আমি চোখ বুঁজে বসে আছি। বিমানবালা হুড়মুড় করে সব নিয়মকানুন বলছে। বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হলে কী করতে হবে তা বলে যাচ্ছে একে একে। সুন্দরী বিমানবালাকে উদ্দেশ্য করে মনে মনে একটা দুষ্টু গাল দিলাম, "নগদ পয়সা খরচ করে বিমানে চড়ছি আর তুমি দুর্ঘটনার আলাপ োদাও?" সুন্দরীকে উদ্দেশ্য করে দেবার জন্য আরও কয়েকটা গালাগাল খুঁজে বেড়াচ্ছি এমন সময় হঠাৎ বউয়ের ঝাড়ি।
"এই তুমি পাদ দিসো?" চাপা গলায় হিসহিসিয়ে উঠল বউ।
আমি ততোধিক অবাক হয়ে বললাম, "কই না তো!"
বউ রেগে বললো, "মিথ্যা কথা বল কেন? পাদ দিসো আবার অস্বীকার কর? ছিঃ!"
আমিও রেগে উঠলাম। রেগে উঠে বললাম, "মর জ্বালা! পাছা আমার আর তুমি ঠিক করবা আমি পাদ দিসি কি দিই নাই? ক্যামনে কী?"
তখন দুজনেই বুঝতে পারলাম আসল ঘটনা কী। বিমানে আমাদের সিট পড়েছে স্টারবোর্ড সাইডে (ডানদিকের সারিতে)— বউ জানালার পাশে, আমি মাঝখানের সিটে, আমার বাম পাশে এক দৈত্য। সেই দৈত্য ব্যাটাই আমার নাম করে পাদ ঝেড়ে দিয়েছে। যাকে বলে 'উদোর পাদ বুধোর পোঁদে' অবস্থা। ঘাড় বেঁকিয়ে দৈত্যের দিকে তাকালাম, তারপর নিজেকে সামলে নিলাম। যা সাইজ- মাশাল্লাহ! একটু জোরে ফুঁ দিলেই বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হবে।
বিমানের ভেতরে যতদূর চোখ যায় কেবল পিচ্চি আর পিচ্চি। আমাদের বাম পাশের সারিতে ছয় সিট জুড়ে এক পরিবার যাচ্ছে। বুড়ো বাবা-মা, ছেলে, ছেলের বউ এবং তাদের দুটো পিচ্চি। আমেরিকার বুকে অতি বিরল এক দৃশ্য। পরীর মত দেখতে ছোট্ট মেয়েটি একটু পর পর চিৎকার দিচ্ছে, "হুররে! আয়্যাম গোইন ট্যু ডিজনী ওয়ার্ল্ড!"
আশেপাশের যেই তার দিকে তাকাচ্ছে তাকেই সে এক কথা জানিয়ে দিতে ছাড়ছে না। দৈত্যের আড়াল থাকায় মেয়েটি আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছিলো না।
অরল্যান্ডো এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করার পর যাত্রীরা যখন আসন ছাড়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল তখন মেয়েটি আমাদের দুজনকে দেখতে পেল। বহুবার বলা কথাটি আরেকবার বলার জন্য অনুমতি প্রার্থণার ভঙ্গিতে মেয়েটি তার বাবার দিকে তাকাল। মেয়েটির বাবা একগাল হেসে বললেন, "আচ্ছা, তুমি এদেরও বলতে পার।" মেয়েটি সাথে সাথেই বললো, "জানো? কাল আমি ডিজনী ওয়ার্ল্ড যাচ্ছি!"
বউ বললো, "আমিও!" পিচ্চি ঘাবড়ে গেল।
অরল্যান্ডোতে ব্যাগেজ ক্লেইম করার পর পীযুষ আর ইমণকে খুঁজে বের করলাম। আমরা যেখানে হোটেল ভাড়া করেছি সেখান থেকে ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে হেঁটে যাওয়া সম্ভব। হোটেলটা এয়ারপোর্ট এবং ওয়াল্ট ডিজনী ম্যাজিক কিংডম থেকে মাঝামাঝি দূরত্বে। সুতারাং ডিজনী ওয়ার্ল্ডের দিন এবং এয়ারপোর্টে ফিরে আসার দিন ছাড়া আমাদের আর গাড়ির প্রয়োজন হবে না। ফ্লোরিডায় বসবাসকারী এক বন্ধু আগাম সতর্কবাণী দিয়ে রেখেছিল—"সাবধাণ, ভুলেও ট্যাক্সি ভাড়া করিস না। একেবারে ছিলে ফেলবে!"
অরল্যান্ডোতে এয়ারপোর্ট থেকে প্রত্যেকটা হোটেলে যাত্রী পরিবহনের জন্য 'মিয়ার্স' নামে একটা বাস সার্ভিস আছে। আমরা চারজন ব্যাগ টানতে টানতে মিয়ার্স এর কাউন্টারে উপস্থিত হলাম। কাউন্টারে বসে থাকা নট—সো—হট মহিলাটিকে জিজ্ঞেস করলাম, "এই বাস কী অমুক হোটেলে যায়?"
নট—সো—হট মহিলা উত্তর দিল, 'ড্যাটস্ কারেক্ট!"
"এয়ারপোর্ট থেকে অমুক হোটেলে পৌঁছুতে কতটুকু সময় লাগতে পারে?"
"তা ঘন্টা দুই তো হবেই!'
"দুই ঘন্টা সময় লাগবে?" মাঝখান থেকে প্রশ্ন করলো আমার বউ।
"ইয়েস মাই ফ্রেন্ড। বাসটা এয়ারপোর্ট থেকে তোমাদের হোটেলে যেতে পথিমধ্যে যতগুলো হোটেল পড়বে, সবগুলোতেই থামবে।"
"টিকেটের দাম কত একটু বলবেন কি?"
"জনপ্রতি ১৭ ডলার করে!" উত্তর দিল মহিলা।
"আর যদি ট্যাক্সিতে যাই তাহলে কত খরচ পড়তে পারে?" জিজ্ঞাসা করল গিন্নি।
"চল্লিশ ডলারের কাছাকাছি লাগতে পারে।" উত্তর দিল মহিলা।
"আর সময়?" আবারও প্রশ্ন করল গিন্নি।
"বড়জোর ২০ মিনিট।"
আমার মনে হল মহিলার ঘাড় ধরে একটা ঝাঁকি দিয়ে বলি, "তা আগে কবি তো!"
ট্যাক্সিওয়ালা যথারীতি স্প্যানিশভাষী 'অ্যামিগো'। আমরা বাংলায় কথা বলছি। আমাদের কথোপকথন থেকেই ব্যাটা কার না কী তা ঠাওর করে ফেলল। একটু পরে ব্যাটা ইমণকে জিজ্ঞাসা করল, "ইমণ। অরল্যান্ডো কেমন লাগছে?"
মোটেলে পৌঁছে সবকিছু বুঝে নিলাম। একটু সস্তা ধরনের হোটেল। তাতে কীই বা এসে যায়? আমাদের কেবল রাত্রে পাছা ঠ্যাকানো দিয়ে কথা। হোটেলের লোকেশন অতি চমৎকার। ইউনিভার্সাল স্টুডিও থেকে মাত্র আধমাইল দূরে।
সবকিছু আনপ্যাক করার পর ব্যাগ থেকে খিচুড়ি, মুরগীর মাংস বের করা হল। মোটেলের সামনে সুন্দর ছিমছাম একটা সুইমিং পুল। পাশে একটা মদ খাবার দোকান।
খিচুড়ি আর মুরগীর মাংস নিয়ে সুইমিং পুলের ধারে এক ছাউনির নিচে গিয়ে বসলাম। তার আগে খিচুড়ি গরম করতে হয়েছিল মোটেলের লাগোয়া দোকানটিতে। দোকানী ফিলিস্তিনের মানুষ। আমাদের খাবার বয়ে আনা দেখেই তিনি ধরে নিলেন আমরা মুসলিম, বাইরের হারাম খাবারের স্পর্শ থেকে বাঁচার জন্যই নিজেরাই খাবার নিয়ে এসেছি। তাকে আর কিছু বলতে পারলাম না। তাড়াতাড়ি খাবার গরম করে নিয়ে সরে এলাম।
প্লেটে চমৎকার খাবার। চারপাশে চমৎকার পরিবেশ। একটু দূরে সুইমিংপুলে চমৎকার সব নারী! এরই মাঝে হঠাৎ বৃষ্টি নেমে এল। সে এক ত্রাহি মধূসুদন অবস্থা। না পারি খাবার ফেলে দৌড় দিতে। আবার না পারি ভিজে ভিজে খেতে। ছাউনির কারনে খাবারটা অন্তত ভেজার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে।
খাওয়াদাওয়ার পালা সেরে সেদিনের মত নিদ্রাদেবীর সরণাপন্ন হতে গেলাম। পরদিন সকাল সাতটায় বাস ছাড়বে ওয়াল্ট ডিজনী ওয়ার্ল্ড রিসোর্টের উদ্দেশ্যে।
মন্তব্য
আপনি একটা ***** দুলাভাই
আপনেরা তাইলে এখনো পোঁছান নাই?
-জুলিযান সিদ্দিকী
ভালো হইতেছে। চালায় যান।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
এইবার সাইজ ঠিকাছে। পরেরটা আরেকটু লম্বা করেন।
হাঁটুপানির জলদস্যু
- এই পর্বে ডিসক্লেইমারের কিছু চোখে পড়ে নাই এখনো, পড়লে জানায়া দিমু নে।
পরেরটা ভাসায়া দেন মাঝি!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
দ্রোহী অন ফায়ার!
জোশ হচ্ছে!
"'উদোর পাদ বুধোর পোঁদে"
হিমু তো আপনাকে ভূতোদা ডাকেন। তাই বলতে পারতেন, "'উদোর পাদ ভূতোর পোঁদে"
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
ভালাই চক্কর দিতাছেন দেখি!
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
জট্টিল !
আজই গুলি করা শিখলাম । আপনাকে দিয়েই শুরু হোক !
(শান্তি প্রিয় মানুষগুলোকে গোলাগুলি শেখানোর সমস্ত দায় আমাদের প্রিয় সন্নাসীর )
মনে হল যেন বহুদিন পর আবার ডায়রি পড়তে বসেছি। ভাল লাগল। সহজ ভাষায় লেখা, নিজের মত করে নির্দ্বিধায় সাবলীল ভংগীতে লেখা বলেই হয়তো ভাল লাগছে। কত অসংখ্য এরকম ভ্রমণের কথা যে মএ পরে যাচ্ছে, তা বলে বুঝাতে পারবনা। লিখে যান। অপেক্ষায় থাকব।
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
অনেক জোশ দ্রোহী ভাই।
তাড়াতাড়ি পরেরটা ছাড়েন।
---------------------------------
অনেক অনেক রস!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ভ্রমণে বৌ সঙ্গে থাকার কারণেই অনেকগুলো সরেস বিষয় আর বর্ণনা থেকে বঞ্চিত হলাম
এর পরে ভ্রমণে গেলে বৌ বাদ দিয়ে যাবেন
(ভদ্রলোকরা বৌ নিয়ে কোথাও বেড়াতে যায় না)
লীলেনদা, আমিতো কোথাও বেড়াতে যাই না। বউ কোথাও বেড়াতে যাবার সময় আমাকে সাথে নিয়ে যায়।
কি মাঝি? ডরাইলা?
এইটা পড়ার পড় কেমন কেমন যেন লাগছিলো। আগের গুলো পড়ি নাই তো? তারপর শুরু থেকে পড়লাম আর ঘর ফাটাইয়া হাসলাম। হো হো হো । দারুণ লিখেছেন ভাই।
পরশ পাথর
সব্বোনাশ!!
কন কী?
কি মাঝি? ডরাইলা?
সেইরকম জোস্!!
পরেরটা তাড়াতাড়ি !!
[][][][][][][][][][][][][][][][][][]
ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ, কোরো না পাখা।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হাহাহাহা খুব মজা লাগল আপনার ভ্রমনকাহিনি, আগের গুলোও পড়তে হবে
--------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
ভালৈতাছে...
ঈশ্বরাসিদ্ধে:
অজ্ঞাতবাস
মহোদয়, আগুন তো জ্বালাইতাছেন। কিন্তু ফটুক কই?
১ম পর্বে ক্যামেরার গপ্প দিলেন বিশাল। কাজে (কামে না) লাগে নাই?
বিবি সাহেবা ফটুক রিলিজ করেননি এখনো।
কি মাঝি? ডরাইলা?
ও আচ্ছা - শিল্প ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ভাবীর অধীনে?
অফটপিক ঝাড়িঃ
আপনে কি সব লিংক দিলেন সিনেমা দেখার, আমি ধুমাধুম কয়দিন সিনেমা দেইখা আমার ডাউনলোড কোটা শেষ করে ফেলছি!
এখন আমার স্পিড কমাইয়া ডায়াল আপ কইরা দিছে।
মাস শেষ না হইলে ঠিক হইবো না।
আপনারে হাতের কাছে পাইয়া লই একবার!
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
অষ্ট্রেলিয়ার এই একটা জিনিষ আমার পছন্দ না। একটা বুদ্ধি দিতে পারি।
বাংলাদেশে আমাদের বাসায় জিপের লাইন। ওদের ডাউনলোড লিমিট ছিল মাসে এক জিগাবাইট। একরাতে আমি উবুন্টু ডাউনলোড করতে গিয়ে ডাউনলোড লিমিটের বারোটা বাজিয়ে ফেললাম। পরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার লাইন ব্লক করা। যাদের কাছ থেকে কানেকশন নিয়েছি তাদের কিছুই করার নেই কারন আমি নিয়ম ভঙ্গ করেছি। তারা বললো একমাস আমাকে কানেকশন ছাড়া থাকতে হবে।
জিপের কানেকশন দেয়া হয় ল্যান কার্ডের ম্যাক অ্যাড্রেসের উপর ভিত্তি করে। মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এল। লোকাল এরিয়া নেটওর্য়াকে ঢুকার জন্য ম্যানুয়ালি আইপি অ্যাড্রেস বদললাম। তারপর গেটওয়েতে ঢুকে দেখি লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে যতগুলো পিসি কানেকটেড আছে সবগুলোর ম্যাক অ্যাড্রেস দেখাচ্ছে।
কী আর করা। একেকদিন একেকটা ম্যাক অ্যাড্রেসকে নিজের ল্যান কার্ডের ম্যাক অ্যাড্রেস হিসাবে বদলে নিতাম। ব্যাস, ডাউনলোড লিমিট একলাফে বেড়ে গিয়ে দাড়ালো প্রায় ৫৩ জিগাবাইটে। বাংলাদেশে বসে ডাউনলোড লিমিট প্রতিমাসে ৫৩ জিগাবাইট। কল্পনা করতে পারেন?
খুঁজে দ্যাখেন। এমন কিছু পান কিনা।
কি মাঝি? ডরাইলা?
জিজ্ঞাসু
দুলাভাই লেখা আগেই পড়ছি, কিছু বলা হইছিলনা।
সামনের লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
নতুন মন্তব্য করুন