়ে যায় গিন্নীর সামনে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন