ভ্রমণ: নায়াগ্রা ঘুরে এসে (পর্ব-০১)

দ্রোহী এর ছবি
লিখেছেন দ্রোহী (তারিখ: বুধ, ২৫/০৭/২০০৭ - ১০:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শিবরাম চক্রবর্তী একবার বলেছিলেন, “হাওয়াবদলের আসল মানে হচ্ছে খাওয়াবদল। হাওয়া আবার বদলায় নাকি? তামাম মুল্লুকেই ত এক হাওয়া! মুখ বদলাতেই মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যায়।”

সেদিন যখন গিন্নী আমায় বললো, “এই চল না কোথাও গিয়ে হাওয়াবদল করে আসি!” - সাথে সাথেই কথাটা বলে ফেললাম।

আমার কথায় কান না দিয়ে উল্টো আমাকে তাড়া দিয়ে গিন্নী বললো, “চল না নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখে আসি। দুদিন পরেই ত আমি বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছি। তাছাড়া আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে তুমি আমার জন্য এইটুকু করবেনা?”

নায়াগ্রার কথা শুনে আমি ভয় খাই! -“যে সামান্য কটা পয়সা পাই- জলপ্রপাত দেখতে গিয়ে সেগুলো প্রপাতধারার মত জলে ফেলব বুঝি? নায়াগ্রায় আছে টা কি? একটা নালা দিয়ে পানি পড়ছে! পানি পড়া দেখার জন্য কেউ ৫০০ মাইল দুরে যায়? উঁচু জায়গা থেকে নীচু জায়গায় পানি পড়বে- এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। বাথরুমের কল থেকেও ত পানি পড়ে। যাও কলটা ছেড়ে দিয়ে তাকিয়ে থাকো! জলপ্রপাত দেখা হবে।”

আমার বাক্যবাণে গিন্নী কিঞ্চিত ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লো। স্বভাবশুলভ গিন্নী ষ্টাইলে ফ্যাঁচ-ফ্যাঁচ করতে করতে বললো, “আবার কোনদিন দেখতে পাব কিনা জানিনা! প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে এটুকু চাইতেই পারি তোমার কাছে।”

বাঙালি অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে পারে। প্রেম করে বিয়ে করা বউয়ের অনুরোধে টাইটানিক গিলে ফেলাও কোন ব্যাপার না। সুতারাং আর বাক্যব্যয় না করেই অনতিবিলম্বে গিন্নীর প্রস্তাবে সায় দিলাম। পকেটের অবস্থা চিন্তা করে মনটা খানিক খচখচ করতে লাগলো। কেবলই মনে হতে লাগলো- “পয়সা খরচ করে কেউ পানি পড়া দেখতে যায়!”

অ্যালাবামায় এক বন্ধু থাকে। গিন্নীর বিপক্ষে কিছু বলতে গেলে একা একা সাহস পাইনা। মাঝে মাঝে তার সাথে পরামর্শ করি। সুতারাং ফোন করলাম তাকে, “বলছিলাম- আগামী ৭ তারিখ আমার বিয়ের.....”

এটুকু বলতেই ভয় খায় বেচারা- “বলিস কি? গত বছর না বিয়ে করলি! আবার বিয়ে করবি? একটা করে শখ মিটেনি? মাত্রতো একবছর গেল। বেচারীকে অত্যাচার করে শেষ করে দিয়েছিস! খুন করে ফেলেছিস অলরেডী? তুই একটা পাষণ্ড!”

“আমার দ্বিতীয় বিয়ে করার কোনই ইচ্ছা নেই বরং বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গিন্নী কিভাবে জলপ্রপাতের নাম করে কিভাবে আমার টাকা-পয়সা জলে ফেলার পাঁয়তারা করছে!-সেটা বুঝাতে গিয়ে গলদঘর্ম হই! আর কথা বাড়াই না! কি বললে কি বুঝবে শেষে!

অগত্যা কালবিলম্ব না করে গোটুবাস.কম নামক একটা ওয়েবসাইট থেকে নিউইয়র্ক-ওয়াশিংটন ডিসি-নায়াগ্রা ফলস্ ট্যুর টা কিনে ফেললাম। এপ্রিল ৬, ২০০৭ রোজ শুক্রবার সকাল সাতটায় কুইন্সের ফ্লাশিং থেকে আমাদের ভ্রমন শুরু হবে- এমনটাই নির্ধারিত হল।

ফ্লাশিং এ উপস্থিত হয়ে দেখি পুরোপুরি এক চৈনিক এলাকা। আমরা দুইজনই একমাত্র ইংরেজি ভাষী, তাও আমি পুরোপুরি ইংরেজি বলতে পারি না। মনে মনে বাংলা থেকে ইংরেজি ট্রানশ্লেষণ করে কাজ চালাই। আমার গিন্নী ইংরেজি বললে আমি বুঝি না। পুরোপুরি অষ্ট্রেলিয়ান অ্যাকসেন্টে মাইট-ফাইট কি যেন বলে!

নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মিনিট পর হুড়মুড় করে শ’দুয়েক লোক গাদাগাদি করে তিনটা শাটল বাসে উঠতে শুরু করলো। আমরা ছাড়াও ৪/৫ জন ভারতীয় চামড়ার লোক দেখতে পেলাম। বাকী সব চৈনিক-কিংবা জাপানী নতুবা কোরিয়ান! (আমার কাছে সবাই একরকম। ছাগলের বাচ্চা যেমন সবগুলো দেখতে একইরকমের হয়। চীনা-জাপানীরাও তাই)। কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম চীনারা যা করবে আমরাও তাই করবো! হঠাৎ আবিষ্কার করলাম আমরা দুজন কোন কিছু না বুঝেই চীনাদের দেখাদেখি হুড়মুড় করে একটা বাসে চেপে বসেছি।

শাটল বাস আমাদের নিয়ে এল ডাউনটাউন ম্যানহাটানে- ক্যানাল ষ্ট্রীটে। আমাদের বলা হলো সকাল ৮:৪৫ এ মুল যাত্রা শুরু হবে। ক্যানাল ষ্ট্রীটে এসে বুঝলাম গোটুবাস- আসলেই গোটুবাস! এক সারি বাস দাড়িয়ে আছে! শত শত চীনা কিংবা জাপানী নয়তোবা কোরিয়ান গুলিস্তানী কায়দায় ধাক্কাধাক্কি করে বাসে উঠছে!

চোখের সামনে দিয়ে একে একে সব বাস চলে যাচ্ছে! আমাদের নির্ধারিত বাস আর আসে না! “যদি না যেতে পারি” -চিন্তায় গিন্নীর মুখ ম্লান হয়ে আছে আর এদিকে টাকার শোকে আমি অজ্ঞান হবার দশা! খোঁজ-খবরে জানতে পারলাম- যে ড্রাইভার আমাদের বাস চালাবে তার পেটের পীড়া! শুনে আমি ঘাবড়ে গেলা! আমেরিকাতেও পেটের গণ্ডগোল হয় তা জানা ছিলনা! আমেরিকায় আসার পর প্রথম কয়েকদিন আমার পেটে গণ্ডোগোল হয়েছিল! তারপর - “অল কোয়ায়েট অন দ্যা ওয়েষ্টার্ণ ফ্রন্ট”।

সাড়ে নয়টার সময় আমার ও সাথে থাকা ভারতীয়গুলোর ধৈর্যচুত্যি ঘটলো। আমরা ট্যুর অফিসে গিয়ে ঢাকাই কায়দায় হুমকি ধামকি দেয়া শুরু করলাম- আমার মন কাঁদছিল টাকার শোকে! তাই টাকা ফেরত চেয়ে হাউকাউ লাগানোর চেষ্টা করছিলাম। ব্যাটারা ঝানু ব্যবসায়ী! বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের মতো আমাদের আশা দিয়ে আঁটকে রাখলো! আমরা ৪/৫ জন টাকার জন্য খ্যাচ খ্যাচ করতে লাগলাম আধঘন্টা ধরে। ইতিমধ্যেই তারা একজন ড্রাইভার ম্যানেজ করে ফেললো!

সুতারাং খ্যাচখ্যাচ ফেলে রেখে যাত্রা শুরু করলাম-বলা উচিৎ করতে বাধ্য হলাম! তখন সময় সকাল ১০:১৫! নিজেকে জিজ্ঞাসা করলাম- আমেরিকায় ন’টার বাস ক’টায় ছাড়ে!


প্রথম প্রকাশ: সামহোয়্যারইন ব্লগ
২০০৭-০৪-১৭


মন্তব্য

স্পর্শ এর ছবি

দারুন হচ্ছে!! একটা নে পরে ফেলতেছি সব।

ওই মিয়া!! আপনি কি একটা মানুষ? আমাগো মত পাবলিক রে বউ নিয়া বিবাহবার্ষীকি পালনের গল্প শুনান!! মন খারাপ

এখনই বাড়ি গিয়া বায়না ধরুম নাকি? বউ আইনা দেওয়ার জন্য। চিন্তিত
আপনে কই পাইলেন? একটু খোজ খবর দেন। আমরাও অইলাইনে ট্রাই করে দেখি। যদি কিছু মেলে।! ইয়ে, মানে...

[অরে সব্বোনাশ! আপনি দেখি আমার মত স্ট্রং ক্যারেকটারের লোকরেও বিয়ার দিকে ঝুকাই দিতাছেন!! ব্লগের আর বাকি সব দুর্বল ভুজা দের অবস্থা তাইলে আরো কাহিল!!! মন খারাপ ]
[][][][][][][][][][][][][][][][][][]
ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ, কোরো না পাখা।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

এই পোস্টে কমেন্টাই নাই কেন?

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ওহ, পুণঃপ্রচার ছিল।

অসুবিধা নাই, ধুসর গোধুলির চোখে পড়লে এক্ষুণি ৬৫টা কমেন্ট করে যাবে।

স্পর্শ এর ছবি

ধ তে ধুসর গোধুলী ঐ আসছে তেড়ে!!
[][][][][][][][][][][][][][][][][][]
ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ, কোরো না পাখা।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

রায়হান আবীর এর ছবি

পড়লাম। দ্রোহীভায়ের ও আমার মতো উৎসাহ কম। অর্ধেক লেইখা মনে হয় আর তার লিখতে ইচ্ছা করে না।
---------------------------------

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।